এসো শিখি কোয়ান্টাম মেকানিক্স !

স্পর্শ এর ছবি
লিখেছেন স্পর্শ (তারিখ: শনি, ১০/০১/২০০৯ - ৯:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই চকচকে সভ্যতার মোড়কে জড়ানো বর্বর বিশ্বে একটা জাতির মাথা তুলে দাড়াতে সাহিত্য, সংস্কৃতি আর মূল্যবোধের চর্চার সাথে সাথে আর যে জিনিসটার চর্চা অপরিহার্য তা হল বিজ্ঞান।--- হা হা, কি? গেলেন তো প্রথম লাইন পড়েই ভড়কে! না আমার আজকের এই লেখা এইসব ‘উচ্চাঙ্গ’ কথাবার্তা নিয়ে না। কি নিয়ে সেই ঘটনাই বলি।

একবার কায়কোবাদ স্যারের সাথে কথা হচ্ছে। তিনি প্রাইমারী শিক্ষকদের মিটিংএ দেবার জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক একটা বক্তৃতা তৈরি করছেন। আমাকে বললেন কিছু অ্যানিমেটেড চিত্র যোগাড় করে দিতে। পৃথিবী কিভাবে সুর্যের চারিদিকে ঘুরে সেটা দেখাতে হবে। আমি অবাক হয়ে বললাম কোথায় আলোর পোলারাইজেশন নিয়ে কিছু চাইবে তা না এ কি! তখন স্যার বলল আসল কথা। তার সাথে এক প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের আলাপ হয়েছে কিছুদিন আগে। সেই শিক্ষক মনে করে পৃথিবী নাকি একটা থালার মত! তার তার উপর আকাশটা একটা বড় কাচের ঢাকনী মত করে ঢাকা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় সূর্য পশ্চিমে অস্ত যাবার পর, রাতের আধারে আবার ডিগবাজি খেয়ে পূর্ব দিকে চলে যায়। তার পর আবার পূর্ব দিক থেকে উদয় হয়! এইগুলো নাকি সে কোমল মতি শিক্ষার্থীদের শেখায় ক্লাসে!! শুনে আমি কিছুক্ষন হতভম্ব হয়ে বসে থাকলাম। এই হল আমাদের দেশের শিক্ষার একটা চিত্র। খুজলে আরো অনেক চিত্র পাওয়া যাবে। আমি নিজেই ছোটবেলায় আমাদের আরবী স্যারের সাথে পৃথিবী গোল না চ্যাপ্টা সেটা নিয়ে ঝগড়া করেছি অনেক। ফলাফল, স্যারকেও ভূগোল শেখাতে পারিনি নিজেও আরবী শিখতে পারিনি।

এটুক শুনে যারা অবাক হচ্ছেন তারা কি জানেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষার কি অবস্থা? বড়বড় ভার্সিটির কথা বলতে পারবো না। দেশের জাতীয়ভার্সিটির কিছু শিক্ষার্থী আমার ভাল বন্ধু। প্রতিদিন তাদের আফসোস দেখি। “দোস্ত যত উপরের ক্লাসে উঠতেছি পড়াশুনা তত মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে!” ভার্সিটির শিক্ষকরা কত ভাল বিজ্ঞান বা গণিত জানে বা পড়ান সেটা নিয়ে মন্তব্য আমি করবনা। তবে আমার এই দোস্তরাই একসময় ভালো মার্কস পেয়ে শিক্ষক হয়ে যায়। আর বাকিরা হয় পদার্থ বিজ্ঞানে গ্রাজুয়েট।

তাহলে সমস্যাটা কোথায়? কি জানি! এসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে সময় নষ্ট করতে চাইনা অন্তত আমি। আমি যেটা বুঝি সেটা ‘সমস্যা’ না ‘সমাধান’। সমাধান হল বিজ্ঞান জনপ্রিয় করণ।

একবার বুয়েটে এক বড়ভাই(আমার দেখা সবচেয়ে কর্মঠ মানুষদের একজন) বিজ্ঞান জনপ্রিয় করন সমিতি করবেন বলে কিছু ভলেন্টিয়ার ডাকলেন। মিটিং এ গেলাম। তখন ডিসিশন হল বিজ্ঞান ও গণিতের কিছু কিছু বিষয় (পাঠ্যবইএর সাথে সামঞ্জস্য রেখে) নিয়ে আমরা একেকটা ভিডিও ক্লাস আয়োজন করব। ভিডিও গুলো ফ্রী তে ছড়িয়ে দেওয়া হবে সারা দেশে। আজকাল ভিসিডি প্লেয়ার আছে সবখানে। এমনকি মোবাইলেও ভিডিও দেখে সবাই। তাই এই ভিডিও টিটোরিয়াল আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌছাতে সময় লাগবেনা। সহজবোধ্য বাংলায় উপোভোগ্য করে, আর অনেক আনিমেশনের সাহায্য নিয়ে করা হবে সেসব। এগুলো শুনে, স্বপ্নে আমার দুচোখ ভেসে গেছিল সেবার। অবশ্য একটা ‘সিলি’ কারণে সেই মিটিংএ আমি ছিলামনা বেশিক্ষন। মানে হল কি, হঠাৎ করে জুনিয়র ক্লাসের কিছু সুন্দরী মেয়ে এসে হাজির হল মিটিংএ। আর আমার আশে পাশে সুন্দরী মেয়ে এসে হাজির হলে কেন যেন আমার দম বন্ধ হয়ে যায়। আমি কোন রকমে দম আটকে পালালাম। পরে তারা সেই ভিডিও টিউটোরিয়াল করেছিল কিনা জানা হয়নি। আমি নিজেই খুব অলস লোক। তাই আর খোজ নেইনি তাদের। শুধু স্বপ্নটা এখনো বুকে নিয়ে ঘুরছি।

