একটা অন্ধ বধির ট্রেন
আমরা সবাই অন্ধ বধির সেই ট্রেনের আরোহী। আমরা নানা বিষয়ে গল্প করি, হাসি। আমাদের মাঝে থেকে যাওয়া অন্ধকার ঘষে ঘষে আরো কালো করি। ট্রেনের বগিগুলোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হই। অন্ধ বধির ট্রেনের গতিতে, তার ক্রমাগত চলতে থাকায় আমাদের মুগ্ধতা বাড়ে। জানালাগুলো কালো রঙ করে দিয়ে আলোর নিশানার নিকুচি করি। পরে আবার গল্পে মাতোয়ারা হই। পরে একদিন আমাদের একজন ট্রেনের চেইন টানে। অন্ধ বধির অতিপ্রিয় ট্রেন থামলে সে নেমে পড়ে। আলোর অনভ্যাসে আমরা কিছুক্ষণ কিছুই দেখতে পাই না। ট্রেন আবার চলা শুরু করলে আমরা লোকটাকে গালমন্দ করতে থাকি। পরে একসময় ভুলে যাই।
আমাদের দুপুর
আমরা দুজনে দুপুরে উদ্দাম থাকি। রায়েরবাজার তখন প্রতিদিনকার মতো ঝিমাতে থাকে। সেই ঝিমানির ভর করে কুমার হিমাংশুকে। হাতের অস্থিরতায় মাটির কলসির গলা সরু হয়ে গেলে আবার সটান হতে গিয়ে ক্ষতি যা হবার হয়ে যায়। আমরা দুজনে জেগে থেকে নিজেদের জানি। কুঠুরি চিনি। তিনতলা বাড়ির সেই চিলেকোঠার বাইরের খোলা জায়গায় তারে টানানো হরেক রকমের কাপড়। লন্ড্রির এক দোকান এই জায়গা ভাড়া নিয়ে কাপড় শুকায়। রায়েরবাজার ঝিমাতে থাকে, আমরা আমাদের মধ্যকার উদ্দামতা অব্যাহত রাখি এবং এই দীর্ঘ সময়ে একটা নিরীহ কাক তারে টানানো লাল কোনো শাড়ির ওপর বসে থাকে, পরে পায়খানা করে উড়াল দেয়।
ফুল
জামান ফুল চেনে না। জামানের মা সহজ সত্যটা আবার জানতে পারে অনেক পরে। জামানের ছেলের বয়স তখন পাঁচ। একটা রজনীগন্ধা ফুলকে টগর বলায় নাতি ঋতুর দিকে অবাক চোখে তাকালে পুত্রবধূ জানায়, আম্মা আপনার ছেলেওতো কোন ফুল চেনে না। ছেলে বাপের স্বভাব পেয়েছে। তিনি কিছুটা অবাক হন। জামানের ফুল না চেনার ঘটনায় কিছু কথা মনে পড়ে যায়। ছেলের বয়ঃসন্ধিকালের ঘটনাটা জামানের মা বেমালুম ভুলে গেলেও বৌমার এই কথায় কাজের মেয়ে ফুলির কথা মাথায় আসে। খালাম্মা ভাইজান যেন কী। কুনৌ ফুল চ্যানে না। মেয়েটাকে বাধ্য হয়ে তাড়াতে হয়েছিল।
ভালোবাসা শহরে প্রবেশ করলে
ভালোবাসা শহরে প্রবেশ করলে গায়ক বোনো একটা গান বাঁধে। পরে সেটা নিয়া দেখায় লিজেন্ড বিবি কিং-কে। ইউটু আর বিবিকিং-য়ের সেই গান দেখে পুরান ঢাকায় ইংলিশ রোডের বাসিন্দা ছত্রিশ বছর বয়সের আবু শেখ আনন্দে বাকরুদ্ধ হয়। গানটা সারাক্ষণ শুনতে শুনতে তার এক সময় মনে হয় ভালোবাসা পুরান ঢাকায় ও ঢুকে পড়েছে। এই গলি ওই গলি যাবতীয় তস্য গলি ডিঙিয়ে ভালোবাসার প্রবেশ ঘটেছে ইংলিশ রোডে। আবু শেখ বাসার ছাদে উঠে চিল্লাতে থাকে। আবে হালায় চুদমারানীর পোলায় তুই আইছস। এদ্দিন বাদে হালায় তর … এই সব চিল্লানিতে ছাদের সিঁড়িঘরের ছায়ায় শুয়ে থাকা বিড়াল ডিপজল একটু চোখ খুলে তাকায়, পরে আবার বন্ধ করে।
মন্তব্য
দুর্দান্ত!
