দেশে হয়তো লিফ্টে উঠছি, এস্কেলেটর এ চাপছি, চালাচ্ছি কম্পিউটার অথবা চড়ছি সিএনজি। সব সময়ই মনে হয় জিনিসটা অন্যকেউ বানিয়েছে। আমরা কিনে এনেছি। একবার একটা ধান মাড়াইয়ের মেশিন দেখলাম। পা দিয়ে প্যাডেল করতে হয়। কে যেন বললো, এইটা আমাদের দেশেই উদ্ভাবিত। তারপর থেকেই যন্ত্রটা দেখলেই প্রাণটা ভর যেত। সেই উদ্ভাবককে চেনা হলো না, বলে আফসোস আছে আজো। রাস্তায়, নসিমন, ময়ুরী চলতে দেখে বা ইট ভাঙ্গার মেশিনের ঘড়ঘড় শুনে মাঝে মাঝে ভাবি, ভালোই তো বানিয়েছে রে! যদিও, এসব যন্ত্রে সেফটির বালাই নেই। আর ইঞ্জিনটা তো সেই বাইরে থেকেই কিনে আনা। যে সভ্যতায় বাস করি। তাতে কত কম অবদান আমাদের! মাঝে মধ্যে ভাবি, যদি কখনো জাতিসংঘ ট্রেডব্যান করে দেয়। তখন কী হবে? মধ্যযুগে ফিরে যাবো কি আবার? নবজাতকের ছয়টি রোগের টিকা কি আমরা বানাতে পারি? বা তা বানানোর সরঞ্জাম? যাক গিয়ে, মূল গল্পে ফিরি।
প্রথমবার কানাডা আসার কথা মনে আছে। একটা কনফারেন্সে অংশ নিতে যাচ্ছি। আমাদের ইন্স্টিটিউট থেকে যাচ্ছে আরো ছয়-সাত জন। সিংগাপুর থেকে সবাই একসাথে চেক ইন করছি। একে একে সবাই পার হয়ে গেল। আর আমার পাসপোর্টটা ফিরিয়ে দিয়ে কাউন্টারের মেয়েটা বললো, তোমার যাওয়া হবে না। সমস্যা আছে! আমি কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। এ দেখি, দুস্বপ্ন হলো সত্যি! খোঁজ নিতে জানা গেল। আমার ফ্লাইট যাবে হংকং হয়ে। কিন্তু, ওরা বাংলাদেশীদের পুরোপুরি মানুষ গণ্য করে না। কোনো প্লেনে যদি বাংলাদেশী কেউ থাকে তাহলে ঐ দেশে সেই প্লেন ল্যান্ড করাই নিষেধ। স্রেফ ট্রানজিট করতেও দেবে না। বাংলাদেশের ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট হোল্ডারদেরও নাকি হংকংএ ঢুকতে ভিসা/অনুমতি নেওয়া লাগে। আমি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছি। সঙ্গীদের বললাম তোরা না হয় যা। ওদের একজন গিয়ে, ততক্ষণে ম্যানেজার গোছের কারো সাথে কথা বলছে। আমি কানাডা যাচ্ছি শুনে সে বললো দেখি কী করা যায়। নথিপত্র ঘেটে বের করলো, যে কানাডা বা ইউএসএর ভ্যালিড ভিসা থাকলে বিশেষ ব্যবস্থায় নাকি ট্রান্সিট করা যেতে পারে। কারণ ঈশ্বর থাকেন ঐ গ্রামে। কানাডা বা আমেরিকার ভদ্রপল্লীতে।
তারপর সে নানান রকম হ্যাপা করে এক ব্যবস্থা করলো। বলে, হংকং এ নামার পরে আমাদের একজন তোমাকে নিয়ে নেক্সট প্লেনে বোর্ড করে দেবে। কিন্তু পুরোটা সময় তোমাকে এই ব্যাজটা পরে থাকতে হবে। একটা সবুজ রঙের ব্যজ ধরিয়ে দিলো হাতে। যাচ্ছিলাম, ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াটারলুর ইন্স্টিটিউট ফর কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এ। এই ফিল্ডের সবচেয়ে বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান। কত বিজ্ঞাণীর সাথে পরিচয় হবে, কাজ করার সুযোগ হবে আর পাশে আছে নায়াগ্রা জলপ্রপাত। এইসব নিয়ে জল্প্না কল্পনা ছাপিয়ে, লজ্জা অপমান আর