আহমদ ছফার পুরাণ। পর্ব এক।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: শনি, ২০/০২/২০১০ - ৯:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(১)

পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ। বইটা প্রথম পড়ি ২০০১ সালে। কেবল নাম দেখেই কিনেছিলাম। বইয়ের প্রচ্ছদ অদ্ভুত ছিল। কাঁধে পাখি নিয়ে ছফার একটা ছবিও ছিল প্রচ্ছদে। বাসায় গিয়ে পড়তে শুরু করি। আমার সামনে একটা নতুন জগৎ খুলে যায়। উপন্যাস আত্নজীবনী সব মিলে ছফা একটা ভিন্ন জগৎ তৈরি করেছেন। এক একটা পাতা পড়া শেষ হয় আর আমি ভাবতে থাকি এই সহজ কাহিনী একজন মানুষের পক্ষে লেখা কিভাবে সম্ভব। আস্তে আস্তে ছফার অন্যান্য লেখা পড়তে থাকি। বাংলা সাহিত্যে কি বিশ্বসাহিত্যে ছফার সমতুল্য আর কাউকে আমার আর মনে ধরে না।

পুষ্প বৃক্ষ আর বিহঙ্গের কথা বলতে গিয়ে ছফা মানুষের কাহিনী বলে গেছেন। ছফা ভেবেছিলেন একটা আরণ্যক টাইপ লেখা হল। কিন্তু এর ফল গেল অনেক গভীরে। ঘটনা শুরু হয় বাসা পাল্টানো নিয়ে। পুরানো বাড়ি ছেড়ে নতুন বাসায় উঠবেন। সে বাসায় উঠে দেখলেন সেখানে এক ফালি ছাদ ও তাঁর জন্য বরাদ্দ। ছফার পালক ছেলে সুশীল এসে একটা মৃতপ্রায় তুলসি গাছ আর কিছু নয়নতারা চারাকে বাঁচানোর দায় নিল। আস্তে আস্তে যত্ন পেয়ে সেগুলো ঠিক সেরে ওঠে।

আমার ছাদের নয়নতারা এবং তুলসির মধ্যে সমঝোতার ভাবটি ভারি চমৎকার। নয়নতারা গাছগুলোতে যখন ছোটো ছোটো কুঁড়ি এলো, তখনই তুলসিগাছটি পুষ্পবতী হয়ে উঠলো। তুলসিগাছে যখন বীজ ধরলো, নয়নতারা গাছের শিয়রেও বীজভর্তি ক্যাপসুলগুলো দুলতে আরম্ভ করলো। একই রকম জীবন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নবজন্ম লাভ করেছে বলেই বোধ করি ফুল ফলানোর সময়ো দুই তরুতে এমন আশ্চর্য সহমর্মীতার ভাব। ...[পৃষ্ঠা ২৫]

পরে একদিন নয়নতারার পাশাপাশি কিছু গোলাপের টব এনে বসিয়ে দেন। ছফার মনে হতে থাকে এই নতুন প্রতিবেশীর আগমনে নয়নতারারা কাঁদছে। পরে দেখলেন নয়নতারাদের সাথে গোলাপের বিবাদের কোন রেশমাত্র নেই। নিশ্চয় এটা নয়নতারাদের মনের কথা ছিল না।

আমার মনের কথাটিই তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি। মানুষ সুবিধের জীব নয়, তারা নিজেদের মনের ময়লা কাদা এগুলো ফুলের শরীরে মাখিয়ে দিয়ে ভীষণ আনন্দ পায়। ...[পৃষ্ঠা ২৬]

মানুষের চিন্তা বৃক্ষের মানসজগতে ঢুকিয়ে ছফা তাঁর ভুল বুঝতে পারেন। নিজের চিন্তা বরং আরো পরিচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। ছাদে দাঁড়িয়ে নিজের সাথে পুরো বিশ্বের সংযোগ আবিষ্কার করতে কষ্ট হয় না। মনে হতে লাগে আশেপাশের সবকিছু মানবসত্তার একটা অংশ। বৃক্ষের মধ্যে যে প্রাণস্পন্দন তার সাথে মানুষের হৃদস্পন্দনের কোথাও না কোথাও মিল খুঁজে পান। গাছ লাগানোর অদম্য নেশা পেয়ে বসে। একদিন আপেল চারা এনে সেখানে লাগান। জন্ম নেয় পিতৃস্নেহের।

