ছাত্ররাজনীতি বিষয়ক প্রশ্নমালা

স্পর্শ এর ছবি
লিখেছেন স্পর্শ (তারিখ: সোম, ১০/১২/২০১২ - ১:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি আমার ছাত্রজীবনে, ধর্মান্ধ, ধূর্ত, লোভী, খুনে, ধর্ষক বা বিভ্রান্ত ছাড়া কাউকে ছাত্ররাজনীতি করতে দেখিনি। আমি জানি ছাত্ররাজনীতি মানে এসব নয়। আমি জানি, আমার ভাষা, আমার স্বাধীনতা, আমার দেশের ইতিহাস কিভাবে রক্তের অক্ষরে লিখেছে ছাত্ররাই, ছাত্ররাজনীতিই। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য সেই সময়ে আমি জন্মিনি। স্বৈরাচার হঠিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছিলো যে ছাত্ররা, তারা ব্যর্থ হয়েছে তাদের মূল্যবোধ, ধ্যান ধারণা, দেশপ্রেম পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে সঞ্চার করে যেতে। তারা তাদের নেতৃত্ব তুলে দিয়েগেছে একদল অর্থলিপ্সু হায়েনার হাতে।

আমি এই “ব্যর্থ” মানুষগুলোর কাছে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।

১) স্রেফ দেশকে ভালোবেসে জীবন বাজি রেখে আন্দলন করেছেন আপনারা। স্বৈরাচার হটিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন গণতন্ত্র। কিন্তু পরবর্তীতে কোথায় গেলেন? কেন এই দেশের নেতৃত্ব তুলে নিলেন না নিজ হাতে? কীভাবে রাজনীতিব্যবসায়ীরা দখল করে নিলো সব? কীভাবে পারলেন তা হতে দিতে?

২) যে চিন্তাধারা, যে সব স্বপ্ন আপনাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলো রাজনীতিতে নামতে, সেগুলো নতুনদের শিখিয়ে যেতে ব্যর্থ হলেন কিভাবে? একটা সংগঠন, কোনো ব্যক্তির চেয়ে বহুগুণ বেশি শক্তি ধারণ করে। এমন শক্তিধর একটা জিনিশের নেতৃত্ব যে নবীন কর্মীর বা নেতার হাতে তুলে দেবেন, তাকে নিজেদের আদর্শে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়া কি চরম ব্যর্থতা নয়? এ তো দেশকে নিশ্চিত বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া! এই দায় কি অনুভব করেন?

৩) মফস্বলে বড় হয়েছি। আমার রাজনীতির পাঠ হয়েছে সেইদিন, যেদিন এক ছাত্রনেতা বর্ণনা করছিলো কীভাবে কলেজের গার্ডরুমে কোনো এক মেয়েকে আটকে ধর্ষণ করেছে ওরা। ভর দুপুরে। আমারই ব্যর্থতা হয়তো, কিন্তু আমি এর পর শুধু এইসব ছাত্রদেরই দেখেছি মিছিলে, মিটিংয়ে যারা মনে মনে প্রকাশ্য দিবালকে ধর্ষণের অধিকার প্রত্যাশী, অথবা যারা চায় চঁদাবাজি টেন্ডারবাজির অধিকার। প্রশ্ন হলো, রাজনীতির মাঠ ছেড়ে দেওয়ার পরে আপনারা নীরব হয়ে গেছিলেন কেন? কেন আপনাদের লেখনীতে, কবিতা, গানে, নাটকে, প্রবন্ধে উঠে আসেনি যে “ছাত্ররাজনীতি” মানে এসব নয়? মফস্বলে, গ্রামে, দেশের আনাচে কানাচে যত কিশোর-কিশোরী ছিলো, আছে, তাদের সামনে উদাহরণ কোথায়? এমনকি এই আজও টিভি বা মিডিয়ায় আপনারা কেন এত অনুপস্থিত? এত এত সমস্যা চারিদিকে, সেগুলোকে উপ্জীব্য করে কেন প্রচুর নাটক বা গান লেখা হয়নি বা হচ্ছে না? মানুষ শিখবে কিভাবে? আমি যখন হলে উঠেছি তখন আমাকে তো কোনো বড় ভাই রাজনৈতিক আলোচনার জন্য ডাকেনি। হলের জি-এস, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়, শুধু ধর্ণা দিতো কেউ কেউ। নিজের দলেরই অপর প্রার্থীর পিঠে ছুরি মারা আলোচনা ছাড়া “রাজনীতি” শব্দটা আর কোনো অর্থ বহন করে কি না তা জানিনি তাদের থেকে।

৪) আর ছিলো নিঃসীম অন্ধকারের কিছু জীব। এই দেশের জন্মের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিলো যারা। এখনো ক্ষণ গুণছে চরম আঘাতের। ধর্মান্ধতা আর মৌলবাদের আবরণে যারা মুড়ে ফেলতে চায় মাতৃভূমি। শিবির, হিজবুত-তাহরীর, সহ আরো কত দল। ওরাতো ঠিকই পত্রিকা ম্যাগাজিন বের করে, ওরা জনে জনে গিয়ে ওদের অন্ধকার মতবাদের বই পুস্তক বিতরন করে বেড়ায় ঠিকই। তার বিপরীতে আপনারা কী করেছেন? নতুন প্রজন্মকে আলোকিত করার দায়িত্ব কি আপনাদের কাঁধেই নয়?

৫) একটা শব্দ গৌরবময় ইতিহাসের পাতায়, বা অভিধানে কী অর্থ বহন করে, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঐ শব্দের ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠির মনে শব্দটির অর্থ কী। “ছাত্ররাজনীতি” শব্দটার অর্থ কী দাঁড়িয়েছে সেই জরিপ কি করা হয়েছে সাম্প্রতি? আমরা কি জানি, এ সময়ের বেশিরভাগ মানুষ “ছাত্ররাজনীতি” শব্দটা শুনলেই কেন আঁতকে ওঠে? কী কী ছবি ভেসে ওঠে তাদের মনে? এই চিত্র পরিবর্তনের জন্য কোনো পদক্ষেপ কি নেওয়া হচ্ছে? তা না করে, স্কুল কলেজ পাশ করা কোনো কিশোরকে রাজনীতির ময়দানে ছেড়ে দেওয়া কি তাকে স্রেফ শিকার অথবা শিকারীতে পরিণত করা নয়?

সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় অস্ত্রহাতে সন্ত্রাসীরা ছাত্ররাজনীতির ময়দানে ছিলো সব সময়ই। সেসব অতিক্রম করেই বড় বড় আন্দলোন হয়েছে এই দেশে। সেইসব দিনের কথা লিখুন, বলুন। সেইসব নেতাদের কথা জানিয়ে দিন সবাইকে। আজকাল প্রতিটি চ্যানেলে টক শো হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। আর সাধারণ মানুষ প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে শোনেও সেসব। ওগুলো দেখার দুর্ভাগ্য আমার হয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই কিছু বাতিল মাল কিছু আবজাব বকে যাচ্ছে বলে মনে হয়। তাদের বদলে আপনারা কি সোচ্চার হতে পারেন না? নতুন ছাত্রদের মধ্যে যারা “অমানুষ” হয়ে ওঠেনি তাদের বেশিরভাগই আজ “অরাজনৈতিক” হয়ে উঠেছে। তাদের আন্দোলনও তাই হয়ে উঠছে সহজেই গোপন এক্সপ্লয়টেশনের শিকার। এসব ব্যাপারে সতর্ক করার ব্যর্থতার দায়ভারও কি আপনাদের উপর বর্তায় না? কারণ আপনাদের পরে তো স্রেফ একটা বড় শূন্যস্থান।

এখন নিউ মিডিয়ার যুগ, কোন কথাটি প্রচারিত হবে কোনটা হবে না, তা এখন আর কোনো মিডিয়া মোঘলের মেজাজ-মর্জির উপর নির্ভর করে না। সচেতনতার এই শূন্যস্থান পূরণের এই সূবর্ণ সুযোগটা যদি আমরা নিতে না পারি, “আগামী” কখনই ক্ষমা করবে না সেই ব্যর্থতা।