হতাশার একটা মিশ্র অনুভূতি হতে লাগলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে, নৎসী জার্মানি সহ ইউরোপের অনেক অংশে, ইহুদীদের মানুষ গন্য করতো না। বাইরে পাবলিক প্লেসে চলাফেরা করার জন্য তাদেরকে একটা ব্যাজ পরে ঘোরা লাগতো। যাকে বলা হতো ইয়োলো ব্যাজ। আমার ব্যাজটা অবশ্য হলুদ না, সবুজাভ। তারকাকার না, গোল চাকতির মত, তাতে লেখা MAAS। হংকং এ পৌছে সবাই নেমে গেল একদিক দিয়ে। আর আমাকে একজন কেবিন ক্রু, এক পিছনের দরজা দিয়ে, গলি-তস্যগলি ঘুরিয়ে নেক্সট প্লেনের বোর্ডিং রুমে ঢুকিয়ে দিলো।
সেবার নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখা হলো। মন্ট্রিয়ল ঘোরা হলো। IQC তে গিয়ে বিশ্বের সেরা সব পদার্থবিজ্ঞানীদের সাথে কাজ করার সুযোগ হলো। কত অদ্ভুত যন্ত্রপাতি দেখলাম। শিখলাম। কিন্তু ঐ ব্যাজের ব্যাপারটা মাথা থেকে গেল না। নিজেকে এতটা ছোট হতে দিলাম... আজ ব্যাজ পরালো। কাল হলোকাস্ট শুরু করলেও ঠেকাতে পারবো কি?
এবার আসার সময় তাই হংকং হয়ে আসিনি। এলাম দক্ষিণ কোরিয়া হয়ে। কোনো সমস্যা হয়নি। স্রেফ দ্বিতীয়বার বোর্ডিং এর সময় সবাই যখন পাসপোর্ট আর বোর্ডিং কার্ড দেখিয়ে ঢুকে যাচ্ছে, আমার বেলায় একজন এক্সপার্টকে ডাকা হলো। এক্সপার্ট একটা বিশেষ অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে আমার পাসপোর্টে লাগানো কানাডার ভিসাটা নীরিক্ষা করলো কিছুক্ষণ। তারপর সবিনয়ে দেখিয়ে দিলো প্লেনে ওঠার পথ। স্রেফ ছোট্ট একটা পার্থক্য। শুধু আমার বেলায়। যেন পোলাইটলি বুঝিয়ে দেওয়া, “তুমি আর সবার সমান নও”।
এই লেখার শিরোনামটা দেখে হয়তো অনেকেরই ভ্রুকুঞ্চিত হয়েছে। আমি-ই তো বিরক্ত হতাম। মানুষের আবার সাদা-কালো কী? কিছু সাইন্সফিকশন গল্পে প্রথম মাত্রার অঞ্চল, দ্বিতীয় মাত্রার অঞ্চল, তৃতীয়, চতুর্থ... এমন অঞ্চলভাগ থাকে। দ্বিতীয় রা প্রথম অঞ্চলে যেতে পারে না। বা অনুন্নত তৃতীয় রা পারে না দ্বিতীয় অঞ্চলে যেতে। গল্পের খাতিরে অবশ্য, দুয়েকজন মাঝে মাঝে অন্য অঞ্চলে যায়। ঠিক যেমন আমি এখানে এলাম। গল্পের খাতিরে। পৃথিবীটা এত বড়, এত সুন্দর, কিন্তু আমরা, এই কালো আর বাদামি মানুষেরা আমাদের অনাহার, অশিক্ষা, আর অসহায়ত্ব নিয়ে, একটা অদৃশ্য গণ্ডিতে আটকা পড়েছি। এখানকার কোয়ান্টাম অ্যান্ড ন্যানো টেকনল্জি সেন্টারের বিল্ডিংটা সাইন্স ফিকশন সিনেমায় দেখা যে কোনো গবেষণাগারকেই হার মানায়। হাজারো মানুষ প্রকৃতির রহস্য নিয়ে মেতে আছে দিন রাত। সভ্যতাকে এগিয়ে নিচ্ছে পরবর্তী ধাপের দিকে। ওদের সাথে সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মাতি আমিও। কিন্তু মাঝে মধ্যে, কোনো এক অলস মুহূর্তে। নিজেকে খুব বহিরাগত মনে হয়।
মন্তব্য
মানুষ হইতে সম্ভবত আমাদের অনেক দেরী
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আপনার লেখাটা পড়ে বুকের ভেতর কেমন জানি একটা অসহায় অনুভূতি হচ্ছে। ভাল থাকুন।
