আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোটগল্প। পর্ব দুই।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: শুক্র, ১৯/০৩/২০১০ - ১:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কয়েকদিন ধরে মনে হচ্ছে ইলিয়াসের কোন এক ছোটগল্পে ‘পোকাদের ধোলাইখালে ডাইভ মারতে গিয়ে কংক্রীটে ধাক্কা খায়’-টাইপের লাইন থাকতে পারে। এর প্রায় কাছাকাছি একটা লাইন ‘ফেরারী’ গল্পে আছে। প্রথম পর্বে সেটা কোটও করা হয়ে গেছে। শাহাদুজ্জামানের ‘কথা পরম্পরা’য় আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের অসাধারণ সাক্ষাৎকারটি না পড়লে ইলিয়াসপাঠ সম্পূর্ণ হয় না। ইলিয়াস রচনাবলিতে এই সাক্ষাৎকার সংযোজিত কিনা আমার জানা নেই। যদি না থাকে তবে অবশ্যই এটা থাকা উচিত। ধোলাইখালে ডাইভ মারার ব্যাপারটা কি পুরানো ঢাকার জনপদের চেহারা পাল্টানোর বিষয়ে ইলিয়াসের ক্ষোভ নিয়ে সেখানে একটা প্রশ্ন ছিল। যাই হোক লাইনটা খুঁজতে গিয়ে ‘ফেরারী’ আবার পড়া হলো। আবিষ্কার করলাম এই গল্পে চারবার না আটবার করোটি শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে।

‘ফেরারী’ পুরাতন ঢাকার গল্প। গল্পের শেষের দিকের তিন পৃষ্ঠায় ইলিয়াস পুরাতন ঢাকার একটা জায়গাকে ছবির মত ধরে রাখতে চেয়েছেন। জনপদের বদলে যাওয়া রুখতে পারবেন না, তাতে কী। ‘খোঁয়ারি’ গল্পেও ইলিয়াসের বর্ণনায় সময় ধরে রাখার প্রয়াস দেখতে পাই।

নবাবপুরের কামুক গন্ধ, পানের দোকানের অন্তরঙ্গ ভীড়, ঠাঠারি বাজারের মোড়ে কোনো বন্ধ দোকানের রকে বসে মুখের ভেতরকার পানের পিক নিচের ঠোঁট দিয়ে উঁচু করে আটকে রেখে বলকানো বাক্যে আড্ডা দিচ্ছে কয়েকজন বয়স্ক লোক; আমজাদিয়ায় কয়েক রাউণ্ড চা মেরে দক্ষিণের কোনো রেস্টুরেন্টের দিকে চলে যাচ্ছে কালো ঋজু ও দীর্ঘদেহী শান্ত পুরুষ, তাকে ঘিরে কয়েকজন চঞ্চল যুবক; কোনো কোনো রাতে ‘নিগার’র সামনে সমস্ত রাস্তা জুড়ে ছড়ানো কাওয়ালির আসর; মাইকে আল্লা, রসুলুল্লা ও খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর প্রশস্তি; রাস্তার ধার ঘেঁষে লোহার তালা উনুনে সেঁকা হচ্ছে শিককাবাব, শিককাবাবের গন্ধে সাড়া পড়ছে পেটের ভেতর-বাড়িতে; রথখোলার মোড়ে ভুট্টা ভাজা হচ্ছে; কান্দুপট্টির গলির মাথায় তিনজন ফাইটিং মাতাল;

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে লেখা গল্পগুলোর মধ্যে ‘জাল স্বপ্ন,স্বপ্নের জাল’ খুব শক্তিশালী। অবশ্য ‘মিলির হাতে স্টেনগান’ ও কোন অংশে কম নয়। আব্বাস পাগলার জন্য এই গল্পটা আগাগোড়া-ই টানটান। মিলিটারির বিরুদ্ধে নামার জন্য একটা স্টেনগানের দরকার নিয়ে মিলিকে এক নাগাড়ে বলা আব্বাস পাগলার উপমা-ভাষা আর সাথে ইলিয়াসের কিছু কিছু মন্তাজ। গল্প এইটুকুই। যুদ্ধের গল্পে হত্যা, ধর্ষণ একবর্ণ না ঢুকিয়েও ইলিয়াস গল্প ঠিকঠাক বলেন। আব্বাস পাগলার কথা ও প্রশ্নের মধ্যে মাঝে মাঝেই ঠাডা পড়ে।

‘হোগার মইদ্যে ব্যাণ্ডেজ বান্দলে সিগারেটের স্বাদ থাকে?’

