ছোটবেলায় গোল ডায়াল ঘুরিয়ে করতাম যে ফোন, তা এখন হয়ে গেছে ব্যক্তি পরিচয়ের অংশ। না থাকলেই নয় একটা নম্বর - কারো আবার দুটো, তিনটে। দেশে ফেলে আসা বন্ধুদের একেকজনের নম্বরের কালেকশন।
সেই যে ইয়াহু দিয়ে শুরু করেছিলাম প্রথম একটা মেইল অ্যাড্রেস খোলা, তা এসে স্থায়ীভাবে ঠেকেছে গুগল মেইলে মানে জিমেইলে - আছে নিজস্ব ডোমেইনও একটা।
বাংলায় দুটো লাইন লিখে কোন এক পুরনো শুভাকাঙ্খীকে পড়তে বলে কয়েকবার ঝাড়ি খেতে হয়েছিল এনকোডিং আর ডিকোডিং সমস্যা নিয়ে।
আর এখন অভ্যস্ত আঙুলে ভালবাসা বুনে চলি বাংলা অক্ষরে।
ডিজিটাল হয়ে গেছে ভালবাসা, বন্ধুত্ব, আর আমাদের মনন।
মুখোশ পড়ে দিন-তারিখ ধরেবেঁধে এখন আমরা বন্ধুস্মরণ দিবসে বলে উঠি, বন্ধু, কেমন আছিস , কিংবা বাবাদিবসে, আয়্যাম মিসিং য়্যু, ড্যাড!
আমরা বদলে গেছি আমাদের পৃথিবীসহ। বেনিয়া আর কর্পোরেট, টেলি কম্যুনিকেশন সার্ভিস প্রোভাইডারদের তৈরি করা চাকুরির বাজারে আমরা আমাদের স্মার্টনেসের বিনিময়ে ক্যারিয়ার কিনি। কিনি ভবিষ্যত। বিকিয়ে দেই ঘাসফুল আর নদীর জন্যে আমাদের ভালবাসা।
আজ, বয়েস যখন দুই যুগ পেরিয়ে গেছে? এই অসময়ে, যখন লুকোতে পারিনা।
কৈশোরের দিনলিপির পাতায় যে নিঃসঙ্গ আত্মকথন, প্লাজমা, এলসিডি অথবা সিআরটি টিউবের স্ক্রীনে দেখানো যুক্ত ও অযুক্ত অক্ষরমালার এই জায়গাটুকুতেও পাল্টায়নি লেখার সে ধরন। অন্ধকার পৃথিবী থেকে বেরিয়ে আসা হয় নি আমার।
আমি অচল ও সেকেলে মানুষ অচলই থেকে গেছি।
কৈশোরে বুনে রাখা আত্মধ্বংসের বীজ ডানা মেলে হয়ে গেছে বটগাছ-সম। সময় বদলেছে, বদলে গেছে সবকিছু।
কিন্তু এখনো একেকটা দিন মানে কষ্টের খাতায় আরেকটা পাতা। জীবন মানে, পুড়ে যাওয়া মন আর কষ্ট চাপা দিয়ে দাঁত বের করে সব কিছু এনজয় করছি ভাব এনে বুদ্ধিদীপ্ত হাসি মুখে ধরে রাখা। জীবনের মানে, অচল মানুষের চামড়ার উপরে নেকটাই-স্যুটের মুখোশ জড়িয়ে নিজেকে পণ্য হিসেবে তুলে ধরা কর্পোরেট চাকুরির বাজারে।
জীবন মানে সংসারী মানুষ হওয়ার বাসনা নিয়ে নানান সমঝোতা করে চলা প্রতি মুহূর্ত, সারাজীবন সমাজবদলের গান গেয়ে সবশেষে বেনিয়া কোম্পানিতে কেরানি হওয়া, ঘরের ঝড় কোনওভাবে চাপা দিয়ে লোকের চোখে সুখী দম্পতির অভিনয় করে যাওয়া। অথবা পালিশ করা ব্লেজার বা স্যুট গায়ে পরবাসে বেড়াতে আসা নোবেল ইউনুসের সাথে ছবি তোলার জন্যে হুড়োহুড়ি?
জীবনের মানে কি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে রুটি, কলা, কর্ন ফ্লেক, বাচ্চার দুধ, ড্রাগস্টোর থেকে নিরাপত্তা - কিনে বাড়ি ফেরা অথবা বিষ্যুতবারের রাতে বন্ধুদের সাথে কয়েক পেগ গিলে বাড়িতে ফিরে বউয়ের বকুনি। এই তাহলে জীবন?