আপনিও ভালো থাকুন।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
"রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ করোনি" - আমরা না বুঝলেও অন্যরা ঠিকই বুঝে নিয়েছে।
এর জবাব আমাদেরই দিতে হবে - মুখে নয়, কর্মের মাধ্যমে। তবেই আমরা ফিরে পাবো হৃত সম্মান - (ইয়ে, সম্মানটা যদি সত্যিই হৃত হয়ে থাকে। নইলে অর্জন হবে)।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নানা দেশের বিমানবন্দরে নিজের ভোগান্তির কথা গুলো একবার লেখার ইচ্ছে আছে
facebook
লিখে ফেলেন সময় করে। নাইলে মনে হয় পথ বুঝি কুসুমাস্তীর্ণ।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
দিতে হবে, ছিনিয়ে নেব। হা হা হা ।
হা হা হা। ঠিক।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আম্রিকার ইমিগ্রেশন পার হইছেন কখনও? না হইলে আসেন একবার। কপাল ভালো(!) থাকলে এমন অভিজ্ঞতা হবে যে আগের এইসব অভিজ্ঞতাকে মধুর মনে হবে ।
সবার হয়তো বাজে অভিজ্ঞতা হয়না, আমার হয়েছে বেশ কয়েকবার। আপনাকে যেমন MAAS সিল দিছে, আমার পাসপোর্টে সিল থাকতো NSEERS (National Security Entry-Exit Registration System). এই সিল দেখলেই ইমিগ্রেশন এর অফিসার তার বাকি জ্ঞাতি ভাইদের দাঁত কেলিয়ে ডেকে "ওরে মুরগি পাইছি রে" বলে দলাই মলাই শুরু করত। কিছু কিছু কাজ হয়তো সিকিউরিটির জন্য করার দরকার আছে। তবে কাজগুলা মানুষকে ছোট না করেও করা সম্ভব। আমেরিকাতে সবচেয়ে বেশী রেসিস্ট লোকজন মনে হয় আমি বিমানবন্দর এলাকা আর ইমিগ্রেশনেই দেখছি।
পাসপোর্টে সিল দিলে তাও এক কথা। গায়ে ব্যাজ পরিয়ে দিলে. . .
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আগে হতাশা বোধ করতাম এখন এনজয় করি। ইমিগ্রেশনের নিয়ম কানুনের উপর পি এইচ ডি থাকলে এদ্দিনে পেয়ে যেতাম।
মর্ষকাম?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
গতবছর সেপ্টেম্বরে হিথ্রোতে কি যেনো এক কারনে টার্মিনাল ৫-এ রেড এ্যালার্ট পড়েছিলো। সাউথ এশিয়ান, মধ্যপ্রাচ্যের ও আফ্রিকান দেশগুলোর যাত্রীদেরকে বোর্ডিং লাউঞ্জে ঢোকার মুখ থেকে ধরে কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছিলো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। আমার হাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেখে ক্যাঁক করে ধরে বসলো। আমার সামনেই যেভাবে অন্যদের নিয়ে যাচ্ছিলো তা দেখে আমার তো ভয়ে অবস্থা কাহিল। তার উপরে আমার পাসপোর্টে জ্বলজ্বল করছে সোমালিয়া ও পাকিস্তানের রেসিডেন্স পারমিট, অনেকগুলো আফগান ভিসা, ইত্যাদি। যাইহোক, আমার অফিসের নাম শুনে অবশ্য নিরাপত্তাকর্মীরা আমাকে থামানোর জন্যে দুঃখপ্রকাশ করে সসন্মানে ছেড়ে দিলো।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
হুম, সম্মানটা আপনাকে না আপনার ঐ অফিসকে করেছে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
তা কি আর বুঝতে বাকী আছে!
