রফিউদ্দীন আহমেদের ‘দা বেঙ্গল মুসলিমস্ ১৮৭১-১৯০৬: আ কুয়েস্ট ফর আইডেন্টিটি’
বইতে বাঙালি মুসলমানদের নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে। হিন্দুদের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকতে না পেরে পুঁথি সাহিত্যিকেরা তাদের রাগের প্রকাশ ঘটিয়েছেন লিখিত শোলকে। সরাসরি। কোন ভনিতা ছাড়া। নির্যাতিত একটা জনগোষ্ঠীর এর বাইরে কিছু করার জন্য সাহস আর আস্থা দেয়ার মতো কেউ তাদের পাশে ছিলেন না। কিছুটা অনুমানের জন্য মুসলমানি পুঁথি থেকে (সংগৃহীতঃ রফিউদ্দীন আহমেদের ‘দা বেঙ্গল মুসলিমস্ ১৮৭১-১৯০৬: আ কুয়েস্ট ফর আইডেন্টিটি’ থেকে) কিছু জায়গা কোট করছি।
সিদ্দিক আলীর পুঁথি থেকে-
‘হিন্দু আনি লেখা পড়া খেলাফ হৈল মোর।
বেহুদা মেহনত গেল এগার বছছর।
হিন্দু মৈলে সর্গ পাব কিনা দিসা নাই।
মছলমান আলেম পাইলে জিজ্ঞাসিব চাই।।’
খোদাদাদের মকসুদনামা থেকে-
‘এক্ষেনে দেখি যে আমি খেয়াল করিয়া।
বহুত মোমিন লোক হিন্দি নাহি জানে।।
বাঙ্গলা দেসের লোক বাঙ্গলা জোবান।
একারনে লেখে দিনু বাঙ্গালা করিয়া।।’
মালি মুহম্মদের পুঁথি থেকে-
‘একেত বাঙ্গালা দেশে আমাদের জন্ম।
আরবি ফারসি সবে না জানে মরম।
তেকারণে বাঙ্গালায় লিখিনু কালাম।
বুজিয়া দেনের কাম করহে এছলাম। …
বাঙ্গালাতে সিখি কাম করহে দিনের।
কোন মতে হক চিন আল্লা রছুলের।’
আহমদ হিছাবুদ্দীনের পুঁথি থেকে-
‘আমাদের মোছলমানি বড়ই রোসনাই।
হামেসা হিন্দুর দিনে দেই মরা ছাই।।
এছা পছা আক্কেল তেরা সোনরে বেহায়া।
কাফিরের কথা সোন মোছলমান হইয়া।’
একটা সমাজের প্রতিনিধিত্ব করার সাথে সাথে সেই সমাজের ভুল ত্রুটিগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার কাজটুকু করেছেন আহমদ ছফা। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে তিনি চেয়েছেন বাংলাদেশ নিজের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। তাঁর লেখালেখির পেছনে মূল কারণ ছিল জনপ্রতিনিধিত্বের সুর লেখায় ফুটিয়ে তোলা।রচিত উপন্যাসগুলো সাহিত্যিক মান বিচারে আরো ভাল করতে পারতেন, কিন্তু ইতিহাস আর জাতীয় জীবনে মানুষের ভণ্ডামি দেখিয়ে দেবার মানসে খুব বেশি পরিশীলিত পথে তিনি এগোননি। আহমদ ছফা নিজে একা এগো্নোর খায়েশ করেন নাই। বাংলাদেশের দক্ষ লোকেরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের মতো এগিয়ে চলুক এটা মনেপ্রাণে চেয়েছেন। কামনা করেছেন দেশের লেখকেরা আরো পরিপক্ক হোক, শাণিত হোক । যখন চিত্রশিল্পী সুলতানকে তখনকার স্বনামধন্য চিত্রশিল্পীরা লাইমলাইটে আসতে দিচ্ছিলেন না, চিত্রকর্মবোদ্ধা না হয়েও ছফা লিখেন তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘বাংলার চিত্র ঐতিহ্যঃ সুলতানের সাধনা’। বাংলাদেশের তরুণ লেখকদের মধ্যে তাঁর চিন্তার স্ফুলিঙ্গ বিলানোর জন্য আজিজে দোকান খুলে বসেন। আন্তন ম্যাকারেঙ্কোর ‘রোড টু লাইফ’ পড়ে ‘শিল্পী সুলতান শিক্ষালয়’ গড়ে তোলেন সাংবাদিক নাজিমউদ্দিন মোস্তানকে সাথে নিয়ে। আর লেখালেখি জারি রাখেন তাঁর স্বকীয় ভঙ্গীতে। নিজের জীবনকে এভাবে দেশের মায়ায় বেঁধে ফেলার মতো লেখক একজনই। আমাদের সময়কার নায়ক আহমদ ছফা।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ ছফাকে বেশ মুগ্ধ করেছিল। স্বীকার করে নিয়েছেন এই একটা বই দিয়ে ইলিয়াস সাহেব আমাদের সাহিত্যকে একটানে বিশ্বসাহিত্যের কাছাকাছি নিয়ে গেছেন। ‘চিলেকোঠার সেপাই- বাঙালিকে ইলিয়াসের প্রতিভার রাজকর যোগাতেই হবে’ নামের প্রবন্ধে ছফা তাঁর পাঠ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।… প্রথম পাঠের রেশ আমার শিরা এবং স্নায়ুতন্ত্রীতে এখনো থরথর করে কাঁপছে। এক সময়ে সঙ্গীতশিল্পী রিচার্ড ভার্গনারের ‘ট্রিস্টান এণ্ড ইসোল্ডা’ অপেরার লং –প্লেইং রেকর্ডগুলো যখন আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে প্রথম শুনি পুরো সপ্তাহ ধরে আমি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারিনি। আমার রক্তপ্রবাহের মধ্যে আমি যেন আফিমের প্রতিক্রিয়া অনুভব করেছি। তারপর উনিশশো ছিয়াত্তুর সালের দিকে এক জ্যোৎস্নালোকিত রাতে শিল্পকলা একাডেমীর গ্যালারি ঘরটিতে এস.এম.সুলতানকে যখন লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁর সেই আশ্চর্য ছবিগুলো আঁকতে দেখি প্রায় পুরা মাস আমি কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলাম। যখন একা একা চলাফেরা করতাম বিড়বিড় করে উচ্চারণ করতাম, ‘আহ্ সুন্দর, সুন্দর’। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ পাঠ করেও তেমন একটা অনুভূতি আমার মনে জন্মগ্রহণ করেছে।২ … আমাদের কালের সেরা লেখকদের নিয়ে আহমদ ছফার উচ্ছ্বাস কখনো চাপা পড়ে থাকে নি। সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের কথা লিখতে গিয়ে বাংলাদেশের লেখকদের মানসিকতার গতিবিধি নিয়েও বলেছেন একই প্রবন্ধে। … আমাদের লেখক সাহিত্যিকেরা যেন ধনুক-ভাঙ্গা পণ করে বসে আছেন। ধর্ষণ আর হত্যার চিত্র যতো বীভৎসভাবে দেখানো হবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চিত্র ততো বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আমাদের জাতীয় মানসের একটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ না করে পারছি না। আমরা সাধারণত অত্যাচার বলতে দুটি জিনিসকেই বুঝি, সেটা হল হত্যা ও ধর্ষণ। এই দুই বস্তু ছাড়া অত্যাচারের আরো হাজার রকমফের থাকতে পারে, সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা স্বচ্ছ নয়। সে কারণে আমাদের লেখক লেখিকারা মুক্তিযুদ্ধের চিত্র ফোটাতে গিয়ে হত্যা-ধর্ষণের চিত্রগুলো বড় করে দেখিয়েছেন। আমি বলতে চাই না পাকিস্তানি সৈন্য ব্যাপক গণহত্যা করেছে, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের আয়োজন করেছে, নির্বিচারে নারী ধর্ষণ করেছে- এগুলো মিথ্যা। কিন্তু এগুলোর মধ্যে কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধের ভাবসত্যকে খুঁজতে যায় তাহলে সেটাকে পণ্ডশ্রম বিবেচনা করতে হবে। ধার করা অভিজ্ঞতা সম্বলিত এই পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ এবং উনসত্তুরের অন্দোলনের ওপর যে সমস্ত গল্প-উপন্যাস আমি পড়েছি তার অনেকগুলোকে মনে হয়েছে উনিশশো উনসত্তুরের গণ-আন্দোলন এবং উনিশশো একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের ব্যঙ্গচিত্র।৩ … উনিশশো নব্বই কিংবা উনিশশো তিরানব্বই-এর হুজুগ অর্থাৎ যশোপ্রার্থী খর্বক্ষমতার লোকেরা মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে সমাজের সামনে ফুটে উঠতে চাইছেন। এসব ঘটছে এবং ঘটতে থাকবে। অন্তত আগামী একশ বছর পর্যন্ত এই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এন্তার তর্ক-বিতর্ক চলতে থাকবে। বাঙালি জাতির তিন হাজার বছরের ঐতিহাসিক অস্তিত্বের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধই তাদেরকে পৃথিবীর সামনে একটা ভাষাভিত্তিক জাতীয় পরিচয়ে চিহ্নিত করেছে।৪ …
ভাষাভিত্তিক একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের পর ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় থেকে পাল্টেছে। এর পেছনে অনেক কারণ আছে। বাংলাদেশের জন্ম প্রক্রিয়ায় ভারতের স্বার্থ ছিল বলেই ধাত্রীর কাজ করেছিল একথা মিথ্যা নয়। ‘ভাষাবিষয়ক চিন্তাভাবনা’ প্রবন্ধে আহমদ ছফার বক্তব্য বেশ প্রিসাইজড্। … ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেলো, এটা বিচ্ছিন্ন কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন থেকে সমাজ শরীরের মধ্যে এই বিচ্ছিন্ন হওয়ার চিন্তাটা সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছিল। একটা পন্থা গ্রহণ করলে ভারতের খণ্ডিতকরণ হয়ত ঠেকান যেত। তা হল ভারতকে একটা জাতি ধরে না নিয়ে অনেক জাতি, অনেক ভাষার একটি দেশ বলে যদি মনে করতে পারতেন এবং প্রতিটি ভাষা এবং সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত এলাকাকে এক একটি রাজ্য বলে স্বীকার করে, সংবিধানে তাদের আলাদা আলাদা স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিয়ে আধুনিক একটি যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা যদি করা যেত এবং জনমতকে এই খাতে প্রবাহিত করা যেত, তাহলে হয়ত ভারত বিভাগ ঠেকানো যেত। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করেছে তা হয় নি। ভারতের যে ঐক্য- সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নিজেদের সুবিধার জন্য করেছে। এতে জনগণের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত কোন অংশগ্রহণ ছিল না। তাই ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে যে শ্রেণীটি নেতৃত্ব দিয়েছিল, তা বৃটিশদের পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট। ব্রিটিশ ‘ডিভাইড এণ্ড রুল পলিসি’ অবলম্বন করে যে ভারতকে একটি শাসনের আওতাভুক্ত এলাকায় পরিণত করেছিল তারা সে ভারতকেই স্বাধীন করতে আগ্রহী ছিল। সাম্রাজ্যবাদী ভারতের একত্ববোধ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে প্রতিটি ভাষা এবং জাতিসত্তাকে জাগরিত করে সকলের স্বেচ্ছামূলক অংশগ্রহণে যে যুক্তরাষ্ট্রীয় নির্যাতিত শোষিত মানুষের ভারত গড়ে তুললে বিভক্তকরণের প্রশ্ন উঠতো না, কংগ্রেস কিংবা মুসলিম লীগ সে পথ মাড়ায় নি। তাঁদের সে যোগ্যতাও ছিলনা। তার পেছনে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক নানাবিধ কারণ ছিল।৫ …
আমরা আমাদের সার্বজনীন জাতীয় যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ভারত পাকিস্তানকে ভাঙ্গার জন্য আওয়ামী লীগকে সব ধরণের সাহায্য করেছে, রাশিয়া তার সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে। আর এদেশের মানুষ ত্যাগ, তিতিক্ষা আর অমানুষিক কষ্টের ভেতর দিয়ে গিয়ে সর্বান্তকরণে সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিল। ফলশ্রুতিতে ভাষাভিত্তিক একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব।… ভূতপূর্ব পূর্ব পাকিস্তানে উনিশশো বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনের পর বাংলা ভাষা যখন পাকিস্তানে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে, তারপর থেকে ভারতের কতিপয় রাজ্যে ভাষা এবং সংস্কৃতির চেতনা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। আসাম, অন্ধ্র ইত্যাদি রাজ্যে আপনাপন ভাষা এবং সংস্কৃতিগত পরিচিতি বিকশিত করার আন্দোলনে বেগ এবং আবেগ সঞ্চারিত হতে থাকে। কতিপয় ভারতীয় রাজ্যের ভাষা এবং সংস্কৃতিতে তাদের আলাদা পরিচিতি অটুট রাখবার জন্য রাজনৈতিক আন্দোলনের পথ বেছে নেয়। এই ভাষাগুলো পূর্বের হিন্দু আমলে, মুসলমান আমলে, ইংরেজ আমলে স্বাতন্ত্র্যের দাবীতে কখনো এমন একরোখা হয়ে উঠতে পারেনি।বর্তমানে যে অনুরাগের তীব্রতা নিয়ে ভাষা এবং সংস্কৃতির দিকে তার তাকিয়েছে পূর্বে এমনভাবে তাকাবার সুযোগ আসে নি। হিন্দি ভাষার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘাতে আসার ফলেই তাদের মধ্যে এই চেতনা বিকাশ লাভ করছে। তারা বুঝতে পারছে ভাষা এবং সংস্কৃতিগত স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে না পারা আত্মহত্যারই নামান্তর।৬ … একাত্তরের যুদ্ধ প্রমাণ করেছে ভাষা এবং সংস্কৃতির জন্য আন্দোলন এক সময় জাতীয় সংগ্রামে পরিণত হয়। ভারতে হিন্দি ভাষাকে কেন্দ্র করে জাতীয়তা বিকাশের অপচেষ্টা চালান হচ্ছে দীর্ঘকাল ধরে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটা আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক শোষণের বীজ লুকিয়ে আছে এই গভীর সত্য সব রাজ্যের লোক সমানভাবে বুঝতে পারছে না। ভারতীয় ঐক্যবোধের ফানুশ কতদিন টিকে থাকে সেটা সময় উত্তর দিবে। তামিল ভাষাভাষী অঞ্চলে ঐক্যবোধের ফাটল দেখা দেয়ার কিছু আলামত মিলেছে। রামায়নে আর্যদের অনুচিত জয় তামিলরা ঘৃণার চোখে দেখে।… ভারতীয় চেতনার কেন্দ্রবিন্দু বলে কথিত রামায়ন নামে যে সংস্কৃত মহাকাব্যের কথা বলা হয়, সে গ্রন্থ এবং আর্য হিন্দুদের সৃষ্টির প্রতি তাদের ঘৃণা এবং অবজ্ঞার অন্ত নেই। গ্রন্থে অনার্যদের পরাজয় এবং আর্যদের বিজয়ের কাহিনীই বর্ণিত হয়েছে। তারা যেহেতু অনার্য, তাই পরাজিত অনার্যদের প্রতি তারা মমতাবোধ অরে, তাদের দেশপ্রেমকে সন্মান করে। রামায়ণের রামচন্দ্র হিন্দু সমাজের একজন পূজ্যবীর কিন্তু সাম্প্রতিক কালের দক্ষিণ ভারতীয়েরা রামচন্দ্রকে মনে করে একজন পরদেশ আক্রমণকারী ঔপনিবেশিক এবং রাবণকে মনে করে বীর।৭ …
ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহায়তার পেছনে দ্বি-জাতিতত্ত্ব ভুল প্রমাণের উল্লাস লুকিয়ে ছিল। পাকিস্তানের শাসকশ্রেণীর প্রতি ভারতের নেতৃবর্গের বিরূপ ধারণা ছিল।ভৌগোলিক অবস্থানে একটা অসঙ্গত রাষ্ট্রের প্রতি তাদের ছিল অনাস্থা । পাকিস্তানকে ভেঙ্গে দুই টুকরা করতে পারলে নতুন স্বাধীন দেশ হয়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করবে বলে তাদের ধারণা ছিল। সর্বোপরি প্রচার মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস আচরণ দেখে ভারতের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন করে। ফলে জনগণের একটা চাপ ও তৎকালীন ভারত সরকারের ওপর ছিল। কিন্তু ভাষাভিত্তিক একটা স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে বাংলাদেশ ভারতের মেকি জাতীয়তাবাদের মুখোশ খুলে দিবে এটা ভারতের তখনকার চিন্তানায়কদের মাথায় আসেনি। আহমদ ছফা বাংলাদেশের জাতীয়্তাকে জিন্নাহর দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভুল সংশোধন বলে কবুল করেন না। এবং বলতে চান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারতবর্ষের বহু জাতীয়তার সংগ্রামের পূর্বাভাস মাত্র।
ইতিহাস পড়তে গেলে কল্পগড়া ইতিহাস পড়ছি কিনা সেদিকে ভাল করে তাকানোর প্রয়োজন আছে। ইতিহাস বিকৃতির এক অদ্ভুত উটের পিঠে সওয়ার হওয়ার জাতীয় মানসিকতা আহমদ ছফার দৃষ্টি এড়ায় নি। ছফা এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন। … এটা একটা মজার প্যারাডক্স। যেমন ধরুন বাংলার হিন্দুরা পানিকে জল বলেন, মুসলমানরা জলকে পানি। কিন্তু বাংলার বাইরে সবাই, হিন্দু-মুসলমান উভয়েই পানি বলেন। এই জল-পানি নিয়ে বাংলার হিন্দু-মুসলমানরা একশ বছর লড়াই করছে। যাহা জল তাহাই পানি। যাহা পানি তাহাই জল। এখন আমাদের এখানে কী হচ্ছে। দেশের প্রকৃত সমস্যাগুলো, লড়াইয়ের যে ক্ষেত্রগুলো আছে সেখানে কেউ যেতে চাইছে না বলে কতগুলো প্রতীক তৈরি করা হয়েছে। যে কোন ইতিহাসকে দলীয়করণ করার এই যে অনুদারতা, অসত্যতা – এর কারণ হচ্ছে ইতিহাস বলতে তারা জনগণের ইতিহাস বোঝেন না। বোঝেন দলের ইতিহাস, ব্যক্তির ইতিহাস। ইতিহাস তো জনগণের ইতিহাস হবে। কিন্তু এখানে নেতা এবং দলের ইতিহাস সবাই তুলে আনছেন।৮ … বাংলাদেশ সৃষ্টি এত বড় একটা ঘটনা, সেটা নিয়ে মতদ্বৈততা, বিতর্ক এসব থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। একাত্তরের যুদ্ধ বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে শ্রেষ্ঠ ঘটনা। কিন্তু এখানে সবাই মিথ্যে বলছেন কেন? মিথ্যেকে পুজো করছেন কেন? এর একমাত্র কারণ মিথ্যা বললে এখানে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।৯ …
