[নিজেকে নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে এই সিরিজের সূচনা। দুই হাতে লেখার এক্সপেরিমেন্ট! যথারীতি আব্জাব গল্প। বিশেষত্ব হচ্ছে আমি ঘন্টায় কয়টা গল্প লিখতে পারি এটা তার একটা স্ব-পরীক্ষা। গল্পের মান সম্পর্কে তাই কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছিনা। হিসেবের জন্য মোবাইলে টাইমার অন করেছি। টিক্ টিক্ টিক্ ... গল্প শুরু হল!]
কৌতুহল
ছেলেটা দৌড় দৌড়ি করতে করতে মাঝে মাঝে তাদের বাসার দখিনের জানালায় এসে থমকে দাঁড়ায়। এমন না যে ফুল-পাখি-লতাপাতা এসবের প্রতি তার খুব কৌতুহল আছে। জানালা দিয়ে ওসব দেখাও যায়না । জানালার ওপাশে একটু ফাকা যায়গা। তার ওপারেই একটা হলুদ বাড়ি। মাঝে মাঝে ছেলেটা গভীর কৌতুহল নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে জানালার গ্রিল বেয়ে উঠে পড়ে কিছুটা। ওপাশের হলুদ বাড়িটার জানালাতেও তখন একটা বয়স্ক মুখ উকি দেয়। সেই মুখটাও তাকিয়ে থাকে এদিকে। গভীর কৌতুহলে!
তারপর ছেলেটা বড় হতে থাকে। এখনও মাঝে মাঝে সে আসে ঐ জানালার কাছে। সেই বয়স্ক লোকটাও আরো বয়স্ক হয়। এখন তাকে জানালার ধারে পাওয়া যায় আরো বেশি। ছেলেটা কৌতুহল নিয়ে তাকায় তার দিকে। আর ভাবে, ‘কী করে এই লোক, সারাক্ষন জানালার ধারে!’
তারপর একসময় ছেলেটাও ‘লোক’ হয়ে যেতে থাকে। আর সেই বয়স্ক লোকটা হয়ে যেতে থাকে হলুদ ফ্রেমে আটকা পড়া একটা বৃদ্ধ। ছেলেটার কৌতুহল তখনো মেটেনা। বুড়ো লোকটা জানালার ধারে তার রহস্যময় কার্যক্রম চালিয়েই যায়। এখন আরো বেশি নিষ্ঠার সাথে।
তারপর একদিন মাঝের ফাকা যায়গাটাতে একটা গোলাপী রঙের বিল্ডিং হয়। তখন সেই হলুদ ফ্রেমটা বিদায় নেয় সামনে থেকে। সেই ‘ছেলে’ , যাকে আমরা এখন অনায়াসে ‘লোক’ বলতে পারি, তার কৌতুহল তখনো মেটেনা!! মাঝে মাঝে সামনের রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে যেতে সে উকি মারে সেই জানালার দিকে। প্রবীন একটা মুখ খোজে। বেশির ভাগ সময়ই পায়। ফ্রেমের ছবি হওয়াতে সেই প্রবীনের তখনো কোন গাফলতি নেই!
তারপর এক সময় মাঝখানের গোলাপী বাড়ির আড়ালের কারণেই মনে হয়, সেই হলুদ ফ্রেম মনের আড়াল হয়ে যায় তার। সময় বয়ে যেতে থাকে...