যাই হোক এসব হল বড় বড় কথা। এখন তাই কথা না বাড়িয়ে “একলা চলরে” নীতি চালু করতে চাচ্ছি। ফাইনম্যানের “দি ফাইন ম্যান লেকচার্স অন ফিজিক্স” বইটা হাতে পেয়েছি কিছুদিন হল। ভাবছি এটার কিছু কিছু অংশ (যতটাপ পারি) অনুবাদ করে ফেলব। লাইসেন্স কপিরাইট নিয়ে ঝামেলা হবেকিনা বুঝতে পারছিনা। এবিষয়ে রাগিব ভাইয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। ‘উইকি বুক্‌স’ বা উইকি সোর্সের মোত কোন প্লাটফর্ম হলে ইকুয়েশন লিখতে সুবিধা হয়। সচলায়তনেও যদি ‘ল্যাটেক ইকুয়েশন’ সাপোর্ট করার পিএইচপি ইঞ্জিন জুড়ে দেয় তাহলে আমার মত পাপী বিজ্ঞান লেখকদের অনেক উপকার হয়। এইটা নাকি ফ্রী লাইসেন্সের আন্ডারে পাওয়া যায়। এবিষয়ে টেকি মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

এই লেখার শিরোনাম “এসো শিখি কোয়ান্টাম মেকানিক্স” হবার একটা কারণ ফাইনম্যান ঠিক এরকম একটা সহজ ভঙ্গিতেই দারুণ ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন পুরো ব্যপারটা। একজন ক্যাজুয়াল বিজ্ঞানে আগ্রহী পাঠকের পক্ষেও তাই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মত জিনিস সহজে অ্যক্সেসিবল। আজকের অংশ তার বইএর ভলিউম ৩ এর চ্যাপটার ১(quantum behavior) এর ১-১ ও ১-২ অনুচ্ছেদের অনুবাদ।

এটা যেহেতু ঠিক বই না। ক্লাস লেকচারের একটা পিউরিফায়েড ফর্ম। তাই অনুবাদের সময় চেষ্টা করেছি যেন পড়ে মনে হয় ‘কেউ আমাকে কথাগুলো বলছে’। একারনেই “বৈশিষ্ট্য সমূহ” এর বদলে “বৈশিষ্ট্যগুলো” -এধরনের ভাষা ভঙ্গি ব্যবহার করেছি।

আশাকরি আপনি যদি এই পর্যন্ত পড়ে থাকেন এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স সম্পর্কে খুব বেশি আগ্রহী নাও হন তাহলেও বাকিটুকু শুধু চোখ বুলিয়েও বুঝতে সমস্যা হবেনা। আরো আশা করব আপনার পরিচিত বিজ্ঞানে আগ্রহী কারো কাছে এই লেখা পৌছে দেবেন। এই বলে এই অনুবাদ সিরিজের স্বত্ব ত্যাগ করছি(স্বত্ব আমার আছে কিনা তাইতো জানিনা)। এখন পড়তে থাকুন, হ্যাপি কোয়ান্টাম মেকানিক্স!

কোয়ান্টাম আচরণ
১-১ পারমানবিক বলবিজ্ঞান (Atomic Mechanics)
“কোয়ান্টাম মেকানিক্স” বা কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান হচ্ছে, বিশেষ করে পারমানবিক স্কেলে, পদার্থ এবং আলোর আচরণের একটা পরিপূর্ণ (ও বিস্তারিত) বর্ণনা। অতি ক্ষুদ্র স্কেলের বস্তুদের আচরণ আমাদের জানা জগতের সরাসরি কোন অভিজ্ঞতার সাথেই মেলে না। না তরঙ্গ, না কনিকা, না মেঘ, না বিলিয়ার্ডবল, না স্প্রিঙএ ঝোলানো ভর, আমাদের দেখা জগতের এমন কোন কিছুর সাথেই এদের মিল নেই।

নিউটন ভেবেছিল আলো বুঝি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনিকা দিয়ে তৈরি, কিন্তু পরে আবিষ্কার হল যে এটা তরঙ্গের মত আচরণও করে। আরো পরে (বিংশ শতাব্দীর শুরুতে) আবিষ্কার হল যে আলো আসলেই কখনো কখনো কনিকার মত আচরণ করে। আবার যেমন, শুরুতে ভাবা হত ইলেকট্রন বুঝি কনিকা ধর্মী। কিন্তু পরে এর এমন কিছু আচরণ আবিষ্কার হল যা শুধু তরঙ্গের সাথেই মেলে। আসলে এর আচরণ পুরোপুরি কোনটার মতই না! তাই এখন আমরা হাল ছেড়ে দিয়েছি। আমরা বলি, “এটা কোনটার মতই না”। (It’s Like Neither)

অবশ্য এর সম্পর্কে আমরা এখন একটা কথা নিশ্চিত জানি – ইলেকট্রনের আচরণ আলোর মত! পারমানবিক বস্তুসমূহের (ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন, ফোটন, এবং আর যা যা আছে) কোয়ান্টাম আচরণ সবার একই রকম! তারা সবাই “কনিকা তরঙ্গ” (particle wave); চাইলে অন্য যেকোন নামেও আমরা ডাকতে পারি একে। তাই আমরা ইলেক্ট্রন সম্পর্কে যা কিছু জানব (এই আলোচনায় আমরা উদাহরণ হিসেবে ইলেকট্রন ব্যবহার করতে যাচ্ছি) তার সবই অন্য যেকোন ‘কনিকা’র ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এমনকি আলোর কনিকা ‘ফোটনের’ উপরেও!