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা এদেশের সূর্য সন্তান হিসেবে। আহমদ ছফা মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তাঁর ভাবনা অনেক লেখায় প্রকাশ করেছেন। ‘অলাতচক্র’ উপন্যাসে শেখ মুজিবের প্রসঙ্গ এসেছে অনেক কয়বার। ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে প্রবন্ধ ও লিখেছেন। নির্মোহ দৃষ্টিতে তাঁকে বিশ্লেষণ করেছেন। … বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ। একটা আরেকটার পরিপূরক এবং দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল-প্রোজ্জ্বল এক অচিন্তিতপূর্ব কালান্তরের সূচনা করেছে।১০ … স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়ে একটা দুর্ধষ হিংস্র সেনাবাহিনীর মুখে অপ্রস্তুত দেশবাসীকে ছেড়ে দেয়ার কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হামাগুড়ি দিয়ে ভারতে ঢুকে পড়তে বাধ্য হয়েছিল। শেখ মুজিবের উত্থান নিয়েও কথা বলেছেন আহমদ ছফা।… তৎকালীন পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে যে-সকল বামপন্থী রাজনৈতিক দল প্রথমেই আন্দোলনের সূচনা করেছিল তাদের চূড়ান্ত ব্যর্থতা শেখ মুজিবর রহমানের অভূতপূর্ব সাফল্যের কারণ বললে খুব বেশি বলা হবে না। তারা জাতিসত্তার মুক্তির প্রশ্নটি উচ্চারণ করেছিলেন বটে। কিন্তু জাতি যখন ভেতর থেকে জাগ্রত হয়ে দাবী আদায়ের পথে প্রচণ্ড বেগে অগ্রসর হচ্ছিল, তারা কোন হাল ধরতে পারেননি। এই পরিস্থিতির সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করেছেন শেখ মুজিব এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগ।১১ … শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতীয়তার আসল প্রেক্ষিতটাই নির্ণয় করেননি। গোটা জাতি যখন চূড়ান্ত সংগ্রাম কাঁধে নেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত, তিনি জনগণকে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য তৈরি না করে তাদেরকে একটার পর একটা তামাশার মধ্যে ঠেলে দিয়ে অনাবশ্যক সময় হরণ করেছেন। আর ইত্যবসরে পাকিস্তানিরা জাহাজে প্লেনে বোঝাই করে পশ্চিমাঞ্চল থেকে সৈন্য এবং মারণাস্ত্র এনে সেনা ছাউনিগুলো বোঝাই করে ফেলেছে। সেই সম্ভাবনাময় সময়ের কোন সুযোগ তিনি গ্রহণ করতে পারেননি। কারণ তাঁর ভয় ছিল, তা করতে গেলে মধ্যশ্রেণির নেতৃত্ব কাঁচের ঘরের মত চুরমার হয়ে ভেঙে পড়বে। তথাপি জনমতের প্রবল ঝড়ের ঠেলায় তাকে স্বাধীনতার নামটি উচ্চারণ করতে হয়েছিল। ব্যস ওইটুকুই।বস্তুত বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য গীতাঞ্জলি নয়, বলাকা নয়, সোনার তরী নয়, ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবা না’। সহস্রাধিক বছরের পরাধীন জীবনের অস্তিত্বের প্রতি সরাসরি অস্বীকৃতি জানিয়ে এই উচ্চারণের মাধ্যমে গোটা জাতির চিত্তলোকে তিনি এমন একটা অনমনীয় আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি করেছিলেন যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরাট এক প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এই গৌরব শেখ মুজিবকে অবশ্যি দিতে হবে।১২ … ছফা মনে করেন শেখ মুজিব সময়ের সন্তান, পিতা নন। তাঁর দোদুল্যমান নেতৃত্বের কারণে পাকিস্তানিদের হাতে নির্মম মার খেয়ে অন্যের সহায়তা ছাড়া আমরা স্বাধীনতা অর্জনের পুরো কৃতিত্ব নিতে পারিনি। শেখ মুজিবুর রহমানকে সমালোচনার উর্ধ্বে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা সাধু উদ্দেশ্য নয়। সমালোচনা করা সত্ত্বেও শেখ মুজিবের প্রতি ছফার গভীর মমত্ববোধ লুকিয়ে থাকেনি। … বাংলার হাটের মানুষ, ঘাটের মানুষ, মাঠের মানুষ শেখ মুজিবকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রের মহান স্রষ্টা হিসাবে জ্ঞান করবে। দিনের পর দিন যাবে জনগণের অন্তর্লালিত এই শ্রদ্ধা ঘনীভূত হয়ে নিকষিত সোনার রূপ ধারণ করবে।১৩ … আজ থেকে অনেক দিন পর হয়ত কোন পিতা তার শিশু পুত্রকে বলবে, জানো খোকা! আমাদের দেশে একজন মানুষ জন্ম নিয়েছিলেন যার দৃঢ়তা ছিল, তেজ ছিল আর ছিল অসংখ্য দুর্বলতা। কিন্তু মানুষটির হৃদয় ছিল, ভালবাসতে জানতেন। দিবসের উজ্জ্বল সূর্যালোকে যে বস্তু চিকচিক করে জ্বলে তা হলো মানুষটির সাহস। আর জ্যোৎস্নারাতে রূপালী কিরণ ধারায় মায়ের স্নেহের মত যে বস্তু আমাদের অন্তরে শান্তি এবং নিশ্চয়তার বোধ জাগিয়ে তোলে তাহলো তার ভালবাসা। জানো খোকা তার নাম? শেখ মুজিবুর রহমান।১৪ …
আহমদ ছফার ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা’ বইটি প্রকাশ পায় ১৯৭৭ সনের পহেলা মে। বইটি দশটি অধ্যায় নিয়ে রচিত। ছফার ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও বাঙালি জাতি’ নামে প্রকাশিত গ্রন্থে ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা’ স্থান পায়। কিন্তু সেখানে দশ নাম্বার অধ্যায় ছাপা হয় নি। প্রফেসর সলিমুল্লাহ খান ‘বেহাত বিপ্লব ১৯৭১’ গ্রন্থে প্রবন্ধটির দশটি অধ্যায় পুণরায় হাজির করেন।বইটিতে আছে তাঁর নিজের দুটি প্রবন্ধ। ছফাচন্দ্রিকাঃ বেহাত বিপ্লব ১৯৭১। রাষ্ট্র ও বাসনাঃ আহমদ ছফার ‘বিষাদ-সিন্ধু’।প্রথমটির আলোচ্য প্রবন্ধ ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা’। দ্বিতীয়টির আলোচ্য বিষয় উপন্যাস ‘অলাতচক্র’। দুটো প্রবন্ধই সুখপাঠ্য এবং ভাবনা উদ্রেককারী।সলিমুল্লাহ খান আমার সরাসরি শিক্ষক। আমার সামান্য দর্শনজ্ঞানের হাতেখড়ি তাঁর কাছেই। গুরুভক্তি মাথায় রেখে আলোচনায় যাচ্ছি।
‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা’ প্রবন্ধের প্রথম দুটি অধ্যায়ে আলোচনায় এসেছে ন্যাশন্যাল আওয়ামী পার্টির দুটি অংশে ভাগ হয়ে যাওয়ার কথা। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য এই দলটিই ছিল সবচেয়ে দরাজকণ্ঠ।কম্যুনিস্ট পার্টি সেই আমলে নিষিদ্ধ হওয়ায় পার্টির কর্মীরা ন্যাপের মধ্যে থেকেই কাজ করত। কম্যুনিস্ট পার্টি বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় এখানেও মস্কো-সমর্থক এবং পিকিং-সমর্থক নামে দুটি উপদল হয়ে যায়। ন্যাপের পিকিং গ্রুপ আইয়ুব খানের দিকে ঝুঁকে পড়ে। পঁয়ষট্টির সতের দিনের পাক-ভারত যুদ্ধের সমাপ্তিতে রাশিয়ার ভূমিকা ছিল। কারণ ছিল চীনকে চাপে রাখা। পাক-ভারত মিলে যদি সোভিয়েত সমর্থিত একটা ব্লক হয় তবে সেটা চীনের মাথাব্যথার কারণ হবে। অন্যদিকে ন্যাপের দুই দলের কলহের মাঝে শেখ মুজিব আবির্ভূত হলেন ছয় দফা দাবি নিয়ে। দুটি দলের কারো পায়ের নিচে শক্ত মাটি না থাকার কারণে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থের একমাত্র পাহারাদার হিসেবে সুনাম অর্জন করে ফেলে। বাঙালি অর্থনীতিবিদরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের আগ্রাসন থেকে বাঁচতে দুই অর্থনীতি প্রবর্তনের কথা বলে আসছিলেন। এই দুই অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ জাতীয় কর্মসূচী ছয়দফা পেশ করে। একটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভারতের মধ্যবিত্ত মুসলমান শ্রেণী হিন্দুদের সাথে এঁটে উঠতে না পেরে স্বতন্ত্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের দিকে ঝুঁকে পড়েন, ঠিক একই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনেও। তবে এক্ষেত্রে ঘটনা ঘটে গেছে অকস্মাৎ। ঐতিহাসিক অন্তর্দৃষ্টির অভাব থাকায় আমাদের জাতিসত্তার স্বরূপ আমাদের সামনে উন্মোচিত হয় নি। ঘটনার ঘাত প্রতিঘাত আমাদের নিজেদের জাতিসত্তা চেনাতে সহায়তা করেছে। যাই হোক পূর্ব বাংলার মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকে পড়ে। … অবিভক্ত ভারতে মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবি যেমন এই অঞ্চলের মুসলিম জনগণের চোখে ‘সব পেয়েছি’র দেশ হিসেবে স্বপ্নের অঞ্জন মাখিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল, তেমনি আওয়ামী লীগের ছয়দফা দাবির অবিচ্ছিন্ন প্রচারণা এই একই জনগণের দৃষ্টিতে একটি কল্পস্বর্গ খাড়া করে তুলছিল।১৫ … ছয় দফা আন্দোলনের মূল দাবি ছিল বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসন অর্জন করা। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ভাবতেই পারেন নি এই আন্দোলন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দিতে চলছে। ছাত্রদের এগারো দফা আন্দোলন, বুদ্ধিজীবিদের আন্দোলন, শ্রমিকদের সংগ্রাম সব মিলিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার খুব দ্রুত বিকাশ ঘটে যাচ্ছিল। ফলে কোন আপোস নিষ্পত্তিতে না গিয়ে একটা সশস্ত্র আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া কোন গতি রইল না। নেতৃবৃন্দের মানসিক জোর শক্ত ছিল না বলে পাকিস্তানের সেনাদের ঠেকানোর জন্য কোন সামরিক প্রস্তুতি না নিয়েই বীভৎস রকম হিংস্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয় এদেশের মানুষ।… সুতরাং ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা’র পরিণতিস্বরূপ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পায়ে হেঁটে সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় ভিক্ষা করতে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হল। এতে কারো পূর্বপরিকল্পনা ছিল না, ঘটনার নিয়মে ঘটনা ঘটে গিয়েছে।১৬ …
এই প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা পরের কিস্তিতেও চলবে।
সূত্র
১। আমার কথা ও অন্যান্য প্রবন্ধ- আহমদ ছফা (উত্তরণ, জুলাই ২০০২) [পৃষ্ঠা ৬০]
২। [পৃষ্ঠা ৬৯] ৩। [পৃষ্ঠা ৭০] ৪। [পৃষ্ঠা ৭০-৭১]
৫। আহমদ ছফার প্রবন্ধ – (ষ্টুডেণ্ট ওয়েজ , জানুয়ারী ২০০০) [পৃষ্ঠা ১১২]
৬। [পৃষ্ঠা ১১২] ৭। [পৃষ্ঠা ১১৩]
৮। মাসিক চিন্তা (সংখ্যা ৬-৮, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০০১) [পৃষ্ঠা ৩১]
৯। [পৃষ্ঠা ৩১]
১০। রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক প্রবন্ধ- আহমদ ছফা ( জাগৃতি প্রকাশনী, জুন ২০০০)
[পৃষ্ঠা ২২]
১১। [পৃষ্ঠা ২৪] ১২। [পৃষ্ঠা ২৯] ১৩। [পৃষ্ঠা ৩৭] ১৪। [পৃষ্ঠা ৩৮]
১৫। আহমদ ছফা মহাফেজখানা , প্রথম খণ্ড , বেহাত বিপ্লব ১৯৭১ – সলিমুল্লাহ খান সম্পাদিত (অন্বেষা প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৭) [পৃষ্ঠা ৯৯]
১৬। [পৃষ্ঠা ১০০]
------------
ছফাগিরি। কিস্তি এক।
ছফাগিরি। কিস্তি দুই।
ছফাগিরি। কিস্তি তিন।
ছফাগিরি। কিস্তি চার।
ছফাগিরি। কিস্তি পাঁচ।
মন্তব্য
পড়ছি ছফা
লীলেনদা,
আমার এই পর্যন্ত লেখা পোস্টের মধ্যে সবচেয়ে দুর্দান্ত মন্তব্য এটাই।
ফাউস্ট পর্যন্ত আসতে কতদিন লাগবে?
মাস দুয়েক।
ছফাগিরি চালু থাকুক।
ঠিকাছে। স্বাধীন ভাই।
পড়ছি।
ঠিকাছে।
চমৎকার -- অনেককিছুই তিনি আগেই, সুশৃংখলিত ভাবে চিন্তা করে বসে আছেন ।
পরের কিস্তির অপেক্ষায় ।
--
ইমতিয়াজ মির্জা ।
হ্যাঁ, ভাবাগোনা তিনি অনেক আগেই করে রেখেছেন।
এটা কি এই বই মেলায় বই আকারে বের হচ্ছে?
না, বস্।
সিরিজ চমৎকার হচ্ছে। বই হিসেবে বের করার জন্য চারিদিক থেকে উপযুক্ত এই সিরিজ। উল্লেখযোগ্য মন্তব্য বইয়ে যুক্ত থাকলে খুব ভাল হয়। লেখক যে ই-বুকটা করেছেন সেটা আরেকটু ঘষে মেজে নিলে একটা ভাল বইয়ের আকার নিবে।
শুভেচ্ছা।
পড়লাম
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
থ্যাংকস
সবার সাথে গলা মেলালাম, এইরকম ভাগে ভাগে পড়তে ভালো লাগে না- সবটুকু একসাথে হাতে নিয়ে পড়তে চাই।
আর পরের পর্বের অপেক্ষায়
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
আগের লেখাগুলোর লিঙ্ক এখানে পাচ্ছেন। আর পাঠকের প্রতিক্রিয়ার বিশাল বোনাস।
বeটা দেখতে পারেন।
আচ্ছা উদ্ধৃতিগুলো একই প্যারাগ্রাফে না দিয়ে ভিন্ন প্যারাগ্রাফে দিলে কেমন হয়? যদিও উদ্ধৃতিগুলো ইটালিক করে দেয়া হয়েছে, তবু আমি প্রায়ই এটা কি উদ্ধৃতি না কি লেখকের বক্তব্য সেটা গুলিয়ে ফেলছি। তাতে আবার পিছু হঠে পড়তে হচ্ছে।
আমি ছফার উপন্যাস নিয়ে আলোচনার অপেক্ষায় আছি। ইতিহাস বিশ্লেষণ করার চাইতে নিজে ইতিহাস সৃষ্টি করা (মৌলিক রচনা করা অর্থে) আরো কঠিন। সেখানেই নির্মাতার প্রকৃত সত্ত্বা ফুটে ওঠে। দেখা যাক সেখানে কোন ছফার দেখা মেলে।
তাড়াহুড়ার দরকার নেই। এই ফেব্রুয়ারী না হোক, আসছে ফেব্রুয়ারীতে এটা বই হতেই পারে। হওয়াই উচিত।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমি ছফাগিরি প্রথম কিস্তিতে উদ্ধৃতিগুলো ছোট ফন্টে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেক্ষেত্রে পড়তে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। পরে ইটালিক করে দিলাম। ঠিকাছে। এর পরের কিস্তি থেকে আলাদা প্যারায় উদ্ধৃতি দিব।
উপন্যাস নিয়ে আলোচনা অবশ্যই করব। তবে আরো পরে। আগে প্রবন্ধগুলোর আলোচনা শেষ করতে চাই। 'অলাতচক্র' নিয়ে আলোচনা অবশ্য আগেই করব।
এই ফেব্রুয়ারিতে সম্ভব নয়। দেখা যাক, সামনের ফেব্রুয়ারিতে হয়ত বই প্রকাশের সম্ভাবনা আছে।
সবগুলো পড়ছি। আমি বিশেষ করে 'অলাতচক্র'-এর জন্য অপেক্ষা করছি। আচ্ছা, 'গাভী বৃত্তান্ত'-ও কি তাঁর লেখা? অনেক আগে পড়েছিলাম, মনে নেই।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
হ্যাঁ
এই পোস্ট প্রায় ৩০০ বারের কাছাকাছি পড়া হয়ে গেছে। কিন্তু আলোচনা এখনো কিছুই শুরু হয় নি।
ভারত কেন বাংলাদেশকে একাত্তর সালে সহায়তা করেছিল তার কিছু কারণ এখানে লেখা হয়েছে। কিন্তু কারণ আরো রয়েছে। কারণগুলা লেখক হয়তো পরের পর্বে বিস্তার করবেন।
শেখ মুজিবকে নিয়ে লেখাটা বাড়ানো হলে ভাল হত। অনেক কম কথায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দেশ স্বাধীন হবার পর শেখ মুজিবের অবস্থান কী রকম ছিল? আর শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ড ছফা সাহেব কিভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন ? ৭ই মার্চের ভাষণে জিয়ে পাকিস্তান বলার বিতর্ক নিয়ে ছাগুদের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করা যাতে পারেন। কারণ ছফা নিজে এটা স্বীকার করেছেন শেখ সাহেব বক্তৃতার শেষে জিয়ে পাকিস্তান বলতে শুনেছেন।
নির্মল সেনের লেখাটা দেখতে পারেন-
http://prothom-aloblog.com/users/base/ajobdhaka/210
ন্যাপের সেই উনসত্তরের দশা নিয়ে আলোকপাত দীর্ঘ করলে ভাল।
মন্তব্য আসতেছে। দ্যাখতে থাকেন।
ছফা তার 'বাঙালী জাতি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র' প্রবন্ধে এক জায়গায় লিখছেন,
কিছুসংখ্যক মানুষ মনে করেন ইসলাম ধর্মের কারণে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি হয়েছে। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হয়েছিল এবং বাঙলার মুসলিম-প্রধান অংশ পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। সে পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার পরে বর্তমান বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে। তাই তাঁরা বলে থাকেন পাকিস্তান সৃষ্টি না হলে বাংলাদেশ সৃষ্টি হত না। ধর্মকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একটা নিয়ামক শক্তি হিসেবে তাঁরা ব্যাখ্যা করতে চান। কিন্তু আসল ব্যাপার হলো ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙে ফেলার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের দায়িত্ব ঘাড়ে তুলে নিতে হয়েছিল।
এবং ঐ প্রবন্ধেই আর এক জায়গায় লিখছেন,
বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হল, দেখা গেল জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে।
এই প্রবন্ধটি লেখার সময়কাল কি জানাতে পারবেন?
এই অংশ কি, আহমদ ছফা বাংলাদেশের জাতীয়্তাকে জিন্নাহর দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভুল সংশোধন বলে কবুল করেন না। এর সাথে বিরোধ সৃষ্টি করে না?
আর একটা বিষয়, আপনার ব্যবহৃত সূত্র ১১, ১২ এবং ১৩,১৪ বোধহয় দুটো আলাদা প্রবন্ধ থেকে নেওয়া? জানি না আমি সঠিক কিনা! যদি সঠিক হই তাহলে এই প্রবন্ধ দুটো লেখার সময়কালের মধ্যে পার্থক্যটা কত সেটা কি জানাতে পারবেন?
