কত কম কম লিখি আজকাল, বিশ্বাস হতে চায় না। এই সেদিনও তো এমন ছিলো না। মধ্যদুপুরে প্রচন্ড জ্যামে আটকা পড়েছি মিরপুর রোডে। একটা গণগণে চুলার মধ্যে বসে আছি। মাথার উপর ফ্যানটাও ঘুরছে না এতটুকু। জানালার ওপারেই একজন রিকশা ওয়ালা পুড়ছে। মাঝে মাঝে গামছা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে পোড়া ছাই। আর আমার সামনের সিট থেকে উকি দিচ্ছে একজোড়া অবাক চোখ। কিভাবে যেন মায়ের কোলে দাঁড়িয়ে পড়েছে সে। আমাকে দেখছে। একটু হাসি বিনিময় করতেই কি যেন ম্যাজিক হয়ে গেল! মায়ের কোল বেয়ে হাচড়ে পাচড়ে বাচ্চাটা উঠে আসতে চাইলো সিট পেরিয়ে আমার কাছে। সঙ্গে "বাব্-বাব্-বাব্-বাব্" শব্দ মুখ দিয়ে। ও কি আমাকে ওর বাবা ভাবছে? বাস যাত্রীরা ঘটনা দেখে মুচকি হাসছে। বাচ্চা কোলে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে। মা-টা বিব্রত। ঘুরে তাকিয়েছে আমার দিকে। এই দুর্বিসহ অবস্থাতেও লক্ষ করলাম সে সুন্দরী। আমার বয়সী-ই হবে। বললাম, আপনি ওকে আমার কাছে দিতে পারেন। পরের দৃশ্যে বাচ্চাটা আমার কোলে। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তখনো। মা-টা দুঃখ প্রকাশ করছে, অহেতুক কী ঝামেলায় ফেলে দিলো আমাকে! চুলার আঁচ তখন বেড়ে গেছে আরো কয়েক ডিগ্রি। কিন্তু আমার ভালো লাগছে। ভালো লাগাটা আমি একা একা নিতে পারছি না। মনে হচ্ছে ফিরে গিয়েই লিখে ফেলবো।
ছোটো বোনকে নিয়ে যাচ্ছি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। স্থান যশোর মিউনিসিপালিটি পার্ক। এদিনে ওরা যেসব গান গায় তার মধ্যে "এসো হে বৈশাখ..." টা আমি বুঝতে পারি। বাকিগুলো দুর্বোধ্য ঠেকে। মনে হয় ওসব শান্তিনিকেতনের পিএইচডি লেভেলের গান। কিন্তু তাতে কি? গান তো আর গণিত না! তাই না বুঝলেও ভালো লাগে। প্রবেশদ্বারে বেশ ভিড়। ওর হাতটা চেপে ধরেছি। ভিড় ঠেলে এগিয়ে চলেছি তারপর। একটু ঠেলাঠেলি করে দরজা পেরিয়ে দীঘির পাড়ে পৌছে মনে হলো কিছু একটা গড়বড় হয়ে গেছে। ধরা হাতটা একটু বেশিই যেন নরম। তির-তির করে কাঁপছেও কি! পিছন ফিরেই জীবনের সেরা ইলেকট্রিক শক টা খেয়ে গেলাম। মেয়েটা বিব্রত। পাঁজি ছোটো বোনটা পাশে দাঁড়িয়ে হাসছে। আর আমার মনে হচ্ছে দীঘির জলে লাফ দেই! সেদিন যদি আরেকটু স্মার্ট হতাম। যদি হাত টাত ধরে অভ্যাস থাকতো আগে থেকে। তাহলে হয়তো দুয়েকটা কথাই বলে ফেলতাম ওর সাথে। একসাথে দুর্বোধ্য কিছু গানও শুনে ফেলতাম হয়তো। হয়তো হাতটা ছাড়াই হতো না আর। ওসব কিছু হয় নি। তাতে কি? মনে হয়েছে বাড়ি ফিরেই লিখে ফেলবো।
রাত দশটা। ধানমন্ডি থেকে হলে ফিরছি। রিকশা সিগন্যালে আটকেছে নীলক্ষেত মোড়ে। সামনে একটা ভ্যান। ভ্যান ভর্তি বড় বড় ঘাস। শন হবে হয়তো। মনে হয় আজিমপুর গোরস্থান থেকে কেটেছে। হঠাৎ একটা বাচ্চা এসে শনের আটি থেকে টান দিয়ে কিছু বের করে নিলো। ভ্যান ওয়ালা কিছু বুঝতে পারেনি। বাচ্চাটা কিছু একটা ইশারা করলো আরো কয়েকজনকে। দেখতে না দেখতেই চতুর্মুখী আক্রমন শুরু হয়ে গেল। একদল বাচ্চা