যে ব্যাটা চিরতরুণ সে যদি নিজেকে চির তরুণ ভেবে বসে তাহলেই যত বিপদ। কারো কাজকর্ম দেখে অন্যরা সবাই যদি তাকে চিরতরুণ খেতাব দেয়, তাহলে ব্যাপারটা ভুল হলেও ঠিক আছে। তবে আসল কথা হলো, বয়স বাড়লে আমরা বুড়ো হই। সে শরীরে বলেন, বা মনে। ব্যাপারটা মেনে নেওয়া স্বাস্থ্যকর। আমার আবার বুড়ো হতে ভালো লাগে না। তাই যখনই বয়স বাড়ার ব্যাপারটা মনে আসে অমনি নিদারুণ একটা মর্মবেদনায় পীড়িত হই। কিন্তু সারা বছর এসব দুঃখ-বেদনা অবজ্ঞা করে গেলেও জন্মদিনে তার আর কোনও উপায়ই থাকে না।
এমন না, যে আমি বড় কোনো কেউকেটা। বছর বছর ঘটা করে জন্মদিবস পালন করবে সবাই মিলে। তাই আগের যুগে এসব ঝামেলা থেকে রেহাই পেয়েও গেছি কয়েকবার। তবে এখন ফেসবুক আছে। মোবাইলে, মেইলে, স্কাইপে, রিমাইন্ডার আছে। তাই কোনো বাঁচন নাই। যার মুখও দেখিনি কখনও, সেও ফেসবুকে এসে বলে যাবে ‘হেপি বাড্ডে’। বাংলায় যার অর্থ, ‘ব্যাটা তোর বয়স বাড়তেসে’। কয়েকশ বার এসব শুনতে কার ভালো লাগে? তার উপর সবাইকে আলাদা করে ধন্যবাদ দেওয়াও লাগে। বিরাট হ্যাপা...
এসব কারণে কারো জন্মদিনে কী উইশ করবো সেটা বুঝে পাই না। তবে রিসেন্টলি ভেবে দেখলাম। বয়স বাড়ার ব্যাপারটা দুঃখজনক প্রাত্যহিক ঘটনা। কিন্তু জন্মদিনটা এক হিসাবে ভালোই। মানে এইটা শেষমেশ একটা লাকি ডে। ইনফ্যাক্ট প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় লাকি ডে ছিলো এইটা। জন্ম না হইলে কী মিসটাই না করতাম! তাই জন্মদিন একেবারে ফেলে দেওয়াও যায় না।
এদিকে, কারো জন্মদিনে ‘হ্যাপি বার্থডে’ তো আর বলতে পারি না। নিজেরই যেহেতু পছন্দ না জিনিসটা। তাহলে কী করি?
এমন একটা সমস্যাতেই ফেলে দিয়েছে আমাকে আমাদের রায়হান আবীর। এখনও মনে আছে, দেশ ছেড়ে যাচ্ছি, প্লেনে উঠে পড়ার একটু আগে শেষবারের মত আমার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন করেছে রায়হান। বা মাঝে দেশে ফিরেছি, সবার আগে কথা হলো যার সাথে সে হচ্ছে রায়হান। ছেলেটা প্রচণ্ড গুণধর। তার ধারালো লেখনীর পরিচয় ব্লগ জগতের সবাই-ই পেয়েছে কখনো না কখনো। রায়হানকে দেখলে বোঝা যায়, বুড়ো হতে হলে বয়স বাড়া লাগলেও, বড় হওয়া যায় অনেক কম বয়সেই। অভিজিৎ রায়ের সাথে লেখা তার বই ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ একটা সত্যিকারের মননশীল বই। কী প্রচণ্ড পরিশ্রম করে তিলে তিলে পুরো বইয়ের প্রজেক্টটা সে শেষ করেছে সেটা এখনও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। গবেষণামূলক বই হবার কারণে প্রতিটা তথ্য সূত্রও খুটিয়ে খুটিয়ে যোগ করতে হয়েছে। কর্মযজ্ঞটা পুরো একটা পিএইচডি থিসিস লেখার মত। ছেলেটা এমনই প্রচার বিমুখ, যে তার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান অনেক বলেকয়েও করাতে পারিনি আমরা কেউ। একদম নীরবেই পুরো বাঙালী জাতিকেই চমৎকার একটা উপহার দিয়েছে সে। এত কম বয়সেই।