‘কুত্তার বাচ্চাগুলি চান্দের গ্র্যাভিটেশন বাড়াইয়া দিতাছে। এতোগুলি মানুষ গেছে, গ্র্যাভিটেশন বাড়বো না? …’

‘চান্দের ব্যাকটি জীব উড়বার পারে। চান্দের ওজন আমাগো ধুমসা দুনিয়ার একাশি ভাগের একভাগ। অরা উড়বো না কেল্লায়? …’

‘জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল’ গল্পের রচনাকাল ১৯৯২ সাল। একটা খোয়াবের কথা দিয়ে গল্পের শুরু। খোয়াবে দেখা যায় এক বুড়া মুসুল্লিকে, যার পায়ের পাতা পিছন দিকে।যুদ্ধের গল্প এর চেয়ে ভাল করে সামলানোর জন্য ইলিয়াসের কোন বিকল্প নেই। ১৯৯৬ সালে তাঁর পায়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে। সেই বছরের মার্চ মাসে ডান পা সম্পূর্ণ কেটে বাদ দিতে হয়। গল্পের মধ্যে থাকা অচেতন তাঁর জীবনের সাথে মিলে যায়।

কাল মসজিদের দোতলায় দাঁড়িয়ে-থাকা লোকটির পায়ে একটা গ্রেনেড মারতে পারলেও তার পায়ের ব্যারামটা সারে।

ইতিহাস বা সমকালীন ঘটনা নিয়ে ইলিয়াসের দখল ছিল মারাত্মক। আর ১৯৬৫-১৯৭০ সময়কালের মধ্যে জিন্নাহ এভেন্যুর রেস্টুরেন্ট ‘রেকস্’, নবাবপুরের হোটেল ‘আরজু’, বাংলাবাজারের ‘বিউটি বোর্ডিং’ আর কাপ্তানবাজারের ‘নাইট ভ্যালি’ রেস্টুরেন্টের জমজমাট আড্ডা ইলিয়াসকে চিন্তাচেতনায় সমৃদ্ধ করেছে। লেখকদের জন্য আড্ডার প্রয়োজনীয়তা আর বাংলাবাজারে ঘোরাঘুরি কতটা গুরুত্বের আহমদ ছফা সেটা নানা কথাবার্তায় মাঝে সাঝেই বলতেন। ইলিয়াসের উপন্যাস নিয়ে ছফার দুইটা লেখা আছে। ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাসকে ছফা দাবী করেছেন মহাকাব্য হিসেবে। এই উপন্যাসের ভাষাভিত্তিক ডিসকোর্সটাকে ছফা গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন, তবে রাজনৈতিক ডিসকোর্সটিকে তাঁর কাছে অনেকাংশে দুর্বল মনে হয়েছে। অন্য একটা তথ্য। আহমদ ছফা তাঁর উপন্যাসসমগ্রের ভূমিকা লিখিয়েছিলেন ইলিয়াসকে দিয়ে।

ইলিয়াসের একাত্তর নিয়ে লেখা গল্পগুলো পরের পর্বগুলোতে আলোচনায় আসবে। এই পর্বে থাকছে ‘যুগলবন্দি’। সায়েব সরোয়ার কবির, তার ফরমায়েস খাটা আসগর আর এলসেশিয়ান আরগস। এদের নিয়েই কাহিনী। উচ্চবিত্তরা ইলিয়াসের গল্পে খুব বেশি আসেন নাই। তাঁর এই গল্পে ধনীক শ্রেণীর এটিকেটের খোলস ছাড়ান হয়। রাত বারোটা তেতাল্লিশে সরোয়ার কবির আসগরকে বলে তার ওয়েট কনসাস বিবির জন্য কমলা আনতে। সায়বের মন রাখতে অতো রাতে কমলা খোঁজা ছাড়া আর উপায় থাকে না । গল্পের স্থান চট্টগ্রাম। ইলিয়াসের ডিটেইলসে চলে যাই।

...না, চকবাজারে ফলের দোকান একটিও খোলা নাই। এতো রাতে তার জন্যে কমলালেবু নিয়ে বসে থাকবে কোন শালা? সুতরাং ডানদিকে মোড় নিয়ে চাকা গড়িয়ে দিলো দক্ষিণ-পূর্বে। ডাইভটা ভারী চমৎকার। রাস্তা-ঘাট সব ফাঁকা। সারমন রোড দিয়ে এতোবার গেছে, জামান ইন্টারন্যাশনালের পুরনো জিপ নিয়ে সিকানদারের সঙ্গে যখন ড্রাইভিং শেখে তখনও এই রাস্তায় মেলা গাড়ি চালিয়েছে। কিন্তু এরকম অদ্ভুত লাগেনি কোনোদিন। কোথাও পাতলা কোথাও ঘন কুয়াশার আড়ালে পাহাড়গুলো ভারী রহস্যময়। জয় পাহাড়ের এখানে ওখানে আলো জ্বলে, কুয়াশার সেই সব আলো এখন ঝাপসা। কখনো কখনো ১টি আলো ২টি ৩টি আলোয় ভাগ হয়ে লুকোচুরি খেলে। গাড়ির হেডলাইটের আলো কুয়াশা ছিঁড়তে ছিঁড়তে নিজেই গলে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে, ফ্যাকাসে অন্ধকার বড়ো অপরিচিত মনে হয়। গাড়ীর জানালা খোলা, সেদিক দিয়ে পাহাড়ের ঠান্ডা নিঃশ্বাস এসে মুখে লাগে। জানলাটি উঠিয়ে দিতে বাধো বাধো ঠেকে, মনে হয় কেউ অসন্তুষ্ট হতে পারে। পাহাড়ের গায়ে গাছগুলো সরে সরে যাচ্ছিলো, হঠাৎ করে চোখে পড়ে একটু দূরে পাহাড়ের মাথায় ন্যাড়া ঢ্যাঙা গাছের পাতাঝরা ডালে ডিমে তা দেওয়ার ভঙ্গিতে বসে রয়েছে কৃষ্ণপক্ষের কালচে রক্তের রঙের চাঁদ। ডাল ভেঙে শালার চাঁদ পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়লে মহা কেলেঙ্কারি! জোর করে সেদিক থেকে চোখ ফেরাতে ফেরাতে আসগর গাড়ির স্পিড বাড়ায়। দুত্তোরি! ভূতের ভয় কি শালা ফের চাগিয়ে উঠলো নাকি? বছর চারেক আগে পর্যন্ত তাকে কাটাতে হয়েছে মফস্বলে, প্রায় এঁদো মফস্বল, পোস্ট অফিসের সঙ্গে লাগোয়া পোস্ট মাস্টার বাপের টিনের বাড়িতে। শোবার ঘর থেকে কলপাড়ে যেতে সেখানে উঠান পেরোতে হয়। এখন অনেক উঁচুতে ন্যাড়া গাছের ডালে কালচে লাল চাঁদের ডিম পাড়া দেখে উঠানের কলাগাছের ঝাড় শিরশির করে কাঁপতে লাগলো। দূর! এখন আবার এসব আদিখ্যেতা কেন? এসব ভয় কি এখন পোষায়? তবু কমলালেবু জোগাড় করার অভিযানের চেয়ে এই বুক-ছমছম অনেক ভালো।