প্রবন্ধটি রচনার সময়কাল এই মুহূর্তে দিতে পারছি না।
উদ্ধৃতি
বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হল, দেখা গেল জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে।
এটা প্রাথমিক হাইপোথিসিস হিসেবে বলা। চূড়ান্ত রায় নয়।
১১,১২,১৩,১৪ একই প্রবন্ধ থেকে নেয়া। রচনাকাল ১৯৮৫;
পাকিস্তান ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে দ্বি- জাতিতত্ত্বের মৃত্যু ঘটলো, কিন্তু এই ঘটনা এক-জাতিতত্ত্ব সত্য প্রমাণিত হওয়ার স্বীকৃতি, নাকি ভারতবর্ষে বহু-জাতীয়তার উদ্বোধন, সেই বিষয়টি এখনো সুস্পষ্ট আকার লাভ করেনি।
এটাই বোধ হয় ভারতবর্ষের জাতিতত্ত্বের ব্যাপারে শেষপর্যন্ত ছফার অবস্থান। এই বহু-জাতীয়তার ব্যাপারটি অন্যান্য প্রবন্ধে আরো বিস্তৃত করেছেন।
প্রথমে উল্লেখ করে নেই যে বই ধরে কথা বলব - 'আহমদ ছফা : নির্বাচিত প্রবন্ধ'; সম্পাদনা : মোরশেদ শফিউল হাসান, প্রথম প্রকাশ - ফেব্রুয়ারি ২০০২, দ্বিতীয় প্রকাশ - এপ্রিল ২০০৯, মাওলা ব্রাদার্স
বইটির ভূমিকা অংশে সম্পাদক বলেছেন -
রচনা বা প্রকাশের কাল অনুযায়ী নয়, মোটামুটি আলোচ্য বিষয়ের মিল বা নৈকট্য বিবেচনায়ই আমরা এখানে প্রবন্ধগুলিকে সাজাতে চেষ্টা করেছি। যাতে পাঠক কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে লেখকের (আহমদ ছফা) চিন্তাধারা, তার বিবর্তন এমনকি বাঁক-ফেরাটাও অনুসরণ করতে পারেন। সে-ক্ষেত্রেও প্রবন্ধগুলির নিচে আমরা তার রচনা বা প্রকাশকাল এবং প্রথম যে-গ্রন্থটিতে তা স্থান পায় ও আমরা যে-সংস্করণ থেকে তা নিয়েছি তার উল্লেখ করেছি। যদিও প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে দু'একটি ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব হয়নি।।
এই বই এ শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর নাম শেখ মুজিবুর রহমান নামে দুটো প্রবন্ধ আছে।
শেখ মুজিবুর রহমান প্রবন্ধের শেষে সময়কাল উল্লেখ করছেন ১৯৮৪ এবং তাঁর নাম শেখ মুজিবুর রহমান প্রবন্ধের শেষে উল্লেখিত সময়কাল ১৯৮৮। উল্লেখিত গ্রন্থ দুটোর ক্ষেত্রেই এক শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য প্রবন্ধ । সম্পাদক ২য় প্রবন্ধটির শুরুতে উল্লেখ করেছেন যে,
'রাজনীতির লেখা' (১৯৯৩) এবং 'রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রবন্ধ' (২০০০) দুটিতে এই একই প্রবন্ধ, শেখ মুজিব বিষয়ক পূর্ববর্তী রচনাটির সঙ্গে মিল রেখে, 'শেখ মুজিবুর রহমান - দুই' এই শিরোনামে ছাপা হয়েছে। আমরা অবশ্য এখানে প্রথম শিরোনামটিই গ্রহণ করলাম।
যাক, এই বই এর সূত্রে দেখতে পাই আপনার ব্যবহৃত ১১ এবং ১২ সূত্র শেখ মুজিবুর রহমান প্রবন্ধ থেকে নেওয়া। ১৩ এবং ১৪ ছফা লিখেছেন তাঁর নাম শেখ মুজিবুর রহমান এর একদম শেষ দুটো প্যারায়।
প্রবন্ধদুটোতে পাশাপাশি পাঠ করে দুটোর মধ্যে খুব চোখে পড়ার মত পার্থক্য দেখছি। ২য় প্রবন্ধের শুরুতেই ছফা লিখছেন,
শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি।
পুরো ১ম প্রবন্ধটিতে শেখ মুজিব-এর অবস্থান-অবদানকে এত স্পষ্টভাবে স্বীকার করতে দেখি না ছফাকে।
২য় প্রবন্ধে আর এক জায়গায় ছফা লিখছেন,
'যদি' কিংবা 'কিন্তু' দিয়ে ইতিহাস হয় না। সত্যিকারের ইতিহাস হলো যা ঘটে গেছে তার সঠিক বিবরণ।
১ম প্রবন্ধ থেকে একটা বড় অংশ উদ্ধৃত করব,
ভারতে আশ্রয় নেয়ার কারণে বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম সম্বন্ধে পাকিস্তানীদের ভ্রান্ত প্রচারণা আন্তর্জাতিক মহলে অনেক সংশয় সৃষ্টি করেছে। বলতে হবে শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ইচ্ছে করে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিলেন অথবা একটি সশস্ত্র জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কোনো পরিপূর্ণ ধারণাই তাঁদের ছিল না। আশা করি সকলে একমত হবেন, বিমান এবং ট্যাঙ্ক-ধ্বংসী কিছু অস্ত্রসহ অন্তত শুরুতে দু'তিনটি জেলায় যদি ঘাঁটি গেড়ে বসা যেত, বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই ওই যুদ্ধ সম্পন্ন করা যেত। পাকিস্তানীদের সঙ্গে যুদ্ধটা সরাসরি বাঙালীদের সঙ্গে বাংলাদেশের মাটিতে হলে বাংলাদেশী জনগণের মনেও ভিন্নরকম প্রতিক্রিয়া হত। মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের আগ্রাসী যুদ্ধ মনে করে অনেক দেশপ্রেমিক নাগরিকও এ যুদ্ধের বিরোধীতা করেছে। সেটি ঘটতে পারত না।
এখানে কিছু প্রশ্ন আছে আমার,
প্রথমত : ছফাকেই দেখছি সেই 'যদি'/'কিন্তু'-র ব্যবহার করতে! তাহলে কোনটা গ্রহণ করব?
দ্বিতীয়ত : ছফা দেশপ্রেমিক নাগরিকদের কথা বলছেন যারা যুদ্ধের বিরোধীতা করেছেন। যারা কিনা বিরোধীতা করতেন না যদি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারি ব্যক্তিদের সঠিক ধারণা থাকত। কারা এই দেশপ্রেমিক নাগরিক তার কোন উদাহরণ দেননি। এখানে কাদের কথা বলেছেন ছফা?
যা হোক, সম্ভব হলে যে বইটা ধরে লিখেছি সেটার তথ্যগুলো সঠিক কিনা তা যাচাই করে জানালে উপকৃত হব।
ধন্যবাদ।
এটা যদি আহমদ ছফা লিখে থাকেন, তাহলে আমার চোখে তিনি একজন জ্ঞানী ছাগু।
এখানে যাদের দেশপ্রমিক বলা হয়েছে তাদের পরিচয় আর যাই হোক রাজাকার বা আলবদর নয় সেটা পরিষ্কার। সেকালের বামপন্থীদের নিষ্ক্রিয়তার দিকে ছফার দিক নির্দেশ করা হতে পারে।
এখানে সূত্র দেয়া হচ্ছে যাতে সেগুলো পড়ে আলোচনায় অংশ নেয়া যায়। মন্তব্য প্রতিমন্তব্য পড়ে আলোচনায় অংশ নিলে ঠিকমত কথা আসবে না।
আহমদ ছফা তো নিষ্ক্রিয়তার কথা বলেননি। বিরোধিতার কথা বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা অবশ্য কিছু বামপন্থীও করেছিলো, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা যে করে, তাকে দেশপ্রেমিক বলা যায় কীভাবে? কিংবা, আরো গুরুতর, ছফা তাকে দেশপ্রেমিক মনে করেন কীভাবে?
আর মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের আগ্রাসী যুদ্ধ বলে মনে হতে পারে যদি সেই সময়ে সেই দেশপ্রেমিক ব্যক্তি নিজের চক্ষু দুটি নিজের মলদ্বারের দুই পাশে নিয়ে স্থাপন করেন। সেক্ষেত্রে প্যান্ট বা লুঙ্গি বা সালোয়ার পরিধানের কারণে চারপাশের ঘটনাবলী চোখে না পড়লে মুক্তিযুদ্ধকে ভারত কেন, বার্মার আগ্রাসী যুদ্ধও মনে হতে পারে।
কোন কথাটা ঠিকমতো আসেনি, কোট করবেন।
এদের যদি ছফা দেশপ্রেমিক বলে থাকেন তবে তাঁকে ছাগু বলায় আমার আপত্তি নাই । আমি মনে করি ছফা তা' বলেননি ।
ছফার বক্তব্য
এখানে, বামদের একাত্তরের আগের ভূমিকার কারনে তাদের "দেশপ্রেমিক নাগরিক" বলা হয়েছে ।হক আলাউদ্দিনদের '৬৯ এর গণঅভ্যুথানে উজ্জল ভূ্মিকা ছিল । কিন্তু এরা যুদ্ধের বিরোধীতা করেছে ( আমার ৩৬ নং মন্তব্যে চীনাবাদামদের ভূ্মিকা আছে )।
একাত্তরের এদের ভূমিকাকে আমি ভূ্ল নয় ,অপরাধ মনে করি ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
শুভাশীষ ভাই,
আপনি যখন বলছেন,
এখানে যাদের দেশপ্রমিক বলা হয়েছে তাদের পরিচয় আর যাই হোক রাজাকার বা আলবদর নয় সেটা পরিষ্কার। সেকালের বামপন্থীদের নিষ্ক্রিয়তার দিকে ছফার দিক নির্দেশ করা হতে পারে।
তারমানে ধরে নিতে পারি যে এই অংশটা ছফা লিখেছেন। এটাতে দ্বিমত নেই, নাকি?!
আচ্ছা, তাহলে তারপরে একটু এগোই, হিমু ভাই প্রশ্নটা তুলে ফেলেছেন। এখন সেই প্রশ্নের সাথে আর কিছু প্রশ্ন যোগ করতে চাই,
এই দেশপ্রেমিক বামপন্থী ব্লকএর বর্তমান কার্যকলাপ কি? তারা কি তাদের সেই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীতার (আপনার মতে নিষ্ক্রিয়তার) জায়গা থেকে সরে এসেছেন?
আহমদ ছফা কি তার এই চিন্তার জায়গা থেকে সরে এসেছিলেন?
ছফা যদি তার এই চিন্তা থেকে সরে এসে থাকেন, তাহলে তার পূর্ববর্তী লেখাগুলোর বা চিন্তাগুলোর ব্যবহার কি কোন রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্যে ব্যবহৃত হচ্ছে বারবার?
আহমদ ছফাকে বোঝার জন্য আমার কাছে এখন এই প্রশ্নগুলো জবাব গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। আশা করি, সাহায্য পাব আপনার কাছ থেকে।
আমি কিন্তু চেষ্টা করেছি আপনার উল্লেখিত প্রবন্ধের মধ্যে থেকেই আলোচনা করতে! তবে আপনি যে বই ব্যবহার করছেন সেটা করতে পারছি না। তবে বই এক না হলে খুব বেশি সমস্যা কি হবে?
বই দুটা হলে ও প্রবন্ধের কনটেন্টে কোন পার্থক্য নাই।
প্রশ্ন তোলাতে কোন সমস্যা নাই। তবে সব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা আছে -এটা ভাবার কারণ নাই। আমার যতটুকু জ্ঞান সেই অনুসারে উত্তর করার চেষ্টা করি। আরো ভাল ব্লগার আছেন যাঁদের ছফাজ্ঞান উঁচুদরের তাঁরাও উত্তর করবেন আশা করি।
সেই বামপন্থী ব্লকের লোকজন ভোল পালটে নানান দলে ঢুকে পড়েছেন। আমরা অনেকেই তাদের নাম জানি।
রাজনৈতিক সুবিধার জন্য মানুষ নানা কিছু নিজের মত করে সাজাবে। বুঝে নিবে। এক ছফা থেকে কোট করে রাজনীতি করে বেশি ফায়দা হবে বলে মনে করি না।
ছফার জীবদ্দশায় যেসব বই প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর বিষয় ছফার অনুমোদন সাপেক্ষে হয়েছে বলে মনে হয়। সুতরাং পড়ে বুঝে নেয়া ছাড়া গতি কী।
নূরুল আনোয়ার বা অন্যরা সম্পাদনা করে যেসব বই ছাপছেন তার কনটেন্ট নিয়ে কিছু বলতে পারব না।
ধন্যবাদ শুভাশীষ ভাই।
রাজনৈতিক সুবিধার জন্য মানুষ নানা কিছু নিজের মত করে সাজাবে। বুঝে নিবে। এক ছফা থেকে কোট করে রাজনীতি করে বেশি ফায়দা হবে বলে মনে করি না।
এ বিষয়টা, যারা অন্যকে টেনে নামিয়ে নিজেকে উপরে তোলবার চেষ্টায় ব্যস্ত তারা বুঝলেই হয়!
হিমু ভাই বা আমি যে প্রশ্নগুলো করেছি সেগুলোর উত্তর সম্ভব হলে খুঁজে দেখে কিছু জানান তাহলে উপকৃত হব। আপনি যেহেতু ছফার ওপরে কাজ করছেন তাই এই অনুরোধ!
শুভেচ্ছা....
শুভাশীষ দাশ লিখেছেনঃ "সেকালের বামপন্থীদের নিষ্ক্রিয়তার দিকে ছফার দিক নির্দেশ করা হতে পারে।"
হিমু ভাই লিখেছেনঃ "আহমদ ছফা তো নিষ্ক্রিয়তার কথা বলেননি। বিরোধিতার কথা বলেছেন। "
আমিও মনে করিনা ছফা এখানে বামপন্থীদের নিষ্ক্রিয়তার দিকে নির্দেশ করেছেন । কারন তারা আদৌ নিষ্ক্রিয় ছিলেন না এবং ছফা তা' ভাল করেই জানতেন ।
আবার শুধু বামপন্থী বললেও ইতিহাসের সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না কেননা তাতে শত্রুমিত্র নির্ধারণে গলতি হবার অবকাশ থাকে । সেকালের বামরা মোটাদাগে দুইভাগে বিভক্ত ছিল -চীনপন্থী ও মস্কোপন্থী । মস্কোপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল । চীনাবাদামদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মতপার্থক্য ছিল ।চীনপন্থী ন্যাপ (ভাসানী)'র যদু মিয়া, জানোয়ার জাহিদ মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলেন যদিও তাদের নেতা মওলানা ভাসানী মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দেন ।
একাত্তরে চীনপন্থী কমিউনিস্টদের থিসিসগুলি ছিল নিম্নরূপঃ
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ কিন্তু ভারতীয় দালাল মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই । -সিরাজ শিকাদার , পূ. বা.স.পা
মুক্তিযুদ্ধের নামে পূ্র্ব পাকিস্তানে ভারতীয় আগ্রাসন । অতএব মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই ।
-আবদুল হক, পূ. পা.ক.পা (এম এল)
চারু মজুমদারের লাইন সঠিক । সুতরাং বিপ্লবের স্তর হবে জনগণতান্ত্রিক ।
-মতিন- আলাউদ্দিন, পূ. বা.ক.পা (এম এল)
বাংলাদেশের মাটিতে মুক্তিযুদ্ধ তবে ভারতের সাহায্যে নয় ।
-তোয়াহা, পূ. পা.ক.পা
স্বাধীন বাংলাদেশে সিরাজ সিকদার (ও তার দল ) বরাবর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে হরতাল পালন করতেন ।
আব্দুল হক মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছেন,প্রচুর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছেন এবং তিনি জীবনে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকার করেননি ।
আমরা যুদ্ধাপরাধী বলতে শুধু নিজামিদেরই বুঝি । জামাতি শুয়রের বাচ্চাদের অবশ্যই বিচার হতে হবে কিন্তু
হকদের ছাড় দেয়া উচিত নয় ।
মুক্তিযুদ্ধের আগে-পরে যার যে ভূমিকাই থাকুক না কেন , একাত্তরের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী রাজাকার ,আল বদর, আল শামস, শান্তি কমিটি , মালেকের মন্ত্রীসভার সদস্যরা, হক-আলাউদ্দিনের চীনাপন্থী কমিউনিষ্ঠদের ভূমিকা আমার কাছে ঘৃন্য ছিল , আছে ।
আমার কাছে এরা সবাই শুয়রের বাচ্চা ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
.......................
হিমু
একেবারে অন্ধের হাতি দেখার মতো হয়ে গেলো মন্তব্যটা
দুদিক থেকেই
প্রথমত অন্ধের হাতি দেখার মতো মুক্তিযুদ্ধকে দেখা
দ্বিতীয়ত অন্ধের হাতি দেখার মতো ছফাকে দেখা
০২
মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী পূর্ববঙ্গকে/পূর্বপাকিস্তানকে যেমন মহাকাব্যিক পটভূমিতে একমাত্র ইলিয়াস দেখতে পেরেছিলেন
তেমনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদশেকে এখন পর্যন্ত একজনই দেখতে পেরেছেন সার্বিক এবং মহাকাব্যিক দৃষ্টিতে
তিনি আহমদ ছফা
গ্রহণ কিংবা বর্জনের দৃষ্টি দিয়ে ইতিহাসকে সম্পাদনা করেননি তিনি
তিনি নির্মোহভাবে গ্রন্থনা করেছেন ইতিহাসের বিভিন্ন স্ববিরোধী কিংবা সামঞ্জস্যপূর্ণ উপাদান
যার সবগুলোই বর্তমান ছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন- মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব সময়ে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে
এখানেই তিনি অনন্য
আর আমরা বাকিরা সবাই দেখছি যতটুটু দেখতে চাই ঠিক ততটুকু
যা দেখতে চাই না তা আমরা সচেতন কিংবা অচেতন ভাবে ইতিহাস থেকে কেটে ফেলি
এটা কোনোভাবেই বৈজ্ঞানিক ইতিহাস চর্চা নয়
এটা বড়োজোর গোষ্ঠির লিজেন্ড চর্চা
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে কেচ্ছাতন্ত্র মুক্ত করার ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে আমরাই বোধহয় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াই
উপরের মন্তব্যে
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
আপনার টাঙানো সাইনবোর্ডটা আমার পড়ে ভালো লেগেছে। ভক্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে থাকলে অনেক সময় হাতির খুঁত চোখে পড়ে না। হয়তো হাতির গেজদাঁত আছে, কিন্তু তাকেই ঐরাবতজ্ঞানে পূজা করা হয়ে আসছে।
এইবার আমাকে বোঝান, কোন "দেশপ্রেমিক"রা "ভারতের আগ্রাসী যুদ্ধ" মনে করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো? পাঁচজনের নাম বললেই হবে।
আর আসুন, একটু একটু করে চোখ খুলি। ছফা ঐ একই উদ্ধৃতিতে নাকি আরো বলেছেন, দুই তিনটি জেলায় বিমান-বিধ্বংসী অস্ত্র (যেটা হয়তো লোকে লুঙ্গিতে গিট্টু মেরে ঘুরতো, তাড়াহুড়ায় ভারত যাবার পথে গিট্টু খুলে অস্ত্রগুলি পড়ে গেছে এমন একটা ভাব) নিয়ে ঘাঁটি গাড়লে নাকি বাংলাদেশের মাটিতেই যুদ্ধ শুরু হয়ে শেষ হতো। এতো বড় আবালমার্কা কথা আমি কোনো সুস্থ এবং ১৯৭১-দেখা লোকের মুখে শুনিনি। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ আর ভক্তি-অন্ধ পাঠকের জন্যে এই কথা লেখা হয়েছে, এ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না। ছফা যদি এই কথা বলে থাকেন, তিনি একজন জ্ঞানী ছাগু।
আহমদ ছফার সৌভাগ্য যে তিনি হিমুর হাতের সার্টিফিকেট অর্জন করতে পেরেছেন। আমেন
লীলেন ভাই, একটা বাক্য পুরা কোট করার চর্চা তো স্বাস্থ্যকর।
আর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের যে ব্যক্তি দেশপ্রেমিক সার্টিফিকেট দিয়েছেন, দিচ্ছেন, দেবেন, তাকে ছাগু সার্টিফিকেট দিতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। তিনি যতোবড় হাতিই হোন না কেন।
আপসোসের ব্যাপার, ছফা নাকি প্রচুর নির্মোহ বিশ্লেষণ করে গেছেন, কিন্তু ছফার দেখানো লাইনে ছফার নির্মোহ বিশ্লেষণ সম্ভবই হচ্ছে না। ভক্তি এসে যুক্তির চোখ টিপে ধরছে।
হিমু
স্বীকার করি পুরোটা কোট করা স্বাস্থ্যকর
কিন্তু 'যদি' এবং 'নাকি' শব্দযুক্ত আলোচনায় যখন ছফাকে আপনি ছাগু সার্টিফিকেট দিয়ে দেন তখন আমার মনে হয় তার লেখালেখি থেকে এই সার্টিফিকেটের সাহিত্যমূল্য অনেক বেশি
এটা ছফা এবং তার পাঠকদের কপাল
এখন থেকে আর তার বিশাল রচনাবলী কাউকে কষ্ট করে পড়তে হবে না তাকে বোঝার জন্য
আপনার সার্টিফিকেট দেখেই বাঙালি জাতি ঠিক করে নিতে পারবে তিনি কে
লীলেন ভাই,
এখানে তো ছফার সাহিত্য মান নিয়ে কথা হচ্ছেনা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তার একটি মুল্যায়নের সমালোচনা হচ্ছে। এই সমালোচনায় ছফার সাহিত্য মান ক্ষুণ্ণ হবার কোন আশংকা নেই।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আপনি কি বলতে চাইছেন, ছফা যদি ঐ বাক্যগুলি লিখে থাকেন, তাহলে তার কোনো দায়ভার তাকে নিতে হবে না? অন্ধ ভক্তদের সার্টিফিকেটের জোরেই তাঁকে চলতে হবে?
অন্ধ ভক্তদের সার্টিফিকেটের জোরেই তাঁকে চলতে হবে?
সার্টিফকেট দেয়ার কিছু নাই। ছফা কেন এই কথাগুলো বলেছেন - তার একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা হতে পারে। দেশপ্রমিক এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দুইটা পরষ্পর অপোজিট কথা। কেন ছফা সজ্ঞানে এটা লিখলেন? আমি একটু ভাল করে তালাশ করতে যাচ্ছি। পরে কোন কিস্তিতে এটা নিয়ে লিখব। ঈমানে কইলাম।
আমি আপনাকে বা লীলেন ভাইকে অন্ধ ভক্তও বলছি না, সার্টিফিকেট দেয়ার দায়েও দায়ী করছি না। অন্ধ ভক্তি আর সার্টিফিকেট প্রসঙ্গ লীলেন ভাইয়ের বক্তব্যের অ্যান্টিথিসিস কেবল।
আমার ৩২ আর ৩৬ নং মন্তব্য পাঠের অনুরোধ রইল হিমু ভাই । আবারও বলছি , ছফা এখানে হয়ত চীনাবাদামদের কথা বলেছেন যাদের কারো কারো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আগে উজ্জ্বল ভূমিকা ছিল, সুবাদে দেশপ্রেমিক হিসেবে পরিচিত ছিল কিন্তু একাত্তরের ঘৃণ্য ভূ্মিকার (অপরাধ) জন্য তাদের পরিচয় আর দেশপ্রেমিক নয় বরং শুয়রের বাচ্চা ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
অনুপম শহীদ যে অংশটি কোট করেছিলেন, সেটি তো ছফা বাল্যকালে রচনা করেননি। একাত্তরের আগে তো জামাতে ইসলামীও লোক দেখানো আন্দোলন করেছে গণতন্ত্রের জন্য। একাত্তরের সময় কী ঘটেছে, সেটি হয় ছফার জানা ছিলো, অথবা জানা ছিলো না। যদি জানার পরও তিনি এদের দেশপ্রেমিক সার্টিফিকেট দিয়ে থাকেন, তিনি জ্ঞানপাপী জ্ঞানী ছাগু। যদি না জেনে লিখে থাকেন, তাহলে তিনি সাধারণ জ্ঞানী ছাগু।
হিমু ভাই,
মুক্তিযু্দ্ধের বিরোধীদের "যদি" ছফা ডিফেন্ড করে থাকেন তবে আপনার সাথে আমার দ্বিমত নেই ।
সরাসরি একটা মতামত দেন , মুক্তিবাহিনীর এবং মুজিববাহিনীর সাথে লড়াই করা এবং স্বাধীন দেশে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে হরতাল পালনকারি কমরেড সিরাজ সিকদারকে কি আপনি দেশপ্রেমিক মনে করেন ?