অবশ্য 'কম বয়সের' সীমানা গণ্ডীটা সে পেরিয়ে গেল আজকেই। মানে পঁচিশ বছর পেরিয়ে গেল। শুভেচ্ছা জানাবো আর কি। কী বলে যে সান্ত্বনা দেব সেটাই ভেবে বের করতে পারছিলাম না। বিকালে ওর হবু ‘বেটার হাফ’ আমাকে দাওয়াত দিলো। মনে হয় রায়হানের জন্য সারপ্রাইজ পার্টির আয়োজন। একটা পারিবারিক কারণে যেতে পারলাম না। আর এত বড় উপহার যে আমাদের সবাইকে দিয়েছে, তাকে যে কী উপহার দেব সেটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। শেষে ভাবলাম, ও বেচারা বড় হলেও, আগেই বুড়ো হয়েছি তো আমি। তাই বুড়ো হতে হতে যেসব যাতনার মুখোমুখি হতে হয়, সেসব নিয়ে কিছু বলি। তাই আজ সন্ধ্যায় ওর জন্য লিখেই ফেললাম একটা গান। আর আপনারা অনেকেই জানেন যে আমি একজন মহান বাজনদার এবং গাতক। তাই গেয়ে-বাজিয়েও ফেললাম। সেটাই না হয় তুলে দেই এ বেলা। একজন আনাড়ির গিটার বাজিয়ে গাওয়া প্রথম গান, রায়হান আবীরের জন্য। দ্য ব্রাদার আই নেভার হ্যাড।
কথা:
আঁধার নামবে জেনো...,
তবু মনের আঙিনাকে...
কুয়াশায় ঢেকে যেতে... দিয়ো না।...
স্বপ্ন যতই ভাঙুক...
তবুও মনের আকাশটাকে...
মেঘে ছেয়ে যেতে... দিয়ো না।
উড়িয়ো স্বপ্ন ঘুড়ির বেশে
আকাশে রাঙা মেঘের পালক,
ছড়িয়ো কৃষ্ণচূড়া রোদ
এখানে যতই আঁধার নামুক;
জীবনকে হেরে যেতে... দিয়ো না।
মেঘ... তবে... মেঘের ভেলাই হোক।
কুয়াশা... হোক না... শিশির কণা...
প্রিয় চোখ,... প্রিয় হাত,... প্রিয় কাঁধে কাঁধ রেখে...
পেরিয়ে যাবোই আঁধারের... সীমানা।।
কথা, সুর, কন্ঠ, বাদ্যবাজনা - স্পর্শ
(যন্ত্রপাতির অভাবে ভালো রেকর্ডিং হয়নি। এই হচ্ছে ডাউনলোড লিঙ্ক)
রায়হানকে যারা এই অবেলায় জন্মদিনের শুভেচ্ছা বা সান্তনা জানাতে চান, এবার ঝটপট জানিয়ে ফেলুন। আর আধা ঘন্টা পরেই সে সময় পেরিয়ে যাবে।
মন্তব্য
রায়হান আবীরকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। স্পর্শ চিরতরুণ থাকুক।
জন্মদিনের শুভ বার্তা পৌছে যাক গুণধর মানুষটার প্রতি। লিরিকটা সুন্দর। আর আয়োজনটি মূল্যবান এক উপহার হবে উনার কাছে নিশ্চয়ই!
শুভ জন্মদিন 'হয়রানবীর'।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
পিচ্চি ভাইটার জন্য অনেক ভালোবাসা! হয়রানকে পিচ্চি বলার পরে নিজের জন্য মায়া লাগতেসে!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
পুনরায় জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
শুভ জন্মদিন, রায়হান আবীর।
(বিরাট একটা মন্তব্য লেখার ইচ্ছা ছিলো, গুছিয়ে লিখতে পারলাম না। গান ব্যাপক হইছে।)
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাই'দার কথাটাই বলতে যাচ্ছিলাম, যে গান ব্যাপক হয়েছে!
আমার চেনাজানা সচলদের মধ্যে কয়েকজন পিচ্চিপাচ্চা আছে যাদেরকে দেখে আমি মাঝে মাঝেই তব্দা খাই। মানে এদের অ্যাত ট্যালেন্ট, অ্যাত ট্যালেন্ট, যে নিজেকে নিয়ে বেশ লজ্জাই লাগে হঠাৎ হঠাৎ। তারমধ্যে আবার এই স্পর্শ ছেলেটা, আর রায়হান ছেলেটা দুইজনেই ক্যাম্নে ক্যাম্নে জানি পড়ে।
বয়স পঁচিশেই আটকে থাকুক হে গবেষক, বৈজ্ঞানিক। ভালো থাকো চিরকাল, আনন্দ থাকুক তোমাকে আর তোমার কাছের মানুষদেরকে ঘিরে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
শুভ জন্মদিন রায়হান ভাইয়া।
স্পর্শ ভাই এর গান শুনে আক্কেল গুড়ুম। দারুণ
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
দারুণ গান! এত প্রাণবন্ত সুর !