সবচেয়ে কাছের বন্ধুটি, যে কিনা সাতপাঁচ না ভেবে জীবনের বড্ড অসময়ে গত সপ্তায় নিজের ভালবাসার মানুষটির সাথে অনানুষ্ঠানিক সাতপাঁকের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে, তাকে আমি অভিনন্দনের মেইলে লিখি "আমি কোন স্বপ্ন দেখি না এখন আর। "
আত্মজনের কষ্ট, নিজের পোড়া পৃথিবী আর অস্মার্ট নিজেকে নিয়ে সভ্যভব্য সমাজে স্যুট-টাই পরে সভ্য প্রমাণ করে যাওয়ার যে অসফল চেষ্টা, সেইখানে অসময়ে পুড়ে যাওয়া মনকে চাপা দেয়া হয় না আমার।
আত্মধ্বংসের বটগাছটা ডাকতে থাকে মুক্তির প্রলোভন দেখিয়ে।
প্রতিনিয়তই।
উপেক্ষা করতে পারবো না বোধহয় সে ডাক।
--
অন্ধকার ভরা হলেও এই পোস্টটি সেই বন্ধু ও তাঁর বালিকাকে উৎসর্গ।
কষ্টকর অনেকটা পথ বাকি এখনো তোদের দুজনের - জানি।
তোদের জীবন সুন্দর হোক রে, সুমি ও দীপ।
ছবি কৃতজ্ঞতা : ফ্লিকার লিংক
মন্তব্য
জীবন মানে কি? নতুন করে ভাবতে হচ্ছে এই পরবাসে। যে বন্ধুর সাথে দিনে একবার না দেখা হলে সূর্য ডুবত না তাকে প্রথম ত্যাজ্য করলাম দিনলিপি থেকে তার বিয়ের পরে। বিদেশে আসার পর তার সাথে কদাচিৎ ফোনালাপ। ইন্টারনেট বিমুখী বন্ধুটির সাথে এখন কোনই যোগাযোগ নেই। ডিজিটাল ডিভাইড আমার বন্ধুত্বকে ডিভাইড করে দেবে তা ভাবিনি কখনও। অথচ এই বাস্তবতা।
কি এক টানে বাংলা ব্লগগুলো পড়তে আসি ঘুরে ফিরে। ওই বন্ধুর ছায়া খুঁজি কোথাও? খুঁজি কি টিএসসি/বেইলী রোডের আড্ডা?
ভবিষ্যতে আমার কিছু বন্ধুদের আবার হয়ত খুঁজে পাবো ফেসবুকের মাধ্যমে। ডিজিটাল সমাজ, সোসাল নেটওয়ার্কিং সমেত মেট্রিক্সের ভার্চুয়াল জীবন।
××××××××××××××××××××××××××××××××××××××
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
অবস্থা সব্বারই একরকম।
একটা সময় ছিলো, পড়ে থাকতাম অর্কুটে, খুঁজে ফিরতাম স্কুল বা কলেজের বন্ধুদের। কজন ই বা ইন্টারনেট এর ধারেকাছে যায়।
আমরা ধীরে ধীরে একেকটা মানুষ একেকটা ছোট ছোট দ্বীপ হয়ে যাচ্ছি। কানে আইপড, হাতে সেলফোন - হেঁটে যাই ভীড়ের মাঝ দিয়ে, পাশের জনের অস্তিত্ব উপেক্ষা করে।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
স্মৃতিকে সুগার কিউবের মতো মর্তমান বর্তমানে গুলে খান। তারপর খিলখিল করে হাসুন। এই আর কি................
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
বস এই কাজটা ভাল করেন নাই ... বিবাহের লেখা হবে আলো ঝলমলা, শুধু রং আর রংয়ে ভরা ... এইরকম মন খারাপ করা একটা লেখা দিলেন কেন?
অনেক অনেক শুভকামনা আপনার বন্ধু আর তার বালিকার জন্য ...
সৌরভ:
এমনিতেই কষ্টে আছি, তার উপর মনটা আবারও বিষন্ন করে দিলে!!!
----
সুমি ও দীপের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
কি মাঝি? ডরাইলা?
আমিও ভালো নেই।
খুব খারাপ আছি।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
তোমার বন্ধুদের জন্যে শুভকামনা রইলো।
খুব শিঘ্রী তোমারেও একই শুভেচ্ছা জানাতে চাই।
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
- এই ব্যাটার ধরণটাই এইরম। বিয়ার কথা লেখে বিষাদের অক্ষরে আর বিষাদের কথা লেখে বিয়ার লাহান ঝলমলা অক্ষরে।
বলি, দুই যুগেই এই অবস্থা শশুর বাবা, আমাগো মতন তিন কুড়ি আড়াই পার হইলে কি হৈবো তখন?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বদ্দা, গুলে খাওয়াটাই শিখতে পারলাম না বলে এই অবস্থা।
কিংকর্তব্যবিমূঢ়, ঝলমলে লেখা শুরু করে দেখি অন্ধকারে ভর্তি হয়ে গেছে।
তারেক, তোমার সে আশার গুড়ে বালি।
হ্যামিলনের দেশের বাঁশিওয়ালা, পিথিমীর উপর মায়া উইঠা গ্যাছে।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
"ভেবে দেখেছো কি,
তারারাও শত আলোকবর্ষ দূরে,
তারও দূরে,
তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে সরে..."
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
বন্ধুরা সব কর্পোরেট বণিক হয়ে যাচ্ছে। বান্ধবীরা এন্টারপ্রেনার (নাকি অনট্র্যাপনিঅর?), নিশ্চিতভাবে কেউ কেউ এন্টারটেইনার। দায়সারা ৩ লাইনের মেইলগুলোও এখন নেই।
দরকার নেই। কিচ্ছু দরকার নেই।
তাই বলে শেষে যে বট গাছের কথা বললেন, ওটা আবার কি? ওহ! আহ্বান?
হুমম, কোন এক তন্দ্রাহরিণীর সাথে ওখানে আপনাকে দেখা যাবে, এটা কনফার্ম।
তিথি,
হুমম, এভাবেই সব্বাই সরে যায়।
শিমুল,
মুক্তির সন্ধানে আছি।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
নতুন মন্তব্য করুন