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
মানিক ভাই, ছফা যে সকল 'দেশপ্রেমিক মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী' দের কথা উল্লেখ করেছেন সিরাজ শিকদার সম্ভবতঃ সেই তালিকায় নেই।কমরেড শিকদার তো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেননাই।
'দেশপ্রেমিক মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী' এই ট্যাগটা বেশ চাল্লু হতে পারে
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
হাসান মোরশেদ ভাই এবং হিমু,
একজন লেখককে জাস্টিফাই করতে হবে তাঁর লেখা পড়ে।
এডোয়ার্ড সায়ীদকে অনেকে টেররিস্ট বলে। তাতে কার কী যায় আসে।
কেনো ধরে নিচ্ছেন এই দুজনের ছফা পড়া হয়নি?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
হিমু একবার চ্যাটে বলেছিল তার ছফা একদমই পড়া হয় নাই। আপনি কি ছফার সব লেখা পড়েছেন? না পড়লে পইড়া ফেলেন বস্।
আমি বাংলাদেশ থেকে ছফাসমগ্র Fedex দিয়া আনাইতেছি। বিয়াফক ভারি।
'অর্ধেক মানবী, অর্ধেক ঈশ্বরী' পর্যন্ত পড়েছি।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
হাসান ভাই,
আমরা এখানে বাহাস না করে আলোচনার পরিবেশে চলে যাই। ছফাকে আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। তাই ছফাগিরি নিয়ে কিস্তির পর কিস্তি। আপনাদের সবার অংশগ্রহণে এখান থেকে আমরা কিছু সত্য তুলে আনি। আহমদ ছফা নিজের লেখা দিয়েই পরিচিত হবেন। আমাদের এগুলো মাত্র দুই পয়সা যোগ করা।
সবাই ভাল থাকেন।
আমার তর্ককে অসুস্থ মনে হলে আমি দুঃখিত। তবে আপনার অনুরোধটা আমি রাখবো তখন, যখন আপনি আমাকে বোঝাতে পারবেন, কেন ছফাকে আমি তার কোট করা উক্তির প্রেক্ষিতে একজন জ্ঞানী ছাগু বলতে পারবো না। কথাটা আপনি বা আমি বলিনি, ছফাই লিখে গেছেন। যদি ছফা কথাগুলি লিখে না থাকেন, তাহলে আপনি আমার লেখা বাক্যগুলি বিশ্লেষণ করে দেখুন, তাঁকে জ্ঞানী ছাগু বলার অপশনও আমার থাকে না।
আপনি তার একশোটা বই ওজন করে তাঁকে মাপছেন, এহ বাহ্য, ঐ একশো বইতে তিনি কী লিখে গেছেন, তা পড়ার আগ্রহ আমার নষ্ট হয়নি। আমি তাঁর এই উক্তিটি দিয়েই না হয় ছফাগিরি শুরু করলাম, সমস্যা কোথায়?
ভবিষ্যতে আমাকে জিজ্ঞেস না করে আমার কোনো ইলেকট্রনিক আলাপ উদ্ধৃত করলে আমার সাথে আলাপের সুযোগ আপনার আর থাকবে না। ধন্যবাদ।
ছফাগিরির আরো অনেক কিস্তি লেখা বাকি আছে। সেখানে এই দুই বাক্য নিয়ে কথা আসবে।
হাসান ভাই ,
আমার ৩৬ নং মন্তব্যে সিরাজ সিকদারের থিসিস আছে । একাত্তরে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের শ্রেনীশত্রূ খতমের নামে হত্যা করা এবং স্বাধীন দেশে ১৬ ডিসেম্বর হরতাল পালন করা কি প্রকারন্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা নয় ? আমরা যে বলি (যা সত্য ) চীনপন্থী বামরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলো-তারা কারা ? হক-আলাউদ্দিন ? একাত্তরের জুনে পূর্ব পাকিস্তান প্রশ্নে চারু স্পষ্টই সমর্থন দিয়েছেন হক-তোয়াহাদের। সিরাজ সিকদারও পূর্ব পাকিস্তান কম্যুনিস্ট পার্টির লাইন গ্রহণ করেন এবং অক্টোবরের থিসিসে মুক্তিবাহিনীকেও প্রতিপক্ষ হিসেবে ঘোষণা দেন যদিও তিনিই পেয়ারাবাগানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন এবং ৭ জুন ১৯৭১ সর্বহারা পার্টির প্রচারপত্র উল্লেখ করা হয় "পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন (সর্বহারা পার্টির অঙ্গ শ্রমিক সংগঠন) প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীসহ সকল দেশপ্রেমিক পার্টি ও জনসাধারণের প্রতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক পথে সংগ্রাম পরিচালনা করতে আহবান জানায়। বরিশাল জেলার ঝালকাঠির মুক্তিবাহিনী ও আওয়ামী লীগের দেশপ্রেমিকরা এতে সাড়া দেয়। তাদের অংশগ্রহনসহ অন্যান্য দেশপ্রেমিকদের নিয়ে স্থানীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠন করা হয়। ঐক্যবদ্ধ মুক্তিবাহিনী তপশিলী হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত পূর্ব বাংলার বৃহত্তম পেয়ারাবাগান, কুরিয়ানা, ডুমুরিয়া, ভীমরুলী এলাকায় গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করে।"
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
সিরাজ শিকদারকে আমি একজন বিকারগ্রস্ত লোক মনে করি। দেশপ্রেমিক মনে করি না।
সিরাজ সিকদার প্রশ্নে আপনার মত প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ হিমু ভাই ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
লীলেন ভাই ও শুভাশীষ ভাই,
শেখ মুজিবুর রহমান প্রবন্ধে আমি ছফাকে নির্মোহ থেকে বিশ্লেষণ করতে দেখি না! তার রাজনৈতিক চিন্তার প্রভাব লেখাতে স্পষ্ট বিদ্যমান। ছফা তো ইতিহাসের বিশ্লেষণ করেছেন। সেখানে তার নিজের মতের প্রকাশ করেছেন দৃঢ় ভাবে। সেখানে বরং চোখে পড়ে ছফার সোচ্চার চেহারাটা। ছফা নিজের চিন্তাগুলোকে বা বিশ্বাসগুলোকে ঢেকে রাখেন না। তবে এখানে ছফাকেও দেখি - যতটুকু দেখতে চান ততটুকুই দেখতে।
ইতিহাসে যে রকম অসামঞ্জস্য বা বিরোধ থাকে তেমনি ব্যক্তির মধ্যেও বিভিন্ন রকমের দ্বন্দ্ব কাজ করে। কোন মানুষই ৩০ বছর বয়সের চিন্তা নিয়ে ৬০ বছর বয়সে লিখতে বসেন না। পরিবর্তন তার ঘটেই বা ঘটবেই।
বাংলাদেশের ইতিহাসের উত্তাল সময়গুলোর ভেতর বসে ছফার চিন্তাগুলো কিভাবে চলছিল তা বোঝাটা আমাদের জন্য প্রয়োজনীয়। ২৫-৩০ বছর আগের লেখাগুলোতে ছফা যা ভাবছেন, যে ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন - আজকের বাংলাদেশে বসে আমাদের জন্য সেই বাস্তবতা বোঝাটা কঠিন। আজকের বিশ্লেষণ আজকে বসে করাটা কঠিন কাজ। সেই কাজটাই ছফা করেছেন। তাতে কিছু ভ্রান্তি আছে বলে মনে হতে পারে আজকে ২-৩ দশকের ব্যবধানে। কিন্তু লেখার গুরুত্ব কমে না। সময়কে বোঝার জন্য তা প্রয়োজনীয় দলিল।
যা হোক! এটা আমার চিন্তা।
মোরশেদ ভাই লিখেছেন যে এটা ছফা সাহিত্য মান নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। রাজনৈতিক ছফার বিশ্লেষণে সবাই যে তার মতের সাথে একাত্ম হবেন এমনটা নাও হতে পারে। কিন্তু সেটাকে সম্পূর্ণ ছফার প্রতি আক্রমণ মনে করাটা ভুল হবে।
আর যে পোস্টে আলোচনা করছি সেটা তো লিজেন্ড চর্চা-রই পোস্ট। এখানে ছফা কীর্তনই গাওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। ছফা যা লিখেছেন তা প্রতিষ্ঠা দেওয়াই তো লেখার মূল সুর। ব্যক্তিকে সমীকরণে প্রকাশ করা গেলে তার স্বকীয়তা থাকেনা। এবং ছফা মনে হয় সেরকম সরলীকরণ করার জন্য খুবই কঠিন একজন ব্যক্তিত্ব।
ছফার শিক্ষা নিয়েই যখন ছফাকে বিশ্লেষণ করা হবে তখন তো মনে হয়, ছফার ভ্রান্তিগুলো এড়িয়ে যাওয়া সঠিক হবে না। কারণ তাকেই দেখি ব্যক্তিগত পছন্দের মানুষের বিষয়ে লিখতে গিয়েও তার ভ্রান্তি বা দ্বন্দ্বগুলোকে প্রকাশ করতে। সেখানেই তার শক্তি।
সবশেষে দুঃখপ্রকাশ করছি শুভাশীষ ভাই, আপনার 'ছফাগিরি'কে অন্যখাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য! পাঠক হিসেবে কিছু প্রশ্ন সামনে আসলে যিনি জানেন তাকে জিজ্ঞেস করাটাই আমার মনে হয়েছে ঠিক হবে। আবারও, দুঃখিত!
ধন্যবাদ।
শেখ মুজিবুর রহমান প্রবন্ধে আমি ছফাকে নির্মোহ থেকে বিশ্লেষণ করতে দেখি না।
এই প্রসঙ্গে ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত 'বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা' প্রবন্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নিহত হবার ঘটনা নিয়ে লিখেছেন আহমদ ছফা -
... সত্যি আশ্চর্যের বিষয় দেশের ডান-বাম প্রবীণ-নবীন কোন নেতা, কোন লেখক, কোন শিল্পী প্রকাশ্যে এগিয়ে এসে একটি কথা উচ্চারণ করেন নি। শেখ মুজিবের জন্য নয়, এই জাতির জন্য নয়। কারণ একটি ঐতিহাসিক পর্যায়ে ডান-বাম সমস্ত শক্তি যখন ঘাত প্রতিঘাতে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে, সেই সময় তিনি একটা নেতৃত্ব রচনা করেছিলেন। অন্য অনেকের কথা বাদ দিলেও অন্তত বর্ষীয়ান জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এই কাজটা করতে পারতেন। কারণ তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নানা ব্যাপারে সহযোগিতা করতে কসুর করেন নি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস , ইতিহাস এ নিয়ে একদিন প্রশ্ন উত্থাপন করবে এবং পরবর্তী বংশধর সকলকে সমানভাবে অপরাধী সাব্যস্ত করবে। ...
শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পর ছফা এই কথা লিখেছেন। যাই হোক ছফা শেখ মুজিবুর রহমানের উল্লেখ কেবল 'শেখ মুজিবুর রহমান' প্রবন্ধে করেছেন তা নয়। আরো অনেক জায়গায় এর উল্লেখ আছে। এক্ষেত্রে উনার আরেকটা প্রবন্ধের উল্লেখ করব। 'মুজিব হত্যার নীলনক্সাঃ আমি যতটুকু জানি'। ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত। বিশ্লেষণ সেখানে নেই- ঘটনা যা চোখে দেখেছেন তার বর্ণনা তিনি করছেন।
ছফা তাঁর পুরানো প্রবন্ধগুলোকে বাতিল করেন নাই। ইতিহাসকে ঠিকঠাক করে বলার জন্য হয়ত। সময়কে বোঝার জন্য সময়ের দলিল লেখাই তো উপযুক্ত।
উদ্ধৃতি
আর যে পোস্টে আলোচনা করছি সেটা তো লিজেন্ড চর্চা-রই পোস্ট। এখানে ছফা কীর্তনই গাওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। ছফা যা লিখেছেন তা প্রতিষ্ঠা দেওয়াই তো লেখার মূল সুর। ব্যক্তিকে সমীকরণে প্রকাশ করা গেলে তার স্বকীয়তা থাকেনা। এবং ছফা মনে হয় সেরকম সরলীকরণ করার জন্য খুবই কঠিন একজন ব্যক্তিত্ব।
এটা আংশিক ঠিক। ছফাগিরির প্রথম কিস্তি ছাপানোর পর পাণ্ডবদা আমাকে বলেছেন -
আমার মনে হয়েছে লেখায় ছফা বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত মুগ্ধতার ছাপ পড়েছে - আপনি তাতে একমত নাও হতে পারেন - তবে আমার মনে হয়েছে তাই বললাম।
আমি সেটা কাটানোর চেষ্টা করেছি। তাও হয়ত পুরোপুরি আসে নি। ছফার বঙ্গভঙ্গ নিয়ে কিছু হাইপোথিসিস আমার পছন্দ হয় নি। এটা নিয়ে আমি অন্যান্য বই পড়ছি। পরে লিখব। আমি যেসব লাইন কোট করেছি-তার মধ্যে ছফার বক্তব্য নিয়ে মতানৈক্যে যাওয়া লাগে নি।
কথা দিচ্ছি আমি নির্মোহ হয়ে বলার চেষ্টা করে যাব।
অন্যখাতে নিয়ে যাবার কথাটা বলেছি কারণ আমি ভেবে রেখেছিলাম এই প্যারা নিয়ে পরে এনালাইসিস করব। আমার যেসব জায়গা নিয়ে খটকা আছে আমি সেগুলো আপাতত এড়িয়ে যাচ্ছি, কিন্তু ফিরে আসব। আলবৎ। বুঝে নিয়ে। যাচাই করে নিয়ে।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। অসাধারণ মন্তব্যের জন্য।
প্রশ্ন আর সমালোচনা ছফাগিরিতে জারি থাকুক। এই আশা রাখছি।
চলুক, পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ঠিকাছে।
দুইবার আইসা পড়ছে।
পরিহাস এই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ঘাতক দালাল চক্র ও মুক্তিযুদ্ধকে একটা প্রস্তুতিহীন গনবিস্ফোরন বলে প্রচার করে এবং প্রতিষ্ঠা করতে চায়। '২৫ শে মার্চ এর তিন সপ্তাহের মধ্যে একটা পূর্নাঙ্গ প্রবাসী সরকার গঠন সেই,সরকারের অধীনে একজন সেনাপতির সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু এগুলো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই ঘটে গেলো?
পৃথিবীর নানাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অনন্য তার চরিত্রে। মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগে আগেই যে জনপ্রতিনিধিরা জনগনের পূর্ন ম্যান্ডেট পেয়েছিলেন তারাই সরকার গঠন করেছিলেন এবং একটা নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের অধীনে গোটা যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিলো।
পাকিস্তানীরা যদি কোনভাবে প্রমান করতে পারতো আওয়ামী লীগ ২৫ শে মার্চের আগে সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তাহলে বাকী বিশ্বের কাছে এটাকে গৃহযুদ্ধ বলে প্রমান করা যেতো এবং সে ক্ষেত্রে তাদের সামরিক অভিযান আইনসম্মত হতো।
২৫শে মার্চের বেসামরিক নাগরিকদের উপর একতরফা আক্রমন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে আন্তর্জাতিক আইনে বৈধতা দিয়েছে। এ বিষয়ে যদি কেউ আপত্তি করেন তাহলে ভিন্ন পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে।
ছফার প্রতি আমার মুগ্ধতা প্রথম ধাক্কা খেয়েছে যখন কোন তথ্য প্রমান ছাড়াই গুরুপ্রেমে অন্ধ হয়ে অধ্যাপক রাজ্জাককে তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বলে ঘোষনা করেছেন।
এই ধাক্কা আরেকটু প্রবল হয় যখন তিনি শেখ মুজিবের নেতৃত্বের সমালোচনা করতে গিয়ে গোটা মুক্তিযুদ্ধকেই প্রস্তুতি ও পরিকল্পনাহীন বলে বসেন।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
উদ্ধৃতি
পাকিস্তানীরা যদি কোনভাবে প্রমান করতে পারতো আওয়ামী লীগ ২৫ শে মার্চের আগে সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তাহলে বাকী বিশ্বের কাছে এটাকে গৃহযুদ্ধ বলে প্রমান করা যেতো এবং সে ক্ষেত্রে তাদের সামরিক অভিযান আইনসম্মত হতো।
সহজ করলে দাঁড়ায়- তখন আমাদের কোন প্রস্তুতি বা সামরিক প্রস্তুতি ছিল না।
উদ্ধৃতি
এই ধাক্কা আরেকটু প্রবল হয় যখন তিনি শেখ মুজিবের নেতৃত্বের সমালোচনা করতে গিয়ে গোটা মুক্তিযুদ্ধকেই প্রস্তুতি ও পরিকল্পনাহীন বলে বসেন।
মানে দাঁড়ায়- আমদের তখন প্রস্তুতি বা সামরিক প্রস্তুতি ছিল।
একটু ক্লিয়ার করেন।
প্রস্তুতি যে ছিলো ৩ সপ্তাহের মধ্যে প্রবাসী সরকার ও তার অধীনে মুক্তিবাহিনী গঠনই প্রমান। কিন্তু সেই প্রস্তুতি কেনো ২৫ মার্চের আগে ঘোষিত হয়নি সেটা বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রকৃতির দিকে চোখ রাখলেই বুঝা যায়।
যুদ্ধ শুধু রনাংগনেই ছিলোনা ছিলো জাতিসংঘে, ছিলো আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থন ও কুটনৈতিক তৎপরতায়।
বাংগালীদের কোন সামরিক সংঘর্ষের ইচ্ছে ছিলোনা, পাকিস্তানীরা একতরফাভাবে নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর আক্রমন চালিয়েছে- এই বিষয়গুলো বিশ্বজনমতকে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক বানিয়েছিলো।
কিন্তু সমস্যা হলো- তৎকালীন নেতৃত্বকে আন্ডারমাইন করার জন্য ক্রমাগতভাবেই প্রচার করা হয় সেই নেতৃত্বের যুদ্ধের কোন প্রস্তুতি ছিলোনা।
এটা যতোটা না সত্য তার চেয়ে অনেক বেশী পরিমান রাজনৈতিক অভিসন্ধিমুলক।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ছফার প্রতি আমার মুগ্ধতা প্রথম ধাক্কা খেয়েছে যখন কোন তথ্য প্রমান ছাড়াই গুরুপ্রেমে অন্ধ হয়ে অধ্যাপক রাজ্জাককে তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বলে ঘোষনা করেছেন।
@ হাসান মোরশেদ
১।
আমার ছফাপাঠ সামান্য। শুভাশীষের দেয়া লিংক থেকে সম্প্রতি ‘যদ্যপি আমার গুরু’ পড়েছি। সেখানে ছফা তাঁর গুরু অধ্যাপক রাজ্জাককে ‘বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা’ বলেছেন এমন কিছু পাই নি। শেষ পরিচ্ছেদে এ প্রসঙ্গে ছফা কেবল একটিমাত্র বাক্য ব্যবহার করেছেন এবং তার পূর্ব ও পরবর্তী বাক্যসমূহ পড়ে আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে যা বুঝতে পেরেছি তাহলো এক্ষেত্রে ছফা রাজাকের দৃষ্টিভঙ্গিকেই কেবল পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেছেন; গুরুর কোন ঐতিহাসিক ভূমিকার বিবৃতি দেন নি। আপনার অবগতির জন্য আবারো লাইনগুলো উদ্ধৃত করছি-
সেই পরিবেশ পরিস্থিতিতে তিনি মনে করেছিলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলেই বাংলার মুসলমান সমাজের উপকার হবে। বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার ধারণাটিও রাজ্জাক সাহেবের মস্তক থেকে এসেছিল। ভারত ভেঙে পাকিস্তান হয়েছে। এক-জাতিতত্ত্বের বদলে দ্বি- জাতিতত্ত্বের বিজয় সূচিত হয়েছে। পাকিস্তান ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে দ্বি- জাতিতত্ত্বের মৃত্যু ঘটলো, কিন্তু এই ঘটনা এক-জাতিতত্ত্ব সত্য প্রমাণিত হওয়ার স্বীকৃতি, নাকি ভারতবর্ষে বহু-জাতীয়তার উদ্বোধন, সেই বিষয়টি এখনো সুস্পষ্ট আকার লাভ করেনি। এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন রূপান্তরের মধ্যে রাজ্জাক সাহেব যে অবস্থানটি গ্রহণ করেছিলেন, তা সঠিক কি বেঠিক ছিল সে বিতর্কেও আমি প্রবৃত্ত হবো না।
‘বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার ধারণাটিও রাজ্জাক সাহেবের মস্তক থেকে এসেছিল’- এ লাইনটুকুর ভিত্তিতেই আপনি দাবী করছেন ছফা রাজ্জাককে ‘বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা’ বলেছেন। আপনার বক্তব্য অনুযায়ী এর আগের বাক্য ‘সেই পরিবেশ পরিস্থিতিতে তিনি মনে করেছিলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলেই বাংলার মুসলমান সমাজের উপকার হবে’ – পড়লেও রাজ্জাক সাহেবকে ‘পাকিস্তানের স্বপ্নদ্রষ্টা’ মনে হওয়ার কথা! কিন্তু উদ্ধৃত অংশের শেষ বাক্য-‘এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন রূপান্তরের মধ্যে রাজ্জাক সাহেব যে অবস্থানটি গ্রহণ করেছিলেন, তা সঠিক কি বেঠিক ছিল সে বিতর্কেও আমি প্রবৃত্ত হবো না’- পড়লেই বোঝা যায় ছফা এখানে শুধু ঐতিহাসিক পটপরিবর্তনে রাজ্জাকের দৃষ্টিভঙ্গির কথাই আমাদের বলেছেন- যে মস্তিষ্ক দিয়ে তিনি পাকিস্তান সমর্থন করেছিলেন, সেই একই মস্তিষ্ক পাকিস্তান ভেঙে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে তোলার ধারণাটিকেও সমর্থন করেছিল। তখনকার পরিবেশ পরিস্থিতিতে বোধহয় এমন স্বপ্ন অনেকেই দেখেছিলেন এবং সেটাই ছিল স্বাভাবিক। রাজ্জাক সাহেবের এ অবস্থানের যদি কোন ঐতিহাসিক মূল্য থাকতো (মানে ‘স্বপ্নদ্রষ্টা’ হিসেবে) তবে ছফার মতো একাডেমিক মানুষের তাতে আরো কিছু ঘটনা বা তথ্যসূত্র যোগ করাই স্বাভাবিক ছিল (যেমনটা তিনি পুরো বইতে করেছেন)। যেহেতু কোন ঘটনার বিবরণ নেই কাজেই আমার মনে হয় এটি নিছক গুরুর দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে ছফার মতামত, গুরুর কোন ভূমিকা বিষয়ে নয়।
২।
‘যদ্যপি আমার গুরু’ পড়েই জানতে পেরেছি রাজ্জাক সাহেব পুরো পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিতান্তই একজন প্রভাষক ছিলেন এবং ছফার পিএইচডির সুপারভাইজার হওয়ার যোগ্যতাও তাঁর ছিলো না। আপনার ভাষায় যে পাকিস্তান ও জিন্নাহর ফলোয়ার ছিলেন তিনি, সে আনুগত্যও চব্বিশ বছরে তাঁকে কোন পদোন্নতি দেয় নি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর খোদ বঙ্গবন্ধুই রাজ্জাককে প্রভাষকের পদ থেকে সরাসরি দেশের ‘জাতীয় অধ্যাপক’ পদে নিয়োগ দেন। প্রভাষক থেকে কোন পিএইচডি ডিগ্রি ও পাবলিকেশন ছাড়া সরাসরি অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ একমাত্র বোধহয় শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব এবং একে একাত্তর পরবর্তী আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের আরেকটি নমুনা হিসেবেও চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো বিশাল হৃদয়ের ব্যক্তিরাই মনে হয় গুণীর প্রকৃত কদর করতে জানেন; তাই আপনার ভাষায় ‘অসম্পূর্ণ ও এভারেজ পণ্ডিত’ রাজ্জাক (আপনার অন্য এক লেখায় এ বিশেষণ দেখলাম) বঙ্গবন্ধুর দ্বারা রাতারাতি বাংলাদেশের ‘জাতীয় অধ্যাপক’ হয়ে যান। রাজ্জাক সাহেব যদি সে সময় পাকিস্তান ও জিন্নাহর অনুসারী হয়ে থাকেন, তবে এ ধরনের একজন ব্যক্তিকে তখন এভাবে পুরস্কৃত করার কী কারণ রয়েছে বলে আপনি মনে করেন? রাজ্জাক সাহেব যত বড় গুণীই হোন, তাঁকে এমন একটি সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত করে বঙ্গবন্ধু কি জাতির সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করেন নি? সে প্রশ্ন কি আওয়ামী লীগের ধামাধরারা তখন বঙ্গবন্ধুকে করেছিলেন? নাকি তারা শুধু রাজ্জাক সাহেবের মৃত্যুর পর তাকে দেখতে না গিয়ে কর্তব্য সম্পাদন করেছেন? তা, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তারা গিয়েছিলেন তো?