যাহোক, কেমন আছেন? সম্প্রতি আপনাদের ইউনির সাথে থাইল্যান্ডের থামাসাত ইউনির একটা পার্টনারশীপ হয়েছে। থাইল্যান্ডে ঐটার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আপনাদের তরফ থেকে দাওয়াত পেয়েছিলাম একটা প্রেজেন্টেশন দেওয়ার জন্যে। আমি আগে থেকে অন্য প্রোগ্রামে বুকড থাকায় শেষে আমার বস সেখানে প্রেজেন্টেশন দিয়েছে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আমি হংকং দিয়ে বেশ কয়েকবার যাওয়া-আসা করেছি, কখনো খারাপ অভিজ্ঞতা হয় নি! আপনি কি হংকং এ ঢুকেছিলেন? আমি অবশ্য ঢুকিনি, এয়ারপোর্টেই ছিলাম।
আমার স্টিকারের অভিজ্ঞতা হয়েছে হিথ্রো আর প্যারিসে। পাসপোর্টে একটা স্টিকার মেরে দিয়েছে। পথে পথে খালি ডকুমেন্টস চেক করে!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
আমিও এয়ারপোর্টেই ছিলাম। সাম্প্রতিক সময়ে গেছেন কি?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
না ৩-৪ বছর আগে! এখন তাইলে এই অবস্থা!! কিন্তু কেন!!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
মাঝে মধ্যে মনে হয় অশ্বেতাঙ্গ হয়ে জন্মানোই আমাদের আজন্ম পাপ!
এসব বলে লাভ নেই। কপালের দোষ না। দোষ মস্তিস্কের। যেদিন সবকিছুতে ওদের চেয়ে ভালো করতে পারবো সেদিন এমনিতেই সম্মান করবে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
একটু দ্বিমত করি। যাদের চেয়ে মগজে আমরা খাটো এবং যাদের চেয়ে মগজে আমরা উঁচুতে উভয় পক্ষের কাছ থেকে আমরা একই প্রকার ব্যবহার পাই। উদাহরণ দিলাম না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মগজে তো কেউ কারো চেয়ে খাটো না। মগজ ব্যবহার করা না করায় এগিয়ে পিছিয়ে আছি। দারিদ্রের দায় জনগোষ্ঠির বুদ্ধিবৃত্তিক (স/অ)ক্ষমতার উপরই বর্তায়। (যদিও তার পিছনে হাজারটা অন্য ফ্যাক্টর আছে)
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
সিভিল রাইটস মুভমেন্ট বলতে আগে শুধু বুঝতাম রোজা পার্ক আর লুথার কিং-কে।
'ওম্যান এণ্ড সিভিল রাইটস মুভমেন্ট' নামে কোর্সেরাতে একটা কোর্স করতে গিয়ে
সাদা রঙের কালোমনা মানুষদের বিস্তারিত ইতিহাস পড়ে এখন আর আগের মত নিজের সঙ্গে
এয়ারপোর্ট কিংবা অন্য কোথাও এদের ব্যবহারে মন খারাপ করিনা। পৃথিবীটা যতটা যন্ত্রকেন্দ্রিক
সভ্যতায় এগিয়েছে আমরা মানুষেরা ঠিক সে অনুপাতে এগোতে পারিনি যেন।
মন খারাপ হয়, অসহায়ও লাগে। তবুও স্বপ্ন দেখি। হলুদ তারাগুজে থাকা মানুষগুলো যদি
নিজেদের এমন পর্যায়ে নিতে পারেন। তবে দেশ আর মানুষ হিসেবে বাংলাদেশ-বাঙ্গালিও পারবে।
হয়ত অসম্ভবের কল্পনা এটা। তারপরও স্বপ্নটা শক্তহাতে ধরে থাকি।
সমানে সমানে না হলে কোনো রাইট্সেরই অর্থ হয় না। ঠিক ই বলেছেন, হলুদ তারাওয়ালারা নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরাই করে নিয়েছে। আমাদেরও তাই করার পালা।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
একটা ব্যাপার বুঝিনা এদের - ভিসা দেয়ার পরও কেন এত হয়রানি, পোর্ট এন্ট্রি হলে একটা যুক্তি না হয় থাকত।
তেঁতো অভিজ্ঞতা কিন্তু সুলিখিত
ধন্যবাদ।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
অনেকের কাছে অনেক শুনেছি এইসব কথা। আমার নিতান্তই অল্প অভিজ্ঞতায় এই ধরণের ঘটনা ঘটেনি কখনো। আশা করি যেন না ঘটে। বাজে অভিজ্ঞতাও অভিজ্ঞতা, কিন্তু তা না চাখাই শ্রেয়। কি বলেন?
