সূত্র:www.rolex.com/.../tennis-roger-federer.jsp
রজার ফেডেরার কে নিয়ে আমার মুগ্ধতার শুরু ২০০৪ থেকে,মূলতঃ এই সময় থেকেই তার খ্যাতির সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করা। আমারই প্রজন্মের,আমার কাছাকাছি বয়সের,টল হ্যান্ডসাম লুক প্রথমে আমাকে মুগ্ধ করলেও ক্রমশঃ ভক্ত হয়ে পড়ি তাঁর খেলার সৌন্দর্যের।২০০৪ থেকে টানা ২০৭ সপ্তাহ বিশ্বের এক নম্বরে থেকে আজই পরীক্ষা দিলেন তিনি তৃতীয় রাউন্ডে অষ্ট্রেলিয়ান ওপেনের। প্রথম দু'টো রাউন্ড হেসেখেলে পার হলেও আজ চুড়ান্ত প্রতিযোগিতামূলক খেলায় সর্বিয়ান ইয়াঙ্কো টিপসারাভিচ তুমুল প্রতিযোগিতার মুখোমুখি করে এই বিশ্বসেরা কে 6-7 (5), 7-6 (1), 5-7, 6-1, 10-8 সেটে। বিশেষতঃ শেষ সেটতক ফেডেরারের ফল্ট এবং আনফোর্সড এরর গুলো প্রায়ই ভয় ধরিয়ে দিচ্ছিলো টেনিস দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আপসেট আজই ঘটে যেতে পারে। তার ওপর আ্যন্ডি রডিকের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বিদায় অনেকটাই অপরিচিত জার্মান ফিলিপ কোলশ্রেইবারের কাছে এবং মারাট সাফিনের মার্কোস বাগদাতিসের কাছে খুবই ভালো খেলার পরেও অপ্রত্যাশিত হার এবারের ২০০৮ অষ্ট্রেলিয়ান ওপেনের মাত্র দ্বিতীয় রাউন্ডেই অনেকগুলো অঘটন ঘটিয়ে দিয়েছে এবং তাবৎ টেনিসপ্রেমীদের বাধ্য করেছে অবাছাই বা নন-স্টার প্লেয়ারদের দিকে চোখ তুলে তাকাতে।
তারপরও স্বস্তির বিষয় এই যে,আজ শেষ হাসি রজারই হেসেছেন কিন্তু ম্যাচ শেষে কমেন্টেটর জিম কুরিয়ারের কাছে স্বীকার করেই ফেললেন এটি তার খেলার সবরকমের স্কিল আর ধৈর্যেরও চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিলো,এবং সাধুবাদ জানালেন ইয়াঙ্কোকে এই বলে যে এরকম সময়ই মনে হয়,টেনিসে ড্র ব্যাপারটা থাকলে মন্দ হতো না,কিন্তু পরিতাপের বিষয় একজন না একজনকে জিততেই হয়,সৌভাগ্যবশতঃ আজ সেটা আমি। ঠিক এইরকম ভদ্র খেলোয়াড়সুলভ পেশাদারিত্ব অথচ সংবেদনশীল মনোভাবের জন্যই ফেডেরারকে প্লেয়ার হিসেবে পছন্দ আমার।লেটন হিউয়িটের মত উগ্র নন,আ্যন্ডি রডিকের মত মেজাজ গরম নন, এমনকি সবচাইতে বদমেজাজী এক কালের টেনিস কোর্টের কিং জন ম্যাকেনরো পর্যন্ত তাঁর ভদ্রতায় মুগ্ধ।
খ্যাতির শীর্ষে এবং এতখানি চাপের মধ্যে থেকে(৩কোটি ৮৭ লক্ষ ডলার কেরিয়ার প্রাইজমানি আজ অব্দি,চাপটা সহজেই অনুমেয়)এই 'কুল' বজায় রাখাটা আমাকে মুগ্ধ করে।
সূত্র:english.peopledaily.com.cn/200505/17/eng20050...
কেমন খেলে আমাদের ফেডেক্স?