অনেক অনেক দিন পর একসময় মাঝের সেই আড়ালটা কেটে যায়। ‘সময়’ই বুঝি ভেঙ্গে ফেলে সেই গোলাপী ভবনটাকে। তাই বলে সেই লোকটার মনের গহীন থেকে সেই ছোট্ট কৌতুহলটা কিন্ত দুর করতে পারেনা সে। লোকটা এসে উকি দেয় আবার সেই জানালায়। হলুদ ফ্রেমটা তখনো হলুদই আছে (ফ্রেমের পাশে কিছু কালচে সবুজ ছোপ আর খসে যাওয়া প্লাস্টারকে যদি আমরা উপেক্ষা করি)। শুধু সেই বয়স্ক মুখটা নেই।
লোকটা সেই বয়স্ক মুখ খুজতে খুজতে একদিন আরেকটা মুখ পেয়ে যায়। ঠিক সেই লোকটার মতই চেহারার ধাচ। একটা ছোট্ট ছেলে। দৌড় ঝাপ করতে করতে এসে ঝুলে পড়ে জানালার গ্রিল ধরে। কৌতুহল নিয়ে তাকায় এদিকে।
তারপর ছেলেটা ঘন ঘন আসতেই থাকে। আর বড় বড় দূটো কৌতুহলি চোখ দিয়ে তাকিয়ে থাকে জানালায়। আমাদের লোকটা ততদিনে পৌছে গেছে তার নিজের জীবনের শেষ সীমানায়। সারাদিন জানালার ধারে বসে জীবনের পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মেলাতে মেলাতে একটা অসস্তির মধ্যে পড়ে মাঝে মাঝে। মাথার মধ্যে একটা ছোট্ট প্রশ্ন একটু খোঁচা দেয় যেন। হয়তো সেই বুড়োর ছাপ ওয়ালা মুখটাই উস্কেদেয় তার সেই পুরোনো কৌতুহল। সে ভাবে,
‘আচ্ছা, কি এমন কৌতুহল যা ঐহলুদ বাড়ির মানুষ গুলোকে একটা জানালায় আটকে রাখে? বংশ পরাম্পরায়...’
[প্রথম ঘন্টার সেশনে মোট গল্প হয়েছিল ৫ টা। এইটা তার পঞ্চম গল্প। কোন পাঠকের যদি কৌতুহল হয় যে অপ্রয়োজনীয় ভাবে তড়িঘড়ি লিখলে লেখার মান কেমন হতে পারে। তার জন্য আগের ৪ টা লেখার লিঙ্ক দিয়ে দিলাম নিচেঃ
দুই হাতে লেখা - ৪ ( ক্লান্তি )
দুই হাতে লেখা - ৩ (ভাবুক )
দুই হাতে লেখা - ২ (পশু)
দুই হাতে লেখা - ১ (শির শির)
কিছু লেখা সুক্ষ রুচিতে বাধতে পারে। আশাকরি পাঠক নমনীয় দৃষ্টিতে দেখবে]
মন্তব্য
- একঘন্টার ৫টা গল্পই তো উপাদেয় হইছে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
তড়িঘড়ি রান্না!! উপাদেয় হয়েছে শুনে খুব ভাল লাগছে।
ভয়ে ছিলাম ঝাল নুন ঠিক হয় কিনা!! হে হে হে
৫ টা গল্পেই আপনাকে পেয়েছি পাঠক হিসেবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ! পরেও পাবার আশা রাখি।
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আবাজাব গল্প একেবারেই নয়। খুবই সুন্দর!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আমি যা লিখি সবই আব্জাব।
সুন্দর কমেন্টের জন্য অনেক ধনব্যাদ।
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
মজার গল্পটা! গল্পটায় একটা মজার টুইস্ট দিতে ভারী ইচ্ছে করছে! ধরুন, যে ছেলেটি পাশের বাড়ির সেই বুড়োটাকে দেখতে দেখতে একসময় নিজেই বুড়ো হয়ে গেল এবং আবিষ্কার করল, পাশের বাড়ির সেই ফ্রেমে তখন অন্য এক বালক, সেই মুহূর্তে ঐ পাশের বাড়ির বালকটি তাকে দেখতে শুরু করল পাশের বাড়িতে ফ্রেমে আঁটা এক বৃদ্ধের মুখ হিসেবে। এইভাবে দেখতে দেখতে এই বালকটিও বুড়ো হয়ে যাবে একসময়, তারপর আবার অন্যপাশে উঁকি দেবে আরেকটি বালকের মুখ... এভাবে চলতেই থাকবে ইতিহাস...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
ইয়ে... মানে, আমি আসলে সেইরকম কিছু একটা বুঝাতে চেয়েছিলাম! তবে ঘন্টা শেষ হয়ে গেল তো তাই আর পুরা লুপ টা আরেকবার লিখিনাই।
আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগছে। আমি আপনার লেখার একজন দুর্দান্ত ফ্যান!!