বাজে অভিজ্ঞতার কথা লেখনির গুনে পড়তে ভাল লাগল।
বিটিডব্লিউঃ ঐ স্টিকারের লেখাটার মানে কি?
-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------
লেখার মানে-টা উদ্ধার করতে পারিনি।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
গুগুল মামা বল্ল যে এইটা হংকং এয়ারপোর্টের একটা সার্ভিসের নাম "Meet and Assist", আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, People with special needs, শুদ্ধ বাংলায় যাদেরকে আমরা "প্রতিবন্ধি" বলি।
-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------
ট্রানসিট নিতে এসে পালিয়ে গিয়ে যেন রাস্তা ঝাড়ু দিতে শুরু না করি, সে জন্য নজরদারির অপর নাম সম্ভবত।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হঙকঙে যদি জীবনে পনের বার গিয়ে থাকি তাহলে পনের গুণ দুই তিরিশবার ইমিগ্রেশন কর্তাদের কাছে হেনস্থা হয়েছি – ঢুকতেও, বের হতেও। আমি আজো জানি না আমার অপরাধ কী। তারাও কখনো বলেনি কেন আমাকে সন্দেহভাজনদের দলে ফেলে তাদের সাথে এয়ারপোর্ট/বর্ডার অফিসের এক কোনে আধ ঘন্টা থেকে দুই ঘন্টা বসিয়ে রেখে, আমার তল্পিতল্পা আঁতিপাতি করে ঘেঁটে, কয়েক বার আমার নাম-জন্মতারিখ-পাসপোর্ট নাম্বার-কেন এসেছি/কেন এসেছিলাম-কোথায় থাকবো/কোথায় থেকেছি-কী করবো/কী করেছি জিজ্ঞেস করে, ঢোকার ক্ষেত্রে ফিরতি ফ্লাইটের টিকিট/কনফার্মেশন চেক করে তারপর ছেড়েছে।
হঙকঙের কাওলুন (জিউলঙ) এলাকায় শত শত ভারতীয়/পাকিস্তানী/আফ্রিকান নাগরিককে দেখা যায় ১৪ দিনের ভিসিট ভিসা নিয়ে হোটেল-রেস্টুরেন্ট-ফ্যাক্টরি-অফিসে কাজ করছে। ১৩ দিনের মাথায় লোউ বর্ডার দিয়ে গণচীনে ঢুকে একবেলা থেকে আবার ১৪ দিনের ভিসা নিয়ে হঙকঙে ঢুকে আগের মতো কাজ করে। এটা ওপেন সিক্রেট। দুঃখজনক সত্য হচ্ছে এই কর্মীশ্রেণীর মধ্যে অপরাধপ্রবণতা ব্যাপক। অন্তত হঙকঙে তাই দেখেছি, শুনেছি। তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাকি প্রায় নিশ্ছিদ্র, তাহলে এসব হয় কী করে?
