কিশোর আলো, সংক্ষেপে ‘কিআ’র অক্টোবর সংখ্যা হাতে পেলাম বাড়ি এসে। এর আগে সাক্ষী সত্যানন্দের এক মন্তব্যে এটার খবর পাই। তখন থেকেই কৌতূহল ছিলো। হাতে পেয়েই উল্টে পাল্টে অলংকরণগুলো দেখলাম। চমৎকার কাজ। আকান্তিস গ্রুপের পরিচিত অনেকের অবদান চোখে পড়লো। অবশ্য কদিন আগেই এবারের পূজার আনন্দমেলা উল্টে পাল্টে দেখার সুযোগ হয়েছিলো। অলংকরণ দেখলে মাথাখারাপ হয়ে যায়। ঐ লেভেলে যেতে এখনো কিছুটা সময় লাগবে।
সূচিপত্র স্কিপ করে চলে গেলাম পত্রিকার ভিতরে। শুরুতেই চিঠিপত্র বিভাগ। বাচ্চাদের চিঠিগুলো বেশ মজার ছিলো। বিশেষ করে দিনাজপুরের একজন লিখেছে সে অনেক অনেক পরামর্শ দিতে পারে। পড়েই নিজের কথা মনে হলো। আমিও অনেক অনেক পরামর্শ দিতে পারি। পরামর্শের ঠেলায় আমার আশেপাশে আজকাল কেউ ঘেষে না। ছোটোবোনরা স্রেফ ফেলেদিতে পারে না বলে সহ্য করে। যাইহোক, উত্তরগুলো আরো মজার হতে পারতো।
এর পরেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা। “মনে পড়া”। কবিতাটার পাতায় রবীন্দ্রনাথের একটা আঁকা পোট্রেট আছে। অনবদ্য তুলির কাজ। শিল্পী কে সে কৌতূহল রইলো।
এরপর ফরহাদ খানের লেখা নিবন্ধ। মজার কিছু বাংলা শব্দের ব্যুৎপত্তি নিয়ে। যেমন ধুরন্ধর শব্দটার অর্থ ষাট সত্তুর বছর আগেও নাকি ছিলো, বহু গুণের অধিকারি, করিৎকর্মা ব্যক্তি। আর আজ কাউকে ধুরন্ধর সম্মোধন করলে কিল একটাও মাটিতে পাড়বে না। এরও আগে শব্দটার মূল ব্যবহার ছিলো “ভারবাহী” অর্থে। ঘোড়া, গাধা হাতি, ইত্যাদি ছিলো ধুরন্ধর। এভাবেই আরো কিছু মজার শব্দের কথা আছে লেখাটায়।
এর পরেই মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের ধারাবাহিক উপন্যাস টুনটুনি ও ছোটা চাচ্চু। এটাই প্রথম পর্ব। শুরুটা ভালো লাগলো বেশ। অলংকরণও সুন্দর। কলমের দাগের মধ্যে জলরংএ করা অলংকরণ এর প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। তবে আলংকারিক সাদাত সম্ভবত ডিজিটালি রিটাচও করেছেন। ছবিগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড আর ফোর গ্রাউন্ডের মধ্যে আরেকটু কনট্রাস্ট থাকলে আরো ভালো হতো।
কমিক্স
এর পরে তন্ময়ের করা ব্যাকবেঞ্চার্স ক্লাব সিরিজের কমিক্স। আঁকা ভালো হয়েছে। বিদেশী কমিক বই গুলোর স্পিচ বাবলগুলো সাধারণত হাতে লেখা হয়। বা কমিক ফন্টের হয়। বাংলায় এমন কমিক ফন্ট দরকার। কমিকের মধ্যে যান্ত্রিক রুলটানা লেখা চোখে আঘাত করে। এ বিষয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে কমিক্স শিল্পিদের ভাবতে হবে। আচ্ছা “কমিক্স” শব্দটার জুৎসই কোনো বাংলা করা যায় না? পুরো পত্রিকায় কমিক্স আছে আরো বেশ কয়েকটি। শাহরিয়ারের কমিক্স জংলী বাবু। কমিক্সের একটা চরিত্র বেসিক আলীর মতই দেখতে। এরপর আসিফের করা জাদু-কলম কমিক্সটাও বেশ মজার। আদনান মুকিতের লেখা আর জুনায়েদ আজীম চৌধুরীর আঁকায় বাশিওয়ালা কমিক্সটাও ভালো হয়েছে।
ফিচার
