মৃত মাছের গন্ধমাখানো দিনে

সৌরভ এর ছবি
লিখেছেন সৌরভ (তারিখ: বুধ, ১২/০৯/২০০৭ - ১০:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

না, এই পোস্টে কোন জটিলতা নাই। সহজ কথায় লিখে রাখতে ইচ্ছে করছে একটা দিনের সবকিছু, আগে যেরকম লিখতাম।

মন খারাপ ভীষণ, শারীরিক অবস্থাও সেরকম। ঘুম থেকে উঠেছি অনেক সকালে, মেঘেদের আঁধার আর বৃষ্টিতে মাখামাখি আকাশ ও মাটি, তার মাঝেই বের হই বাসা থেকে।

১০টা থেকে পার্টটাইম ছিলো। সময় মেকআপ দিতে গিয়ে সাইকেল নিয়ে ভার্সিটির পাশের রেল স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে ট্রেন ধরি, ট্রেনের বৃষ্টি-ঘোলাটে কাঁচে নিজের চেহারা দেখে নিজেই চমকে উঠি। এ আমি নই - মনে হতে থাকে। ভিজে ভিজে হাজির হই পার্টটাইমে - ওরাকল ডেভেলপমেন্ট সার্ভার তৈরি করে দিতে হবে - সেই কাজ - কনটেন্টস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের সেটআপ বাগে আনতে পারি না - এই করেই চারটে বেজে যায়।

ল্যাবে ফিরি, ল্যাব নেটওয়ার্ক এর ম্যানেজমেন্ট নিয়ে দেখি দুজন পিএইচডি ক্যান্ডিডেট নিজেদের মাঝে তুমুল তর্কে ব্যস্ত। মেজাজ অনেকদিন পর খারাপ হয়, আর যাইহোক - এরকম একটা দিনে এই দুইজনের গুঁতোগুঁতিতে দুইটারেই চড় লাগাইতে ইচ্ছা করে। পারি না। বাধ্য জুনিয়রের মতো চুপ করে শুনে যাই। এইসব নীতিনির্ধারকেরা ঝগড়া করে, করুক - আমার কাজকর্ম না বাড়লেই হয়।

নিজের পড়াশোনা করার জন্যে ডেস্কে এসে থিতু হওয়ার চেষ্টা করি। হয় না, কিছুতেই কিছু হয় না।
ডেস্কে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি, জাগি, খিদে মেটানোর জন্যে কিছু খাবার-দাবার কিনে আনি। মুকেশ এর পুরনো গান শুনে অনুভূতিগুলো ধুয়ে ফেলার চেষ্টা দেই। ডম ডম ডিগা ডিগা মৌসুম ভিগা ভিগা.. বৃষ্টিতে ভিজে রাজকাপুরের অসাধারণ অভিনয়। তারপরো হয় না, কিছুতেই কিছু হয় না। স্থবির পৃথিবী আর সচল হয় না।

বাসায় ফিরতে ইচ্ছা করে। বাইরে ঠান্ডা। দেশে ফোন করা দরকার, কিন্তু করতে ইচ্ছে করছে না। কাল নাকি আবার রোজা শুরু, মাথা থেকে আপাতত সেই ব্যাপারটা দূরে রাখি।
শিনজো আবে হঠাৎ পদত্যাগ করেছেন। অবাক হই। টিভিতে সেই খবরে ভর্তি। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, রুপোর চামচ মুখে নিয়ে বেড়ে ওঠা জাপানী প্রধানমন্ত্রী, স্ট্রেস সহ্য করতে পারেননি দায়িত্বের। কেউ সুখে নেই!

এইভাবে একটা দিন শেষ হয়, সারাটা দিনের সঙ্গী হয়ে থাকে মরা মাছের আঁশটে গন্ধ মাখানো অনুভূতিরা। মনে হতে থাকে, এই আমি আমি নই।

সেপ্টেম্বর ১২, ২০০৭
----

ডম ডম ডিগা ডিগা"
গান: মুকেশ
"চালিয়া" ছবিতে গাওয়া গান। ইউটিউব থেকে গানটা ক্যাপচার করা।
রাজকাপুরের অসাধারণ অভিনয়ের ভিডিও এখানে , ইউটিউব লিংক


মন্তব্য

অমিত এর ছবি

এইসব দিনগুলা আসে ঘুরে ফিরে। চুপচাপ দেখে যেতে হয়। গো উইথ দা ফ্লো...

