আন্দরকিল্লা আর কেসিদে রোডের মুখ থেকে আসা রাস্তা দুটোর নেক্সাসে সামান্য খোলা জায়গা। এখানেই মনোরঞ্জন তার পিঁয়াজু চানাবুটের দোকান খুলে সন্ধ্যা নামার বেশ কিছুটা আগে। আন্দরকিল্লার মোড়ে অন্য একটা ভাজাপোড়ার দোকান খোলা হলে মনোরঞ্জনের মনোপলি চটে যায়। বিষন্ন চেহারার মনোরঞ্জনের চেহারায় বিষাদ আরো কড়া পোঁচ দেয়। এলাকাবাসীর বেশির ভাগ হিন্দু। কাঁকরা আর কাছিমের প্রতি আগ্রহ থাকায় এখানে ধুমসে হাট বসে। এক দুটো কাঁকরা টুকরি থেকে পালিয়ে নিকটস্থ নালায় ঢোকার মুখে বিক্রেতার হাতে ধরা পড়ে সঙ্গীসাথীদের ভিড়ে আবার হাজির হয়। কাছিম বেচে আকবর। চারটা কাছিমের মাংস কেজিখানেক বাদে বাকিটুকু বেচা শেষ। আরো তিনটা কাছিম উলটানো অবস্থায় ছালার মধ্যে আছে। কাটার জন্য একটাকে বের করা হলে গলা ভেতরে ঢুকিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর অপেক্ষায় শোকার্ত হয়। গামলার গরম পানির মধ্যে কাছিমটাকে ছেড়ে দিলে গলা বের না করে আর পারে না। আকবর বাকি কাজ তাড়াতাড়িই সাড়ে।
হীরালাল সরকারের বাড়ির সাথে লাগোয়া শিবমন্দিরের চিপায় এক বস্তা ফেন্সির চালান খুলে সৌমেনের চেলারা। বিক্রিবাট্টা শুরু হয়ে গেছে এর মধ্যে। রতনের চায়ের দোকানে বেশি-চিনি-চায়ের লাগাতার দাবিতে টুংটাং শব্দের ছেদ পড়ে না। এক দুই তিন ক্লাবের সান্ধ্য মিটিং-এ দুই চারজন করে যুবক আসতে থাকে। ক্লাবের চেয়ারম্যান নতুন কমিশনার পানু। প্রথমদিকে মিটিং টাইমিং নিয়ে তাফালিং করলেও এখন ঢিলেমি শুরু হয়ে গেছে। কমিশনারের কমিশন খাওয়া ভারী হচ্ছে বোঝা যায় তার বাড়ির তলা বাড়ানোর সংকল্প দেখে। ক্লাবের ভেতরে দেয়ালে সাঁটানো ক্যালেন্ডারের ছবিতে মা কালি বের হওয়া জিহবা দিয়ে যুবকদের সিগারেটের ধোঁয়া চাটে।
এই গলির বাসিন্দারা ঘোর লাগা মানুষের মতো হাঁটে। জিরায়। চনাবুট গালে পুরে চিবোতে থাকে। দোকানে যায়। বাসায় ফিরলে অভ্যস্ত চোখে টিভি দেখতে থাকে। আসন্ন বিশ্বকাপের আমেজে কিছু কিছু বাড়ির জানালা দিয়ে ঝোলানো ব্রাজিল আর্জেন্টিনা ইতালির পতাকা হাওয়াশূন্যতায় ঝিমায়। বাচ্চারা মাঠের অভাবে রাস্তায় ঘোরাফেরা করে। একটু ফাঁকা জায়গায় মার্বেল খেলে। না হলে পিঁয়াজু খায়। জানালার শিক দিয়ে কিছু কিছু পিচ্চি সাথে তাদের মা কি ঠাকুরমা'রা রাস্তায় মানুষের মাথা গোনে। হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় দেখা যায় মাথার ওপর কতিপয় ছাতা এসে জড়ো হয়ে গেছে।
আস্তে আস্তে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামে। রাত গভীরতার দিকে এগোলে হাজারি গলি ঘষে ঘষে তার মেকাপ তুলতে শুরু করে। বৃষ্টিও থামে।
মন্তব্য
"পিচ না গলে তাই সুঠাম থাকে। এক দুই জায়গায় পেশী ফুলায়।" ভালো লেগেছে।
আকবরের কাছিম বেচা আর ক্লাবের ভেতরে দেয়ালে সাঁটানো ক্যালেন্ডারের ছবিতে মা কালি-ও ভালো লাগলো।
কিন্তু পুরা গল্প বুঝি নাই নিশ্চিত।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
গল্পে বেশী কিছু বোঝার নেই।
এই হাজারি গলিতে আমি বেড়ে উঠেছিলাম। জাস্ট নস্টালজিয়া।
--------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
খুবই সাবলিল ভাবে ছড়িয়ে ভরাট করে একটা গল্প শুরু হয়ে হঠাৎ কেন শেষ হয়ে গেল বলুন তো?