মনটাই ভালো হয়ে গেলো শুনে!
অ-সাম!
তবে রেকর্ডিং টা নিয়ে আফসোসের শেষ নেই, অবশ্যই এটার একটা ভালো রেকর্ডিং করাতে হবে।
আবীর ছেলেটা পুরাই রক্স, সার্টিফাইড বায় মায় মাম
আমার মা আবীর কে তার মন থেকে ধন্যবাদ জানাতে বলেছেন, অবিশ্বাসের দর্শন এর মত বইটা লেখার জন্যে। এর সব কপি নিঃশেষিত বলে মা অত্যন্ত দুঃখিত, কারণ উনি অন্তত জনাপঞ্চাশেক লোকের কাছে বইটিকে লাইফ সেভিং ড্রাগ হিসেবে পাঠাতে চাইছিলেন।
মায়ের আর আমার পক্ষ থেকে শুভাশীষ, শুভ জন্মদিন বেগুনী ছেলেটা !
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
সব গুণধরের আয়োজন দেখি! গান খুব ভালো হয়েছে!!
রায়হানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা!
শুভ জন্মদিন রায়হান আবীর
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
শুভ জন্মদিন রায়হান আবীর !!
আর স্পর্শ.....তোমার গানের কথা কী কইব?
জটিল জিনিস হয়েছে বস। রেকর্ডিংটা আরেকটু ভাল হলে ফাটাফাটি হইত.....সেইটা ব্যাপার না!
পুরো জিনিসটা দুর্দান্ত!
শুভেচ্ছা অহর্নিশ
জটিল গান, সুর আর জটিল কম্পোজিশন।
আর রায়হান আবীরকে অনেক অনেক জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আশা করবো উনি চিরতরুনই থাকবেন সারাজীবন।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
কাল রাতে পোস্টটা দেখে লজ্জা পেয়ে গেছি একেবারেই! এখন একটু মাথা তুললাম
গানটা খুব ভাল্লাগো। আমি, মতিয়াজ, জামান, ইকবাল সব একসাথে আছি। শুনতেছি আর শুনতেছিইই
অসংখ্য ধন্যবাদ তানভীর ভাই
শুভ জন্মদিন রায়হান আবীর।
জনার রায়হান আবীর
জন্মদিনে অভিবাদন গ্রহন করুন
স্পর্শ
গানের কথাগুলো খুব চমতকার। তবে শুনতে তেমন ভালো লাগলো না।
রেকর্ডিং একটা কারণ হতে পারে। আরেকটা হলো গায়কের উচ্চারন।
কিন্তু আইডিয়া টা দারুন।
গান লেখা চালু থাকুক
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
তারুণ্যের জয় হোক, শুভ জন্মদিন। বয়সের ত্রিকোণমিতি বড়ই জটিল!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
এজন্যই কবি বলেছেন "সোনার হাতে সোনার কাকন কে কার অলঙ্কার"
এক গুনধর আরেক গুনধরের জন্য পোস্ট লেখে...
আমার কপাল হইলো এই দুই গুনধরের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব আছে। এটাই গর্ব করে বলা যায় শুধু
শুভ জন্মদিন রায়হান আবীর, আমাদের ভবিষ্যতের বিজ্ঞানী
গানটা অদ্ভুত সুন্দর হইছে। একদিন লাইভ শুনতে হইবো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
মানুষের য়্যাত্তো গুণ!
রায়হান ভাইকে শুভ জন্মদিন!
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
গান-বাজনা, লেখায়
শুভ জন্মদিন
দুর্ধর্ষ দুর্ধর্ষ দুর্ধর্ষ!
আর রায়হানাবীরের কথা আর কি কমু, আমি অচিরেই নতুন ধর্ম চালু করতেছি, সেইটার পয়লা কাজ হিসেবে রায়হান আবীরকেই সবার আগে আমরা ব্রেইনওয়াশ করবনো। তারপরে সে আমাদের মুখপাত্র (এবং বিজ্ঞাপনের মডেল) হিসেবে কাজ করবে।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
২০১১! সেদিনের কচি পোলাডা প্রৌঢ় হয়ে যাচ্ছে!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন