আজ রাতেই করলাম কলিজা ভুনা। গরুর কলিজা। একটু আগে সবাই মিলে খেয়ে-দেয়ে এই রেসিপি ব্লগ লিখতে বসেছি। সঙ্গে আছে তিলের খাজা। ভিয়েতনামি। তেমন স্বাদ না। দুয়েক কামড় দিচ্ছি আর লিখছি। তবে পাঠক, ভয়ের কিছু নেই। কলিজা ভুনা করা দারুণ সহজ। রীতিমত ‘আনাড়িবান্ধব’!
আমরা আনাড়িরা রান্নার সময় একটা জিনিশে ভয় পেয়ে যাই। ভাবি মশলা-পাতি কী না কী দেব। কোনটা বেশি হবে কোনটা কম হবে সব মিলিয়ে সর্বনাশ! এবং কোনো রেসিপি বই থেকে যখন রান্না করতে শুরু করি তখন নিক্তি চামচ মিলিলিটার মেপে মেপে সব বস্তু দিতে দিতে, কোনটার পরে কী দেব না দেব, ভাবতে ভাবতে হই একসা।
তো কানে কানে একটা জিনিশ বলে রাখি। যে কোনো রান্নার ক্ষেত্রে হাতে গোনা দুইটা বা একটা জিনিশের (মসলার) ‘আপার লিমিট’ আছে। বাকি সব, যত গুড় তত মিষ্টি পদ্ধতিতে বেশি দিলেও সমস্যা নেই। এবং অনেক সময়ই সেসবের একটা একটু বেশি হয়ে গেলেও অন্য কোনো পদ্ধতিতে কমিয়ে নেওযা যায়। (বেশিরভাগ সময়ই তারও প্রয়োজন নেই)।
তো প্রথমে আপার লিমিট ওয়ালা মশলার কথা বলি। সেটা হচ্ছে ‘লবণ’। তবে মজার ব্যাপার হলো। এটা কাটিয়ে ওঠার ‘সেফটি মেজার’ আছে। কারণ লবণ হচ্ছে এমন একটা মসলা যেটার ঠিক অন্য মসলার মত করে তরকারির সাথে সিজন হওয়ার দরকার নেই। মানে শুরুতে খুবই কম একটু লবণ দিয়ে চালিয়ে নিলেই হয়। রান্নার শেষের দিকে ঝোলটা একটু জিভে নিয়েই বুঝে ফেলা সম্ভব লবণ কম হয়েছে কিনা। তখন একটু একটু করে লবণ দিতে হবে আর চেক করতে হবে। একসময় বুঝে ফেলা যাবে যে এখনই ঠিক! এটা যে লবণের স্বাদ বোঝে সেই পারবে। আর লবণের লবণাক্ততা যে সেন্স করতে পারে না তার লবণ বেশি হলেই কী কম হলেই কী। তার জন্য পরকালে আছে জান্নাত।
আর অন্য মসলা যেমন, পিঁয়াজ। এটা যত বেশিই দেন না কেন কোনো সমস্যা নেই। ইনফ্যাক্ট ‘যত পিঁয়াজ তত স্বাদ’। এর পরে রসুন। এটাও মোটামুঠি বেশি হয়ে গেলেও সমস্যা নেই। তবে থাম্বরুল হলো পাঁচ কোয়াই ইনাফ। এরপর মরিচ। মরিচ বেশি হলেও কোনোই সমস্য নেই। খাওয়ার সময় ঝোল অল্প করে নেবেন। আর ঝাল বেশি হয়ে গেলে তারও একটা আলাদা মাজেজা আছে। স্পেশালি কলিজা ভুনাতে তো ঝাল বেশি দিতেই হবে। এছাড়া দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ এগুলোও বেশি হয়ে গেলে কোনোই সমস্যা নেই। জাস্ট বেশি হয়ে যাবার ভয়টাকে মন থেকে দূর করে যতটুকু মনচায় দিয়ে দিলেই হলো। মনে রাখতে হবে একটু বেশির দিকেই আসলে ভালো। যার কম মশলা লাগে যে ঝোল কম নেবে ব্যাস।