বিংশ শতাব্দীর প্রথম চতুর্ভাগে ক্ষুদ্র কনিকার আচরণ সঙ্ক্রান্ত প্রচুর তথ্য উপাত্ত ধীরে ধীরে জড় হতে থাকে, সেই সাথে বাড়তে থাকে এদের সম্পর্কে বিভ্রান্তি। অবশেষে ১৯২৬ এবং ১৯২৭ সালে স্রডিঞ্জার, হাইজেনবার্গ, এবং বর্ন এসব বিভ্রান্তির অবসান ঘটান। তারা তখন কোয়ান্টাম স্কেলের ক্ষুদ্র কনিকাদের আচরনের একটা সামঞ্জস্য পূর্ণ ব্যখ্যা দাঁড়া করাতে সমর্থ হন। জন্ম হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের। এই অধ্যায়ে আমরা তাদের এই ব্যখার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে আলোচনা করব।

যেহেতু পারমানবিক আচরন (atomic behavior) আমাদের চেনা জগতের কোন অভিজ্ঞতার সাথেই মেলে না তাই কারো পক্ষে এর ধারনা তে অভ্যস্ত হওয়া খুবই কষ্টকর, তা সে একজন নবীন শিক্ষার্থীই হোক অথবা কোন অভিজ্ঞ পদার্থ বিজ্ঞানী। এমনকি বিশেষজ্ঞরাও এটাকে ঠিক সেভাবে বোঝে না যেভাবে তারা বুঝতে চায়, ব্যপারটাতে অবাক হবারও কিছু নেই, কারণ মানুষের সব অভিজ্ঞতা আর ইনটুইশন হচ্ছে বড় বড় বস্তু(large object) নিয়ে। বড় বস্তুরা কিভাবে আচরণ করে তা আমরা জানি, কিন্তু ক্ষুদ্র মাত্রার বস্তুরা সেরকম নয়। তাই তাদের সম্পর্কে আমাদের শিখতে হয় নিজের অভিজ্ঞতা লব্ধ ইনটুইশন কে সরিয়ে রেখে সম্পুর্ণ বিমূর্ত আর কল্পনা নির্ভর উপায়ে।

এই চ্যাপটারে প্রথমেই আমরা কোয়ান্টাম স্কেলের কনিকাদের এই রহস্য জনক আচরনের মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করব। এজন্য আমরা এমন একটা ঘটনাকে বেছে নেব যেটা ক্লাসিক্যাল(প্রচলিত) পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব! আর এই ঘটনার মধ্যেই কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের(মেকানিক্স) হৃদয় নিহিত। আসলে এখানে রহস্য মাত্র একটাই। এটা ‘কিভাবে কাজ করে’।এই রহস্যকে ‘ব্যাখ্যা’ করে ‘সমাধান’ করা সম্ভব নয়। তাই আমরা শুধু ‘আলোচনা’ করব এটা ‘কিভাবে কাজ করে’। আর এসব বলতে বলতেই আমরা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সব ‘উদ্ভট আচরন’(piculiarities of all quantum mechanics) সম্পর্কে জেনে যাব।

১-২ বুলেট পরীক্ষা (An experiment with bullets)
শুরুতে ইলেকট্রনের কোয়ান্টাম আচরণগুলো বুঝতে, আমরা তার তুলোনা করব আমাদের অতি পরিচিত বুলেটের (বা বন্দুকের গুলির) সাথে। এরপর ইলেকট্রনের তরঙ্গ ধর্মের তুলোনা হবে সবার চেনা পানির তরঙ্গের সাথে। এই তুলোনার মধ্যদিয়েই বুলেটের বা পানির তরঙ্গের সাথে আমরা ইলেক্ট্রনের মিল ও অমিলগুলো দেখতে পাব। তাহলে প্রথমে বুলেট নিয়ে শুরু করা যাক। চিত্র ১-১ এ আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের একটা মেশিনগান আছে যেটা ধারাবাহিক ভাবে গুলি ছুড়তে পারে। মেশিন গানটা একটু নড়বড়ে টাইপ। তাই সে, গুলি শুধু একদিনে না ছুড়ে অনেকটা সামনের দিকে বিক্ষিপ্ত ভাবে(randomly) স্প্রে করে দেয়। চিত্র থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে বুলেটগুলো তাই একটা বড় কোন জুড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। বন্দুকের সামনে দুই ছিদ্র বিশিষ্ট একটা শিল্ড আছে। ছিদ্র গুলো এতই ছোট যে তাদের একটা মধ্যে দিয়ে এক সময়ে শুধু একটা বুলেটই পার হতে পারে। বুলেটরা শিল্ড ভেদ করেনা। শিল্ডের পরেই আছে একটা কাঠের দেওয়াল(bacstop)। এই দেওয়ালে বুলেট লাগলেই সেখানে সেটা আটকে যায়। এই দেওয়ালের গায়ে একটা “ডিটেক্টর” সেট করা আছে। আমাদের পরীক্ষার এই ডিটেক্টরটা হতে পারে একটা ছোট্ট বালিপূর্ন বাক্স। যেসব গুলি এই ডিটেক্টরে হিট করে তারা এর মধ্যেই জমা হয়। যেকোন সময় আমরা ডিটেক্টর খালি করে এর মধ্যে জমা হওয়া গুলির সংখ্যা গুনে ফেলতে পারি। এই ডিটেক্টরটাকে কাঠের দেওয়ালের গা ঘেসে সহজেই উপরনিচে সরানো সম্ভব। আমরা এই উপর নিচে করার দিকটাকে বলছি “x-অক্ষ”। এক্স অক্ষ চিত্রে চিহ্নিত করা হয়েছে।