মন্তব্য

সাফি এর ছবি

মূল ধারার রাজনীতিতেই তো সাবেক ছাত্রনেতারা আছেন। তোফায়েল, ইনু, আমানুল্লাহ আমান এরা সবাই ছাত্র রাজনীতি থেকেই রাজনীতির পাঠ নিয়েছেন। তবে, আমাদের রাজনীতিবিদরা তো আপোষকামী। দেখোনা ভোটের রাজনীতিতে জামাত, স্বৈরাচার কত আরামে আছে। আর রাজনীতিবিদরা আসলে আমাদের মধ্যে থেকেই তো উঠে আসে। এখন এসব দেখে হতাশ হয়ে মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানি আমাদের জাতি সত্ত্বায়েই মনে হয় কোন সমস্যা আছে। আরেকটা জিনিস হলো আমরা মহা স্বার্থপর। নিজের ঘাড়ে না এসে পরলে আসলে আমল দেই না। এইভাবে লতা থেকে মহীরুহ তৈরী করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অথবা ছাত্র রাজনীতি করি আমাদের মননশীলতার পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। মাঝে মাঝে নিজেই অবাক হই স্কুল-কলেজ জীবনের এতো পড়ুয়া ছাত্ররা কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এই সব কর্মকাণ্ড করে। তবে এই সকল কর্মকাণ্ডের পিছনে শিক্ষক রাজনীতি অনেকাংশেই দায়ী।
তবুও আশায় আছি পরিবর্তন আসবে।

অপ্রস্তুত লেনিন।

গগন শিরীষ এর ছবি

শুধু ছাত্র রাজনীতি নয়, মূল রাজনীতিতেও তো 'আবজাব' লোকের ছড়াছড়ি।কিন্তু আমরা কেউই সাহস করে রাজনীতিতে নামি না।এটা ঠিক, এখন যদি আমদের মধ্যে বিশ জন লোক রাজনীতিতে নামে, তাহলে ঊনিশ জনই মরবে।কিন্তু বিশ নম্বর লোকটি ঠিকই বেঁচে যাবে, তার মাধ্যমেই শুরু হতে পারে সুস্থ ধারার রাজনীতি।সমস্যা হচ্ছে আমরা সবাই সেই বিশ নম্বর লোক হতে চাই,প্রথম ঊনিশ না!
-গগন শিরীষ

তারেক অণু এর ছবি

ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল অনেক আগেই, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো তা করবে না।

আবার খেয়াল রেখেন যে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করলেও কিন্তু দেশের প্রয়োজনের সময় সচেতনরা ঠিক এগিয়ে আসবে, যেমনটা এসেছে বারবার।

সাফি এর ছবি

নিষিদ্ধ করা সমাধান না অণু ভাই, তাহলে ছাত্রদের পক্ষে কথা বলবে কে? দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে হবে, যে কোন উপায়েই।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

ফারাসাত

তারেক অণু এর ছবি

ছাত্রদের পক্ষে কথা বলবে ছাত্ররাই, যেমনটা অতীতে ঘটেছে। বলেছি লীগ, দল, জাপার ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে। ( শিবিরের কথা বলার কিছু নাই, তাদের পুরা দলটাই নিষিদ্ধ করা দরকার)

সাফি এর ছবি

"লীগ, দল, জাপার ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে।" --- দলীয় রাজনীতি বন্ধ করে, ছাত্রদের কোন ফোরাম বা সংসদ দেওয়ার কথা বলছেন? কারণ ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলে নেতৃত্ব তৈরী হবে কোথা থেকে?

স্পর্শ এর ছবি

এসব ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে আসার আগে ৫ নাম্বার প্রশ্নের উত্তরটা জানা জরুরী।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

তানিম এহসান এর ছবি

ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হয়ে গেছে বহু আগেই, বেশি কিছু-না, সংসদ বন্ধ করে দিয়ে ছাত্ররাজনীতির তেরটা বাজিয়ে দেয়া হয়েছে। ডাকসু, জাকসু, চাকসু -- সব বন্ধ। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ না করেও এর মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হয়েছে, বানিয়ে দেয়া হয়েছে কাপুরুষ।

স্পর্শ এর ছবি

ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হয়ে গেছে বহু আগেই,

হ্যাঁ, এই উপলব্ধিটা আমাদের সবার আসা দরকার। এখন ছাত্ররাজনীতির নামে যেটা চলছে সেটা ছাত্ররাজনীতি না। অন্য কিছু। আমাদের উচিত নতুন কোনো শব্দ কয়েন করা। যাতে একটাকে অন্যটা ভেবে ভুল বোঝার সম্ভাবনা না থাকে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সুলতান এর ছবি

সম্পূর্ণ একমত অনু ভাই। দেশের যে কোনো ক্রান্তিকালে ছাত্ররা এগিয়ে আসবেই, কিন্তু তার জন্য ছাত্র রাজনীতির দারকার আছে বলে মনে হয় না।

