বারোজগিরির শুরু

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: মঙ্গল, ০৩/১১/২০০৯ - ৬:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নেকেড লাঞ্চনেকেড লাঞ্চ

উয়লিয়ম বারোজ বীট জেনারেশনের ভদ্দরলোক।লেখালিখির ক্ষেত্রে কাট-আপ আকা কাটাকুটা তরিকা জনপ্রিয় করেছেন বারোজ। শুরু যে তাঁর হাতে হয় নাই সেটা উনি নিজেই স্বীকার করেছেন। ইলিয়টের ১৯২২ সালে লেখা লম্বা কবিতা ‘দা ওয়েস্ট ল্যান্ড’ কাটাকুটা তরিকায় লিখেছেন বলে দাবী বারোজের ( কবিতাটার শেষ লাইন আমাদের চেনা- শান্তি শান্তি শান্তি ; আগের লাইন প্রজাপতির সে বিখ্যাত উক্তি দত্ত দয়ধ্বম দময়তঃ ) কেবল যে লেখালিখির ক্ষেত্রে তা নয়, সঙ্গীত কি চিত্রকলা কি ছায়াছবি সব জায়গায় এ টেকনিক চালু আছে। আমাদের মাথায় সারাক্ষণ নানা ভাবাগোনার অস্ত্রোপচার হয় । মন্তাজ বলেন আর সুরিয়ালিজম- এসব কাটাছেঁড়া ছাড়া আর কিছু না। রবি ঠাকুরের ‘সহজ কথা যায় না বলা সহজে’ আমার কাছে শোনা সবচে জটিল মন্তাজ।

গুরু বারোজ ‘ব্রায়ন জিসিনের কাটাকুটি খেলা’ লেখায় সব বলে ফেলেছেন। সেখান থেকে খানিক বাংলা করি-

‘ব্যাপারটা খুবই সোজা। একটা পথ বাতলে দেই। এটার মতো একটা কাগজ নেন। মাঝে একবার কাটুন তারপর পাশে ছিঁড়েন।আপনি তাহলে চারটা টুকরা পেলেন ১ ২ ৩ ৪ … এক দুই তিন চার। তারপর সাফলিং করেন। একের সাথে চার রাখেন আর তিন রাখেন দুয়ের সাথে। দেখেন একটা নতুন পাতা তৈরি হলো। আগে যা বলতে চাইলেন দেখেন কথা হয়তো তারচে বেশি খোলসা হয়েছে এবার। এরকম ও হতে পারে। পুরা পালটে গেছে। নেতাদের ভাষণ নিয়ে এটা করলে মজা পাবেন। দেখবেন লেখাটা এক্কেবারে ডেফিনিট কিছু বলে ফেলেছে। আপনার পছন্দের যে কোন কবি বা লেখকের লেখা নেন। ধরেন এমন কবিতা যেটা বহুবার বহুবার পড়েছেন। বারংবার এক জিনিষ বলতে বলতে এর আর নতুন কোন মানে নাই আপনার কাছে। এখন ওটা নিয়ে টাইপ করেন। পুরা এক পাতা। এখন ছিঁড়েন দেখি। দেখেন নতুন লাগে কিনা। এভাবে যে কয়টা পারেন করতে থাকেন।'

‘ব্রায়ন জিসিনের কাটাকুটি খেলা’ লেখাটা চার পাতার। শেষ দুই প্যারা এক কাগজে লিখে চার টুকরা করার পর কি হয় বারোজ সেটা শেষে তুলে দিয়েছেন। এখানে একদম শেষ মন্তাজ প্যারাটার বাংলা করি-

নেকেড লাঞ্চনেকেড লাঞ্চ

‘সব লেখাই হলো খেলা আর হাজারবার শোনা পয়সাকড়ির দেনদরবারের ছেঁড়াফাড়া নসিহত। তাছাড়া আর কি? ধরে নেই সবচে খারাপ কাজটা হবে একদম সরাসরি আর আমাদের স্ট্রাটেজি অনুসারে সাবজেক্ট নিবো ক্লাসিকাল গদ্যের কিছু জায়গা। এসব জায়গা কেটেকুটে সাফলিং করলে দেখবেন নতুন জিনিস দাঁড়িয়ে গেছে।কেনেস্তেটিকের মতো আবিষ্কার কয়টা আছে? স্বরবর্ণের রংবাজির উপর আমরা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবো। ছায়াছবিতে সেরকম করলে মানুষের বোধ লোপ পাবে। দেখবেন বালি আর বালি। রাঙ্গাতে থাকবে সব কালের জুয়ার সিনগুলা। সোয়াদের শব্দ আপনাকে ঘ্রাণ দিবে ধরাতলের রাস্তার। তার মধ্যে সবচে ভালো শোনাবে- ‘কবিতা হগলে লিখবার পারে’। ডাক্তার নিউম্যান শব্দের কোলাজ থেকে আমাদের পড়ে শোনাবেন কাঁচির আওয়াজের শুরুয়াত।এই নতুন খেলা আমাদের মথিত করবে। যেন মিলিটারির স্ট্রাটেজি । সাফসুফ আর ধারাবাহিক।…………………’

বীট জেনারেশনের লেখকরা স্বাভাবিক লেখার স্বভাবসিদ্ধ প্রক্রিয়ার বিরোধে গিয়ে নিজেদের মতো একটা ধারা তৈরি করেছেন। প্রথাগতরা ব্যাপক বিরোধিতা করেছেন তখন। এখন তো বীট লেখকদের লেখা আমেরিকায় সাহিত্যের উঁচু ক্লাসে পড়ানো হয়। জয়েসের ফিনেগান্স ওয়েকের কথা ধরেন। পড়া সম্ভব!