চিত্র ১-১:: বুলেটের সাহায্যে উপরিপাতনের পরীক্ষা (চিত্র বড় করতে ক্লিক করুন)

এইসব যন্ত্রপাতির সাহায্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমরা যে প্রশ্নের উত্তর খুজব তা হল, “যেসব বুলেট শিল্ডের ছিদ্র পার হয়ে আসবে, স্থিতি দেওয়ালের (backstop) কেন্দ্র থেকে যেকোন x দূরত্বে সেটা হিট করার সম্ভবনা (probability) কত?” প্রথমেই আমাদের খেয়াল করতে হবে যে আমরা আলোচনা করব প্রবাবিলিটি নিয়ে কারণ একটা বুলেট ঠিক কোথায় পৌছাবে সেটা নিশ্চিত করে বলা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। একটা বুলেট শিল্ডের ছিদ্র পার হবার সময় কোনায় বাড়ি খেয়ে স্থিতি দেওয়ালের যেকোন যায়গায় পৌছাতে পারে। এখানে ‘প্রোবাবিলিটি বা সম্ভাব্যতা বলে আমরা বোঝাতে চাইছি একটা বুলেটের ডিটেক্টরে পৌছানর চান্স কে। যা আমরা পরিমাপ করব একটা নির্দিষ্ট সময়ে ডিটেক্টরে পৌছানো বুলেটের সংখ্যার সাথে ঐসময়ে স্থিতি দেওয়ালে পৌছানো মোট বুলেটের সংখ্যার অনুপাত করে। অথবা, আমরা যদি ধরে নিই মেশিনগানটা একটা নির্দিষ্ট হারে গুলি ছড়ছে তাহলে একটা নির্ধারিত সময় ব্যবধানের মধ্যে কতগুলো বুলেট ডিটেক্টরে পৌছালো সেটা হবে (x-অক্ষ বরাবর) ডিটেক্টরের পজিশনে একটা বুলেটের পৌছানোর সম্ভবনার সমানুপাতিক।

আমাদের এই পরীক্ষার জন্য আমরা এমন আদর্শ বুলেট কল্পনা করে নেব যারা অক্ষয় (indestructible)বা যাদের ধংস করা সম্ভব নয়। এই হিসেবে বাস্তব বুলেট থেকে এরা বেশ আলাদা। এর ফলে ডিটেক্টরে আমরা হয় পূর্ণ একটা বুলেট পাবো অথবা কিছুই পাবোনা। এমন কখনো সম্ভব নয় যে ডিটেক্টরে একটা বুলেটের অর্ধেক এসে হাজির হল। যেহেতু বুলেটগুলো ভাঙ্গে না এবং মেশিনগান যেহেতু একটার পরে একটা বুলেট ছোড়ে, তাই আমরা জানি কোন একটা নির্দিষ্ট সময়ে হয় একটা বুলেট স্থিতিদেওয়ালে (backstop) পৌছাবে নাহলে কিছুই পৌছাবেনা। এবং এটা সহজেই দেখা যায় যে বুলেট গুলোর আকৃতি গুলি ছোড়ার হারের সাথে সম্পর্কিত না। “যখন বুলেট পৌছায় তখন সব সময় একই আকার আকৃতিতেই পৌছায়”। বুলেট না ভেবে আমরা একে যেকোন নির্ধারিত সাইজের বস্তু কনা ভাবতে পারি। অর্থাৎ আমাদের মূল বিবেচ্য হচ্ছে নির্দিষ্ট স্থানে এই বস্তু কনার আগমনের সম্ভবনা। যেহেতু কেন্দ্র থেকে একেক x দূরত্বে বুলেট পৌছানোর প্রোবাবিলিটি(সম্ভবনা) একেক রকম। তাই এই প্রোবাবিলিটিকে আমরা x-এর একটা ফাংশন আকারে পরিমাপ করতে পারি। আমাদের হাতের এই সব যন্ত্রপাতির(experimental appratus) সাহায্যে প্রাপ্ত (আমরা যেহেতু এখনো এক্সপেরিমেন্ট টা করিনি, তাই আসলে আমরা ফলাফল কল্পনা করে নিচ্ছি) পরিমাপের ফলাফল চিত্র ১-১ এর (c) অংশে চিত্রিত হয়েছে। এই লেখ চিত্রে x অবস্থানের সম্ভাব্যতা কে অনুভুমিক বরাবর ডান দিকে এমন ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে যেন x-স্কেল চিত্রে ফিট করে। আমরা এই প্রোবাবিলিটি কে বলছি P12,কারণ বুলেট ১ বা ২ যেকোন ছিদ্র থেকেই এসে থাকতে পারে। একজন হয়ত এটা দেখে অবাক হবে না যে P12 গ্রাফের মাঝের দিকে অনেক বেশি কিন্তু x যত বাড়তে থাকে ততই কমতে থাকে। কিন্তু এই প্রশ্ন কারো মনে আসতে পারে যে, ‘কেন P12 গ্রাফের ঠিক কেন্দ্রে অর্থাৎ x=0 তে, সব চেয়ে বেশি?’ আমরা এই প্রশ্নের উত্তর পেতে পারি যদি আবারো পরীক্ষাটা করি একবার শুধু ২ নং ছিদ্র কে বন্ধ করে, তারপর আরেকবার শুধু ১ নং ছিদ্র বন্ধ করে।‘ যখন ২ নং ছিদ্র বন্ধ ছিল তখন বুলেট শুধু মাত্র ১ নং ছিদ্র দিয়ে পার হয়েছে। সেসময় যে প্রোবাবিলিটি কার্ভ আমরা পাই সেটা (b) চিত্রে p1দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে আমাদের ধারণা অনুযায়ি এই কার্ভের ম্যাক্সিমা (উচু অংশ) মেশিন গান আর ১ নং ছিদ্রের সংযোগ রেখার বরাবর অবস্থিত। আবার যখন ১ নং ছিদ্র বন্ধ করা হয় তখন একই ভাবে আমরা আরেকটা সিমেট্রিক কার্ভ(একটা বিন্দু থেকে দুইদিকে একই রকম এমন বক্র রেখা) p12 পাই। p12 হচ্ছে ২ নং ছিদ্র দিয়ে পার হওয়া বুলেট সমূহের প্রোবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন (বা সম্ভাব্যতার বিস্তৃতি)। চিত্র ১-১ এর পার্ট (b) এবং পার্ট (c) এর তুলনা করলে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল পাই, ’