টেনে টেনে বের করে নিতে থাকলো ঘাস। ভ্যান ওয়ালা বুঝতে পেরেছে ঘটনা খারাপ। "ঐ শুয়োরের বাচ্চারা ঘাস টানস ক্যা, ঘাস টানস ক্যা, ভাগ কইলাম" বলতে বলতে থাপ্পড় দিয়ে ফেলে দিলো একটাকে। অপেক্ষাকৃত বড় একটা মেয়ে বললো, "মারেন ক্যান? নিতে দ্যান না, এইগুলা আমরা খাই।" আমি খেয়াল করলাম ওরা ঘাস টানছে না। ঘাসের আটির মধ্য থেকে বিশেষ কোনো লতা টেনে বের করে নিচ্ছে শুধু। মেয়েটা ঐ বিশেষ লতার একটা নামও বলল। নামটা মনে নেই। ভ্যানওয়ালা তখন বিব্রত। সে বাচ্চাদের খাদ্য আহরণে বাধা দিচ্ছে না আর। আমি রিকশায় বসে পাথর হয়ে গেছি। নিজেকে এতবেশি অপরাধী, এত বেশি ক্ষমতাহীন, এত বেশি অসহায় মনে হচ্ছে। এক সময় সিগন্যাল ছেড়ে দিলো। পিছন থেকে শোরগোল উঠতেই ভ্যান চলে গেল তার লতাপাতা নিয়ে। ক্লান্ত রিকশাওয়ালা টেনে নিয়ে গেল আমার রিকশাটাও। কিন্তু আমি আটকা পড়ে গেলাম নীলক্ষেতের মোড়ে। এখনো কি আটকে নেই? একসময় মনে হয়েছে, এইসব বন্দীত্বের কথাও আমি লিখবো।
গল্প বলতে আমার ভালো লাগে সেই শৈশব থেকেই। তবে আমি বাকপটু নই। কথার মার প্যাঁচে খুব অসহায় বোধ করি। অবশ্য, যে কোনো আড্ডাতেই এ ধরনের মানুষ পছন্দ করে সবাই। আলোচনা এক ঘেয়ে হয়ে গেলেই, তাকে একটু পঁচিয়ে চাঙ্গা হয়ে নেওয়া যায়। অনেকটা ইনস্ট্যন্ট কফি আরকি। এমন এক আড্ডাতেই একবার হলের বন্ধুদের বললাম চোর আর খাটাশের গল্প-
ঝিকরগাছায় থাকি। তাঁরকাটা দিয়ে ঘেরা কতগুলো বিল্ডিং। তার চারপাশেই অবারিত ক্ষেত, জলা, মাঠ, ঝোপ। দূরে গ্রাম। তারকাঁটা দেওয়া অংশটা উপজেলা কোয়ার্টার। সেখানে তুমুল হইচই। একটা খাটাশ ধরা পড়েছে। খাটাশ কী তা আমি তখনো জানি না। বারান্দা থেকে উকি দিয়ে দেখলাম। খাটাশটাকে ওরা পিটিয়ে মেরেই ফেলেছে। একটা লাঠিতে ঝুলিয়ে, মিছিল করছে রাস্তায়। কালো ডোরাকাটা অদ্ভুত দর্শন একটা প্রাণী। এটা নাকি মুরগী চুরি করে খায়! যদিও উপজেলা কোয়ার্টারে কেউ মুরগী পালে না। তবে এরকম খাটাশ মারার ঘটনা ঘটতে দেখেছি দুই বার। এরপর চলে আসি মনিরামপুর। মনিরামপুরে খাটাশ আসতো না। তবে শিয়াল আসতো। আর ধরতে পারলে শিয়ালকেও মেরে ফেলতো ওরা। শিয়ালও নাকি মুরগী চুরি করে খায়। শিয়াল অবশ্য ভুট্টা আর আখও খায়। পাভেলের বাবা তাদের বাড়ির পিছনে ওসব লাগিয়েছিলো। শিয়ালের আনাগোনা বেড়ে গেছিলো তাই। তবে একদিন শিয়ালের বদলে একটা চোর ঢুকে পড়লো কোয়ার্টার এলাকায়। এবং ধরা পড়ে গেল। আমি জিজ্ঞেস করলাম চোরও কি মুরগী চুরি করে খায়? কাকু উত্তর দিলো হ্যাঁ। চোরটাকে নাকি বেঁধে ফেলা হয়েছে। অনেক ভীড়। কেউ কেউ বাঁশ নিয়ে যাচ্ছে। চোর মারা হবে। আমি ভয় পাচ্ছি কিন্তু কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারছি না। বায়না ধরলাম চোর দেখবো। কাকু বললো না, তোমার দেখা লাগবে না। কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা। বাধ্য হয়ে এক সময় আমাকে কাঁধের উপর উঠিয়ে নিলো। ভীড় ঠেলে একটু এগোতেই দেখতে পেলাম আমি। কিন্তু এ কী! চোর কই, এ তো মানুষ!