বারোজের সবচে বিখ্যাত বই – ‘নেকেড লাঞ্চ’। এটা নিয়া সিনেমা ও বানানো হয়ছে।

-----
সুমন চৌধুরীর কবিতা ব্যবহার করে শিরোনাম দিয়েছিলাম। পরে পালটে দিলাম।


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

খাইছে! এতো কথা তো জান্তাম না ! এইটার শিরোনামে আমার কান্ধে বন্দুক রাখার হেতুও বুঝলাম না মন খারাপ

তবে লেখাটা ভালৈছে। অনেক কিছু জানলাম।

ভাবনার কোলাজ অবশ্য অ্যাবসার্ড নাও হৈতে পারে .......



অজ্ঞাতবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনের শব্দ ধার কইরাই তো লেখা খাড়া করছি। আপনার শেষ জেনেসিস না পড়লে তো এই লেখাটা আসতো না। কান্ধে বন্ধুক রাখন ছাড়া উপায় কি। হাসি

আবারো শুকরিয়া।

শুভাশীষ দাশ

রণদীপম বসু এর ছবি

সুমন চৌধুরীর বিষয়টা তো বললেন না কিছু ! তাইনও কি এরুম কিছু করেন নাকি ! হা হা হা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

সুমনদা,

আপনের কাছে রনদার প্রশ্নের কি উত্তর আছে? থাকলে দিয়েন তো। চোখ টিপি

শুভাশীষ দাশ

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

বিয়াফক হইছে...

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলেই পাবলিক বিয়াফক হারে ঢুকতাছে হেডিং সাথে ছবি দেইখ্যা আর বিষয় আর ভাষা দেইখ্যা না পইড়া বিয়াফক হারে পলাইতেছে।

শুভাশীষ দাশ

আসমানী-মডু এর ছবি

পাঠকের আপত্তিকর হতে পারে বিধায় ছবিটি পোস্টের ভিতরে প্রকাশ করা হল। অনুগ্রহ করে ভবিষ্যতে এ ব্যাপারটি লক্ষ্য রাখবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

contact এ্যাট sachalayatan ডট com য়ে অন্য একটা ছবি পাঠালাম। সেটা ছাপেন।

সরি।

শুভাশীষ দাশ

পলাশ দত্ত এর ছবি

"উয়লিয়ম বারোজ"-র নামের ইংরেজি বানানটা এইরকম : William Burroughs. তার নামে "উয়লিয়ম" উচ্চারণটা কি তাহলে ঠিক?

"‘দা য়োয়েস্ট লেন্ড’"-এর ''য়োয়েস্ট"। শুরুতে 'ও' উচ্চারণ হয় যে-শব্দের তাতে 'য়ো' লিখলে কি 'ও'-এর উচ্চারণ পাওয়া যায়?

আর শব্দের শুরুতে 'এ্যা' উচ্চারণের জন্য 'এ-কার'-এর বদলে 'য-ফলা আ-কার' লেখাটাই তো এখন চালু মনে হয়।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

অতিথি লেখক এর ছবি

দাদা পলাশ,

Wasted য়ে প্রথম দিকে ও-টা একটু দীর্ঘক্ষণ থাকে। সে জন্য এই নতুন প্রচেষ্টা। ব্লগে আমরা যা লিখি তা ছাপান হলে ও পরে সংশোধনের একটা সু্যোগ থাকে। দু একটা ইংরাজির উচ্চারণের আপাতদৃষ্টিতে কিম্ভুত বাংলা চেহারা দিলে লোকজনের প্রতিক্রিয়া কি হয় সেটা বুঝে পরে
একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে কিভাবে লিখলে পুরা আমেজটা আসে। ধরে নেন একটা নিরীক্ষা। এনার্কি ভেবে নিয়েন না।

উয়লিয়ম এভাবে বানান করার ব্যাপারে আমার এমির কুস্তুরিকার মহাকাব্য। কিস্তি ১ (মারাদোনা) লেখায় খানিক ব্যাখা পাবেন।

Land কে লেন্ড লেখা জাতীয় বিভ্রাটগুলো সহজ কী-চালনের জন্য বোধকরি। পূর্ণ সচল যদি কখনো হতে পারি তবে শুদ্ধ করে দিবো।

