"তফাত যাও, তফাত যাও! সব ঝুঁট হ্যায়, সব ঝুঁট হ্যায়।"

সৌরভ এর ছবি
লিখেছেন সৌরভ (তারিখ: সোম, ০৮/১০/২০০৭ - ১১:৫২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
আমার রাত কাটানো ছোট্ট ১২-১৩ স্কয়্যার মিটার এর ঘরে দুটো বাতি আছে, একটা রান্নার জায়গাটার দিকে আরেকটা একেবারে ঘরের ঠিক মাঝখানে।
অনেকদিন ঘরের মাঝের এই বাতিটা জ্বালাই না। রান্নার জায়গাটায় বাতিটা জ্বালিয়েই কাজ সারি। আসলে কারণ অবশ্য অন্য। আলো সহ্য করতে পারি না এখন আর।

পেঁচার মতো হয়ে গেছে স্বভাব। অনেক দেরিতে ঘুম থেকে উঠি। মাঝরাতে দৌড়ুতে বেরোই। ছেঁড়া নোংরা নদীটা হাতের ডানে রেখে উড়ে যাই থপ থপ শব্দ তুলে। সাইকেলে টহল দিতে বেরিয়ে পড়া পাড়াতো মামা পুলিশ বেচারির মাঝ রাতের ডিউটিতে দেখা হয়ে যায় অন্য সব দিনের মতো। চেহারা চেনা, কাজেই বিরক্ত করার কোন কারণ নেই। কিংবা শুঁড়িখানা থেকে টালমাটাল হয়ে ফিরতে থাকা কোন মানুষ, আমি দেখেও না দেখার ভান করি যেইগুলোকে। অহেতুক ঝামেলা এড়িয়ে দৌড়ুনোর গতি বাড়িয়ে তুলি।

চেনা পথ, এক ঘন্টা দৌড়ে আসি। ক্লান্ত হই - আবার ভালোও লাগে। মিশ্র অনুভূতি।
বাড়ি ফিরে ভাল লাগার অংশটুকু মাপতে বসি।
নাহ, ঘরের মাঝের ওই বড় গোল দুটো টিউব জ্বালানোর সাহস হয় না। অন্ধকারেই হাতরে রান্নার জায়গায় ওই বাতিটা খুঁজে বের করি। অথচ জানেন, বছর তিনেক আগে এই বাসাটায় আসার মাস দুয়েক পর আমি এই বাতিটার অস্তিত্ব আবিষ্কার করি। খেয়ালই করি নি অনেকদিন।

নিজের কাছে নিজেই কী যেন লুকোতে চাইছি আসলে। কী লুকোতে চাই - বুঝতে পারি না।
আজকাল গণকযন্ত্রের মুখোমুখি জীবনের ভাগ বেশ লম্বা হয়ে গেছে। যতক্ষণ জেগে থাকি, ৫০-৬০ ভাগ মনিটরের সামনে - খুব খারাপ অভ্যাস - জানি খুব ভালো করেই। বদলাতে চেষ্টা করি, পারি না। আগামী কয়েক মাস মনিটর দেখে পার করা দিন আর বাড়বে - দিন দিন কূপমণ্ডুক হতে থাকবো, গুছিয়ে কথা বলার ক্ষমতাটা কমে আসবে, টিপিক্যাল নার্ড এ পরিণত হওয়ার ধাপে আরো এগুতে থাকবো।

