ছফাগিরি। কিস্তি আট।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: সোম, ১৫/০২/২০১০ - ২:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাহায্যের স্বীকৃতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ ঘটা করে দিয়েছে বলে জানা নেই। এটা ঠিক করে দিলে জাতি হিসেবে আমাদের সম্মান বাড়তে পারত। এই কাজ করা রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে ওঠে নি। আহমদ ছফার ‘রাজনৈতিক জটিলতা’ প্রবন্ধের নয়টি অধ্যায়ের প্রথম ছয়টি আগের কিস্তিতে আলোচনায় এসেছে। প্রবন্ধের বাকি তিন অধ্যায়ের ব্যাখ্যা এই পর্বে। একটু বলে রাখি আহমদ ছফার মত লেখককে ধরার মত জ্ঞান আমার নেই। ডঃ সলিমুল্লাহ খান ছফাকে ব্যাখ্যা করছেন অনেক একাডেমিক টোনে। সময়ে সেগুলো টিকবে। আমার কাজ সহজ করে ছফার কিছু কথা আমার প্রজন্মের কয়েকজনকে জানিয়ে দেয়া। সময়ে আমার ব্যাখ্যা হারিয়ে যাবে জানি। তাও যখন সাহস করে শুরু করেছি; এগোনো ছাড়া গতি কী।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে ছফার নিজের অনুসিদ্ধান্ত অনেক প্রবন্ধে ঘুরেফিরে একই ভাষ্যে এসেছে। যেমনঃ বাংলাদেশের জনগণ বুঝে বা না বুঝে আওয়ামী লীগের দেখানো পথে স্বায়ত্তশাসনের দিকে ঝুঁকে ছিল, মুক্তিযুদ্ধের যথাযথ প্রস্তুতি না নিয়ে। আমাদের যুদ্ধের ফলাফল সাধারণ জনতার উপর বর্তায় নি, এর ফলাফল আত্মসাৎ করেছে অন্যে। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ‘গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ স্বাধীন বাংলাদেশে এসে মৃত্যুবরণ করে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাইরের দেশগুলোর ভূমিকা গৌণ ছিল না। আন্তর্জাতিক নানা প্রভাব আমাদের যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিতে প্রভাব ফেলেছে। সোভিয়েত রাশিয়া এবং তাদের সমর্থনপুষ্ট এয়ুরোপের দেশগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেপথ্যে সমর্থন দিয়েছিল। সম্ভব হয়েছে ভারত সোভিয়েত সুসম্পর্কের কারণেই। আবার চীন-মার্কিন যৌথভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন দেয়। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল। তারা পাকিস্তানের জন্য অস্ত্র পর্যন্ত সরবরাহ করেছে। ইসলামের খাতিরে অখণ্ড পাকিস্তান রাখা জরুরি এই কথা মুসলিম বিশ্বে প্রচার করে পাকিস্তান ফায়দা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাও ইরান বা তুর্কিদেশ থেকে সামরিক সাহায্য পাকিস্তান পায়নি। সপ্তম নৌবহর কি চীনের মিলিশিয়াদের টিকি পর্যন্ত দেখা গেল না। ‘একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা’ কবিতায় ছফা
লিখেছেন।

সোভিয়েতের আজব খবর
যাদুর ঘোড়ায় নবীন চীন
সাক্ষী তুমি শুনছে তারা
ভাবছে এল নতুন দিন।

এমনি করে, এমনি করে
দিনের পরে দিন গিয়েছে
নতুন কথার প্রেমে পড়ে
গাঁয়ের কিষাণ মার খেয়েছে।

মনে আছে একাত্তুরের
বাংলাদেশে রক্তরোদন
নদীর মাজা কাঁপিয়ে এল
স্বাধীনতার অকাল বোধন।

ডালে ডালে পাতায় পাতায়
সেই কি তোমার পাগলা নাচন
একপলকেই খসে গেল
হাজার সনের জরার বাঁধন। …

‘রাজনৈতিক জটিলতা’ প্রবন্ধে ফিরে যাই।

শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধির সরকার পূর্ব থেকেই চীনা হুমকির মুখে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতি একটি সমঝোতাপূর্ণ মনোভাব গ্রহণ করেছিলেন এবং ভারতীয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নিজের আসন অটুট রাখার জন্য ভারতের মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টিকেও নিজের দিকে আকর্ষণ করেছিল। তারপর থেকে ভারতের শাসক কংগ্রেস এবং মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি পারস্পরিক প্রয়োজনে একে অপরকে সহায়তা করতে থাকে।

সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের যে বন্ধুত্ব তার মৌল উৎস হল এই সত্যঃ ভারতে চীন একটা যুদ্ধ করে গিয়েছে এবং সে অবধি চীনের সঙ্গে ভারতের প্রখর শত্রুতা চলছে। এটা ভারতীয় দিক। আর রাশিয়ার দিকটি হল, বাহ্যত আদর্শগত কারণে সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে গণচীনের ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব সময়ের বিবর্তনে ঐতিহাসিক শত্রুতায় রূপ নিয়েছে। চীন সোভিয়েত রাশিয়া পরস্পরের বন্ধু। অন্যদিকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেও পরস্পর শত্রুতার সম্বন্ধ। তাই স্বাভাবিকভাবেই ভারত ঠেকানোর জন্য পাকিস্তানকে একদিকে গণচীনের সঙ্গে মৈত্রী-বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়েছে, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রচনা করতে হয়েছে।

রাষ্ট্রের বাসনা অনেক জটিল বিষয়। কেন ধনতান্ত্রিক বা সমাজতান্ত্রিক সুপার পাওয়ারগুলো নিজ নিজ বাসনা প্রকাশের খায়েশ করেছিল? বাসনার সাথে স্বার্থ অনেকাংশে জড়িয়ে ছিল। রাশিয়া চাইছিল চীনকে কিছুটা দাবিয়ে রাখতে। একটাই পথ তাদের কাছে খোলা ছিল। ভারতের খুঁটির জোড় বাড়ানো। চীনের সমাজতান্ত্রিক মতের সাথে রাশিয়ার মতবাদের আদর্শগত পার্থক্য নিয়েও ঝামেলা ছিল। চীন উল্টোপথে হাঁটতে ধরে পাকিস্তানের দিকে হেলে যায়।

বাংলাদেশের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের জন্য ভারত যখন উঠেপড়ে লেগেছে এবং রাশিয়াও ক্রমাগত মদদ যুগিয়ে চলেছে, তখন গোটা বাংলাদেশের ব্যাপারটিই রুশ-ভারতের ষড়যন্ত্র বলে তাঁরা ধরে নিলেন। পাকিস্তানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে না বললেও ঢোক গিলে স্বীকার করে নিতে হল যে সত্যি সত্যি ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলিয়ে অযথা গোলমাল পাকিয়ে তুলছে। বাংলাদেশের ব্যাপারটি পাকিস্তানের ঘরোয়া ব্যাপার। বাংলাদেশে যে একটি নির্যাতিত জাতিসত্তা ইতিহাসের হিংস্রতম হত্যাকাণ্ডের মুখে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিতে জেগে উঠেছে, চীনারা প্রথমদিকে তার স্বরূপ পুরোপুরি চিনতে ভুল করেছে, এ কথা বলতেই হবে। এই ভুল যতটা চীনের, তার চাইতে বেশি চীনপন্থীদের। তারা তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচীর সঙ্গে অতীতে কখনো বাংলাদেশের জাতিসত্তার সংগ্রামকে একীভূত করে নেয়নি। বরং বাংলাদেশের প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে আইয়ুব খানের প্রতি সমর্থন করে সমাজতন্ত্র আনতে পারবে এই রকম একটা বিশ্বাস তাদের আশ্রয় করেছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে চীনের ভূমিকা চীনপন্থীদের মহাফাঁপড়ে ফেলে দেয়। বাংলাদেশের নির্বিচার গণহত্যা নিয়ে চীনের কোন রা ছিল না। চীনপন্থী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার কাউন্সিলে ছিল বলে চীনের ভূমিকা নিয়ে তাঁর বক্তব্য আন্দাজ করা যাচ্ছিল। ফলে চীনপন্থীদের মধ্যে মতদ্বৈততা দেখা দেয়। নানা উপদল তৈরি হয়। এদের কয়েকটি উপদলের সাথে এমনকি ভারত থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ দেখা দেয়। দেশ স্বাধীন হবার পর ও এরা কখনো মূল রাজনৈতিক ধারার সাথে যুক্ত হতে পারেনি। জনবিচ্ছিন্নতা এর মূল কারণ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সেকালের কম্যুনিস্ট পার্টির চীনপন্থী ধারার সক্রিয় কর্মী কমরেড নূর মোহাম্মদের প্রবন্ধ ‘ডাক দিয়ে যায়ঃ ২৩ অক্টোবর ১৯৭১’-এ নিজেদের অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন।

লড়াইটা হচ্ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র ও তার স্থানীয় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভিত্তির বিরুদ্ধে। স্বভাবতই স্থানীয় মুসলিম লীগ, জামায়াতসহ অন্যান্য ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী ও পাকিস্তানের সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এম.এল.) সংগ্রাম করছিল। উপরোক্তদের বাদ দিলে দেশে আওয়ামী লীগ, মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি, ভাসানী
ন্যাপ, মোজাফ্‌ফর ন্যাপ সহ অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক শক্তির বিরাট অনুপস্থিতি ছিল। ফলে প্রথম কয়েক মাস প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি দেশের অভ্যন্তরের লড়াইতে কমিউনিস্ট পার্টি (এম.এল.) সহ অন্যান্য কমিউনিস্ট গ্রুপকেই তাদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু হিসাবে বেছে নেয়। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিচারে এ রকম ঢালাও বক্তব্য ঠিক নয়- কেননা যাঁরা ভারতে চলে গিয়েছিলেন তাঁরাও যেমন দ্রুত দেশের অভ্যন্তরে যোগাযোগ স্থাপন করেন তেমনি আওয়ামী লীগসহ সব দলেরই অনেক কর্মী দেশের ভিতর পাকবাহিনী ও তার দালালদের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ লড়াই চালিয়ে যান। ১৯৭১ সালের মার্চের পর প্রথম কয়েক মাস- অন্তত আমাদের জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে- পাকবাহিনী ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করেছেন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (এম.এল.) নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা।

এর পরের অধ্যায় আরো কঠিন। ভারতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ ও মুজিব বাহিনীকে দেশে ঢুকে কমিউনিস্ট দমন করার নির্দেশ দেওয়া হল। ভাবটা এমন- ভারত সরকার ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুদ্ধ না করলে সে যুদ্ধ দেশপ্রেম বিবর্জিত হবে! যখন জনগণ অসহায়, ময়দানে তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রায় কেউ নেই। ঠিক সেই সময় যাঁরা এই বাংলায় মেহনতি মানুষদের জন্য অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিলেন, তাঁদের আত্নত্যাগ কতখানি ন্যায্য তার প্রমাণ কি ভারত সরকার ও ভারতপ্রবাসী আওয়ামী লীগের কাছে দিতে হবে? …

তবে তাঁর এই লেখায় চীনপন্থীদের জনবিচ্ছিন্নতা নিয়ে বিশদ আসেনি। অবশ্য যুদ্ধজয়ের সমস্ত সুফলতা আওয়ামী লীগের কুক্ষিগত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে তাঁর উচ্চারণ বেশ স্পষ্ট। আহমদ ছফার প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ প্রকাশ পেয়েছিল ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে। যার ভূমিকায় লেখা ছিল ছফার সেই বিখ্যাত লাইন। আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যখন রক্ত দিয়েই চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছি। প্রবন্ধের শুরুতেই আক্রমণ করেছিলেন বুদ্ধিজীবিদের। এই বইয়ের পরবর্তী সংস্করণ ‘সাম্প্রতিক বিবেচনাঃ বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ নামে বের হয়। সেখানে ছফা একটি দীর্ঘ ভূমিকা লিখেন। বামপন্থীদের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে ছফার কথা বেশ গুরুত্বের শোনায়।

যে সকল কারণে বামপন্থী রাজনীতি এ দেশের প্রধান রাজনৈতিক ধারা হয়ে উঠতে পারেনি সেগুলোরও একটা খতিয়ান করা প্রয়োজন।

প্রথমত, জাতিসত্তার প্রশ্নটি পাশ কাটিয়ে বামপন্থী রাজনীতি বিপ্লবের প্রশ্নটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল এবং তাই বামপন্থী রাজনীতি জাতীয় নেতৃত্বে অবস্থান হারিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক রাজনীতির মতাদর্শগত দ্বন্দ্বটি আমাদের দেশের বামপন্থী দলগুলো যতোটা বড় করে দেখেছে, আমাদের দেশের শোষিত জনগণের প্রশ্নটি তাঁদের চোখে সে তুলনায় গৌণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটা মৌলিক উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে রাজনৈতিক আন্দোলনের সংযোগ সাধন করে পরিবর্তনকামী শক্তিগুলো একটা জঙ্গী ঐক্যমোর্চায় টেনে আনার ব্যাপারে তারা বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

