আমাকে একবার কেউ একজন প্রশ্ন করেছিলো, ‘খুব সুন্দর কিছু দেখলে কী ইচ্ছা হয়?’ সেদিন লোকলজ্জায় উত্তরটা দিতে পারিনি। কিন্তু কিছু একটা তো হয়ই। যেমন আমার আসলে মনে হয় ‘খেয়ে ফেলি’! সুন্দর একটা কবিতা পড়লাম, মনে হল ‘খেয়ে ফেলি’! যে কারনে আমার প্রিয় ফুল শাপলা! কারণ এইটা খেয়ে ফেলা যায়। ফুলকপিও প্রিয় হতে পারত। কিন্তু ফুলকপির চেয়ে শাপলা খেতে বেশি মজা। তো হয়েছে কি, সব সুন্দর জিনিশ তো আর খেয়ে ফেলা যা...
আ-দেখলেপনা (আব্জাব)
দ্বাররক্ষীদের মনে হয় কোনো ইউনিভার্সেল হ্যান্ডবুক আছে। যেখানে আমার চেহারার বর্ণনা দিয়ে লেখা- ‘এই যে, এই ধরণের ব্যক্তি হলো সন্দেহ ভাজন’। নইলে গেটম্যানওয়ালা কোনো দরজার সামনে গেলে তারা আমার দিকে চোখ সরু করে তাকাবেই বা কেন? আর প্রতি দশজনে আটজনই বা কেন আমাকে আটকাবে? বিভিন্ন রকম আইডি, নাম-ধাম, সিগনেচার দিয়ে তবেই নিস্তার। এ কারণেই গার্ডওয়ালা কোথাও যেতে হলেই আমার ‘...
১. ঘরকন্না
বাড়িতে খুব হইচই। কিছুক্ষণ পরে পরেই হাড়ি-পাতিল-চামচের ঠুনঠান আর আর ছোটো বোনদের চেচামেচি কানে আসছে। আজকে বিশেষ দিন। আজকে ওরা রান্না করবে। সেই সকালে উঠে মাকে রান্নাঘর থেকে বিতাড়িত করেছে। অবশ্য কাজের মেয়েটাকে বিতাড়িত করার মতো সাধ্য হয়ে ওঠেনি এখনো কারো। আজ দুপুরে সব খাবারের দায়িত্ব ওদের। আমার ঘরের বন্ধ দরজা ভেদ করে তাদের রন্ধনযজ্ঞের রব কানে আসছে। সে রবের তন্ত্র-ম...
কবিতা আমি এমনিতেও তেমন বুঝি না। তার উপর আমি জানি আমার কাব্যরুচি নিম্ন। তাই কখনো কোনো কবিতা পছন্দ হয়ে গেলে নিশ্চিত হয়ে যাই যে, এইটা আর যাই হোক উন্নতমানের কিছু না। বন্ধু কবিরাও আমার কবিতার এই নিম্নরুচির কথাটা জানে। তাই তাদের লেখা কবিতা ভালো লেগে গেলে চুপ মেরে বসে থাকি। ওরাই অনেক সাধাসাধি করে-‘পড়েছিস? এখনো পড়িসনি? কবিতা পোস্ট করে দিয়েছিতো। শিগ্গিরি পড় গিয়ে’। তারপরই জিজ্ঞেস করবে ক...
১.
এইতো সেদিন যখন ঢাকায় এলাম, তার আগেও আমার দেখা সব চেয়ে উঁচু বিল্ডিংটা ছিলো তিন তলা। আমরা বলতাম, ‘খলিল সাহেবের দালান’। যেবার দালানের তিন নম্বর তলার ছাদ কমপ্লিট হলো, খলিল সাহেব সেখানে জলছাদ দিবেন বলে মনস্থির করলেন। জলছাদ কেমনে দেয় তা আমরা জানতাম না। তবে একদিন কোথা থেকে অনেক সুড়কি চলে এলো। আর এলো জনাবিশেক মহিলা। সুড়কিগুলোকে জোগালেরা বলতো চিপ। তারা সিঁড়ি বেয়ে সেইসব চিপ ছা...