ফিচার আছে নানান রকম। অনন্যা রুবাইয়াত বাঘশুমারী নিয়ে চমৎকার একটি লেখা দিয়েছে। খালের পাড়ে পাগমার্ক দেখে বাঘের ঘনত্ব অনুমান করার উপায় সহ নানান রকম পদ্ধতির বর্ণনা। লেখনিও ঝরঝরে। শরীফ সরওয়ার নামক একজন আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফারকে নিয়ে একটা ফিচার আছে। সেন্ট-মার্টিন দীপে পানির নীচে তোলা চমৎকার কিছু ছবিও আছে সেই সঙ্গে। সাকিব আল হাসানকে নিয়ে লেখাটাও ভালো। বৈশিক মূদ্রার লেনদেন নিয়ে একটা আর্টিকেল আছে। তুলির অলঙ্ককরণও ভালো হয়েছে। তবে পাল্টাপাল্টি লেনদেন এর ব্যাপারটা আরো বোধগম্য করে লেখা উচিৎ ছিলো। অনেক পাঠক বিভ্রান্ত হবে।
গল্প
আখতার হোসেনের লেখা গল্প “তিতলি আর একা নয়” জাদুবাস্তবতাময় গল্প। আমার ভালো লেগেছে। তবে শেষের দিকে ইচ্ছে করে দেওয়া উপদেশ টাইপ কথাবাত্রা আছে। বাচ্চারা সেটা ধরে ফেলবে। গল্পটির অলংকরণ করেছেন মাসুক হেলাল। জলরং এ আকা ছোট্ট একটা মেয়ের খুব চমৎকার একটা ছবি আছে। তবে তার চারপাশে পাখি বনভূমি আর পাখির কোলাজটা ঠিক মেশেনি। মূলত রং এর টেক্সারের ভিন্নতার কারণে। মেয়েটা যে ধাঁচে এ আঁকা, বাকি অংশটাও সেভাবে আঁকা হলে ভালো লাগতো।
তানজিনা হোসেনের লেখা সাইন্স ফিকশন ড্রোনাবিল প্রোজেক্ট। অন্যদের কেমন লাগবে জানি না। আমার খুব ভালো লাগলো। ঠিক এই ধরনের সাইন্স ফিকশনই ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে সঠিক প্রণোদনা সৃষ্টি করতে পারে। গল্পটার অলঙ্করণ করেছেন সব্যসাচী মিস্ত্রী। আমার প্রিয় একজন ইলাস্ট্রেটর। এবং যথারীতি তিনি তার নামের মর্যাদা রেখেছেন।
তলস্তোয় এর হিতোপোদেশমূলক তিনটি গল্প আছে। ইশপের গল্প ধাঁচের। নজর কাড়া ইলাস্ট্রেশন। জল রং এ করা। বিদেশি শিল্পির মনে হয়। দেশী কারো হলে খুব খুশি হবো।
রকিব হাসানের লেখা তিনগোয়েন্দার বড়গল্প ছিলো একটা। অলংকরণে সব্যসাচী মিস্ত্রী। বেশিরভাগই রাতের দৃশ্য তাই শীতল রং বেশি। তবে প্যালেট সিলেক্ট করার আগে তিনি বোধ হয় কী কাগজে প্রিন্ট করা হবে সেটা ভাবেন নি। কম্পিউটার স্ক্রীনে বা ক্যালেন্ডারের পাতায় ছবিগুলো অসাধারণ লাগবে সেটা বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু নিউজ প্রিন্টের ঘোলাটে কাগজে তেমন ফোটেনি।
আহসান হাবীবের বড়গল্প আছে একটা।
দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের চমৎকার একটা লেখা আছে, হেশোরাম হুশিয়ার, প্রফেসর শঙ্কু, আর বিজ্ঞানী সফদার আলীকে নিয়ে। জাফর স্যার কেন যে সফদার আলীকে নিয়ে শঙ্কুর মত অনেকগুলো গল্প লিখে ফেলেন না। সেইটা ভাবি মাঝে মাঝে।
মুক্তিযুদ্ধ
বীর প্রতীক মেজর (অব.) ওয়াকার হাসানের বর্ণনায় তার একটি খণ্ড যুদ্ধের বিবরণ আছে। যেকোনো হলিউড মুভির অ্যাকশন সিকুয়েন্সকেও হার মানায়। আশাকরি প্রতি সংখ্যাতেই এমন একটা দুইটা ঘটনা উপস্থাপন করা হবে। লেখাটা পড়লেই গর্বে বুকটা ভরে যায়।
ছড়া
