দেখতে দেখতে সাত বছর চলে গেলো। অথবা অনেক লম্বা সময় পাড়ি দেবার পর মনে হলো, সাত বছর পেরিয়েছে। ঘর ছাড়ার, বাড়ি ছাড়ার। মানে, জীবনকে পেছনে ফেলে আসার। এখনকার দাড়িয়ে থাকা বিন্দু থেকে দেখলে সাত বছর আগের সময়গুলোকে স্পষ্ট মনে পড়ে না। ভালোমতোন মনে করার চেষ্টা করে দেখলেও নয়। অনেক কাল আগে পড়ে বইয়ের তাকে রেখে দেয়া কোন সাদামাটা বইয়ের বিস্মৃতপ্রায় পাতায় লেখা ছাপার হরফের মতো মনে হয়। অক্ষরগুলো সামনে দিয়ে চলে যায়, কিন্তু স্পষ্ট মনে করতে পারি না কোন শব্দ বা কোন বাক্য। চরিত্রগুলো আবছা উঁকি দিয়ে যায় কেবল। তবু হাতড়ে দেখি, খুঁজতে থাকি সেইসব হারিয়ে যাওয়া পৃষ্ঠা।
আরেকবার বাসা বদলেছি, বছর চারেক পর। বাসার সাইজ পাল্টায় নি অবশ্য। একটা পাখির বাসা থেকে আরেকটা পাখির বাসা। সেই নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম কিছুটা সময়। ক্লান্তও বটে। বেশ ঝক্কির বিষয়। প্যাকেট বাঁধতে হয়, ময়লা ফেলতে হয়, নিজেও কিছুটা সাহায্য করতে হয় রিলোকেশন সার্ভিস এর লোকদের। এই কাজটা করতে গিয়ে প্রতিবারই আহত ও অসুস্থ হই হালকা। সামান্য ভারী জিনিষও টানা ডাক্তারের বারণ অনেক দিন। বুড়ো হয়ে গেছি। কিছু করবার নেই।
প্রতিবারই বাসা বদলানোর সময় পুরনো জিনিষ বেরিয়ে পড়ে, একগাদা স্মৃতিসহ।
একটা বুলগেরিয়ান পুতুল। এক বুলগেরিয়ান বন্ধু দিয়েছিলো বছর ছয়েক আগে কোন এক বিদায়ের মুহূর্তে। এক সাথে জাপানি শেখার ক্লাস করতাম। না, মেয়ে বন্ধু নয়। সেই ছেলেটার ছবি দেখলাম কাল ফেইসবুকে অন্য এক বড় আপুর অ্যালবামে। কোন একটা প্রোগ্রামে হাত নাড়িয়ে কী যেন বলছে। হড়বড় করে হাত নাড়িয়ে অভিনয় করে কথা বলার অভ্যাস ছিলো ছেলেটার। অনেকদিন যোগাযোগ নেই।
একগাদা চিঠি। সবই দেশ থেকে। আবারও হতাশ করি। না, কোন মেয়ে বন্ধু নয়। আমার খুব কাছের এক বন্ধুর চিঠি লেখার অভ্যাস ছিলো। তার চিঠি। সাহিত্যমান হয়তো যুতসই নয়। সবই রাখা আছে। জিনিষপত্র বাঁধতে গিয়ে প্রচন্ড ক্লান্ত কোন মুহূর্তে এক সময় মনে হলো, ফেলে দিই ট্র্যাশে। আবার যত্ন করে রাখলাম একটা প্যাকেটে। কোন একটা চিঠিতে লেখা ছিলো, আল্লার মাল আলতাফ এর গল্প। রাজনৈতিক মন্তব্য। বন্ধুর নিজের গার্লফ্রেন্ডের গল্প। অথবা স্কুলজীবনের কোন এক স্যার মারা গেছেন, সেই খবর। এসব খবর ফোনে পেতাম। অথচ, আবার যত্ন করে সে চিঠিতে লিখতো। আমিও লিখতাম, যতোটা পারি। শেষ চিঠিটা আসে বছর দেড় আগে। বন্ধু অসময়ে বিয়ে করে বসে অথবা করতে হয় বাধ্য হয়। তারপর গৃহী হয়ে যাওয়া সেই বন্ধুর কাছ থেকে কোন চিঠি আসে নি। যোগাযোগ ছিলো। ফোনে।
আরো বেরিয়ে পড়লো, দুটো বই। একজন অতিমানবী, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আরেকটা চার্লস ডিকেন্সের বাংলা অনুবাদ। ভিতরের পৃষ্ঠায় লেখা, আমাদের প্রিয় শিক্ষক কে বিদায়ের মুহূর্তে- তারপর দুটো নাম লেখা। দুটোই মেয়ের নাম। একটা সময়ে বড্ড টাকার প্রয়োজনে কোচিং করাতাম, টিউশনি করাতাম। কোচিং এর ছাত্রীই হবে। মেয়ে দুটোর মুখ আবছা মনে করতে পারছি। আহা, কতকাল কেউ কোন উপহার দেয় না।
পুরনো পাসপোর্ট সাইজের ছবিও বেরিয়ে আসে অনেক। খুব শুকনোপটকা আরেকটা সাদাকালো আমি যেন ছবিগুলোর ভিতর থেকে হাসতে থাকে। স্মৃতিকাতরতাকে উপেক্ষা করি এবার। সবগুলো ফেলে দিই ট্র্যাশে, দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে।
স্মৃতির কি আদৌ কোন সত্যিকারের মূল্য আছে?