২.
নতুন সিমেস্টার শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ হলো, ক্রেডিট নিতে হবে আরো আট মতো। বেছে বেছে সন্ধ্যায় হবে এরকম তিনটে ক্লাস বাছাই করলাম। নাওকি ইনোসে, ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক, লেকচার - আধুনিক জাপানের ইতিহাস। স্কুলের টাকা বেশি হয়েছে - বুঝতে পারলাম - এরকম ফিগারকে ক্লাসে এনে হাজির করতে ট্যাকশো ভালোই যাচ্ছে নিশ্চয়ই। আহহারে, ভুল জায়গায় টাকা ঢালা হয়। আরেকটা ক্লাস নিলাম মনোরোগবিজ্ঞান ১০১ - সাইকিয়াট্রি। সেখানেও দেখি কোন এক বিখ্যাত মনোরোগ বিশারদ।
ইতিহাস, সমাজচিন্তা, রাজনীতি, ধর্ম, মনোবিজ্ঞান - এসব আমায় টানে কেনো যেনো। যন্ত্রপাতির পড়াশুনা ছেড়ে এগুলোর কোন একটাতে বদলিয়ে ফেলবো নিজের হাঁটাচলা - অনেকদিন ভেবেছি।
সে ভাবা পর্যন্তই।

এসব শুধু ভাবা পর্যন্তই। বাঙালি মধ্যবিত্তের বীজ শরীরে-মনে যার, সে এইসব ভাবনার বাস্তবায়ন করতে পারে না। সমাজচিন্তা করে পেটের ভাত জুটবেনা বলেই তো যন্ত্রবিজ্ঞান পড়ি, মানে পড়ার ভান করি। ডিগ্রির লোভে অভিনয় করে যাই প্রতিক্ষণ, প্রতি পল।
বাঙালি মধ্যবিত্ত ভুল পথে ভুল জীবন যাপন করতে থাকে, সে বাঁধা পড়ে পরিবারে, তার কাছে প্রত্যাশা করা যায় না কোন বিপ্লবের। তার ভাবনাগুলো মাথার রান্নাঘর থেকে বড়োজোর ডায়রির পাতায় আসে, খুব বেশি স্বপ্নবাজ হলে লিটল ম্যাগে যায়, দৈনিকের পাঠক ফোরামে আলোর মুখ দেখে। মধ্যবিত্ত বাঙালি আশি ভাগই ভুল সঙ্গী বা সঙ্গিনী বেছে নেয় - সমঝোতা করে কাটিয়ে দেয় বছর বিশ-ত্রিশেক, এইভাবেই টেঁসে যায় কোন একদিন।

৩.
এখন চব্বিশ-পঁচিশ, একটা সিম্যুলেশন করা গেলে ভাল হতো - বছর বিশেক পরে কোথায় কীভাবে থাকবো। বাঙালি মধ্যবিত্তের সিম্যুলেশন এনভায়রনমেন্ট তৈরি করে, সম্ভাব্য ইভেন্ট গুলো লিখে রান করে দেখা যেতে পারে। আচ্ছা, সিম্যুলেশনে কি আবেগজনিত আত্মহননের চেষ্টা অথবা পরিস্থিতিজনিত জীবন থেকে পলায়ন - এইসব ইভেন্টও রাখা উচিত হবে?

গত ছয় বছরে দুইবার আত্মহননের দুটো সূক্ষ্ম চেষ্টা চালিয়েছিলাম, বেশিদূর এগুতে পারিনি। আবেগের সাথে টানাটানিতে লজিক জিতে যাওয়ায় বেঁচে গেছি। সে গল্প শুনতে চাইলে বলতে পারবো না। তবে, কাগুজে ডায়রির পাতায় লেখা আছে । ছিঁড়ে বা পুড়ে ফেলবো বোধহয় কোনদিন।
সিম্যুলেশনটা ধোপে টিকবে না - মনে হচ্ছে।
এইসব জীবনে সিম্যুলেশন কাজ করে না।

এইসব জীবনে পেঁচারাই জিতে যায়।
এইসব জীবনে দেখিস একদিন আমরাও বলে শেষ করতে হয় নিজের বরাদ্দ সময়।
এইসব জীবনে বড় বাতিদের জ্বালিয়ে নিজের উপরে আলো ফেলার মতো সাহস হয় না কখনোই আর। তাই মেহের আলি র মতো ঘরের চারপাশে ঘুরতেই থাকি নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে আর চিৎকার দেই "তফাত যাও, তফাত যাও! সব ঝুঁট হ্যায়, সব ঝুঁট হ্যায়।"
----

