ঘড়িতে বাজে নয়টা নয়। সকাল। একটু আগে মশাড়ির ভেতর থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে হাঁটু মুড়ে বসেছি একটা কাঠের চেয়ারে। সামনে খোলা ল্যাপটপ। লিখতে হবে কিছু-মিছু। শেষ রাতের দিকে যে মশকীরা আমাকে রীতিমত চ্যাংদোলা করে উড়িয়ে নিয়েছিলো মশাড়ির ভিতরে তারা এখন বাড়ি ফিরেছে। অলস ভঙ্গিতে ডিমে তা দিচ্ছে মনে হয়। কাঠের চেয়ারটা মাঝে মাঝেই বাতের ব্যাথ্যায় কেমন যেন কট কট করছে। বৃদ্ধ চেয়ার। আমার চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ। আমি হিসাব করে দেখেছি, আমার এখন যা বয়স, আমার বাবার যখন ঠিক এই বয়স ছিলো, তখন আমার জন্ম হয়। আমার জন্মেরও বছরখানেক আগে বাবা এই চেয়ারটার মত ছয়টি চেয়ার বানান। আমি বোঝার চেষ্টা করি, গত বছর, বা তারও ছ’মাস আগে, এমন ছয়টি চেয়ার বানাতে আমার কেমন লাগতো!
এই যে, একটা প্যারা লিখেই কেমন আটকে গেছি। পাঠক হয়তো বুঝতে পারছেন না আটকালাম কোথায়। কিন্তু সত্যি বলছি, গত প্যারাটা লেখার পরে বসে ছিলাম প্রায় পনের মিনিট। কাগজ-পেনসিলে যদি লিখতে বসতাম তাহলে হয়তো এ সময়টা এক কোনায় কাটাকুটি করতাম। অথবা পেনসিল কামড়াতাম। কিন্তু এখন তা হয়নি। কামড়াচ্ছিলাম নখ। এর মাঝে মা এসে বললো, ‘কি রে, নাস্তা করবি না?’ মাথা নেড়ে জানালাম, ‘না’। ‘কিছু লিখিস তো না। ক’দিন ধরেই দেখি শুধু বসে থাকিস...’ বলে মা। আমি তখন এক রকম ঠেলে মা কে বিতাড়িত করি ঘর থেকে। বলি, ‘আহ্! বলেছি না, লেখার সময় কেউ আমার সাথে কথা বলবা না!’ আজকাল লেখার নাম করে মায়ের সাথে বিভিন্ন রকম বেয়াদবি করা হচ্ছে, কিন্তু লেখা হচ্ছে না কিছুই।
কদিন হলো দেশে ফিরেছি। ফেরার পর থেকেই মা নানাবিধ অত্যাচার চালাচ্ছে। খাওয়া-দাওয়ার অত্যাচার তো আছেই, সেই সাথে যুক্ত হয়েছে আরেক ধরনের অত্যাচার। হয়তো কিছু একটা ভাবছি বসে বসে। একসময় খেয়াল হবে মা এসে তাকিয়ে আছে।
‘তুমি এইখানে কী করো?’
‘তোকে মশা কামড়াচ্ছে কি না দেখতে আসলাম।’
‘মশা কি কামড়াচ্ছে?’
‘না।’
‘তাইলে কী করতেসো?’
‘কী অত ভাবিস সারাক্ষণ?’ চেহারায় উদ্বেগের ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করে মা।
‘দেখ মা, দুনিয়ার সব চিন্তাই দুশ্চিন্তা না। পৃথিবীতে সুন্দর সুন্দর বিষয় নিয়েও চিন্তা-ভাবনার অনেক অবকাশ আছে।’
‘তা সেই সুন্দর বিষয়টা কে?’
এরপরে আর কথা-বার্তা টেনে নেওয়ার ধৈর্য থাকে না। আমি আবার তাকে বিতাড়িত করি।
মন্তব্য
বুঝলাম, পোলা বড় হৈসে, এখন তারে বিয়া দিতে হৈবো। "সুন্দর বিষয়"-এর কথা মা'কে বলতে লজ্জা করলে তার আতা-পাতা আমারে জানাও; আমি মধ্যস্থতা করে দিবনে। নূপুরকেও বলতে পারো, ও ঘটকালীতে বেশ হাত পাকিয়েছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আতা-পাতা জানলে তো নিজেই বলতাম! নূপুরাপুকে বলে লাভ হয় না। তবে নজরুল ভাইকে ধরা যেতে পারে। ফেসবুকে দেখেছি দেশের সব সুন্দর বিষয় নিয়ে তার কারবার!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হাঃ হাঃ হাঃ,
মশকগণের উৎপাত আমাদের পুরো পরিবারকে সেঁদিয়ে দিয়েছে মশারির ভেতর। কি দিনে কি রাতে। আগে তো 'রেতে মশা দিনে মাছি' ছিল, এখন ২৪/৩৬৫। ওদের নিয়ে প্রথম প্রথম আমি, আর এখন গোটা পরিবার মায় আমার নয় বছরের মেয়েটিও মশারির ভেতরে ঢুকেই প্রায়শঃই বলে উঠে দু'টি লাইনঃ
ভাই রে, মায়ের কাছে কতদিন আবদার করি না রে ভাই! কতদিন মায়ের মধুর অত্যাচার পাই না রে ভাই!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাট কেনা হয়েছে রিসেন্টলি। এইটা দিয়ে মশা মেরে এক ধরনের শান্তি আছে। তবে মশাড়ির আসলে কোনো জুড়ি নেই।
আপনার বাচ্চা মেয়েকে এসব কঠিন কঠিন লাইন শিখিয়েছেন! দাত সব পড়ে যাবে তো
মায়েরা এসব অত্যাচার করে মজা পায়। বাবাদের জন্য দুঃখ, তাদের এমন কিছু করার অবকাশ নেই
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হা হা হা.. আসলেই বিয়ে শাদী দিয়ে দেয়া দরকার মনে হচ্ছে।
?????????
