গনিমৎ এর মাল এসেছে ছয়টা। সেসবের ভাগাভাগি নিয়ে ক্যাপ্টেন কামরান এবং ক্যাপ্টেন রেহাদ এর মধ্যে একটু বাক-বিতন্ডা চলছে। নরমালি মেজর আকমল তার এই সেকেন্ড ইনচার্জদের কড়া নিয়ন্ত্রনে রাখে। আফটার অল ডিফেন্সে ডিসিপ্লেইনটাই তো আসল, নাকি? এমনিতে একটু ধমক ধামক দিলেই সব ঠিক হয়ে যায়। খুব বেশি তেড়িবেড়ি করলে বুটের দুয়েক ঘা। ব্যাস সব ঠান্ডা। কিন্তু আজ সে সেটা পারছে না। এমন না যে আজ তার পায়ে জোর কমে গেছে। আসলে তার জোর কমে গেছে অন্য যায়গায়। এই লজ্জাতেই সে গনিমৎ ভাগাভাগির আলোচনায় অংশ নেয়নি। তার এই দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে রেহাদ আর কামরান তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে যে বাকবিতন্ডা করছে তাতে নিস্ফল আক্রোশে গজরানো ছাড়া তার আর কিছুই করার নেই।
কেউ হয়তো ভাবতে পারে তিনটা তিনটা করে দুই ভাগ করে নিলেই তো হয়। কিন্তু সমস্যা তো আর ছয়টাকে নিয়েই না, সমস্যা একটা কে নিয়ে। অন্য সময় হলে আকমল এই সমস্যার মূলোৎপাটন করত নিজেই। কিন্তু তার পক্ষে এখন সঙ্গত কারণেই সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না।
এর মধ্যে ঘরে ঢুকলো এক বাঙ্গালী কালা আদমী। কামরান খেকিয়ে উঠলো, “তুম কালা আদমী! ভাগো হিয়াসে!!”। কালা আদমির পা এমনিতেই ঠক্ ঠক্ করে কাপছিল। ধমক শুনে তো আরেকটূ হলে লুঙ্গি ভিজিএই ফেলতো। অন্যসময় হলে এই কালা আদমী এদিকে ঢোকার সাহসই পেতো না। কিন্তু আজকের গনিমতের মাল গুলোর ছয়টার মধ্যে চারটাই তার নিজের জোগাড় করা। সেই সাহসেই মনে হয় ব্যাটা ঢুকে পড়েছে অফিসার দের রুমে।
ক্যাপ্টেন রেহাদ এবার জিজ্ঞেস করে, “কিয়া চাইয়ে”। কালা আদমী এর পর অনেক ইনিয়ে বিনিয়ে বাংলা আর উর্দু এর একটা মিশ্রনে বলে পরী কে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তার সাথে নাকি এই কালা আদমীর বিয়ের কথা চলছিল! এই তো গোন্ডগল শুরুর কিছুদিন আগেই। আজম নামের আরেক কালা আদমী নাকি তার সাথে শত্রুতা করে পরীকে ধরিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু এই পরী কে নিয়েই তো কামরান আর রেহাদের মধ্যে বোঝাপড়া চলছে এতক্ষন! নিজেদের মধ্যে এখন আরেক কালা আদমীকে ভাগিদার পেয়ে তারা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। কামরান আবার খেকিয়ে উঠলো, “শুওয়ার কি ওউলাদ! মালাউন কা সাথ তুমহারা কিয়া রিসতা? তুম কাফির তো নেহি!!”। রেহাদ ততক্ষনে রিভলভার টা বের করে ফেলেছে পকেট থেকে। কালা আদমী দেখলো অবস্থা বেগতিক। সে বলে উঠলো, “হাম সাচ্চা মুসলমান হু জনাব। এই দেখেন কলেমা পড়তা হু! লা...” কিন্তু এইসব কলেমা শুনে ক্যাপ্টেনদের মন গলে না। রেহাদ বলে, “ওসব তো কাফির লোগ ভি শিখ লিয়া হোগা!”। তাদের এখন আরো প্রমান চাই। এখন কামরানও তার রিভলভার বের করে ফেলেছে। কামরান সেই কালা আদমীর লুঙ্গীর দিকে নির্দেশ করে বলল, “কাপড়ে উতরো”। তাদের এখন ভিজুয়ালী চেক করবে ব্যপারটা।
কালা আদমী তখন ‘কাপড় উতরিয়ে’ তার শিশ্নাগ্রে কোন এক হাজামের অমোচনীয় কালি দিয়ে লিখে দেওয়া ‘আমি মুসলমান’ কথাটা দেখালো। ততক্ষনে ভয়ে তার অবস্থা কাহিল। আরেকটু হলেই ভিজিয়ে দেবে সব। দুপায়ের ঠক ঠকানি কাঁপন এখন পাশের রুমের মেজর আকমলও বুঝি শুনতে পাচ্ছে। এইসব কোলাহলে বিরক্ত হয়ে মেজর আকমল এসে দাড়ালো রুমের দরজায়। তারপর তার পাঞ্জাবী বর্জ্রকন্ঠে হুঙ্কার দিল, “কিয়া হো রাহাহে ইয়াহা?!!”
