বৃষ্টি হবে,আরও ঠাণ্ডা পড়বে।
ঘরের ভেতর হিটার চালিয়ে বসে আছি।
আবহাওয়ার নিম্নগামিতা মনোজগত্কে কতটা প্রভাবিত করে জানিনা, প্রবল ব্যস্ততা আর অসীম অনিশ্চয়তার মধ্যেও মন খারাপের বিষণ্ণ সুর একটানা বেজে চলছে।
মাথার ভেতর কেবল বাজছে - অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা -- --- ---
হয়তো ছায়ানটের নটনটীদের চূড়োয় ফুল বাঁধা শেষ,গমগমে গলায় ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপক্রমণিকা শেষে সবাই উদাত্ত স্বরে গেয়ে উঠছে,অন্ধকারের উত্স হতে উত্সারিত আলো।
সে আলোর ছিঁটেফোঁটা পেতে বড় উত্সুক হই,কিন্তু দূরদেশী রাখাল বালকের সারাবেলার খেলা শেষে ধূলায় ফেলা বাঁশির মত বড় নিষ্প্রাণ ঠেকে এই দূরত্ব।
"এ পরবাসে কে রবে হায়" - বলে আপাতঃ রোম্যান্টিক একটা চিত্কার গলা দিয়ে বেরিয়ে উঠতে গিয়েও দরজায় মিল্কম্যানের ঘণ্টিতে টুপ করে গলার মধ্যেই তাকে গিলে ফ্যালে।
জানি, হয়তো সচলে অনেক অনেক রঙের মেলায় ভরে উঠবে পাতা। ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে মুস্তাফিজ ভাইয়ের ক্যামেরায় বা অন্য কারুর,কী রকম রঙ লাগালো বনে বনে আজ। ওপরের ব্যানারটা বলে দিচ্ছে চারুকলার ছেলেমেয়েরা মুখোশ বানিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে ---
ক'দিন আগে এক জাহাজে করে বড় এক সমুদ্দুর যাত্রায় গিয়েছিলাম। টালমাটাল ঢেঊয়ের দুলুনির মধ্যেও এক সুন্দর সোনালী চুলের ছেলে আমার মুখে নীল-সবুজের দারুণ নকশা আঁকছিলো যখন, তখনকার মতো আজও,ঠিক এই মুহূর্তে ---মনটা কী ভীষণ আকুলিবিকুলি করে উঠলো চারুকলার কোনো চারুলতার চম্পককলি আঙুলের ছোঁয়ার জন্য,একটা যে কোনো দুরছাই ধরনের নকশার জন্যেও।
হাহাকারটুকুকে বুকের মধ্যে চিপ্টে ধরি, মুখের ভাষায় প্রকাশ করিনা, কিন্তু ছেলেমানুষি আবেগের থলের আজ সবটুকুই ঢেলে দিতে ইচ্ছে করে এই প্রাণহীন,ঠাণ্ডা শহরের রাজপথে। পলাশ আর চাঁপাফুল মাথায় দিয়ে হাঁটতে ইচ্ছে করে। ভীষণ ইচ্ছে করে একগাদা কাচের চুড়ির রিনঝিন শুনি, ভোর ছ'টার সময় মা'র বাজানো পুরনো রেকর্ডের ঝাঁপি থেকে গীতা দত্ত গেয়ে উঠুন এক্টুখানিক খোনা গলায় --
চাকরি আর পড়াশোনার মুখে লাথি মারতে ইচ্ছে করে। একটা দিনের জন্য মধ্যবিত্তের ফাঁপা আবেগের বস্তা ফুলিয়ে আরও ফাঁপাতে ইচ্ছে করে। টিভির সেই অর্থহীন টকশো'র বৈশাখ নিয়ে ভুলে ভরা, রদ্দা আর বস্তাপচা সংলাপগুলোকে বড্ড শুনতে ইচ্ছে করে কাঁথামুড়ি দিয়ে। ঝালমুড়ি মাখা আর মা'র কাঁচা আমের শরবতের অনুপান হিসেবে পাশে নিয়ে, মা'কে আবার বড্ড ঝকঝকে শাড়িতে,মাথায় সাদা গন্ধরাজে, কবিতার আসরে সবার মুগ্ধ চোখের সামনে ঋজু কণ্ঠে আবৃত্তি করতে শুনতে ইচ্ছে করে। আশেপাশের সবাইকে ফিসফিস করে সচকিত করে সেই ছেলেবেলার মতো বলে উঠতে ইচ্ছে করে ওই যে মা, হ্যাঁ আমার মা! কী একটা ভীষণ ভালোলাগাকে মিস্ করতে আর ইচ্ছে করেনা - এই চোদ্দ বছর পরও।