এইরকম করে সাথে যা স্মৃতিচিহ্ন বয়ে নিয়ে এসেছি, তাও হয়তো আগামী আরো অনেক বছর কোন বাক্সে ঘুমিয়ে থাকবে কিংবা কোন বইয়ের তাকে ধুলোর সাথে মাখামাখি করে পড়ে থাকবে নিতান্তই অবহেলায়। আবার বাসা বদলানোর প্রয়োজন পড়বে যখন, আবার বেরুবে, আরেকবার ট্র্যাশে ফেলার বিবেচনায় আসবে। হয়তো পুতুলটাকেও ফেলে দেবো, চিঠিগুলোও ফেলে দেবো। খুব বেশি দূরত্বে যেতে হলে হয়তো বইগুলোও ফেলে দেবো। স্মৃতির চেয়ে জিনিষপত্র হালকা করাটা বেশি বাস্তবসম্মত মনে হবে তখন। স্মৃতির সাথে ছাড়াছাড়ির শোকের আয়ু এই সময়ে বড্ড কম। একটা ব্লগ লেখার জন্যে যতটুকু সময় দরকার তার থেকেও কম।
মন্তব্য
হুম। বুড়ো হওয়ার বয়স দেরীই আসে।
color=red]
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।[/color]
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
মনে মনে বুড়ো হয়ে গেছি বড্ড।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
আহারে... আমারও বাড়ি পাল্টাতে হবে... শুনলেই জ্বর আসে। এতদিন বাড়ি পাল্টানো মানে ছিলো খুবই কাছাকাছি রিক্সার দূরত্বে... এবার যাচ্ছি অনেক দূরে... তার উপর আমি দেখি এই কয় বছরেই আমার সংসার এখন অনেক বড় হয়ে গেছে... বিরাট...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সংসারের টানে আরো বড় হোন, সংসার আরো বড় হোক, এই কামনা করি।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
অনেকদিন পর লিখলেন...
দুর্দান্ত। লেখাটা খুউব ভাল্লাগসে।
আপনার সাথে নিজের কিছু মিল পেলাম। আমিও স্মৃতি ফেলতে পারি না সহজে। মাঝে মাঝে ঘর গোছাতে গেলে টুকিটাকি এটা-ওটা অনেক কিছু বেরিয়ে পড়ে, অনেক কিছু মনে পড়ে যায়, কিছু আনন্দের, কিছু কষ্টের, কিছু লজ্জার। বারবারই মনে করি ফেলে দেই, তারপরও কেন যেন আঁকড়ে ধরে থাকি। অনেক কিছু ফেলেও দেই অবশ্য, আবার অনেক কিছুই ফেলতে পারি না।
ভাল থাইকেন সৌরভ ভাই
কৃতজ্ঞতা প্রহরী। ভালো আছি। কিছু একটা অবলম্বন আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকাই জীবন। তাই নয় কি?
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
খুব ভাল লাগল লেখাটি।
অনেক শুভেচ্ছা রইল।
ধন্যবাদ। আপনার কবিতা পড়ি অন্য ব্লগে। ভালো থাকুন।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
লেখাটা দারুন
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
কৃতজ্ঞতা, নিবিড়।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
কতদিন চিঠি পাই না কারও কাছ থেকে। বছর দুই আগে বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলাম একটি পারিবারিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে। নাহলেতো ফোনেই খোঁজ খবর সারা হয় সবার সাথে।
আমারও স্মৃতি কিছু জড়ো করা ছিল কয়েকটি ড্রয়ারে। বাসা একবার পাল্টানো হয়েছে। এবার গিয়ে দেখলাম তার কিছু পোটলায় বাঁধা। আবার বাড়ী পাল্টালে হয়ত সেটিও যাবে। সত্যিই সেগুলোর কি দাম আছে?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
দেশের বাসায় ড্রয়ারে স্কুল আর কলেজ জীবনের দিনপঞ্জি আকারে লেখা কিছু ডায়রি ছিলো অনেকদিন। একবার দেশে গিয়ে মনে হলো, এগুলো রেখে লাভ কি? মুছে ফেললাম সে চিহ্ন।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
এত্তো চমত্কার লেখার হাত আপনার! একবার লিখে ফেলুন না একটা মন-ভালো-করা লেখা!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
অনেকদিন ধরে লিখতে চাই, ভাই। পারি না। যে জঞ্জাল লিখতাম, তাও ভুলেছি।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
হায় স্মৃতি...