রিয়াজুদ্দিন বাজারের কুকুরগুলো পর্যন্ত ঘুমিয়ে পড়েছিলো। গাড়ির নরম আওয়াজেও তাদের কাচা ঘুম ভাঙে এবং আসগরের দিকে টার্গেট করে মহা ঘেউঘেউ শুরু করে।কুত্তার বাচ্চা! একেকটার চেহারা সুরৎ কী! একবার চোখে পড়লে আর তাকাবার রুচি হয় না। …

কুত্তার প্রতি ব্যাপক ঘৃণা থাকলেও সায়েবের আরগসের প্রতি তাকে নরম আচরণ করতে হয়। ধনীক শ্রেণীর সাথে তাল মিলিয়ে চলার প্রধান শর্ত হলো আনুগত্যের শেকল পড়া। শেষ পর্যন্ত কমলা জোগাড় হয়। সায়েবের বাসায় সরাসরি না গিয়ে আসগর নিজের মাদারবাড়ির বাসায় একবার ঢুঁ মেরে যায়। এই জায়গায় এসে বোঝা যায় ইলিয়াসের পালস্‌। মধ্যবিত্তের মনোজগতে ঢুকে পড়েন সরাসরি। কিছু টাকা-পয়সা কামাতে থাকা আসগরের ভয়ে তটস্থ থাকে গরীব-গুর্বো বাপ-মা। কিছুতেই ছেলের মন জুগিয়ে চলা যায় না। এই জায়গায় ইলিয়াসের বর্ণনভঙ্গি প্রায় নির্মেদ। আসগর সরোয়ার কবিরের বাসায় ফিরে দেখে ড্রয়িংরুমে কেউ নেই। পরদিন সকালে সে এতো শ্রম-এতো কষ্ট-এতো সাহস করে কমলালেবু- সংগ্রহ-কাহিনী বলতে গেলে সরোয়ার কবির খুব একটা মন দেন না । বরং আরগসের দিকে মনোযোগী হন। আরগস আসগরকে লাইক করে- জাতীয় সরোয়ার কবিরীয় উক্তিতে আসগরের খুশি দেখানো জরুরি হয়। ধনীক শ্রেণীর প্রতি সাধারণ খেটে খাওয়া কিছুটা সৎ-কিছুটা অসৎ-লোভী সাধারণ আমজনতা এই আচরণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে করে আসছে যুগের পর যুগ। এই চক্রের মধ্যে ঢুকে আছে একর্থে পুরা বিশ্ববাসী। এর কোন ব্যত্যয় নাই। বন্ধুদের সাথে কথাবার্তায় এরুডাইট সরোয়ার কবিরের শ্লীল মুখোশে অশ্লীলতার হেজেমোনি ইলিয়াস বর্ণনা করেন অবলীলায়।