আমার কথা শুনে অনেকেই হো হো করে হেসে উঠলো খুব। আর চোর মানুষটাও তাকালো আমার দিকে। কাকু আমাকে নিয়ে বেরিয়ে আসলো ভীড় থেকে। নতুন বাঁশ এনেছে যারা, এরপর তাদের পালা শুরু হলো। এসব হড্ডোগলের মাঝে কোন ফাকে সেই পিছমোড়া করে বাঁধা মানুষটাও চলে এলো আমার সাথে। এখনো চোখ বুজলে মাঝে মধ্যে সে তাকায় আমার দিকে। এই তো, এই মাত্র আমার কথাটা শুনতে পেরেছে সে। চারিদিকে দাঁতগুলো হাসছে আর সে ঘুরে তাকিয়েছে আমার দিকে। তীব্র যন্ত্রণা আর ভয় সরিয়ে তার মুখে আশ্রয় করে নিচ্ছে, লজ্জা আর পরাজয়ের গ্লাণি। কাকু আমাকে নিয়ে সরে যাচ্ছে...
এর পর থেকে নিয়মিত ওরা আমার কাছে গল্প শুনতে চাইতো। আমি ওদেরকে শোনাতাম শিয়াল কাঁটার গল্প, তারাচান পাগলার গল্প, মধুমতির গল্প, বল্লার চাকের গল্প, চুলবুলির গল্প, ঢোলকলমির গল্প, মাজালির দোকানের গল্প, কবুতরের গায়ে উঁকুন হলে কী করতে হয় সেসব গল্প...
এক সময় ওদেরই কেউ বললো, এসব গল্প আমি লিখে ফেলি না কেন? ইআহু ৩৬০ তে একটা ব্লগ খুললাম। ওদেরই কেউ, খোঁজ দিলো অভ্রর। প্রথম অভ্রকীবোর্ড দিয়ে লিখে আনন্দে কেমন বিহ্ব্ল হয়ে পড়েছিলাম এখনো মনে পড়ে তা। তারপর লিখতে শুরু করলাম আমার আবজাব গল্পগুলো। অজানা কিছু মানুষও সেগুলো পড়তে শুরু করলো। এক সময় লেখালিখির নেশায় পেয়ে বসলো রীতিমত।
লেখালিখি মানুষ শুরু করে নানান কারণে। কিন্তু লেখালিখি চালিয়ে যায় কী কারণে সেটা এখন আমি জানি। নেশা। এই নেশা একবার পেয়ে বসলে না লিখে উপায় নেই। শুরুতে ভেবেছিলাম, গল্প ছাড়া কিছু লিখবো না। হয় ফিকশন, অথবা নিজের গল্প। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী, দেশচিন্তা, বিজ্ঞান, ব্লগীয় রাজনীতি এসব থেকে ইচ্ছেকরে দূরে দূরে থেকেছি। ততদিনে সামহোয়ারইন এ পোস্ট দিতে শুরু করেছি। কিন্তু ওখানে নানান ভ্যাজালের ভীড়ে গল্প খুঁজে পাওয়া যায় না। তানিম খোঁজ দিলো সচলায়তনের। সন্ন্যাসীর লেখা পড়ে আটকে গেলাম। দুরু দুরু বুকে পোস্ট দিতে শুরু করলাম কাঁচা হাতে আর ভুল বানানে লেখা আমার গল্পগুলো। ছাপা হতো একটা দুটো। তুমুল উৎসাহে লিখতে বসতাম পরের গল্প...