"আবুল মিয়ার ছক্কা হোটেল" টা তো প্রায় মুখস্তই করে ফেলেছি।
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আবজাব শব্দের মানেটাই তো পাল্টে দিচ্ছেন
হা হা হা!!
আমার কাছে 'আব্জাব' মানে হল " মন যা চায় তাই"
এই অর্থটা নিয়ে নিতে পারেন! আপনিও।
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ভাইজান পরীক্ষা তো শেষ হয়ে গেলো গল্পের লুপটা ভালো হইছে...আপনার মাথায় এতো আইডিয়া থাকে কিভাবে?
---------------------------------
পরীক্ষা শেষ নাকি?!! বাহ্ এখন তো মজা!!
এবার অনেক গুলো গল্প লিখে ফেল।
আর আইডিয়ার কথা বললে নাকি!! হা হা হা। আমি 'ভাবুক' মানুষ তো তাই আইডিয়ার অভাব হয় না!
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
জটিলস্য
____________________
ওয়েব সাইট | ফেইসবুক | অরকুট |
_____________________________
টুইটার
ধন্যবাদ!
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
চরম লাগছে।
মৃদুল ভাই যেটা বললো গল্পের শেষে আমি সেরকম কিছুই আশা করেছিলাম। সেটা ক্যানো হয়নি তাও অবশ্য কমেন্ট এ বলে দিয়েছেন।
যাই হোক আর কথা না বাড়াই...
এখন আর ঘন্টায় ঘন্টায় না, মিনিটে মিনিটে লিখতে থাকেন ,
আজীবন স্বাধীনতা যখন পেয়েই গ্যাসেন
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
হা হা হা
হুম আমিতো লিখতেই আছি!
কিন্তু "আজীবন স্বাধীনতা" মানে??
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
দূর্দান্ত !
গল্পটা পড়ে দুইটা জিনিষের কথা মনে পড়ল ।
১. অসীম লুপ
২. বাইস্টেবল মাল্টিভাইব্রেটর
দুইটা জিনিসেরই একটা শুরু থাকে । এই গল্পের শুরুটা দেখাবেন না ?
- এনকিদু
যাক শেষ মেষ আমার একটা গল্প পড়লা তুমি।
হুম শুরু অবশ্য থাকে। কিন্তু এই গল্প হইলো অনাদি ও অনন্ত!!
মানে পিছনের অথবা সামনের যেদিকেই যাও একই ঘটনা ঘটতেই থাকবে!
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ভালো লাগলো লেখাটা। কিন্তু এবার মনে হয় এক্সপেরিমেন্ট বাদ দিয়ে ঘড়ি না-ধরে লেখার সময় হলো।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
না মানে, ঘড়ি না ধরেও লিখি অবশ্য। তবে এক্সপেরিমেন্টের যে মজা সেইটা ছাড়া মুশকিল!
আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমারো খুব ভাল লাগছে!
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আপাতত রেকর্ড হল ৫। দেখা যাক কত তে গিয়ে ঠেকে এই রেকর্ড......
ভাল্লাগছে...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিপ্রতীপ ব্লগ | ফেসবুক | আমাদের প্রযুক্তি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
থেঙ্কু।
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
গল্পের শেষটায় গিয়ে লুপটার কথা আমার ও মাথায় এসেছিল। গল্পে সেটা পেলাম না দেখে গল্পটিকে ফেইল মার্ক দিতে যাচ্ছিলাম। পরে মন্তব্য পড়ে দেখি সেটা কেন নেই সে ব্যাখ্যা দেয়া আছে।
দুই হাতে লেখা গল্পগুলোর জন্য জাঝা নির্ধারণ করা হল। নজরবন্দী দশা কেটে যাক শীঘ্রই এই কামনা করছি।
অনেক ধন্যবাদ বস!!
দেখি এডিট করার অপশন পেলে গল্পটাতে আরেক প্যারা যোগ করে দিব!!
দুই হাতে লেখা গল্প গুলো পড়েছেন দেখে আমি যার পর নাই আনন্দিত!!
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
নতুন মন্তব্য করুন