P12 = p1 +p2……………………. (1.1)

সোজা বাংলায় প্রোবাবিলিটিগুলো শুধুমাত্র যোগ হয়ে যাচ্ছে! উভয় ছিদ্র খোলা রেখে প্রাপ্ত ক্রিয়া(effect) হচ্ছে প্রিতিটি ছিদ্র খোলা রেখে একে একে প্রাপ্ত ইফেক্টের যোগফল। এই ফলাফল কে আমরা বলব “ব্যতিচার হীনতার” একটা পর্যবেক্ষন। ( observation of “no Interference”)। এমন বলার কারণ আমরা শীঘ্রই জানতে পারব। যাক, বুলেট নিয়ে অনেক হল! অন্তত এটুকু জানা গেল যে, এরা একেক বারে একেকটা আস্ত টুকরো(come in lumps) আকারে আসে এবং তাদের আগমনের সম্ভবনার বিস্তৃতি(Probability distribution) ব্যতিচারেরনীতি মেনে চলে না।
(চলবে?)

নোটসঃ

  • সুসঙ্গত উৎস থেকে আসা দুটি তরঙ্গের উপরিপাতনের মাধ্যমে সৃষ্ট ফলাফলকেই ব্যতিচার বলে।
  • পরের পর্বগুলোয় কিছু কিছু ইকুয়েশন লেখা প্রয়োজন। এখানে সম্ভব হবেকিনা বুঝতে পারছিনা।


মন্তব্য

রণদীপম বসু এর ছবি

কেমিস্ট্রি অনার্সের সাথে সাবসিডিয়ারি সাবজেক্ট হিসেবে পদার্থ বিজ্ঞানও ছিল। কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্সের উদ্ভট তত্ত্বে এসে তো মাথা গরম ! আমি আবার না বুঝলে কোন কিছু শিখতে পারি না। এখন কোয়াণ্টাম তো বুঝিই না ! শিখবো কী করে ?
পরীক্ষায় তো পাশ করতে হবে ! অবশেষে অন্ধের হাতি দর্শনের মতো কী জানি শিখেছিলাম, তাতেই পরীক্ষা পাশ। এখন তো আর পরীক্ষা নেই, তাই খুব সহজে ভুলেও গেছি !

সেই শেখার ক্ষেত্রেও আরেক কাহিনী। অনার্সে শিক্ষার মাধ্যম হচ্ছে ইংরেজী। বুঝেই যখন শিখবো, তখন আর ইংরেজীতে পরীক্ষা কেন ! অতএব অনার্স এবং সাবসিডিয়ারী, সবগুলো সাবজেক্ট বাংলাতেই সই, যা আছে কপালে ! অনেকে তখন ভয় দেখিয়েছিল। কিন্তু আমি নাছোড় বান্দা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যদি কখনো ইতিহাস খুঁজে, তাহলে ৮২-৮৪ অনার্স সেশন এবং ৮৫ মাস্টার্স সেশনেই বোধ করি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রেকর্ড হবে যে, কেমিস্ট্রি অনার্সের প্রথম কোন ছাত্র যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নির্জলা বাংলা মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে প্রশ্নপত্রের বাংলা ভার্সনের সার্থকতা প্রমান করে থাকে সে আমিই হবো ।
তবে এও বলে রাখি, নামটা কিন্তু 'র-ণ-দী-প-ম ব-সু' নয়, এ অক্ষরগুলোকেই উল্টে পাল্টে আরেকটা নাম দাঁড়িয়ে যাবে, সেটা।

কিন্তু আমার আসল কথাটাই বলা হলো না ! কোন কিছু না শিখে পরীক্ষা পাশ করেই যা যত্ন সহকারে ভুলে গিয়েছিলাম, স্পর্শ কি তা-ই আবার শেখাতে উঠে পড়ে লেগেছে... ! তীব্র প্রতিবাদ, কিছুতেই আমি শিখবো না...!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

স্পর্শ এর ছবি

আর আমার সমস্যা হল আমি কাগজ কলমে লিখতে পারিনা। কোনরকমে দাগা দাগি করতে পারি। একারণেই কীবোর্ড ছাড়া আমার লেখা হয়না। পরীক্ষা হলে গিয়ে যে কি অবস্থা হয় ! মন খারাপ
কিভাবে যে পাশ করে বের হলাম আল্লাহই জানে। ভাগ্যিস বুয়েটে পরীক্ষার খাতায় বেশি বর্ণনা লিখতে হয়না। কিছু ইকুয়েশন লিখে দিয়ে আসলেই হয়(মানে পাশ করা যায়)।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

তবে এও বলে রাখি, নামটা কিন্তু 'র-ণ-দী-প-ম ব-সু' নয়, এ অক্ষরগুলোকেই উল্টে পাল্টে আরেকটা নাম দাঁড়িয়ে যাবে, সেটা।
সুদীপ বর্মণ?