চতুর্থত, আমাদের শোষিত জনগণের সামগ্রিক স্বার্থটির প্রতি দৃষ্টি না দেয়ার কারণে বামপন্থী দলগুলোর কনিষ্ঠ অংশীদার হওয়ার প্রবণতা জনগণের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা অসম্ভব করে তুলেছে।

পঞ্চমত, মেহনতি জনগণের সংস্কৃতির বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে তাদের পর্বতপ্রমাণ ব্যর্থতা সামন্ত সংস্কৃতির রিক্তাবশেষকে টিকিয়ে রাখতে বিশেষ সাহায্য করেছে, যা প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির সহযোগিতায় বারবার আমাদের সংস্কৃতির গতিধারার সুষ্ঠু বিকাশ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে।

ষষ্ঠত, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মানস-চৈতন্যের শুশ্রূষা করে তার মান উন্নত এবং বোধ উপলব্ধিতে নতুন সমাজের ভ্রূণ গ্রহণ করার পরিবেশ সৃষ্টি না করে অনুভূতিকে আহত করার প্রবণতা বৃহত্তর জনগণকে বামপন্থীর প্রতি বিমুখ করে তুলেছে।

সপ্তমত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং প্রান্তিক জাতিসমূহের নিরাপত্তা এবং জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণের অধিকারের প্রতি যথেষ্ট অঙ্গীকারসম্পন্ন না হওয়ার কারণে, তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি জন্ম দিয়েছে।

অষ্টমত, বামপন্থী রাজনৈতিক দল এবং নেতৃবৃন্দ সমস্ত জাতির নেতৃত্ব দেয়ার বদলে সমাজে বিশেষ বিশেষ অংশকেই কর্মক্ষেত্র মনে করেন বলে তাঁরা একটি পলায়নবাদী, পরাজিত মানসিকতার শিকারে পরিণত হয়েছেন। সে কারণে বামপন্থী রাজনীতিকে আমাদের রাজনীতির প্রধান ধারা হিসেবে তাঁরা চিন্তা করতেও সক্ষম নন।

নবমত, বিশ্বপরিসরে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতন আদর্শিকভাবে আমাদের বামপন্থী দলগুলোর নেতা এবং কর্মীদের হতবিহ্বল করে ফেলেছে। তাই তাঁরা আমাদের শোষিত জনগণের উত্থানক্ষমতার প্রতি আস্থা স্থাপন করতে পারেন না।

দশমত, বাজার অর্থনীতির জয়যাত্রা বামপন্থী বুদ্ধিজীবি এবং অর্থনীতিবিদদের একাংশকে মোহাবিষ্ট করে ফেলেছে। তাঁরা জনগণের শ্রমনির্ভর অর্থনৈতিক বিকাশের পথ পরিহার করে বাজারের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করছেন। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক নয়। বিকল্প অর্থনৈতিক যুক্তি নির্মাণে বামপন্থী অর্থনীতিবিদদের কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এ সকল আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ধনী দেশগুলোর স্বার্থকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রেক্ষিতটি তাঁরা উপেক্ষা করে থাকেন।

একাদশতম কারণ হিসেবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহের জনউদ্যোগ এবং সামাজিক সংহতি বিনষ্ট করার বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই। আমাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির এ পর্যায়ে হয়ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহকে অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহ যেভাবে সরকারের উত্থান-পতনে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেছে, তাঁদের এ ক্ষতিকারক ভূমিকার বিরুদ্ধে সম্মিলিত সামাজিক প্রতিরোধ প্রয়োজন। তারাই বামপন্থী বিকাশের প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে উঠবে।…

আহমদ ছফা নিজে জাসদ সমর্থন করতেন বলে বামপন্থী দলগুলোর গলদের সুলুক সন্ধান করতে পেরেছিলেন। আহমদ ছফা জাসদের মুখপাত্র ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’ পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘকাল। পঁচাত্তর থেকে বিরাশি সাল পর্যন্ত তিনি পত্রিকাটির সাথে ছিলেন। এরপর দৈনিক গণকণ্ঠের মৃত্যু ঘটে। ছফার উপন্যাস ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ’-এ গণকণ্ঠ পত্রিকা নিয়ে ছফার অনুভূতির উল্লেখ আছে। ‘জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলঃ একটি সেন্টিমেন্টাল মূল্যায়ন’ প্রবন্ধে জাসদ নিয়ে ছফার বক্তব্য পাওয়া যায়। জাসদের জন্ম হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে। তাজউদ্দীন সরকারের সমান্তরালে সেই সময় মুজিব বাহিনী গঠিত হয়েছিল। যার নেতৃত্বে ছিলেন সিরাজুল আলম খান এবং ফজলুল হক মনি। দেশ স্বাধীন হবার পরে মনি-সিরাজ দ্বন্দ্ব অব্যাহত ছিল। জাসদ গঠনে শেখ মুজিবের গোপন সায় ছিল। আওয়ামী লীগের তরুণতর অংশ এবং নীচের সারির নেতাদের নিয়ে জাসদের চলা শুরু হয়। এদের মধ্যে অনেকে লড়াকু ও জঙ্গি মানসিকতার ছিলেন। মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ বেরিয়েছিল, তেমনি আওয়ামী লীগের শরীর থেকে জাসদ। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটা রূপকল্প তৈরি হয়। বাস্তবে যার কিছুই হয়নি। নানান কথার কথা বলার পর আসল দৃষ্টি ছিল তাদের ক্ষমতার দিকে। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর সাথে সাথে জাসদের কার্যত মৃত্যু ঘটে যায়। মার্কসবাদ লেনিনবাদ সমাজে আর বিপ্লব ঘটাতে ব্যর্থ হয়। আর গণকণ্ঠ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে তাদের আওয়াজ পর্যন্ত আর কারো কানে পৌঁছানো চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তবু একা ছফা জেগে থাকেন। লেনিন ঘুমিয়ে যায়। ‘লেনিন ঘুমোবে এবার’।

ভুলভ্রান্তি মেনে নিয়ে লেনিন জানাতে চায় সহজ ভাষায়
বিপ্লবের লাল স্বপ্ন- তার মৃত্যু নাই।
ভালবাসা অন্তঃস্থ স্রোতের বেগে পথ কেটে চলে
ফুটন্ত অন্তঃস্থ স্রোতের বেগে পথ কেটে চলে
ফুটন্ত উত্থানমন্ত্র জেগে রয় মানুষের প্রাণের অতলে।
স্তব্ধ হোক জাগরণ, সাময়িক বিপ্লবের কেটে যাক ধার
তবুও প্রথম চোটে মুমুক্ষু মানুষ উঠে দাঁড়াবে আবার।
দোর্দণ্ড পাশব ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষায় প্রভু হতে চায়
লেনিন বইবে কেন সেই সব ক্রুরকর্মা ঠগীদের দায়।
কেন লেনিনকে সাজতে হবে আধুনিক ফারাওর সঙ
বুকে পিঠে পাথর ইস্পাত বর্ম এবং এবং
কোটাল স্রোতের মত পরিনির্বাণের বেগ অন্তরে ঘনায়
লেনিন মানুষের ইতিহাসে মানুষের শিশু হতে চায়
তার আগে শুধু একবার মা ও ভায়ের পাশে
বিছায়ে শরীর- পেতে চায় মানবিক উত্তাপের স্বাদ
লেনিন ঘুমোবে এবার।

বিপ্লবের দিন এখনো ফুরিয়ে যায় নি মনে করতেন আহমদ ছফা। বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর মুখে ঠিকমতো অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে চাইলে বিপ্লবের কথা এসে পড়ে। সমাজে বৈষম্য অসীমতটে গিয়ে ঠেকলে সমাজের ভেতর থেকে প্রতিবাদ জড়ো হবে। সমাজবিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা না ফুরালেও সঠিক পথে কিছু ঘটেনি দেখে ছফার আফসোস লুকিয়ে থাকেনা।

বানের জল সরে গেলে যেমন পড়ে থাকে থিকথিকে কাদা, বিপ্লব করার প্রাথমিক জোশ কেটে যাওয়ার পর অবিশ্বাস, সংশয় ,কাদা ছোঁড়াছুড়ি এগুলো ওপরে উঠে আসতে শুরু করেছে। অতীত শোভাযাত্রা, স্লোগান এসবের কথা যখন ভাবি মনে হতে থাকে নায়াগ্রার জলপ্রপাতের গর্জন আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। কোথায় বিপ্লব, আকাশের পূর্বে জেগে ওঠা রঙিন রামধনুর বিলীয়মান আভার মতো সবকিছু কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। এই এতোগুলো বছর আমি কোন মরীচিকার পেছনে ছুটলাম! এখন অনুভব করছি, আমি ভীষণ ক্লান্ত এবং ভীষণ একাকী।

যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ। পাওয়া গেল পুরো বিধ্বস্ত একটা দেশ। সেখানে কোন অর্থনীতি কার্যকর করা যায় সেটা নিয়ে নেতারা মহা ফ্যাসাদে পড়ে যান। যুদ্ধে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাদের ‘স্বাধীনতা’ এবং ‘সমাজতন্ত্র’ এই দুটি শব্দে জোর দিতে হয়েছিল। না ধনতন্ত্র না সমাজতন্ত্রের মধ্যে কিছুকাল কেটে যায়। স্বাধীনতার পূর্বে এখানে বেশিরভাগ কলকারখানার মালিক ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানিরা। যুদ্ধের মধ্যেই তারা পালিয়ে যায়। এত সব কলকারখানা চালাতে দেয়া হয় দলীয় লোকজনকে। আর তারা লুটতরাজের নেশায় মেতে ওঠেন। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় অনেক কিছু। এর মধ্যে বাংলাদেশ একটা মন্বন্তর দেখা দেয়। সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প থেকে জনগণকে দূরে রাখতে তারা পারেন নি। ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তার স্বাভাবিক বিকাশ ঘটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

আহমদ ছফার রাজনৈতিক কাণ্ডজ্ঞান অনেক দড়। অনেক কঠিন এবং শুনতে অস্বস্তি লাগা অনুসিদ্ধান্ত তিনি অবলীলায় বলে গেছেন। একবার না বারংবার। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরপর কার্যত-সত্য এইসব কথা স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ এই দীর্ঘ সময়েও ঠিকমত বোঝার চেষ্টা করেনি। আওয়ামী লীগের নেক নজরে তিনি কখনো ছিলেন না। আওয়ামী ক্যাডারদের তাড়া খেয়েছেন অনেক বার। ১৯৭৫ সালের চৌদ্দই আগস্ট রাতে শেখ কামালের সাঙ্গপাঙ্গের দৌড়ানি খেয়েছিলেন। শেখ মুজিবের শাসনামলের কঠোর সমালোচনা করেছেন আবার ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের পর সবাই চুপ থেকে গেলেও ছফা তাঁর প্রতিবাদ ঠিকই উচ্চারণ করেছেন। আহমদ ছফা স্কুলে পড়ার সময় তাঁর একজন শিক্ষক ছিলেন সারদা শংকর তালুকদার। তাঁর সারদা স্যার বছরের তিন মাস পাগল হয়ে যেতেন। বাকী সময় একদম স্বাভাবিক। ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ’-এ একটা অংশ উল্লেখ করার মতো।

উনিশশো পঁচাত্তর সনের চৌদ্দই আগস্টের রাতে সপরিবারে শেখ মুজিব নিহত হওয়ার সপ্তাহখানেক পরে সারদাবাবুর একখানি চিঠি পেলাম। তিনি লিখেছিলেন, দীর্ঘজীবেষু আহমদ ছফা, আমি উনিশশো বাহাত্তর সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে তোমার মাধ্যমে মুজিববাদ শব্দ বাদ দিয়ে মৌজীববাদ শব্দটি ব্যবহার করিবার পরামর্শ দান করিয়াছিলাম। এখন স্পষ্ট ধারণা করিতেছি, তুমি দায়িত্বটি পালন কর নাই। শেখ মুজিব যদি মুজিববাদ শব্দটি পরিহার করিয়া মৌজীববাদ শব্দটি ব্যবহার করিতেন এমন নিষ্ঠুরভাবে খুন হইতেন না। আমি সবকিছুর জন্য তোমাকে দায়ী করিতেছি … ।

সূত্র
১। আহমদ ছফা রচনাবলি- প্রথম খণ্ড – সম্পাদনা নূরুল আনোয়ার (খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানি , ফেব্রুয়ারি ২০১০) [পৃষ্ঠা ৫০০]
২। আহমদ ছফা মহাফেজখানা , প্রথম খণ্ড , বেহাত বিপ্লব ১৯৭১ – সলিমুল্লাহ খান সম্পাদিত (অন্বেষা প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৭) [পৃষ্ঠা ১১৭]
৩। আহমদ ছফা মহাফেজখানা , প্রথম খণ্ড , বেহাত বিপ্লব ১৯৭১ – সলিমুল্লাহ খান সম্পাদিত (অন্বেষা প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৭) [পৃষ্ঠা ১১৭]
৪। আহমদ ছফা মহাফেজখানা , প্রথম খণ্ড , বেহাত বিপ্লব ১৯৭১ – সলিমুল্লাহ খান সম্পাদিত (অন্বেষা প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৭) [পৃষ্ঠা ১২০]
৫। আহমদ ছফা মহাফেজখানা , প্রথম খণ্ড , বেহাত বিপ্লব ১৯৭১ – সলিমুল্লাহ খান সম্পাদিত (অন্বেষা প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৭) [পৃষ্ঠা ১৫৩-৫৪]
৬। আহমদ ছফা রচনাবলি- ষষ্ঠ খণ্ড – সম্পাদনা নূরুল আনোয়ার (খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানি , ফেব্রুয়ারি ২০১০) [পৃষ্ঠা ১৮৭-১৮৮]
৭। আহমদ ছফা রচনাবলি- তৃতীয় খণ্ড – সম্পাদনা নূরুল আনোয়ার (খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানি , ফেব্রুয়ারি ২০১০) [পৃষ্ঠা ৪৩০]
৮। পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ- আহমদ ছফা ( উত্থানপর্ব ,ফেব্রুয়ারি ২০০৫) [পৃষ্ঠা ৩১-৩২]
৯। পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ- আহমদ ছফা ( উত্থানপর্ব ,ফেব্রুয়ারি ২০০৫) [পৃষ্ঠা ৭১]

--------

ছফাগিরি। কিস্তি সাত।


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অপেক্ষা করছিলাম
পড়লাম

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

হ ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

হাসিব এর ছবি

বামপন্থী রাজনীতি এ দেশের প্রধান রাজনৈতিক ধারা হয়ে উঠতে পারেনি

পয়েন্টগুলো পড়লাম । প্রতিটা পয়েন্ট নিয়েই আলাদা আলাদা পোস্ট হওয়া সম্ভব । আলোচনাটা কেউ শুরু করুক ।

জাসদ গঠনে শেখ মুজিবের গোপন সায় ছিল।

এই বিষয়টা কেউ একটা বিস্তারিত বলতে পারবেন ?

ফরিদ এর ছবি

বামপন্থীদের নিয়ে আহমদ ছফার ব্যাখ্যা খুব চমৎকার লাগলো। আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেলে ভাল হতো।

ছফাগিরি একটু কম গ্যাপে ছাড়লে পাঠকদের সুবিধা হয়।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

জাসদের জন্ম হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে।

এটা কি আপনার কথা নাকি ছফার?

দেশ স্বাধীন হলো, মুজিব বাহিনীর দুই জেনারেল মনি আর সিরাজুল আলম খানের দ্বন্ধ শুরু হলো। দুই গ্রুপ একই দিনে ছাত্রলীগের সম্মেলন আয়োজন করলো, দু গ্রুপই শেখ মুজিবকে প্রধান অতিথি করলো। মুজিব গেলেন ভাগ্নে মনি'র অতিথি হয়ে, সিরাজুল আলম খানের আতিথ্য গ্রহন করলেন না।
এই থেকেই না জাসদের জন্ম হলো। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জাসদ জন্মের তথ্য আপনি কিংবা ছফা কোথায় পেলেন? তখন তো সিরাজুল আলম খান মুজিববাদ আর মুজিববাহিনীতেই মুক্তি খুঁজে পেয়েছিলেন।

জাসদ গঠনে শেখ মুজিবের গোপন সায় ছিল।


কোন প্রামান্য তথ্য?

মৌজীববাদ

এটা কি জিনিস?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

উদ্ধৃতি
জাসদের জন্ম হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে।- এটা কি আপনার কথা নাকি ছফার?

ছফা এর কাছাকাছি কথা বলেছেন। জন্ম এখানে শুরুয়াত ধরতে পারেন। দেশ স্বাধীন হবার আগেই মুক্তিযুদ্ধের সময় মনি-সিরাজ দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ফলে জাসদ সৃষ্টির অংকুরোদগম সেখান থেকে বলা যায়। মুজিবহীন তাজউদ্দীন সরকারের ওপর মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ভার দিয়ে রাষ্ট্র ভারত স্বস্তিতে ছিল না। সেকেন্ড লাইন অব ডিফেন্স তৈরির প্রয়োজন মনে করেন তারা। মুজিববাহিনী তৈরি করার সময় ভারত তাজউদ্দীন সরকারের কোন পরামর্শ নেয়নি। আহমদ ছফা এই বিষয়ে মঈদুল ইসলামের ‘মূলধারা-৭১’ বইয়ের রেফারেন্স উল্লেখ করেছেন। আর দেশ স্বাধীন হবার পর আনুষ্ঠানিকভাবে জাসদের জন্ম হয়।

উদ্ধৃতি
জাসদ গঠনে শেখ মুজিবের গোপন সায় ছিল। - কোন প্রামান্য তথ্য?

তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন জাসদের জন্মের প্রক্রিয়ায় অর্থ ঢেলেছিলেন। শেখ মুজিবের সাথে মতান্তর হলে একটা বিকল্প রাজনৈতিক ধারায় আশ্রয় নেয়া যাবে চিন্তা করে। পরে মতান্তর সৃষ্টি হলেও তাজউদ্দীনের জাসদে যোগ দেয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয় নি। সেই সময়ে জাসদের নেতাদের সাথে শেখ মুজিবের ঘন ঘন বৈঠকের সংবাদ প্রকাশ পাচ্ছিল। ছফার ভাষ্যে-
আওয়ামী লীগের অন্তঃকলহ এবং আওয়ামী লীগের বন্ধু ন্যাপ এবং সিপিবি-র রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার মুখে চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে জাসদকে ব্যবহার করার চিন্তা তাঁর একেবারে ছিল না, সেকথা মনে করাও অন্যায় হবে।

উদ্ধৃতি
মৌজীববাদ - এটা কি জিনিস?

বইটির যে প্যারাটা কোট করেছি তার কিছু আগে থেকে কোট করলে হয়তো পরিষ্কার হবে।

তিনি বললেন, তোমার সাথে শেখ মুজিবের দেখা সাক্ষাত হয়? সারদাবাবুর হিসেব একেবারে পরিষ্কার। আমি ঢাকায় থাকি আর শেখ মুজিবও ঢাকায় থাকেন। সারদাবাবু ধরে নিয়েছেন আমার সঙ্গে শেখ মুজিবের ঘন ঘন দেখা সাক্ষাত হয়ে থাকে। আমি একটুখানি সংকটে পড়ে গেলাম। যদি বলি যে আমার মতো আদনা মানুষের সঙ্গে শেখ মুজিবের দেখা হওয়া অসম্ভব। তাহলে তিনি একেবারে মুষড়ে পড়বেন। তাঁর এতোটা পথ এই সকালে হেঁটে আসা নিরর্থক হয়ে যায়। তাই বললাম, শেখ মুজিবের সঙ্গে মাঝে মধ্যে দেখা সাক্ষাত হয় বটে। সারদাবাবু জানতে চাইলেন তাঁর শরীর কেমন? আমি বললাম, এখন ভালো, তবে ভীষণ ব্যস্ত।

সারদাবাবু এবার চেয়ারে বসলেন। তারপর আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন, তুমি মুজিবকে আমার নাম করে বলবে এখন মুজিববাদ বলে যে শব্দটা সকলে ব্যবহার করছে সেটা অশুদ্ধ, আসলে হওয়া উচিত মৌ-জীব-বাদ। আমি বললাম, এর অর্থ কী বুঝিয়ে বলুন। সারদাবাবু বললেন, মুজিব হলো একজন মানুষের নাম। পবিত্র বিষয়ে মানুষের নাম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। লোকের জ্ঞান নেই বলে মুজিবের নামের ধুয়ো নিচ্ছে। মৌমাছিরা নানা জায়গা থেকে মধু আহরণ করে এক পাত্রে সঞ্চয় করে, তারপর প্রয়োজনমাফিক সকলে ভাগ জোক করে আহার করে। মৌমাছির জীবনধারণ পদ্ধতির যে দর্শন সেই জিনিসটাই মৌজীববাদ। তুমি ঢাকা যেয়ে প্রথমে শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করে বলবে, নামটা হবে মৌজীববাদ, মুজিববাদ নয়। আমি কথা দিলাম ঢাকা গিয়েই প্রথমে শেখ সাহেবের সঙ্গে এ বিষয়ে দরবার করবো। সারদাবাবু আর একটা কথাও বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলেন। …

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ছফা এর কাছাকাছি কথা বলেছেন। জন্ম এখানে শুরুয়াত ধরতে পারেন। দেশ স্বাধীন হবার আগেই মুক্তিযুদ্ধের সময় মনি-সিরাজ দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ফলে জাসদ সৃষ্টির অংকুরোদগম সেখান থেকে বলা যায়। মুজিবহীন তাজউদ্দীন সরকারের ওপর মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ভার দিয়ে রাষ্ট্র ভারত স্বস্তিতে ছিল না। সেকেন্ড লাইন অব ডিফেন্স তৈরির প্রয়োজন মনে করেন তারা। মুজিববাহিনী তৈরি করার সময় ভারত তাজউদ্দীন সরকারের কোন পরামর্শ নেয়নি। আহমদ ছফা এই বিষয়ে মঈদুল ইসলামের ‘মূলধারা-৭১’ বইয়ের রেফারেন্স উল্লেখ করেছেন। আর দেশ স্বাধীন হবার পর আনুষ্ঠানিকভাবে জাসদের জন্ম হয়।

মনি-সিরাজ দ্বন্দ্বই যদি জাসদের জন্মের নিমিত্ত হয় তবে সময়কাল 'মুক্তিযুদ্ধের সময়' বলা ঐতিহাসিক সত্য নয় কেননা এদের দ্বন্দ্ব সূচনা ষাটের দশকের শুরুতে । সিরাজুল আলম খান,আব্দুর রাজ্জাক ,কাজী আরেফ প্রমুখ ছিলেন ছাত্রলীগের 'স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের' স্থপতি । এরা একদফা পন্থী বিপ্লবী হিসেবে পরিচিত ছিল । অপর দিকে শেখ মনি ছিলেন ৬ দফার আলোকে স্বায়ত্বশাসনের পক্ষে । স্বাধীনতার নিমিত্তে সত্তর দশকে এসে সিরাজ-মনি একজোট হন । ইন্দিরার আদেশে র'র উপপ্রধান উবানের তত্ত্বাবধানে যে মুজিব বাহিনী গড়ে উঠে তার চার প্রধান অধিনায়ক ছিলেন শেখ মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক আর তোফায়েল । মুক্তিযুদ্ধের সময় এরা তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা তৎপরতায় লিপ্ত ছিল । শেষের দিকে সিরাজ,রাজ্জাক,তোফায়েল তাজউদ্দিনের প্রতি কিছু নমনীয় হলেও শেখ মনি হননি ।

ছফার প্রতি আমার দূ্র্বলতা থাকলেও তাকে অভ্রান্ত মনে করিনা ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

হাসান মোরশেদ এর ছবি

জাসদ নিয়ে যদি এই পোষ্টে আলোচনা বাড়ে তাহলে সবিনয়ে একটা পুরনো পোষ্টের লিংক রাখি। পোষ্ট তেমন কিছুনা কিন্তু মন্তব্যগুলো ঋদ্ধ
পুরনো পোষ্ট
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পোস্টের মন্তব্যগুলোর বেশীরভাগই আবার পড়ে আসলাম। এধরনের আলোচনা এখন আর হয়না কেন চিন্তিত

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমাদের বয়স হয়েছেনা? হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মোরশেদ ভাই, বয়স হলে তো এসব নিয়ে আরো ভারী আলোচনা হতে পারে। হয়তো সময় বদলে গেছে কিংবা সময় আমাদের সময় দিচ্ছেনা।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ভাল পোস্ট ...

