টুকরো কথা ১

স্পর্শ এর ছবি
লিখেছেন স্পর্শ (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/০৭/২০২৪ - ১১:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।
শিক্ষার্থীরা শাটডাউন ডাক দিছিলো। আগের যুগে যাকে আমরা হরতাল বলতাম। কী আর এমন করতো এরা? রাস্তা ঘাট আটকায় রাখতো হয়ত দুএক বেলা। কিন্তু সরকার আগ বাড়িয়ে, শাটডাউনের বাপ তথা ‘ব্লাক আউট’ করে দিলো সারা দেশে। ৫ থেকে ১০ দিন দেশ ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন।

আমি বিদেশে থাকি, লোকাল দেশি বাজারে আম্রপালি আম পাওয়া যায়। কিনতে গেছি। এই এলাকায় দেশি প্রবাসি শ্রমিকদের আগাগোনাই বেশি। চারিদিকে বাঙলা। লোকজনের ফোনে দেশ থেকে আসা নানা রকম বিভৎস ভিডিওর শব্দ পাচ্ছি। সবার মুখ থমথমে।

বেশ কিছু দেশী খবরের কাগজের ওয়েবসাইটই বন্ধ মনে হলো। যে দুয়েকটা খোলা, তাতে ১৯ তারিখের পরে আর কোনো আপডেট নেই। বাংলাদেশের হারুক্রিকেটটিম যখন কোনো ম্যাচ খ্যালে, তখনই একটু পরপর খোঁজ নিই ক্রিক-ইনফোতে। আর দেশে এমন একটা ক্রাইসিস এর মধ্যে সব রকম খবরাখবর বন্ধ। দেশে বাবা-মা, ভাই, বন্ধুরা কেমন আছে?

২।
দেশ থেকে আসার সময় অনেক সময়ই প্লেনে প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধা ভাইএরা থাকেন। তাদের সাথে কথা বলি টুকটাক। এদের অনেকেই ৫ থেকে ৮ বছর পর একবার দেশে যান। ভ্রমণ করে-করে টাকা নষ্ট যেন না হয়। খুব যে বেশি বেতন পান তাও না। সব টুকু সঞ্চয় করেন দেশে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। কী অবর্ণনীয় পরিশ্রম যে করে। এইসব চকচকে বিদেশ দেখে আমরা ভুলে যাই, যে এর প্রতি ইঞ্চি নির্মান ও মেইন্টেইন করায় হাত কাদের। প্লেন ঢাকার কাছাকাছি চলে এলেই, সিট ছেড়ে জানালা দিয়ে নিচে তাকানোর জন্য উৎসুক হয়ে ওঠেন অনেকে। একবার জানালা দিয়ে ঢাকার কঙ্ক্রিটের জঙ্গল দেখা মাত্র আমার সহযাত্রী সোল্লাশে দাঁড়িয়ে দুহাত উচু করে চিৎকার করে উঠলেন, ‘বাংলাদেশ, আমি আইসা পড়ছি’! কেবিন ক্রু সবাইকে বার বার বলছেন সিট বেল্ট বেঁধে ফেলতে। প্রবাস ফেরত শ্রমিক ভাইদের এই 'আনরুলি' আচরণ নিয়ে অনেককে অভিযোগ করতে শুনি। তাদের নাকি লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায় এতে। কিন্তু আমি তাদের আবেগটা বুঝি। যে কষ্ট এই প্রবাসী ভাইদের দেওয়া হলো, তার একটা প্রভাব থাকবেই। কী প্রভাব তা এখনই বলা যাচ্ছে না, তবে অনুমান করা যাচ্ছে।

৩।
দেশে প্রচুর ছেলে-মেয়ে আউটসোর্সিং করে। দেশে থেকে বিদেশে রিমোট জব করে। এদের শুধু সাময়িক ক্ষতিই নয়, পার্মানেন্ট ক্ষতি হলো। কারণ, এর পর এরকম ‘আনরিলায়েবল’ দেশের কর্মীকে কে কাজ দেবে? দিলেও, এসব রিস্কের কথা বলে, টাকা কমিয়ে দেবে।

৪।
খবরে পড়লাম জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিসে সরকার। এই দাবী করা হইসিলো গণজাগরণ মঞ্চের সময়ই। তা প্রায় ১০ বছর আগে। তখন, নিষিদ্ধ করেনাই। ইচ্ছে করে জিয়ল মাছের মত জিইয়ে রেখেছিলো। যেন সেই জুজুবুড়ির ভয় দেখিয়ে সব ধরনের সমালোচনার পথ বন্ধ করা যায়। এখন সম্ভবত সেই প্রয়োজন ফুরিয়েছে। বেটার লেইট দ্যান নেভার। অবশ্য, সমালোচনা বন্ধ করার নতুন কোনো পন্থা আবিষ্কার হইসে নিশ্চয়ই। কী সেই পন্থা, তা শিঘ্রই আমরা দেখতে পাবো।