তারপর এক সময় পুরোদস্তুর সচল হয়ে গেলাম। লেখালিখি চলতে থাকলো। কিন্তু এক সময় অবাক হয়ে খেয়াল করলাম আমি আর গল্প লিখতে পারছি না। লেখালিখির নেশা যার, তার জন্য লিখতে না পারার চেয়ে দুর্বিসহ কিছু নেই। কিন্তু গল্পতো ফুরিয়ে যায়নি। তাহলে লিখতে পারছি না কেন? গত দুই-তিন বছর ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছি আমি। কিছু সম্ভাব্য উত্তর পাওয়া গেছে। সেগুলোর তালিকা করি এখানে। কারো যদি কাজে লাগে।
১) সচলায়তন কলেবরে বড় হয়ে গেছে বহু গুণে। কোনো লেখা পোস্ট করলে হাজারখানেক পাঠকের কাছে চলে যাবে সেটা। ব্যাপারটা আমার মতো ঘরোয়া গল্পবাজের জন্য, এটা বিশাল মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।
২) সময়ের সাথে সাথে, মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যে নানান রকম কথার মারপ্যাচে জড়িয়ে গেছি। এখন লিখতে বসে, কোন পাঠক কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, সেসব মাথায় চলে আসে। এবং যথারীতি "মনের সুখে লেখা" আর হয়ে ওঠে না।
৩) অতিথি অবস্থায় লেখার একটা ভালো দিক ছিলো, গল্প ভালো না হলে ছাপা হবে না। কিন্তু এখন কিছু একটা লিখলে সেটা মানসম্মত হলো কি না, সেই চিন্তাও মাথায় কাজ করে! ফলে লেখা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে উঠছে না। আর ভুল করেও নিম্নমানের কিছু লেখা যাবে না- এমন চিন্তা করা আর লেখালিখির মৃত্যুঘোষণা করা একই কথা।
৪) গল্প লেখার সাথে সাথে, অন্যান্য অনেক কিছু নিয়ে লিখতে শুরু করেছি। ফলে স্রেফ "সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মাতা" হচ্ছে না। এবং এ ধরনের লেখায়, মন্তব্য প্রতিমন্তব্যে আরো বেশি অংশ নিতে হচ্ছে। অন্যদের কথা জানি না, গল্প লিখতে আমার বেশ খানিকটা নীরবতা লাগে। দু-তিন দিন হয়তো কারো সাথে কথা বললাম না, তখন লিখলাম একটা গল্প। এমন।
৫) সচলায়তন একটা অনলাইন লেখক সমাবেশ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এখানে আমার লেখালিখি মন্তব্য প্রতিমন্তব্যে এক ধরনের ব্লগীয় ভাব চলে এসেছে (এই লেখাটির কথাই ভাবুন)। পাঠক হয়তো ভাববেন ব্লগ আর সচলের মধ্যে পার্থক্য কী? সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা কোথাও পাইনি। তবে আমার মনে হয় পার্থক্য কোলাহলে। একদম শুরু থেকেই সচলায়তন একটা পরিবারের মত, যেখানে অন্যান্য মূল ধারার ব্লগ হচ্ছে, স্রেফ ব্লগ।
যাক, এই তালিকা আর বড় না করি।