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ডঃ সলিমুল্লাহ খান ছফাকে ব্যাখ্যা করছেন অনেক একাডেমিক টোনে। সময়ে সেগুলো টিকবে। আমার কাজ সহজ করে ছফার কিছু কথা আমার প্রজন্মের কয়েকজনকে জানিয়ে দেয়া। সময়ে আমার ব্যাখ্যা হারিয়ে যাবে জানি। তাও যখন সাহস করে শুরু করেছি; এগোনো ছাড়া গতি কী।

সলিমুল্লাহরটা টিকবে নাকি আপনারটা সেটা সময়ই বলে দিবে তবে আমার কিন্তু আপনারটাই বেশি ভাল্লাগছে ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার কর্মজীবন যদি না আমার সময়কে গ্রাস করে তাহলে এই পোস্টের কয়েকটি বিষয়ের উপর আমি ধাপে ধাপে আলোচনা করার ইচ্ছা রাখি। সেগুলো হচ্ছেঃ

১. ১৯৭১ সালে গণচীনের ভূমিকা
২. নূর মোহাম্মদের উক্তি
৩. এদেশে বামপন্থী রাজনীতির ব্যর্থতা নিয়ে ছফার ব্যাখ্যা
৪. মুজিব বাহিনী নিয়ে আমার ভাবনা। (এটা আসলে নুরুজ্জামান মানিকের করা উচিত। এই বিষয়টা নিয়ে লেখার জন্য আমি তাকে বহুবার অনুরোধ করেছি। এই বিষয়ে তিনিই ভাল বলতে পারবেন।)



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

আপনার ব্যাখ্যা/আলোচনার অপেক্ষায় থাকলাম । মুজিব বাহিনী নিয়ে কাজ শুরু করেছি । আপনার সাথে শীঘ্র বৈঠক হবে ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

স্বাধীন এর ছবি

একটি জমজমাট আলোচনার অপেক্ষায় রইলুম। সিরিজ চলতে থাকুক।

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

চলুক! চলুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে গণচীনের ভূমিকা নিয়ে ঐতিহাসিক, বিশ্লেষক, গবেষক আর সাংবাদিকদের নানা মতামত আর ব্যাখ্যা আমরা পড়তে পাই। আমরা যা পড়তে পাইনা তা হচ্ছে এ'নিয়ে ঐসময়কার গণচীন সরকারের ব্যাখ্যা বা ভাষ্য। গণচীনের সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক বা বুদ্ধিজীবিদের সাথে এ'নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। কারণ, রাষ্ট্রিয় বিষয়ে, বিশেষতঃ বৈদেশিক নীতির প্রশ্নে গণচীনের ভূমিকা কি হচ্ছে বা হবে তা নিয়ে কথা বলার বা আলোচনা করার সুযোগ ১৯৭১ সালেও ছিলনা, ২০১০ সালেও নেই। ইদানিং সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে যা টুকটাক পড়তে পাওয়া যায় সেগুলো হয় সরকারী লোকদের লেখা সফট গল্প অথবা প্রবাসী চীনাদের লেখা অতিরঞ্জন। এর বাইরে কেউ ১৯৭১ সাল নিয়ে গণচীনের সরকারী ভাষ্য বা ব্যাখ্যা পেয়ে থাকলে জানাবেন। আমাদের সবার কাজে লাগবে। সেসব না থাকায় আমরা বরং নিজেরা এটা নিয়ে একটু ভেবে বোঝার চেষ্টা করি।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে গণচীন সরকারের এই আশ্চর্য নিরবতা নিয়ে বাংলাদেশের কোন সরকারের কোন মাথাব্যাথা আগেও ছিলনা, এখনো নেই। আমাদের মিডিয়াগুলোও এই ব্যাপারে অদ্ভূত রকমের নিরবতা পালন করে। তাদের সবার নিরবতা বজায় থাকে গণচীনের মত আরো যেসব দেশ বাংলাদেশের বিরোধীতা করেছিল বা পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল তাদের ব্যাপারেও।

আইয়ুব খান বা ইয়াহিয়া খানকে দিয়ে পাকিস্তানে সমাজতন্ত্র আনার চিন্তা যে করতে পারে তাকে আমি সোজা বাংলায় "ছাগল" ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারিনা। পাকিস্তানী ভূস্বামী আর সামন্তপ্রভুদের দ্বারা লালিত, মার্কিনীদের ধামাধরা, প্রবল গণবিরোধী, গণতান্ত্রিক ও জুডিশিয়াল ইনস্টিটিউটগুলোকে ধ্বংসকারী এই দুই সামরিক জান্তার পক্ষে পাকিস্তান আর তার নাগরিকদের জন্য চরম দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছু আনা সম্ভব না। এই সত্যগুলো সিপিসি'র পলিটব্যুরোর সদস্যরা না জানার বা না বোঝার কথা না। তবু তারা এই সামরিক জান্তাদের কেন তোঁয়াজ করলেন? কেনই বা বাংলাদেশের ন্যায়যুদ্ধে অন্যায়কারীদের পক্ষ নিলেন?

সিপিসি'র বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে যেকোন কিছু চীনের নিজস্ব স্বার্থের আলোকে দেখা। একটা উগ্র জাতিয়তাবাদী রাষ্ট্রে এটা স্বাভাবিক, কিন্তু বহুজাতির দেশ চীনে এটা সম্ভব হয়েছে অভ্যন্তরীণ হান-আধিপত্যবাদী মনোভাবের কারণে। তিন দাঁড়িওয়ালার মানবতাবাদী দার্শনিক-রাজনৈতিক তত্ত্ব এই মনোভাবের জন্য তাদের হালে পানি পায়না। হান-স্বার্থবিরোধী যেকোন কিছু চীনের জন্য ক্ষতিকর এই মনোভাব থেকে তারা অভ্যন্তরীণ বা আঞ্চলিক নীতি ঠিক করে থাকে।

অথচ গণচীন এমনটা ছিলনা। কোরিয়ার যুদ্ধে সে সরাসরি অংশগ্রহন করেছিল, ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করেছিল। কেউ কেউ বলেন, কোরিয়ার প্রতি ঋণ শুধতে গণচীন এই যুদ্ধে নিজেকে জড়িয়েছিল। কারণ যাই হোক, গণচীন সেখানে যুদ্ধ করেছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে সেটাই বড় কথা। কিন্তু কোরিয়ার যুদ্ধে বৃহৎ প্রতিবেশী সোভিয়েত ইউনিয়নের কৌশলগত বিলম্ব করা, নূন্যতম অংশগ্রহন, যুদ্ধে গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়দের পরাজয় ত্বরান্বিত করে। এর ফলে গণচীন যে ধাক্কা খায় তাতে সে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ঝামেলায় নিজেকে না জড়ানোর কথা ভাবে। ফলে ভিয়েতনামে মার্কিনী আগ্রাসনের সময়ও তার ভূমিকা হয় নূন্যতম। মাঝখানে সোভিয়েত ইউনিয়নে স্তালিন যুগের অবসান, সোভিয়েতের সাথে আদর্শগত বিভাজন, সীমান্ত সংঘাত সব মিলিয়ে সিপিসি নিজের ঘরে টিকে থাকার জন্য হাত-পা গুটিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। চীনা নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন, ব্যক্তিচেতনা আদর্শিক চেতনাকে ছাপিয়ে ওঠা গণচীনের এই অধঃপতনকে মসৃন করে।

১৯৬২ সালে ভারতের সাথে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধ, তিব্বতে স্বাধীনতাকামী আন্দোলন, মধ্য, পশ্চিম আর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদের উত্থান চীনকে প্রতিবেশীদের না ঘাঁটানোর পথে নিয়ে যায়। বস্তুতঃ এর ফলে ১৯৭১ সালে গায়ে পড়ে পাকিস্তানের সাথে মিলে ভারতের সাথে যুদ্ধ করার কথা সে ভাবেনি। তাহলে বাংলাদেশকে সমর্থন করতে ক্ষতি কী ছিল? কারণ, পাকিস্তানের সামরিক জান্তাদের পিছনে গণচীনের নৈতিক ও বস্তুগত সমর্থণ আগে থেকেই ছিল। এতে ভারতকে পাকিস্তানের সাথে ঠোকাঠুকিতে ব্যস্ত রাখা যাবে। তাতে ম্যাকমোহন লাইন, আক্‌সাই চিন বা তিব্বত প্রশ্নে ভারত বিশেষ মাথা ঘামাবেনা। এক্ষণে তাদের পেয়ারা ইয়াহিয়া খান সঙ্কটে পড়লে তাকে একরকম নৈতিক সমর্থণ দিয়ে টিকিয়ে রাখার চেষ্টাই গণচীন করেছে। তখন সদ্য সদ্য পাওয়া নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সীটের জোরে প্রথম ভেটোটাও তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে যায়। গণচীন সৈন্য বা রসদ দিয়ে পাকিস্তানকে সাহায্য করার কোন চেষ্টা করেনি। পাকিস্তানী জান্তারা যতই "উত্তর দিক থেকে হলুদ আর দক্ষিণ দিক থেকে সাদা" আসার স্বপ্ন দেখাক, বাস্তবে তা স্বপ্নই থেকে গেছে।

আজ এতগুলো বছর পরেও গণচীন তার সেদিনকার আচরণের কোন মূল্যায়ণ করেনা। ভেবে দেখেনা তাদের সাপেক্ষে অন্যায়কে সমর্থণ করাটা জরুরী ছিল কিনা। পাকিস্তান বাংলাদেশকে ১৯৭৩ সালে স্বীকৃতি দিলেও তারা অপেক্ষা করেছে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। পোপের চেয়ে বেশি ক্যাথলিকদের পাকিস্তানপ্রীতি এতটাই প্রবল, এতটাই অর্থহীন। গোটা ইন্দোচীনের ইতিহাসে গণচীনের এমন ভূমিকাই বার বার দেখা গেছে। মার্কসবাদকে খেয়ে ফেলা হান-আমলাতন্ত্রের আচরণ এমনই হবার কথা।

কিন্তু বাংলাদেশে বাস করা তথাকথিত চীনপন্থী বা মাওবাদীদের কী হয়েছিল? তাদের আচরণ কেমন ছিল? সেটা নিয়ে কথা বলার আশা রাখি পরের পয়েন্টে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

কিছু লিংক দিলাম, কাজে আসতে পারে।



ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

লিঙ্কগুলো দেখলাম, এগুলোর কোনটাই গণচীনের সরকারী ভাষ্য নয়। ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন গণচীনের জন্য অবশ্যই একটা বড় ইস্যু। তাইওয়ানকে সারাজীবনের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুধভাত করে রাখা, নিরাপত্তা পরিষদে নিজেদের ঠাঁই করা, চীনা উপসাগরে কৌশলগত উত্তেজনা কমানো, নিজেদের প্রভাববলয় বাড়ানো এমনো হাজারোটা কারণ আছে। তবে নিক্সন-কিসিঞ্জারদের কাছে ঈমানী পরীক্ষা দিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে যাওয়ার বা ভেটো দেবার দরকার পড়েনা। নেতৃত্বের আদর্শিক বিচ্যুতি পার্টির চোখে ঠুলি পরিয়ে দেয়। ফলে তাদের ন্যায়-অন্যায়বোধ আর থাকেনা। সে ঘটনাই সিপিসিতে ঘটেছিল।

একই সময়ে বাংলাদেশের সেসময়কার ইসলাম-পসন্দ দলগুলো নিজেদের চোখে দেখেও পাকিস্তানী হানাদারদের অন্যায়গুলোকে সমর্থণ করেছিল, তাতে অংশগ্রহন করেছিল। ঐসব দলগুলোতে নেতা-কর্মী পর্যায়ে ইসলামী আদর্শ থেকে বিচ্যুতি তাদের ন্যায়-অন্যায়বোধ দূরীভূত করেছিল। পরিণামে দলগুলো আপাদমস্তক খুনী-লুটেরা-ধর্ষকদের দলে পরিণত হয়েছিল।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

গণচীনের সরকারি ভাষ্য কি ছিল অনলাইনে পাওয়ার উপায় জানি না। কেউ জানলে জানান।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ষষ্ঠ পাণ্ডবের উভয় মন্তবে গুরু গুরু

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

মাহবুব লীলেন এর ছবি
ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার দেয়া লিঙ্কগুলো পড়লাম। আমার আলোচনাতেও আমি সংক্ষিপ্তভাবে তখনকার অবস্থার প্রেক্ষিতে গণচীনের তখনকার অবস্থার কথা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাতেও একটা আদর্শিক রাষ্ট্র বলে দাবী করা গণচীনের পক্ষে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভেটো দেয়া, বাংলাদেশে গণহত্যার ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকা বা খুনী ইয়াহিয়া সরকারকে সমর্থণ করা জায়েজ হয় না।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাফি এর ছবি

শুভাশীষদা,
এই সিরিজটা পড়িনা, ১। ছফা সম্পর্কে আমার প্রস্তুতির অভাব , ২। সিরিজ শেষ হলে পুরোটা একবারে পড়ব এমন একটা চিন্তা। কিন্তু আজকে কেন জানি এই পর্বটা পড়ে ফেললাম। চমৎকার লাগলো।

আবেদ এর ছবি

@ শুভাশীষ,

এই পর্বটা একদম দড়। আপনার ছফাগিরির ভাষা আর কন্টেন্ট দিন দিন ভাল হচ্ছে।

অসাধারণ লিখছেন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

২. আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়েছি, সরাসরি বিভিন্ন পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে দিনের পর দিন এ’নিয়ে কথা বলেছি তাদের কাছে নূর মোহাম্মদ সাহেবের উক্তি বিশাল মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়।

লড়াইটা যেখানে অখণ্ড পাকিস্তান রাষ্ট্রের সত্ত্বাটার বিরূদ্ধে, শোষন-বঞ্চনার বিরূদ্ধে, এদেশের মানুষের আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সেখানে “পাকিস্তান রাষ্ট্র ও তার স্থানীয় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভিত্তির বিরুদ্ধে” একথা বলার মানে কী? পাকিস্তান রাষ্ট্র ও তার স্থানীয় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভিত্তি কি দুটি ভিন্ন জিনিষ? পাকিস্তান রাষ্ট্রটি কি স্থানীয় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভিত্তি ছাড়াই প্রতিষ্ঠিত ছিল বা তারা symbiotic ছিল? নূর মোহাম্মদ সাহেবেরা এই ধরণের কথার joggling করতে খুব সিদ্ধহস্ত। এভাবে তারা হয়কে নয় করতে পারেন। যাতে ১৯৭১ সালে তাদের আর তাদের মুরুব্বীদের দোষ ধরা না যায়।