মনে পড়ল, রাজ্জাক স্যারের জানাজায় ছিলাম । আমার পাশে ছিলেন সৈয়দ আলী আহসান তারপর ড.কামাল । আরো অনেক গন্যমান্য ব্যক্তিগন ছিলেন তন্মধ্যে লীগের কেউ ছিলেন কিনা মনে নেই ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
প্রফেসর রাজ্জাক সাহেবের কথা আমি আগের কিস্তিগুলোতে অনেক জায়গায় এনেছি। রাজ্জাক সাহেব মুসলিম লীগকে সেই কালে সমর্থন করতেন কিন্তু সক্রিয় মুসলিম লীগের কর্মী ছিলেন না। শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগের অনেক সদস্য সক্রিয় মুসলিম লীগার ছিলেন। পাকিস্তান দাবীর আন্দোলনে তাঁদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল।
শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন মুসলিম লীগের সুহ্রাওয়ার্দী সাহেবের উপদলে। উনিশশো পঁয়ষট্টি সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগের কোন নীতি থেকে তিনি সরে আসেননি। সুতরাং প্রফেসর রাজ্জাক মুসলিম লীগার ছিলেন- এই মাতম বারবার করে আদৌ কিছু প্রমাণ করা যায় না।
মোরশেদ ভাইয়ের কাছে আশা করছি একই ধরণের কথা না বলে নতুন কিছু যোগ করতে, না হলে কথা এগোনো মুশকিল।
ভাই শুভাশীষ,
শেখ মুজিব তো রাজনীতির লোক ছিলেন, রাজনৈতিক অবস্থান তার সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয়েছে এটা তো লুকানোর কিছু নেই।
প্রফেসর রাজ্জাক আর শেখ মুজিবের তুলনা এ ক্ষেত্রে খাটেনা। রাজ্জাক রাজনৈতিক কর্মী ছিলেননা ছিলেন বুদ্ধিবৃত্তিক আইকন।
শেখমুজিব পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মী ছিলেন তারপর সেই পাকিস্তান ভাঙ্গার নেতা হয়েছেন-ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা থেকে মুখ ফিরিয়ে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তায় প্রতীতি এনেছেন এগুলো তো প্রামান্য।
আপনাকে আগেও বলেছিলাম, রাজ্জাক সাহেবের ক্ষেত্রে এরকম কোন পরিবর্তনের কথা আমার জানা নেই। তিনি কি শেষপর্যন্ত ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা থেকে মুখ ফিরিয়েছিলেন? শুধু মুসলমানদের আলাদা দেশ হিসেবে পাকিস্তান সমর্থন করেছিলেন তারপর বাংলাদেশ সমর্থন করেছিলেন পূর্ববাংলার মুসলমানদের দেশ হিসেবে নাকি পূর্ব বাংলার সকল ধর্মের মানুষের দেশ হিসেবে? আপনার যদি জানা থাকে দয়া করে জানান।
'তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী সনাতন মুসলিম লীগপন্থীদের সঙ্গে পুরোপুরি এক না হলেও সর্বাংশে উদার একথা মানতে অন্তত আমার বাধবে'
এই মূল্যায়ন স্বয়ং ছফা'র। সর্বাংশে যে উদার না তাকে আপনি সেক্যুলার বলবেন?
ছফার স্বাক্ষ্যেই আমি জেনেছি প্রফেসর রাজ্জাকের ধর্মরাষ্ট্রে অনুরাগ, দ্বিজাতি তত্বের জনকের প্রতি প্রেম। যতোদিন আমি নিশ্চিত না হচ্ছি ধর্মরাষ্ট্রে তার অনুরাগ ফুরিয়েছিলো, দ্বিজাতি তত্ব থেকে মুখ ফিরিয়েছিলেন ততোদিন রাজ্জাক সাহেব বিষয়ে আমার ভাবনা বদলাচ্ছেনা।
যতো যুক্তিই থাকুক ধর্মরাষ্ট্রের ভাবনা শেষপর্যন্ত একটা অশুভ অন্ধকার মাত্র।
সুতরাং আপনার পোষ্টে সম্ভবতঃ আর মন্তব্য ও হচ্ছেনা
শুভ কামনা শুভাশীষ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সরি। আমার ভাষাটা বেশ আক্রমণাত্মক ছিল হয়তোবা।
আপনি মন্তব্য না করলে ছফাগিরির আগ্রহে ভাটা পড়ে যাবে। আপাতত আপনার মন্তব্য খণ্ডাচ্ছি না। পরে উত্তর করব।
আমার ছফাগিরির পোস্টে আমি হাসান মোরশেদকে চাই-ই চাই। অন্য সচলায়তন পাঠকেরা ও সেটা জোর গলায় চাইবেন।
আলোচনার মাধ্যমে একদম পুরা সত্যিটা সবার কাছে পরিষ্কার হবে। পাঠকের মিথস্ক্রিয়ার ব্যাপারটা কত সুন্দর হতে পারে- ছফাগিরি তার আদর্শ উদাহরণ। আর সেটা করার পেছনে হাসান মোরশেদ ভাইয়ের অনেক অনেক অবদান।
আরে নাহ। আপনি ঠিকাছেন।
প্রথম থেকেই আমার মন্তব্য আসলে একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এই বিষয়টার সমাধান দরকার, আমার নিজের জন্যই। যতো যুক্তি, যতো বাস্তবতাই থাক ধর্মের ভিত্তিতে দেশ, জাতীয়তায় যারা শেষপর্যন্ত প্রতীতি রাখেন তাদেরকে আমি শুভবোধসম্পন্ন প্রাগসরজন বলে মেনে নিতে পারিনা।
যথেষ্ট তথ্যের অভাবে রাজ্জাক সাহেব বারবার প্রশ্ন হয়ে থাকেন,এই আর কি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আপনি ও ঠিকাছেন।
মোরশেদ
রাজ্জাকের দৃষ্টি বদলে ছিল কি না সেটার জন্য বোধহয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রাজ্জাক কাদেরকে সহযোগিতা করেছিলেন কিংবা কাদের সাথে ছিলেন সেটা খোঁজ নিলেই যথেষ্ট। তাই না?
একটু খোঁজ নিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার হওয়া যায় না?
@তানভীর
১।
বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার ধারণাটিও রাজ্জাক সাহেবের মস্তক থেকে এসেছিল’
জ্বি তানভীর।
আপনি যেভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন- এটি আসলেই এতো সরল? উপরের লাইনটা আবার পড়ুন তো। আমার পাঠে ভুল হতে পারে কিন্তু ছফার লেখা এই লাইন বারবার পড়ে আমার অনুধাবন একই থাকে।
পাকিস্তান থেকে আলাদা করে বাংলাদেশ রাষ্ট্র বানানোর ধারনাটি রাজ্জাক সাহেবের মস্তিস্ক থেকে এসেছিল। তার মানে অন্যরা পরে সেই ধারনাকে বাস্তবায়ন করেছে কিন্তু মাষ্টারমাইন্ড আসলে রাজ্জাক সাহেবেই।
২।
আপনার শেষের প্রশ্ন দেখে মনে হচ্ছে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি ভেবে বসে আছেন। শেখ মুজিব কেনো কি করলেন বা আওয়ামী লীগার কি করলো তার জবাব আমি দেবার কে?
মেট্রিক্সের অনেক বাইরের এক সাধারন নাগরিক আমি। ঐ অবস্থান থেকেই লিখি।
শেখ মুজিব এরকম উদারতা অনেকের ক্ষেত্রেই দেখিয়েছেন-খন্দকার মোশতাকের '৭১ র ষড়যন্ত্র জানার পর ও তাকে মন্ত্রীসভায় ঠাঁই দিয়েছিলেন,শাহ আজিজ কারাগারে দালাল আইনে- শেখ মুজিব টাকা পয়সা পাঠাচ্ছেন শাহ আজিজের পরিবারের কাছে। এইসব উদারতা দেখিয়ে নিজের কি লাভ করেছেন আর দেশেরই বা কি লাভ হয়েছে সময়ই তো স্বাক্ষী।
যাকে জাতীয় অধ্যাপক বানিয়েছিলেন মুজিব- ১৫ আগষ্টে তার বাড়িতেই আমেরিকান রাষ্ট্রদূত কুটনৈতিক ফ্ল্যাগ লুকিয়ে মিটিং করে এসেছে, খুনী ডালিমের ছিলো নিয়মিত আনাগোনা। এই তথ্য সরবরাহ করেন সর্দার ফজলুল করিম।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
১।
সরল পাঠ-প্রতিক্রিয়া বলতে পারেন। ছফার গুরু-স্মৃতিচারণ পড়ে রাজ্জাক সম্পর্কে অনেক কিছুই মনে হয়েছে, কিন্তু পাকিস্তানপ্রেমী মনে হয় নি।
২।
রাজ্জাক সাহেব মারা যাবার পর আওয়ামি লীগের কোনো নেতা তাঁকে দেখতে যান নি। আপনার পোস্ট পড়েই তা জানতে পেরেছি। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট মনে করেছিলেন বলেই হয়তো সরদার ফজলুল করিমের সাক্ষাতকার থেকে তা কোট করেছিলেন, নয় কি?
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু কেন রাজ্জাক সাহেবকে প্রভাষক থেকে সরাসরি ‘জাতীয় অধ্যাপক’ করেছিলেন তার মধ্যেই হয়তো আমার মনে হয় আপনার রাজ্জাক সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর নিহিত আছে। শেখ মুজিব কেন, কী করেছিলেন তার জবাব তাই আপনাকে দিতে বলি নি; একই বৃত্তে ঘুরপাক না খেয়ে (আপনার ভাষায়) এ বিষয়ে সন্ধান করতে বলেছি মাত্র। যতদূর জানি শাহ আজিজ ছিল শেখ সাহেবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু- দালাল বন্ধুর পরিবারকে তিনি সহযোগিতা করতেই পারেন আর মোশতাকের ব্যাপারে তিনি ছিলেন অন্ধ (মন্ত্রীসভায় একমাত্র মোশতাককেই নাকি তিনি শ্রদ্ধাভরে ‘আপনি’ সম্বোধন করতেন, বাকশালেও ঠাঁই দিয়েছিলেন)। রাজ্জাক সাহেবের সাথেও ওনার এ ধরনের কোন সম্পর্ক ছিল নাকি? ছফার লেখায় তো তা উঠে আসে নি। জেনে থাকলে অনুগ্রহ করে জানাবেন।
মোরশেদ ভাই, এই সাক্ষাৎকারে সব কথাকে আপনি ধ্রুব সত্য বলে ভেবে নিচ্ছেন। মোহাম্মদ আলীর জ্ঞান নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আরো মাথায় রাখতে হবে সরদার ফজলুল করিমের বয়স এবং স্মৃতিশক্তি। আর্টসবিডি২৪-য়ের আরো কিছু সাক্ষাৎকার যেমন ফয়েজ আহ্মদের সঙ্গে আলাপ –এগুলো আপনি রেফারেন্স হিসেবে টানতে পারেন না। কে সাক্ষাৎকারে নিচ্ছেন এবং কোন পরিস্থিতিতে সাক্ষাৎকার নেয়া হচ্ছে এটা বিবেচনা করতে হবে।
প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের মিথগুলো আপনি উনার ব্যাপারে ধ্রুব সত্য হিসেবে বসিয়ে দেয়া উচিত হবে না।
১। যাকে জাতীয় অধ্যাপক বানিয়েছিলেন মুজিব- ১৫ আগষ্টে তার বাড়িতেই আমেরিকান রাষ্ট্রদূত কুটনৈতিক ফ্ল্যাগ লুকিয়ে মিটিং করে এসেছে।
২। প্রফেসর রাজ্জাক সাহেবের বাসায় খুনী ডালিমের ছিলো নিয়মিত আনাগোনা।
৩। তিনি বই পড়তেন না, বইয়ের ফ্ল্যাপ পড়ে জ্ঞান কপচাতেন।
৪। ভাষাশহীদ বরকতকে প্রফেসর রাজ্জাক পুলিশের ইনফরমার বলেছিলেন।
এগুলো বানোয়াট হতে পারে। আরো একটা ব্যাপার- ওই সাক্ষাৎকারের বিতর্কিত অংশগুলো এভাবে উপস্থাপন কেন করছেন আমি বুঝতে পারছি না।আহমদ ছফা এবং সরদার ফজলুল করিম অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার ছিলেন- এটা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। নিশ্চয় মানবেন। এই দুই জন প্রফেসর আবদুর রাজ্জাককে এত বড় মাপের মানুষ বলে ভাবতেন। এর পেছনে কারণ আছে।
মোহাম্মদ আলীর করা অদ্ভুত প্রশ্নমালার মধ্যে ও সরদার ফজলুল করিম কিছু কথা বলেছেন- পড়লে বোঝা যায় প্রফেসর রাজ্জাকের প্রতি তাঁর ভক্তি।
এটা প্রফেসর রাজ্জাকের একটা বিশেষ গুণ। তাঁর কোনো বাছ-বিচার ছিল না, তিনি সাজ্জাদ হোসেনরে ভালোবাসতেন — মুনীর চৌধুরী, রবি গুহ ও সরদার ফজলুল করিমকেও ভালোবাসতেন।
প্রফেসর রাজ্জাক সাম্প্রদায়িক হবেন কেন? তিনি তো ভারতবর্ষের কনসেপ্টে সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। কিন্তু এ কথা ঠিক, তিনি মুসলমানদের বেশি গুরুত্ব দিতেন। সিলেটে মুসলমানদের পাশ করানোর জন্য ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে চাঁদপুরে ভোট সংগ্রহের জন্য গেছেন। উনি বলতেন, ভারতবর্ষে একটা প্রবলেম আছে, সাম্প্রদায়িকতার প্রবলেম। পাকিস্তানেও আমি বলেছি, এখানে সাম্প্রদায়িকতা একটা সমস্যা। ব্যাপারটা কীভাবে দূর করা যায়, এ নিয়ে তিনি মাথা ঘামান নাই। কিন্তু সাধারণ অর্থে আমরা এখানে যে সাম্প্রদায়িকতা দেখি, সেই অর্থে তিনি সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। তিনি সব ধরনের মানুষের উপকার করার চেষ্টা করেছেন। এটা ছিল তাঁর চরিত্রের প্রধানতম গুণ। তাই তিনি হয়ে উঠেছিলেন অধ্যাপক রাজ্জাক। গুণী যেই হোক তাঁকে সম্মান দেওয়া, কদর করা তাঁর অভ্যাস ও নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আনিস বলেছে, রাজ্জাক স্যারের স্নেহ সূর্যের মতো, সবখানেই পড়ে। যেখানে পড়া উচিত সেখানে পড়ে, যেখানে পড়া উচিত নয়, সেখানেও পড়ে। তাঁর চরিত্রের মেইন দিক হচ্ছে, জ্ঞান তাঁর কাছে খুব প্রিয় ছিল। জ্ঞানীকে নানানভাবে সমাদর করতেন। তাঁর জীবনে আর কোনো কাজ ছিল না। তিনি এ সব নিয়েই থাকতেন।
ছফাগিরির কিস্তি এক-য়ের শেষ লাইন ছিল-
বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে পূর্ববাংলার মুসলিম বলে সম্বোধনকারী আহমদ ছফা কিংবা মেজর ডালিমের পরিবারের সাথে সম্পর্কিত আবদুর রাজ্জাক- এসব দিয়ে তাঁদের বিচার করা অতি সরলীকরণ। আমার সহজ বুদ্ধি তাই বলে।
কিস্তি ছয়-য়ে আমরা আবার সেই জায়গায় ফিরে এলাম।
প্রফেসর রাজ্জাক একজন জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন, জ্ঞানকে ভালোবাসতেন এবং জ্ঞানীর কদর করতেন, কিন্তু কেউ কি বলছে যে তিনি মূর্খ ছিলেন, জ্ঞানকে ভালোবাসতেন না কিংবা জ্ঞানীর মূল্য দিতেন না? একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হয়েও তিনি নিজের বাড়িতে মেজর ডালিমসহ বিদেশী কূটনীতিকদের আলোচনার সুযোগ দিতে পারেন, যদি তাঁর রাজনৈতিক ভাবনা সেটাকে যথোচিত মনে করে। প্রশ্নটা সে জায়গাতেই, রাজ্জাক সাহেবের রাজনৈতিক ভাবনায় কি ঐ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতা অপসারণকে যথোচিত ছিলো কি না।
সর্দার ফজলুল করিমের ভাষ্যকে বানোয়াট ধরে নিতে হবে- কেনো?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সরদার ফজলুল করিম বানোয়াট কথা বলতে যাবেন কেন? মোহাম্মদ আলীর নেয়া সাক্ষাৎকারের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক - তাঁর প্রশ্ন করার ঢং দেখে।
রাজ্জাক স্যারের বাসায় মেজর ডালিমের যাতায়াত ছিল এবং পঁচাত্তরে ডালিমের বোন ও ভগ্নিপতি (বর্তমানে শিল্পপতি আবুল খায়ের লিটু ) সেখানেই থাকত ।
আমার এক পোষ্টেও এই তথ্য ছিল মেজর ডালিমের রেফারেন্সে ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
কার বাড়িতে কার যাতায়াত ছিল সেটা বোধহয় কারো দৃষ্টিভঙ্গী কিংবা আদর্শ মাপার কোনা মাপকাঠি নয়
মুজিবকে হত্যাকারীরা প্রায় সবাই মুজিবের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন
ডালিম তো প্রায় তার ঘরের লোকই ছিল
মুশতাক তার অতি শ্রদ্ধেয় বন্ধু
জিয়া কি কম ঘনিষ্ঠ ছিলেন মুজিবের?