ছবি নিজস্ব, সময়কাল- অক্টোবর ০৮, বাইরে ম্যাঁড়ম্যাঁড়ে বৃষ্টি, ঘরে আবদ্ধ


মন্তব্য

আমি এর ছবি

"গত ছয় বছরে দুইবার আত্মহননের দুটো সূক্ষ্ম চেষ্টা চালিয়েছিলাম, বেশিদূর এগুতে পারিনি। আবেগের সাথে টানাটানিতে লজিক জিতে যাওয়ায় বেঁচে গেছি।" ..................

আত্মহনন !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

কিন্তু কেন???

সৌরভ এর ছবি

বলতে পারবো না।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বাঙালি মধ্যবিত্ত ভুল পথে ভুল জীবন যাপন করতে থাকে, সে বাঁধা পড়ে পরিবারে, তার কাছে প্রত্যাশা করা যায় না কোন বিপ্লবের। তার ভাবনাগুলো মাথার রান্নাঘর থেকে বড়োজোর ডায়রির পাতায় আসে, খুব বেশি স্বপ্নবাজ হলে লিটল ম্যাগে যায়, দৈনিকের পাঠক ফোরামে আলোর মুখ দেখে। মধ্যবিত্ত বাঙালি আশি ভাগই ভুল সঙ্গী বা সঙ্গিনী বেছে নেয় - সমঝোতা করে কাটিয়ে দেয় বছর বিশ-ত্রিশেক, এইভাবেই টেঁসে যায় কোন একদিন।

মধ্যবিত্ত ৮০ ভাগ ভুল সংগী বা সংগীনি বেছে নেয় এবং বাকী জীবন সমঝোতা করে বলেই হয়তো এখনো এক ছাউনির নিচে কিছু দেবশিশু খেলা করে। শত দ্বিমত সত্বেও সকালে টিফিন ক্যারিয়ারটা গুছিয়ে দেয় বৌ। কিংবা ক্যারিয়ারিস্ট বৌয়ের মাথা ব্যথা হলে চালটা চুলায় তুলে, এবড়ো থেবড়ো ডিমটা ভাজি করে বাচ্চার হোমওয়ার্ক গুছিয়ে স্বামীটি ঘুমোতে যায়। সপ্তাহের ঝগড়া আর ক্লান্তিকর জীবন শেষে দুজন মানুষ হয়তো শপিংয়ে বেরুয়, রিক্সায় খানিকটা সময় কাছাকাছি, পুরনো স্মৃতির ফিরে আসা স্পর্শ। ভুল মানুষকে বেছে নিয়েও কোনো মোমবাতি জ্বলা সন্ধ্যায় কি মনে হয় না, সব কিছু ভুল হয়নি। বাঙালী মধ্যবিত্তের এই মননটা বোধ করি একেবারে ঠুনকো না।

আর ফ্রিডম অব চয়েজে ভুল জানাজানির সম্ভবনা কি একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায়? সেই সমঝোতার ঘোরপ্যাঁচে জীবনটা আঁটকে থাকে।

হয়তো, যেমন বলেছেন, মাঝের লাইটটা অনেকদিন পরপর জ্বালানো দরকার। আঁধার কেটে যাওয়ার একটা না একটা উপায় তো থাকবেই!