সকালে উঠে ডালপালা, পত্র-পল্লবের ওপর হাত বুলিয়ে আদর করি। বাইরে যাওয়ার সময় আরেকবার। এমনিভাবে আদর জানাতে জানাতে এক সময় অনুভব করি এই তরু শিশুটির প্রতি আমার এক বিশেষ মায়া জন্মে গেছে। তাড়াহুড়োর কারণে, কখনো যদি গাছটির শিয়রে হাত না বুলিয়ে বাইরে যাই, আমার মনটা আইটাই করতে থাকে। আপেল শিশুর পত্র-পল্লব আকর্ষণ করে আদর না জানালে আমার রাতে ঘুম আসতে চায় না। আপেলগাছটি দিনে দিনে যেমন বাড়ছে, তেমনি আমার চেতনায়ও একটু করে সে অল্প অল্প স্থান দখল করে নিচ্ছে। একদিনের জন্যও কোথাও যেতে হলে আমার মনটা ধক করে ওঠে। আমি যদি চলে যাই বৃক্ষশিশুটি একেবারে একা থাকবে। ...[পৃষ্ঠা ২৯]

ছফার ধারণা জন্মালো বৃক্ষ মানুষের ভালবাসা বুঝতে পারে। আপেলশিশুর হেলে তাঁর গা স্পর্শ করলে ছফার ধারণা হয় আপেলশিশু যেন মমতার পরশ দিচ্ছে। ছফার জাগতিক চিন্তা আরো ফানা হয়।

লিখিত ইতিহাসের তলায় যে অবচেতন প্রবাহ ধীরে ধীরে কাজ করে যায়, তরুর চলাও সেরকম। কোনো রকমের তাড়াহুড়ো নেই। জেগে আছে অথচ চাঞ্চল্য নেই, মানুষ তরুর কাছে এই মৌন জাগরণের স্বভাব আয়ত্ত করে,তবেই তপস্যা করতে শেখে।...[পৃষ্ঠা ৩০]

আহমদ ছফা জাসদের রাজনীতিতে আস্থা রাখতেন। জাসদের মুখপাত্র ছিল দৈনিক গণকণ্ঠ। এই পত্রিকা বন্ধ হয়ে পড়াতে ছফা খুব ভেঙ্গে পড়েন। মনে হতে থাকে এতদিন মরীচিকার পেছনে ছুটে অনর্থক সময় নষ্ট করেছেন। পত্রিকাটির বন্ধ হয়ে যাবার সময় কোন একদিন বাসায় ফেরার পথে রাস্তায় একটা থেতলানো বেগুনের চারা পান। পরে সেটাকে নিয়ে এসে রোপন করে দেন। একদিন না যেতেই দেখা গেল চারাটি পায়ের উপর দাঁড়িয়ে গেছে। ছফা নিজেকে মেলান।

আছে, এখনো আমার আশা আছে। আমি আবার নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করতে পারি। গণকণ্ঠ অফিস থেকে আসা অবধি আমার মনে একটা বেদনার অঙ্কুশ বর্শার মতো ঝুলছিলো। বিগত রাতে আমার একটুও ঘুম হয়নি। কেবল পায়চারি করেছি আর ভেবেছি কোথা দিয়ে কী ঘটে গেলো। যেদিকে তাকাই অন্ধকার দেখি। চারাটিকে এভাবে বেঁচে উঠতে দেখে আমার মনের পেশী সকল মনের ভেতর শিশুর হাত-পা ছোঁড়ার মতো করে ঢেউ তুলতে লাগলো। এখনো আমি আনকোরা তরুণ। যদি লেগে পড়ি কতো কিছুই তো করতে পারি। ...[পৃষ্ঠা ৩৩]