ছড়া পড়তে গিয়ে শুরুতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কারণ ছড়াকার আর কেউ নন, ছাগুকূল শিরোমনি আল মাহমুদ। (একই নামের অন্যকেউ সম্ভবত না)। ছড়াটাও এমন আহামরি কিছু নয়। এইরকম ছাগুশিরোমনি থেকে শিশুকিশোরদের যত দূরে রাখা যায় ততই উত্তম। প্রথম আলো হয়তো সে সব জেনে বুঝেই আল মাহমুদ কে বাছাই করেছে। সুজন বড়ুয়ার লেখা পরীক্ষা নিয়ে ছড়াটা বেশ। অলংকরণ সুন্দর। আনিসুল হকের লেখা একটা ছড়া ছিলো। গুড্ডুবুড়া এখন পড়ে কিশোর আলো। শিশুতোষ ছড়া। খারাপ না একেবারে। তবে, সে নিজেই কিশোর আলোর সম্পাদক। নিজের পত্রিকা নিয়ে নিজেই এভাবে ছড়া না লিখে, কয়েকদিন অপেক্ষা করলে ভালো হতো। পাঠক/ফ্যানদের কেউ লিখে ফেলত নিশ্চয়ই। ব্যাপারটা মানাতো। এছাড়া আছে লুৎফর রহমান রিটন ভাইয়ের ছড়া।
বিবিধ
রোয়াল্ড ডালের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারটা ভালো লেগেছে। গোল্ড্বাখ কনজেকচার নিয়ে সৌমিত্র চক্রবর্তীর চমৎকার একটা লেখা আছে। আছে স্কেটিং নিয়ে প্রতিবেদন। ছোটোবেলায় আমার নিজেরও স্কেটিং শেখার ইচ্ছে ছিলো খুব। এই আর্টিকেলটা অনেক আগে পড়লে আমিও হয়তো আবাহনী মাঠে স্কেটিং শিখতে চলে যেতাম। কিশোর চলচ্চিত্র, মুটোফোনের গেম ইত্যাদি নিয়েও লেখা আছে।
বাচ্চাদের গল্প/ছড়া/আঁকিবুকির সেকশন আছে একটা। সেখানে প্রকাশিত ছড়াগুলো দারুণ লাগলো। ইন ফ্যাক্ট বুড়োদের লেখা বাকি যেসব ছড়া ছাপা হয়েছে কিআ তে, তার চেয়ে অনেকগুণে সেরা স্কুলপড়ুয়াদের লেখাগুলো।
সব মিলিয়ে আয়োজনটা ভালোই। শিশুকিশোরদের মধ্যে জনপ্রিয় হবার সব রকম উপাদানই আছে কিশোর আলোতে। কিন্তু ওরা কিভাবে নেয় সেটা বুঝতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। দেশে এরকম একটা উদ্যোগের দরকার ছিলো। প্রতিবছর আনন্দমেলা দেখে ভাবতাম আমাদের দেশেও কেউ এমন কিছু করে না কেন। এবার অন্তত সেই আক্ষেপটা কাটলো। শুধুমাত্র কালি-কলম দিয়ে করা ইলাস্ট্রেশন আমার খুব ভালো লাগে। এ সংখ্যায় এই জিনিসটার অনুপস্থিতি ছিলো। পরের সংখ্যা হয়তো সে অভাব পূরণ হবে। এত এত লেখা-ছবি নিয়ে প্রতি মাসে একটা পত্রিকা বের করা চাপ হয়ে যেতে পারে। অবশ্য প্রথম আলোর লোকবল তো আর কম নয়। দেখা যাক কী করে।
মন্তব্য
পড়ে দেখতে হবে। পত্রিকার নামটা পছন্দ হয়নি অবশ্য। আপনার রিভিউটাও আপনার অন্যান্য লেখার মানের হয় নাই
পত্রিকাটার শুধু অলংকরণ নিয়ে লিখবো ভেবেছিলাম। আর আমার লেখা সবই আবজাব।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
শিশু-কিশোরদের ব্রেইন ওয়াশ কবে থেকে শুরু হবে সেইটা হইল আসল পয়েন্ট। আজকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প আসছে কিছুদিন পড়ে দেখবেন একটা ভাল নরম সরম পরিস্থতির চাপে পইড়া হওয়া রাজাকার নিয়ে গল্প বা ছড়া থাকবে, আল্মাহ্মুদই হয়ত লিখবে। অপেক্ষায় আছি।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
শুরু হবে সম্ভবত কোনো এক সময়। কিন্তু আমরা স্রেফ অপেক্ষায়ই থেকে গেলাম।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
সহমত
........................................................