স্মৃতিভুক আমি। স্মৃতিতে তাড়িত হয়ে প্রায়ই বিষন্ন হই। কোথাও কিছু একটা যেন গুমড়ে কাঁদে।
খুব ভালো লাগলো।
খুব যেন আমার আমার মনে হলো লেখাটা। কদিন আগে আমিও বাসা বদলালাম। কত জন্জাল জমে যায় কদিনেই, কিন্তু ফেলতে তবু মায়া লাগে। আর বাসা বদলানোও আমার খুব অপছন্দের একটা কাজ। এইবারের বাসা বদলে অবশ্য একটা লাভ হয়েছে, দেড় টনি ট্রাক চালাবার অভিজ্ঞতা হয়েছে।
আমার ঘর-বাড়ি ছাড়ার পনের বছর হতে চললো। তোমার চেয়ে আমি বুড়ো নই তবে?
-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
"অসাধারণ"। এইটুকুই বলি শুধু?
=============================
১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি ঢাকার বাসা ছেড়ে চিটাগং চলে গেলাম কাজের জন্যে। সেইদিন থেকে যাযাবর। গত এক দশকে বাসা কতবার বদলেছি চট করে মনে থাকে না আজকাল - তাও হিসাবটা মাথায় গাঁথা - ১ + ১ + ১ + ৩ + ২ + ৫ = ১৩ বার।
১০ বছরে ১৩ বার বাসা বদল। লন্ডনেই ৫ বার। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে একদিনের নোটিশে এখন ম্যুভ করতে পারি।
এই বেদুইন জীবনের আসলে আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল কি না, প্রায়ই নিজেকে প্রশ্ন করি। দেশে স্কুল কলেজের বন্ধু-বান্ধবরা দীর্ঘদিন থেকেই বেজায় সংসারী। বাড়ি গাড়ি আর বাচ্চা-কাচ্চার কিন্ডারগার্টেন - অনেক আগেই grown-up হয়েছে সবাই।
তবে আমার প্রশ্নের উত্তর কখনো বদলায় না। যা হবার কথা ছিল, তাই হয়েছে। খুব একটা যে মন্দ হয়েছে, তা ভাবতেও মন সায় দেয় না। চলছে, চলুক। লিখতে থাকেন।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
- ওয়াও, বিষণ্ণ স্যার ইজ ব্যাক। এইবার জনগণের শার্টের কলার ধরে ঝাঁকানো হবে, "স্মৃতিকাতর হবি না ক্যান ব্যাটা! দল এইবার স্মৃতিকাতর হবে, স্মৃতি কাতর হহ্।"
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
গত ২২ বছরে একবারই বাসা বদল করেছি ২০০৮ সালে, করতে বাধ্য হয়েছি, তাও একটা বড় ধাওয়া খেয়ে, বড় কাহিনী, পোস্টেই দিতে হবে। আপনার স্মৃতিগুলো মন ছুঁয়ে গেল।
বাহ! খুবি ভাল লাগল আমিও কখনো কোনো কিছু ফেলিনা, তুমি তো তবুও ফেলে দিসো, আমি হাবিজাবি সবকিছুই রেখে দেই। আমার এক রাশিয়ান বান্ধবী এরকম চিঠি লিখতো মাঝে মাঝে। ওর সাথে দেখা হত ক্লাসে বা ফোনে কথা হত, তবুও আমাকে সারপ্রাইস করার জন্য ও এরকম চিঠি লিখত। চিঠিতে তেমন কিছু লেখা থাকতো না হাবিজাবি ছারা তবুও এত্ত ভাল লাগত, খুশি লাগত
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
ষোল বছর আগে লেখা প্রেমপত্রগুলো এখনো বহাল তবিয়তে আছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ভেতরটা নাড়িয়ে দিয়ে গেল।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
লেখায় একটা সুক্ষ্ম চালাকি আছে... ঃ)
অনেকদিন পরে স্যারের লেখা পড়লাম।
স্মৃতির দুয়ার আবার খুলে ফিরবেন কবে সচলে?
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
নতুন মন্তব্য করুন