সরোয়ার কবির বলছিলো, ‘সকালবেলা জগিং করতে না পারলে পেটের মধ্যে ট্র্যাফিক জ্যাম, সারাটা দিন মাটি। এট এনি কস্ট আই মাস্ট গেট মাই স্টমাক ক্লিয়ার বাই সেভেন থার্টি ইন দ্য মর্নিং।’
‘বৃষ্টি টিষ্টি হলে জগিং করো কী করে? প্রবলেম হয় না?’ বন্ধুর এই উদ্বেগে সরোয়ার কবির কৃতজ্ঞতার হাসি ছাড়ে,তাকে নিশ্চিত করার জন্য বলে, ‘সে এরেঞ্জমেন্ট ও আছে।’
‘কী রকম?’ বন্ধুর কৌতূহলকে জিইয়ে রেখে সরোয়ার কবির ধীরেসুস্থে সিগ্রেট ধরায়। কৌতূহল মেটাবার জন্য আসগরকেও গেটের কপাট অকারণে বন্ধ করতে হয়, ওখানে থাকার জন্য তার ছুতা তো চাই।
‘ঘুম ভাঙলে বিছানায় শর্ট একটা ইন্টারকোর্স সলভস ইওর প্রবলেম। কয়েকটা স্ট্রোক দিলেই তলপেটে চাপ পড়বে, এরপর রেগুলার দোজ অফ থ্রি সিগারেটস এণ্ড ইউ গেট ইওর বাউয়েলস ক্লিয়ার।’
‘তা সাত সকালে তোমার ওয়াইফ এলাউ করবে কেন?’ বন্ধু হেসেই অস্থির, ‘তুমি না বলো শি ইজ আ লেট রাইজার।’
‘শি ইজ।’ সরোয়ার কবির ঠোঁট টিপে হাসে, এই হাসিও এরকম ডাঁটেফাঁটে না থাকলে ঠিক রপ্ত করা যায় না। ঐ হাসিই প্রসারিত করে বলে, ‘ একটু ট্রিক খাটাতে হয়। ভোরবেলা ঘুম থেকে না উঠেও যে এক্সারসাইস করতে পাচ্ছো এতেও তোমার ফিগার স্লিম থাকবে। এক নম্বর সাঁতার আর দুই নম্বর সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স ইন দা আর্লি মর্নিং- আইদার অফ দিজ টু কিপস্ ইওর ফিগার স্লিম।–ব্যস, এই থিওরিতে কাজ হয়।’

কবি গ্যোতের একটা লাইন ছিল- অল থিয়োরি ইজ গ্রে, বাট দা গোল্ডেন ট্রি অভ লাইফ স্প্রিঙ্গস এভারগ্রীণ। ধনতন্ত্রের থিয়োরি ফাকানো ইলিয়াস এখানে ফাকিয়ে দেন। সঙ্গমের সাথে বাউয়েলস ক্লিয়ার করার সম্পর্ক দেখে সাই মিং-লিয়াং-এর সিনেমা-দর্শনের কথা মনে হয়। সারমেয় আরগস আর প্রোট্যাগনিস্ট আসগরের মধ্যের সুতুর ( suture) অবিশ্বাস্যরকম কায়দায় হাজির করানো উদ্ধৃত করে এই পর্ব শেষ করি। আমেন।

এখন বুঝতে পাচ্ছে, আরগসের বাউয়েলস আসলে ক্লিয়ার হচ্ছে না। সরোয়ার কবির ঠিকই বলে যে পাকস্থলী পরিষ্কার না হলে জীব শান্তি পায় না। আসলে ক্লিয়ার করার বন্দোবস্ত করাটা খুব দরকার। সায়েবসুবোর বাড়িতে থাকে, ওদের নিয়ম মানলেই কাজ হবে।– পকেট থেকে সকালবেলা সরোয়ার কবিরের টেবিল থেকে হাতানো সিগ্রেটের প্যাকেট বার করে ১টা ধরালো। সিগ্রেট শেষ করার পর ও আসগরের হাতের মুঠিতে শিকলের কম্পন বোঝা যায়! এই সময় আরগসের উত্তেজনা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে এই ভয় করতেই শিকলে বেশ জোরে টান পড়ে। এবার ঠিক হাঁচকা টান নয়। বেশ লম্বা ধরণের শক্ত টান। না, অতো ঝুঁকি নেওয়া যায় না। আসগর তার ডান হাতের কব্জিতে শিকলের এদিকের প্রান্ত বেশ টাইট করে জড়িয়ে নিলো। একরকম বাঁধাই হয়ে গেলো আর কি! এবার সম্পূর্ণ নিরাপদ, এখন শালা কুত্তার বাচ্চা যদি ছোটে তো তাকে না নিয়ে যেতে পারবে না। নিশ্চিন্ত হয়ে ২য় সিগ্রেটটি ধরিয়ে গোটা তিনেক লম্বা টান দেওয়ার পর আসগরের হাতের শিকল শান্ত ও শিথিল হয়ে আসে। আসগর সিগ্রেটে বেশ কয়েকটা সুখটান দেয় আর অনুভব করে যে আরগস খুব আরাম ও তৃপ্তির সঙ্গে বাউয়েলস ক্লিয়ার করছে। শিকলের ধাতব বিনুনি বেয়ে সেই তৃপ্তি আসগরের শরীরে চমৎকার মৌতাত ছড়িয়ে দিচ্ছে।...