গোল্ড ফিসের মেমোরি থেকে মুক্তি পেতে চাই
শুধু আমি না, আমার সাথে পুরো জাতি
সবে তো শুরু, কালে কালে আরো কত কিছু দেখবেন, অপেক্ষায় থাকেন।
াল মাহমুদরে মানুষ এত পাত্তা দেয় কেন বুঝি না। তার চেয়ে নির্মলেন্দু গুণ অনেক গুণে ভালো কবি।
সচলের কবিরা অবশ্য ভালো বলতে পারবেন।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
১।
দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের লেখাটার এত প্রশংসা করলেন, কিন্তু সেটাকে আমার মনে হয়েছে ভয়াবহ দুর্বল এক লেখা। এমনকি এক জায়গায় এমন কথাও লেখা হয়েছে, "প্রফেসর শঙ্কুর লেখক সুকুমার রায়"! এই ভয়াবহস্য ভয়াবহ ভুলটি আপনার নজর এড়িয়ে গেল কীভাবে বুঝলাম না।
২।
শুধু পত্রিকার প্রারম্ভিক সংখ্যায় এটিই একমাত্র ভুল, এমনটাও না। আরো কিছু গুরুতর হাস্যকর ভুলভাল আছে। আখতার হুসেনের গল্পে বলা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের "ডাকঘর" নাটকের একটি চরিত্রের নাম "শুভা"। আদতে "ডাকঘর" নাটকে "শুভা" নামে কোনো চরিত্রই তো নেই, নাটকটির একটি অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের নাম "সুধা", সেই সুধাকেই আখতার হুসেন সাহেব বানিয়ে ছেড়েছেন শুভা! আবার নুরুন্নবী চৌধুরী লিখিত গেমস্ বিষয়ক ফিচারে বলা হয়েছে যে হালের জনপ্রিয় ফেইসবুক গেম "ক্রিমিন্যাল কেস" গেইমটি সরাসরি ফেসবুক থেকেই ডাউনলোড করে খেলা যায়, এটা তো সম্পূর্ণ অবাস্তব ও অসম্ভব। এরকম ভুল তথ্য এরা কেন দিচ্ছেন বাচ্চাদের?
৩।
কিশোর আলো তথা কিআ'র(ফালতু একটা নাম হয়েছে, আমার মতে) প্ল্যান-প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে কলকাতার আনন্দবাজার গোষ্ঠীর আনন্দমেলা পত্রিকাটিকে অণুসরণ করছে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ, এমনটা শোনা যাচ্ছে। [অবশ্য আনন্দবাজার গোষ্ঠীর সাথে প্রআ গোষ্ঠীর যোগাযোগ নতুন কিছু না, তাদের নিয়মিতভাবে আনন্দবাজারের একটি টিম নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে বলে জানা যায়। আনন্দবাজারের সাবেক বার্তা সম্পাদক রজত রায় এখন প্রথম আলোতে বিশেষ উপদেষ্টা হিসাবে যোগ দিয়েছেন, তিনি ঢাকাতে অফিসও করছেন বলে জনশ্রুতি লভ্য।]
কিন্তু আনন্দমেলার কিছুদিন আগেও যে মান ছিল, তা থেকে প্রআর কিআ লক্ষ হাত, কোটি হাত দূরে। সেখানে সে যেতেও পারবে না বলেই প্রতীয়মান হয় প্রথম সংখ্যা থেকে।
১)
দেবব্রত মুখপাধ্যায়ের লেখাটা আমি উপভোগ করেছি। আপনার কাছে দুর্বল মনে হলে সেটা আপনার অভিরুচি। শঙ্কু বিষয়ক ভুলটা চোখে পড়েছিলো। টাইপো ভেবে দ্বিতীয়বার ভাবিনি। তবে বাচ্চাদের জন্য লেখায় এ ধরণের ভুল কাম্য নয়।