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ছয়টা চেয়ারের বিষয় কেম্নে মিলে গেল?
আমার বাবাও এই জিনিস বানায়েছে আমার জন্মের আগে। এখনো খাবার টেবিলের চেয়ার ছাড়া অন্য চেয়ার বাসায় আলাউড না। আর দেশে ছিলাম যতদিন, চেয়ার নিয়ে কত বকা খাইছি! আমরা নাকি ধড়াম করে চেয়ারে বসি।
যাই হোক ফেইসবুকে ০২ এর একজনের স্ট্যাটাস দেখলাম আরেক উইকেট গেসে। তোমার নাতো?
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
সবাই খালি সুন্দর বিষয়টাই দেখলেন, আর এই লাইনটা দেখলেন না?
হা হা হা হা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আয়হায়, আমার মাথায়ও দেখি এই লাইনটাই বাড়ি মারলো খটাশ কৈরা!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
পৃথিবীর সবখানেই একই সমস্যা বড় ভাই।
সুন্দরের কথা বললেই আমাদের অভিভাবকরা অন্য কিছু একটা ধরে বসেন।
আমি একবার আমার মাকে বলছিলাম এক লেখক বান্ধবীর কথা যে কিনা খুব ভালো লেখে
যথরীতি মা'র কথা''ওকে বিয়ে করার ধান্ধায় আছিস নাকি''।
আর কী বলবো বলুন।
---মুহিত হাসান দিগন্ত
...
আন্টির এবং আপনার যথাক্রমে চর এবং চড়ের প্রয়োজন পড়েছে!!
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
আমার ছোটবেলার শখ শার্লক হোমস হমু! খালাম্মার সাথে কথা বলতে হবে!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
মন্তব্যগুলো পড়তে গিয়ে হাসতে হাসতে পেটের অবস্থা খারাপ হয়ে গেলো।
গল্পের শুরু থেকেই হালকা বোঝা যাচ্ছিলো ভাবসাব, মশারির ভিতরে শুধু মশকী ভালো আর লাগছেনা, এই বয়সে বাবার বাবা হওয়ার ইতিহাস, দেশে ফেরা ইত্যাদি ইত্যাদি
সুন্দর বিষয় এবং তদসংশ্লিষ্ট বিষয়-বস্তুর এন্তেজামের সময় হইয়া গ্যাছে আসলেই।
-অতীত
'সুন্দর' বিষয়টা আসলেই ভাববার মতো!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আগেকার দিনে গ্রামদেশে পোলাপান বিয়ের বয়স হলে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা পয়দা করতো। গুরুজনের এইসব দেখে বেশি একটা ঘাবড়াতেন না। তারা জানতেন ধরে বিয়ে করিয়ে দিলেই মাথা ঘোরা ব্যারাম সেরে যাবে।
স্পর্শ, আপনার সময় হয়েছে মাথা ঘুরে পড়ে যাবার।
ঠিকঠিক!
আমিও তো তাই বলি। মেঘে মেঘে বেলা তো কম হল না, বাবা হওয়ার বয়স পেরিয়ে এবার সরাসরি নাতি অ্যাডপ্ট করার বয়স হৈয়া যাইব। এখনই সুন্দর বিষয়ের আতাপাতা না লাগালে ক্যাম্নেকি?
নিজের বলতে লজ্জা লাগলে খালাম্মার ফোন নাম্বার দেন! আম্রা কথা বলি। সচলে কী গুরুজনের অভাব আছে নাকি! এইভাবে চিন্তা করে করে চোখের নিচে কালি ফেলার কুনু মানে নাই!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝে না। ব্যাচেলর লাইফ যে কত আনন্দের এইটা এখন বুঝতে পারছেন না বা চাইছেন না! বিবাহ নামক ঝামেলাপূর্ণ বস্তুতে নিজেকে জড়ায়েন না। -রু
বিবাহ একটি ভ্রান্ত ধারমা
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
"ব্যাচেলর লাইফ যে কত আনন্দের এইটা এখন বুঝতে পারছেন না বা চাইছেন না!"
ঠিক বলেছেন রু...
সচলে এরকম হাল্কা মজার ব্যাপার অনেকদিনে পরে পেলাম,...পরিবেশটা অনেক গুরুগম্ভীর হয়ে থাকে,
এই লেখার আসল উদ্দেশ্য জলের মতো পরিষ্কার।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বেচারা কে মাফ করেন, আন্নেরা এইবার থামুইন যে...।।
নতুন মন্তব্য করুন