তবে আপারলিমিট ওয়ালা মশলা হচ্ছে ‘গোলমরিচ’। অবশ্য বেশিরভাগ রান্নাতেই এই বস্তু অপশনাল। তাই না দিলেও সমস্যা নেই। আর দিলেও একটু কমের দিকে দেওয়া উচিত (যত কম পারা যায়)। কারণ এই বস্তুর ঝাল পাওয়া যায় দুইবার। প্রথমবার সয়ে নিলেও দ্বিতীয়বার বড়ই সমস্যা।
বাকি থাকলো, হলুদ, ধনিয়া, আর জিরা। ভুনা টাইপ রান্নায় হলুদেরও তেমন কোনো আপার লিমিট নেই। সবজি বা মাছে একটু সাবধান হতে হয় অবশ্য। তবে মাংস-কলিজা-ভুড়ি এসব রান্নায় দিলদরিয়া হয়ে হলুদ ঢাললেও কোনো সমস্যা নেই। ধনিয়াতে তো ব্যাপারটা আরো স্বাধীন। আপনি ধনিয়া যতই বেশি দেন না কেন, কোনো মাংস বা কলিজাভুনা টাইপ, রান্না নষ্ট করতে পারবেন না। তাই ধনিয়া প্রয়োগেও দিলদরিয়া হউন নিশ্চিন্তে। মানে যতটুকু দিলে হয় তার চেয়ে বেশিই দিন দরকার হয়। এবার আসি জিরা তে। জিরারও আসলে কোনো আপার লিমিট নেই। মানে জিরার গুড়া অনেক দিয়ে দিলেও রান্না খাওয়া যায় বেশ ভালোই। তবে এর পরিমিতির সাথে ‘স্বাদের টোন’ ডিপেন্ড করে। মানে ঐ গান-সুর সবই ঠিক। তার মধ্যে একটা ‘কী যেন একটা’ থাকে না? জিরা হলো সেই বস্তু। এর সু-প্রয়োগে সবাই আপনার রান্নার হাতের প্রশংসা করবে। তবে এদিক ওদিক হয়ে গেলে ঝাল বেশি দিয়ে দেবেন। ব্যাস। সবাই ঝালের শাসানিতে অন্য কিছু বোঝার টাইমই পাবে না। হা হা হা!
এখন বলুনতো কী বাদ গেল? ঠিক ধরেছেন ‘তেল’!
মজার ব্যাপার হলো তেলেও ঐ ‘যত গুড় তত মিষ্টি নীতি’, যে কারণে ডুবোতেলে ভাজা জিনিশ খেতে বেশি ভালো লাগে।আসল কথা হলো তেল বেশি দেওয়াটা কিছুটা অস্বাস্থ্যকর। কিন্তু স্বাদ উতরে যাবেই। আর গরু ভুনাটাইপ কিছুতে তেল বেশি হলে এটাকে ‘মাংসের চর্বি গলে হয়েছে’ বলে আপনি পার পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু তেল একটু বেশি হলেই বরং সাধারণত যে কোনো রান্না স্বাদ বাড়ে। আর যদি দেখেন তেলের দরিয়ায় সব কিছু ভাসাভাসি করছে। তখন চামচ দিয়ে কিছু তেল উঠিয়ে ফেলে দেবেন ব্যাস। রান্নায় পরিমান নিয়ে এক্সপেরিমেন্টে হারানোর কিছু নেই।
ছোট বেলায় একটা জনসচেতনতা মূলক বিজ্ঞাপন দেখাতো। ‘ও ভাই মুরুব্বিরা কয়, শাক সবজি খাইলে নাকি পেটের ব্যারাম হয়’। ওখানে কিন্তু শেষে বলে যে ‘বেশি করে তেল দিয়ে শাক ভাজি করুন’। কারণ তেলের সাথে শাকের বিক্রিয়ায় তার ভিটামিনগুলো নাকি শরীরের পক্ষে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়। অবশ্য খুব বেশি ভাজা ঠিক নয়। তবে এইসব শাকের ভিটিটামিন আমাদের মূখ্য বিষয় না। আমরা চাই স্বাদ! আর আমরা করতেও চাচ্ছি কলিজা ভুনা।
তো শুরু হোক ভুনা প্রক্রিয়া-