ছাত্র রাজনীতির সাথে সাথে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ হওয়া জরুরী। আমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। সেখানে ছাত্র রাজনীতি না থাকলেও শিক্ষক রাজনীতি বিদ্যমান ব্যাপকভাবে। যার কারনে ছাত্ররাও ঝামেলায় পড়েছে অনেকবার। শুনছি কয়েক জন শিক্ষক খুব জোরেশোরেই ছাত্ররাজনীতি ঢোকানোর পায়তারা শুরু করেছে এবং তারা অনেকদূর এগিয়েও গিয়েছে। জানিনা কতদিন আর খুবি ছাত্র রাজনীতি মুক্ত থাকতে পারবে।

তানিম এহসান এর ছবি

শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি সম্পূর্ণ বন্ধ করা উচিত কিনা জানিনা কিন্তু প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক রাজনীতির কারণে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা ফিরে দেখা উচিত। শিক্ষকরা যখন ছাত্ররাজনীতির নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয় তখন কোন কাজটা তারা করতে পারেননা সেটা ঠিক করা উচিত সবার আগে।

Ahsan এর ছবি

আমি সুলতানের সাথে একমত। আমিও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে।
লেজুরবৃত্তি রাজনীতি থেকে শিক্ষকদের সরাতে না পারলে ছাত্রদের এ থেকে বিরত থাকতে বলবেন কিভাবে। এখানে ভেবে দেখার দারকার আছে যে, সম্পুন্ন রাজনৈতিক পরিচিতির ভিত্তিতে উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার সাথে শিক্ষক রাজনীতির সম্পর্ক আছে কিনা?

সৈয়দ নাঈম গাজী এর ছবি

সেই সময়ের অনেক ছাত্র নেতা মূলধারার রাজনীতিতে আছেন তবে অন্যরূপে…

কড়িকাঠুরে এর ছবি

ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হয়ে গেছে বহু আগেই - ছাত্র রাজনীতির নামে এখন যা চলে তা লেজুড়বৃত্তি ছাড়া আর কিছু নয়। মূল দলের ধামাধরা অংশ এখন ছাত্র রাজনীতিকরা। কিন্তু এর জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দিয়ে কাজের কাজ কিছুই হবে না বলেই তো মনে হয়। তাহলে আবার নতুন নেতৃত্ব আসবে কোথা থেকে? মূল দলগুলোতে ব্যবসায়ী- আমলা ইত্যাদি অরাজনৈতিক লোকজন ঢুকে পড়ছে। এবং এদের সংখ্যা বাড়ছে। খেটে খাওয়া রাজনীতিবিদ কই যারা উদাহরণ তৈরী করবেন। তরুণদের পথ দেখাবেন।

মারামারি, হানাহানি, হল দখল, সিট বানিজ্য ইত্যাদির জন্য ছাত্র সংগঠনগুলো খবরের শিরোনাম। তো এই ছাত্র সংগঠনগুলো যাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ মূল দলগুলো, তাদের সমস্যাও তো অনেক। এবং জাতীয় ক্ষেত্রে এসব সমস্যার প্রভাব আরও প্রকট। এর জন্য কী কেউ জাতীয় রাজনীতি বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে কথা বলবেন? মনে হয় না। রাজনীতির বিকল্প বিরাজনীতিকরণ হতে পারে না।

পোস্ট- চলুক

প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়া যাক এবং সমস্যার সমাধান হোক...

তামান্না ঝুমু এর ছবি

এখনকার ছাত্র রাজনীতিতে ভাঙচুর, মারামারি, সন্ত্রাস ছাড়া ত আর কিছু দেখছি না।
তামান্না ঝুমু

অরফিয়াস এর ছবি

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার বদলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। ছাত্র একজন নাগরিক এবং তার রাজনীতি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সেই রাজনীতির চর্চা সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে করুক তাতে সমস্যা নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে ছাত্রদের কোন সমস্যায় দলবদ্ধ কর্মকান্ডের প্রয়োজন হলে রাজনৈতিক সচেতনতা সম্পন্ন ছাত্ররা একসাথে হয়ে কাজ করতে সক্ষম এটা বলার প্রয়োজন রাখে না। কিন্তু এর জন্য প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে রাজনীতির প্রচলন থাকার প্রয়োজন পড়েনা।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অমি_বন্যা এর ছবি

প্রশ্নগুলোর উত্তর আসবে আশা রাখি তবে ছাত্র রাজনীতি মানেই হল দখল, ক্যান্টিনে ফাউ খাওয়া, টেন্ডার বাজী, দলীয় স্বার্থে ছাত্রদের ব্যবহার, নীল সাদা দলের ছায়ায় নগ্ন আশ্রয়, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি এগুলোই কেন জানি সমার্থক হয়ে সামনে আসে।