স্বভাবতই স্থানীয় মুসলিম লীগ, জামায়াতসহ অন্যান্য ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী ও পাকিস্তানের সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এম.এল.) সংগ্রাম করছিল

এই কথার সপক্ষে কি কোন প্রমাণ আছে? আমার জানামতে সিরাজ শিকদারের পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি ছাড়া হলুদরঙাদের কেউই পাকিস্তান বা তার স্থানীয় দোসরদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করেনি। এই ব্যাপারে কেউ ভিন্ন তথ্য-প্রমাণ দিতে পারলে জানাবেন। আমরা এও জানি, হলুদরঙারা স্বাধীনতার পরও নিজেদের পার্টির নামের আগে “পূর্ব পাকিস্তান” লিখত, ভুট্টোর সাথে যোগাযোগও করেছিল একটা কনফেডারেশন গড়ার জন্য। আরেক হলুদরঙা পণ্ডিত গ্রুপ এই তত্ত্ব দিয়েছিল যে, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ভুল প্রক্রিয়ায় হয়েছে তাই পাকিস্তানের সাথে আবার একত্রিত হতে হবে। এরপর পাকিস্তানীদের সাথে গণযুদ্ধ করে জিতে আবার স্বাধীন হতে হবে। এইসব পণ্ডিতেরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীদের দোসর ছিল, আর পরে এমন সব তত্ত্ব ঝেড়েছে যাতে হেমায়েতপুর বা রাঁচীতে তাদের ঠাঁই করা সম্ভব না।

উপরোক্তদের বাদ দিলে দেশে আওয়ামী লীগ, মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি, ভাসানী ন্যাপ, মোজাফ্‌ফর ন্যাপ সহ অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক শক্তির বিরাট অনুপস্থিতি ছিল। ফলে প্রথম কয়েক মাস প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি দেশের অভ্যন্তরের লড়াইতে কমিউনিস্ট পার্টি (এম.এল.) সহ অন্যান্য কমিউনিস্ট গ্রুপকেই তাদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু হিসাবে বেছে নেয়। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিচারে এ রকম ঢালাও বক্তব্য ঠিক নয়- কেননা যাঁরা ভারতে চলে গিয়েছিলেন তাঁরাও যেমন দ্রুত দেশের অভ্যন্তরে যোগাযোগ স্থাপন করেন তেমনি আওয়ামী লীগসহ সব দলেরই অনেক কর্মী দেশের ভিতর পাকবাহিনী ও তার দালালদের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ লড়াই চালিয়ে যান

এই উক্তিতে সরল পাঠকের জন্য বিরাট ফাঁদ রয়ে গেছে। এতে সাধারণ পাঠক মনে করতে পারে নূর মোহাম্মদ সাহেবরাই প্রধানতঃ মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। “সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিচারে এ রকম ঢালাও বক্তব্য ঠিক নয়” এই কথা বলে নিজের মিথ্যাচারকে হালকা করার চেষ্টা করেছেন সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগ, মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি, ভাসানী ন্যাপ, মোজাফ্‌ফর ন্যাপের ভূমিকাকে খাটো করার চেষ্টা করেছেন।

১৯৭১ সালের মার্চের পর প্রথম কয়েক মাস- অন্তত আমাদের জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে- পাকবাহিনী ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করেছেন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (এম.এল.) নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা

আচ্ছা, তাহলে বোঝা গেল নূর মোহাম্মদ সাহেবের কাছে বাংলাদেশ মানে হচ্ছে উনাদের জেলাটি (বাংলাদেশে তখন উনিশটি জেলা ছিল), আর মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল মানে হচ্ছে ১৯৭১ সালের মার্চের পর প্রথম কয়েক মাস। সেই কয়েকটা মাস কবে পর্যন্ত? তারপর উনারা কী করলেন? যুদ্ধতো তখনও চলছিল! তারমানে কি তখন তারা মত পালটে উল্টোদিকে চলে গিয়েছিলেন? সত্যটা হচ্ছে উনারা গোড়া থেকেই পাকিস্তানীদের পক্ষে ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও তারা অখণ্ড পাকিস্তানের খোয়াব দেখেছেন। তাদের এই খোয়াব পরের তিন/চার বছরেও কাটেনি।

আসলে নূর মোহাম্মদ সাহেবদের সমস্যা অন্যত্র। যার দরুণ কোনটা ন্যায়, কোনটা অন্যায় সেটা তারা প্রায়ই গুলিয়ে ফেলেন। গুলিয়ে ফেলেন সত্য আর মিথ্যার পার্থক্যও। তাদের সমস্যাগুলো আহমদ ছফা পয়েন্ট ধরে ধরে বলেছেন। সেগুলো নিয়ে এরপর বলার আশা রাখি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

দুইবার এসে গেছে তাই মুছে দিলাম ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ষষ্ঠ পাণ্ডবের মন্তব্যে উত্তম জাঝা!

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

তাসনীম এর ছবি

দেরিতে মন্তব্য করছি। খুব ভালো লেগেছে, মনে হয় আগের গুলোর চেয়ে আরো ভালো হচ্ছে নতুন পর্বগুলো।

জাসদ গঠনে শেখ মুজিবের গোপন সায় ছিল।

এইটা বেশ ইন্টারেস্টিং তথ্য, আরো কিছু জানা থাকলে লিখ।

১৯৭৫ সালের চৌদ্দই আগস্ট রাতে শেখ কামালের সাঙ্গপাঙ্গের দৌড়ানি খেয়েছিলেন। শেখ মুজিবের শাসনামলের কঠোর সমালোচনা করেছেন আবার ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের পর সবাই চুপ থেকে গেলেও ছফা তাঁর প্রতিবাদ ঠিকই উচ্চারণ করেছেন।

খুবই সত্য, ছফা পলিটিক্যালি কারেক্ট কখনো ছিলেন না।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

খুবই সত্য, ছফা পলিটিক্যালি কারেক্ট কখনো ছিলেন না।

হ ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

৩. যে সকল কারণে বামপন্থী রাজনীতি এ দেশের প্রধান রাজনৈতিক ধারা হয়ে উঠতে পারেনি সেগুলোরও একটা খতিয়ান করা প্রয়োজন।

এই সুযোগে আহমদ ছফার বিশ্লেষণ নিয়ে আমরাও একটু আলোচনা করার চেষ্টা করি।

প্রথমত, জাতিসত্তার প্রশ্নটি পাশ কাটিয়ে বামপন্থী রাজনীতি বিপ্লবের প্রশ্নটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল এবং তাই বামপন্থী রাজনীতি জাতীয় নেতৃত্বে অবস্থান হারিয়েছে।

বিপ্লব কাদের জন্য হবে, কাদের নিয়ে হবে? এই প্রশ্নগুলো কি উনাদের মনে আসেনা? বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়নের পাশে মঙ্গোলিয়া বা গণচীনের পাশে কোরিয়াতে আলাদা করে বিপ্লব করার দরকার পড়ল কেন? জাতিসত্তার প্রশ্নটি সেখানে প্রবল বলেই তো, নাকি? এমনকি সোভিয়েত কর্তৃক মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রগুলোকে গ্রাস করার আগ পর্যন্ত সেখানেও কি জাতিভিত্তিতে বিপ্লবের সূচনা হয়নি? জাতিচেতনা যেখানে প্রবল সেখানে জাতিসত্ত্বার স্বার্বভৌমত্বের গণদাবীকে উপেক্ষা করে বিপ্লবের গণভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। গণদাবীকে উপেক্ষা করে “পাত্রাধার তৈল নাকি তৈলাধার পাত্র” তত্ত্ব কপচালে পরিণতি এমনই হবার কথা।

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক রাজনীতির মতাদর্শগত দ্বন্দ্বটি আমাদের দেশের বামপন্থী দলগুলো যতোটা বড় করে দেখেছে, আমাদের দেশের শোষিত জনগণের প্রশ্নটি তাঁদের চোখে সে তুলনায় গৌণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

স্বদেশী ঠাকুর ফেলে বিদেশী কুকুর ভজনার ইতিহাস আমাদের পুরনো। আমাদের মনে হয় দূরদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমরা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে না পারলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের অবস্থান বলে কিছু থাকবেনা। তাতে সে ঘটনার প্রভাব আমাদের উপর থাকুক বা না থাকুক, অথবা ঘরে তারচেয়ে বড় সমস্যা থাকুক। তাছাড়া রাজনৈতিক পরগাছা যারা এর-তার চাঁদা-দানের উপর নির্ভর করে বাঁচে তাদের পক্ষে বৈদেশী প্রভু বাছাই একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ভুল প্রভু বাছলে পরে দুধ-মধুর প্রবাহ কমে যেতে পারে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই দেশে মানুষ শোষিত হোক আর মরেই যাক তা মস্কো ঠিক না পিকিং ঠিক তারচেয়ে জরুরী না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এদের নিজস্ব ভাবনা-বিশ্লেষনকে জোর গলায় ঠিক দাবী করার জোরটুকুও। নেই ভাবতে অবাক লাগে যে এই দেশে এম, এন, রায় জন্মেছিলেন যিনি মার্কসবাদের নমস্য ব্যক্তিদের তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করার সামর্থ রাখতেন। তত্ত্ব বাছাই ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে appropriate ও sustainable এই দুটি বিষয় যে স্থানীয় কাঠামো, চরিত্র ও চাহিদার উপর নির্ভর করে সেটা তারা মনে রাখেন না।

তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটা মৌলিক উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে রাজনৈতিক আন্দোলনের সংযোগ সাধন করে পরিবর্তনকামী শক্তিগুলো একটা জঙ্গী ঐক্যমোর্চায় টেনে আনার ব্যাপারে তারা বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

আমাদের নেতারা বড্ড একবগ্‌গা। রাজনীতি যে অন্য আরো দশটা বিষয়কে ধারণ করে নিজের কর্মসূচী ও কর্মকৌশল ঠিক করে সেটা তারা সচরাচর বিবেচনায় আনতে চান না। মৌলিক উন্নয়নের কৌশল নির্বাচন, সাধারণ মানুষের কাছে সেটার কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করা, আসন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমে তার সংযোগ সাধন এই কাজগুলো বড্ড পরিশ্রমের। আর তাছাড়া সেগুলো করার জন্য পড়া-শোনা করা, গবেষণা করা, সাংগঠনিক কাঠামোর বহুমাত্রিক বিস্তৃতি এগুলোরও দরকার আছে। অত পরিশ্রম কে করে বলুন? আর সেসব করতে গেলে নিজেদের ঝোলার ভিতরে কী আছে তা নিয়ে যদি টানাটানি পড়ে যায়!

চতুর্থত, আমাদের শোষিত জনগণের সামগ্রিক স্বার্থটির প্রতি দৃষ্টি না দেয়ার কারণে বামপন্থী দলগুলোর কনিষ্ঠ অংশীদার হওয়ার প্রবণতা জনগণের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা অসম্ভব করে তুলেছে।

কনিষ্ঠ অংশীদার হলে সংসদে এক-আধটা সীট পাওয়া যায়, এক-আধজন পাতিমন্ত্রী হতে পারেন, সংসদীয় কমিটিগুলোতে ঠাঁই পাওয়া যায়। ক্ষমতায় না থাকলে মিডিয়াতে নিয়মিত আসার পথ খোলে, পত্রিকায় কলাম লেখার বায়না পাওয়া যায়। ছোট তরফ হলে বড় সংগঠন চালানোর হ্যাপা পোহাতে হয়না, মিল-কারখানায় নোংরা শ্রমিকদের নিয়ে বা ক্ষেতে-খামারে অশিক্ষিত কৃষকদের নিয়ে আন্দোলন করতে হয়না, শুধু মাঝে মাঝে এক-আধটা বিবৃতি দিলে, দশ মিনিটের জন্য মুক্তাঙ্গনের কাছে বিশজনের একটা মিছিল করলেই চলে। এদের লক্ষ্য নিজেদের স্বার্থরক্ষায়, স্বার্থ উদ্ধারে। তাই যত নেতা, তত দল। দলে বহুমতের সুযোগ নেই, ভিন্নমতের সুযোগ নেই। তাও ভালো আজকাল গলা কাটাকাটি কমেছে। নয়তো এককালে যত জন জোতদার-মহাজনের গলা উনারা কেটেছেন তার চেয়ে বেশি কেটেছেন নিজের সাবেক সহকর্মীদের।

পঞ্চমত, মেহনতি জনগণের সংস্কৃতির বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে তাদের পর্বতপ্রমাণ ব্যর্থতা সামন্ত সংস্কৃতির রিক্তাবশেষকে টিকিয়ে রাখতে বিশেষ সাহায্য করেছে, যা প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির সহযোগিতায় বারবার আমাদের সংস্কৃতির গতিধারার সুষ্ঠু বিকাশ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে।

সাংস্কৃতিক আন্দোলনটা আবার কী জিনিষ? তার বিকাশই বা দরকার কেন? গায়ে পাঞ্জাবী-পাজামা, কাঁধে ঝোলা, কখন ও কখনো কমব্যাট শার্ট বা ঘুড়ি-একতারা ছাপানো টী-শার্ট; মাঝে মাঝে নিজেদের সভায় কাঙালিনী সুফিয়া বা কুদ্দুস বয়াতীজাতীয় শিল্পীদের গান শোনা; পয়লা বৈশাখে রমনায় বা কবিতা উৎসবে টিএসসিতে বা ফেব্রুয়ারীতে বইমেলায় যাওয়া এটাইতো এদেশের জনগণের সংস্কৃতি। নাকি ভুল বল্‌লাম?