কলিজাগুলো খুব ছোটো ছোটো কিউব করে কাটা থাকতে হবে। সেগুলো অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নেবেন। ধরুন কলিজা আছে কেজি খানেক। এখন পিঁয়াজ। পিঁয়াজ দেবেন চার-পাঁচটা। যত বেশি ততই ভালো। তাই সাত-আটটা দিয়ে দিলেও সমস্যা নেই। পিঁয়াজ বেটে বা ব্লেন্ড করে বা কুঁচি কুঁচি করে কেটেও দেওয়া যেতে পারে। রসুনের ছয় সাত কোয়া কুঁচি কুঁচি করে সঙ্গে রাখুন। সঙ্গে সব রকম গরম এবং ঠান্ডা মসলাও রেডি রাখুন।
এখন কড়াই বা ফ্রাইংপ্যান বা পাতিল যাতে খুশি তাতে তেল নিন। তেল দেওয়ার আগে চুলা জ্বালিয়ে একটু সময় দিন পানিটা শুকিয়ে যাবার জন্য। এবার নিজের পিয়াঁজ কুঁচিগুলোর দিকে তাকান। যতটুকু তেল দিলে সব গুলো কুঁচি ছড়িয়ে দেওয়ার পরে ঠিক ঠিক ডুবে যাবে ততটুকু তেল কড়াইতে নিন। দরকার হয় একটু বেশিই নিন। তেল গরম হলে কড়াই এর উপরে হাত নিয়ে গেলে একরকম তাপের হল্কা লাগবে। তখন রসুন কুঁচিগুলো দিয়ে দিন তেলে। রসুনগুলো যখন হলদে হই-হই করছে তখন দিন পিঁয়াজ। এর দুয়েকমিনিট পরেই কড়াইতে সব কলিজা ছেড়ে দিন। আর দিন গোটা পাঁচেক কাঁচা মরিচ লম্বা ফালি করে কাটা। এ সময় এক দেড় চা চামচ আদা বাটা/কুচিকরা দিয়ে দিন। (অনেকে রসুনের সাথে আদা মিসিয়ে পেস্ট করে রাখে ওতেও চলবে)। এখন সুন্দর মত রান্না করতে থাকুন। সঙ্গে এক চা চামচ লবণ দিতে ভুলবেন না।
তেলে ভাজা হতে হতে দেখবেন কলিজাগুলো একটু শক্ত শক্ত হয়ে যাচ্ছে। রঙও একটু ফ্যাকাসে হয়ে যেতে থাকবে। এখন দিন হলুদ গুঁড়া (যত হলুদ খেতে চান তত)। মরিচ গুঁড়া ( নিশ্চিন্তে দু’চা-চামচ)। ধনিয়া গুঁড়া ( শুধু খেয়াল রাখুন হলুদের চেয়ে বেশি না হয়ে যায়)। জিরা গুঁড়া (দিন দু চা চামচ)। এবার নাড়াচাড়া করতে থাকুন।
তবে আমরা রান্না করছি কলিজা। কলিজার একটা অপ্রীতিকর গন্ধ আছে। এর জন্য চাই গরম মশলা। যেমন লবঙ্গ। আগেই বলেছি। এসব মশলা দেওয়ার সময় কম হলো নাকি বেশি হলো তা নিয়ে অত মাথা ঘামানোর দরকার নেই। কলিজা ভুনাতে বেশি হলেই ভালো। তাই নিশ্চিন্তে লবঙ্গ দিয়ে দেন। আট দশটা হলেও সমস্যা নেই। সাতটা বা তার চেয়ে দুয়েকটা বেশি এলাচ দিন। এলাচ দেওয়ার আগে একটু ছেঁচা দিয়ে ফাটিয়ে নেবেন। আমি কাটিং বোর্ডের উপর ছুরির বাটের উলটো পাশটা দিয়ে বাড়ি দিয়ে এলাচ ভাঙ্গি। হামানদিস্তা বা শিলপাটা থাকলে তো কথাই নেই। একই সঙ্গে দারুচিনি। যত খুশি তত দিন। দারুচিনির একটা বড় স্টিক বাড়ি দিয়ে ভেঙ্গে চুরে দিতে পারেন। ভাঙ্গা চোরার পরে যেন দেখতে এলাচ এবং লবঙ্গ এর মিলিত পরিমানের চেয়ে বেশি মনে না হয় এটুকু খেয়াল রাখলেই হবে। অবশ্য আগেই বলেছি। এসব কম বেশি হলেও সমস্যা নেই কোনোই। বাকি থাকলো গোলমরিচ। এর পাঁচটা দানা দিলেই হবে। চাই কি বাড়ি দিয়ে ভেঙ্গেও দিতে পারেন এগুলোকে। ব্যাস। এসব ছড়িয়ে দিন কলিজা ভর্তি কড়াইতে। দিয়ে একটু নাড়া-চাড়া করুন।
