মাংস

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: রবি, ১৪/০৩/২০১০ - ৬:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লোটাস বাসায় ঢুকতেই পোষা কুকুর রকি খুশি কি উৎফুল্লতায় লেজ নাড়তে থাকে। গলা দিয়ে মৃদু কুঁই কুঁই আওয়াজ ও বের হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কুকুরের মানসিক গঠন হয়ত পাল্টায় না। লেজ নাড়া আর কুঁই কুঁই করার মত কাজ রকি করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। পারষ্পরিক সম্পর্কের মধ্যে অমৃতের উৎপত্তি একপক্ষের নির্বিকার আনুগত্যের মধ্যে লুকিয়ে দাঁত কেলায়। এইসব ভাবতে ভাবতে লোটাস নিজের রুমে ঢুকে। বাইরের জামা-কাপড় ছেড়ে বাসার কাপড় পরে। চপ্পল পায়ে গলিয়ে বাথরুমে ঢোকে, হাত-মুখ ধোয়, নাকে মুখে ঘ্যাঁৎঘুঁৎ করে। এর মধ্যে পেটে খিদে চাগাড় দেয়। রান্না করা মাংসের পাত্র আর ডালের সসপেন ফ্রিজ থেকে বের করে টেবিলে রাখে। একটু বেশি করে মাংস বাটিতে নেয়। অন্য বাটিতে কিছুটা ডাল। ওভেনে ঢুকিয়ে দিয়ে টাইমার সেট করে দুই মিনিট। বাটিদ্বয় কক্ষপথে ঘোরা আরম্ভ করে। ভাত রাঁধা হয়েছিল সকালে। প্লেটে কিছুটা ভাত বাড়ে। টাইমারে তখনো সাতান্ন সেকেণ্ড।

রকি কাছাকাছি আসাতে ওর ডগফুড একটা বাটিতে নিয়ে নিচে রাখে। রকি এসে শুঁকে কি মনে করে ঘরের এক কোনায় গিয়ে বসে পড়ে। এর মধ্যে ওভেন শব্দ করা ধরে। মাংসের সুঘ্রাণে খিদে আরো চাগাড় দেয়। বাটি দুটা টেবিলে রেখে খেতে বসতে যাবে তখন মোবাইল বেজে ওঠে। গিয়ে দেখে নীলার ফোন। রিং বাজতে বাজতে একসময় থামে। তাড়াহুড়া করে ফোন মিউটে রাখে। মেয়েরা তার কাছে খুব তাড়াতাড়ি মনোটোনাস হয়ে যায়। ক্লান্তি ভর করে। নানা কারণে মেয়েদের ব্যাপারে লোটাসের ব্যক্তিগত হাইপোথিসিস ক্রমে নামে। আলো সেখানে ক্রমে আসিতেছে না।

খাবার টেবিলে ফিরে আসে। রকি এর মধ্যে টেবিলের চারপাশে ঘোরাঘুরি শুরু করেছে। ডগফুডে আগ্রহ হারিয়ে তার কুকুরের ডগমিট খাবার পাঁয়তারা দেখে লোটাস মুহূর্তের জন্য অবাক হয়। তার নিজের এই মাংসের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল এক কোম্পানীতে কিছু কোরিয়ান সহকর্মীদের সাথে কাজ করার সময়। ফার্মগেটের একটা বিশেষ দোকানে এইসব কম-চালু মাংস পাওয়া যায়। কিনতে হয় বেশ চড়া দামে। রকি লেজ নাড়া বাড়িয়ে তার আগ্রহের জানান দেয়। এক টুকরা মাংস তার বাটিতে ছুড়তেই রকি ঝাঁপিয়ে পড়ে খাওয়া ধরে। সগোত্রের মাংসভক্ষণের প্রতি পোষা কুকুরের হেজেমোনি দেখে লোটাস স্মিত হাসে। মাংস মাখিয়ে একগ্রাস ভাত মুখে পোরে।


মন্তব্য

রিখি এর ছবি

মেয়েদের ব্যাপারে লোটাসের ব্যক্তিগত হাইপোথিসিস ক্রমে নামে। আলো সেখানে ক্রমে আসিতেছে না।

এই বাক্য দুটো খাপছাড়া মনে হলো।
গোত্রের মাংসভক্ষণের প্রতি পোষা কুকুরের হেজেমোনি দেখে লোটাস মৃদু হাসে

আবার হেজেমোনি? বুঝিনা তো!

কাকুল কায়েশ এর ছবি

রিখি আপনি ইচ্ছা করলে বাংলা ব্লগোমন্ডলের স্ল্যঙ্গাত্মক শব্দমালা দেখতে পারেন (আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত)।

====================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

কমলকুমার মজুমদারের 'অন্তর্জলী যাত্রা' উপন্যাস শুরু হয় এভাবে-

আলো ক্রমে আসিতেছে, এ নভোমণ্ডল মুক্তা ফলের ছায়াবৎ্ হিম নীলাভ। ...

কাকুল কায়েশ এর ছবি

টুকুনগল্পটা বেশ লেগেছে।

অফটপিকঃ তেহারী দিয়ে ডিনার করতে করতে গল্পটা পড়তে শুরু করেছিলাম। দু'লাইন পড়েই কেন যেন মনে হল, 'না থাক, খাওয়া শেষ করেই পড়ি বাকিটা'!!
এখন গল্পটা পড়ে মনে হচ্ছে, আমার ডিসিশনটা ছিল আউটস্ট্যান্ডিং! দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি

আচ্ছা আরেকটা কথা, হুয়াইতে তো সব চাইনিজ, তাই না? কোরিয়ানরা কি কাজ করে ওখানে?
====================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

কোম্পানীর নাম উহ্য রাখলাম।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

গুরু, ফ্রিফল রোলার কোস্টারে উঠেছেন কখনো? পতনের প্রথম ২ সেকেন্ডের শিহরণ পাইলাম লেখাটায়।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

কন কী।

এগুলো ভয় পাই। উঠি না।

বালক এর ছবি

বস,
একটু ওলটপালট হয়ে গেলো মনে হৈতাছে। হাসি

*************************************************************************
ভবিষ্যতে কি হবে তা ভেবে বর্তমানকে উপেক্ষা করবো কেনো?