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনি কে ভাই/বোন ! আমি ডরাইছি..!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

স্পর্শ এর ছবি

হা হা! এইতো আপনার আসল নাম পাওয়া গেছে!! দেঁতো হাসি
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অভ্রনীল এর ছবি

ইকুয়েশন দিতে হলে ছবি আকারে দিতে পারেন... এটা ছাড়া বিভিন্ন সিম্বল বা নমিনেটর-ডিনমিনেটর আর কোন উপায় আমার জানা নাই... উইকিপেডিয়াতেও এইভাবে বিভিন্ন ইক্যুয়েশন দেয়া হয়...

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

স্পর্শ এর ছবি

উইকিপিডিয়াতে ল্যাটেক সিন্ট্যাক্স লিখলে অটোমেটিক ইকুয়েশন জেনারেট হয়ে যায়। এর পর ছবি আকারে যথাস্থানে বসে যায়। এইটা হাতে করা সম্ভব না।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

আপনার এই আন্তরিক চেষ্ঠার জন্য অনেক অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ।

কিন্তু দাদা এটা আমার মাথার উপর দিয়ে না, আকাশের উপর দিয়ে গেছে। যাই হোক আমার মতো গণ্ডমূর্খের এসব বোঝার ক্ষমতা নেই। যাদের দরকার, তাদের উপকারে লাগলেই আমি খুশী।

আবারও ধন্যবাদ আপনাকে। আর আপনাকে অনুরোধ করবো, অবশ্যই এটা অনুবাদের কাজ শেষ করবেন। প্লিজ।

স্পর্শ এর ছবি

হায় হায়!! তাই নাকি?
চিন্তিত
আমি কিন্তু ফাকিবাজি আঁচ করতে পারছি। মানে এখানে তো বোঝার মত কিছুই ছিল না। শুধু একটা ঘটোনার বর্ণনা ছিল মাত্র। আপনি মনেহয় বেশি তাড়াতাড়ি পড়েছেন। আরেকটু ধীরে। হাসি

আর স্পেসিফিক্যালি কোন অংশ বুঝেননি সেটা বললে আমার উপকার হত। সংশোধনের সুযোগ থাকত।
অনুবাদ চলবে ইন্শাল্লাহ।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ওয়াসি এর ছবি

চিত্রটা বোঝা যাচ্ছেনা, আরো বড় হলে ভাল হয়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ওয়াসি
ক্লীক করলে বড় ভার্সন দেখতে পাবেন।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

দিগন্ত এর ছবি

আমি একটা পরামর্শ দিই। আপনি এই ভিডিওটা দেখে শুরু করুন। ইন্টারেস্টিং উদাহরণ থেকে শুরু করলে বেশী আকর্ষণীয় হয় বলে মনে হয়।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

স্পর্শ এর ছবি

আমার নেটের অবস্থা করুণ। দেখি সময় করে দেখব। লিঙ্কটা দেবার জন্য ধন্যবাদ। হাসি
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

স্পর্শ এর ছবি

ভিডিওটা দেখলাম।
ইশ্ আমাদের যদি কেউ এভাবে শেখাতো।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রায়হান আবীর এর ছবি

আমিও দেখলাম। পড়ার চেয়ে দেখে বোঝাটা সুবিধা। খাইছে

তানভীর ভাই- অনুবাদ ভালো হচ্ছে। গভীর মনেযোগে পড়ার চেষ্টা করছি। না বুঝলে আপনার কাছ থেকে একটা সেশন দিয়ে নিবো। আগে দ্রুত আরও কিছু ছাড়ুন।

=============================

স্পর্শ এর ছবি

পড়ছ দেখে খুবই খুশি লাগছে। হাসি
কেউ পড়ে কিনা এইনিয়ে টেনশনে ছিলাম। অনেকেই পড়ছে দেখছি। দেখি পরের পর্ব আজকালের মধ্যেই নামাবো।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

স্পর্শ এর ছবি

হাসি
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অবাঞ্ছিত এর ছবি

ফাইনম্যানের বই তিনটা বেশ কিছু কষ্টে উপার্জিত টাকা দিয়ে কিনে যত্নে সাজিয়ে রেখেছি... অলস মানুষকে দিয়ে জীবনে কিছুই হয় না.. "নিজ উদ্যোগে পড়ব" এমন চিন্তা করার মানুষ আমি, বাস্তবে করার না.. তবু আপনার লেখাটা প্রিয়তে রাখলাম... এইবার আমি পড়েই ছাড়ব !