আদরের কিটি,
আজকাল চশমা ছাড়া ভালো দেখছি। চশমা পরলেই কেমন যেন ঝাপসা লাগে সব! চোখ ভালো হয়ে গেলো, নাকি চশমা ঘোলা হয়ে গেল কে জানে। এই চশমাটা বদলানো লাগলে ঝামেলা হবে। কেমন যেন মায়া পড়ে গেছে। অবশ্য বদলাতে হলে শুধু লেন্স বদলানো যায়। কিন্তু চশমাটার যে গঠন তাতে লেন্সদুটোই তার সব। তাদের বাদ দিলে তো বাকি থাকে শুধু নাকের উপর চেপে বসার ক্লিপ আর কান টেনে ধরার ডাটি। তাহলে লেন্স পালটিয়ে ফেলার পরে ...
ছোটকাকুর সাথে বাইরে বেরহলে অদ্ভুত সব জিনিস দেখি- ইউক্যালিপ্টাস বন, ব্রডগেস লাইন, জোড়া দিঘি আর জটাধারী বট। হয়তো কোনো একদিন বিকালে এসে বলবে, ‘চল তেপান্তরের মাঠ দেখে আসি’। আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠলে, তুলে সাইকেলের পিছনে বসিয়ে বলবে, ‘শোন, শক্ত করে ধরবি, আর সাবধান, পা যেন যায় না চাকার মধ্যে! সব চেয়ে ভালো হয় যদি পা দুটো অ্যারোপ্লেনের পাখার মত ছড়িয়ে রাখিস।’ ছোটো কাকুর সাইকেল আমাকে ছোটো রাস্তা...
বন্ধুটি আমার বড়োই পড়ুয়া। তার জ্ঞান-গরিমাও কম নয়। সব সময়ই তার বগলে ছোটো-বড়ো, মোটা-পাতলা, কোনো না কোনো সাইজের একটা বই থাকেই। ব্যাগের মধ্যে থাকে আরো গোটা চারেক। তার চোখ দিয়ে ঠিকরে ঠিকরে বের হয় জ্ঞান। আর সে মাঝে মাঝে একটা চশমা ঠেলে সেই জ্ঞান আটকানোর চেষ্টা করে। তো এমন বন্ধু একদিন এসে দুম করে বলে বসলো, “শোন, নারীসঙ্গ পরিত্যাজ্য”। দাবী গুরুতর। নিশ্চই জ্ঞানগর্ভ কোনো কারণও আছে এর পিছনে। আ...
সে
[নিজেকে নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে এই সিরিজের সূচনা। দুই হাতে লেখার এক্সপেরিমেন্ট! যথারীতি আব্জাব গল্প। বিশেষত্ব হচ্ছে আমি ঘন্টায় কয়টা গল্প লিখতে পারি এটা তার একটা স্ব-পরীক্ষা। গল্পের মান সম্পর্কে তাই কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছিনা। হিসাবের জন্য মোবাইলে টাইমার অন করেছি। টিক্ টিক্ টিক্ ... গল্প শুরু হলো!]
প্রথমে সে ছিলো না।
তারপর সে এলো।
এক অচিন আলোয় উদ্ভ...
ঠা-ঠা রোদে পিয়ারীমোহন রোডটা কেমন যেন দুলতে থাকে। আমরা যারা টেপির বাড়ির দেয়ালে বসে থাকি তারা ভাবি, ব্যাপার কী, রাস্তা নাচে কেন! কেউ একজন একটু নিরিখ করে বলে, মনে হয় রোদে পাশের ড্রেন দিয়ে ভাপ উঠছে। আরেকজন বলে, ড্রেন দিয়ে ভাপ উঠলে রাস্তা নাচবে কেন?