মন্তব্য

তাসনীম এর ছবি

বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো ছাত্র হত্যা করে কোন সরকার ক্ষমতাতে থাকতে পারেনি আর অন্য দিকের হিসেব বলে লীগ সরকারকে কেউ গণ আন্দোলনে হটাতে পারে নি। তবে এইখানে একটা কথা আছে। একটি রাজনৈতিক দলের পরীক্ষা হয় বিরোধী দলে থাকলে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুটোই রাজপথে আন্দোলন করা দল। দুটো দলই দীর্ঘসময়ে বিরোধী দলে থেকে রাজনীতির পরীক্ষাতে পাশ করেছে।

কিন্তু যেই দলটি গত ১৫ বছর ক্ষমতা দখল করে রেখেছে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে সেই দলটি অবধারিতভাবে রাজনীতির পরীক্ষাতে বসেনি দীর্ঘদিন। নামে আওয়ামী লীগ হলেও এটা আসলে লীগের কংকাল এবং আপাদমস্তক স্বৈরাচারী একটি দল। বহুদিন পড়া ফাঁকি দিয়ে তারা পরীক্ষাতে বসেছে। প্রথমপর্বে নিশ্চিত ফেল, আন্দোলনের রাজনৈতিক মোকাবেলা না করতে পেরে তাদের আর্মি ডাকতে হয়েছে, কার্ফিউ দিতে হয়েছে। রাজনৈতিক দল লীগকে খুঁজে পাবেন না এই কংকালে।

জামাত আর বিএনপির পেছন থেকে আন্দোলনের মাথায় কাঁঠাল ভাঙার প্রসঙ্গও এসেছে। এটা না হওয়ার কোন কারণ নেই। এই সুযোগ তাদের না ছাড়ারও কোন কারণ নেই। বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে লীগ। কিন্তু জামাতকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করে নি। ১৯৭১ সালে ভূমিকার জন্য জামাতকে নিষিদ্ধ করা যেত, সেটা করে নি তারা, জামাতকে মাঠে থাকতে দিয়েছে যেন সময়ে অসময়ে জুজুর ভয়টা জিইয়ে রাখা যায়। এর বাইরে ৫০০ মডেল মসজিদ, কাওমী মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দিয়ে এবং মদিনা সনদে দেশ চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মৌলবাদীদের কাছে টেনেছে, গদী নিরুপদ্রব করার জন্য। দিনে দিনে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে লীগ একটি সফট ইসলামিস্ট দলে পরিণত হয়েছে। ১৯৭১ সালের চেতনা থেকে বহু বহু দূরে যার অবস্থান।

কিন্তু কেউ ভাবতে পারেনি, মাত্র কয়েকদিনের আন্দোলনে ৭০ বছরের বেশি বয়েসী দলটিকে আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনতে বাধ্য করবে অর্বাচীন কিছু ছেলে মেয়ে যাদের টিকটক প্রজন্ম বলে অভিহিত করা হয়। একচক্ষু হরিণী মতো আওয়ামী লীগ ভেবেছিল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে মৌলবাদীরা কিন্তু বিপদ এসে উপস্থিত অন্য দিক থেকে। আন্দোলনকারীদের জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে লীগের ১৫ বছরের শাসন আমলে। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে লড়া লীগকে এরা দেখেনি, ১৯৭৫ এর পরের দুঃসময়ের লীগকে এরা দেখেনি - এরা দেখেছে চোর, বাটপার, লুটেরা, ক্ষমতালোভী দলটিকে - যারা যখন তখন পকেট থেকে ১৯৭১ কে বের করে - মূলত প্রতিপক্ষকে নানান তকমা দেওয়ার জন্য। ওরা কেন মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করছে না? কেননা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দলটিই বহু আগেই শুধু পোশাকের মতো ধারণ করেছে ১৯৭১ কে, হৃদয়ে ধারণ করে নি। জিয়া আর এরশাদ যেটা চেষ্টা করেও পারেনি - মুক্তিযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত নির্বাসনে পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগ।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

স্পর্শ এর ছবি

গোছানো মন্তব্যটার জন্য ধন্যবাদ তাসনীম ভাই। আমার মানসিকভাবে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় লেখা এই খাপছাড়া লেখাটার তুলনায় আপনার মন্তব্যটিই অনেক গোছানো, এবং বিশ্লেষণী হয়েছে। এটাই মূল পোস্ট হলে ভালো হতো।

বর্তমান ঘটনাবলি দেখে আওয়ামীলীগ এর জন্য খারাপ লাগছে। এত অধঃপতন! এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে বিভিন্ন অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সহ-সচলদের অনেকের নীরবতা (ব্লগে না হলেও এমনকি ফেসবুকেও) খুব বেশি চোখে লাগছে। আওয়ামীলীগ হয়তো এবারের সংকট জলপাই রঙের রথে চড়ে সামলেই ফেলবে। কিন্তু, দেশের মঙ্গলের জন্য হলেও, তাদের উচিত হবে একটা বিরোধীদল সৃষ্টি হতে দেওয়া। জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সেই পথে একটা ফার্স্ট স্টেপ। সেকেন্ড স্টেপ হবে, কেউ বিরোধী কিছু বললেই ধরক পাকড় মারা-মারি না করে তাদের মত টা শোনার মানসিকতা সৃষ্টি। এভাবেই ধীরে ধীরে একটা সুস্থ্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। ভারতের সাম্প্রতি কিছু পার্লামেন্টারি ডিবেট দেখলাম। রীতিমত ঈর্ষা হল! আমাদের দেশে কবে আমরা এমন দেখতে পাবো?!