ভুলে যাওয়া বন্ধুদের জন্য বুকের মধ্যের চিন্চিনে ব্যথা, এত বছরের অসংযোগ, ইন্টারনেটের অর্থহীন বন্ধুত্বের "বন্ধু"তা হয়ে যাওয়া, অনেক দিনের গ্লানি ভেতরে জমে সয়ে যাওয়া, সইয়ে যাওয়া, গরম ভাতে মাখন ঢেলে মুরগির মাংসের ঝোল মাখিয়ে হাত নোংরা করে খেতে না পারার অনভ্যাস- সেই অনভ্যাসে স্থিত হওয়াকে ধাক্কা মেরে বুকের ভেতরের কান্নাটাকে জমাট বেঁধে বরফ হবার আগেই গলিয়ে দিয়ে- ঝরঝর কান্নার মধ্যেও ব্রাত্য,ভঙ্গুর আমি সবাইকে চিত্কার করে বলতে চাই - আজ পহেলা বৈশাখ।
আজ ১৪১৭।
আজ থেকে ঠিক ১৭ বছর আগে রুখসানা শামীম আপা - রিনরিনে গলা- কী ভীষণ মিষ্টি- আজি হতে শতবর্ষ পরে কবিতাটা তিনশো মেয়ের নিস্তব্ধ বিস্ফারিত চোখের সামনে-ডায়াসের ওপর- ভুলি নাই, আপা, ভুলবো না!
কোথায় আছেন, কেমন আছেন, জানিনা। আজও পড়ান কি'না, কলেজের কচিকাঁচাগুলোকে আজও মুগ্ধ করেন কী'না জানিনা।
খুব, খুব মিস করছি আপনাকে। আর বাংলাদেশকেও।
অনেকদিন পর উত্সবের নিমিত্তে অশ্রুজল।
তাও বলি, যাক্। এক্কেবারে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বুড়ো বলে গিয়েছিলেন, আজ আমিও বলি, বহুদিনকার হাস্যবাধায় অপূর্ণ চেষ্টা আজ অশ্রুজলধারায় সমাপ্ত হইলো।
বন্ধুরা, সবাইকে শুভাশীষ। শুভ হোক ১৪১৭। আনন্দম।
মন্তব্য
শুভ নববর্ষ !
আপনাকেও, আশা করছি নতুন বছরের প্রথম ক্ষণটি ভালো কেটেছে
শুভ নববর্ষ, সেঁজুতি এবং অন্য সবাইকেও
এতোটাই যদি বিষণ্ণতা আক্রান্ত হলেন, তো কবিতা কই??!!
অদ্ভুত তো স্নিগ্ধা! কবিতা কি উদ্গীরণ হয়? বিষণ্ণতার সাথে কবিতার সম্পর্ক কখনোই সমানুপাতিক নয়, জানবেন। মনটা ভালো নেই নানা কারণে।
সেঁজুতি - আমার মন্তব্য পড়ে কবিতা 'উদগীরণ' হওয়ার কথা বলছি মনে হলো দেখে বেশ বিস্মিত হলাম!! স্মৃতি বিভ্রান্ত না করে থাকলে, আপনি এর আগে অনেক সময় অনেক ভালো না লাগার মুহূর্তে/ বিষণ্ণ সময়ে খুব সুন্দর কিছু কবিতা লিখেছিলেন, সেকারণেই ঐ কথা বলা।
কবিতা না লিখলেও, বিষণ্ণতা বা অন্য কোন কিছুর সাথেই কবিতার সম্পর্ক সমানুপাতিক, অথবা ব্যস্তানুপাতিক, অথবা কোন কিছুই ধরে নেই নি।
মনটা খারাপ করে দিলেন...
শুভ নববর্ষ।
ভাববেন না। ভ্রমে রোমে সব ঠিক হয়ে যাবে। আফটার অল, মন খারাপটা একটা দশা বই তো নয়।
শুভ নববর্ষ !
শুভ শুভ !
শুভ নববর্ষ!