আপ্নে কী খান?
[জামাদের মা সহজ সত্যটা আবার জানতে পারে অনেক পরে। জামাদ বদলে জামান করে দেন।]
মন্তব্য চ্যাঞ্জাইলাম।
আমি খাই। তবে প্রচুর খাই।
-------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
প্রথমটা এবং শেষেরটা........মাস্টারপিস। স্প্যানিশ যাদুবাস্তবতায় কাফকার ডেন্সিটি।
(২ নম্বরে কামার না কুমার?)
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
ঠিক্কর্লাম।
--------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
এই টুকুন গল্পগুলোর প্রত্যেকটাই বেশ সম্ভাবনাময় প্লট। চলমান চিন্তাকে এভাবে ধরে রাখা একটা কৌশল হতে পারে। তাতে সামনে সময়-সুযোগ হলে এদের কোনটাকে বা কয়েকটাকে একসাথে ধরে সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। হোমওয়ার্ক সব সময়ই ভালো ফল দেয়, তবে হোমওয়ার্ক নয় পরীক্ষার খাতায় লেখাই ফলাফল হিসাবে বিবেচিত হয়।
পুনশ্চঃ "একটা অন্ধ বধির ট্রেন" পড়ে জিয়া হায়দারের "শুভ্রা সুন্দর কল্যাণী আনন্দ"র কথা মনে পড়ল। এমন সাহসী আর প্রাগসর চিন্তা আর দেখলামনা। না জিয়া হায়দারের কাছে, না অন্য কারো কাছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সময় সুযোগে এগুলোকে বাড়ানোর একটা অবচেতন ধান্ধা আছে। দেখা যাক।
জিয়া হায়দারের "শুভ্রা সুন্দর কল্যাণী আনন্দ" পড়ি নাই। কতো কিছু যে পড়ি নাই।
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী থেকে রণজিৎ দাশ অনেক কিছুই মনে পড়ল। কিন্তু এ-তো গদ্য। ভালো হইসে ...
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ধন্যবাদ, অনিন্দ্য।
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
শেষের দুইটার জন্যে পাঁচাইলাম...
_________________________________________
সেরিওজা
--
-------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
থিমগুলো বেশ জোরালো ,পাঁচ নাম্বারটা পড়ে মনে হল কেউ কষে চড় দিল।
গল্পগুলো কি এখনো নিরীক্ষাধীন ?
অদ্রোহ।
চাইরটা গল্পের মইধ্যে আপনি পাঁচ নাম্বার পাইলেন্ কই?
ঠিক নিরীক্ষা না। এর মধ্যে যা বলার বলা হয়ে যায়। পরে সময়সুযোগে এক/দুইটার পরিধি হয়তো বাড়াবো।
আমাদের দুপুর গল্পটা খাতায় তিন/চার পৃষ্ঠা লিখেছিলাম। পরে কেটেকুটে কয়েক লাইনে নামালাম।
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
অনুগুলা ছুঁইলো। ছোট ছোট ছাঁত্ছাঁত্ ছ্যাঁকাও দিলো অল্পবিস্তর। কিন্তু এই নির্জ্ঞানের কাছে ওইগুলার আন্তঃআনবিক সম্পর্কটা ধরা দ্যায় নাই! নাকি নাই?!
ভালো।
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
এই যে আপ্নারে ছোট ছোট ছাঁত্ছাঁত্ ছ্যাঁকা দিল। গল্পগুলোর মধ্যে এটাই আন্তঃআনবিক সম্পর্ক।
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
আইচ্ছ্যা।
স্যরি, পরে খেয়াল হইছে কালকে, যে অণু আর আণবিক- দুইটাতেই আসোলে মূর্ধহ্ন-ণ।
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
কোনটা রেখে কোনটার কথা বলি? প্রতিটাই অসাধারণ লাগলো বস!
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
দারুণ লাগলো...
শুভকামনা রইলো...
------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো,
গৃহী হয়ে কে কবে কী পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
-------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
প্রথমটা অসাধারন...
---থাবা বাবা!
ভালো লাগলো। ডিপজলের চোখ এরকম মাঝে মাঝে খুলুক আর বন্ধ হোক। কিন্তু টুকুন গল্প বন্ধ না হোক।
অক্কে।
নতুন মন্তব্য করুন