২) শুভা সুধার ব্যাপারটা খেয়াল করিনি কারণ নামটা মনে ছিলো না। আপনি বেশ খুটিয়ে সব পড়েছেন। এডিটর হিসাবে আপনাকে পেলে যে কোনো প্রকাশকেরই দারুণ লাভ হবে। আর ঠিক, ক্রিমিনাল কেস গেমটা ফেসবুক থেকেই খেলা যায়। ডাউনলোড কথাটা তাই বাহুল্য।
৩)
আনন্দমেলার ফরম্যাটকে অনুসরন করাতে আমি খারাপ কিছু দেখছি না। একেবারে অভিনব কিছু আবিষ্কার করতে না পারলে, প্রচলিত সফল কোনো ফরম্যাট অনুকরণ করায় সমস্যা কী? আর প্রথমার সাথে আনন্দবাজারী দের যোগসাজসের কথা শুনেছি আমিও। কিন্তু সেইসব পলিটিক্স তো এই লেখার বিষয় নয়।
আনন্দমেলা যতবছর ধরে চলছে তত বছর পরেও পারবে না বলছেন? আর কিআ তো মাসিক, আনন্দমেলাও কি মাসিক পত্রিকা? আমি শুধু পুজার সংখ্যা দেখেছি।
একবার ফেসবুকের বইপড়ুয়া গ্রুপের অনেকে মিলে কিশোরদের উপযোগী হৈচৈ নামের একটা পত্রিকা বের করার পরিকল্পনা করেছিলাম। বছর দুয়েক সেটা স্রেফ হৈচৈ তেই সীমাবদ্ধ ছিলো। আমরা করতে পারলে হয়তো, আরো সুন্দর হতো। কে জানে...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আনন্দমেলা আগে মাসিকই ছিল, এখন তা পাক্ষিক। মাসে দুটো করে বছরে চব্বিশটা বেরোয়।
সত্তর ও আশির দশকে আনন্দমেলা পাক্ষিক ছিল।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আরেকটি বিষয়, শঙ্কুর ব্যাপারটি যদি টাইপো-ই হয় লেখকের, তবে সেটা ঠিক করে দেওয়া নিশ্চয় সম্পাদনা টিমের দায়িত্ব? শিশুদের এরকম ডাহা ভুলভাল তথ্য দেওয়ার দায়টা কার্যত সম্পাদনা টিমের ওপরই পড়ে। তবে আপনার লেখাতে বা কমেন্টে কিআর প্রতি একটা বিপদজ্জনক সফট কর্নার থাকার সংকেত পাচ্ছি যেন। ভয় করে। অলমিতি।
পুরাটা পড়ে ফেলছেন, আমারও অলঙ্করণ ভাল লেগেছে।
খালি আলুগ্রুপের পত্রিকা দেইখাই ডর করে সিঁদুরে মেঘ কিনা কে জানে?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বন্ধুবান্ধবরা দুনিয়ার নানান কোনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে। দেশে ফিরে বোরড হচ্ছিলাম। পড়েই ফেললাম তাই।
আপনার ভয়নাই, আলু পড়ে ব্রেইন ওয়াশ হবেন না। কিন্তু ঘটনা কী ঘটতেসে সেইটা তো জানা থাকা দরকার।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
না না... আলু পইড়া ব্রেনওয়াশ হবার বয়স আর নাই... কিন্তু যাদের আছে, তাদের নিয়েই ভয় লাগে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