______ ____________________
suspended animation...

হযবরল এর ছবি

গানটা ভালো লাগলো। স্ট্রেস হ্যান্ডলিং ইজ বিগ স্ট্রেস। যেরকম চলছে চলুক।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পড়লাম। খুব ভাল লাগলো। গানটার জন্যও ধন্যবাদ। লেখাটা বe-এ দিয়ে দিন।

দ্রোহী এর ছবি

সৌরভ

জীবনটাই এমন! কেমন আছো? আমি ভালো নেই। লেখাটা খুব ভালো হয়েছে কিন্তু পড়ে মন খারাপ হয়ে গেছে। বিষন্নতায় ভরা জীবনে আরও বেশী বিষন্ন হতে ইচ্ছা করে না আর।


কি মাঝি? ডরাইলা?

সৌরভ এর ছবি

হুমমম!


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এইতো জীবন ধেত্তরি আর ধেত্তরিকা বলতে বলতেই সময় কাটে/বিরক্তিহীন বাঁচতে চাওয়ার ইচ্ছে এখন বেগার খাটে...
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অমিত আহমেদ এর ছবি

হুম!


একটা ঝলসে যাওয়া বিকেল বেলা, একটা লালচে সাগরের জলে
যায় ভেসে যায় স্বপ্ন বোঝাই, নৌকা আমার কাগজের...

অন্য ট্রলার এর ছবি

'কেউ সুখে নেই।'
জীবন মাঝে মাঝে মৃত জোনাকীর থমথমে চোখ।

সৌরভ এর ছবি

হাসি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

দৃশা এর ছবি

ধরে নিলাম জীবনটা অনেক বেশী কঠিন...ধেত্তেরি আর ধুত্তরি বলে কেটে যায়...কিন্তু এসব কিছুর মাঝেও ভাল থাকার, খুশি থাকার চেষ্টা করাটা কি খুব কঠিন? আপনার সব লেখার মাঝেই আমি ঘুরে ফিরে একটা জিনিসই পাই..."সীমাহীন বিষন্নতা"। আপনে এতো ভাল লিখেন আপনার কি উচিৎ না জীবনের সুন্দর সুন্দর দিক গুলোও আমাদের মত পাঠকদের কাছে তুলে ধরা। অবশ্যই তার জন্য আগে আপনার নিজের ভাল থাকার চেষ্টা করতে হবে...হাজার রকমের বাধা-বিঘ্নের মধ্য দিয়ে জীবনের সুন্দর দিকগুলো উপভোগ করতে হবে। হয়ত তা করা কঠিন কিন্তু অসম্ভবও কিন্তু না। সরি আপনাকে কোন রকমের উপদেশ বা জ্ঞান কপচানোর জন্য কথা গুলো বলি নাই...আসলেই মন থেকে চাই ভাল থাকুন। আশা করি সামনে আপনার লেখার মাঝে আর বিষন্নতার ছায়া চোখে পড়বে না। বিষন্নতার মাঝে একধরনের সৌন্দর্য্য আছে ঠিকই তবে সেটা যখন মানুষের আত্মাকে কব্জা করে বসে থাকে তখন আর সেটাকে বেশী পাত্তা না দেওয়ায় ভাল।
সো চিয়ার আপ বাডি !!

দৃশা

সৌরভ এর ছবি

হুমম। চেষ্টা করি।
আলটিমেটাম দিলেন মনে হইলো। ইয়ে, মানে...


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আরিফ জেবতিক এর ছবি

-----------------------------------
ঢাকার ভূমে ফিরেছে একাত্তর/প্রস্তুতি নে,সময় হলো তোর..

হিমু এর ছবি

এরকম দিনে কবিতা লেখার মানে
মনে তো হয় না লিখনেঅলারা জানে
তবু কেন কোন না দেখা সুতার টানে
হাতে নেড়ে বলি দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম দেড়ে?
সবকিছু ভুলে গিটকিরি দাও ঝেড়ে!