হঠাৎ করে সেই হুঙ্কার শুনেই কিনা, মেজর আর ক্যাপ্টেনদের অবাক করে দিয়ে সেই কালা আদমী তার শিশ্নাগ্রে লেখা ‘আমি মুসলমান’ কথাটা ভিজিয়ে ফেলল।
নাপাক পানিতে!
মন্তব্য
ভাল লিখেছেন গল্পটি। এসব মনে হলে এখনও আগুন জলে গায়ে।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
অনেক ধন্যবাদ!
গল্পটা ঠিক যেরকম ভেবেছিলাম সেভাবে লিখতে পারিনি। হাত আটকে গেল। দূর্বল হ্রৃদয়ের লেখক হলে যা হয়।
এসব কথা কেন যেন লিখতে পারিনা!
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কি বলবো? দারুন লেখা। তবে তীরন্দাজ ভাই যা বলেছেন - এসব কাহিনী রক্তে আগুন ধরিয়ে দেয়।
কীর্তিনাশা
আমারো।
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
তীরন্দাজের কথায় ডিটো দিলাম।
অনেক ধন্যবাদ!
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
স্পর্শ - যথারীতি হৃদয়স্পর্শী, আবারো
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
চমত্কারভাবে লেখা চেনা কাহিনী। জাঝা
শুধু একখানা অনুরোধ: হিন্দি-উর্দুতে আমার মতো অজ্ঞানতিমিরাচ্ছন্ন বান্দাদের সুবিধার্থে উর্দু সংলাপগুলো বাংলায় লেখা যায় না ("তিনি উর্দুতে বললেন..." জাতীয় কিছু লিখে)? যেমন "“কিয়া হো রাহাহে ইয়াহা?!!” বাক্যটির মর্মোদ্ধার করতে পারিনি । শুধু আন্দাজ করেছি, ব্যাটা খারাপ একটা কিছু বলেছে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আসলে গল্পটা তাড়াতড়ি শেষ করতে চাচ্ছিলাম !
এসব গল্প লিখতে গেলে হ্রৃদয়ে এক ধরনের চাপ স্রৃষ্টী হয়।
তাই আর উর্দু কে বাঙ্গলা করে বাক্যব্রৃদ্ধি করিনি।
পরের গল্প গুলোতে বাংলা ব্যবহারে জোর দিব।
অনেক ধন্যবাদ কমেন্টের জন্য।
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
এর মানে হলো - "কি হচ্ছে, এখানে?"
ধন্যবাদ, স্নিগ্ধা।
কিন্তু বলতে চাইছিলাম এই জাতীয় লেখা উর্দুহীন হলে ভালো হয়। আপনি বারবার "টীকাদার" হবেন, তা তো সম্ভব নয়
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
পড়লাম।
কি মাঝি? ডরাইলা?
অনেক ধন্যবাদ বস!
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
- আমিও
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ!
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
পড়লাম। ভাল লিখেছেন জনাব গনিতবীদ, যথারীতি!!
অনেক ধন্যবাদ বস!!
আপনারে মনে হয় চিনছি। খালি গণিতবীদ কইয়া লজ্জা দেন ক্যান?
[][][][][][][][][][][][][][][][][][]
এক্কা... দোক্কা... তেক্কা...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমিও পড়লাম। আবজাব হয় নাই এটা।
---------------------------------
আসলেই !
[][][][][][][][][][][][][][][][][][]
ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ, কোরো না পাখা।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
নতুন মন্তব্য করুন