সামন্তবাদী আর ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির যে মূল আমাদের সংস্কৃতিতে প্রোথিত তার জন্য আমাদের মনোভাব দায়ী। সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রের চরিত্র, বিদ্যমান শ্রেণীবৈষম্য ইত্যাদি ফ্যাক্টরগুলোতো আছেই। আমাদের মানসিকতায় এখনো জমিদারিত্ব বা নবাবী আছে। এর মূলোৎপাটন করলে আমাদের আচরণ ও মানসিকতায় যে পরিবর্তন আনতে হবে তা করতে আমাদের গড়িমসি আছে। ফলে সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে প্রগতিশীল আর প্রতিক্রিয়াশীলদের মধ্যে যে দুস্তর পার্থক্য তৈরি হবার কথা ছিল তা হয়নি। আমাদের নেতাদের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম হতে হয়, নামী-দামী প্রতিষ্ঠানে লেখা-পড়া করতে হয়, বিলাসী না হোক স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে হয়, কাজে-অকাজে হিল্লী-দিল্লী যেতে হয়। তা না হলে আমাদের নেতাদের মান থাকে না। নেতারা এখানে বড়ভাই অথবা স্যার, কোনভাবেই আমার পাশের লোক নন্‌। তাই এখানে রেনেসাঁ হবার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়না। বিজাতীয় বা অপসংস্কৃতির করাল থাবা থেকে বাঁচার জন্য নিত্যই আমাদের সামাল সামাল করতে হয়। খুব কম প্রগতিশীল পার্টিই আছে যাদের সাংস্কৃতিক গণসংগঠন আছে। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ব্যাপারে গোছানো পরিকল্পনা, নীতি আরো কম পার্টির আছে। আর এসবের প্রয়োগ একেবারেই নেই। প্রসঙ্গতঃ বলি, একবার আমার এক বন্ধুকে “Brief History of Time” পড়তে দেখে তার নেতা বলেছিলেন, “এসব পড়ার দরকার নেই, বিপ্লব হলে এসব কিছু ঠিক হয়ে যাবে”। এই বিপ্লব কোন গাছে ধরে বা কোন বাজারে কিনতে পাওয়া যায় তা আমাদের জানা নেই।

ষষ্ঠত, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মানস-চৈতন্যের শুশ্রূষা করে তার মান উন্নত এবং বোধ উপলব্ধিতে নতুন সমাজের ভ্রূণ গ্রহণ করার পরিবেশ সৃষ্টি না করে অনুভূতিকে আহত করার প্রবণতা বৃহত্তর জনগণকে বামপন্থীর প্রতি বিমুখ করে তুলেছে।

পঞ্চম পয়েন্টের আলোচনায় এই পয়েন্টটিও আলোচিত হয়েছে। পরিবর্তনকে গ্রহন করার মানসিকতা নিজের মধ্যে না থাকলে পার্টি নীতি ও কৌশলে তার কোন প্রতিফলন থাকতে পারে না। স্টান্টবাজী করে, জিজ্ঞাসু কর্মীর জিজ্ঞাসার উত্তর না দিয়ে পালটা “জামাই ঠকানো” প্রশ্ন করে তাদের মুখ বন্ধ করার সংস্কৃতি পার্টি নেতৃত্বে প্রাচীন। কোনটি সংস্কৃতির অংশ আর কোনটি প্রতিক্রিয়াশীল কর্ম সেই ফারাক করার জ্ঞান বা মানসিকতা না থাকায় জনগণের অনুভূতিতে আঘাত করার রীতি তৈরি হয়েছে।

সপ্তমত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং প্রান্তিক জাতিসমূহের নিরাপত্তা এবং জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণের অধিকারের প্রতি যথেষ্ট অঙ্গীকারসম্পন্ন না হওয়ার কারণে, তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি জন্ম দিয়েছে।

আমাদের মত দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু আর প্রান্তিক জাতির মানুষেরা এক একজন স্রেফ এক একটা ভোট। সুমন চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, “ভোট - মানুষের মুখে ব্যালট পেপার নেতা দেখছেন”। তাঁদের মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করণ, তাঁদের মানবিক জীবন নিশ্চিত করণ ও তাঁদের প্রাপ্য সুবিধা নিশ্চিত করণের আন্দোলন করার মত বা কোন কর্মসূচি দেবার মত মানসিকতা বেশিরভাগ নেতা-কর্মীর নেই। শুধুমাত্র নিজের ভোটবাক্স বোঝাই করার জন্য মাঝে মাঝে কিছু নাকি কান্না কাঁদার চেষ্টা করেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেন না। সুবিধাবঞ্চিত মানুষ স্বভাবিকভাবেই মূল জনগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন। মূল জনগোষ্ঠীর আচরণ তাঁর অনুভূতিকে আরো শক্ত ভিত্তি দেয়। সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতায় নিজের জন্য একটা ভৃত্যশ্রেণীর দরকার হয়। ঔপনিবেশিক মানসিকতায় সেই ভৃত্যশ্রেণী অন্য ধর্ম-জাতি-বর্ণের হলেতো সোনায় সোহাগা। সেক্ষেত্রে প্রগতিশীলের মুখ মুহূর্তে ঔপনিবেশিক প্রভুর রূপ ধারণ করে।

অষ্টমত, বামপন্থী রাজনৈতিক দল এবং নেতৃবৃন্দ সমস্ত জাতির নেতৃত্ব দেয়ার বদলে সমাজে বিশেষ বিশেষ অংশকেই কর্মক্ষেত্র মনে করেন বলে তাঁরা একটি পলায়নবাদী, পরাজিত মানসিকতার শিকারে পরিণত হয়েছেন। সে কারণে বামপন্থী রাজনীতিকে আমাদের রাজনীতির প্রধান ধারা হিসেবে তাঁরা চিন্তা করতেও সক্ষম নন।

সমস্ত জাতিকে নেতৃত্ব দিতে হলে তো সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে কাজ করতে হয়। তাহলে তো পল্টন-মুক্তাঙ্গন-তোপখানা রোড-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-শাহবাগ-কাঁটাবন এলাকায় নিজেদের বিচরণ সীমাবদ্ধ করা যায় না। এত খাটুনী দিলে কি চলে? শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্তের মাঝে কাজ করার সুবিধাইতো আলাদা। এদের পিছনে কম পরিশ্রম করতে হয়। ছোটলোকগুলোর মত এটা চাই, ওটা চাই বা এটা করলেন কেন, আপনার আছে আমার নেই কেন ইত্যাদি বেয়াড়া প্রশ্নগুলো তাহলে শুনতে হয় না। এরচেয়ে ছাত্রগুলোকে টার্গেট করো। তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক ছাত্রাবস্থায় সাথে থাকবে। আরো কমজন ছাত্রত্ব শেষ হলেও থাকবে। তাতে নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার লোকের সংখ্যাও কম হবে।

নবমত, বিশ্বপরিসরে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতন আদর্শিকভাবে আমাদের বামপন্থী দলগুলোর নেতা এবং কর্মীদের হতবিহ্বল করে ফেলেছে। তাই তাঁরা আমাদের শোষিত জনগণের উত্থানক্ষমতার প্রতি আস্থা স্থাপন করতে পারেন না।

বাইরে থেকে এই খাত ঐ খাত দেখিয়ে পয়সা আনা, সম্মেলনের নামে তাদের টাকায় বিদেশভ্রমণ, বিনা পয়সায় ছেলে-মেয়ে-ভাই-ভাতিজাদের বিদেশে পড়ানো, দেশের বাইরে নিজেদের ফ্রী চিকিৎসা করানো বা স্বাস্থ্যনিবাসে থাকার পথ বন্ধ হয়ে গেলে অমন এতিম এতিমতো লাগবেই। মস্কোতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতা ধরার ব্যবস্থা না থাকলে কী কর্মসূচি দেয়া যায় তা ভাবতেইতো মাথার চুল পেকে সাদা হয়ে যাবে। আমাদের শোষিত জনতার উত্থানক্ষমতা আদৌ আছে কিনা তা দেখতে হলে তো তাদের কাছে যেতে হবে। তারচেয়ে রূপান্তরপন্থী, সংস্কারপন্থী বা ট্রাস্টপন্থী দল করা সহজ। তাতে ছোট তরফের হয়ে টিকে থাকা যায় অথবা বড় দলে ঢোকার সময় বার্গেইনিং করা যায়।

ভাবতে চাই বা না চাই আমাদের অনেকের মধ্যেই একধরণের সাকার বা নিরাকার পৌত্তলিকতাও আছে। আমাদের সামনে তাই father-figure নেতা লাগে। নেতা না থাকলে অন্ততঃ তার ছবি লাগে, নেতার আদর্শের দরকার হয়না। নিজেদের অন্যদেশের লবী বলতে আমাদের ভালো লাগে। তাতে আমরা মনে বল-ভরসা পাই। অন্যরা সবাইতো আমাদের চেয়ে বড়-শক্তিশালী দেশ। তাদের যদি স-সে-মি-রা অবস্থা হয় তাহলে আমরা ঘাবড়ে যাবো না!

দশমত, বাজার অর্থনীতির জয়যাত্রা বামপন্থী বুদ্ধিজীবি এবং অর্থনীতিবিদদের একাংশকে মোহাবিষ্ট করে ফেলেছে। তাঁরা জনগণের শ্রমনির্ভর অর্থনৈতিক বিকাশের পথ পরিহার করে বাজারের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করছেন। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক নয়। বিকল্প অর্থনৈতিক যুক্তি নির্মাণে বামপন্থী অর্থনীতিবিদদের কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এ সকল আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ধনী দেশগুলোর স্বার্থকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রেক্ষিতটি তাঁরা উপেক্ষা করে থাকেন।

এসব যে কি বলেন! বিকল্প অর্থনৈতিক মডেল দাঁড় করাতে গেলে গবেষণা করতে হবে না? সেই মডেল কে প্রতিষ্ঠিত করতে পার্টিকে আর নিজেদের খাটাখাটনি করতে হবে না? কে যায় অত পরিশ্রম করতে! এরচেয়ে চুপচাপ বসে থাকা ভালো। বাজার অর্থনীতি যদি সত্যিই খারাপ হয়ে থাকে তাহলে ওটা আপনাআপনি ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি কোন কারণে সেটার শ্রীবৃদ্ধি হয় তাহলে আমিও মিন্‌মিন করে বলতে পারবো, “আমি তো বাজার অর্থনীতিকে পুরোপুরি খারাপ বলিনি। এই দেখুন না অমুক তার তমুক পলিসিতে অমন কথাই তো বলেছিলেন। আর এসব ব্যাপারে আমাদের যে তত্ত্ব আছে তাতো এখনো প্রয়োগ করে দেখা হয়নি। প্রয়োগ হলে দেখতেন দেশে ঠিকই বিপ্লব হয়ে যেত”।

একাদশতম কারণ হিসেবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহের জনউদ্যোগ এবং সামাজিক সংহতি বিনষ্ট করার বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই। আমাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির এ পর্যায়ে হয়ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহকে অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহ যেভাবে সরকারের উত্থান-পতনে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেছে, তাঁদের এ ক্ষতিকারক ভূমিকার বিরুদ্ধে সম্মিলিত সামাজিক প্রতিরোধ প্রয়োজন। তারাই বামপন্থী বিকাশের প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে উঠবে।