ওয়েল,২৬ বছরের ৬ ফিট ১ ইঞ্চি লম্বা ৮০.৫ কেজি ওজনের রজারকে চিকনই বলা যায়,বিশেষতঃ এবার গ্র্যান্ডস্ল্যাম পূর্ববর্তী মুরগি অথবা ভীল খেয়ে "টামি বাগ"(সোজা বাংলায় পেট খারাপ )নিয়ে স্টমাক ফ্লু হয়ে হাসপাতাল ঘুরে বেশ নাজেহাল অবস্থাই গেছে তাঁর এ মৌসুমের শুরুতে,যার ফলাফল কুয়ঙ্গ কাপ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়া আর সে হিসেবে আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ প্রস্তুতি না নিয়েই অষ্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলতে নামা। কিন্তু একমাত্র রজার ফেডেরারের পক্ষেই সম্ভব,এর পরও ক্রমাগত ফর্মে থেকে চমৎকার পারফর্ম করে যাওয়া,তবে আজ খেলার শেষ দিকে এই প্র্যাকটিস না থাকাটা বেশ ভুগিয়েছে তাঁকে মনে হলো।
সাধারণতঃ টিপিক্যাল ডানহাতিদের মতোই ফোরহ্যান্ড সবচাইতে শক্তিশালী আইডেন্টিফায়ার তাঁর,যা দিয়ে স হজেই আলাদা হন ওবারউইলবাসী সুইস এই লিভিং লেজেন্ড।
সূত্র:www.abc.net.au/.../2007/05/21/1928059.htm
মাইল্ড ইস্টার্ণ আর সেমি ওয়েস্টার্ণের মাঝামাঝি এই স্টাইলে তাঁর হাত থাকে টেনিস রাকেটের মাঝের একটু নীচে যা দিয়ে টপস্পিন শট বা ফ্ল্যাট শট দুইই স্বচ্ছন্দ তাঁর হাতে। খুব এক্সট্রিম টপ স্পিন শট উৎপাদনেও পারদর্শী এই তীব্র গতিময় খেলোয়াড়ের ক্রস কোর্ট আ্যঙ্গেল জেনারেট করাটা একটা তাকিয়ে দেখার মতো জিনিস,এবং এটি আরও চমকপ্রদ এই কারণে যে,বল তীব্রগতিতে হিট করতে করতেই এই আ্যঙ্গেল তিনি তৈরি করতে পারেন,সারা কোর্ট জুড়ে টগবগিয়ে রেসের ঘোড়ার মতো দাপিয়ে চলার মতো সময়েই অতি স্বচ্ছন্দে। সারা কোর্টব্যাপী খেলা,as opposed to কোন একটি বিশেষ দিক (রাইট অথবা লেফট সাইড)অথবা কোনো একটি বিশেষ পজিশন(সেন্টার কোর্ট বা সাইডলাইন) এর প্রতি পক্ষপাতিত্বহীনতাই তাঁর খেলার বৈচিত্র্য অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অনেক বোদ্ধার মত। তবে হ্যাঁ, ওয়ান হ্যান্ডেড ব্যাক হ্যান্ড তাঁর অন্যতম দুর্বলতা যেটা গত ক'বছরে কাটিয়ে ওঠার ভালো চেষ্টা করেছেন স্টেফান এডবার্গ আর বরিস বেকারকে আদর্শ মানা ছ'বছর বয়সে টেনিস শুরু করা এই সিংহ রাশির জাতক। আমি ভক্ত তাঁর চাপে পড়লে চারটা সার্ভিস মেরে স্ট্রেইট একটা গেম নিয়ে নেয়ার,যেটা বহুকাল আগে গোরান ইভানিসেভিচের একচেটিয়া স্টাইল ছিলো। আরও একটা দুষ্টুমি আছে,দুষ্টুমি বলছি এজন্য যে,সব খেলোয়াড়ই এটা জানে,তারপরও ধরাশায়ী হয় - সেটা হলো,সেন্টার কোর্টের মাঝামাঝি যেয়ে আলতো করে বলটাকে নেটের ওপারে পাঠিয়ে দেয়া, বেচারী প্রতিপক্ষের ছুটে আসতে আসতে বল মাটিতে আর অবধারিত পয়েন্ট! আর তখনই সেই দুষ্টু মিষ্টি হাসি, ঠিক এমনটা দ্যাখো, আর মারবে আমাকে অত জোরে:-)?
সূত্র:http://deelisch.blog.ca/2007/03/16/federer_takes_fourth_dubai_crown~1913...