বৃক্ষজীবন থেকে ছফার শিক্ষা নেয়া অব্যাহত থাকে। সবুজ উদ্ভিদের ভেতরে আত্মার সন্ধান পেয়ে মুগ্ধ হন। গাছ লাগানোর নেশা পেয়ে বসে। বেগুনের চারা লাগাতে থাকেন। একেবারে বেগুনচাষীর মতো। কোদাল,খুরপি,ঝাঁঝড়ি কিনে আনলেন। বিপ্লবের চারা লাগিয়ে ফল দেখতে পারেননি, তাতে কী, বেগুনের চারা থেকে ফল পাবেন এটা একরকম নিশ্চিত।

আমি অন্তত দশ বছর কাজ করেছি বিপ্লবের পেছনে। এই এতোদিন একটানা দিনরাত কাজের ফল কী হয়েছে দেখবার সুযোগ কোনোদিন হবে না, কৃষ্ণের গরু চরানোর মতো। ছোটবেলায় বায়োস্কোপের চোঙে চোখ লাগিয়ে দেখতাম, বায়োস্কোঅলা বামহাতে কার্ড পাল্টাচ্ছে, আর ডানহাতে ঘন্টি টুংটাং বাজাচ্ছে, মুখে সুর করে উচ্চারণ করে যাচ্ছে- ‘আকার দেখো প্রকার দেখো, জার্মানির যুদ্ধ দেখো,কামান দেখো, বন্দুক দেখো, কতো কতো সৈন্য দেখো, আগ্রার তাজমহল দেখো, রাম-রাবণের যুদ্ধ দেখো,বীর হনুমান দেখো, সীতা দেবীর কাঁদন দেখো, ছিরি কৃষ্ণের মন্দির দেখো …’। এই দেখো দেখোর মধ্যে কৃষ্ণের গরু চরানোর একটা আইটেম ও ছিলো। এক মানুষ কঞ্চি হাতে বিশাল চারণভূমিতে ছুটে বেড়াচ্ছে, মলমূত্র পরিষ্কার করে যাচ্ছে, কিন্তু যে গরুগুলো চরে বেড়াচ্ছে সেগুলো দেখা যাচ্ছে না। একেই বলে কৃষ্ণের চরানো। স্বচক্ষে গরু যদি দেখবে তাহলে কৃষ্ণের গরু চরাতে যাবে কেনো, নিজের ঘরের গরুই চরাতো। বিপ্লবের কাজ কৃষ্ণের গরু চরানোর মতো।কাজ করে যাবে ফল দেখবে না। দেখতে পাবে না। ... [পৃষ্ঠা ৩৫-৩৬]

(২)

স্মৃতিচারণ লেখার ক্ষেত্রে আহমদ ছফার চেয়ে দ্বিতীয় ভাল লেখক আমি পাইনি। প্রফেসর আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে তাঁর লেখা ‘যদ্যপি আমার গুরু’ পড়লে এর প্রমাণ মেলে। কবি আবুল হাসান, জ্যোতির্ময়গুহ ঠাকুরতা, কবি জসীমউদ্দিন, অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস, শওকত ওসমান, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ্ এঁদের উদ্দেশ্য আহমদ ছফা যেসব স্মৃতিচারণ করেছেন পড়লে বোঝা যায় ভাল লেখকদের প্রতি ছফার শ্রদ্ধা।

ছফা বেপরোয়া কথা বলতেন। আবার বাংলাদেশের ভাল লেখকদের কদর ও করতেন। গুণী মানুষদের সম্মান দিতে ছফা কখনো কুণ্ঠা বোধ করতেন না। ছফার লেখালেখির মধ্যে সাহিত্য কতোটা ফুটে ওঠে সেটা মুখ্য ছিল না। প্রধান ছিল রাষ্ট্র বাংলাদেশ,তার বিকাশ। আর স্বকীয় দর্শন। সাথে সত্য উচ্চারণের সাহস। শব্দের পর শব্দ আর বাক্যের পর বাক্য বসিয়ে অনর্থক কথার খেলায় ছফা কখনো মাতেন নি। আহমদ ছফার এই গুণ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বইয়ের কথায় ফিরি। বৃক্ষপুরাণ চলাকালীন সময়ে সাংবাদিক নাজিমউদ্দিন মোস্তানের সাথে ছফার পরিচয় হয়।