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোটগল্প। পর্ব এক।


মন্তব্য

শেখ নজরুল এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে।
শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ধন্যবাদ

দ্রোহী এর ছবি

সাথে আছি।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনি এক-দুইটা চেকভের গল্পের অনুবাদ পোস্টান। আমি একটা অনুবাদ করতে গিয়ে অর্ধেক পর্যন্ত করে রেখে দিয়েছি। মন খারাপ

দ্রোহী এর ছবি

আগে কন প্রত্যেক গল্পের জন্য কয় টাকা করে দেবেন? দেঁতো হাসি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

টেহা টেহা কইরেন না। দেখেন না গুণের কি অবস্থা! দেঁতো হাসি

দ্রোহী এর ছবি

ঘাবড়াইয়েন না। আমারে কেউ গুণ কইবে না। কইলে বড়জোর বেগুন কইতে পারে।

কয় ট্যাকা দিবেন কন।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

খালি ট্যাঁয়া ট্যাঁয়া। চেকভরে আপ্নে ভালুবেসে অনুবাদ করেন। দেঁতো হাসি

আর কইরা হালান। তারপর ট্যাঁয়া দিমুনে। যে প্রুফাইল পিকচার লাগাইছেন, ট্যাঁয়া দিলে ভুল কইরা আবুর খাইয়া ফেলেন নিহি চিন্তা অয়। চোখ টিপি

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

দ্রোহীরে কইনযে ট্যাহা আমি দিবাম। হাজার জনের দুয়ার মাইগ্যা অইলেও দিবাম। তয় ট্যাহা কবে দেউন যাইবো হেই তারিখ জানি না। দেঁতো হাসি
.
___________________________________________
ভাগ্যিস, আমার মনের ব্যাপারগুলো কেউ দেখতে পায় না!

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

নৈষাদ এর ছবি

পড়ছি…ভাল লাগছে। উপন্যাস গুলি পড়া হয়েছিল, ছোটগল্প মাত্র দুটা।

শুভাশীষ, একটা জিনিস স্বীকার করি। আপনার আহমদ ছফার উপর লেখাগুলি পড়ার আগে ছফার ব্যাপারে তেমন কোন ইন্টারেস্ট ছিল না আমার (তাঁর দুটা লেখা থেকে একটা ভুল ধারণা পেয়েছিলাম)। এখন ভাবি কতটা ভুল ধারণা ছিল তাঁর প্রতি। এখন নতুন করে আবার …।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ত নাসরীন আর হু আজাদকে নিয়ে ছফার কিছু লেখালেখি আমার ভাল লাগে নাই। ছফাকে বোঝার জন্য তাঁর রচনাবলি পড়া উচিত। অনেকে ছফার তিন/চারটা লাইন পড়ে তাঁকে প্রতিক্রিয়াশীল ভেবে পড়াই বাদ্দিছেন। এটা ভয়ানক খারাপ লক্ষণ। আমাদের কালের সেরা লেখকের লেখা না পড়লে কিভাবে চলে?

আর তাড়াতাড়ি ইলিয়াসের ছোটগল্প সংগ্রহ করেন।

বাউলিয়ানা এর ছবি

পড়ছি...

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পড়লাম।

রচনাবলীতে কোনো সাক্ষাতকার রাখা হয়নি। শাহাদুজ্জামানেরটাও না।

ইলিয়াসকে নিয়ে আনু মোহাম্মদের একটা বই আছে। 'ইলিয়াস ও প্রশ্নের শক্তি'। এটাও খুব কাজের একটা জিনিস। যদিও এই বইয়ের সবগুলো প্রবন্ধ ইলিয়াসকে নিয়ে না, তবে বেশিরভাগটাই ইলিয়াস বিষয়ে।

অ:ট:
আমার স্ক্যানার নাই, ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে কাজ চালাই। কিন্তু কথা পরম্পরার বাইন্ডিংয়ের কারনে ছবি তুলে কাজ হচ্ছে না। স্ক্যান করা লাগবে। তাই আপনাকে পাঠাতে পারছি না। দেখি যতো দ্রুত সম্ভব পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপ্নে তো আমজনতা না। রচনাবলির নেক্সট এডিশনে এটা ঢুকানোর ব্যবস্থা করেন।
--
আনু মোহাম্মদের বইটার কথা আগে শুনি নাই। দেখি সংগ্রহ করতে হবে।
--
আপ্নে একটু কাইতকুইত হইয়া ফটুক তুইলা পাডান। আমি কষ্ট কইরে পড়ুম না হয়। স্ক্যানারের ধান্ধায় ম্যালা দেরি অইয়া যাইবো। দেঁতো হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চাইলেই হবে না, কপিরাইটের ঘাপলা আছে। কথা পরম্পরা পাঠক সমাবেশের আর রচনাবলী মওলা ব্রাদার্সের। বিজু ভাই সহজে ছাড়বো বলে মনে হয় না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

নজু ভাই, আপ্নে বিজু ভাইরে কইয়েন 'কথা পরম্পরা' র পরথম দুই চাইর জন ক্রেতার মইধ্যে আমি আছিলাম। কিছু পাতা আমারে ফটুক কইরে দিলে উনি মাইণ্ড খাইবেন না আশা করি।

মাওলা ব্রাদার্সের ইলিয়াস রচনাবলি আমার কাছে আছে। প্রথম দুই খণ্ড। তৃতীয় খণ্ডটা আনি নাই।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আরে আপ্নেরে কপি করে দিলে কপিরাইটের ঝামেলা হবে তা তো কই নাই। কইছি যে মওলা ব্রাদার্স ইলিয়াস রচনাসমগ্রে এই সাক্ষাতকার ঢুকাইতে পারবো না। কপিরাইটের মামলা সেখানে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পুতুল এর ছবি

ইলিয়াসের সাক্ষ্যকার আমরাও পড়তে চাই। কারিগরি ক্ষেমতা এবং কপি রাইট বাধা না দিলে এখানে বা অন্যকোন পোষ্টে একটা লিংক চাই। আলেচনা ভাল হচ্ছে। আগের পোস্টে বলা গোটা তিনেক গল্প ছাড়া আর কিছু মনে নাই। ছফাগিরির মতো (১ম কয়েক পর্বে) ইলিয়াসের মূল গল্পের লিংক থাকলে কি যে আরাম হতো!