হাঁটুপানির জলদস্যু

দৃশা এর ছবি

কোথাও বোধহয় খানিকটা প্যাচ-ঘোচ লেগে গেছে। হাসি
প্রতিটা মানুষেরই আবেগের মূল্য অনেক...সেটাকে ছোট করে কেউ কোনদিন বড় হতে পারেনি।
আপনার আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি শুধু এটুকুই বলব যে যাই হোক না কেন ভাল থাকুন।দ্যাট ইজ হোয়াট অল এবাউট।
আর আল্টিমেটামের কথা যখন বললেনই তখন বলি, আল্টিমেটাম দিয়েছি তবে বিষন্ন টাইপ লেখা পরিহার করার জন্য না বরং নিজের জীবন থেকে বিষন্নতাকে দূর করার জন্য।
অনেক ভাল লিখে এসেছেন...সামনেও আরো ভাল লেখা পাবো আশা করি।

দৃশা

ধ্রুব হাসান এর ছবি

"নিজে হাসুন অন্যকেও হাসান।
জনস্বার্থেঃ ব্র্যাক"...হা হা হা...but life is boredom or no where.....সো সৌরভ দাদা চালিয়ে যান আর বেঁচে থাকেন প্রানীকূল যেমন থাকে......sorry নাক গলানোর জন্য!

সৌরভ এর ছবি

হুমম।
আমি নিতান্তই তুচ্ছ ব্লগার, আমি জানি, আমি কখনোই লেখক হতে পারবোনা। হতেও চাইনা।
লেখক হয়ে গেলে তার পাঠক থাকে, পাঠকের কাছে দায়বদ্ধতা নিয়ে চিন্তা করতে হয়। ক্লায়েন্টদের কথা ভেবে চাহিদার যোগান দিতে হয়। আমি এই কাজে নিতান্তই অপটু এবং কখনোই সে চেষ্টা করিনি।
ব্যক্তিগত দিনলিপি ছাড়া কখনো কিছু লিখেছি বলে আমি মনে করতে পারি না।

মানুষ হিসেবে আমি আঁধারে পরিপূর্ণ এবং আমি তার জন্যে ভীষণভাবে দুঃখিত। আশা করি ভবিষ্যৎ সাম্প্রতিক সময়ে আপনাদেরকে সচলায়তনের প্রথম পাতায় কারো দিনলিপির অন্ধকার পাতা দেখতে হবে না।

আলোর শুভেচ্ছা।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

তারেক এর ছবি

একেকটা দিন ঝড় ওঠে
সূর্যকে গ্রাস করে বিষাদ প্রলয়
ডানা ঝাপটায় পাখি বন্ধ খাঁচায়...

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

আপন এর ছবি

এটা কি দুঃখবিলাস জাতীয় কিছু একটা!আমার ভুলও হতে পারে।
এমন বিষন্নতা ক্লান্ত করে দেয়...
সৌরভ আপনার লেখা পড়লেই মন কেমন যেন হয়ে যায়!

নীলের সঙ্গে পথ চলা,ভুল পথে
অথবা তারপরও ভালো আছি ...

দৃশা এর ছবি

ধুত্তরি আপনে দেখি আমার পয়েন্টটাই ধরতে পারলেন না...আমি চাই আপনাকে হাসিখুশি দেখতে...তাইলেই বাকী সব ঠিক হইয়া যাইব। আর আপনে কেনই বা অন্যদের(আমি সহ) কথা শুনে প্রথম পাতায় লেখা প্রকাশ করবেন না? এমন করলে কইলাম খবর আছে...এইবার আল্টিমেটাম দিলাম। আইনের হাত কইলাম অনেক বড়...টোকিও পর্যন্ত যাইব।
আজকে আপনার লেখা পড়লাম ছুটির দিনে। "সময়ের অক্ষরমালা"। আগেও পড়েছিলাম...আপনার লেখা পড়া হয় দেখেই বলেছিলাম যে আপনার লেখার হাত ভীষন ভাল।

দৃশা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।