কী করে পরিচয় হয় উপলক্ষটার কথা বলি। পাকিস্তানের পদার্থবিদ প্রফেসর আবদুস সালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর আবিষ্কৃত তত্ত্বের ওপর একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সেই বক্তৃতা শোনার ভাগ্য আমার হয়নি। কিন্তু ইত্তেফাক পত্রিকার রিপোর্ট পড়ে আমার মনে হলো প্রফেসর সালামের তত্ত্বটি বুঝতে আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। এটা তো বড়োই আশ্চর্যের কথা। এমন সাংবাদিক আমাদের দেশে আছেন, সালাম সাহেবের দুরূহ তত্ত্বকে অ তে অজগর এরকম সহজ করে বোঝাতে পারেন। ঠিক করলাম, সেদিনই সন্ধ্যেবেলা ইত্তেফাক অফিসে যেয়ে খোঁজ করবো। এই রকম একজন কামেল মানুষ আমাদের দেশে আছেন। সশরীরে গিয়ে যদি সালাম না করি নিজেকেই অসম্মান করবো। ...[পৃষ্ঠা ৫১]

ছফা মোস্তানকে দিলেন আন্তন ম্যাকারেঙ্কোর ‘রোড টু লাইফ’।পরদিন ভোরে মোস্তান ছফার দরজায় আবার হাজির হলেন। সারারাত জেগে বইটা শেষ করে ছুটে এসেছেন। ম্যাকারেঙ্কোর আইডিয়াগুলো কাজে লাগাতে দুইজন মিলে একটা স্কুল খোলার ব্যাপারে একমত হলেন। ম্যাকোরেঙ্কো বিপ্লব পরবর্তী রাশিয়ায় ভবঘুরে অনাথ এতিমদের শিক্ষা দেয়ার একটা ভাল পথ বের করেছিলেন। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে বইটা লেখা। বইটি পড়ার সময় ছফার মধ্যে যে তুমুল অনুভূতির জন্ম নিয়েছিল তার মর্যাদা বোঝার মত একজনকে পেয়ে ছফা তাঁর উদ্যোগ শুরু করলেন।

ভাঙা-চোরা মানুষের শিশুর মধ্যেও মহামানবের অংকুর রয়েছে। মানুষ মাত্রই অমৃতের পুত্র একথা আগে কখনো এমন করে অনুভব করিনি। একটা বিপরীত প্রতিক্রিয়াও হলো। আমার চারপাশে এতো শিশু। এতো অযত্ন, এতো অবহেলার মধ্যে তাদের জীবন কাটাতে হচ্ছে, এতোদিন তাদের নিয়ে ভাববার অবকাশও হয়নি। একটা অপরাধবোধ পাথরের মতো মনের ভেতর চেপে রইলো। আমি এই শিশুদের প্রতি আমার আমার কর্তব্য পালন করিনি। আমার মনুষ্যজন্ম বিফল হয়ে যাচ্ছে। ...[পৃষ্ঠা ৫২]