এখন কাজ হলো পানি দেওয়া। বেশি নয়। ততটুকু পানি দিন যতটুকু দিলে কলিজাগুলো পানিতে প্রায় ডুবি ডুবি করে কিন্তু পুরো ডুবে যায় না। এখন হালকা নেড়ে চেড়ে একটা ঢাকুনি দিয়ে ঢেকে দিন।
পানি শুকিয়ে যাওয়া মানেই রান্না শেষ হওয়া। এর মাঝে দুয়েকবার ঢাকুনি তুলে একটু নাড়াচাড়া করে দিন। আর শেষদিকে খুন্তিতে করে একটু ঝোল(আসলে ঝোল প্রায় শুকিয়ে গেছে তখন) নিয়ে দেখুন লবণ ঠিক মনে হয় কিনা। খেয়াল করুণ আমরা সব রকম মশলাই বেশ ভালোমতই দিয়েছি। লবণ চাখার সময় যদি অনুভব করেন যে ‘মশলাপাতি কম মনে হচ্ছে’। তার মানেই হলো আসলে কম হয়েছে লবণ। কোয়ার্টার চা চামচ লবণ দিয়ে নেড়ে চেড়ে তার পর আবার চাখুন। দরকার হয় আরেকটু দিন, আবার চাখুন। একসময় মশলাটা বেশ সুস্বাদু মনে হবে। ও হ্যা। গরম মশলা যোগ করার একটু পর থেকেই কলিজাভুনার মনকাড়া সুবাস পেতে থাকবেন রান্নাঘর জুড়ে। পানি শুকিয়ে মশলা এঁটে আসার সময় একটা পাতলা খুন্তি দিয়ে নাড়তে থাকুন। বেশি নেড়ে আবার কলিজা গুড়িয়ে ফেলবেন না। জাস্ট কড়াই/ফ্রাইংপ্যান এর নিচে যেন মসলা ধরে না যায় সেটা খেয়াল রাখুন।
কখন বুঝবেন রান্না শেষ? নিশ্চই কলিজাভুনা আপনারা আগে কখনো খেয়েছেন। যখন দেখবেন মসলা শুকিয়ে তেমন হয়ে গেছে তখনই বুঝবেন রান্না শেষ। আর যারা আগে কোনোদিন কলিজা ভুনা খাননি তারা দেখবেন পানি শুকিয়ে যতটুকু বাড়তি তেল রয়ে গেছে। সেটুকু একদম লালচে বা কালচে হয়েছে কিনা। তখন নামিয়ে নিলেই হবে।
এবার খান।
বানান কৃতজ্ঞতা: দুষ্ট বালিকা
মন্তব্য
ঐ মিয়া, আদা কই?
কলিজা রান্নার আগে ভাল মত গরম পানিতে ধুতে হয় জানতাম। আমি রান্নার সময় কিছু আলুও কিউব করে দিই। রান্নার আদি ও অকৃত্রিম সত্য-অন্য কেউ রান্না করে দিলে আমার সব খাইতে ভাল লাগে।
(আমি ভুতপূর্ব অপরাজিতা, নিক আরেক জনের সাথে মিলে যায় দেখে পরিবর্তন করেছি।)
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
ওহ্ বর্ণনামূলক লিখতে গিয়ে আদাটা কখন যে স্কিপ করেছি। মাংস টাইপ রান্নায় আদা মাস্ট। যাকগে এখন যোগ কর দিয়েছি। আমার 'পিয়ার রিভিউয়াররা'ও দেখি আদার পয়েন্ট টা মিস করসে।
মাংস বা কলিজা এসবে আলু দিলে কেন যেন স্বাদ একটু পড়ে যায়। মনে হয়। এই কারণে বেশিরভাগ সময়ই দেই না। আর আমার খাইতে তো ভালো লাগেই, রানতেও দারুণ লাগে।
(ওহ! তাইতো বলি। আমি ভাবলাম হঠাৎ করে তুমি কোথায় অদৃশ্য হলে)
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হুম... আদা কই?
