এখনো সকাল নয়টা। কম্প্যুটার খুলে মেইল চেক করে। ইনবক্সে একটা মেইল। বড়ভাইয়ের।নো সাবজেক্ট। বডিতে কেবল লেখা পাঁচ। এই বাড়িতে রবিন একা থাকে। বেডরুম। ডাইনিং স্পেস। বাথরুম। ছোট্ট স্টুডিও। বাকি পাঁচজন কোথায় থাকে সে জানে না। তাদের মোবাইল নাম্বার ও নেই। এখানে গ্রুপে এলিয়েন থাকা নিয়ম। নির্দিষ্ট মিটিং এর জায়গায় সবাই ঠিক সময়ে গিয়ে হাজির হয়। বড়ভাই কার কি কাজ বলে দেন। মিশন ছাড়া অন্য কোন কথা বলার নিয়ম নেই।
রবিন জানালা দিয়ে দেখে ধোঁয়ার নগরী। লাল আলোর কুণ্ডলী নিচে। কালো ধোঁয়া উড়ে যেতে যেতে আরো নিকষ হয়। আর সেখানে ভেসে বেড়ায় মানুষ। অপরিচিত। আজকাল সব চেহারা তার কাছে কেমন যেন অচেনা লাগে। মানুষের কথা বলায় অনেক মুদ্রাদোষ থাকে। রবিনের ঘুমের ঘোরে এক মুদ্রাদোষ দেখা গেছে। স্বপ্নে প্রায় তাকে কেউ বলে- ‘ভাই, আমাকে চিনতে পারছেন না।’ আর তখন ঘুম কেঁচে যায় । উঠে দেখে দরদর করে ঘামছে। নগর ঢাকার এসি কাজ করে না তখন।
রবিন একটা সিনেমা প্রায় দেখে। প্রায় না। প্রতিদিন। গত তিন বছর ধরে। কনস্পিরেসি থিয়োরি। বড় ভাইয়ের সাজেশন। বাকি পাঁচজনের জন্য প্রেসক্রিপশন আলাদা। এটা জানে। কিন্তু কি দেখে সেটা জানা নেই। জুলিয়া রবার্টস্কে ভালো লাগতো না। কিন্তু এটা দেখে রুচি পাল্টেছে। দিন দিন জুলিয়া আরো সুন্দর হচ্ছে এই একই সিনেমায়। স্বপ্নে পর্যন্ত জুলিয়া এসে ‘জেরি’ ‘জেরি’ করে ডাকে। কিন্তু ঘুম ভাঙ্গে না। এই সিনেমার প্রতিটা ডায়ালগ অনর্গল বলে যেতে পারে রবিন। জুলাই এইটথ, নাইন্টিন সেভেন্টি নাইন।অল দা ফাদারস্ অভ নোবেল প্রাইজ উইনারস্ ওয়ার রাউণ্ডেড আপ বাই য়্যুনাইটেড নেশানস মিলিটারি য়্যুনিটস। অল রাইট। এণ্ড একচুয়েলি ফোরসড্ এট গানপয়েন্ট। টু গিভ সিমেন স্যাম্পল ইন লিটল প্লাস্টিক জারস্ হুইচ আর নাউ স্টোরড্ এট রকফেলার সেন্টার …
সময় পেরিয়ে যায় হু হু করে। প্রায় একটা বাজে ঘড়িতে । ফোন করে একটা বারো ইঞ্চি স্পাইসি সিসিলিয়ান পিজার অর্ডার করে রবিন। একটা অদ্ভূত ব্যাপার আছে। মিটিংয়ের ড্রেসকোড ।বেশ ভালগার। কমলা রঙের লুঙ্গি। জানালা গলিয়ে বারান্দায় সেটা পতাকার মতো উড়ে। এখন। মৃতদের মন্ত্র বিড়বিড় করে যেন।
বড়ভাই মিশনের বাইরে কিছু ক্লিয়ার করেন না। তবে একটা রাজ্যের স্বপ্ন দেখেন সেটা ধরা যায়। একটা ব্লু ব্লাড রাজ্য। বিরোধ থাকবে না। বিপ্লব নিষিদ্ধ হবে। সব অক্ষত্রিয়দের নাশ করা হবে। একবার শুধু বলেছিলেন। ভাববাচ্যে। ইমেইল আসার শব্দ হয়। আবার বড়ভাই। সাবজেক্ট নাই। বডিতে লেখা ষোল। মানে বিজয় দিবসের দিন। রবিন কি ভেবে যেন লোল টানে।