স্কুল শুরু হল।কিছু বাচ্চাকাচ্চাকে ধরে বেঁধে ছাত্র করা হল। মোস্তান সাহেব এই কাজে খুব সাহায্য করতে থাকলেন। সিলেবাস তৈরি, পড়াশোনা করানো, ক্লাস নেয়া এসব তিনি একাই করতেন। প্রথম প্রথম বাচ্চাকাচ্চাদের কেন তাদের লেখাপড়া দরকার। এটা বোঝাতেই ঘাম ছুটে গেল। এসব ছাড়াই তারা দিব্যি বেঁচেবর্তে আছে। ছফা বাচ্চাকাচ্চাদের ভিড়ে এক বাচ্চার প্রতি একটু বেশি মায়া বোধ করলেন। তার নাম আলমগীর। জন্ম এক হাসপাতালে। আর জন্মের সময় তার মা মারা যায়। বাবাকে কখনো দেখে নি। এই ছেলেকে লেখাপড়া শিখাতে গিয়ে ছফার মনে হলো মোষের শিং থেকে দুধ বের করা এরচে সহজ কাজ।

আমি আলমগীরের জন্য ছোট্ট একটা তোষক কিনলাম। তাকে জামা-কাপড় বানিয়ে দিলাম, স্যাণ্ডেল কিনে দিলাম। আলমগীর থাকছে, খাচ্ছে, ঘুমোচ্ছে কিন্তু তার মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখতে পাচ্ছিনে। সে আমার কোন কথা শোনে না। যখন তখন রাস্তায় ছুটে যায়। তার এই অনিকেত স্বভাবটি ভুলিয়ে দিয়ে তার ভেতর কতিপয় নতুন অভ্যাস তৈরি করার জন্য পণ করে বসলাম। বারবার চেষ্টা করে ও তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিলো না। ...[পৃষ্ঠা ৫৫]

ছফা যেখানেই যেতেন আলমগীরকে সাথে নিয়ে যেতেন। এরপর এক নতুন সমস্যা শুরু হলো। বাচ্চারা আলমগীরের সাথে ছফাকে দেখলেই হাততালি দিয়ে উঠতো। খলখল করে হাসতো। ছফা না পেরে একদিন অন্য এক বাচ্চা বাবুলকে ধরলেন ঘটনা জানার জন্য।

সে বললো, আপনে মায়ের পেডে আছেন, কিছু জানেন না। আলমগীর বলছে আপনে তারে ফাকাইবেন। হের লাইগ্যা সব দিতাছেন। এই ফাকাইবার অর্থ কী আমি জানি না। আমি বললাম, বাবুল, ফাকানো কী জিনিস। বাবুল বললো, বড়ো ভাই আপনে কিছু বোঝেন না, আলমগীর বলে এক সময় আপনে তার লগে খারাপ কাম শুরু করবেন। ...[পৃষ্ঠা ৫৬]

আমাদের এই সুশীল সমাজে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা মানবিক সম্পর্কে আস্ত ফাটলের জন্ম দিয়েছে। বিস্তারে না গিয়ে ফাকানো দিয়ে ছফা তাঁর ব্যাখ্যা সেরেছেন। ধনতান্ত্রিক কর্পোরেট সমাজে সম্পর্ক মানেই কোন না কোন চুক্তি। সাথে ফাকানো থাকবেই। প্রফেসর সলিমুল্লাহ খান উত্থানপর্ব থেকে প্রকাশিত ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ’ বইয়ের মুখবন্ধে এই জায়গা কোট করা শেষে লিখেছেন-

এই বাক্য পড়ার পর আমার প্রথম সংশয়টা পুরোপুরি কাটলো। দাতা ও মদদদাতাদের টাকায় তো এই বই লেখা সম্ভব নয়। লেখা হলেও ওরা টাকা ফেরত নিয়ে যাবেন। ওদের সে ফ্রিডম আছে। ...[পৃষ্ঠা ১৪]

সূত্র

পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ
আহমদ ছফা
উত্থানপর্ব
ফেব্রুয়ারি ২০০৫


মন্তব্য

মামুন হক এর ছবি

দারুণ লাগলো! কিছু প্রশ্ন আছে পরে গুছিয়ে করবো। আপাতত শুভেচ্ছাটুকু জানিয়ে গেলাম।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

প্রশ্ন কইরেন।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

পড়লাম ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ঠিকাছে, বস্‌।

কারুবাসনা এর ছবি

পড়লাম।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আপনি কি ছফাগিরি থেকে এইটারে বাইরে রাখলেন?
নাকি আলাদা সিরিজ করবেন?