আপনার প্রশ্নগুলো আসলে এখন অনেকেরই।

অতিথি লেখক এর ছবি

ছাত্র রাজনীতি বন্ধ কোনও সমাধান নয়। পাড়াভিত্তিক যে রাজনীতি, যুব বা স্বেচ্ছাসেবক ধাঁচের রাজনীতি এটা বন্ধ করা কি সম্ভব? এক কথায় উত্তর -না। ধরা গেল নিয়ম করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের রাজনীতি করা বন্ধ করা হলো তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি প্রবেশ করবে এরকম কিছুর হাত ধরে। যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শাহবাগ, পরিবাগ, লালবাগ, রমনা, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হবে নিয়ম করেই। সেক্ষেত্রে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে যু্ক্তি কতটা টেকে? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে িএলাকাভিত্তিক রাজনীতিই প্রধান, ছাত্র রাজনীতির চাইতেও ওখানে পুরান ঢাকা এবং সদরঘাটের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রকদের ভূমিকাই বেশি। জাহাঙ্গিরণগরের কথাই ভাবুন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হলো, সাভার অঞ্চলের নেতাদের নাক গলানো তখন বন্ধ করা হবে কি প্রক্রিয়ায়? এটা একটা প্রসঙ্গ। যেখানে দেখা যাচ্ছে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হলেও রাজনৈতিক সঙস্কৃতি না বদলানোর কারণে সংকটটা থেকেই যাচ্ছে।

বিরাজনীতিকীকরণ কখনো সমাধঅন আনতে পারে না। এর বড় প্রমাণ এখনকার রাজনীতি। আশা করি ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। যে রাজনীতি করছে, সেই ছাত্রটির রাজনৈতিক ভবিষ্যত কি আদৌ আছে? নেই। যে দু একজনের আছে, তারা হয় বড় রাজনৈতিক পরিবার সংশ্লিষ্ট অথবা বিত্তশালী। একজন রাজনীতি করা ছাত্র জাতীয় রাজনীতিতে অবদান রাখতে পারার সম্ভাবনা এতটাই ক্ষীণ যে, রাজনৈতিক ভবিষ্যত নেই বল্লে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু সে ইতোমধ্যে দলটির পেছনে শ্রম দিয়েছে হয়ত ৫-১০ বছর। নেতৃত্বগুণ থাকা সত্ত্বেও সে সাধঅরণ কর্ী হিসেবে তার ছাত্র জীবন শেষ করবে এটা সতসীদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা একটা প্রতিক্রিয়া তৈরী করে যা তাকে টেন্ডার চাঁদাবজি করতে আলাদাভাবে উদ্বুদ্ধ করে।

দেশের রাজনৈতিক ইজারা নেওয়া দুই দল, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুটিই চলে মূলত পরিবারতন্ত্র এবং ব্যাবসায়িদের দ্বারা। সেখানে ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা নেতৃত্বও কতটা কী করতে পারে সেটা সন্দেহের বাইরে নয় যদিও তা তকর্সাপেক্ষ। খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনা কেউই ছাত্ররাজনীতির প্রডাক্ট নয়। তারা তাদের পারিবারিক উত্তরাধিকার কোনও রাজনৈতিক শিক্ষা ছাড়াই। এবং তারাও ক্ষমতা পারিবারিকভাবেই দিয়ে যাচ্ছে, একজন বেছে নিচ্ছে তারেককে, আরেকজন জয়কে প্রস্তুত করছে। দলের ভেতরের প্রকৃত নেতা কর্মীরা জায়গা পাচ্ছে না। লক্ষ্যবিচ্যুত হওয়া এখানে অস্বাভাবিক নয়। আর এখানে আরেকটা কথা স্মরণযোগ্য- একজন রাজাকার আজন্ম রাজাকার কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা আজন্ম মুক্তিযোদ্ধা নয়। কী বলতে চাইছি নিশ্চয় পরিষ্কার। কথাটা আমার নয় আজাদ স্যারের। কথাটা সত্য এবং খুব বেশি রকম সত্য।