বর্ণবাদ নানা আকারে, নানা ধরনে সারা দুনিয়ায়ই বিদ্যমান। সেটা আমরা স্বীকার করতে চাই বা না চাই। কেউ কেউ কিছু ব্যতিক্রম ঘটনার/অভিজ্ঞতার কথা বলে বা নানা রকমে ত্যানা প্যাঁচিয়ে “তাইলে মিঁঞা আপ্নেরই দুষ” প্রমাণ করার চেষ্টা করে। এই ধরনের ত্যানা প্যাঁচানিতে বিরক্ত হই বটে; তবে আমি জানি, আমি দেখেছি বর্ণবাদ প্রবলভাবে দুনিয়া জুড়ে আছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভারত-পাকিস্থানের নাগরিকদের উপস্থিত মাত্র ১৪ দিনের ভিসা দেয়। কিন্তু বাংলাদেশীদের বেলায় এমন হবার কারণ ভেবে পাচ্ছি না। সম্ভবত, আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যর্থতা। কোনো রাষ্টদূত উল্টাপাল্টা করেছে কি না কে জানে। রেকর্ড তো ভালো না।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হঙকঙের জন্য তো আলাদা রাষ্ট্রদূত হবার কথা না। যদি গণচীনে বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্রদূত ভুল কিছু করে থাকতেন তাহলে গণচীনেও আমরা এমন ব্যবহার পেতাম। কই, তাতো হয় না!
হঙকঙে বিদেশীদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের রেকর্ডে বাংলাদেশীরা কি ভারতীয় ও পাকিস্তানীদের ছাড়িয়ে গেছে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হুমম, হংকং তো একটা মিশ্র এন্টিটি, কে যে কোনটার দায়িত্বে কে যানে। এক কালে বাংলা সিনেমার ভিলেনরা সব হংকং- ব্যাংকক-সিংগাপুরগিয়ে ফাইটিং করতো। বাস্তব ভিলেনরাও তা করে থাকতে পারে।
তবে সবচেয়ে খারাপ লাগে ভিয়েতনামের আচরণে। পাঁচ-ছশো ডলার ভিসা ফি দাবি করে বসে আছে। ভারতীয়দের জন্য সম্ভবত অন অ্যারাইভাল। এই ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই কি না ঢাকায় প্রাণ দিয়েছিলো মানুষ।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হ, এইজন্যেই তো আমি দেশের বাইরে যাই না ! আমি কি ফকির নাকি !! (এখানে একটা কোনাইচ্চা হাসি হবে, হে হে !)
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
হা হা হা! বিদেশের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করলে দু-দিনে দেশ অন্ধকার হয়ে যাবে। তার মানে কাউকে না কাউকে দেশের বাইরে যেতেই হচ্ছে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হয়ত পূর্বে এরকম অনেক সিন ক্রিয়েট হয়েছে যে কারণে তাদের এত বাড়তি সতর্কতা, কিন্তু এসব কাগজ পত্রের মাধ্যমেই সুন্দর ভাবে সল্ভ করতে পারার কথা, কিছু এক্সট্রা ডকুমেন্ট প্রেসেসিং, বা ফর্ম ফিলাপ ইত্যাদিতে আমার কোন সমস্যা নাই।
কিন্তু একটা টেকনিক্যাল প্রশ্ন করি, আমাকে যদি কেউ কখনো এরকম ইমিগ্রেশনে "ব্যাজ" পরায়, আর যদি আমি তাদের সামনে ব্যাজ খুলে ব্যাজের উপর প্রস্রাব করি (ধরে নিলাম আমি যে কাজে যাচ্ছি, সেখানে যাওয়ার সিধান্ত বাতিল করে দিছি অলরেডি), তাহলে কি ইমিগ্রেশন অফিসার আমার বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে?
ধরুন আমার পক্ষে ঐ মুহূর্তে পরের ফ্লাইটে দেশে ফিরে বা অন্য কোথাও গিয়ে, অন্য কোন ফ্লাইট ধরে কানাডা যাওয়া সম্ভব (বড়জোর এর জন্য ২-১ দিন দেরী হইতে পারে এবং কিছু টাকা গচ্চা যাইতে পারে, ধরুন এই দেরী বা গচ্চা আমার জন্য কোন সমস্যা না)। এই রকম পরিস্থিতিতে ঐ ইমিগ্রেশন অফিসারদের সামনে ব্যাজের উপর প্রস্রাব করলে, এর জন্য কেউ কি আমার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে?