ছফাকে বোধহয় একটা থেকে আরেকটায় আলাদা করা যায় না

০২

একটু অন্যপ্রসঙ্গ

টিয়াপাখি কাঁধে ছফাকে স্কেচ করে আহমদ মিনহাজের উল্টোরথের মানুষ' উপন্যাসে একটা চরিত্র আছে

ওটাও প্রায় ছফা
আর আমার জানামতে আহমদ ছফাকে পুরোপুরি হজম করা মানুষদের মধ্যে আরেকজন হচ্ছে এই আহমদ মিনহাজ

এবং সম্ভবত তার উল্টোরথের মানুষ' উপন্যাসটা এই শতাব্দির একটা মাইলস্টোন

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

১।

ছফাকে বোধহয় একটা থেকে আরেকটায় আলাদা করা যায় না

একমত ।
২। টিয়াপাখি কাঁধে ছফা auto

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

লীলেনদা,

এটা সিরিজ না। 'পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ ' বইটি নিয়ে দুই পর্বে আলোচনা। ছফাগিরিতে সময়মত এই বই নিয়ে আলোচনা আসবে।

উল্টোরথের মানুষ পড়িনি। পড়তে ইচ্ছা হচ্ছে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মানিক ভাই, ছবিটার জন্য ধন্যবাদ।

তাসনীম এর ছবি

দুর্দান্ত লিখেছো হে। ছফার খুব কম রচনাই আমি পড়েছি, তোমার ছফাগিরি পড়ে "পড়তে হবে" লিস্টে ছফার লেখা যোগ করছি, এই আত্মজীবনীও যোগ করলাম এই মাত্র।

ধন্যবাদ।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

অরুণ চেৌধুরি এর ছবি

অসাধারণ এই লেখাটি পড়ে বেশ কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে বসেছিলাম!!

অরুণ চেৌধুরি এর ছবি

অসাধারণ এই লেখাটি পড়ে বেশ কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে বসেছিলাম!!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ধন্যবাদ।

রাহিন হায়দার এর ছবি

বোঝার মত বয়স হওয়ার আগেই 'পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ' পড়েছিলাম। আপনার লেখা পড়ে আবার পড়তে ইচ্ছা করছে। কিন্তু উপায় নেই। দেশে যে কী সব অমূল্য রতন ফেলে এসেছি ভাবলেই মন খারাপ হয়।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

এইসব অমূল্য রতন সংগ্রহ করে আপনার কাছে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিতে বলেন। ৭০০০-৮০০০ টাকায় ১০ কেজি বই আনা যায়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

রিফাত আপার ভূত আমার ঘাড়ে সওয়ার হইছে। কমেন্ট ২ বার পড়ে যাচ্ছে।

নাশতারান এর ছবি

'পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ' এর মধ্য দিয়েই আহমদ ছফার সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয়। বড্ড ভালবাসি মানুষটাকে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ঠিকাছে।

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

শুভাশীষ: একটা অফটপিক এবং ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি - আপনার পড়ালেখার স্পেশালাইজেশন কোন সাবজেক্টে? জান্তে মঞ্চায় চোখ টিপি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

খোমাখাতায় জানাইলাম।

আনন [অতিথি] এর ছবি

এই বইয়ের শেষ স্তবকগুলো পড়ে বেশকিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসেছিলাম। এক অদ্ভুত ভালোলাগায় পেয়ে বসেছিলো। ঘোর কাটাতে বেশ সময় লেগেছে।

আমার খুব প্রিয় একটা লাইন হলো- (স্মৃতি থেকে, ভুল হলে মার্জনীয়)
"কেবলমাত্র অন্যকে মুক্ত করেই মানুষ নিজেকে মুক্ত করতে পারে "।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি


আমি পুত্রটির কাছে বিশেষভাবে ঋণী। আমার পাখিপুত্রটি আমাকে যা শিখিয়েছে কোনো মহৎ গ্রন্থ, কোনো তত্ত্বকথা, কোনো গুরুবাণী আমাকে সে শিক্ষা দিতে পারেনি। একমাত্র অন্যকে মুক্ত করেই মানুষ নিজের মুক্তি অর্জন করতে পারে। আমার পাখিপুত্র মুক্ত , আমি মুক্ত, আমাদের সম্পর্ক থেকে প্রত্যহ অমৃত উৎপন্ন হয়। এই আকাশের জীবনের সঙ্গে আমার জীবনের যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কি অমৃত সমুদ্রে অবগাহন নয়?