মুজিবের কোন হত্যাকারী মুজিবের বাড়িতে যাননি?
একমত । হাসান ভাই , সরদার স্যারের রেফারেন্সে রাজ্জাক-ডালিম প্রসঙ্গত তথ্য এনেছেন যাকে সুভাশীষ দা বানোয়াট বলেছেন । বিধায় , আমি জানিয়েছি তথ্যটি বানোয়াট নয় । আর মেজর ডালিমের বঙ্গবন্ধু ,তাজউদ্দীন, সাজেদা চৌধুরী প্রমুখের বাসায়ও যাতায়াত ছিল ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
হুম এটা একটা তথ্য মাত্র :)।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মানিক ভাই,
আমি বানোয়াট বলি নাই। বানোয়াট হতে পারে বলেছি। তাও মোহাম্মদ আলীর সাক্ষাৎকারের ধরণ দেখে।
মোরশেদ ভাই,
এই তথ্য নিয়ে অনেকে হাইপোথিসিস করে ফেলছেন। তাইলে ক্যামনে কী।
আরে নাহ। আমি কেবল একটা তথ্য বলছি একে। শুধু এ থেকে সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয় যে খুনী ডালিমের সাথে রাজ্জাক সাহেবের এ বিষয়ক সংশ্লিষ্টতা ছিলো অথবা ছিলোনা।
হতে পারে, না ও হতে পারে তবে তথ্যটা মিথ্যে নয়।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সক্রিয় আলোচনায় অংশগ্রহন করতে পারছি না। কিন্তু পড়ছি খুব আগ্রহ নিয়ে। ছফাগিরি জারি থাকুক।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ধন্যবাদ
মূল লেখার সাথে এই মন্তব্যগুলোও অমূল্য হয়ে থাকবে। পড়ছি।
কথা ঠিক।
শুভাশীষের একথা ঠিক -- হাসান ভাইয়ের সরব উপস্থিতি ছাড়া ছফাগিরি মোটেও জমতো না। একটা বিপরীত দৃষ্টিকোণের প্রশ্নগুলো জানা হত না মোটেই। এজন্যে হাসান ভাই কে অনেক ধন্যবাদ।
এবার হাসান ভাই প্রথম থেকেই যে বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন বলে নিজেই স্বীকার করলেন, সেদিকে একটু নজর দিই।
এ ব্যপারে পাঁচ নম্বর ছফাগিরিতে লীলেন ভাই বেশ কিছুটা বলেছেন।
আমার মনে হয় সমস্যাটা এখানে -- আপনি ধর্মীয় মৌলবাদ এবং ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে এক করে দেখছেন।
ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ঘাড়ে অনেক ক্ষেত্রেই মৌলবাদ চেপে বসে বটে, কিন্তু সেটা অবশ্যম্ভাবী নয়, এবং সেজন্য ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার অস্তিত্ত্বও লোপ পায়না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর নিপীড়িত ইহুদি সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মধ্যদিয়েই তো জায়নবাদের শুরু। তখনকার বাস্তুহারা ইহুদীদের স্বার্থ-সংস্লিষ্ট আন্দোলনকে আপনি কি বলবেন? মৌলবাদী নাকি জাতীয়তাবাদী? সেই আন্দোলন তার নেতৃত্বের শ্রেণীগত স্বার্থের আবর্তে কাল-পরিক্রমায় আজ ইহুদী মৌলবাদে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সেজন্যে শুরুর দিকের জায়নবাদ একই দোষে দুষ্ট বা অস্পৃশ্য হয়ে যায় না।
ইরাক-আফগানিস্তানে যারা মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করছে, তাদেরকে আপনি কি বলেন?
কথা হচ্ছে ধর্ম একটি জাতি-গোষ্ঠীর আত্মপরিচয়ের নিয়ামক হতে পারে কিনা? যদি ধর্ম একটা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আগ্রাসনের ক্ষেত্রে গোষ্ঠীর পরিচায়ক হিসাবে ব্যবহৃত হয় -- যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদীরা ইহুদীত্বের কারণেই আক্রান্ত হয়েছে, বর্তমানে মার্কিন সাম্রাজ্যে মুসলমান আইডেন্টিটির কারণেই লোকজন হেনস্তা হচ্ছে --- তাহলে আক্রান্ত গোষ্ঠী স্বাভাবিক ভাবেই একই পরিচয় দিয়েই মুক্তি আন্দোলন করবে। ঔপনিবেশিক আক্রমনের নিয়ামক ধর্ম হবার কারণেই উপনিবেশমুক্তির আন্দোলনকারীদের আত্মপরিচয়ও ধর্ম দিয়ে হয়। এখানে আদি ধর্ম পূণঃপ্রতিষ্ঠার পশ্চাদমুখী আন্দোলন, বা মৌলবাদ, মূলশক্তি হিসাবে কাজ করে না।
এই হিসাবে আমার ধারণামতে অন্তত পূর্ব-বাংলায় মুসলিম লীগের আন্দোলন ছিল মুসলিম জাতীয়তাবাদী, মৌলবাদী নয়। বরং এই আন্দোলনের বিরোধিতা করতেই মৌলবাদী জামাতে ইসলামীর জন্ম। এই আন্দোলনের কার্যকারণ নিতান্তই দুনিয়াদারী বা সেকুলার। এবং সেই কারণেই বোধ করি ঐ মুহুর্তে ডঃ আব্দুর রাজ্জাক এবং অন্যান্যেরা এই আন্দোলনকে সমর্থন করেন। পূর্ব-বাংলার মূলত মুসলমান কৃষক সমাজ জমিদারি শোষনের মুক্তি আকাঙ্খা থেকেই এই আন্দোলন সমর্থন করে, আল্লার আইন কায়েম করার জন্য নয়।
সহজ কথায়, একটা জনগোষ্ঠীকে জাতি বলা যায় যদি তার একটা একক অর্থনৈতিক লক্ষ্য, পরিণতি বা সত্বা থাকে। এই জাতি বাহ্যিক পরিচয় স্থান দিয়ে হতে পারে (যুক্তরাষ্ট্র/কানাডা), ভাষা দিয়ে হতে পারে (বাঙালি), গায়ের রং দিয়ে হতে পারে (মার্কিন কৃষ্ঞাঙ্গ জাতি), বংশ-গোত্র দিয়ে হতে পারে,
আচার-বিশ্বাস-ধর্ম এসব দিয়েও হতে পারে। অর্থনৈতিক উৎপাদন-সম্পর্কের টানাপড়েনের সীমারেখা যখন যে পরিচয়কে ধরে সবচেয়ে প্রকট হয়ে ওঠে, সেটাই তখন জাতীয়তার নিয়ামক হয়।
ঠিকাছে। কথাসংক্ষেপ করার জন্য ধরে নিলাম মুসলীম লীগের আন্দোলন ছিল মুসলিম জাতীয়তাবাদী। তো, এই মুসলিম জাতীয়তাবাদী জিনিসটা কি? হিন্দু-মুসলমান আলাদা জাতি-এই তো? পাশের ঘরের হিন্দু আমার পর আর পাঞ্জাবের মুসলমান আমার ভাই। যেহেতু মুসলমানরা সংখ্যায় গরিষ্ঠ সুতরাং এটা তাদের দেশ বাকী ৪০% এর বেশী অমুসলিম এই দেশ আর তাদের দেশ না। এদেরকে মেরে ধরে পিটিয়ে এই বাংলা থেকে বিদায় করতে হবে।
এটা যদি সাম্প্রদায়িকতা না হয় তো কোনটা সাম্প্রদায়িকতা? কোন যুক্তিতে কোন কারনেই সাম্প্রদায়িকতাকে সমর্থন করা অশুভ।
ঐ অশুভ জোয়ারে একটা সময়ের মানুষ ভেসেছিলো। এটা ঐ সময়ের মানুষের দায়। তাদের অনেকেই পরবর্তীতে সে দায় থেকে মুক্ত হবার চেষ্টা করেছেন।
এ সময়ে এসে যদি আমরা নানা যুক্তি তর্কে ঐ সময়, ঐ সময়ের মানুষের অশুভ স্রোতে গা ভাসানোকে জায়েজ করার চেষ্টা করি সেটা আমাদেরকে আরো অন্ধকারে ঠেলে দেয়।
আর ইহুদী জাতীয়তাবাদ এবং মুসলিম,হিন্দু,খ্রিষ্টান জাতীয়তাবাদ এক জিনিস না। ইহুদীরা বৈজ্ঞানিকভাবেই এক জাতি হিসেবে স্বীকৃত। জেরুজালেম থেকে সকল ইহুদীদের বহিস্কারের পর তারা নানা দেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল ঐ ইহুদীদের বংশধররাই সংখ্যাবৃদ্ধি করেছে।পৃথিবীর সকল ইহুদীর নৃতাত্বিক সাদৃশ্য আছে। বাংলার মুসলমানের সাথে আরবের মুসলমানের ধর্মবিশ্বাস ছাড়া আর কিসের সাদৃশ্য আছে বলুন তো? জায়নবাদ ঠেকাতে মুসলিম জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেনি, গরে উঠেছিলো আরব জাতীয়তাবাদ কারন মুসলিম জাতীয়তাবাদ বলে কিছু নেই আসলে এটা একটা ধান্দাবাজী ছাড়া আর কিছু না।
আপনি দেখি ভাই মুসলিম লীগকে একেবারে কমিউনিষ্ট বানিয়ে দিলেন। জমিদারী শোষন থেকে মুক্তি লাভের জন্য মুসলিম লীগ! হাহাহা... মুসলীম লীগের জন্ম কাদের হাতে একটু দেখবেন তো? ঢাকার নবাব পরিবার আর মুসলিম লীগের সম্পর্ক একটু জানাবেন।
একটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করা হয় যে ঐ সময় পূর্ব বাংলার হিন্দুরা ছিলো অত্যাচারী জমিদার আর মুসলমান সকল শোষিত কৃষক। মুসলমান জমিদার ছিলোনা ঐ সময়? এদের সমর্থন কার প্রতি ছিলো? হিন্দুদের কতোভাগ ছিলো অবস্থাসম্পন্ন জমিদার আর কতোভাগ ছিলো সাধারন চাষাভুষা শ্রেনীর?
নিতান্ত সাম্প্রদায়িক একটা ঘটনাকে প্রলেতারিয়েত রঙ দেয়ার চেষ্টা!
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আমরা কি ঠিকঠাক কথা আগাচ্ছি? এখানে খারাপ কিছুকে জায়েজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে না। ইতিহাসে যা ঘটে গেছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
সাম্প্রদায়িকতা খারাপ। কিন্তু সেটার জন্ম এবং সেটা নিয়ে কিভাবে
আমরা বসবাস করছি সেগুলোর ইতিহাস ঠিকঠাক জানা দরকার।
আমাদের আশেপাশে এত বই সেখান থেকে রেফারেন্স টানেন। কোট করেন। ক্লিয়ার করেন। তারপর আমরা আলোচনায় যাই।
একটা সহজ প্রশ্ন করি। একটু ভিন্ন প্রসঙ্গ। বাই দা ওয়ে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা সেইকালে হল না। এর ইমপ্যাক্ট কি হত?
মানে সেইকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে তার ইম্প্যাক্ট কি হতো? সহজ উত্তর- পূর্ববাংলার মুসলমান ও হিন্দু গরীবগোর্বাদের ছেলেপেলেরা আরেকটু আগে দুনিয়া চিনতো।
বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়ায় ক্ষতি এই বাংলার মুসলমানের শুধু হয়নি-হিন্দুর ও হয়েছে।
না হওয়ার পেছনে পশ্চিম বঙ্গীয়দের আঞ্চলিক রাজনীতি মুখ্য ছিলো-ধর্মীয় নয়।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মুসলিম লীগ কে কমিউনিষ্ট বানালো কে? এখানে তো বাঙালী-কৃষক সমাজের মুসলিম লীগ সমর্থনের সাইকোলজী ব্যাখ্যা করলাম মাত্র।
এই সমর্থন যে তারা করেছিল সেটাত ঐতিহাসিক সত্য। এটাকে সাময়িক ভুল মনে করে অ্যাপলজিস্ট সাজার চাইতে তার কার্যকারণ ব্যাখ্যাই কি অধিকতর কাম্য নয়?
মুসলিম লীগের পাকিস্তান আন্দোলন উঠতি মুসলিম মধ্যবিত্তের একটা আলাদা বিকাশ-ক্ষেত্র তৈরির আন্দোলন।সেটার বাহ্যিক রূপ জন-আকাঙ্খাকে ধারণ করেছে বলেই তারা সেটা সমর্থন করেছে।
ছয় দফা কি একই রকম বুর্জোয়া আন্দোলন নয়? সেটা সময়ের প্রেক্ষিতে বাঙালী জনগনের মুক্তি-আকাঙ্খাকে ধারণ করেছে বলেই তা সমর্থন পেয়েছে। এবং এই জনস্রোতের চাপেই তা স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের কৃতিত্ব যে তারা নিজেদের শ্রেণী-স্বার্থের বাইরের এই চাপকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে।
যাহোক, আমি মূলত ধর্মীয় মৌলবাদ আর ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের পার্থক্য নির্দেশ করতে চাইছিলাম।
ইহুদীদের নৃতাত্বিক সাদৃশ্য আছে বলেই তারা জাতি? ট্রাইবাল সমাজ ছাড়া আর কোন জায়গায় গেলে আপনি এই রকম নৃ-তাত্ত্বিক সমবৈশিষ্টের জনগোষ্ঠী পাবেন?
ভাল করেই জানেন জাতীয়তার ক্ষেত্রে নৃতাত্বিক বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্বটা আসলে কাল্পনিক। এই বাঙালী জাতিকে কি আপনি পিওর নৃতাত্ত্বিক একটা গোষ্ঠী মনে করেন?
যেটা বলছিলাম, জাতীয়তা আসলে উপনিবেশবাদের একটা প্রতিক্রিয়া, এইটার চিরন্তন সুস্পষ্ট কোন সীমানা নাই।
আর বর্তমান ইসরায়েলের জায়নবাদ কি জাতীয়তাবাদ না পূন্যভুমি প্রতিষ্ঠার মৌলবাদ?
এর বিপরীতে আরব-মুসলমান জাতীয়তা সংগঠিত হয়েছে। এর সাথে বাঙালী মুসলমানের সম্পর্ক থাকবে কেন?
ফরাসী সরকার যখন মুসলমান মহিলাদের হিজাব নিষিদ্ধ করে, তখন কোন চেতনায় সেখানকার মুসলমান (এবং অন্যান্য প্রগতিশীল শক্তি) এর বিরোধিতা করে? সেটা কি মৌলবাদ নাকি জাতীয়তাবাদ?
বাংলাদেশের নিপীড়িত হিন্দু সম্প্রদায় যদি স্বাধীন বঙ্গভুমি প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে, সেটা কি জাতীয়তাবাদ, নাকি বিজেপির রামমন্দির প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের মতন মৌলবাদ?
আসাদ ভাই, আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
তবে এ পোষ্টকে আর মন্তব্য ভারাক্রান্ত না করি। আপনার মন্তব্য আলাদা পোষ্ট দাবী করে।
আমার কথা খুব স্পষ্ট- সাম্প্রদায়িকতার জবাব হিসাবে আরেক সাম্প্রদায়িকতা আমার কাছে কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়। যুগের পর যুগ ইহুদীরা যে নির্যাতনের শিকার হয়েছে তার নিন্দা যেমন করতে হবে এর জবাবে ইহুদীদের বর্তমান সাম্প্রদায়িকতাকে জায়েজ করা যাবেনা।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হয়েছেন,দেশছাড়া হয়েছেন কিন্তু এর জবাব হিসেবে বাঙ্গালী হিন্দুদের আলাদা রাষ্ট্র বঙ্গভূমি- না আমি মানতে পারিনা।
একই সুত্রে দেশ বিভাগের আগে পূর্ববাংলার মুসলমানরা যতোই সাম্প্রদায়িকতার শিকার হোন তার সমাধান হিসেবে শুধু মুসলমানের দেশ- এটা ও যে কোন শুভ সমাধান ছিলোনা ইতিহাস তার স্বাক্ষী।
জাতীয়তাবাদ প্রসংগে আপনি আলাদা পোষ্ট দেন। আলোচনা করি। আপনাকে ধন্যবাদ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ঠিকাছে, জাতীয়তাবাদ নিয়ে আলোচনা বাদ দিলাম। আমার নিজের এমন কোন জ্ঞান নেই যে পোস্ট দেব। মন্তব্যে যা বলি, সেটা নিতান্ত নিজস্ব চিন্তা প্রসূত। ধর্ম-জাতীয়তা-সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে মনে অনেক গুলো প্রশ্নের স্রোত শুরু হয়েছিল প্রায় এক বছর আগে সচলায়তনের একটা পোস্ট এর সূত্র ধরে। তখন ছফার 'বাঙালী মুসলমানের মন' এবং রিচার্ড ইটনের "রাইজ অফ ইসলাম ইন বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার" পড়ছিলাম। গত এক বছরের টুক-টাক পড়াশোনায় ধারণা গুলো খুব একটা বদলায়নি। তবে ধারণার অসম্পুর্ণতা/অস্পষ্টতার জায়গাও রয়ে গেছে। যাকগে।
আমি এদিকে পার্থ চ্যাটার্জির 'ন্যাশনালিস্ট থট এণ্ড কলোনিয়াল ওয়ার্ল্ড- আ ডেরভেটিভ ডিস্কোর্স' নিয়ে একটা বহিরঙ্গ নামানোর চিন্তা করছি।
বই নিয়ে আলোচনা আমার ব্যাপক পছন্দের জিনিস।
চমৎকার লেখা , চমৎকার আলোচনা। যদিও রাজনৈতিক তর্ক বিতর্কে আমি আর তেমন উৎসাহ পাইনা। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতাতেই দেখেছি, রাজনীতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে ব্যাপক যুক্তি-পাল্টা যুক্তি চলে, কিন্তু শেষে যে যার তালগাছ নিয়ে বাড়ি যায়।
এ জাতীয় আলোচনায় অনেকে দুধের দাঁতের শিরশিরানী কমাতে যেখানে সেখানে কামুড় দিয়ে বসে, কী দরকার এসবের ভিত্রে যাবার?
তার চেয়ে একটা কৌতুক বলি শোনেনঃ
এক জঙ্গলে কোন একটা লাল পিঁপড়া ভীষণ বিষন্ন মুখে একা একা হেঁটে যাচ্ছে। দেখে তাকে থামায় এক ধাড়ি শেয়াল। জিগায়,' কীরে তোর মুখচোখ এমুন শুকনা ক্যান?'
জবাবে পিঁপড়া বাবাজি ডানে বামে তাকিয়ে গলা নামিয়ে শেয়াল মামুকে বলে, ' শোনেন নাই? কাইল রাইতে এই জঙ্গলে একটা মাদি হাতি রেইপড হইসে।'
শিয়াল পন্ডিত অবাক হয়ে বলে, ' হ শুনছি,জঙ্গলে তোলপাড় লেগে গেছে সেই ঘটনায়। কিন্তু সেটার সাথে তোর মন খারাপের সম্পর্ক কী?