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

স্পর্শ এর ছবি

প্রিয়তে ঠাই পেয়ে উৎসাহ পেলাম। আপনার কাছে বই তিনটা আছে!!! আমি ত এই সেদিন টররেন্ট দিয়ে নামালাম। বাংলাদেশে পাওয়া যায় তাইতো জানিনা। মন খারাপ
লেখা পড়বেন জেনে ভাল লাগছে।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অবাঞ্ছিত এর ছবি

না ভাই বাংলাদেশে না... বিদেশে... সফ্ট কাভার এর পড়ার এডিশন (সংগ্রহে রাখার না) কিনে রেখে দিয়েছি অনেক মাঞ্জা মেরে... তবু পড়লাম আর কই! আপনাদের এই উত্সাহে যদি আবার শুরু হয়!

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

স্পর্শ এর ছবি

ঠিকাছে। হাসি
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলাদেশেও পাওয়া যায়। অন্তত আগে পাওয়া যেত। আমি নিউমার্কেট থেকে কিনেছিলাম ১০-১২ বছর আগে। পদার্থবিজ্ঞানের কোনো বই এত সুন্দর হতে পারে তা ফাইনম্যান না পড়লে বিশ্বাস হবে না। এমন একটি বইয়ের চমতকার অনুবাদ উপহার দেওয়ার জন্য অনুবাদককে অভিনন্দন।

ধানসিঁড়ি

স্পর্শ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ধানসিঁড়ি। হাসি
আশা করি পাঠক হিসেবে পাবো আপনাকে।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

এনকিদু এর ছবি


জাফরি ভাইয়ের সাথে আপনার পরিচয় আছে ? ফিউচার এনার্জি চ্যালেঞ্জের জাফরি ভাই । তার কাছে অনেক গুলো শিক্ষামূলক অ্যানিমেশন ছিল । এখনো হয়ত আছে ।


কাজ দারুন হচ্ছে । চালিয়ে যান ।


বুলেটের এক্সপেরিমেন্টটা আগেই পড়েছিলাম । তবে আপনার অনুবাদে আবার পড়তে ভালই লাগল ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

স্পর্শ এর ছবি

১।
জাফরি ভাইয়ের সাথে পরিচয় নেই। পরিচয় করিয়ে দিও।
২।
হাসি
৩।
যাক আগে পড়ার পরও ভাল লেগেছে জেনে খুশি। তাহলে হচ্ছে।

....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অনিকেত এর ছবি

স্পর্শ,
মহৎ উদ্যোগ সন্দেহ নেই।
অনুবাদও ভাল হচ্ছে।

শুধু একটা মন্তব্য করছি, কিছু মনে করবেন না।

কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা নিঃসন্দেহে পদার্থ বিজ্ঞানের অন্যতম কঠিন বিষয় গুলোর একটি। কেন কঠিন? সাধারনতঃ বিজ্ঞানের কোন কিছু 'কঠিন' বললে সবাই বুঝে নেয়---ওহ এইটাতে রাশি রাশি জটিল অংকের প্যাঁচ আছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সেও সেই রকম ভয়াবহ রকমের প্যাচের সংখ্যা বেশি বৈ কম নয়। কিন্তু সেইটা মুল কারন নয়। কোয়ান্টাম মেকানিক্স 'কঠিন'---তার কারন আমাদের চেনা সকল ধারনা কে সে চ্যালেঞ্জ করে। আমাদের মস্তিষ্ক আসলে প্যাটার্ন রিকগ্নিশানের এক আশ্চর্য যন্ত্র। আমাদের বেশির ভাগ 'জানা- বোঝা' আসলে এই ছাঁচ দেখে বা আদল দেখে উপলব্ধি। কোয়ান্টাম মেকানিক্স আমাদের চেনা কোন ছাঁচের সাথে, আমাদের চিরাচরিত ধ্যান-ধারনার সাথে অপরিসীম এক বৈরীতায় দাঁড় করিয়ে দেয়।

আপনার লক্ষ্য ঠিক কোন শ্রেনীর পাঠক, আমি নিশ্চিত নই। তবে একেবারে সাধারন মানুষের জন্যে এইটা একটু কঠিন হয়ে পড়বে। এমনকি ফাইনম্যানের মত তুখোড় শিক্ষক ও এখানে হয়ত হার মানবেন।তাই আমি ভাবছিলাম যে, আপনি সরাসরি
তার বইয়ের অনুবাদ না শুরু করে--এর আগে যদি সাধারন পাঠকদের একটু 'দরকারী বিষয়গুলোর' উপর একটা ছোটখাট ভুমিকা দিয়ে দিতেন তাহলে বেশ উপকার হত। অবশ্য আপনার লক্ষ্য যদি থাকে বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীরা বা বিজ্ঞান-মনস্ক পাঠকরা---তাহলে মনে হয় এই 'সরাসরি আক্রমন' ঠিকই আছে।

মন্তব্য বেশ বড় হয়ে গেল।

আশা করি কিছু মনে করবেন না।

পরবর্ত্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

স্পর্শ এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

আসলে এই অনুবাদের ৫ম প্যারায় ফাইনম্যানও এই কথাগুলোই বলেছেন।

আমার লক্ষ্য হচ্ছে সেই পাঠক যারা "হাতি-ঘোড়ার গল্প শোনার চেয়ে হাতি-ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসতে ভালবাসে"। দেঁতো হাসি মনে হয় আমি নিজেও এই শ্রেনীর লোক। ইয়ে, মানে...