@ আনন,

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

এক একটা পাতা পড়া শেষ হয় আর আমি ভাবতে থাকি এই সহজ কাহিনী একজন মানুষের পক্ষে লেখা কিভাবে সম্ভব।

আমারো একই অনুভূতি!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

বর্ষা এর ছবি

আন্তন ম্যাকারেঙ্কোর ‘রোড টু লাইফ’ অসাধারণ একটা বই। সেইদিনই নজরুল ভাইকে জিজ্ঞেস করছিলাম এই বইটির কথা---রিপ্রিন্ট বের হয়েছে না কি? অনুবাদকৃত বইটার নাম বাঁচতে শেখা। লেখা পছন্দের সাথে পোষ্টের সাথে যুক্ত করলাম।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

রিলিভেন্ট টপিক: আপনার ইয়াহু ইমেইল চেক করেন কতদিন পর পর? দেঁতো হাসি

বর্ষা এর ছবি

এখুনি চেক করলাম, অনেক ধন্যবাদ। তবে আমার বস মোটেও খুশী হবেনা। মন খারাপ
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

"বাঁচতে শেখা" কারা বের করেছেন জানিনা, তবে প্রগতি থেকে বের হওয়া অনুবাদের নাম "জীবন জয়ের পথে" (দুই খণ্ডে)। প্রগতির বই রিপ্রিন্ট হবার সম্ভাবনা নেই। যদি না কেউ মরা প্রগতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিজেরাই প্রগতির বইটা ছাপায়। প্রগতির বইদুটো নীলক্ষেতেও মেলেনা, পল্টনেও মেলেনা। কোলকাতায় পাওয়া যায় কিনা জানিনা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

বর্ষা এর ছবি

উমম, আমার পড়া সংস্করনটি কলকাতার হবার সম্ভাবনা বেশি ( উত্তরাধিকার সূত্রে নানাবাড়ি থেকে পাওয়া)। পাণ্ডবদাকে ধন্যবাদ ইনফরমেশনটির জন্য। প্রগতির বইটির অনুবাদ কে করেছেন? ইগর, জাখারভকে ঠিক মতো ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন কি?

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ছফাপুরাণ দীর্ঘজীবী হউক...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তৌফিক হাসান [অতিথি] এর ছবি

ভাল লাগল।

অতিথি লেখক এর ছবি

ছফা তেমন পড়া হয় নাই ।
আপনার লেখা ভাল লাগছে ।
সামনে শুরু করব , আশা করছি ।

কেবলমাত্র অন্যকে মুক্ত করেই মানুষ নিজেকে মুক্ত করতে পারে
সেই রকম লাগল!

বোহেমিয়ান

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

নজরুল ভাই, তৌফিক হাসান, বোহেমিয়ান-

আপনাদের ধন্যবাদ।

রাজিব মোস্তাফিজ [অতিথি] এর ছবি

দুর্দান্ত লাগল---অনেক ধন্যবাদ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনি অনেকদিন ধরে কমেন্ট করছেন। লেখালেখিতে উঠুন (নামুন কইলাম না আর কি দেঁতো হাসি )।

অতিথি লেখক এর ছবি

ছফাকেই বাংলার সবচেয়ে বড় সাহিত্যিক মনে হয়।

একজন পাঠক এর ছবি

আপনার মেইল আইডি পেলে ছফা বিষয়ক কিছু আলোচনা করতে চাই ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।