লাল্টু পিঁপড়া জবাবে গভীর দুশ্চিন্তে চেহারায় ফুটিয়ে বলে,' সেই ঘটনায় সগগলে আমার সন্দ করতেছে।'
আপনার এই মন্তব্যে আপনি এই পোস্টে যারা মন্তব্য করেছেন, তাদের অন্তত একজনকে অপমান করার চেষ্টা করেছেন। নাম উল্লেখ করে বললেও অনেক সময় খারাপ শোনায় না, এখন যতটা শোনালো।
এই প্রবণতা হানিকর। আপনি আজকে করলেন, কেউ কিছু বললো না, কালকে করবেন, কেউ কিছু বলবে না, পরশু করবেন, তখন দেখবেন একসাথে অনেকে অনেক কিছু বলছে।
কারো কোনো কথা পছন্দ না হলে সেটার নিচে জবাব দেয়ার অপশন সচলে আছে। সেই অপশনটা গ্রহণ করতে পারেন।
জনান্তিকে ফোড়ন সবাই কাটতে পারে না বস। অ্যাট লিস্ট, আপনারটা হয় না ।
@মানিক ভাই, এই পোস্টের সাথে সম্পর্কিত একটা প্রশ্ন আপনাকে করি। ছফার বক্তব্য অনুসারে শেখ মুজিব বা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের ধারণাও ছিলনা যে তারা বাঙালী জাতি মুক্তি-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছে। তারা মূলত স্বায়ত্বশাসিত পূর্ব-পাকিস্তান চেয়েছিল, যেখানে আমলা-বণিকেরা একটা পৃথক বিকাশ ক্ষেত্র পাবে। যেকারণে সশস্ত্র সংগ্রামের কোন প্রস্তুতি তাদের ছিলনা।
এখন, হাসান ভাই অন্য একটা দৃষ্টিকোণ থেকে একটা হাইপোথিসিস তুলে ধরেছেন, যার সারকথা হল আওয়ামী-লীগের সমর প্রস্তুতি পুরোপুরিই ছিল, কিন্তু সেটা প্রকাশ করা হয়নি আন্দোলনের চুড়ান্ত প্রস্তুতি এবং বৈধতার স্বার্থে -
আপনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে অনেক তথ্যনির্ভর গবেষণা করেছেন বলেই আপনার কাছে এই তত্ত্বের পক্ষে বা বিপক্ষে তথ্য দাবী করছি।
@ আসাদ ভাই,
প্রস্তুতি ছিল (আশানুরুপ ও যথেষ্ট না হলেও )। আমার "স্বাধীনতা যুদ্ধের অপর নায়কেরা'' গ্রন্থে বিস্তারিত আছে । প্রকাশক, শুদ্ধস্বর , আজিজ মার্কেট , তিনতলা ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
বইটা বe করে ছেড়ে দেন। একটু পড়ি।
একটা প্রশ্ন বা বিতর্ক অনেক মন্তব্যপ্রদানকারীর লেখাতেই এসেছে যে, শেখ মুজিব ২৫শে মার্চের আগের মুক্তিযুদ্ধের জন্য জাতিকে সামরিকভাবে প্রস্তুত করেননি। ছফাও তাইই লিখেছেন -
"তিনি জনগণকে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য তৈরি না করে তাদেরকে একটার পর একটা তামাশার মধ্যে ঠেলে দিয়ে অনাবশ্যক সময় হরণ করেছেন। আর ইত্যবসরে পাকিস্তানিরা জাহাজে প্লেনে বোঝাই করে পশ্চিমাঞ্চল থেকে সৈন্য এবং মারণাস্ত্র এনে সেনা ছাউনিগুলো বোঝাই করে ফেলেছে। সেই সম্ভাবনাময় সময়ের কোন সুযোগ তিনি গ্রহণ করতে পারেননি। "
কারো কারো মতে (উপরের কোন একটা মন্তব্যের মধ্যেও এটা এসেছে মনে হয়) মুজিবের এই ব্যার্থতার কারনে আমাদের (বাঙালিদের) পক্ষে ভারতীয় সাহায্য না নিয়ে নিজেদের মুক্তিযুদ্ধ নিজে নিজে লড়ে নিজেরাই জিতে যাওয়ার অতুলনীয় কৃতিত্ব থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি।
এই ধরনের বক্তব্য আমি বহুদিন ধরেই শুনে আসছি।
একাত্তর-পরবর্তী প্রজন্মের এক নেহাৎ অজ্ঞ-অর্বাচীন পাঠক হিসাবে আমার একটা বিনীত কোতুহল আছে। এখানে ভয়ে ভয়ে সেটাই প্রকাশ করছি। কোন প্রাজ্ঞজন উত্তর দিয়ে আমার কৌতুহল নিরসন করলে বাধিত হব।
আমার প্রশ্নটা খুব সহজ, আর তা হলো -- মুজিব ঐ সমর-প্রস্তুতিটা কিভাবে নিতেন ?
বিশেষ করে সুপ্রশক্ষিত, পুরোদস্তুর এয়ারফোর্স-নেভি-আর্টিলারি-আর্মার্ড/মেকানাইজড ডিভিশন-ট্যাঙ্ক-কামানবাহিনী সহ প্রায় দাঁত পর্যন্ত অস্ত্রসজ্জিত এক সুবিশাল নিয়মিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উনি কি এবং কিভাবে সমরপ্রস্তুতি নিতেন ?
অর্থ পেতেন কোথায় ? উপরোল্লিখিত বিশাল সেনাবাহিনীকে মোকাবেলার উপযুক্ত বিপুল ও ভারী অস্ত্র পেতেন কোথায় ? সেসবের নিয়মিত সরবরাহ বা চালান আসতো কার কাছ থেকে এবং কোন পথ বা রুট ধরে ? (ও হ্যাঁ, সশস্ত্র সংরামের চেষ্টাটা বামপন্থীরা কি বহুকাল ধরে চেষ্টা করে করে ব্যর্থ হননি?)। এসবের পয়সা আসতো কোত্থেকে ও কিভাবে ? কে দিত ?
এটাতো সুস্পষ্ট, ভারতীয়রা প্রথমদিকে এখানে স্বাধীন রাষ্ট্র চায়নি নিজস্ব অভ্যন্তরীন কারনেই। মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে এসেও মুক্তিযোদ্ধাদের ভারী অস্ত্র তারা দিতে চায়নি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই তারা আমাদের বিপুল পরিমান ভারী অস্ত্র (কামান, ট্যাঙ্ক, প্লেন - বহর ইত্যাদি?) যোগান দিয়ে বা যোগানে সাহায্য করে কিছুতেই সাহায্য করতো বলে মনে হয় না। তো এমতাবস্থায়, আমাদের চতুর্দিক পরিবেষ্টনকারী ভারতকে বাদ দিয়ে আবার পাকিস্তান সরকারের চোখকেও ফাঁকি দিয়ে মুজিব কোন পথে এত অস্ত্র বাংলাদেশে আনতেন ?
আর সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে এত সৈন্যের এত অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষন কোথায় হতো ? সৈন্য রিক্রুট হতো কোথা থেকে ? এই সৈন্যবাহিনী বা গেরিলাবাহিনীকে সংগঠিত করতো কে ? আওয়ামী লীগ কি একটা গোপন সশস্ত্র গেরিলাবাহিনী ছিল, নাকি একটা নিয়মিত রাজনৈতিক দল ? মুজিব কি ভিলুপিল্লাই প্রভাকরন ছিলেন, নাকি তার সেরকম হওয়া উচিত ছিল ? আওয়ামী লীগ কি "লিবারেশন টাইগার্স অফ বাংলা ইলাম" রুপ ধারন করে দীর্ঘ ২৭ বা ৪০ বছর ধরে রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী যুদ্ধ চালিয়ে গেলে ভালো করতো, নাকি সেটা পারতো ? তা ছাড়া, ৯ মাসে যদি ৩০ লক্ষ মারা যায় -- ২৭ বা ৪০ বছরে কত কোটি মারা যেত ? যারা আজ স্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেন, তারা আজ কোথায় থাকতেন তাহলে ? যারা 'কৃতিত্বের' ভাগ ভারতীয়দেরও দিতে হলো বলে আক্ষেপ করেন, তাদের কাছে কি কোটি কোটি স্বদেশবাসীর সম্ভাব্য মৃত্যুর থেকে ঐ 'কৃতিত্ব'টাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ ? এটা কি একটা খেলা ??????????????
এটা হয়তো বলা যেতে পারে যে ভারতীয়দের কাছ থেকে আংশিক সহায়তা (যট্টূক ওরা দেয় আর কি) নিয়ে হাল্কা-পাতলা কোন প্রস্তুতি নিয়ে রাখা যেতে পারতো। সমস্যা হলো, তাতেও তো মনে হয় ৭১-এ ঘটনা যেদিকে গড়িয়েছে, সেদিকেই গড়াতো। বরং অবস্থা অনেক অনেক খারাপ হতে পারতো। এবং শেষমেশ ভারতীয় ইন্টারভেনশন লাগতোই। তাই নয় কি ?
ছফা উপরের উদ্ধৃতিতে আরো বলছেন যে, মুজিব "ইত্যবসরে"র "সম্ভাবনাময় সময়ের কোন সুযোগ" নেননি। এই ""ইত্যবসরটা" কতদিনের ছিল ? ১ মাস? ২ মাস? এইটুক সময়ের মধ্যে কি এমন 'সমর-প্রস্তুতি' নেয়া যেত যাতে করে পাকিস্তানিদের আমরা একাই হারিয়ে দিতে পারতাম ?
আমি যুদ্ধবিদ্যা সম্পর্কে কিছুই জানি না। এবিষয়ে আমার অজ্ঞতা হিমালয়সম। এবং আরো অনেক বিষয়েও (এটা আমা ছদ্মবিনয় নয়!)। আশা করি বোকার মত কিছু জিজ্ঞেস করে থাকলে আমার এই অজ্ঞতা প্রাজ্ঞজনেরা নিজগুনে ক্ষমা করে দিয়ে আমাকে আলোকিত করে তুলবেন।
ধন্যবাদান্তে,
মনমাঝি
সরাসরি কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনার প্রশ্নগুলো বেশ স্পেসিফিক। ছফার করা হাইপোথিসিস নিয়ে (ছফাগিরির কিস্তি সাতে) আমি সন্দেহের কথা বলেছিলাম।
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সমরপ্রস্তুতি কী হওয়া উচিত ছিল বিষয়ে আমার কাছে উপাত্ত বেশি নেই (দেশের বাইরে বসে এই্ধরণের লেখালেখি করার এটাই প্রধান সমস্যা)। যাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য আছে, তাঁরা এগিয়ে আসলে খুব ভালো হয়।
প্রশ্নগুলোর স্পেসিফিক উত্তর দিতে না পারলে আরেকটা উপপাদ্য দাঁড় হয়। লজিক্যাল ফ্যালিসিতে।
শেখ মুজিব একাত্তরে যা করছেন ঠিক করেছেন। এর চেয়ে ভালো কিছু করা তাঁর পক্ষে কেন আর কারো পক্ষেই সম্ভব ছিল না।
আপনি কি সেটাই চাইছেন? এটা মানতে কোন বাধা নেই- শেখ মুজিব মহান নেতা ছিলেন। তাঁর ভুল ত্রুটিগুলো নিয়ে সুস্থ আলোচনা অনেক সত্যের মুখোমুখি করায়। আলোচনা করতে গেলে তাঁকে আমরা দেবতা না হয় প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলি। এখান থেকে বেরিয়ে এসে ঠিক করে মুজিবকে বুঝে নেয়া জরুরি।
একটা প্রশ্নের কিছুটা মোকাবেলা করি।
মুজিব ঐ সমর-প্রস্তুতিটা কিভাবে নিতেন?
পাকিস্তান এভাবে সশস্ত্র হয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে-এটা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অনেকেই ভাবেননি। খোদ মুজিবও। পাকিস্তান তাঁদের ব্যারাক যে অস্ত্রে ভর্তি করছিল এই ব্যাপারে তথ্য তাঁদের কাছে ছিল। যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পরে নিরীহ জনগণকে হায়েনার মুখে ছেড়ে দেয়া কোন ভালো স্ট্র্যাটেজি নয়। ভারত থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র আনা না গেলেও সময় নিয়ে প্রচুর সংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র আনিয়ে রাখা যেত। সাতই মার্চের ভাষণের আঠারো দিনের মাথায় পাকিস্তান অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই ভাষণে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ঘোষণা করলেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একটা আশা মাথায় ছিল- একটা কোন সমাধান এসে পৌঁছাবে। হায়েনাদের বিশ্বাস করতে নেই- এই কথা অন্তরে ধারণ করেন নাই বলেই সমরপ্রস্তুতি নেয়ার চিন্তা দুরস্ত হয়ে গিয়েছিল।
সমরপ্রস্তুতি নেয়ার চিন্তা শক্তপোক্তভাবে চিন্তা করলে শেখ মুজিবুর রহমান অনেক কিছুই করে ফেলতেন। তাঁর সেই ক্ষমতা ছিল। তখন আপনার বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়া খুব সহজ হয়ে যেত।
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
শুভাশীষদা,
উত্তরের জন্য ধন্যবাদ।
স্পেসিফিক প্রশ্ন না করে তো উপায় নেই! একটা জাতির অস্তিত্বের প্রশ্ন যেখানে জড়িত, কোটি কোটি মানুষের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন যেখানে জড়িত , সেটা নিয়ে - বা সে বিষয়ে আলোচনা-প্রসঙ্গে (এবং জাতীয় জীবনে যে আলোচনার গুরুত্ব ও প্রভাব এখনও অপরিসীম) স্পেসিফিক ও অব্জেক্টিভ না হয়ে কথার ফানুস রচনা বা কাব্যসাহিত্য চর্চা করার ধৃষ্টতা আমার নেই। তাছাড়া, আমি যদ্দুর জানি -- ইতিহাসচর্চা, বা জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্য যে কোন শাখায় চর্চা করার ক্ষেত্রেও বস্তুনিষ্ঠ স্পেসিফিসিটি একটি মৌলিক শর্ত। আমার জানা মতে সৃজনশীল কাব্য-সাহিত্য আর সিরিয়াস জ্ঞানচর্চা-র মধ্যে এটা একটা মৌলিক পার্থক্য। গালিভার্স ট্রাভেলস আসলে একটা রুপকধর্মী পলিটিকাল স্যাটায়ার-মূলক মহান উপন্যাস হলেও হতে পারে, কিন্তু এটা কোনভাবেই সুইফটের সময়কার ইংল্যান্ডের উপর একটা ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান বা পলিটিকাল সায়েন্সের সিরিয়াস গ্রন্থ বলে বিবেচিত হতে পারে না; যেমন কিনা মেরি শেলির 'ফ্রাঙ্কেস্টাইন' (কারো কারো মতে) সায়েন্স-ফিকশনের আদিগ্রন্থ হলেও -- কোনভাবেই 'সায়েন্স' নয় ! সমস্যা তখনই হয়, যখন কোন কোন প্রভাবশালী লেখক বা ব্যক্তিত্ব এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্যটা গুলিয়ে ফেলেন -- বা ফেলতে বা দিতে চান! আর সেটা যদি হয় একটা জাতির মুক্তিসংরাম আর কোটি কোটি স্বদেশবাসীর জীবন-মৃত্যুর সাক্ষাৎ সঙ্কট প্রসঙ্গে, তখন ব্লান্টলি অব্জেক্টিভ ও স্পেসিফিক হয়ে কল্পনা থেকে বাস্তবতাকে আলাদা করার চেষ্টা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। সে দায়িত্বটুকু যোগ্য ব্যক্তিদের নিতে হয়। আমার সে যোগ্যতা নেই, স্রেফ প্রশ্ন উত্থাপন করা ছাড়া। আমার বিশ্বাস দ্বিধাহীন, সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট, লাগসই ও সুনির্মিত প্রশ্ন সবসময়ই সত্য-উদ্ঘাটনের বা সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের প্রথম পর্ব। এটা কখনই 'ফ্যালাসি' হতে পারে না। 'ফ্যালাসি' তখনই হয় বা পাওয়া যায় -- "প্রশ্নগুলোর স্পেসিফিক উত্তর দিতে না পারলে" নয় (কেননা, খুব সহজ একটা স্পেসিফিক উত্তর কিন্তু আছেই-'জানি না'), বরং যখন 'প্রশ্ন' করলেই অবধারিতভাবে তার মাঝে অন্তর্নিহিত পূর্ব-নির্ধারিত উত্তর, উপপাদ্য বা ভিন্ন উদ্দেশ্য অনুমান করে নেয়া হয়। আমাদের রাজনীতিবিদদের মধ্যে এটা খুব বেশি দেখা যায় - সম্ভবত আমাদের জাতীয় চরিত্রেও এটা অনেকখানি আছে। আমি নিশ্চিত নই - তবে মনে হয় এর পিছনে গোষ্ঠিতান্ত্রিক ও সামন্তবাদী চিন্তা-চেতনার অনেকখানি প্রভাব আছে। এটা কোন স্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়া নয়। বরং, চিন্তার প্রগতি-বিরুদ্ধ একটা মনোভঙ্গি।
বিঃদ্রঃ শুভাশীষদা, আপনার সামান্য দুয়েকটা মন্তব্যের সূত্র ধরে এত কথা বলে ফেলার জন্য আষা করি কিছু মনে করবেন না - এমনকি এগুলো আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলাও নয়। ছফার ঐ মন্তব্যগুলি আরো অনেকের মুখেই আমি শুনেছি, বিশেষ করে আওয়ামী-বিরোধী শিবিরের বুদ্ধিজীবি ও রাজনিতীবিদদের মুখে। কিন্তু তারা কখনই তাদের এসব 'কি হলে কি হতে পারতো'-মার্কা বাক্য-ফানুস সম্পর্কে কোন রকম প্রশ্ন এন্টারটেইন করেন না বা নিজ বক্তব্যের দায়িত্ব নেন না, ওন করেন না। প্রশ্ন করলেই নি-জার্ক প্রতিক্রিয়া দেখান এবং প্রশ্নকারীর উদ্দেশ্য ও দল-পরিচয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। একই কথা অন্য পক্ষের বেলাতেও সমান সত্যি। রাজনীতিবিদদের বেলায় হয়তো এমন আচরন অনেকখানিই তাদের সচেতন রাজনৈতিক কৌশলের অংশ, কিন্তু একজন সিরিয়াস, দায়িত্বশীল ও সৎ লেখকের কাছ থেকে এমন আচরন মোটেই কাঙ্খিত নয়। তাকে তাঁর বক্তব্যের দায়িত্ব নিতেই হবে, যদি তিনি গুরুত্ব পেতে চান বা সত্যিই কোন পজিটিভ ভূমিকা রাখতে চান।
অন্যভাবে বললে, আপনি যদি দাবি করেন যে কোন কিছু - বিশেষ করে এমন চরম ক্রিটিকাল একটা বিষয়ে যার উপর কোটি মানুষের জীবন-মৃত্যু ও স্বাধীনতা নির্ভর করছে - সেটা 'এইভাবে' না করে 'অন্যভাবে' করলে ভালো হবে বা ভালো হতো -- তাহলে এটা আপনাকেই কঠিন বাস্তব বিশদ ও স্পেসিফিক তথ্য এবং নিরেট যুক্তি দিয়ে দেখাতে হবে এবং প্রমান করতে হবে যে ঐ 'অন্যভাবে'টা কিভাবে বাস্তবসম্মতভাবে বাস্তবায়িত হতে পারতো এবং তাতে কি ফল আসত এবং সেটা কেন ও কিভাবে 'এইভাবে' করায় আসা ফল থেকে আরো ভালো হবে বা হতো। এই লিঙ্কটা কঠিন বাস্তব্বাদী স্পেসিফিসিটির মাধ্যমে আপনাকেই (এক্ষেত্রে ছফাকে) প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
দাবি প্রমান করার দায়িত্ব সবসময়ই দাবিকারীর। দ্য ওনাস ইজ অলওয়েজ অন হিম! রাজনীতিবিদদের বেলায় আমরা যদি এটা উপেক্ষা করিও -- একজন সৎ, বিবেকবান, সিরিয়াস, গুরুত্বপুর্ণ ও গনণযোগ্য লেখক বা চিন্তাবিদ হওয়ার দাবিদারের কাছে এর চেয়ে চুলমাত্র কম কিছু গ্রহনযোগ্য নয়, হতে পারে না! অন্ততঃ জাতির জীবনের সর্বকালের গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিনতম সন্ধিক্ষন ও তার পরিণতি সম্পর্কে তো বটেই!! যিনি এটা পারেন না, যার কাছে এসব দায়িত্ব পালন 'বাৎ কি বাৎ'-এর চেয়ে উর্ধের কোন বিষয় -- তাকে গুরুত্বপূর্ণ বা গননযোগ্য বলে ভাবতে সত্যি আমার ভীষণ কষ্ট ও অসুবিধা হয়। ছফা কি এ প্রসঙ্গে দায়িত্বহীণ 'বাৎ কি বাৎ' - এর চেয়ে খুব একটা উর্ধে উঠেছিলেন ?