হে-হে আপনি দেখি গোড়াতে হাত দিয়ে বসেছেন! আমি যে বেনামে এনজিওতে কনসালটেন্সী করি সেটা জানলেন কি করে? এনজিওগুলোর পলিসি অ্যানালিস্ট, পলিটিক্যাল অ্যানালিস্ট, পলিটিক্যাল ফোরকাস্টার পদে যে ছেলে-মেয়েগুলো আছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক্‌ করুন। দেখবেন ছাত্রজীবনে ওরা আমার পার্টিই করত। ছাত্রজীবনে প্রগতিশীল রাজনীতিতে যুক্ত থাকলে এ’সব এনজিওগুলোতে তা এক্সট্রা কোয়ালিফিকেশন হিসাবে দেখা হয়। আর আমারও তো মনে মনে খায়েশ আছে গবেষণা ইনস্টিটিউটের নামে একটা এনজিও খোলার। তাই এনজিওর নাড়ি-ভুঁড়ি বের করার চেয়ে আসুন আমরা তাদের মহান কর্মকাণ্ডের দিকে নজর দেই। দেখুন না তারা নারী স্বাধীনতা নিয়ে কত কাজ করছে, নারীদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন নিয়ে কত কাজ করছে, বস্তির নোংরা বাচ্চাগুলোকে নাম লেখা শেখাচ্ছে। তারা যেখানে এতসব করছে সেখানে টিনের চাল খোলা, নাকের নথ খোলা, বড় ভাইয়ের মহাসমাবেশে লোক সাপ্লাই বা জাতীয় নির্বাচনে টিকিট চাওয়ার মত নগন্য বিষয়ে কথা বল্‌লে কি চলে? স্বাধীনতার পর সাহায্যের নামে কত টাকা এই দেশে এসেছে, তার কত টাকা এই দেশে কোন কোন খাতে খরচ হয়েছে, কত টাকা আবার দেশের বাইরে চলে গেছে, প্রাপ্ত টাকা দেশের স্বার্থের বা দেশের মানুষের কল্যানের বিপক্ষে ব্যয়িত হয়েছে কিনা এসব প্রশ্ন করলে কনসালটেন্সী চলে যায় বা চাকুরী চলে যায়। কিছু কিছু ফিক্সড চাঁদা আসার পথও বন্ধ হয়ে যায়। তাই এগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করাই ভালো।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাহায্যের স্বীকৃতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ ঘটা করে দিয়েছে বলে জানা নেই। এটা ঠিক করে দিলে জাতি হিসেবে আমাদের সম্মান বাড়তে পারত।
"ঘটা করে" ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলবেন! স্বাধীনতার পরপরই তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার ভারতের সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন পূর্বক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নি! কিংবা এখনও কি বাংলাদেশের সরকার প্রধান ভারতের সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে থাকেন না!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

হাসিব এর ছবি

ধুগা, মুক্তিযুদ্ধে বহু ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছেন । পালা পার্বনে তাদের নাম কেউ নেয় না । যদ্দুর জানি তাদের নামে কোন স্মৃতিসৌধও নাই ।

ব্যর্লিনে গেলে দেখা যায় রুশদের নামে স্মৃতি সৌধ আছে । এই কাজটা আমরা এখনও করতে পারি নাই ।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

হাসিবের সাথে একমত ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

@ধুসর গোধূলি ,

এই প্রসঙ্গে আগের কিস্তির ৩৭-৪৩ নম্বর মন্তব্যগুলো দেখতে পারেন।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমার সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে নেই এখানে শুভাশীষ'দা। আমি আসলে ছফাগিরির কোনো কিস্তি পড়িনি একসঙ্গে পড়বো বলে। তাই আগের মন্তব্যগুলোতেও চোখ বুলানো হয়নি।

আমি অবশ্যই মন্তব্যগুলো দেখবো। ধন্যবাদ আপনাকে এই সিরিজটি জারী রাখার জন্য।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

লেখাটার জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করছিলাম, পড়ছি।
তবে পড়তে এসে দেখি একেকটা মন্তব্য একেকটা পোস্ট-সমান হয়ে দাড়িয়েছে। আগ্রহের বিষয়, সময় নিয়ে পড়ছি। আপাতত একটা প্রশ্ন রেখে যাই।

১) জাসদের জন্ম স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস থেকে, যা ছয়-দফার সংগ্রামকে এক দফার সশস্ত্র সংগ্রামে পরিণত হতে বাধ্য করেছিল।
২) জাসদ-নেতারা র-সৃষ্ট মুজিব বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন যার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল কমিউনিস্ট শক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ/নিধন করা।
৩) জাসদ গঠনে শেখ-মুজিবের সায় ছিল।

এই সবগুলো তথ্য-মন্তব্য মেলানো যায় কি করে?

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

১ সঠিক তবে ২ আর ৩ নিয়ে আমার সংশয় আছে । কিন্তু আমার পাল্টা প্রশ্ন এই তিনটি তথ্যকে মেলানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল কেন ? আপনার এই প্রশ্নের নেপথ্যে যে অনুমান, ধারণা,চিন্তা কাজ করেছে সেটা শেয়ার করলে আলোচনার সুবিধা হয় ।

আমি মনে করি , ইতিহাসের কোন ব্যক্তি বা ঘটনার বিচার করতে হয় ওই সময়কালে / পটভুমিতে ব্যক্তি বা ঘটনার ভূমিকা কি ছিল তা’ দিয়ে । অতীত বা ভবিষ্যতের কোন ঘটনায় ব্যক্তির ভূমিকা দ্বারা বায়াসড না হয়ে ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

এই তিনটি তথ্যকে মেলানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল কেন ?

তথ্যগুলোকে মেলানোর চেষ্টা করেছি জ্ঞান-সংগ্রহের স্বাভাবিক নিয়মেই, কোন কন্সপিরেসি হাইপোথিসিস মাথায় রেখে নয়।

জাসদ সম্পর্কে ছফার মূল্যায়ন - "এটি আঞ্চলিক এবং সাময়িক প্রয়োজন থেকে উদ্ভুত অপেক্ষাকৃত অগ্রসর চিন্তার তরুণদের একটা সংগঠন, যাদের দীর্ঘমেয়াদি দিকদর্শণ পাকাপোক্ত ছিল না --- এদিক থেকে সিরাজ সিকদারের দলটির সাথে এর নীতিগত মিল পাওয়া যায়" -- এটা এখন পর্যন্ত আমার কাছে গ্রহনযোগ্য।

জাসদ এর গঠন-সূত্র এবং চরিত্র বিশ্লেষণ বাংলাদেশের জন্মকালীন ইতিহাস বিশ্লেষণের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করি। আপনার কথা আমিও মানি, জাসদ নেতাদের ৮০-দশক পরবর্তী বিভ্রান্তি এবং পাল্টি খাওয়াকে আমি এ প্রসঙ্গে বিবেচ্য মনে করি না।

এখন জাসদ সম্পর্কে উপরোক্ত মূল্যায়ন এবং উপরের দেয়া তথ্যগুলোর উপস্থিতি যদি একসাথে দেখি তাহলে, হয় তথ্যগুলোর এক বা একাধিক অংশে বিভ্রাট আছে, অথবা জাসদ চরিত্রের পূণর্মূল্যায়ন প্রয়োজন।

আপনি যেমন বলেছেন, ২ ও ৩ নং তথ্য সম্পর্কে সন্দেহ আছে। তবে ২ এ, অন্তত সিরাজুল আলম খানের মুজিব বাহিনির নেতৃত্বে অংশ নেয়া বোধ করি স্বীকৃত।
তাহলে অন্তত সিরাজুল আলম চরিত্রটিকে নতুন করে ভাবতে হয়। জাসদ গঠনে তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হয়। অন্যদিকে মুজিব বাহিনীর গঠন-উৎস-চরিত্র ও এই সব প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করতে হয়।

আপনার মত গবেষককে কাছে পেয়ে এসব প্রশ্ন করার সুযোগ হারাই কি করে?

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

"আপনি যেমন বলেছেন, ২ ও ৩ নং তথ্য সম্পর্কে সন্দেহ আছে। তবে ২ এ, অন্তত সিরাজুল আলম খানের মুজিব বাহিনির নেতৃত্বে অংশ নেয়া বোধ করি স্বীকৃত।"

শুধু সিরাজুল আলম খানই নয় , জাসদের মেজর জলিল ছাড়া প্রায় সবাই মুজিব বাহিনীতে ছিল যারা আবার ছিল ষাটের নিউক্লিয়াসের সদস্য । ২ নং এর প্রথম অংশ নিয়ে তাই আমার সন্দেহ নেই , আমার সন্দেহ দ্বিতীয় অংশ নিয়ে (শুধুমাত্র কম্যুনিস্ট নিধন ) কারণ মুক্তিবাহিনীর সাথেও এদের লড়াই হয়েছে ।

জাসদের জন্ম নিয়ে হাসান মোরশেদ ভাইয়ের তথ্য সঠিক । ৩১ অক্টোবর '৭২ তারিখে জাসদের জন্ম কিন্তু তাদের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক গণকণ্ঠ প্রকাশিত হয়েছিল সেদিন যেদিন বংবন্ধু পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ঢাকায় পৌছেন অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে !! র' সৃষ্ট মুজিববাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক সিরাজুল আলম খানের পরামর্শে মুজিব বাহিনীর আফতাব আহমদের নির্বাহী পরিচালনায় আর কবি আল মাহমুদের সম্পাদনায় দৈনিক গণকণ্ঠ প্রকাশিত হয় । প্রকাশক ছিলেন মার্শাল মনি । বংবন্ধু ফিরে আসার দিনই (শাসন কাজ শুরুই করেনি , ভাল -মন্দ দুর কি বাত ) তার বিরুদ্ধাচরন করার জন্য সিরাজুল আলম খানরা দৈনিক গণকণ্ঠ প্রকাশ করেছিলেন কার স্বার্থে ? কাদের পরামর্শে ?

যা হোক , মুজিব বাহিনী নিয়ে মাইদুল হাসানের মূ্লধারা'৭১ থেকে কোট করছিঃ

মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করা ‘মুজিব বাহিনীর’ লক্ষ্য বলে প্রচার করা হলেও এই সংগ্রামে তাদের নির্দিষ্ট ভূমিকা, কার্যক্রম ও কৌশল কি, কোন্‌ এলাকায় এরা নিযুক্ত হবে, মুক্তি বাহিনীর অপরাপর ইউনিটের সাথে এদের তৎপরতার কিভাবে সমন্বয় ঘটবে, কি পরিমাণে বা কোন শর্তে এদের অস্ত্র ও রসদের যোগান ঘটছে, কোন্‌ প্রশাসনের এরা নিয়ন্ত্রণাধীন, কার শক্তিতে বা কোন্‌ উদ্দেশ্যে এরা অস্থায়ী সরকারের বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধাচরণ করে চলছে, এ সমুদয় তথ্যই বাংলাদেশ সরকারের জন্য রহস্যাবৃত থেকে যায়। ক্রমে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ পায়, ‘মুজিব বাহিনীর’ কেবল প্রশিক্ষণ নয়, অস্ত্রশস্ত্র ও যাবতীয় রসদের যোগান আসে RAW-এর এক বিশেষ উপসংস্থা থেকে এবং এই উপসংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল উবান গেরিলা প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ হিসাবে ‘মুজিব বাহিনী’ গড়ে তোলার দায়িত্বে নিযুক্ত রয়েছেন।৮৯ এ সব কিছুই হয়ত মেনে নেওয়া সম্ভব হত, যদি এই বাহিনী পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হত।

প্রথম দিকে ‘মুজিব বাহিনীর’ স্বতন্ত্র অস্তিত্বের তিনটি সম্ভাব্য কারণ অনুমান করা হয়: (১) শেখ মণির দাবী অনুযায়ী, সত্যই কেবল মাত্র তাঁরাই সশস্ত্রবাহিনী গঠনের ব্যাপারে শেখ মুজিব কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধি এবং এই সম্পর্কে ভারত সরকারের ঊর্ধ্বতনমহল কেবল অবহিতই নন, অধিকন্তু এদেরও সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে ছিলেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; (২) যদি কোন কারণে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা নেতৃত্বদানে ব্যর্থ হন, তবে সেই
অবস্থার বিকল্প নেতৃত্ব হিসাবে এদেরকে সংগঠিত রাখা; এবং (৩) বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম কোন কারণে দীর্ঘায়িত হলে বামপন্থী প্রভাব যদি বৃদ্ধি পায়, তবে তার পাল্টাশক্তি হিসাবে এদের প্রস্তুত করে তোলা। কিন্তু কেবল শেষোক্ত এই দুই আশঙ্কা থেকেই প্রথম দিকে যদি ‘মুজিব বাহিনীকে’ স্বতন্ত্রভাবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে থাকে, তবে বলা যায় আগস্ট নাগাদ দুটো আশঙ্কাই প্রায় অমূলক হয়ে পড়েছে। পক্ষান্তরে ‘মুজিব বাহিনী’ কর্তৃক ক্ষেত্রবিশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র কেড়ে নেওয়া, তাদের আনুগত্য পরিবর্তনের জন্য চাপ প্রয়োগ করা ও মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহের প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে কেবল যে মুক্তিযুদ্ধকেই ভিতর থেকে দুর্বল করে ফেলা হচ্ছিল তা নয়, অধিকন্তু আশ্রয়দাতা সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও এক সন্দেহের আবহাওয়াকে উৎসাহিত করে তোলা হচ্ছিল।