বাসা থেকে বেরোয় ঠিক তিনটায়। গাড়ি নিয়ে চলে যায় সোজা ন্যুমার্কেটে। মিল্লাত বুক স্টোরের সামনে যেতেই দোকানদার বিগলিত হাসি দেয়। ‘স্যার আপনার লাইগা ভালা খবর আছে। দা প্রিন্সের একটা নতুন এডিশন যোগাড় করছি। ডভার থ্রিফট্ এডিশন। এই ম্যাকিয়াভেল্লি সাব যে আপনের ওপর কি সওয়ার করলো বুঝতো পারি না। এইটা লইয়া আপনেরে আটাইশটা এডিশন ম্যানেজ কইরা দিলাম।’ বইটা কিনে বুকে লাগায় রবিন। হাঁটতে থাকে পার্কিংয়ের দিকে। একটা অপার্থিব সুখে বুক ভরে যায়।নিজেকে জেরি ফ্লেচার মনে হয়। জেরি ফ্লেচারকে রবিন ঠাউর হয়।
মন্তব্য
জটিল শব্দের স্বচ্ছ গাঁথুনি ! শুভাশীষ'দা ;একইসঙ্গে জানিয়ে রাখছি অনুবাদিত গল্পটাও ভাল লেগেছে.... *তিথীডোর
ধন্যবাদ.........
দারুণ!!!!!!
দ্য প্রিন্স বইটা কিনছি এক যুগেরও আগে। এখনো শেষ করতে পারিনি। গল্পটা পড়ে অসমাপ্ত বইটা পড়তে ইচ্ছে করছে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনার কাছে কোন এডিশনটা আছে?
খুব ভালো লাগলো। এককথায় চমতকার!
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
ধন্যবাদ.........
বাই দা ওয়ে, আপনার কষ্ট করে নিচে নিজের নাম টাইপ করার প্রয়োজন নাই। আপনি তো এখন হাচল
চমৎকার।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
অনবদ্য। সম্ভাবনাময়। দারুণ একটি বিষয়। গল্পটিকে আরও বড় করে অথবা এ বিষয়ে নতুন একটি বড় গল্প লেখা যায় না?
বড় কিছু লিখতে ইচ্ছা করে না। বিশেষতঃ ক্রিয়াটিভ কিছু হলে। এর পেছনে মূল কারণ আলসেমি।
ভাল লাগলো। দ্য প্রিন্স পড়া হয়নি। এই গল্পটা চলতে দিন না ? ১৬ই ডিসেম্বর কি হবে জানতে বড়ই ইচ্ছে হচ্ছে।
ষোলই ডিসেম্বর তো আসে নাই এখনো।
মধ্যযুগে যারা রাজনীতি, অর্থশাস্ত্র, দর্শন ইত্যাদির ভিত্তি গড়েছিলেন তাদের কারো কারো কাজ নিয়ে কিছু খটকা থাকলেও একটা কথা মনে হয় সত্যি যে তারা আমাদের মত নীতিহীন ছিলেন না। ঢালাওভাবে সব খারাপকে "মধ্যযুগীয়" ট্যাগ লাগানোর প্রবনতা আসলে আমাদের নিজেদের নোংরা চেহারাকে ঢাকার বাজে প্রয়াস।
একইভাবে দুই-আড়াই হাজার বৎসর আগে যারা নতুন দর্শন ও চিন্তার নামে এক একটা ধর্ম চালু করেছিলেন তাদের শিক্ষাকেও আস্তে আস্তে নোংরা থেকে নোংরাতর হাতিয়ার বানানো হয়েছে। মানবিক সমাজের জন্য ধর্ম আবশ্যক কিনা সেই বিতর্কে না গিয়েও বলা যায় যত দিন গেছে ধর্মকে তত অধর্মের পথ বানানো হয়েছে। প্রফেটরা রক্তপিপাসু কিনা সেই প্রশ্ন তুলে মূলতঃ নিজেদের জল্লাদ চেহারাটাই ঢাকার চেষ্টা করা হয়।