আর হলুদ ধনিয়া জিরা সবকিছুতেই যে বানী দিলেন যে এগুলা বেশি দিলে ক্ষতি নাই! হলুদ বেশি হইলে সেই বস্তু খাওন যাবে?
যাহোক, রানতে রানতেই শিখে যাবেন। তবে রান্না না শেখাটাই ভালো। বউ একবার খালি যদি জেনে যায় আপনি ভালো রান্না পারেন, তাইলেই খবরাছে... নিজের জীবন দিয়াই তো দেখতেছি
দেশে আইতেছেন কবে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আদা দিয়ে দিসি
আসলে যারা নরমালি রান্নাবান্না করে না। তাদের মধ্যে এক ধরণের 'মসলাভীতি' কাজ করে। মসলা নিয়ে যে ভয়ের কিছু নেই সেটা বুঝাতেই এগুলো বলা। যেমন হলুদ কিন্তু লবণের মত না। মানে হলুদের ফ্লেক্সিবিলিটি বেশি। অন্তত গরু/কলিজা এসবে। মাছ আর সবজিতে একটু সাবধান হতে হয়। সে অন্য ব্যাপার (তখন ইচ্ছা করে একটু কম দিলেই হয়)। ভুনাভুনিতে হলুদ বেশি হয়ে গেলে ভুনাটা একটু পোড়াপোড়া করে ফেললেই হলুদের গন্ধটা কেটে যায় বেশিরভাগ সময়। তারপর চাই কি পানি দিয়ে আবার তরল করে নিলেই হলো।
ঈদের আগদিয়ে আসার ব্যাপক সম্ভাবনা। তার মানে একমাস মত।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কলিজা জিনিসটা আমি ভালো পাই না, তাই জীবনেও রান্নার চেষ্টা করি নাই ... তবে যদ্দূর জানি কলিজা সিদ্ধ করে নেয়ার একটা স্টেপ থাকার কথা ...
আর মসলার ক্ষেত্রে আমার অবজারভেশন আপনার পুরাই উলটা; কম হইলে খুব বেশি ক্ষতি নাই কিন্তু বেশি হইলে বিচ্ছিরি লাগে ... বিশেষ করে হলুদ বেশি হইলে তো মার্ডার কেস ...
আমার রুল অভ থাম্ব হচ্ছে পেঁয়াজ যত বেশি তত ভালো [ফ্রিজে যে কয়টা থাকে তার মাঝে একটা ইমার্জেন্সি সাপ্লাই হিসাবে রেখে বাকি সবগুলি কেটে সমান ভাগ করে সব তরকারিতে দিয়ে দেয়া যায়]; লবণ শুরুতে কম, পরে লাগলে দেয়া যাবে; রসুন মোটামুটি নিরাপদ জিনিস, এক চামচ পেস্ট আরামে দিয়ে দেয়া যায়; আদা রসুনের অর্ধেক হইলেই চলে [বেশি হইলেও ক্ষতি নাই মনে হয়]; মরিচ গুড়া জিহবার জোর অনুযায়ী, বেশি কমে তেমন কিছু ক্ষতি হয় না ... হলুদ খুবই কম, বিগিনারদের আধা চা-চামুচের বেশি দেয়ার দরকার নাই; জিরা-ধনিয়া হলুদের ডাবল পরিমান দিয়ে দেয়া সেইফ; আর গ্রম মসলা মাংসের পরিমাণের উপর, এককেজি মাংসে ম্যাক্সিমাম এক চা-চামুচ ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
মিয়া, মসলা কম দিয়া রাঁধলে কলিজা তো খারাপ পাবেনই। কলিজা ভুনা হলো এমন একটা আইটেম, যার মধ্যে ইচ্ছামত বেশি বেশি মসলা দেওয়াই উত্তম।
উমম, কলিজা এমনিতেই অনেক সফট জিনিশ। রান্নার আগে হলুদ লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হয় ভুড়ি। কলিজা এমনি ভুনা করলেই চলে।
হ্যা, হলুদ জিনিশটা সুক্ষ। কিন্তু সবজি বা মাছ রান্নায় বেশি সুক্ষ। যে রান্নাটা জানিই যে ভুনা করব। সেখানে হলুদের অতটা বাধ্যবাধকতা নেই। আর আসল কথা হলো আমি বলতে চেয়েছি। কোন কোন মসলাগুলোতে কোনো ধরণের লিমিটের কথা মাথায় না রেখে রান্না করলেও রান্নাটা খাওয়াই যায়। এবং অনেক সময়ই ভালোই লাগে। যাতে নতুন রাঁধক-রাঁধুনীরা 'মসলাভীতি' কাটিয়ে উঠতে পারে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কলিজা আমারও তেমন একটা পছন্দের খাবার না। তবে আপনার রেসিপিটা একবার ট্রাই করার ইচ্ছা আছে। মশলা নিয়ে আপনার বাণীতে সাহস পাচ্ছি।
পাগল মন
হ্যা, কলিজা রান্নায় মসলা বেশি হওয়া নিয়ে চিন্তিত হবেন না। জাস্ট লবণ পরিমিত হলেই হলো।
রান্না করে ফেলুন।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
"আনাড়িবান্ধব" কথাটায় কি আমার কপিরাইট নিয়া চিল্লাচিল্লি করা উচিত?