আলোচনার জন্য ধন্যবাদ শুভাশীষদা।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

@ নজরুল ভাই,

বুঝতে পারলাম এখন।

@পুতুল ভাই,

ধন্যবাদ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

নজ্রুলিসলাম ভাই,

'কথা পরম্পরা'র ইলিয়াস আর সুলতান সাক্ষাৎকার বুনোহাঁস ছবি তুলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বেশ পাঠযোগ্য।

আপনাদের দুজনকে ধন্যবাদ দিতে দিতে অনেক বড় করে ফেলতে ইচ্ছা করছে।

নাশতারান এর ছবি

Smiley

▀ ▄

b

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

আপ্নে ইলিয়াস থিকা কোট মারলেন, দেখি আমি আপ্নেরটা মারি --

কুত্তার প্রতি ব্যাপক ঘৃণা থাকলেও সায়েবের আরগসের প্রতি তাকে নরম আচরণ করতে হয়। ধনীক শ্রেণীর সাথে তাল মিলিয়ে চলার প্রধান শর্ত হলো আনুগত্যের শেকল পড়া।

বন্ধুদের সাথে কথাবার্তায় এরুডাইট সরোয়ার কবিরের শ্লীল মুখোশে অশ্লীলতার হেজেমোনি ইলিয়াস বর্ণনা করেন অবলীলায়।

হ। শ্লীল মুখোশে অশ্লীলতার হেজিমনি দেইখা আসগর-আরগসরে আপ্নেও ভালই সেলাই করসেন।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আসাদ ভাই,

আমারে ঠিসারা করলেন নিহি? দেঁতো হাসি

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

নাহ্। এম্নেই একটু কোটাকুটি খেললাম। লেখা ভালৈছে।

রণদীপম বসু এর ছবি

খোঁয়ারি’ গল্পেও ইলিয়াসের বর্ণনায় সময় ধরে রাখার খায়েশের দেখা মিলে।

লেখার মেজাজের সাথে 'খায়েশ' শব্দটা মিললো কিনা ঠিক বুঝতে পারছি না।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

kutubi এর ছবি

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের "স্বপ্নের জাল’ই বেশি শক্তিশালী""
পুরু লেখাটিই ভাল লাগল।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

এই লেখাটা আপ করার আগে একবার উচ্চারণ করে পড়েছিলাম। তখন ওই জায়গায় কানে খুব একটা লাগে নাই। আপনি বলার পর লাগছে। পাল্টালাম। ধন্যবাদ। হাসি

উজানগাঁ এর ছবি

১.
এই পর্বটি পড়তে এসে বুঝলাম আপনার আগের পর্বটি পড়া হয়নি। খুঁজে বের করে পড়লাম। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও লেখায় মন্তব্য করা হয়ে উঠে না অনেকসময়। আর আপনার লেখা বরাবরই মনোযোগ দাবি করে। অফিসে বসে চা খেতে-খেতে কিংবা আড্ডা মেরে মেরে সেটা হয় না।

২.
প্রিয় লেখককে নিয়ে লিখছেন বলে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

৩.
ইলিয়াস পাঠের পর আমার যে বিষয়গুলি সবচেয়ে বেশি ভাবিয়েছিল, ইলিয়াস তাঁর প্রতিটি লেখায় সংকট, তা থেকে উদ্ভুত সমস্যা, পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপট এবং চরিত্রগুলোকে অনুপুঙ্খ উপস্থাপন করেছেন।তাঁর সুক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ উপলব্ধি গল্পগুলোকে করেছে প্রানবন্ত, বাস্তবের একদম কাছাকাছি। তাই ইলিয়াসের ছোটগল্পগুলোও উপন্যাসের মতো পূর্ণাঙ্গতা দাবী করে এবং গল্পগুলো পাঠকমনে স্থায়ী আবেদন রাখতে সক্ষম হয়। এছাড়াও আরেকটি ব্যাপার আমার কাছে খুবই গুরুত্ব বহন করে সেটা হলো, একমাত্র ইলিয়াসই মনে হয় ঢাকা এবং পূর্ব বগুরার আঞ্চলিক ভাষার সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন তার লেখায়।

৪.
প্রয়াত আনওয়ার আহমদ সম্পাদিত ছোটকাজ "রূপম"-র একটি সংখ্যা ছিল ইলিয়াসকে নিয়ে। যতদূর মনে হয় ২০০২/২০০৩-র দিকে বেরিয়েছিল। বেশ কিছু ভালো গদ্য পড়া হয়েছিল ইলিয়াসকে নিয়ে পত্রিকাটির বদৌলতে। তিনটি সাক্ষাৎকার ছিল এর মধ্যে একটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল সে সময়।

কোনোভাবে সংগ্রহ করতে পারলে আপনার বেশ কাজে আসতো।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মাঝে মধ্যে মঞ্চায় সিলেটে গিয়া এই পোলাডারে পিটায়া আসি। শাওন অথবা উজানগাঁ একটা মাল... কিন্তু হালায় লেখেও না, ছবিও দেয় না... ওরে না মারা পর্যন্ত শান্তি নাই...

