চেতন ভগতের সাথে পরিচয়ের শুরু থ্রি ইডিয়টস মুভিটা নিয়ে নেটে সার্চ দিতে গিয়ে। মুভির ডিরেক্টর হিরানি এমনকি আমির খানের সাথেও নাকি চেতনের কাদা ছোঁড়াছুড়ি হচ্ছে। কারন, চেতনের দাবী মুভির কাহিনী তার লেখা বই “ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান” থেকে পুরোপুরি নেয়া। অন্যদিকে মুভি সংশ্লিষ্টদের দাবী কাহিনীর ভিতটা বই থেকে নেয়া হলেও এমন কিছু মিল নেই যার জন্য লেখককে ক্রেডিট দেয়া যেতে পারে। যাইহোক এরপর লিঙ্ক জোগাড় করে বইটা নামালাম, পড়লাম এবং চেতনকে চিনলাম। (যারা এখনো পড়েন নাই, তাদের শুধু বলি- মিস করতেছেন।) চেতন ভগতের আরো একটা বই আছে “ওয়ান নাইট এট দ্যা কলসেন্টার”। এর কাহিনী থেকে “হ্যালো” নামে একটা হিন্দি মুভি আছে।
তো এই বইমেলায় বাতিঘরের স্টলে চেতন ভগতের “থ্রি মিস্টেকস অফ মাই লাইফ” বইটার অনুবাদ দেখে আগ্রহ নিয়ে হাতে নিলাম এবং সারসংক্ষেপ পড়ার পর দুর্দিনের কথা ভুলে গিয়ে কিনেও নিলাম।
কাহিনীর শুরুটা মোটামুটি এরকম- লেখকের কাছে আহমেদাবাদ থেকে এক যুবকের ইমেইল আসে। ওতে সুইসাইড নোট লেখা ছিল। লেখক প্রথমে সংশয়ে ভোগে যে এটা জাঙ্ক মেইল কিনা, পরে পরিচিত এক প্রফেসরকে বলেকয়ে তার ছাত্রদের দিয়ে যুবকটির খোঁজ বের করে। জানা যায় যুবক বেশ কয়েকটি ঘুমের বড়ি খেয়ে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরদিন এক দুর্দান্ত গল্প শোনার নেশায় সিঙ্গাপুর থেকে রওয়ানা দেয় লেখক, হাসপাতালে যুবকটির সাথে দেখা করে।
কাহিনী মূলত তিন যুবক আর এক ছোট ছেলেকে নিয়ে আবর্তিত। গোবিন্দ- এ বইয়ের নায়ক। নাস্তিক, স্বার্থান্বেষী এবং ব্যবসায়িক বুদ্ধি প্রবল। অঙ্কে মাথা ভাল, তাই এলাকার সব বাবামাই চায় তাদের বাচ্চার জন্য গোবিন্দকে টিউটর হিসেবে পেতে। ছোট বয়সে বাবা তাদের ছেড়ে চলে যায়। গোবিন্দের মা একটা খাবারের দোকান চালায়। ব্যবসার চিন্তায় আর মাকে ছেড়ে থাকতে হবে- এই ভয়ে সে আইআইটি তে ভর্তি পরীক্ষা দেয়নি।
গোবিন্দের বন্ধু ইশান। মিলিটারী স্কুল থেকে পালিয়ে এসেছে বলে বাবা দিনরাত কথা শোনায়। ভাল ক্রিকেট খেলে এবং ক্রিকেট বলতে পাগল। এলাকার ছেলেদের কাছে এজন্য সে হিরো। তার ছোট বোন- বিদ্যা। ইশান হিন্দু, কিন্তু ধর্ম বা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় না।
আরেক বন্ধু অমি। স্থানীয় মন্দিরের পুরহিতের ছেলে। বোকাসোকা, শরীর গঠনে মনযোগী। অতিমাত্রায় সাম্প্রদায়িক, কিন্তু সে পুরহিত হতে চায় না, অন্য কিছু করে খেতে চায়। অমির মামা হিন্দু রাজনৈতিক দলের কর্মী।
এই তিন বন্ধু ক্রিকেট সরঞ্জাম বিক্রির একটা দোকান খোলে। মন্দিরের বাইরে খালি জায়গায় দোকান তোলা আছে, অমির সহায়তায় কমে ভাড়া নেয়া হয়। গোবিন্দ হিসাব দেখে, ইশান ফ্রি টিপস দেয়। পরবর্তীতে তাদের ব্যবসা আরো বড় হয়, ইশান টাকার বিনিময়ে ক্রিকেট কোচিং শুরু করে, অমি শরীরচর্চা করায় আর গোবিন্দ স্টেশনারী জিনিসপত্র বিক্রি শুরু করে, সাথে টিউশনিতো আছেই।
ঘটনার প্রবাহে কাহিনীতে আসে এক ছোট ছেলে আলী, বিস্ময়কর ক্রিকেট প্রতিভা। ইশান তাকে ফ্রি কোচিং শুরু করে। গোবিন্দ টাকা না নেয়ায় বিরক্ত হয়, আর অমি বিরক্ত হয় ছেলেটা মুসলমান বলে। আলীর বাবা সরকারী দলের পাতি নেতা।
বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখা- ‘তিন যুবকের তিন রকম অবসেশনঃ অঙ্ক, ক্রিকেট আর ধর্ম’। গল্পের শুরুতে অমিকে যেভাবে চিনবেন, শেষে যেয়ে একটা ধাক্কা খাবেন নিশ্চিত। আর আমার সবসময়ই মনে হয়েছে গোবিন্দের অবসেশন হল ব্যবসা। ইশানের ক্রিকেট প্রেম পুরো বইটি জুড়েই আছে। আর বিদ্যার চরিত্রটাতো আমি বিশেষভাবে লাইক করছি
চেতন ভগত তার উপন্যাসে গুজরাটের ভূমিকম্প আর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা খুব ভালভাবে তুলে এনেছেন। বলা যায় ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে ভারতের কিছু গুরুত্বপুর্ণ ঘটনা কাহিনী হিসেবে এসেছে।
বইটি ২০০৮ সালে বের হয় এ পর্যন্ত চল্লিশ লাখেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। এই বইটিই চেতনের ‘বেস্ট সেলিং’ বই। কিছু বানানে ভুল আর অনুবাদের সমস্যা উপেক্ষা করলে বইটি পড়ে ভাল লাগবে আশা করি। আর না হলে নেট তো আছেই, ইংরেজি পিডিএফ নামাতে কতক্ষন। ১৮+ কন্টেন্ট আছে, কাজেই ছোটরা সাবধান।
মন্তব্য
রিভিউ ভাল লাগল। ধন্যবাদ। বইটা পড়া নেই যদিও। চেতন ভগত-এর ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান বইটা ভাল লেগেছিল, মুভিটা লাগেনি।
কৌস্তুভ
সাজিদ, দীর্ঘদিন পর লিখলেন!!
>>পুরোহিত
বইটা পড়ার লোভ হচ্ছে খুব,
ঝটপট জোগাড় করতে হবে...
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ডাউনলোড লিঙ্ক দিলে আমার মতো অলসদের ভালু হতো!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
4shared এ এট্টু ঢুঁ মারেন।
@ লেখক বইটা পড়তেছি । বইমেলার কারণে আর পড়া হয় নাই । এই লোকের বই ভারতে বেশি চলে দুইটা কারণে একটা হচ্ছে সহজ ইংলিশ আরেকটা হচ্ছে দাম নাগালের মধ্যে ।
থ্রি ইডিয়টস মুভির চেয়ে বইটা অনেক ভালো । যদিও ফাইভ পয়েণ্ট সামওয়ান অত ভালো লাগে নাই, মুভির চেয়ে ভালো লাগছে এইটা বলতে পারি ।
এই বইটা শেষ করে ফেলব ।
এই লোকের ৩ টা স্পিচ ও পড়ছি (উনার সাইটে আছে ) । উনার আইডিয়াগুলা ভালো লাগছে । লোকটারেই আমার পছন্দ! গুগল রিডারে সাবস্ক্রাইব কইরা রাখছি ।
রিভিউতে
__________________________
হৃদয় আমার সুকান্তময়
আচরণে নাজরুলিক !
নাম বলি বোহেমিয়ান
অদ্ভুতুড়ে ভাবগতিক !
_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!
মিডিয়াফায়ার ডাউনলোড লিঙ্ক
------------------------------------
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।
পড়তে হবে।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
পড়ার আগ্রহ রইলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
- থ্রি ইডিয়টস নিয়ে হাদুমপাদুমের সময় নেট খুঁজে চেতন ভগতের ওয়েব সাইটে ঢুকেছিলাম। সেখান থেকে হিরানির একটা ইউটিউব ইন্টারভিউ। চেতন যেটা দাবী করছে, হিরানি সেটা কর্তন করছে। ব্যাপারটা এমনই মনে হয়েছে। চেতন ভগত আসলে ক্ষেপছে সিনেমায় তাকে লেখক ক্রেডিট না দেয়াতে। আর হিরানির বক্তব্য হলো তারা চেতনের কাছ থেকে গল্পের স্বত্ব কিনে নিয়ে সেটাতে ছুরি-কাঁচি চালিয়ে যে নতুন কাহিনী দাঁড়া করিয়েছে সেখানে লেখক হিসেবে চেতনের নাম আসার কথা না। তাই স্বভাবতই ভিদো বিনোদ চোপরা আর হিরানির নাম আসছে কাহিনীকার হিসেবে।
থ্রি মিসটেকস অফ মাই লাইফ- পড়ি নাই। দেখি হাতের কাছে পাই কিনা!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
পড়তে হয়
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
নতুন মন্তব্য করুন