রেসিপিটা পরে পড়তেসি, আগে কিছু হাতের কাজ সাইরা আসি।
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
শব্দটা আপনার কাছ থেকেই শেখা। মনে করতে পারছিলাম না এক্সাক্ট উৎসটা।
তবে এই শব্দের যে 'পটেনশিয়াল' তাতে ক্রিয়েটিভ কমন্স GNU বা ফ্রী লাইসেন্স এর আন্ডারে এইটা ছেড়ে দিলে দেশ-জাতি অশেষ উপকৃত হয়।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
তা ছাড়লাম, কিন্তু শব্দটার সাথে আমার চেহারা মোবারক লাগায়ে দিলে কেমন হয় চিন্তা করতেসি।
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ভাই, এটাতেও আনাড়িবান্ধব ট্যাগ মেরে দেন। আনাড়িরা সার্চ করলে সহজে পাবে
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
দিয়ে দিলাম
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
বেশ মজা করে লেখা। আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। কলিজার গন্ধ সমস্যার কারণে আমি প্রথম প্রথম অনেক কসাতাম। কিন্তু খেতে কেমন শক্ত লাগত। তারপর মুরব্বীরা বল্লেন, মসলা আগে ভালো করে কসাতে হয়, কলিজা বেশী কসাতে হয় না।
আমার এখন কলিজা খেতে ইচ্ছা করছে ।
-লাবণ্য-
ফাহ_বেগম@ইয়াহু
হুম, শুধু মসলা আগে একটু কসিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে শুরুতেই মসলা খুব বেশি কসালে একটা মুশকিল হয়। যেমন পিঁয়াজ রসুন আদা এসবের রস শুকিয়ে যায়। ফলাফল মাংস/কলিজা পরে দিলে সেগুলোর সাথে মিলমিস হয় না পুরোপুরি।(মানে রস গুলো কলিজার মধ্যে ঢোকেনা) মাংস রান্নার সময় তাই আমি মসলা-পাতি দিয়েই কসাই।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কইলজা ভুনা দিয়া পরোটা খাইতে মঞ্চায়
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
রেন্ধে ফেলেন। মাংসের মত অত সময় লাগে না। দামেও অর্ধেকেরও কম।(এখানে, সিঙ্গাপুরে)
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
সমস্যা হইল আমি ওইত্তাইন্ত নিয়ম মাফিক রান্না করি - সময় বাঁচাতে + ডায়েট করতে। গতকালই বাঁধা কপি ভাজি রান্না করেছি। মাছ ও রান্না করা আছে। আগামী চারা/পাঁচদিন রান্না বন্ধ। আমারে মেরে ফেললেও আমি আর চুলার কাছে যাইতন্ন।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