প্রথম সচল আড্ডায় যাওয়ার কথা মনে পড়ে। যারা ছিলো শুধু নাম আর ছোট্ট বর্গাকার ডিস্প্লে পিকচার, তারাই হঠাৎ করে হাস্যোজ্জল মানুষ হয়ে উঠলো। নজরুল ভাই, একটা নাটকের সেট ভাড়া করেছিলেন আড্ডা দেওয়ার জন্য। দূর দেশ থেকে এসেছিলেন কেউ কেউ, যারা আসতে পারেন নি তাদের অনেকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছিলেন আড্ডার। আড্ডা নিয়ে লাইভ ব্লগিং হচ্ছিলো মিনিটে মিনিটে। নানান বয়সী নানান রকম মানুষ। কিন্তু একেবারে যেন অনেক দিনের চেনাজানা। তারপর কত রকম মজার মজার ঘটনা। কেউ গান গাইছে, কেউ তবলা বাজাচ্ছে, ... আর এখন তো, আমার বন্ধুদের বেশিরভাগই সচলায়তন সূত্রে পরিচিত! মজার ব্যাপার হলো এই যে লেখালিখি আটকে যাওয়ার ব্যাপারটা ঘটেছে এদের বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই! আমি যেমন কিছু কারণ অনুসন্ধান করলাম, আপনার অবস্থাও আমার মত হলে এ ব্যাপারে নিজেদের চিন্তাগুলো শেয়ার করতে পারেন মন্তব্যের ঘরে।
কীভাবে এবং কী ভেবে লেখালিখি আবার শুরু করবেন, এটার সমাধান প্রত্যেককেই বের করতে হবে নিজের মত করে। তবে কলেবরে বৃদ্ধির চাপ ট্যাকেল দেওয়ার ব্যাপারে আমার প্রিয় ভিডিও ব্লগার ViHart এর এই ভিডিওটা দেখতে পারেন।
মন্তব্য
এইসব আসকথা-পাশকথা ছেড়ে গল্প দ্যান। আপনি যে লুক্ষারাপ সে তো সবাই আগে থেকেই জানি, অসহায়া বালিকাদের ধরে ছেড়ছাড়ি করেন, সেগুলোই নাহয় গল্পের ভিলেনের রোলে বসিয়ে দেবেন
ছেড়ছাড়ি! এ আবার ক্যামনে করে?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ছেড়ছাড়ি একটি বলিউডি শব্দ, ইহা নায়কেরা ও ভিলেনেরা উভয়েই নায়িকাকে করে থাকে, তফাতের মধ্যে নায়কদেরগুলি টকমিষ্টি ও ভিলেনেরগুলি ঝাল। ইহার অর্থ ডিস্টাপ দেওয়া।
সচলায়তনের সাথে পরিচয় হঠাৎ করেই হয়েছিল। হোস্টেলে থাকতে যখন ভালো লাগতো না তখন সবে ব্লগ পড়া শুরু করেছি। বিভিন্ন ব্লগের হাউ-কাউ এর মাঝে সচল মনে হলো অন্যরকম। তখন থেকে মানে বলতে গেলে ২০০৭ থেকেই সচলের নিরব পাঠক আমি। প্রথম দিকে হয়তো ততোটা পড়া হতোনা, সময়ের সাথে সাথে পড়ার সংখ্যা বাড়লো। ২০০৮ এর শেষের দিকে মনে হয় সাহস করে মন্তব্যও করেছিলাম। পরে ২০০৯ এ একদিন সাহস করে রেজিষ্টার করে ফেললাম, তার বড় একটা কারণ ছিলো অতিথি লেখক হিসেবে মন্তব্য করার বিড়ম্বনা এড়ানো।
সচলের প্রতি একটা অভিযোগ আছে, এখানে কবিতা ছাপা হয়না। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করুক কিংবা না করুক সচলে আমার প্রথম লেখা হচ্ছে একটি কবিতা!! তাই সচল কবিতা বিদ্বেষী এই কথাটা আমি আজও মানতে পারিনা। কিন্তু এর পরে আর কখনও কবিতা দেয়া হয়নি। প্রথম লেখা ছাপা হওয়ার পরে সাহস সঞ্চয় করে পরপর আরো তিনটা লেখা দিলাম এবং ছাপা হলো সব গুলোই। মনে আছে, লেখা দিয়ে অপেক্ষা করতাম কখন আসবে নীড়পাতায়। আমি অধিকাংশ লেখা দিতাম গভীর রাতে। তাই অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে যখন লেখাটা আসতো প্রথম পাতায়, তখন ঘুমোতে যেতাম। সেই অপেক্ষাগুলো ভালো ছিল, উত্তেজনা ছিল তখন একরকমের।