জাতীয় রাজনীতির এমন সংস্কৃতির মাঝে যে কোনও ক্ষেত্রৈই নৈরাজ্য বিরাজ করার কথা।এবং তাই বিরাজ করছে। একজন ছাত্রদল বা ছাত্রলীগের কর্মী নিজের গঠনতন্ত্রই ঠিকমত জানে না, ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। কিন্তু আমি অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। সে নেতৃ্ত্ব শেখে তার সিনিয়রের কাছ থেকে। তার কাছে মানদণ্ড সিনিয়র নেতা, অন্য কিছু নয়। এটা ক্রম অবনমনের দিকে নিয়ে যায়। এর সাথৈ যুক্ত হয় জাতী নেতাদের নানা হস্তক্ষেপ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটা দেশের প্রতিরুপ হয়ে দাঁড়ায় না তাই। সে তখন আর ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব না করে নেতাদের প্রতিনিধিত্ব করে, সাথে নিজস্ব হতাশা সঞ্জাত ব্যক্তিগত স্বার্থ।

জাতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি না বদলালে এটা সহজে বদলাবে না। নিয়ন্ত্রক ছাত্ররা নয়। আর বিগত নেতাদের খুঁজে লাভ নেই। এটাতো জানা কথাই আন্দোলন নেতার জন্ম দেয়, নেতা আন্দোলনের জন্মদাতা নয়। এটা খুবই সম্ভব যে ছাত্ররা উপরের নেতৃত্ব অস্বীকার করে বদল ঘটাচ্ছে। একটা চিহ্ন বলি, ছাত্রদলের বিগত কমিটির নেতৃবৃন্দ থেকৈ মাঝে একটা দাবী উঠেছিল, বিএনপি যেন জামাতের সংস্পর্শ ছাড়ে। অগ্রাহ্য করা হয়েছে, শিবির সমর্থিত কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু এটা শুরুর ইঙ্গিত। বিরাজনীতিকীকরণের ফলাফল আমরা বহন করতেই হবে। মেধাবীরা নেতৃত্বে আসতে শুরু করলে এটা কেটে যাবে। আর তা করতে হলে ভাল ভাল ছেলে সেজে থাকার দলথেকৈ নাম কেটে অংশগ্রহণের জায়গায় আসাটা জরুরী।

আমাদের স্বভাব পাশেরজনের দিকে তাকিয়ে থাকা। সে গেলে আমিও যাব। এটাই তাবৎ ক্ষতির কারণ। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যা দেখেছি, বাম ধারার ছাত্র সংগঠনের উপর আদর্গত জায়গায় বা দাবীর জায়গায় অনেক সাধঅরণ ছাত্রের সমর্থন থা্কলেও তা মৌন। ফলাফল ছাত্রলীগের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে সাধারণ ছাত্র মৃত্যুর প্রতিবাদে ২০-৩০ জনের মিছিল আর এর বিপরীতে ছাত্রলীগের ২০০-৩০০ জনের মিছিল ও শো-ডাউন। স্পেসটা কে দিল? তথাকথিত সাধারণরা নয় কি?

আর ধূমপান ও রাজনীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারনা বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। ওটা কার পক্ষে যায় এটা একটু ভেবে দেখতে বলি কেবল।

লেখা ভালো লেগেছে। এবং আমি আশাবাদী এই আবেগের পথ ধরে এর সমাধান সম্ভব যদি আমরা সত্যি চাই। লেখককে ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ এই বিষয়ৈ আলোচনা করার জন্যে। মন্তব্য দীর্ হওয়ার জন্যে দুঃখিত।

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার প্রথম লাইনটাতে আমার আপত্তি আছে, আমি নিজেকে তাদের কারো মধ্যেই ফেলতে পারছিনা। কিন্তু আমি রাজনীতি করতাম। ছাত্র ফেডারেশনে ছিলাম ভার্সিটি জীবনের শেষ তিন বছর। গবেষণা, শিক্ষামূল্য বৃদ্ধি, আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ছাত্রী হেনস্তা সবকিছু নিয়েই আন্দোলন করেছি। সফলও হয়েছি বেশ কিছুতে। এখনো মনে হয়নি, বিভ্রান্ত হয়ে করেছি কিছু। বাকিগুলো নিয়েও কেউ কোনোদিন অভিযোগ করতে পারবে না।

তবে আপনার কনসার্নটা বুঝি। আর তাই আমি ওদেরকে ছাত্ররাজনীতি করার ক্রেডিট দেইনা, ওরা সন্ত্রাস করে, রাজনীতি না। নিজেও শিকার হয়েছি, রাজনীতি শুরু করার আগেও এবং পরেও।

সমাধান একটাই, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেসব ছাত্ররাজনৈতিক শক্তি আছে, ওদের হাত ভারী করতে হবে। এই চর্চা শুরু হলে সন্ত্রাসী গ্রুপ আকারে ছোটো মনে হবে এবং দুর্বল হয়ে পড়বে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।