-- রামগরুড়
ওদের মত এয়ারপোর্ট বানিয়ে, সেখানে ওরা ট্রানসিট নিতে আসলে ব্যাজ পরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি না করতে পারলে পেচ্ছাব-টেচ্ছাব করে লাভ নাই।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
-- রামগরুড়
মনটাই খারাপ করে দিলেন।
যা বুঝলাম, বর্ণবাদের শিকার হওয়ার আপনার দুইটা অভিজ্ঞতাই "বাদামী" মানুষের দেশে।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
কিন্তু দেখুন, আমার পাসপোর্টের চেয়ে তাতে লাগানো কানাডার ভিসাই বার বার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সাদা দেশে প্রবেশানুমতিপত্রেরই এত ম্যাজিক!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
অনেকের মুখেই এই ধরণের ঘটনা শুনেছি কিন্তু এখনও অবধি প্রত্যক্ষ করতে হয়নি। যতদিন না করতে হয় ততদিনই ভাল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ব্যাপারটা ইভটিজিং এর মত। কমবেশি সবার সাথেই ঘটছে। বিদেশযাত্রীরা এটাকে নিয়তি ভেবে নিয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান-অর্থনীতি-তে যোজন যোজন পিছিয়ে পড়লে এমন আচরণই মেলে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
তাহলে মহাজ্ঞানী আরবদের সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে না কেন? তাদের পকেটে টাকা আছে বলে? ল্যাটিনদের পকেটে আরবদের মতো টাকা আছে এমনটা কেউ বলবে না। জ্ঞান-বিজ্ঞান-অর্থনীতিতে তারা সিগনিফিকেন্ট কিছু করেছে এমনটাও কেউ বলতে পারবে না। তাদের সাথে তাহলে এমন ব্যবহার করা হয় না কেন?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সবার সাথে বলতে "বাংলাদেশের সবার সাথে" বুঝিয়েছি। আরবদের কারণটা অর্থনৈতিক। তবে আজকাল আরবরা বেশ হ্যারাজমেন্টের শিকার হয় বলেই মনে হয়। আমীরগুলা না হলেও সাধারণ আরবরা রাস্তা ঘাটে মানুষের ভালোবাসা অতটা পায় না। আর ল্যাটিনদেরও অনেকেই, (যেমন ম্যাক্সিক্যান) এ ধরণের আচরণ পায়। তবে ল্যাটিনরা অত গরীব না। আমরা মাঝখান থেকে পদ্মা নদীর মাঝির সেই "গরীবের মধ্যে আরো গরীব, ইয়ের মধ্যে আরো ইয়ে" ক্যাটাগরিতে পড়ে গেছি।
পৃথিবীর একটা বড় অংশের মানুষ ভিসামুক্ত পৃথিবীতে বাস করে। যেখানে খুশি যায়। সপ্তাহে দুদিন, বছরে মাস দুয়েক ছুটি কাটায়। খেলাধুলা, গল্পকবিতা. . . এসব করে, পড়ে। ওদের জীবন যাত্রার অবস্থা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
এসব পড়লে মনে হয়, দেশে আছি ভালই আছি!!
মন খারাপ লাগলো, আসলেই আমরা নিজেদের এত চমৎকার ভাবমূর্তি করে রেখেছি যে প্রতি পদে পদে হেনস্থা হতে হয়
ইসরাত
সবুজ পাসপোর্টের ভোগান্তির কথা অনেকবার শুনেছি। প্রতিবারই আমার কথা বন্ধ হয়ে যায় আর কোথায় যেন জ্বলুনি শুরু হয় একটা।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
এইসব স্মৃতি মন থেকে সহজে যেতে চায় না। আশেপাশের মানুষের তীব্র চাহনি আর ভ্রুকুটি’তে এতো ছোট মনে হয়!
লেখা ভাল লাগলো।
আমাদের রাজনীতিবিদরা শুনেছি দেশের টাকায় ভালই বিদেশ সফর করেন ,,, তারাকি এ ধরনের কোন পরিস্থিতিতে পড়েন না, অবশ্য উনাদেরত আবার সবকিছুতে একটু লজ্জা কম । আমার দৌড় আবার থাইল্যান্ড পর্যন্ত তাই হয়ত এ ধরনের পরিস্থিতিতে এখনও পরিনি । এগুলো শুনলে আসলে খুব কষ্ট লাগে , আপনাকে শুভ কামনা
নতুন মন্তব্য করুন