প্রথম আলু বলেই পড়তে ইচ্ছে হয়নি, দুটো ভালোর সাথে কৌশলে একটা খারাপ কে তারা চালিয়ে দিবে। তারপর অপেক্ষা করবে কোনটা মার্কেট কাটতি বেশি। যেমন এতোগুলো ভালোর মাঝে আল মাহমুদকে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এরপর আনিসুল সাহেব তো আছেনি। নিজের ঢোল কিংবা নিজের পছন্দের মানুষ জনের ঢোল পেটাতে যিনি অদ্বিতীয়। এরপরের পর্বে আসবে মুসা সাহেবের এভারেষ্ট জয়ের কল্পকাহিনী, মুসা আর আনিসুলের শৈশব। আনিসুল হকের ছড়া (প্রথম আলুর সুবাদে তিনি এখন বহুমাত্রিক হুমায়ুন আজাদ কে ও প্রতিভায় ছাড়িয়ে গেছেন)। তারপর হয়তো দেখবো প্রথম আলুর কালামিষ্ট আসিফ নজরুলকে ছড়া কিংবা উপদেশ নামা লিখে ফেলতে। তিনি হয়তো সেখানেও নিরপেক্ষতার শিক্ষা দিবেন শিশু কিশোরদের। বলে দিবেন ৭১ এ ও দেশের মানুষ এতো খারাপ থাকেনি এখন আমরা যে অন্ধকারে আছি। আমি বিশ্বাস করি যতই যত্ন করা হোক জাম গাছ থেকে কখনো আম পাওয়া যায়না, তেমনি প্রথম আলু যতো সুন্দর কিছু দিয়ে শুরু করুক দিন শেষে তারা ঠিকি তাদের চেহেরায় ফিরে আসবেই।
মাসুদ সজীব
আপনি যে যে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন তার সবই সম্ভবত তারা করবে। তাদের মিডিয়া, তাদের কন্ঠেই কথা বলবে। আপনি ঐ পত্রিকা হাত দিয়ে ছুঁয়ে না দেখলেও দেশের অনেক শিশু-কিশোরই সেটা দেখবে। এই নতুন প্রজন্মের প্রতি সত্যিই মায়া থাকলে আপনি-আমি কিছু করতাম। কিন্তু না। আমরা আছি অপেক্ষায়। কবে প্রথম আলো তাদের স্বভাব সুলভ আচরন শুরু করে, সেই অপেক্ষায়...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
এই নতুন প্রজন্মের প্রতি মায়া থাকলে আমরা কিছু করতাম। একেবারে আমার মনের কথা। মুখের কথায় উজির-নাজির মারা যায়। সহজ কাজ। মাঠে নামতে কেও রাজি নয়।
দহন ভাই পরিবর্তন একদিনে আসে না। তাই একদিনে উজির নাজির মারা যায় না, আপনি আপনার চারপাশের পরিচিত গন্ডিটাকে আগে সচেতন করেন, তাদেরকে সঠিক পথটা দেখান দেখবেন পরিবর্তন ঠিকি আসবে। পুরো দেশ না পারলেও আমিতো আমার কাছের মানুষগুলো সচেতন করতে পারবো এবং আমি সেই চেষ্টাই করি। ব্লগে যারা লেখালেখি করে তারাও উজির নাজির মারার জন্যে লেখে না। লেখার মূল উদ্দেশ্য সচেতনতা সৃষ্টি করা।
মাসুদ সজীব
"ধুরন্দর" শব্দের বানানটা কি ঠিক আছে? আমি তো এতদিন "ধুরন্ধর" বানানটাকে সঠিক ভাবতাম
আমারই ভুল। ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কিআ এখন অনলাইনেও পাওয়া যাচ্ছেঃ http://www.prothom-alo.com/kishoralo
পড়ার পর রিভিউর সাথে মিলিয়ে দেখবো
কিআ- এখনো পড়িনি বা দেখার ইচ্ছেও ছিলো না- শুধুমাত্র প্রআ- এর বলে। তবে উপরে দেখলাম অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে আর এই রিভিউটা পড়ে- দেখিই না কেমন হলো!
-এস এম নিয়াজ মাওলা
আমি গত ঈদে বা নববর্ষে প্রথম আলো-র প্রকাশিত শিশু-কিশোরদের একটা সংখ্যা বাজারে দেখেছিলাম, হাতে নিয়ে নেড়ে-চেড়ে দেখে ভালোই লেগেছিলো। সেদিন একেবারেই টাকা ছিলো না সাথে, তারপরেই শুনি সব কপি শেষ। এবারও খুঁজলাম, আগেই শেষ! এটাই কি এখন মাসিক হিসবে বেরুবে?