মামু দেখি আমার লাইনে চলেন ... আমি গত শনিবার রান্না করসি, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত স্যান্ডুইচ বানানো ছাড়া আর কোন কাজে কিচেনে ঢুকবো না
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
আমাদের অবশ্য প্রায়ই একদিন পরপরই রান্না করতে হয়। বাসায় ৫ জন থাকি। একেকদিন একেকজন রান্না করে।তাই বেশি ঝামেলা হয় না। আর বাসায় খাই শুধু রাতে। দেশি খাবার। দিনে বিভিন্নি, থাই,চাইনিজ,ইন্দোনেশিয়া,মালয়েশি,ইন্ডিয়ান,জাপানি এসব খাওয়া হয়।
আর রান্না করা হইলো আমার হবি এই কারণে মজাই লাগে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কইলজা ভুনা একটু প্রিয় ছিলো। কিন্তু এখানের কলিজাগুলো রান্না করলে অনেক বেশী গন্ধ হয়। মা মাঝে মাঝে অনেক টাইপের মসলা দিয়ে সিদ্ধ করে পরে ভুনা করতেন।
মনতো চায় অনেক কিছুই খাইতে। কিন্তু এতো কষ্ট করা সম্ভব না
মুর্শেদ ভাইয়ের মতো অবস্হা। গতকালের দুপুরের লাঞ্চ ছিলো- ৭/৮টা অলিভ, ৭/৮ পিছ শসা, ৩০০ গ্রাম সিদ্ধ ভুট্রা, ১টা সিদ্ধ ডিম, ৭/৮ পিছ ফেটা ক্যাজে, ১০০ গ্রাম টুনা মাছ, সামান্য পেয়াজ পাতা। দিন দিন নীচের দিকেই নামতেছি
রান্না করা কিন্তু মজার কাজ। অনেক রকম এক্সপেরিমেন্ট করা যায় চাইলেই। সঙ্গে রান্না শেষে সুঃস্বাদু খাবার। তাই সহজ কিছু আইটেম (যেমন খিচুড়ি, মুরগি ভুনা) শিখেই ফেলুন।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
সেইটা আর বলতে...। স্কুল জীবন থেকেই রান্না করে খাইরে ভাই। এখন তো কামলা জীবন। এক্সপেরিয়েন্সের ঠেলায় এখন রান্নার রঙ দেখেই বুঝে নেই কেমন হলো।
কয়েকবছর আগে ইংল্যান্ডে রেষ্ট্রুরেন্টে কামলা দিয়েছিলাম। ২০/২৫ টা বাটিতে বিভিন্ন আইটেমের রান্না থেকে নিজের আইটেম কালার দেখে বেচে নিয়ে কাষ্টমারকে দিতে হতো।
এখনো শখ করে মাঝে মাঝে রান্না করি। তবে কেউ যদি পেয়াজ কেটে দেয়। একটা পেয়াজ কাটলে ৩/৪ ঘন্টা চোখ জ্বলে (যদিও ইংল্যান্ডে একদিনে ৪ বস্তা পেয়াজ ছিলানোর রেকর্ড আছে)
তো কানে কানে একটা জিনিশ বলে রাখি। যে কোনো রান্নার ক্ষেত্রে হাতে গোনা দুইটা বা একটা জিনিশের (মসলার) ‘আপার লিমিট’ আছে। বাকি সব, যত গুড় তত মিষ্টি পদ্ধতিতে বেশি দিলেও সমস্যা নেই। এবং অনেক সময়ই সেসবের একটা একটু বেশি হয়ে গেলেও অন্য কোনো পদ্ধতিতে কমিয়ে নেওযা যায়। (বেশিরভাগ সময়ই তারও প্রয়োজন নেই)।
বাঃ দারুণ বলেছো তো!