কি কি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন এই মাত্র মধ্য বিশের মিষ্টি হাসির নাইকির ব্র্যান্ড আ্যম্বাসেডর?তাকালে মাথা একটু চক্কর দিয়ে ওঠে বইকি!২০০৪,২০০৬ এবং ২০০৭ প্রত্যেক বছরই টানা তিনটি গ্র্যান্ডস্ল্যামই (অষ্ট্রেলিয়ান,ইউএস ও উইম্বলডন)জিতেছেন, শুধুমাত্র ক্লে কোর্টের ফ্রেঞ্চ ওপেন তাঁর সঙ্গী হয়নি একবারও। এই আফসোস তাঁর গুরু মানা এডবার্গেরও,কোথায় যেন বিশ্বসেরা দুই লেজেন্ড এক হয়ে যান সব পাওয়ার মাঝেও এই না পাওয়াটুকুতে।
(আমি প্রার্থনা করছি ২০০৮ ---এবার হবে ----- নিশ্চয়ই হবে ) ২০০৭ এই ছুঁয়ে ফেলেছেন আরেক লেজেন্ড বিয়র্ন বর্গের টানা পাঁচবার উইম্বলডন জয়ের ওপেন এরা রেকর্ড আর গড়েছেন টানা সর্বোচ্চ ইউ এস ওপেন জয়ের(৪বার-২০০৪-২০০৭)রেকর্ড যা আজ পর্যন্ত কেউ করে উঠতে পারেনি। আর তাঁর টানা ২০৭ সপ্তাহ এক নম্বরে থাকা টপকে গিয়েছে জিমি কনর্সের ১৬০ সপ্তাহের পুরুষ একক আর স্টেফি গ্রাফের ১৮৬ সপ্তাহের নাম্বার ওয়ান প্লেয়ার(পুরুষ /নারী টেনিস উভয় ক্যাটাগরিতেই)থাকার ঔজ্জ্বল্যকেও!এখন পর্যন্ত সবচাইতে ডাকসাঁইটে প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন রাফায়েল নাডালকে,ফ্রেঞ্চ ওপেনের বিচ্ছিরি হার সবগুলোই ওই বান্দার হাতে। আজ তা নিয়ে খেলার পর একটু রসিকতাও করতে ছাড়েন নি,বোঝা গেলো ইয়াঙ্কো ভালোই ভুগিয়েছেন তাঁকে :-)।
সূত্র:http://www.tennisreporters.net/tr_net_photos_art/FEDERER_NADAL_clw_nq_05...
ব্যাক্তিগত জীবন এই দুর্দান্ত পুরুষটি বেশ দুধেভাতেই আছেন,তেমন কোনো উৎপাতে না গিয়ে ডেট করেছেন ২০০২ এ টেনিস থেকে অবসর নেয়া স্লোভেনিয়ান মিরোস্লাভা ভারভিনেচ(মিরকা)কে,যে আবার তাঁর স্ত্রী কাম ম্যানেজারও বটে! সুইস-জার্মান বাবা আর দক্ষিণ আফ্রিকান মা'র এই পুত্রের রোম্যান্সের শুরু সিডনি অলিম্পকে,বেশ স্টেবল আর মনমাতানো রোম্যান্সের ছবি পত্রপত্রিকার পাতায় প্রায়ই দেখা যায়,২০০৩ এ তাঁর নামের ব্র্যান্ডেড সুগন্ধী আর-এফের প্রেরণাও ওই প্রেমই জুগিয়েছে বলে দুর্জন উবাচ!চুলের স্টাইল বেশ ক'বার বদলালেও(লম্বা থেকে মাঝারি আর এখন ছোট) সম্পর্কের বদল ঘটেনি বরং এই জুটিকে তার খেলার মতই ধারালো আর ইস্পাতসম অটুট আখ্যা দেয় মিডিয়া। হয়তো গোঁড়া রোমান ক্যথলিক হবার একটা বৈশিষ্ট্য এই ডেডিকেশন,কে জানে! কারণ দুনিয়াজোড়া তাঁর মেয়েভক্তের সংখ্যা কম নয়।
সূত্র: cache.viewimages.com/xc/2140221.jpg
জীবনে মজার অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন,তার মধ্যে অন্যতম অবশ্যই ২০০৩ এ উইম্বলডন জেতায় সুইস অর্গানাইজারদের কাছ থেকে জুলিয়েট নামের বিশাল এক গরু প্রাপ্তি(অনেকটাই গরু মেরে জুতো দান,বা জুতো মেরে গরু দান,যাই বলুন না কেন, মনে করিয়ে দিচ্ছিলো )সুইজারল্যান্ডের ডেয়ারি প্রডাক্ট মারাত্মক ভালো হবারই কথা,হয়তো চকোলেট ফ্যাক্টরি খুলে বসবেন রজার জুলিয়েটের দুধ দুয়ে!নম্রভাষী ফেডেরার অবশ্য “It is a great idea, very funny,” বলেই ক্ষান্ত দিয়েছেন দেশিয়াল গাভিয়াল ভাইবেরাদরদের।!