সৌরভ এর ছবি

সব্বাই সাহসী হতে পারেনা, শিমুল।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

এহেছান লেনিন এর ছবি

এইসব জীবনে বড় বাতিদের জ্বালিয়ে নিজের উপরে আলো ফেলার মতো সাহস হয় না কখনোই আর। তাই মেহের আলি র মতো ঘরের চারপাশে ঘুরতেই থাকি নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে আর চিৎকার দেই "তফাত যাও, তফাত যাও! সব ঝুঁট হ্যায়, সব ঝুঁট হ্যায়।"

নিরন্তর অসহায় আত্মসমর্পণ, আত্মহননের চেষ্টা এসবই আমারও হয়। আমিও এরকমই পেঁচার মতো হয়ে যাচ্ছি আমিও। আমার মতো আর কতজন! তাদের মতো হাজারো, লাখো। তবুও বেঁচে থাকি, থাকতে হয়, পিছুটানে টেনে ধরে আমাকে-আমাদের।

যেহেতু আত্মজীবনী, তাই বলবো ভালো লেগেছে। তবে কষ্টে নীলও হতে হয়েছে এ লেখা পড়ে।

রক্তে নেবো প্রতিশোধ...

সৌরভ এর ছবি

কৃতজ্ঞতা।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

কনফুসিয়াস এর ছবি

সৌরভের লেখা পড়লে ইদানীং ইচ্ছা করে ওর কাছে গিয়া খুব জোরে জোরে ঝাঁকি দিই কয়েকটা।
ঐ মিয়া!
-
autoযা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

বিপ্লব রহমান এর ছবি

গত ছয় বছরে দুইবার আত্মহননের দুটো সূক্ষ্ম চেষ্টা চালিয়েছিলাম, বেশিদূর এগুতে পারিনি। আবেগের সাথে টানাটানিতে লজিক জিতে যাওয়ায় বেঁচে গেছি।

ক্যারি অন, স্টিল টুমোরো, ক্যারি অন!


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সৌরভ এর ছবি

কৃতজ্ঞতা, বিপ্লব দা।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আত্নহননের বিষয়টা খারাপ।
জীবিত থাকলে নানান ঝামেলা ঠিক। কিন্তু না থকলে তো পুরাই লস।
জীবিত থাকা মানেই পরবর্তী মজমার সম্ভাবনা বাঁচাইয়া রাখা.....



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

সৌরভ এর ছবি

বদ্দা, মজমার সম্ভাবনায় বাঁচা আর মুলা ঝুলাইয়া ঘোড়ারে দিয়া বেগার খাটায়া নেয়া কি একই জিনিষ মনে হয় না?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

রেজওয়ান এর ছবি

"মধ্যবিত্ত বাঙালি আশি ভাগই ভুল সঙ্গী বা সঙ্গিনী বেছে নেয় - সমঝোতা করে কাটিয়ে দেয় বছর বিশ-ত্রিশেক, এইভাবেই টেঁসে যায় কোন একদিন।"

কোনটি ভুল, কোনটি শুদ্ধ? কোনটি মরীচিকা? - এতো আপেক্ষিক। মধ্যবিত্ত বাঙালীর সবচেয়ে বড় অক্ষমতা ভাবনায় বিশ্ব জয় করলেও জীবনে কমই প্রথার বাইরে সিদ্ধান্ত নেয়, সাগরে ঝাপ দিয়ে সাঁতরানোর সাহস করে। ফলে না এড়াতে পেরে সমঝোতাকেই নিজের স্বপ্নে গড়ে নেয়। এও এক হিপোক্রেসী।

বাঙালী মধ্যবিত্ত হিসেবে জীবনানন্দকে খুব মানি:

বধূ শুয়ে ছিল পাশে-শিশুটিও ছিল;
প্রেম ছিলো, আশা ছিলো-জোৎসনায়,
তবু সে দেখিল কোন ভুত? ঘুম কেন ভেঙে গেল তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল-লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।

চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বথ্থের কাছে
একগাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা একা;
যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের-মানুষের সাথে তার হয় নাকো
দেখা এই জেনে।

জানি তবু জানি
নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;
অর্থ নয় কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিষ্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে
ক্লান্ত-ক্লান্ত করে

অথবা:

মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে;
স্বপ্ন নয়--শান্তি নয়--ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়;
আমি তারে পারি না এড়াতে।

সেই বিপন্ন বিষ্ময় এবং বোধই আমাদের খেলো।
××××××××××××××××××××××××××××××××××××××××
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

সৌরভ এর ছবি

হ্যা, কথা সত্যি, রেজওয়ান ভাই।
আপেক্ষিক সবকিছু।
আমাদের এই বায়াজড চিন্তাকাঠামোর বাইরে আমরা ভাবতে পারি না বলে শুদ্ধ আর অশুদ্ধের বেড়াজাল টানতে হয় আমাদেরকে।
হিপোক্রেট হতে ভাল্লাগেনা।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

মাশীদ এর ছবি

মাঝেমাঝে তোর মত আমারো দিন কাটে এরকম নানা সম্ভাব্য অসম্ভব ভাবনায়। পুরোপুরি পেঁচার মতই হয়ে গেছি, সারা রাতে জেগে থাকি, দিনের আলো ফুটতে শুরু করলে ঘুমাতে যাই। কি আশ্চর্য! রাতে তোর মতই দৌঁড়াতে ইচ্ছা করে হঠাৎ হঠাৎ, জানিস? পাড়ার গার্ডগুলো কি ভাববে সেই ভাবনায় সেটা করা হয় না। ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান আমাকেও টেনেছে বারবার, যন্ত্রকৌশল ছেড়ে দেব ভেবেছি কতদিন - পারিনি। মধ্যবিত্ত অনিশ্চয়তার ভয় গ্রাস করেছে প্রতিবার। আমার ভাবনা কই হারিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসে, তোর মত এত সুন্দর করে সেটা প্রকাশ করাও হয়নি কোনদিন।

কিন্তু আমি জীবন ভালবাসি। ভালবাসি আমার আশেপাশের বা দূরে থেকেও যারা সবসময় মনের মধ্যেই থাকে সেসব মানুষগুলোকে। আমার জীবনে তাদের প্রত্যেকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ আনাগোনা আমার দুঃসময়গুলোকে ব্যালেন্স করে দেয়। জীবনটা অনেক মিনিংফুল মনে হয়, অনেক দামী। বদ্দার মত আমারো মনে হয় যতক্ষণ বেঁচে আছি ততক্ষণই আরো ভাল কিছুর সম্ভাবনা আছে, হয়তো কেউ আমার জীবন ছুঁয়ে যাবে বা আমি কারো। শেষ হলেই সব শেষ। জীবন যতক্ষণ, ততক্ষণই আমার মত রাতজাগা পেঁচা হয়ে তুইও আছিস অন্য দেশের কোন ঘরে। শুধু এইটুকু ভাবনাই আমার মন ভাল করে দেয়। আর আমি মাঝখানের গোল আলোটার সুইচটা জ্বেলে দেই।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

সৌরভ এর ছবি

জানো আপু, আমি প্রতি সপ্তায় আমার নিকটজনদের একটা ফোন দেই বা ইন্টারনেটে খপ করে ধরে, তোমার সিগনেচারের মতো করে বলি "ভাল আছি, ভাল থেকো"।

তারপর কথোপকথন শেষ হওয়ার পর মনে হয়, আর কতো এ অভিনয়? আমি জানি আমি ভালো নেই। কিংবা কথোপকথনের ওপারের মানুষগুলোও।

আমি সাহস পাই না আলোটা জ্বালিয়ে দিতে। অন্ধকারের আড়ালটা সরাতে পারি না কোনওমতে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

মাশীদ এর ছবি

এদিকে তোর সাথে মিলল না। ফোন বা ইন্টারনেটে কথার সময় খারাপ থাকলে বলি খারাপ আছি, ভাল থাকলে ভাল। অন্যদিক থেকেও বেশিরভাগ সময় তাই। we try to make each-other feel better. কারণ সবাই-ই কিছু না কিছু নিয়ে যুদ্ধ করছি।

