আজকাল মৃত্যু এসে ভীড় করে মনে। মনে হয়, অনেক তো হলো।
ভাবি - তবে কি বুড়িয়ে গেলাম?
কুড়িতেই যক্ষা নিয়ে যায় সুকান্তকে। আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে বলা রুদ্রকবিও চলে যান অল্প সময়ে।
এইসব মৃত্যুদের মনে হলে অবশ্য সময়টা চলে যাওয়ার জন্যে "অ-কাল" মনে হয় না।
শৈশব এসে ভীড় করে পুরো হৃদয় জুড়ে, স্মৃতিরা একেকটা অদ্ভূতুড়ে প্রাণযুক্ত হয়ে ওঠে - উপহাস করে - আবার কোনটা মায়া জড়িয়ে মাদকের আবেশ রেখে চলে যায়। আমি পড়ে থাকি একা ।
এইখানে।
নিধুয়া এই পাথারে।
সবকিছু ছবি হয়ে আসে।
চৈত্রের খনখনে রোদে আমি দৌড়ুতে গিয়ে উল্টে পড়ে যাই ধুলো হয়ে যাওয়া লাঙল দেয়া জমিটায়, মায়ের লাঠির ভয়ে অনেক কষ্টে থুথু দিয়ে ধুলো মোছার ব্যর্থ চেষ্টা করি।
ক্লাস থ্রিতে আমি কথা বলায় ম্যাডাম আমাকে নিল ডাউন করিয়ে রাখে, পাশে বসা রুপম বলে, ও দাড়িয়ে থাকলে আমিও থাকবো, কারণ আমি ওর সাথে কথা বলতেছিলাম। ম্যাডামের অবাক চেহারা এখনো মনে পড়ে।
সেই স্কুলটা আমি পরের বছর ছেড়ে দিই।
রুপম ডাক্তার হয়ে গেছে বোধহয়। শেষ দেখা হয়েছিলো ও সলিমুল্লাহ তে ভর্তি হওয়ার পর।
রুপম, কই আছিসরে এখন?
ধুর, এইসব কেন যে মনে পড়ে?
বুড়োত্বের খুব বড়সড় সিমটম।
একা ভাবতে বসি, পেরিয়ে যায় সময়। মনে মনে অনেকদূর চলে যাই - ফিরতে পারি না আর, কোথা থেকে শুরু করেছিলাম।
হয়ে যাই ফটিক কিংবা অপু অথবা অনিমেষ। মফুস্বলে আমি এই ধনবাদী নগরের কংক্রিটের বেড়াজালে খুঁজে ফিরি আশ্রয় শূন্যতার কাছে।
ভাবনা ঘিরে ধরে ক্লান্ত-শ্রান্ত আমায় , এই পথের ক্লান্তি থেকে জিরিয়ে নেবার সুযোগও পাই না আজকাল- দেশ-কাল-পাত্র কোন কিছু না ভেবেই যে পথটা এতোদূর এলাম।
দেশ-কাল-পাত্রের অক্ষ অবশ্য ভাবনার পটে গৌণ - সব সমান্তরাল - মাঝেমধ্যে কিছুকিছু এবড়োথেবড়ো বাদ দিলে।
ভাবি, অনেকদূরই তো হাঁটলাম এই স্বল্প সামর্থ্যের দুর্বল আমিত্ব নিয়ে।
ঠিকঠাক বেঁচে থাকলে আর কদিন পর হয়তো বৈশ্যিক দাসত্ব করবার জন্যে নষ্ট কর্পোরেটদের দরজায় দাড়িয়ে পড়বো, একগাদা মিথ্যে প্রতিদিন অবলীলায় বানিয়ে বলে যাবো কলচাবি দেয়া পুতুলের মতো। নিজেকে সর্বোত্তম দাস হওয়ার জন্যে যোগ্যতম হিসেবে হাজির করবো স্যারদের দরবারে দন্তপাটি বিস্তৃত হাসি উপহার দিয়ে।
তারপর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পা চাটতেই থাকবো প্রভূদের। জানি, সে-ই জীবন অপেক্ষা করে থাকে - এই পথের শেষে।
এই শহরে ট্রাম নেই, ভয় নেই জীবনানন্দ হওয়ার। বাতাসে সীসা নেই, পানিতে নেই অতিমাত্রার খনিজবিষ।
এই শহর এবং শাহরিক মানুষগুলো অ-কালে মরে না। তারা দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে, অন্যদের সমস্যা করে অথবা না করেই। তারা আমাদের তথাকথিত বুড়োত্বের বয়সে পৌঁছেও নির্জীব হয় না, দিব্যি বেঁচে থাকে - শারীরিক ও মানসিক ভাবে। জগতকর্মে কোন বাধা পড়ে না; প্রেম করে, করে পরকীয়াও।
তবুও এইসব কিছুর মাঝে থেকেও আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে।
শরীরযন্ত্রের যে মৃত্যু , তা আমাকে কোন ভীতিবোধে আচ্ছন্ন করে না । ঈশ্বরে আমার অবিশ্বাস নেই - কিন্তু ব্যাপারটা অনেকটা - ঝাল খাবারে আমার অরুচি নেই - ধরনের বিষয়ের মতো সহজ। প্রার্থনা অথবা ঈশ্বর-উপাসনা - মাঝেমধ্যে সামান্য করি না - তাও নয়। খুব খারাপভাবে বললে - কিঞ্চিত ভণ্ড - বিশ্বাসে।
তাই শরীরযন্ত্রের মৃত্যু নামক পৃথিবীর জটিল অনন্য ব্যাপার-স্যাপারটি আমাকে সামান্যতম শুদ্ধ বা ভীত হতে শেখায় না।
"আছি" বা "থাকি" ব্যাপারগুলো তৃতীয় পক্ষের চোখে "ছিলো" বা "থাকতো" হয়ে যাওয়াটা আর এমন কী?
চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশুনা করছে এরকম কাছাকাছি একজন প্রথম কোন ডেথ সার্টিফিকেট লিখে বেশ উত্তেজনা প্রকাশ করেছিল আমার কাছে, আমি অবাক হয়েছিলাম। সময়ের প্রবাহে নাকি খুব একটা কিছু বোধ হয় না।
তবে মন নামক আপাত-আপেক্ষিক বস্তুটির নিঃশেষ হয়ে যাওয়া আমাকে ভীত করে তোলে।
বুড়োত্বের ভয় আমার সেইখানেই।
অজরামর কোন প্রাণের প্রত্যাশা আমি করি না। জরাকে আমি জীবনের সঙ্গী বলেই বোধ করি।
মৃত্যু আমার কাছে রোমান্টিক কোন ধারণা নয়, হয়তো নতুন কোন পথ খুলে আছে শ্যামসম মরণ এর ওপারে।
তবুও অপ্রিয় সে।
বড্ড অপ্রিয়। দাসের হেঁটে চলা জীবনেও সে অনাকাঙ্খিত।
মন্তব্য
ঠিকাছে। দর্শনের দরকার আছে। আধাবিধা বিশ্বাসেরও দরকার আছে। বলা যায় না কখন কি কাজে লাগে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
তোমার ভাবনা চিন্তা পড়ে প্রায়শই ভয় লাগে।
আমি কিন্তু ঐ মানুষগুলার মধ্যেই পড়ি, যারা বেঁচে থাকে শুধু, প্রেম আর পরকীয়া করে।
শুধু বেঁচে থাকাটাও খারাপ লাগে না আসলে।
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
- সারছে, ভাইরাস ছড়াইতাছে।
_________________________________
<স্বাক্ষর দিমুনা, পরে জমিজমা সব লেইখা লইলে!>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হ!
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
কনফু, ভয় পাইলে কিছু করার নাই।
আমি মাঝেমধ্যে নিজেই ভয় পাই।
বলাই দা, দর্শনে কী আর নদী পার হওয়া যায়?
ইমরুল, আসলেই আবজাব ভাবনা এইগুলান।
পড়ার জন্যে আরিগাতো।
------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
মরণরে তুঁহু মম শ্যাম সম (বানান ভুল থাকতে পারে)
কি আশ্চর্য এই একটু আগে বুদ্ধদেব বসুর "তিথিডোর" থেকে পড়ছিলাম মৃত্যু নিয়ে কিছু ভাবনা। ওই ভাবনাটা আমার নিজের সাথে এত মিলে যায়, মাঝে মাঝেই পড়ি তাই। এখন পড়লাম তোমার লেখাটা...
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
৮৫ বছরের অশোক দত্তকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম দাদা যখন বাড়ি থেকে বের হন তখন কি এই দুশ্চিন্তা হয় আজ আর বাড়ি ফিরবো কিনা জানিনা। এই বয়সে কতটা মৃত্যুচিন্তা আপনার পথ আটকায়?
দাদা আমার কৌতুহল নিবারণ করেছিলেন। তার অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, কোনো মানুষকে ত্রিশেই মৃত্যু চিন্তা পেয়ে বসে। কিন্তু ৬০-৭০ পেরুনোর পর মানুষ মৃতূভীতিতে ভোগে না। ভাবে এই জীবনের স্বাভাবিক পরিণতি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
সুতরাং দুশ্চিন্তার কিছু নেই এমন বয়সে পৌঁছাতে সৌরভের অনেক বাকী।
(কাজের কথা, মৃত্যুচিন্তাকে জয় করার জন্য কৃষ্ণমূর্তির বই একটা উত্তম উপায়।)
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
সারছে!
বিগ সি তে পড়ছে এই আবজাব।
উল্টা ভয় পাইছি।
------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
বেঁচে থাকতে চাই অনেক অনেক কাল।
মানুষের সাথে, মানুষের জন্য।
কিছুই করতে পারি না কারোরই জন্যে।
একদিন হয়ত পারব।
হয়ত পারব না কোনওদিনও।
তবুও বেঁচে থাকতে চাই ইচ্ছেগুলোকে নিয়ে।
ভয় পাই শীতকে।
তবুও শীত আসে বসন্তের উষ্ণ প্রতিশ্রুতি নিয়ে।
মৃত্যু বড় শীতল।
আর তারপরের যা সব প্রতিশ্রুতি। ওফ!
মরিতে চাহি না আমি এই সুন্দর ভূবনে।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
সারছে, আমি পড়ি নাই এই জিনিস!!
এই নিয়ে কতবার পড়লাম। ৫ বার। আরও পড়ব। বার বার পড়া যায় এমনি অনুভূতিমালা ছড়িয়ে দিল সৌরভ
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নতুন মন্তব্য করুন