সূত্র:http://www.tribuneindia.com/2003/20030709/s8.jpg
মানুষ হিসেবে বোধকরি অনেকটাই আবেগী এই সুইস কলোসাল,২০০৭ এ অষ্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পর রড লেভারের কাছ থেকে পুরস্কার নিতে গিয়ে জলভরা চোখের সেই বিনয়ী আত্মনিবেদন,অনেকের সাথে স্টেডিয়ামে বসা আমারও চোখ ভিজিয়ে দিয়েছিলো নিমেষেই,বুঝে নিয়েছিলাম ২৫ বছরের টগবগে তরুণের মধ্যে কোথায় যেন লুকিয়ে আছে সেই ছোট্ট বাচ্চাটা যে প্র্যাকটিস কোর্ট থেকে প্রায়শঃই তাড়িয়ে দেয়ায় অভিমানী কান্না কাঁদতো ছ'বছর বয়সে,আজ সারা পৃথিবী হাতের মুঠোয় পেয়ে শুধু জানিয়ে দিতে চায় এর মানেটা তার জন্য কত বড়!
সূত্র: http://images.google.com.au/imgres?imgurl=http://cache.viewimages.com/xc/56697757.jpg%3Fv%3D1%26c%3DViewImages
২০০৭ এই প্রশ্নটা পিছু নিয়েছে তাঁর,কবে ছাড়ছেন টেনিস,কবে অবসর?অনেক তো পাওয়া হলো। বিশেষতঃ টেনিসের সততঃ পরিবর্তনশীলতা আর ফর্ম -ফিটনেসের তুমুল চাপ,ক্যারিয়ারকে লম্বা হতে দেয়না প্রায়শঃই আর তাই খেলোয়াড়রা খ্যাতির মধ্যগগনে থাকতে থাকতেই বিদায় নিতে চান। আবারও আইকনিক মিষ্টি হেসে "ওয়ান অফ দ্য রেয়ার আ্যম্বাসেডর অফ রোলেক্স" জানিয়ে দিয়েছিলেন,২০১১ তক গ্র্যান্ডস্ল্যাম ছাড়া আর কিছু ভাবতে চাননা! অতএব পৃথিবী,তৈরি থাকো আরো কিছু মনোমুগ্ধকর ভলি,আরো কিছু কাল দুর্দান্ত ফোরহ্যান্ড আর চমৎকার চোখে আরাম দেয়া টেনিসের জন্য। এই অষ্ট্রেলিয়ান ওপেনে শুভকামনা করছি তাঁর জন্য, সময়টা ভালো চাপে কাটছে তাঁর। তবুও বলি:
"গো রজার!"
তথ্যসূত্র:উইকিপেডিয়া,রজার ফেডেরার'স অফিসিয়াল ওয়েবসাইট,অষ্ট্রেলিয়ান ওপেন ওয়েবসাইট এবং রজার ফেডেরার ফাউন্ডেশন,বিবিসি। রোলেক্স ওয়েবসাইট, নাইকি প্রমোশনাল ওয়েব, ফক্সস্পোর্টস, লাইভস্কোরসডট কম।
ss শনিবার ১৯শে জানুয়ারি,২০০৮। রাত ৩টা ২১ মি:
মন্তব্য
মডারেটরগণ:
লেখাটা পাতার অনেক নীচে আসছে, কোনোভাবে কি ওপরে ওঠানো যায়?
বিনীত
ss
ওর গ্রেটেস্ট হিট্স সংকলন সারাদিন দেখা যায়।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
ফেডি জিনিয়াস, আর কোনো বক্তব্য নেই আমার।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
রজার , তোমার খেলা দেখে কাল মন খারাপ করে মাঠভর্তি দর্শকের সাথে আমিও কেঁদেছি। আমি বসে আছি তোমার ১৪ তম জয় দেখবার জন্য। পিট সাম্প্রাসের চেয়ে তুমি অনেক বড় খেলোয়াড়। তুমি খেলোয়াড় হিসেবে নাদালেরও আইডল, ভুলে যেওনা। প্লীজ, কেঁদোনা। তুমি আমাদের খুব কাছে ছিলে, আছো, থাকবে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ২০০৯ কে ভুলে যেও।
নতুন মন্তব্য করুন