আপনার ভাল কথাবার্তার জন্য ধন্যবাদ।

মডু সাহেব
ছবি তো পাল্টাচ্ছেন না। তাই উপরে একটা ছবি পাঠালাম।

শুভাশীষ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

নেকেড লাঞ্চনেকেড লাঞ্চ

সাফি এর ছবি

ওরে বাবারে, কঠিন লাগসে পইড়া, মাথা ঠান্ডা করে আরেকবার পড়া দরকার। লেকিন যেটা কইতে আইসি কইয়া যাই, আজকে কেলাসে প্রফেসর বকবক করতে মাথা যখন প্রায় ধরায় দিতেসিলো, তখন সচলে ঢুকতে নিসিলাম, ফ্রন্টপেজেই ছিলো ছবিখানা, ঝপ কইরা দিলাম বন্ধ কইরা, কেলাস ফাঁকি দিয়ে সচল পড়ার সুযোগ নষ্ট করসেন বলে আপনারে কইষ্যা মাইনাস

অতিথি লেখক এর ছবি

কেলাস করেন মন দিয়া। হগল জায়গায় কি সচল হওন যায় নিহি ? চোখ টিপি

তা রাজপুত্তররে আমার সেলাম মাইনাস দেওনের লাইগা। ভালা হয়ছে ,অছাধারণ এইসব ফ্যাচফ্যাচ মন্তব্য দিয়া পাতা ভরনের দরকারডা কি?

কইষ্যা গাইল পারেন হেডাতে ও শান্তি।

শুভাশীষ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

উইলিয়াম বারোজকে নিয়ে এতো ভাল লেখা বাংলায় পড়ি নাই। আপনার লেখাগুলো পড়লাম। কবিতা সহ মোট ছয়টা।

আরো লিখতে থাকেন।

কনক

অতিথি লেখক এর ছবি

কন কি হাসি

শুভাশীষ

সবুজ বাঘ এর ছবি

হুমমমমমমমমমমমমমমম বারোজ বনাম সুমন চাই..............সবই বিজ্জান

আলতাফ হোসেন এর ছবি

বারোজ
নীল ক্যাসাডি
ক্যারোলিন ক্যাসাডি
অন দ্য রোড
অফ দ্য রোড
বেশ মজার অন দ্য রোড তার জবাবে অফ দ্য রোড পড়েছ কি আনলে মনে মনে এল ঠিক যে কাটা ঠিক যে কুটি তেমন নয় তাহলেও তেমনই বটে কোন কথাটা মাথায় কখন এসে পড়ে বলা কি যায় এখন আছে আগেও ছিল যেমন গাও জিংজিয়ান লিখেছিলেন

ভালজ্

তারকভস্কির বাবা
তার নামও তারকভস্কি
খুব সকাল বেলায় তার নাস্তা
মোরগগুলো তো আর ডিম পাড়ে না
সমুদ্রের মধ্যে এমন একটা দ্বীপ
যা ডুবে যাচ্ছে না
নিজে নিজেই মাটিতে গড়াচ্ছে
... ...
ঘাসে ছাওয়া ভূমিকে উদ্ভাসিত করল সূর্য
মোৎসার্ট মৃত্যুবরণ করেন
একজন খেলছেন আবার
কফিতে নেই চিনি

২০০০-এর পরের কবিতায় তো এমন উদাহরণ মিলবে অজস্র অজস্র অজস্র। আগেও মিলবে অল্প।
আবার, অনেক প্রাচীন কালেও ছিল কাটাকুটির খেলা। আপাতভাবে ‘অর্থ’ থাকছে না। আর, অর্থই যে নেই তা একালে ফরাসি ভাষার নাট্যকার ইউজিন ইয়েনেস্কোর মতো করে লিখে জানাননি বোধহয় আর কেউ শব্দ নিয়ে খেলতে খেলতে খেলতে খেলতে।

মনে পড়ল। ধন্যবাদ শুভাশীষ।

অতিথি লেখক এর ছবি

অর্থ সাথে অনর্থ কি অচেতনের স্রোত নিয়ে শিল্পে কতো রকমের কৌশলী প্রকাশ।খেলাম বাড়ি গেলাম ঘুমালাম - এ নিয়ে ও সাহিত্য হয়।লেখায় আমেরিকান ফিলিপ রথেরা তা দেখিয়ে গেছেন। আবার সে আমেরিকায় ফকনার কিনা লিখেছেন অচেতনে অচেতনে। আর এক বীট বাবুর গল্প তো করলাম এখানে। বাকি বিশ্বে অপ্রকাশে প্রকাশ করার বাতিক মিলেছে অনেকের। তলস্তয়ের আনা কারেনিনা পড়ে ও আমার সেরকম মনে হয়। নভোকভের 'রাশান লেকচার' সিরিজে সেটার প্রমাণ পেলাম।

অনর্থ নিয়েই বসবাস। অনর্থেই সুখ।

শুভাশীষ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

কাল কে যেন বললো | সবুজ বাঘরে পড়েন। জ়টিল লেখেন। সকালে উঠে নিজের শেষ লেখায় পা মাড়াতে গিয়ে দেখি আমার পাড়ায় সবুজ বা্ঘের হালুম। সুমন চৌধুরীকে ফের শুকরিয়া।

ভালো থাকেন।

শুভাশীষ দাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।