সাধারণ পাঠকের জন্য কিছু নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে। চাচ্ছি পরের পর্বগুলোতে আলোচনা কঠিন হয়ে গেলে নিজে থেকে কিছু টীকা যোগ করে দেব।

আসলে মূলত এইস এস সি তে বিজ্ঞান পড়েছে এমন পাঠক চাইলে এই লেখা পড়তে ও বুঝতে পারবে। অনেক আগ্রহী ছেলে মেয়েকে দেখেছি যারা বিজ্ঞানে আগ্রহী কিন্তু প্রপার রিসোর্স পাচ্ছেনা। সেই অভাব কিছুটা হলেও দূর করার ইচ্ছা। আসলে এই বইটা আমার খুব ভাল লেগে গেছে।

আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ! হাসি পরের পর্বেও এরকম মন্তব্য আশা করব।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

শিক্ষানবিস এর ছবি

প্রথমেই অনেক ধন্যবাদ, কোয়ান্টামে হাত দেয়ার জন্য।
ফাইনম্যানের কোন বই আমি পড়িনি। আপনার অনুবাদের মাধ্যমেই তাই শুরু হল।

বুঝতে পেরেছি এই পর্বের মাধ্যমে আপনি তথা ফাইনম্যান দুটি বিষয় বোঝাতে চেয়েছেন:
- কণাগুলো একেক বারে একেকটা আস্ত টুকরো আকারে আসে
- তাদের আগমনের সম্ভবনার বিস্তৃতি উপরিপাতনের নীতি মেনে চলে না

বিষয়টা বুঝলেও কিছু কনফিউশন আছে।

আপনি দেখলাম interference এর বাংলা করেছেন উপরিপাতন। কিন্তু পরিভাষাগত দিক দিয়ে উপরিপাতন বলতে তো superposition বোঝায়। interference এর বাংলা তো ব্যতিচার হওয়া উচিত। উপরিপাতন আর ব্যতিচার তো এক না। ইন্টারের বইয়ে পড়েছিলাম, সুসঙ্গত উৎস থেকে আসা দুটি তরঙ্গের উপরিপাতনের মাধ্যমে সৃষ্ট ফলাফলকেই ব্যতিচার বলে। তাই এখানে কি ব্যতিচারই হওয়া উচিত না?

আর এখানে ব্যতিচারের নীতি কিভাবে পালিত হচ্ছে না, সেটাও পুরোপুরি বোঝা যায়নি। আশাকরি পরবর্তী পর্বে বোঝা যাবে। আপনি তো বলেছেনই: কেন এমন বলা হল তা একটু পরেই বোঝা যাবে।

পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। তাড়াতাড়ি অনুবাদ করতে থাকেন।

রণদীপম বসু এর ছবি

স্পর্শ, আপনি যখন এই উপরিপাতন, ব্যতিচার এইসব বাংলা পরিভাষা ব্যবহার করবেন, কষ্ট হলেও সাথে মূল ইংরেজিটাও দিয়ে দিলে আমার মতো গণ্ডমূর্খের জন্য বুঝতে কিঞ্চিৎ সুবিধাজনক হতে পারে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

স্পর্শ এর ছবি

ঠিকাছে। হাসি
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

স্পর্শ এর ছবি

ওহহো! তাইতো!! পরিভাষা নিয়ে আমার নিজেরই একটু সমস্যা আছে। এখানে ব্যতিচারই হবে। শিওর হতে পারিনাই বলেই ব্রাকেটে ইংরেজী টার্ম টা দিয়ে দিয়েছি। এখন ঠিক করে দিচ্ছি।
রায়হান আবীরের কাছ থেকে তোমার মেসেঞ্জার আইডি নিয়েছিলাম এসব নিয়ে আলোচনার করার জন্য।
অনেক অনেক ধন্যবাদ। মনযোগ দিয়ে পড়ার জন্য। হাসি

....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অগ্নিবীণা এর ছবি

সুন্দর উদ্যোগ।চালিয়ে যাবেন আশা করি।
নী্লক্ষেতে ফটোকপি করা ফাইনম্যানের বই এর তিন ভলিউমের সবগুলোই পাওয়া যায়।

স্পর্শ এর ছবি

তাই নাকি!! খবরটা জানানোর জন্য ধন্যবাদ! হাসি কিনে ফেলব এখন ।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

স্নিগ্ধা এর ছবি

ভালো সিরিজ। ধন্যবাদ, স্পর্শ!

স্পর্শ এর ছবি

ধন্যবাদ উৎসাহ দেওয়ার জন্য। হাসি
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

কীর্তিনাশা এর ছবি

কিছুদূর পড়লাম। বাকিটাও পড়ে ফেলবো। চমৎকার সিরিজ।

চালিয়ে যান স্পর্শ।

পাঠক হিসেবে সাথে আছি।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

স্পর্শ এর ছবি

অনুবাদ করতে দারুণ কষ্ট হচ্ছে। সাথে আছেন জেনে ভরসা পাচ্ছি। হাসি
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

শেহাব [অতিথি] এর ছবি

আমি কোয়ান্টাম কম্পিউটেশনে আন্ডারগ্র্যাড থিসিস করেছিলাম। ফাইনম্যান গুরু।

স্পর্শ এর ছবি

তাই নাকি! কোয়ান্টাম কম্পিউটেশন নিয়ে আমিও ঘাটাঘাটি করছি কিছুদিন ধরে।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সিরাত এর ছবি

হা: হা:, কীর্তিনাশা ভাইয়ের মত আমিও কিছুদূর পড়লাম। কেন জানি এগুলো বাংলায় পড়তে বেশ কষ্ট হয়। মন খারাপ তবে কমেন্ডেবল একটা চেষ্টা দিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদ! অনিকেত ভাইয়ের সাথে একমত, আরেকটু এক্সেসিবল করেন পারলে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।