রূপমটা পড়তে ইচ্ছা করতেছে... কই পাই? কোনো সূত্র জানা আছে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

@শাওন,

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

রূপম-এর আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সংখ্যাটা আমাদের ঢাকার বাসায় আছে। খুবই ভাল প্রিসাইজড্‌ একটা সংকলন। এতো এতো বইয়ের মধ্যে এই ছোট্ট সংকলন বের করে আমার কাছে পাঠানোর সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।

ইলিয়াসের ওপর কোন ঢাউস স্মারকগ্রন্থ কি প্রকাশ পেয়েছে?

সুমন সুপান্থ এর ছবি

স্মারকগ্রন্থ আছে কি না জানি না। কিন্তু এজাজ ইউসুফী'র সম্পাদনায় চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ছোটকাগজ 'লিরিক'র আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সংখ্যা একটা উল্লেখযোগ্য কাজ ।

আর প্রশান্ত (মৃধা) দা'র অগ্রন্থিত ইলিয়াস ও সংগ্রহ করতে পারেন

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

'লিরিক'-এর সেই সংখ্যা আমার আছে। তবে ঢাকায়। 'অগ্রন্থিত ইলিয়াস' ও কিনেছিলাম। ইলিয়াস রচনাবলির তৃতীয় খণ্ড আর এটার কন্টেন্ট একই।

মণিকা রশিদ এর ছবি

পড়িতেছি। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
____________________________
শান্তিও যদি সিংহের মত গর্জায়, তাকে ডরাই।
--নরেশ গুহ

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

মামুন হক এর ছবি

পেন্নাম কত্তা। সাথে আছি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপ্নেরেও পেন্নাম।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আশির দশকের প্রথম ভাগে ঈদসংখ্যা বিচিত্রায় "যুগলবন্দী" গল্পটি যখন প্রকাশিত হয়, গল্পটি তখনই পড়েছিলাম। ইলিয়াস পড়ার ক্ষমতা তখনও তৈরি না হলেও কিছু শব্দ, কিছু দৃশ্যকল্প মাথায় গেঁথে ছিল। ইলিয়াসের অনেক ক্ষমতার এটাও একটা।

ষাট-সত্তরের দশকের উঠতি শ্রেণীর বর্ণনা এই গল্পে পাওয়া যায়। এমনটা সমসাময়িক আরো কয়েকজনের লেখায় দেখা যেত, যেমন রাহাত খান (প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় তাঁর উপন্যাস "কোলাহল")। আমরা যারা এখনো বেঁচে আছি তাদের জন্য ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বা বিকাশের ধারাটি লক্ষ করার জন্য এই ধরণের গল্পের অণুপুঙ্খ আলোচনা করা দরকার। শুধুমাত্র সরোয়ার কবিরদের চেনার জন্য না, আসগরদের বিকাশটা বোঝার জন্যও সেটা দরকার।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

কিছু কিছু গল্প কালোত্তীর্ণ হয়। 'যুগলবন্দি' তার একটি।

উদ্ধৃতি

আমরা যারা এখনো বেঁচে আছি তাদের জন্য ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বা বিকাশের ধারাটি লক্ষ করার জন্য এই ধরণের গল্পের অণুপুঙ্খ আলোচনা করা দরকার।

আসলেই। একটা শ্রেণীর বিকাশের ধারাবাহিকতা লেখায় ঠিকমতো আনা অনেক শিল্পীত কাজ। লোয়ার ক্লাস থেকে আপার ক্লাসে ওঠার জন্য অবিরাম চেষ্টা আসগরেরা অব্যাহত রেখেছে। ষাট-সত্তরের দশকে্র মতো এই চেষ্টা এখনো বহাল। আপনি এই আলোচনা এগোতে পারেন।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

জিফরান খালেদ এর ছবি

ইলিয়াস শেষতক বোধকরি মার্ক্সিস্ট এজেন্ডা পুশ করসেন। অবশ্য উনি এই ব্যাপারটা না-স্বীকারও যান নাই। এই কারণে তার প্রতি আসক্তি কাইটা গেসে অনেক।

তার ডিটেইলিঙ্গের জন্যে উনি 'ইউলিসিস' এর কাছে ঋণগ্রস্ত। তাও ঐ উচ্চতা আসে নাই।

আপনার আলোচনা মোটামুটি 'বাহবা'-মূলক, মনে হইতে থাকে যে, একটা দূরত্ব হয়তো আইজো তৈরি হয় নাই। তবে, অনেক পাঠক হয়তো আকৃষ্ট হবেন, সেইটা কম না। ঐটার জন্যে আপনি ধন্যবাদার্হ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