মন খারাপের ঝাঁপি নিয়েও আজ নতুন বছরকে মনে মনে আর ফেইসবুকে 'স্বাগতম' জানালাম। বেঁচে-বর্তে আছি আর কাছের মানুষেরা মনে করে করে খোঁজ-খবর নিচ্ছে, এ বিরাট উপরি পাওনা। তাতেই আমি খুশি হচ্ছি, হতে বাধ্য।
আপনি 'ভিকি', না? ভাল থাকবেন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
হ্যাঁ, ওটা শুধু আমার কলেজ কিন্তু। স্কুল নয়। দু'বছর খুব লাইমলাইটে থাকার পর এক মাহেন্দ্রক্ষণে জেনেছিলাম, দশ বছর ওদের স্কুলে না পড়লে নাকি ওদের এলিট গ্রুপভুক্ত হওয়া যায়না। নিজের অ-জানিতে এবং অ-যাচনাতে এলিট হয়ে যাওয়ায় আমার গ্রুপভুক্তির পিওরিটি নিয়ে ওদের সন্দেহ জাগছিলো খুব। গোষ্ঠীবদ্ধতার নোংরামির সাথে সেই প্রথম পরিচয়, পরেও অনেকবার। সে অন্য গল্প।
শুধু আপনার লেখাটায় মন্তব্য করব বলেই সাইন-ইন করলাম।
বুঝতে পারছি ভয়ানক স্মৃতিমেদুরতায় আক্রান্ত হয়েছেন।
লেখাটার প্রতিটা বাক্য যেন 'আমার প্রাণের প'রে বয়ে গেল''---
এই নতুন বছরের শুরুতে কষ্টগুলোকে জোর করেই ছুটি দিন না। আসুন সবাই একসাথে গলা মিলিয়ে সুরে-বেসুরে গাই-"এসো হে বৈশাখ--"
শুভ নববর্ষ সেঁজুতি।
শুভ নববর্ষ সকল কে--!!
হ্যাঁ, তার চেয়ে চলুন এ গানটা শুনি
শুভ নববর্ষ
আপনাকে ও। স্ট্যুয়ি হচ্ছে সবসময়কার মন খারাপের একটা খুব ভালো ওষুধ।
শুভ নববর্ষ, আপু। সব মন খারাপ ধুয়ে মুছে যাক নতুন আলোর স্রোতে।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
দু;খ তাপে ব্যথিত চিতে নাইবা দিলে সান্ত্বনা, দু;খ যেন করিতে পারি জয়, তাইনা? কেমন কাটলো নববর্ষ, ডোনাল্ড ডাক ঃ) ?
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে এখনি টাইম মেসিনে করে দেশে চলে যাই । এবারও মিস করলাম.........
স্বপ্বদ্রোহ
আমারও, আমারও। চিমটি।
নববর্ষের শুভেচ্ছা। মন ছুঁয়ে গেল লেখাটি। বিদেশে বসে দেশের জন্য এই যে মন পোড়াই, এই যে ছোট ছোট স্মৃতির টুকরোগুলোর পারমুটেশান কম্বিনেশান খেলি, শেষমেশ এগুলোতে শুধুই দুঃখ পাই, নাকি তাতে একটু সুখও মেশানো থাকে, তা আর বুঝতে পারি না। সেই সুন্দর মূহুর্তগুলো, সেদিনের সেই আমি, সেই ঢাকা, সেই মানুষগুলো কোনটাই আর তেমন নেই, সবকিছুই বদলে গেছে। এতটাই যে, সেগুলোকে আর নিজের বলে চিনতে পারিনা। কিন্তু ঢাকার বৈশাখের অসাধারন স্মৃতিগুলো ঠিক তেমনই তরতাজা আছে, সেখানের সেই আমি, সেই ঢাকা আর সে সুন্দর মানুষগুলো - একটুও বদলায়নি। কত ভাগ্যবান আমি, আমার কিছু সুন্দর স্মৃতি আছে।
হ্যাঁ, সবকিছু ভীষণ বদলে গ্যাছে, সত্যিই! আমরাও কিন্তু তাইনা?
দীর্ঘশ্বাস ।।
শুভ নববর্ষ।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
শুভ নববর্ষ পুতুলদা! মেয়েটা মানে আঁচল তো খুবই মিষ্টি।
নতুন মন্তব্য করুন