গল্প এমন হওয়া উচিত যেটা বোঝার জন্য কোন রেফারেন্স দরকার না হয়। কনস্পিরেসী থিয়োরী না দেখে বা দ্য প্রিন্স না পড়ে গল্পের মূল বক্তব্য পাঠকের বোধগম্য হওয়াটা জরুরী। তাতে পাঠকের কাছে গল্পের আবেদন বাড়ে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পাণ্ডবদা,
থ্যাংকস। তবে এই গল্প নিয়ে একটু বিস্তারিত কথা আছে। আরেকটু সময় নিয়ে পরে মন্তব্য করবো।
চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভালো লাগল, ১৬ তারিখের অপেক্ষায় থাকলাম।
ডি,এম, কামরুজ্জামান(দলছুট)
আমি কন্সপিরেসি থিয়োরী দেখি নি- দ্যা প্রিন্সও পড়া নেই। ... রবিনের চরিত্র আমার কাছে তাই অবোধ্যই থেকে গেলো। আরেকটু ব্যাখ্যা দাবি করে যাই।
_________________________________________
সেরিওজা
অন দা প্রিন্স
প্রথমে সত্যি ধরে ব্যাখ্যা করি। রবিন কোন সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য। সক্রিয় সদস্য। বোমাবাজিতে অংশ নেয়। একা থাকে। নৃশংসতা ঢাকার জন্য নিজস্ব টেকনিক ফলো করে। বড়ভাই নামের মনস্তাত্ত্বিক গুরুর কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। ভালো জায়গায় থাকে। খায়। এসবের খরচ মেটায় কে? ধরে নেই, সেই সংগঠন। সংগঠনের নিয়ম নীতি নিয়েও কিছু বর্ণনা আছে। মিশন কী সেটাও খানিক পরিষ্কার করা হয়েছে। রবিনের মনের ভেতরে ঢোকার খুব একটা চেষ্টা গল্পে নেই। একটু একটু আছে। জানালা দিয়ে যা সে দেখে সেটা স্বপ্নদৃশ্যের মতো। কিন্তু সে দেখে জেগে জেগে। স্বপ্নদৃশ্যও গল্পে আছে। যেখানে ডিজায়ার ফুলফিলমেন্টে তার ঘুম ভাঙ্গে না কিন্তু ট্রমাতে ভেঙ্গে যায়। একটা সিনেমা সে অনেক বছর ধরে দেখে। একটা বইয়ের অনেক এডিশন কিনে। বই বা সিনেমা কী সেটা খুব একটা গুরুত্বের নয়। বোঝা যায় সে ইমব্যালেন্সড। ম্যানিয়াক।
এবার ধরি ম্যাজিক রিয়ালিজম। একই বইয়ের নানা এডিশন কেনা। একই সিনেমা বারবার দেখা। একা একা স্টুডিও ফ্ল্যাটে থাকা। পিজার অর্ডার দেয়া। এসব রিয়াল। টাকা কে যোগায়? হয়তো বাবার সম্পত্তি। কিংবা হয়তো সে চাকুরি করে।স্বাভাবিক একজন লোক। কিছু মেনিয়ায় আক্রান্ত এই যা। ছুটির দিনে সে খুলে বসেছে তার মানসিক ফ্যান্টাসির জগৎ যেটা এই লেখকের চোখে পড়ে। বোমাবাজি, ইমেইল আসা, পাঁচ বা ষোলো দেখা। সব কল্পনা।
কেন সে নিজেকে জেরি ফ্লেচার মনে করে? জেরি ফ্লেচারের নিশ্চয় এই রকম বিব্লিয়োমেনিয়া আছে।
এই অণুগল্পের আরো অনেক বিশ্লেষণ আছে। আমার প্রশ্ন হলো, নগরী আমাদের কিভাবে সন্ত্রাসী করে তোলে?
আর এই গল্পটাতো এখানে শেষ। ষোলই ডিসেম্বর অন্য গল্প আসবে।
নতুন মন্তব্য করুন