এবার আসুন, আপনার দুয়েকটা স্পেসিফিক মন্তব্য সম্পর্কে কিছু স্পেসিফিক প্রশ্ন বা মন্তব্য করিঃ
## স্পেসিফিক "প্রশ্নগুলোর স্পেসিফিক উত্তর দিতে না পারলে আরেকটা উপপাদ্য দাঁড় হয়"।
=>> উত্তর না দিতে পারলে যা উনি জানেন না এমন বিষয়ে ছফার এইসব অর্থহীন, অরক্ষনীয়, বিভ্রান্তিকর 'বাৎ কি বাৎ' তোলাই উচিৎ হয়নি। আবারো বলছি, মুক্তিযুদ্ধটা তো কোন ছেলেখেলা ছিল না বা আমার - আপনার - আমাদের - আমাদের পরিবার, আত্নীয়-স্বজন-প্রিয়জন বা সমাজ ও দেশের কোটি মানুষের জিবন-মৃত্যু-স্বাধীনতা তো এমন কোন তুচ্ছ বা ফালতু বা ঠাট্টা-ইয়ার্কি-হেলাফেলার বিশয় নয়, যে, না জেনে যে যা খুশি বলবে আর সেটাই আপ্তবাক্য বা মহাজন-বাক্য মনে করে বিনাপ্রশ্নে মাথায় তুলে নাচতে হবে ! সুতরাং, উত্তর না জেনে বা না দিয়ে থাকলে এ প্রসঙ্গে সব্রকম তুলোধুনোই ছফার ১০০% প্রাপ্য হবে।
আর হ্যাঁ, কি উপপাদ্য দাঁড় করাবেন সেটা আপনার ব্যাপার। অন্য উপপাদ্যও থাকতে পারে - অন্তত আমার প্রশ্নে কোন পূর্ব-নির্ধারিত উপপাদ্য নেই - সত্য বোঝার অবিমিশ্র আগ্রহ ছাড়া।
## ''শেখ মুজিব একাত্তরে যা করছেন ঠিক করেছেন। এর চেয়ে ভালো কিছু করা তাঁর পক্ষে কেন আর কারো পক্ষেই সম্ভব ছিল না। ......আপনি কি সেটাই চাইছেন? "
=>> সবিনয়ে বলি -- এটা আপনার বক্তব্য, আমার নয়। আমি এমন কিছু বলছিও না, চাইছিও না। আমার প্রশ্ন আসলে এমনকি সার্বিকভাবে মুজিবের 'একাত্তরের' ভূমিকা নিয়েও নয় -- বরং শুধুমাত্র একটা কাল্পনিক সম্ভাব্য সমর-প্রস্তুতি মুজিব কিছু বাস্তব প্যারামিটারের প্রেক্ষিতে কিভাবে নিতে পারতেন সে সম্পর্কে কয়েকটা স্পেসিফিক বাস্তব প্রশ্ন মাত্র।
তবে হ্যাঁ, আমার আরো একটা প্রশ্ন আছে আপনার কাছেঃ
ধরুন আমার প্রশ্নের ফ্যালাশাস উপপাদ্য হিসেবে নয়, বরং আমার-প্রশ্ন-নিরপেক্ষভাবেই আপনার উপরের স্টেটমেন্টটা যদি স্পেসিফিকালি মুজিবের সমর-প্রস্তুতি নেয়া না-নেয়া প্রসঙ্গে সত্যিই হয় ("এর চেয়ে ভালো"রও তো একটা সীমা আছে, তো সেই সীমার ভালোটা তো তর্কসাপেক্ষে মুজিবেরটা হতেই পারে, পারে না?), তাহলে এর সাথে অন্য প্রসঙ্গে "তাঁর ভুল ত্রুটিগুলো নিয়ে সুস্থ আলোচনা" করার বিরোধ কোথায় বা সেই সূত্রে "অনেক সত্যের মুখোমুখি" হতে বাধা কোথায় ? কিম্বা তাকে 'দেবতা' বা 'প্রতিপক্ষ' কিভাবে বানানো হয় এতে করে ?
## "ভারত থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র আনা না গেলেও সময় নিয়ে প্রচুর সংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র আনিয়ে রাখা যেত।"
=>> কত দিন লাগতো ? পুরো ব্যাপারটাই ত সত্তরের নির্বাচনের পর পেকে উঠেছিল। গনতান্ত্রিক রায় যে শাসককুল মেনে নেবে না বা এটা বুঝতেও তো আরো কিছু সময় লেগেছিল। তারপর ফেব্রুয়ারী-মার্চের দিকে চরমে উঠে। এর পরে ২৫শে মার্চের আগ পর্যন্ত কত সময় ছিল প্রচুর সংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র আনিয়ে রাখা ? প্রচুর অস্ত্র আনতে প্রচুর সময় লাগে - সেটা কত্থেকে আসতো? টাকা আস্তো কোত্থেকে?
মনমাঝি
........পরবর্তী পোস্টে চলমান....
আমার উপরের পোস্টে, পশ্চাত১দৃষ্টিতে মনে হয় কিছু মন্তব্যে অনর্থক কিছু বার্ব রয়ে গেছে। আপনারও তেমন মনে হলে ক্ষমাপ্রার্থী! নীচে আমার আরও কিছু প্রশ্ন ও মতামত দিলাম। লেখার পরে এতেও দেখছি কিছু বার্ব থেকেই যাচ্ছে! সুতরাং, এবার শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আসলে ছফার ব্যাপারে আমি অত্যন্ত আগ্রহী। বাঙালী মুসলমানের মন সঙ্ক্রান্ত তার কিছু অসাধারন ও গতানুগতিকতার বাইরে পর্যবেক্ষন আছে। তার বেশী লেখা আমি পড়িনি তবে ঐটি পড়েছি এবং আলোড়িত হয়েছি। একজন লেখকের, তা তিনি যত
বড়মাপেরই হোন না কেন -- তার সব বক্তব্যের সাথেই যে একমত হতে হবে এমন কোন কথা নেই। আর কোথাও দ্বিমত হলেই যে তাকে একেবারে উড়িয়ে দিতে হবে - তাও ঠিক নয়। ছফার বেলাতেও এই একই কথা প্রযোজ্য বলে আমি বিশ্বাস করি।
তবে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে বড় লেখকদের কাছে আমরা সাধারনত ব্যক্তিগত আবেগ-অনুরাগ-বিরাগ-সাব্জেক্টিভ অনুমান বা 'বায়াস' বশতঃ আলগা, অপ্রতিরক্ষণীয়, দায়িত্বহীন বা বেফাঁস কথা আশা করি না। সামরিক অপ্রস্তুতি, আত্নসমর্পন, মুজিব-ইয়াহিয়ার আলোচনা, ইত্যাদি নিয়ে অনেকেই অনেক লেবু কচলিয়েছেন। এগুলি সাধারনত আওয়ামী-বিরোধী শিবিরের অনেকে বলে থাকেন (অন্যরাও বলেন)। ছফা ঐ আলোচনাকে মুজিবের 'তামাশা' বলেছেন। কিন্তু আমার জানা মতে কেউই আজ পর্যন্ত তথ্য-প্রমান-উপাত্ত দিয়ে সুনিশ্চিতভাবে কিছুই প্রমান করতে পারেননি। সবই সবার ব্যক্তিগত মতামত বা কল্পনা। আপনি বিদেশে থাক্লেও, বেশীর ভাগ সমালোচকরা তো এখাবেই থাকেন। তাদেরতো উপাত্ত সংগ্রহে কোন অসিবিধা নেই। সবচেয়ে বড় কথা, ছফা নিজেই তো পারতেন! তিনি কোন সলিড তথ্য-প্রমান-উপাত্তভিত্তিক যুক্তি উপস্থাপন করেছেন ?
আসল কথা হলো, ইতিহাসের ব্যপারে পশ্চাৎ দৃষ্টিতে অমন 'এটা করলে ওটা হতো'-মার্কা কথা বলা খুবই সহজ, কিন্তু সে কথা সংশয়াতীতভাবে প্রমান করা বা - তার চেয়েও বড় এবং আসল কথা -- ইতিহাসের ঐ সময় গিয়ে নিজে ঐ কাজটা করে দেখানো অসম্ভব ব্যাপার। সমালচনাকারীকে তো বলা যেতেই পারে, ভাই, হয় আপনি অকাট্যভাবে প্রমান করেন যে ঐ কাজটা ঠিক হয় নাই (তাহলে আমরা অন্তত ইতিহাসের পাঠে সংশোধন আনব) - নয়তো জবাব দেন যে আপনি যদি এতই বুঝেন তো নিজেই ওটা করে দেখালেন না কেন ?
কোন মানুষই ত্রিকালজ্ঞ দেবতা নয়, আক্ষরিক অর্থে ইশ্বরের মতো অন্তর্যামী নয়, সত্যিকারের যাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন ভবিষ্যত১দ্রষ্টা নয় -- মুজিবও ছিলেননা। অনেক মানবীয় ভুলত্রুটি নিয়েই এবং সত্বেও, তিনি এক বিশাল মাপের নেতা ছিলেন। তার সমকক্ষ আর কেউই ঐ মুহূর্তে ছিলেন না। ছফা তো ননই! নাকি তিনি মনে করতেন যে তিনি মুজিবের চেয়েও বড় নেতা ছিলেন, এবং মুজিব যে ভূমিকা পালন করেছেন সেটা উনি নিজেই আরো অনেক ভালোভাবে করতে পারতেন - স্রেফ গলার জোর ছিলনা বলে বা বোকা বাঙালী তাকে চিনে নাই বলে উনি পারেন নাই ?!!! ছফা এমন না ভাবলেও টিভি টক-শো বা পত্রিকার কলামের লেখায় অনেকের সমালোচনার ভঙ্গিতে অন্তত তাই মনে হয়!
কথা হলো, ভুল যদি কিছু হয়ও, মুজিব অন্তত কিছু করে দেখিয়েছেন। ্নিদেনপক্ষে, সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার আকাঙ্খায় অনুপ্রাণিত ও ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছেন। এইসব সমালোচকদের বেশির ভাগ কি করেছেন, বা তাদের কি করার যোগ্যতা ছিল? তারা কি পারতেন ঐ কাজটা করতে? পারলে তা তখন করে দেখালেন না কেন? নাকি, মুজিব যে কাজটা করেছেন সেটা ঐভাবে করার চেয়ে না করাই বরং অনেক উত্তম ছিল? বরং স্বাধীনতা না পেলেই ভালো ছিল? ভুট্টো-ইয়াহিয়া-জিয়া-মোশররফ দের বুটের নিচে থাকলেই অনেক সুখ ও নিরাপত্তা থাকতো? এখন আমরা তালিবান শাসনে দক্ষিন ওয়াজিরিস্থানের মতো পাক
সেনাবাহীনীর প্রিয় ক্রীড়াক্ষেত্রে পরিনত হলেই, বা তার চেয়েও কিছু খারাপ হলেও - বরং ভালো হতো?
আর তা যদি না হয়, তবে কাঊকে তো কিছু করতেই হতো। মুজিব তার সমস্ত মানবীয় সীমাবদ্ধতা নিয়েই, ঠিক সে কাজটাই করেছেন। আর আমি যদ্দুর জানি, এটা করতে গিয়ে তিনি কোন ঐশীক্ষমতা-দিব্যদৃষ্টি-নবুওতপ্রাপ্তি বা এমন কোন অলৌকিক ক্ষমতা দাবি করেননি। সমালোচকদের সে ক্ষমতা থাকলেও থাকতে পারে - তার অন্তত ছিল না বা তিনি তেমন দাবি করেননি বলেই জানি।
এখন কথা হলো, ইতিহাসের সন্ধিক্ষনে এমন চরম সংশয়াকুল দায়িত্ব পালন করতেই হয় একজন প্রকৃত নেতাকে। যেখানে কোন কাজের চূড়ান্ত ফল কি দাঁড়াবে বা কোন পথে এঁগোলে সবচেয়ে ভালো হবে তা আগে থেকে জানার কোন ১০০% নিশ্চিত, অকাট্য বৈজ্ঞানিক, বা ঐশ্বরিক উপায় নেই - সেখানে একজন প্রকৃত মানুষ নেতাই দায়িত্ব নেন সব মানবীয় সীমাবদ্ধতাজাত সিদ্ধান্ত ও সেই সিদ্ধান্তজাত সম্ভাব্য ভুল এবং সে সম্ভাব্য ভুলের কারনে ভবিষ্যতে জাতির কাছে এমনকি চরম ভিলেনে পরিনত হওয়ার বা কেবলমাত্র পশ্চাত১দৃষ্টিসম্পন্ন সমালোচক বা বিরোধীদের হাতে ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সমস্ত আশঙ্কা সত্বেও। নেতা হতে হলে এ দায়িত্ব, এ ঝুঁকি থেকে কোন ছাড়ান-কাটান নেই। এজন্যেই একজন নেতা নেতা হন - আর বাকিরা হয় অনুসারী আর নয়তো পশ্চাৎদৃষ্টি-সর্বস্ব ছিদ্রান্বেষী সমালোচক। অথবা নেতার নামে ভাঁড় বা অন্যের হাতের পুতুল। মুজিব নেতা ছিলেন। আর তাই তার কাজ নিয়ে এত কথা, এত আলোচনা। অথচ ছফা পশ্চাত১দৃষ্টিতে মুজিবের আলোচনাকে 'তামাশা' বলেছেন! কিন্তু উনি এই দায়িত্ব নেয়ার মধ্যে যে কত বড় 'বীরত্ব' থাকতে পারে, 'নেতৃত্ব' থাকতে পারে সেটা দেখতে পানইনি। তার কি ধারনা ছিল যে মুজিব
ইয়াহিয়ার সাথে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করতে গিয়েছিলেন এবং দেশের মানুষের ভবিতব্যের ব্যাপারে তার কোন অনুভূতি বা মাথাব্যাথাই ছিল না? সমালোচকদের কি এই সম্ভাবনার কথা মনে হয় না যে, কি হবে না হবে - কি হতে যাচ্ছে - সেইসব ভয়ঙ্কর সব সম্ভাবনার চিন্তায়, বিবেকের বিশাল চাপ নিয়ে প্রচন্ডভাবে তাড়িত হয়েই মুজিব শেষ্মুহুর্ত পর্জন্ত আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিলেন জাতির ভবিষ্যতের কথা ভেবেই, তাদের সব আকাঙ্খাকে ধারন করেই - তার তত১কালীন বিবেচনায় যেটা সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি বা কৌশল মনে হয়েছে, এবং ভুলের কারনে ইতিহাসে খলনায়ক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়েই? এটা 'তামাশা' না হয়ে বিশাল 'বীরত্বের' ব্যাপারও তো হতে পারে ? আর কেউকি অন্য কোন উল্লেখযোগ্য চেষ্টা নিয়েছিল?
সবচেয়ে বড় নেতাও ভুল করেন, পরাজিত নেতা তো বটেই। কিন্তু মুজিবের আন্দোলন শেষমেশ জয়ীই হয়েছে। তিনি ভিলুপাল্লাই প্রভাকরন ছিলেন না, হন নাই, ঘৃন্যতম সন্ত্রাসীর দাগা নিয়ে ঐ ভাবে মরেন নাই, নিজের জাতিকে শ্রীলঙ্কান তামিলদের অবস্থায় ফেলেও যান নাই। তিনি জয়ী হয়েছেন -- হয়তোবা অনেকখানি মুল্য দিয়ে, এবং কিছু 'ক্কৃতিত্ব' অন্যকে দিয়েই। কিন্তু কেউকি অকাট্যভাবে প্রমান করতে পারবে বা পেরেছে যে ইতিহাসের ঐ সন্ধিক্ষনে সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সংশয়ের কোন অবকাশই ছিল না, বা মুজিব যে যুক্তি ও চিন্তার ভিত্তিতে যেসব কাজ করেছিলেন, ঐ সময়ে ঐসব যুক্তি ও চিন্তার চেয়েও হাজারগুনে বেশি শক্তিশালী, অকাট্য, সংশয়াতীত, এবং স্বতঃসিদ্ধভাবে সর্বজন-দৃশ্যমান বিরোধী তথ্য-যুক্তি-প্রমান ছিল যাতে করে অন্য ভাবে এগোণো যেত এবং তাতে করে ১০০% নিশ্চয়তা সহকারে কাউকে কোন কৃতিত্ব না দিয়েই এবং বিনামুল্যে বা অতি স্বল্প-মুল্যেই
স্বাধীনতা এসে যেত ? ছফা কি এটা প্রমান করতে পারবেন, বা অন্য কেউ?
আমার মনে হয়, ক্রান্তিকালের ইতিহাসের ব্যপারে আমাদের অনেক বেশি স্পেসিফিক ও অব্জেক্টিভ হওয়া উচিত। ঐরকম অসম্ভব সংশয়াকীর্ণ ক্রান্তিকালে যেসব বিকল্পহীন মানুষ নেতারা নেতৃত্ব দেন (আবার জয়ীও হন শেষ পর্জন্ত) তাদের ভুলের ব্যাপারে আমাদের ন্যূনতমপক্ষে এইটুকু দায়িত্ব ও বিবেকবোধ থাকা উচিত যে তাদের ক্রুশিফাই করার আগে আমরা অন্তত তাদের ভুলটা ১০০% অব্জেক্টিভিটি, ব্যক্তিগত আবেগ ও বায়াস-হীনতা, নির্মোহ যুক্তিবাদিতা ও অকাট্য তথ্য-উপাত্তের সাথে প্রমান করি। অন্যথায় আমরাই ছোট হয়ে যাবো মানুষ হিসেবে, অন্য কেউ নয়। এক্ষেত্রে মুজিবের যেসব সমালোচক স্রেফ তামাশা বলে তাকে উড়িয়ে দেন নিসংশয় তথ্য-প্রমান-যুক্তি ছাড়া, তারা নিজেরাই আসলে 'তামাশা' হয়ে যান - মুজিব নন।
একটা শেষ কথা। জাতীয় ক্রান্তিকালের এইসব বিষয়গুলি, যেখানে লক্ষ-কোটি মানুষের বাস্তব জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন জড়িত - সেসব তো কোন প্রতিভাবান গনিতবিদের উর্বরমস্তিষ্ক-প্রসূত গানিতিক ধাঁধা নয় যে আজ না হোক, কাল না হোক, ৫০০ বছর পরেও যদি কেউ তার সমাধান না বের করতে পারে কোন অসুবিধা নাই। বাস্তব জীবনের নেতাকে, ভালো হোক -মন্দ হোক, ঠিক হোক - ভুল হোক, সময়ের সিদ্ধান্ত বা কৌশল সময়েই দিতে হয়। তার ধাঁধা নিয়ে খেলার কোন সুযোগ বা অন্যের পরে মেলানো ফল দেখে নিয়ে কাজ করার কোন এদ্ভান্টেজ নেই। আমাদের সেটা আছে। আমরা এখন বসে বসে ইচ্ছে মত যতখুশি কাটাকুটি খেলতে পারি। কিন্তু আমাদের কাগজের বুকে মেলানো কাল্পনিক নির্ভুল ফল থেকে, তার বাস্তব জীবনে মেলানো খুঁত-ওয়ালা ফল সব কিছু সত্বেও চিরকালই অনন্তগুন উত১কৃষ্টতর থেকে যাবে। আমাদের ফলটা থেকে যাবে কাগজের বুকে, হয়তো ফেরিওয়ালার টুকরি হয়ে চলে যাবে ডাস্টবিনে -- কিন্তু তারটা থেকে যাবে বাস্তব জীবনে। আর আমাদের কাগজে মেলানো ফল দেখে ভবিষ্যতে কোন নেতা যে নির্ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন সঙ্কটকালে, সে সম্ভাবনাও দিল্লী দূর অস্ত। বাস্তব সঙ্কট সবসময়ই সংশয়াকীর্ন - আমাদের শত কাগুজে নির্ভুল অঙ্ক সত্বেও বাস্তবে ভুলের সম্ভাবনা থেকেই যাবে।
এজন্যেই, আমার ঐসব স্পেসিফিক প্রশ্ন করা। বাংলাদেশের ইতিহাসের এমন চরম ক্রিটিকাল পর্ব সত্যিই কতটা 'তামাশা' ছিল, পশ্চাতদৃষ্টিতে বলীয়ান লেখকের বিশেষন-সর্বস্ব ব্যক্তি-আবেগ ও ব্যক্তি-অভিমতের ধোয়াঁশা কাটিয়ে নিরেট বাস্তবতা ও অবজেক্টিভ স্পেসিফিসিটির কশ্ষ্টিপাথরে বুঝে নেয়ার উদ্দেশ্যে। বোঝার চেষ্টার পদ্ধতিটা (অর্থাৎ মূল প্রশ্নগুলি) কতটুকু বুদ্ধিদীপ্ত হয়েছে জানি না, হয়তো একদম বোকা-বোকাই হয়েছে, তবে প্রশ্নের অধিকার এবং উদ্দেশ্যটা আশা করি এখন বৈধ বলেই স্বীকার করবেন ?
নতুন মন্তব্য করুন