"শত্রুর শত্রু মিত্র" এই নীতিতে তাজউদ্দিনের সরকার বিরোধী অন্তর্ঘাতমূ্লক তৎপরতা চালানো খন্দকার মোশতাক ছিলেন শেখ মনির পরম মিত্র । খোন্দকার মোশতাকের তুলনায় শেখ মণির রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক, আকাঙ্ক্ষা ও বক্তব্য বহুলাংশে স্বতন্ত্র হলেও তাজউদ্দিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে তাদের উদ্যোগ ও আয়োজন ছিল অভিন্ন। আশ্রয় প্রদানকারী রাষ্ট্রের শক্তিশালী নিরাপত্তা সংস্থার সর্ববিধ পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াও বিপুল সংখ্যক অনুগত সশস্ত্র তরুণের অধিনায়ক হিসাবে শেখ মণি ছিলেন তুলনামূলকভাবে প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী এবং সেই অর্থে সর্ববৃহৎ উপদলীয় বিপদের উৎস।

আবারও মাইদুল হাসানের মূ্লধারা '৭১ থেকে সরাসরি কোট করছিঃ

অক্টোবরের প্রথমার্ধে একমাত্র ‘মুজিব বাহিনী’র একাংশের কার্যকলাপে বরং অধিকতর বেপরোয়াভাব পরিলক্ষিত হয়। এই বেপরোয়াভাবের কতটা তাদের সংখ্যাবৃদ্ধির পরিচায়ক, কতটা পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতার নির্দেশক অথবা কতটা তাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতাজনিত অধীরতার পরিমাপক, তা বলা কঠিন। অক্টোবরে বৈদেশিক ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে মিত্রভাবাপন্ন শক্তিসমূহের সমন্বয় এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রমবর্ধিত সমাবেশ কোন্‌ প্রত্যাসন্ন বোঝাপড়ার প্রস্তুতি, সে সম্পর্কে অনবহিত এই তরুণ নেতৃত্ব তখনও তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে তাদের পুরাতন প্রচারণায় মত্ত: ‘তাজউদ্দিনই বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার হওয়ার কারণ,’ ‘তাজউদ্দিন যতদিন প্রধানমন্ত্রী, ততদিন ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের স্বীকৃতিদান অসম্ভব,’ ‘তাজউদ্দিন ও মন্ত্রিসভা যতদিন ক্ষমতায় আসীন ততদিন বাংলাদেশের মুক্তি অর্জন সম্ভব নয়।’ এই সব বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা, আওয়ামী লীগের একাংশের সঙ্গে তাদের সংঘাত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কোন কোন ইউনিটের সঙ্গে তাদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, এমনকি নৌকমান্ডোদের সাথে তাদের অসহযোগী আচরণের সংবাদ প্রচারিত হয়ে পড়ার দরুন রাজনৈতিকভাবে ‘মুজিব বাহিনী’ ক্রমেই বেশী অপ্রিয় ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে শুরু করে।তা ছাড়া ‘মুজিব বাহিনী’র চার নেতাকেই তাদের পৃষ্ঠপোষকগণ উপমহাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতির আলোকে তাজউদ্দিন তথা মন্ত্রিসভাবিরোধী তৎপরতা থেকে বিরত হওয়ার ‘পরামর্শ দান শুরু করেছেন বলে অক্টোবরের মাঝামাঝি ভারতীয় সূত্র থেকে আমাদের জানানো হয়। বাংলাদেশ সূত্র থেকে জানা যায়, কথিত পরামর্শের মুখে শেখ মণির ভূমিকা অপরিবর্তিত থাকলেও, ‘মুজিব বাহিনী’র দ্বিতীয় প্রধান নেতা হিসাবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান তাজউদ্দিন মন্ত্রিসভা সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করায় এই দুই যুবনেতার মধ্যে মতপার্থক্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় ‘মুজিব বাহিনী’র নেতৃত্বের একাংশের পক্ষে অধীর হয়ে পড়া অস্বাভাবিক ছিল না; বস্তুত তাদের এই অধীরতার সহিংস প্রকাশ ঘটে তাজউদ্দিনের প্রাণনাশের অসফল প্রয়াসের মধ্য দিয়ে।

‘মুজিব বাহিনী’র সদস্য হিসাবে পরিচয়দানকারী এক যুবক আগ্নেয়াস্ত্রসহ সহসা একদিন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে হাজির হয়ে জানায় যে, তাদের এক নেতা তাজউদ্দিনের প্রাণসংহারের প্রয়োজন উল্লেখ করা মাত্র স্বেচ্ছায় সে এই দায়িত্ব নিয়ে সেখানে এসেছে, যাতে তাজউদ্দিনের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়। তাজউদ্দিন তখন অফিসে সম্পূর্ণ একা।তাজউদ্দিন কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হয়ে এই যুবক তাঁকে আরো জানায় যে, এ বিষয়ে সে পূর্ণ স্বীকারোক্তি করার জন্য প্রস্তুত এবং কৃত অপরাধের জন্য কর্তৃপক্ষ যদি তার কোন শাস্তি বিধান করেনও, তবু তাতে তার কোন আপত্তি নেই। তাজউদ্দিন আরো কিছু প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদের পর অস্ত্রসমেত যুবকটিকে বিদায় দেন। সেই সময় ‘মুজিব বাহিনী’র বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কোন কোন ইউনিটের এবং আওয়ামী লীগের একাংশের ক্ষোভ ও বিদ্বেষ এতই প্রবল ছিল যে, এই ঘটনা প্রকাশের পর পাছে কোন রক্ষক্ষয়ী সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে, তা রোধ করার জন্য তাজউদ্দিন ব্যাপারটিকে সম্পূর্ণ গোপন করেন।কিন্তু সম্ভবত এই ঘটনার পরেই তাজউদ্দিন মনস্থির করেন ‘মুজিব বাহিনী’র স্বতন্ত্র কমান্ড রক্ষার জন্য RAW-এর প্রয়াসকে নিষ্ক্রিয় করা এবং এই বাহিনীকে বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে চূড়ান্ত চাপ প্রয়োগের সময় সমুপস্থিত।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

ঠিকাছে। মুজিববাহিনী নিয়ে আপনার চলমান গবেষণায় আশাকরি আরো তথ্য বেরিয়ে আসবে।

শুধু সিরাজুল আলম খানই নয় , জাসদের মেজর জলিল ছাড়া প্রায় সবাই মুজিব বাহিনীতে ছিল যারা আবার ছিল ষাটের নিউক্লিয়াসের সদস্য ।

প্রশ্নটা এখানেই ছিল। নিউক্লিয়াস-মুজিববাহিনী-জাসদ এই তিনটি সংগঠনের নেতৃস্থানীয় একটি গোষ্ঠীকে এই তিনটি সংগঠনেরই নিয়ন্তা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
(ইতিহাসজ্ঞানে আমি নবীশ, তাই এই নেতৃগোষ্ঠীর সকলের নাম-পরিচয় জানার আগ্রহ আছে।) এজন্য এই তিনটি সংগঠনের উৎস-বিকাশ-চরিত্র এসবের একটা একরৈখিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন আছে, যেটা আমি এখনো কোথাও পাইনি।

এসম্পর্কিত প্রশ্নগুলোকে এভাবে সাজানো যায় (আমার ইতিহাস জ্ঞানের ঘাটতি ক্ষমা করবেন) -

১) নিউক্লিয়াসের উদ্ভব কোন পরিস্থিতিতে এবং কেন? এই নিউক্লিয়াসে উপরোক্ত গোষ্ঠীর একত্রিত হবার যোগসূত্র কি?

২) মুজিব-বাহিনী গঠনে ঠিক এই গোষ্ঠীটিই কেন জেনারেল উবান বা RAW কর্তৃক নির্বাচিত হল? আওয়ামীলীগ বিরোধী তো আরো অনেক গোষ্ঠী ছিল যাদেরকে মুক্তিবাহিনীর বিরোধিতায়/নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগানো যেত।

সম্পুরক প্রশ্ন - ঐ গোষ্ঠী কি স্বতপ্রণোদিত হয়ে র এর সাহায্য চেয়েছিল, নাকি র-এর আহবানে এরা সাড়া দিয়েছিল? এদের ভাষ্যমতে তাজউদ্দিনের বিরোধিতার যুক্তি কি?

৩) জাসদে তো কর্ণেল তাহের, মেজর জলিল সহ মুক্তিবাহিনীর বামঘেষা অনেকেই জড়িত হয়েছিলেন। জাসদের গঠন-নিয়ন্ত্রণে যদিও ঐ গোষ্ঠীর ভূমিকা প্রধান ছিল। জাসদের গণকণ্ঠের সাথে ছফাও তো জড়িত ছিলেন। সার্বিক ভাবে তাহলে জাসদকে কিভাবে মূ্ল্যায়ন করা যায়? মুজিববাহিনী গঠনের সাথে জাসদ গঠনের কি কোন যোগসূত্র আছে?

আশাকরি আরো তথ্য জানব।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

আসাদ ভাই,

আপনার প্রশ্নগুলি গুরুত্বপুর্ণ , আমার প্রকাশিতব্য বইয়ে কাজে দিবে । এ মুহূর্তে আপনার প্রশ্নের মিমাংসায় যাচ্ছি না । তবে নিউক্লিয়াস, মুজিববাহিনী আর জাসদ নিয়ে কিছু কথা বললাম -

১। নিউক্লিয়াসের প্রায় সবাই মুজিববাহিনী আর জাসদের সাথে যুক্ত ছিলেন কিন্তু মুজিববাহিনী আর জাসদের সবাই নিউক্লিয়াসের ছিলেন না ।

২। মুজিববাহিনীর চার স্তম্ভ ছিলেন -শেখ মনি , তোফায়েল , রাজ্জাক আর সিরাজুল আলম খান । শেষোক্ত দু’জন নিউক্লিয়াসের স্থপতি ছিলেন ।

৩। এই চার স্তম্ভের মুজিবামলে অবস্থান- শেখ মনি (যুবলীগ) , তোফায়েল(রক্ষীবাহিনী ), রাজ্জাক (স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ) আর সিরাজুল আলম খান (জাসদ ) ।

৪। মুজিব সরকার বিরোধী প্রচারণায় মওলানা ভাসানী, সিরাজ সিকদার আর চীনাবাদাম দলসমুহের ভূমিকা ছিল মুখ্য । তবে ‘সারাদেশে মরেছে এবং মেরেছে জাসদ’ (কমরুদ্দিন আহমদ , ১৯৮২)

৫। শেখ মুজিবের সরকার সমালোচিত হন শেখ মণির যুবলীগ, তোফায়েলের রক্ষীবাহিনী আর রাজ্জাকের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কর্মকান্ডের জন্য ।

৬। দুয়ে দুয়ে চার মেলানো মুশকিল । ষাটের দশকে সর্বজনাব রাজ্জাক দাদা ভাইয়ের সাথে নিউক্লিয়াসে ছিলেন আবার তিনিই চুয়াত্তরে ব্রাশ ফায়ার করে জাসদ অফিস জ্বালানোয় নেতৃত্ব দেন । প্রাণে বেঁচে যান হারুনুর রশীদ (’৭৪-৭৬ জাসদ কার্যকরি সাধারণ সম্পাদক ) ।

৭। হাসান মোরশেদের পোষ্টে জাসদের জামাত কানেকশনের অভিযোগ করেছেন অনু ভাই ! জাসদ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলকেও আমরা দেখেছি প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি করতে !! জয় বাংলা স্লোগান প্রথম উচ্চারণকারী , জাসদ নেতা আফতাবকেও আমরা দেখেছি জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা করতে !!! তালিকা আরো বড় করা যায় ।

৮। মুজিবামলে জাসদ কর্মীদের শাহাদাত নিয়ে মায়াকান্না করতে দেখা যায় ছাগু সমাজকে অথচ তাদের মহান নেতা (!)জিয়ার আমলে মুলত জাসদ নির্মুল অভিযান চলে এবং তাহের আর বিপ্লবী সিপাহিদের গণহারে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় ।
৯। পরবর্তীকালে, জাসদ নেতাদের (তাহেরের সহযাত্রী)-
কেউ হয়েছেন জিয়ার জাতীয়তাবাদী থিসিস প্রণেতা,
কেউ জাসদ থেকে ইস্থফা দিয়ে বর্তমানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রধান সওদাগর,
কেউ হয়েছেন এরশাদের সংসদের গৃহপালিত নেতা,
কেউ হয়েছেন খালেদা সরকারের থিফ অফ বাগদাদ
কেউ নৌকা প্রতিকে মহাজোট এমপি
আর অধিকাংশই পুঁজির নষ্ট সংগমের বেশ্যা ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আইসবার্গের মাথাটুকু কেবল দেখতে পেলাম। এর আরো ৯০% পানির নিচে আছে। পুরো ১০০% এই বইমেলায় দেখার আশা করেছিলাম, আশা ফলপ্রসূ হয়নি তাতো বোঝাই যাচ্ছে। আগামী বইমেলায় কি আশা পূরণ হবে?

একটা ব্যাপারে সবাই কমন। বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশকে ডুবানোর ব্যাপারে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

একটা ব্যাপারে সবাই কমন। বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশকে ডুবানোর ব্যাপারে।

হ ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

তথ্য-মন্তব্য-আলোচনায় পরিপুষ্ট একটি পোস্ট। ধন্যবাদ।
.
___________________________________________
ভাগ্যিস, আমার মনের ব্যাপারগুলো কেউ দেখতে পায় না!

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।