আমার কিন্তু এই ফোন বা ইন্টারনেটের কথা ভাবলেও মন ভাল হয়ে যায়। ভাবি, ভাগ্যিস আমার বাবা যেসময় বিদেশে পড়তে গিয়েছিল আমার সেইকালে যেতে হয়নি। আমরা তো অনেক লাকি - ইচ্ছা করলেই ফোন-এসএমএস করতে পারি, আমার মায়ের সাথে প্রায় রেগুলারলি ভিডিও চ্যাট করতে পারি, আর এমনি চ্যাটে তো সবসময়ই কেউ না কেউ আছেই। আর আছে এ ব্লগ আর তোরা। আহ্ টেকনলজি! কে বলেছে জীবন সুন্দর নয়?

ভাল থাকিস।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

সৌরভ এর ছবি

তারেক,

ঝাঁকি খেলাম মনে হয়।

তোমার সিগনেচারটা এরকম ভাবে লিখো।
সাইজ আর বড় হবে না।

<img src="http://www.sachalayatan.com/free_internet_bd.gif" alt="Stop Internet Monitoring" border="0" />


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

দ্রোহী এর ছবি

সৌরভ:

ঘটনা কি? আত্মহননের চেষ্টা কেন? তুমি যেভাবে দুঃখের গল্প/কবিতা লেখা শুরু করেছ - মনে হচ্ছে দুঃখবাদী কবি/সাহিত্যিক হিসাবে বিখ্যাত হয়ে যেতে খুব বেশী সময় লাগবে না।


কি মাঝি? ডরাইলা?

সৌরভ এর ছবি

দুঃখবাদী কবি/সাহিত্যিক !!


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

দ্রোহী এর ছবি

ব্যাপার না ম্যান - মরার আগের দিন পর্যন্ত যুদ্ধ করে যাব, তবু মাথা নোয়াবো না। আত্মহনন.....অনেক দুরের ব্যাপার।


কি মাঝি? ডরাইলা?

সৌরভ এর ছবি

চিন্তা না করার অনুরোধ জানাই।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

ফারুক হাসান এর ছবি

পড়লাম। অন্যরকম লাগলো।
সত্যিই অন্যরকম।

----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

সৌরভ এর ছবি

কৃতজ্ঞতা।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'আমার বয়স বাড়ে,আমি বাড়িনা'
অনুভূতিগুলো কি আর বদলায় খুব বেশী? একটা সময় এসে চেপে যেতে হয়,চেপে যাওয়া শিখে নিতে হয় ।
এই আর কি ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বিষণ্ণতা কিংবা বিষণ্ণ থাকা সবসময় ঋণাত্বক না সৌরভ। এর মধ্যে থেকেও রামধনুর অষ্টম রঙটা চোখের পেছনের রেটিনায় অবলোকিত হয়। জগতের খুব কম মানুষই বোধহয় সেই সৌ/দুঃভাগ্যের অধিকারী হয়। নিজের ঘরে অন্ধকারেও হাতরে ছোট বাতির সুইচটা বের করা যায় সবকিছুর বিন্যাস ভালোকরে জানা থাকে বলেই। বড় আলোর দরকার হয় না। শুধু জানলেই হয়, ফোকাসিং পয়েন্টটা কি এবং কোথায়।
হিসাব মেলাতে গিয়ে সূত্রে গোলমাল করার মানে হয় না। বরং সূত্র ঠিক থাকলে একসময় হিসাব মিলবেই। একটু ঘুরাপথে, তাও হোক না।
খেয়াল রাখলেই হবে, বিষণ্ণতা যেন বিতৃষ্ণার কারণ না হয়ে যেতে পারে। নাথিং শ্যুড রুল ওভার য়্যু, য়্যু আর দ্য ওয়ান হু ইজ গোয়িং টু রুল ওভার এভরি থিং!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।