কোনদিন সচল হবো এরকম আশা কিংবা দুঃসাহস কোনটাই ছিলোনা আমার। কিন্তু চারটা লেখার পরেই যখন আমাকে হাচল করার বার্তা দিলেন মুর্শেদ ভাই আমি তখন বাকরুদ্ধ। তারপরে লিখে গেছি, কখনও এই আশা করিনি হাচল থেকে সচল হবো। হতে চাইনি মনে হয়। নিজের লেখার উপরে ওত বিশ্বাস আমার কোনদিনই ছিলোনা, এখনও নেই। কিন্তু পাক্কা ৪১টা লেখার পরে হয়ে গেলাম সচল। সেদিনের কথা এখনও মনে আছে। নিজেকে বিশাল কেউকেটা গোছের মনে হচ্ছিল।
আমি লিখি নিজের দায়বদ্ধতা থেকে। নানা ঘটনায় নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতেই লেখা হয়। মনে হয়, রাস্তায় নেমে যখন প্রতিবাদ করতে পারছিনা, কিংবা কেউ আমার চিৎকার শুনছেনা, তখন অন্তত কিছু মানুষ জানুক আমি কিরকম অনুভব করছি। আমার অনুভূতি জানাতেই লিখি, তাই অনেক সময়েই মানুষ হয়তো কষ্ট পায়। আমি কখনোই নিয়মিত লিখতাম না, এখনও না। তবে আজকাল বেকার থাকার কারণে লেখা হয় নিয়মিত বিরতিতেই। সচল একটা পরিবার। এই পরিবারের নিরব সদস্য হিসেবেই থাকতে ইচ্ছুক আমি। অনেক মানুষের ভিড়ে যখন একা থাকি, তখন সচল আমার সঙ্গী। এই ভালো লাগা অটুট থাকবে, এটা আমি জানি।
অনেক কথা বলে ফেললাম।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
এত দারুণ লেখার হাত নিয়ে এত অল্প অল্প লিখেন, সেটাও না হয় মেনে নিলাম। কিন্ত না লেখার পেছনে আবার মিস্টি মিস্টি যুক্তি বানাচ্ছেন সেটা মানি কেমনে? ঐসব সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মুল্লাসের খ্যতায় আগুন দিয়ে আগের মত দুই হাতে লেখা শুরু করে দেন।
facebook
আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বোধহয় অদ্বিতীয়। আমি প্রথমে সচলায়তনের গল্প শুনতাম, একদিন নিজের চোখে দেখলাম, তারপর সচলায়তনের টানেই ঘরে ফেলে রাখা কমপিউটার ঠিকঠাক করে নেটবাজি শুরু করলাম। এখনো সচল আর ফেইসবুকিং ছাড়া পারি না তেমন কিছুই।
আগে আশেপাশে কিছু ঘটলেই লিখে ফেলতে ইচ্ছে করতো। এখন বাঘা বাঘা লেখিয়েদেরকে দেখে দেখে সেই ইচ্ছেরা লজ্জা পায়।
"একদম শুরু থেকেই সচলায়তন একটা পরিবারের মত, যেখানে অন্যান্য মূল ধারার ব্লগ হচ্ছে, স্রেফ ব্লগ।"
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আপনার লেখা খুব মিস করি।
'দুই হাতে লেখা' বা 'আবজাব', আর অসাধারণ গল্পগুলো।
ছেঁড়া পাতার মানুষ, চতুষ্কোণমিতি, সবার সেরা, একজন দয়ালু ঈশ্বর...