জিফরান,

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

উদ্ধৃতি

ইলিয়াস শেষতক বোধকরি মার্ক্সিস্ট এজেন্ডা পুশ করসেন। অবশ্য উনি এই ব্যাপারটা না-স্বীকারও যান নাই। এই কারণে তার প্রতি আসক্তি কাইটা গেসে অনেক।

এই জায়গা আপিনি আরেকটু ডিটেইলসে বলতে পারেন।

'ইউলিসিস' য়ের উচ্চতায় যাওয়া না যাক, ধার কাছ দিয়ে যাওয়া কম নয়। ইলিয়াস কিন্তু সারভেন্তেসের 'ডন কিহেতো' খুব পড়তেন।

বাদিবাকি কথার জন্য শুকরিয়া।

অতিথি লেখক এর ছবি

ইলিয়াস নিয়ে কিছু বলার সাহস নাই। আরেকটা ব্লগের একটা পোস্টে একটা মন্তব্য লিখেছিলাম। আলসেমির জন্যে সেটাকে এখানেই কপি-পেস্টো করে দিলাম। কিছু মনে করবেন না আশা করি।

"সালটা সম্ভবত ১৯৯৮/৯৯। আজিজ থেকে ইলিয়াসের তিন খণ্ডের রচনাসমগ্র কিনে বাসায় ফিরছি। বাসে বসে ছোটগল্পের সংকলনটা (সম্ভবত ১ম খণ্ড) হাতে নিলাম।
প্রথম গল্প থেকেই, ওঃ কপাল, প্রথম গল্পটি থেকেই আমার মধ্যবিত্ত সুবিধাবাদিতা, পিচ্ছিলতা-প্রবণতা, ন্যক্কারজনক মানসিকতা, ওঃ, এমন তীব্রভাবে আঘাত করে চললো তো চললোই পুরো যাত্রাপথ জুড়ে, অথচ ছাড়তেও পারি না। দুষ্ট ঘায়ে হাত বুলিয়ে পাওয়া মর্ষকামী ভালোলাগা যেন আমাকে নগ্ন হতে, নিজের কাছে নিজেকে ছোট হতে, আশিরপদনখ ন্যাংটো হতে দেখতে বড়ই ভালোবাসলো, আর সেই থেকে আজও দ্বিতীয়বার হয়তো গল্পগুলো পড়ার সাহস বা সময় করে ওঠা হয় নি।
অথচ, ‘জনকণ্ঠ’ পত্রিকায় যখন ধারাবাহিকভাবে পড়ছি ‘খোয়াবনামা’ যেন চলে যাচ্ছি অন্য এক ঘোরের ভেতরে, পড়ছি পাগলের মতো এক নিঃশ্বাসে, মাতালের মতো আকণ্ঠ পানে নিমগ্ন হয়ে, কারণ সে চিরতৃষিত ছিল, যেমন পড়েছিলাম আর একটি অনুবাদগ্রন্থ, মানবেন্দ্র-এর স্তানিসোয়াভ লেম-এর `মুখোশ ও মৃগয়া’ নামে যুগ্ম-নভেলা। দ্বিতীয়বারে পঠনে অবশ্য অন্য অর্থে উপন্যাসটি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, সমালোচকেরা সেখানটায় সমাজবাস্তবতা ও ইতিহাস-সচেতনতা নিয়ে যা বলেন, তার কিছুটা উপলদ্ধি করছি, কিছুটা না-ও, কিছুটা অন্যকিছু। মহৎ সাহিত্য বোধহয় এরকমই হয়, কিছু তার বুঝি, আবার কিছু পাই অনুভবে।
ইলিয়াস-কে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানোটা নিজের দায় মোটেও হালকা করে না, যদি নিজে কিছুই না করি, মনে হয় এরকম গড়পড়তা শ্রদ্ধা-জানানো তিনিও পাত্তা দিতেন কি-না। তবে, নিজের কাছে এমনকি লজ্জা পেতেও ভুলে যাই তাঁর মৃত্যুদিন ভুলে গেলে, গণমাধ্যমেও শীতল উদাসীনতা দেখাই, কারণ আমরাই সেই ঘৃণ্য মধ্যবিত্ত যাদের ইলিয়াস আচ্ছা করে রগড়েছেন তাঁর সাহিত্যকৃতির সর্বাঙ্গে।
প্রতিশোধ নিচ্ছি ইলিয়াস, আপাতত অবহেলায়।"

ধন্যবাদ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ।

আশফাক আহমেদ এর ছবি

চিলেকোঠার সেপাই আমার যেমন সাধারণ লেগেছিলো, খোয়াবনামা সেভাবে মনে ধরেনি।
এটা সম্ভবত পাঠক হিসেবে আমার দুর্বলতা। এমনকি খোয়াবনামার ওপর ছফার আলোচনাও আমাকে তেমন কনভিন্স করতে পারেনি উপন্যাসটি দ্বিতীয়বার পঠনে
শুভাশীষদা যদি কিছু বলতেন ...

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।