অবশ্য এখন আর ব্লগের গুরুত্ব নেই। ফেসবুকের জয়জয়কার। তবে ফেসবুকেও আজকাল এক ধরনের 'মাজলের' সম্মুখীণ হচ্ছি। যেমন একবার পুতিনকে নিয়ে এক পোস্ট লেখায়, আমার পোস্টে 'পুতিন' টোকেন টা ডিটেক্ট করে সেই লেখা আর পোস্টই হতে দেয়নি ফেসবুকের এলগরিদম। তারপর নানা রকম মারফতি কারণ দেখিয়ে পোস্ট হাওয়া করে দেওয়া, এবং সরকারি ব্লক তো আছেই। আগে যেমন ব্লগ লিখে খুব দেশ উদ্ধার করব ভাবতাম। (করেছিলামও তো!) এখন আর তা ভাবি না। তবে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য একটা জায়গা সম্ভবত দরকার। যেখানে অফিসের কলিগ, আর বাবা, মামা, চাচা, খালুদের উপস্থিতি নেই। দেখি সচলায়তন তাদের 'রিড-ওনলি' মোড সত্যি সত্যি ইমপ্লিমেন্ট করে ফেলার আগ পর্যন্ত যদি কিছুমিছু লেখা যায়।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

ইউটিউবে অনেক ভিডিও দেখতে পাচ্ছি, সব আনন্দ উল্লাসের ভিডিও, গণভবন দখলের ভিডিও, কোথায় নাকি বঙ্গবন্ধুর মুর্তি ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। সবাই বলছে এটা "দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ", আর আজ হলো তার "স্বাধীনতা দিবস"। লোকজন "আলহামদুলিল্লাহ", "মাশাল্লাহ" আর "তাকবীর আল্লাহু আকবর" লিখে ভরিয়ে ফেলছে কমেন্ট বক্সে। অনেকে নাকি দুই রাকাত নফল নামায পড়ে কেঁদে কেঁদে দোয়া করছে এই মুক্তিযুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দের জন্য। কমেন্ট দেখছি এপাশ ওপাশ থেকে অনেকে ফাঁকতালে বলছে, "এবার দেশে মনে হয় ইসলামী শাসন হলে ভাল হয়", "এর একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্রের প্রস্তাব রাখছি", ইত্যাদি, সেই কমেন্টগুলোতে আবার অনেক লাইক।

কোনদিকে যাচ্ছে মনে হয়?

স্পর্শ এর ছবি

ফেসবুক আর ইঊটিউবে কমেন্ট করে বস্তা-পঁচা-বৃদ্ধ-বাতিল মালেরা। (সাথে আছে টাকা দিয়ে কমেন্ট ফার্মিং)। তাই নতুন জেনারেশন, যাদের আমরা জেন-জি বলি তাদের মনোভাব জানতে ফেসবুক ইউটিউবের কমেন্ট পড়লে অবস্থা আওয়ামীলীগের মতই হবে। কেমন দেশ ওরা চায়, তা প্রকাশ করতে ঢাকার প্রায় সব দেয়ালে দেওয়াল লিখন ও গ্রাফিটি করেছে ওরা, দেখে নেবেন। খবর পেয়েছি এসবের একটা প্রদর্শনীও হচ্ছে দৃক এ।

যে আন্দোলন থেকে শেখ হাসিনার খুনিরূপটি উন্মোচিত হলো, সেই আন্দোলনে মেয়েদের বিপুল ও সক্রিয় অংশগ্রহন আমাকে অনেকখানি নিশ্চিত করেছে, যে এই দেশ জঙ্গিদের ক্ষপ্পরে যাবে না। আমাদের নারীরাই তা হতে দেবে না।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সত্যপীর এর ছবি

ছাত্রছাত্রী হত্যার দায় সরকারকে নিতে হবে। ইন্টার্নেট ব্ল্যাকাউট করে আর্মি নামায় কার্ফিউ বসানো পর্যন্ত না গিয়ে এদের এরেস্ট করা হলনা কেন সেইটা আসল প্রশ্ন। কথার আগে গুলি ছোঁড়ার কালচারের দায় সরকারেরই।

..................................................................
#Banshibir.

স্পর্শ এর ছবি

কবি বলেছেন, "বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস।"


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।