এই গল্পগুলোর মাধ্যমেই সচলায়তনের সাথে পরিচিতি। গল্প গুলো আমার কাছে লেগেছিল একদম নতুন স্বাদের, আর ভালো লেগেছিল খুব ওদের মধ্যে সরল সততার ছায়া পেয়ে। সচলে আরো একজনের লেখা পড়ে আমার এমন গায়ে কাঁটা দিয়েছিল শুরুতে, এখনো দেয়, হিমু ভাই এর লেখা গল্প।
আমার মনে হয়, গল্প বানানোর জন্য এক রকম ইন্সপিরেশন দরকার হয়। যখন সচলের প্রথম পাতায় বেশ কিছু দারুণ দারুণ গল্প থাকে, তখন নিজের ও ইচ্ছা করে কিছু একটা বানিয়ে ফেলতে।
মাঝখানে কিছুদিন গেল যখন সবাই গল্প বানাতো, আনন্দী কল্যাণ দি, শুভাশীষ দা, অনিন্দ্য দা, আপনি, হিমু ভাই সবারই কিছু না কিছু গল্প জাতীয় লেখা থাকতো নীড় পাতায়, চোখ বোলালেই একটা সৃষ্টির আনন্দ চোখে পড়ত।
হয়তো সময় কম দেয়া হয় নিজেরই তাই মনে হচ্ছে, কিন্তু সচলে গল্পের আমেজটা কেমন ঝিমিয়ে গেছে।
কিন্তু বরাবরই সচলায়তনের আমি মুগ্ধ মনযোগী পাঠক।
আপনার/আপনাদের নতুন গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
বাহ। এই তো কী সুন্দর করে একটা "ব্লগ" লিখে ফেললা। এভাবেই লেখ। তোমার লেখা গল্পগুলা অসাধারণ। অনেক দিন গল্প লেখ না। সময়সুযোগ করে লিখো, পাঠকরা খুশিই হবে।
এরকম লেখার হাত নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করা পাপ।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
সচলের সবচেয়ে মনোযোগী পাঁড়পড়ুয়ার মধ্যে আমি (ছিলাম) একজন।
আপনার দুর্দান্তিস গল্প কিংবা দারুণ্যস্য আবজাবগুলোরও। কয়েকটা তো প্রায় মুখস্ত!
নিয়মিত লেখায় ফিরুন ভাইয়া, প্লিজ।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সচলায়তন নিয়ে সহসচলদের আবেগটা প্রায় কাছাকাছি সবারই। সচলের জন্য ভালো লাগার কথাগুলো তাই অনেকটাই নিজের কথা হয়ে যায়। তবু বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথাগুলো শুনতে ভালোলাগে।
ব্লগরব্লগর ভাল্লাগলো।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
প্লিজ এই কাজটি করুন ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
মিউনিসিপ্যাল পার্ক, ঝিকরগাছার খাটাস - বেশ পরিচিত জায়গা আর অনেক শোনা একটা প্রাণীর নাম। ভালো লিখেছেন। অনেক কিছু মনে পড়লো।
এরকম 'না লেখা' নিয়ে লিখলেও আমি খুশি
হাচল হবার পর লেখালেখি একদমি কমে গেছে। আমি মূলত কবিতা(!) লিখি। হাচল হবার আগে সচলে পোস্ট দেওয়ার জন্য সপ্তাহান্তে কবিতা লিখতাম। হাচল হবার পর সেই চাপ কমে গেছে। কবিতার প্রতি সচলের ব্যারিয়ার ভিন্নরূপ হয়ে গেছে ততদিনে; মাসান্তে কবিতা লিখে সেটা আর প্রকাশমুখ হচ্ছিল না। তারপর ছেড়েছুড়ে দিছি। সবার লিখতে হবে এমন কথা নাই- মেনে নিছি।
আবার লিখবো কীভাবে সেটা চিন্তার বিষয়। সচল হবার আগে কবিতায় নিয়মিত হবার সম্ভাবনা নাই, স্বাধীনতা দরকার যা ইচ্ছা লেখার। সচল হবার আগ পর্যন্ত বিজ্ঞানের যে বিষয়গুলো আমাকে আকর্ষণ করে এবং যা নিয়ে আমার কাজ করার আগ্রহ আছে তা নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা আছে। তবে আলস্য দোষের আকর আমার ক্ষেত্রে খুব। তাই আলস্য কাটাতে পারলে বিজ্ঞানের লেখা নিয়ে কোনদিন পোস্ট দেওয়া শুরু করবো। এই হলো আমার ফিরে আসার সম্ভাবনার গল্প।
_____________________
Give Her Freedom!
আপনার লেখা দারুনভাবে মিস করি। নিয়মিত লিখুন একটু সময় বের করে নিয়ে।
আপনার সাথে দেখা হয়ে আসলেই খুব ভালো লেগেছিলো। ঢাকায় আসলে একটা কল দিয়েন। আমি আগামী বছর আপনাদের ওখানে আবার যেতে পারি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ভাল লাগলো।
নতুন মন্তব্য করুন