এতো অল্প বয়সে, এতো অল্প অভিজ্ঞতায়( নিশ্চয় অল্প দিন হলো রান্না করছো?) এতো তাড়াতাড়ি কী করে বা কে শেখালো তোমাকে রান্নার এই গূঢ় তত্ত্ব? আসলে এটাই আসল কথা, প্রচলিত ফরমুউলা থেকে বের হয়ে আসতে পারাটাই খুব কঠিন। সেটা পারলে আর মশলাপাতির চরিত্র বিশ্লেষণ করতে পারলে, যেটাই রান্না করবে অখাদ্য হবেনা। মেরে কেটে বের হয়ে যেতে পারবে। আমার রান্নাবান্নার অর্ধেকটা জীবন গেছে এটা শিখতে।
একটা কথা জেনে রাখো কাজে দেবে-------
আমার শশুড়বাড়ীর কম বেশি সব পুরুষ সদস্যরাই ভালো রাঁধে বা রাঁধতে পারতো। আমার শশুড়মশাই বলতেন রান্না ভালো হয় "হয় ঝালে আর নয় জ্বালে।"
--------------------------------------------------------------------------------
ইয়ে, রান্নাবান্নার প্রতি আমার একরকম আত্মিক টান আছে।
সেই ছোটোবেলা থেকেই দেখা যেত রান্নাঘরে ঘুর ঘুর করতাম। গ্রামের বাড়ি গেলে তো কথাই নেই। সবাই মাঠে ঘাটে ঘুড়ে বেড়ায় আর আমি গিয়ে ঢুকি রান্না ঘরে। কাঠের চুলায় জ্বাল দেওয়া হলো সবচে মজার খেলা।
তবে রান্না করি বেশ অনেকদিনই হলো। তাও আট বছর। প্রথম এইস এস সি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় আসার পর থেকেই। মাঝে হলে ওঠায় বিচ্ছেদ পড়েছিলো। এখন আবার বিদেশ বিভুইতে এসে পুরোদমে শুরু করেছি।
আর যারা রান্না করে না বা রান্না পারে না বলে দাবি করে, তারা আসলে এ মশলাভীতি তে ভোগে সেইটা খেয়াল করেছি কিছুদিন হলো। সেই কারণেই এই লেখা।
আর রান্না নিয়ে আমার অবজার্ভেশন হচ্ছে, দেশী রান্নার অল্প কিছু টাইপ আছে। যেমন ইলিশ মাছের মূল টাইপটটা জেনে গেলে, সরিষা ইলিশ থেকে শুরু করে ইলিশের যেকোনো আইটেমই আসলে সহজ।
একই কথা, মাংস, সবজী এসবেও খাটে।
তবে ভালো রান্নার আসল ইনগ্রেডিয়েন্ট হলো 'ভালোবাসা'।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
এত ঝামেলার দরকার কী? একটা রাঁধুনি টাইপ বউ ঘরে নিয়ে এলেই হয়।
কি মাঝি, ডরাইলা?
আর রাঁধুনি টাইপ। আজকালকার মেয়েরা কি রান্না পারে? নাকি রান্না করতে যে 'ভালোবাসা' দরকার সেইটা তাদের আছে?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
একলা একলা খাইলেই হপে? নেক্সট কবে আবার রান্তেছো আগে থেকে জানাইয়ো।
লেখাটা আগেই পড়েছিলাম, তখন মন্তব্য করা হয় নাই। হেভভি টেস্টি হয়েছে।
অসাধারন রেসিপি। কিন্তু আজকালকার মেয়েরা রান্না জানেনা বা রান্না করতে যে 'ভালোবাসা' দরকার সেটা তাদের নাই- এটা মনে হয় ঠিক না। সবাই তো আর এক না। তবে হ্যাঁ, শুধু নিজের জন্য রান্না করতে গেলে ভালোবাসা টা ঠিকমতো আসে না। তবে এখন রান্নায় ভালোবাসা থাকুক আর না থাকুক এমনিতেই রান্না ভালো হয়ে যায়। আর এটা নিয়ে চরম বিপদে আছি। আমার ফ্ল্যাটমেট রা ভয়ে রান্নাই করে না (ওদের ভাষায়, আমাকে তেল দিতে বলে), তাই বেশীভাগ রান্না আমাকেই করতে হ্য়।
কিছু কিছু ব্যাপারে আমার অমত আছে এই রেসিপিতে। সেগুলো বাদ। আমাদের দেশের ছেলেরা রান্না করতে শিখছে এটাই অনেক বড় কথা।
ভালো থাকুন।
আকাশনীলা
কলিজার গন্ধ তাড়াতে হলুদ-নুন দিয়ে ম্যারিনেট করে ফেলে রাখুন প্রায় আধা থেকে এক ঘন্টা। তারপর, হোক অধিষ্ঠান।
আমার রান্না খেতেই ভালো লাগে, আর মতামত দিতে। রাঁধতে নয়।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
কলিজা ভুনায় পানি লাগেনা বা খুবই কম লাগে। আমি নিজেই অনেকবার রেধেছি। কলিজা থেকে যে পানি বের হয় তাতেই অল্প আচে ভুনাসহ সিদ্ধ হয়ে যায়। লেখাটা চমতকার...
নতুন মন্তব্য করুন