____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

কোন জায়গায়?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পুরো গল্পের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ দুর্বল লেগেছে। এর মানে এই না যে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদটা বাদ দিলে ভালো লাগবে। এর মানে হচ্ছে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের approach-টা (বাংলায় অ-তে য-ফলা দিতে পারছিনা) বদলালে ভালো লাগবে। তাহলে গোটা গল্পের টান টান ব্যাপারটা মনে হয় অক্ষুণ্ণ থাকবে। শিরোনামের মেটাফোরটিও তখন হয়তো আর ক্লিশে লাগবেনা।

শেষ বাক্যের আগের বাক্যের "হেজেমোনি" শব্দটা পাল্টালে ভাল হয়। কারণ, শব্দটার সচলীয় অর্থ প্রচলিত নয়। বৃহৎ পরিমণ্ডলে এই গল্পের পাঠক এই শব্দে এসে হোঁচট খাবেন।

কোন বিশেষ প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না করাই ভাল। এতে বিভ্রান্তি বা কারো মন খারাপ করা এড়ানো যায়।

বড় গল্পের সম্ভাবনা থাকে এমন গল্পকে অণুগল্পে শেষ করলে আমার একটু আক্ষেপ থাকে। আমি জানিনা এই twenty-twenty'র যুগে টেস্ট ম্যাচ তার আকর্ষণ আর উপযোগিতা দুটোই হারাবে কিনা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পাণ্ডবদা,

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ একটু বদলালাম।

হেজেমোনি আপাতত পাল্টালাম না।

প্রতিষ্ঠানের নাম অনুল্লেখ রাখলাম।

গল্পগুলো তাৎক্ষণিকভাবে লিখি। ভাষা আড়ষ্ট থাকে। ভবিষ্যতে কোন এক সময় কিছু কিছু টুকুন গল্প (কন্টেন্ট অবিকৃত রেখে) আকারে বাড়াব।

আর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। বড় পাণ্ডব সচলে কম ঢোকেন। কি ব্যাপার?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধর্ম্মপুত্রের আজকাল দেখা মেলা ভার। ব্যাপার যে ঠিক কী তা জানিনা। একবার শুনি কন্যা নিয়ে ব্যস্ত, আরেকবার শুনি কর্মযোগে ঝামেলা, আরেকবার শুনি তিনি দক্ষিণে যাত্রা করবেন ইত্যাকার বৃত্তান্ত।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তৌফিক হাসান [অতিথি] এর ছবি

অসাধারন হইসে।
বুঝতে সমায় লাগসে। দ্বিতীয়বার পড়ে তারপর বুঝলাম।
দারুন।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ধন্যবাদ।

হিমু এর ছবি
শুভাশীষ দাশ এর ছবি

সাকিও রাখা যায়। হাসি

সহজীয়া [অতিথি] এর ছবি

চমৎকার!! ধাক্কা লাগলো কোথাও। মু. জা. ই. এর মানুষের বাচ্চা খাওয়া নিয়ে একটা গল্প আছে, অনেকটা সেরকম শিহরণ বোধ করলাম।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পড়ার জন্য থ্যাংকস। আপনি লেখালেখি চালু রাখুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইয়া, এই প্রথম আফসোস হচ্ছে- এই গল্পটা একটু বড় করলেন না কেন? কি যেন কানের পাশ দিয়ে শিষ কেটে গেল, হদিস পাচ্ছি না এখনো। আরেকটু বিশদে বললে সোজা মাথায় ঘুসে যেত ঠিক।

farabi

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

চিন্তিত

দুর্দান্ত এর ছবি

এতো দেখি নানাবিধ কুকুরের খাদ্যশৃঙ্খল।
গল্পটা জমেছে বেশ।
---
১। "পারষ্পরিক সম্পর্কের মধ্যে অমৃতের উৎপত্তি একপক্ষের নির্বিকার আনুগত্যের মধ্যে লুকিয়ে দাঁত কেলায়। "
২। "ক্লান্তি ভর করে। নানা কারণে মেয়েদের ব্যাপারে লোটাসের ব্যক্তিগত হাইপোথিসিস ক্রমে নামে। আলো সেখানে ক্রমে আসিতেছে না। "
৩। "তার নিজের এই মাংসের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল এক কোম্পানীতে কিছু কোরিয়ান সহকর্মীদের সাথে কাজ করার সময়। ফার্মগেটের একটা বিশেষ দোকানে এইসব কম-চালু মাংস পাওয়া যায়। কিনতে হয় বেশ চড়া দামে।"

এই কৈফিয়তগুলোর কি বড়ই দরকার ছিল? লোটাসকে এতটা চিনে কি লাভ?

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

এই কথাগুলো ঠিক কৈফিয়ত না। আবার অন্য অর্থে কৈফিয়ত। এরা তো এভাবেই কিছু তত্ত্ব খাড়া করে নিজেকে স্বতন্ত্র, ব্লু ব্লাড ভেবে নিয়ে হেজেমোনি করে।

দুর্দান্ত এর ছবি

এইবার ঠিকটা বুঝলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।