কিআ - নামটা সায়েন্স ফিকশনের চরিত্রের মতো লাগলো। নিজে না পড়ে রিভিউ বা পত্রিকা নিয়ে মত দিতে পারছি না। অনলাইন সংস্করণ পড়ে আরাম পাই না, তাও দেখবো।
বাংলাদেশে তো একেবারেই শিশু-কিশোরদের উপযোগী কোন নিয়মিত পত্রিকা নেই। রিটন ভাইয়ের 'ছোটদের কাগজ'-এর প্রতিটা সংখ্যা আছে আমার কাছে এখনো। সেটার থেকে বেশিদিন চলেছে সেবা প্রকাশনীর 'কিশোর পত্রিকা'। কিশোর পত্রিকারও শুরু থেকে শেষ প্রায় প্রতিটা সংখ্যা আছে। দুইটাই শেষ পর্যন্ত ফিনান্সিং-এর অভাবেই বন্ধ হয়ে গেছে মূলত। এমনকি সেবাও বলতে বাধ্য হয়েছিলো ভর্ত্তুকি দিয়ে আর চালান যাচ্ছে না অত চমৎকার পত্রিকাটা। অথচ 'রহস্য পত্রিকা' এখনো চলছে। খুবই আফসোসের কথা।
শিশু একাডেমী-র শিশু পত্রিকাও একসময়ে নিয়মিত নিতাম। এটার মূল সমস্যা হলো শিশু একাডেমী থেকেই সংগ্রহ করতে হয় পত্রিকাটা। তাও আবার ছোট শহরে একাডেমী না থাকলে মুশকিল। আর রাজশাহীতে একবারে লট ধরে কয়েক মাস পরে-পরে আসতো তখন। তাও ভালো যে একদা নিয়মিত সদস্য ছিলাম, তাই নিয়মিত পাওয়াও হতো। শিশু পত্রিকা কি এখন আর বের হয়? জানেন কেউ? বাৎসরিক গ্রাহক হবার ইচ্ছা আছে। দেখি একদিন একাডেমীতে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে, অফিস আওয়ারে এগুলো করা হয়ে উঠে না। পত্রিকার মান সে সময়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হতো। আর ঈদ সংখ্যায় থাকতো শিশু-একাডেমী থেকে প্রকাশিত একটা করে উপন্যাস! ইশ! দেখি নিজের ছোটবেলার একটা বাৎসরিক সমগ্র বের করে পড়বো এই ঈদের ছুটিতে!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আমি তো শিশু থাকা অবস্থায়, শিশুকিশোরদের জন্য যে আলাদা পত্রিকা আছে তা-ই জানতাম না! তুমি দেখি ছোটোবেলা থেকেই অনেক কিছু পড়তে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কিশোর আলো কিনলাম দশটাকা বেশী দিয়ে - রাজশাহীতে শেষ হয়ে গেছে, বগুড়া থেকে আনাটে হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কথা বলে দশ টাকা বেশী নিলো। প্রসঙ্গটা টানার উদ্দেশ্য হলো পত্রিকাটা কিন্তু লোকজন কিনছে এবং পড়ছে। আমাকেও যেমন কিনতে হলো ছেলের আবদারে। সে এটা চাইছে কারণ এটাতে মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা আছে (সে আবার জাফর স্যারের হুলুস্থুলু ফ্যান, আমার থেকেও বেশী!)। কেনার পরে পড়ে মনে হলো - খারাপ তো করেনি! দেশে যেখানে বাচ্চাদের জন্য পত্রিকাই নেই, সেখানে এর মান তো অনেক ভালো! তবে হ্যাঁ, আমি মনে করি সচেতন থাকতে হবে যেন ওরা বেনোজল ঢোকাতে গেলে সেটা দেখিয়ে দিতে পারি।
যাযাবর ব্যাকপাকারের মন্তব্য পড়ে ছোটবেলায় পড়া পত্রিকাগুলো এক ঝলক বয়ে গেলো মনের আয়নায়। শুরুতে পেয়েছিলাম কিশোর বাংলা (ভাইয়ার কালেকশন)। এর পর একে একে এলো শিশু, নাটাই, রংধনু, ইতুলমিতুল, কিশোরকন্ঠ (হ্যাঁ, জামাত-শিবির চক্রের এই পত্রিকাও কিছুদিন পড়েছিলাম), ময়ুরপঙ্খী, সাম্পান (এগুলো ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের পত্রিকা), জুঁইপা (যতদূর মনে পড়ে রিটন ভাইয়ের), কিশোর পত্রিকা, ছোটদের পত্রিকা --- ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন তো আর কোন ছোটদের পত্রিকা দেখি না, জানেন নাকি কেউ এ ব্যাপারে?
____________________________
নতুন মন্তব্য করুন