-----------------------------------------------------------
"ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে"
ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে
সেটাই।
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
চমৎকার লাগলো, নিরাসক্ত অথচ ছবির মতো। শেষের লাইনে মেকাপের কথা-প্রসঙ্গে মনে হলো, এই গলি মেকাপ লাগায় কি আদৌ যে তোলার দরকার হবে?
কমদামী মেকাপ, বস্।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
এই 'কিছুক্ষণের' ছবিটা চমৎকার লাগল। ...
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
এত গল্পের ভীড়ে আকবর আর কাছিমের গল্পই মূল গল্প বলে মনে হলো।
আগাগোড়া দুর্দান্ত!!
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
গল্পটা শুরু হবার আগেই যেন শেষ হয়ে গেল না?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
এটাতে কোন গল্প নাই। গল্পহীনতার গল্প।
--------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পাহাড় সমুদ্রে ঘেরা রূপবতী চাটগাঁয়ের মেয়ে আমি । অথচ এই শহরেরি একটি এলাকার সন্ধ্যা -রাত্তিরের কথা জানলাম আপনার সুন্দর এই লেখাটির মাধ্যমে । এমনকি কাছিমের মাংস যে এখানে কেনা বেচা হয় সেই তথ্য ও আমার জানা ছিল না !!
সাবরিনা সুলতানা
মন্তব্যের জন্য থ্যাংকস্।
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
গল্পের ভেতরের গল্পটা পুরোপুরি বুঝিনি।
কিন্তু লেখার ধরনটা চমতকার লেগেছে। বিশেষ করে,
আচ্ছা, কাছিমের মাংস সংগ্রহের প্রক্রিয়াটা আসলে কী?
আমি ঠিক জানি না।
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
ছবির মত।
ছবির মত।
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
গল্পহীনতার মধ্যে কিন্তু গল্প আছে। আকবরের কাছিম আর শিবমন্দিরের চিপায় ফেন্সিডিলের ব্যবসা--গল্পটা এইখানে এসে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। মনোরঞ্জনের মনোপলি পিয়াজুর দোকান ফেইল মারার মধ্যে তিনি গল্প বুনে দিয়েছেন। এগুলো পাঠককে বাধ্য করায় কিছু গল্প নির্মাণে।
এই গল্পটি আসলে লেখক এবং পাঠকের গল্প। যৌথনির্মাণের প্রকল্প। অসাধারণ কাজ। মু্গ্ধ হয়েছি।
এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
এই স্ট্রাকচারে লেখা কতটুকু দাঁড়ায় সেটা নিয়ে ভাবছি। দেখা যাক।
-------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
গল্প না লেখা কঠিন, গল্প লেখার চেয়ে।
হ্যাঁ। মানুষগুলোর জন্য অনেকসময় রাস্তাটা চোখে পড়ে না। বালিকা হোঁচট খেলে ঈশ্বরকে দুয়ো। রিকশা ঝাঁকি খেলে মিউনিসিপালটিকে। কেবল মানুষগুলো তাদের দুর্বহ গল্পগুলো নিয়ে যে যার খোলসে আশ্রয় নিলে, উন্মুক্ত হয় রাস্তার গল্প।
সেই গল্প না লেখা সত্যিই কঠিন।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
হ। সবই দেখি কইয়া ফেলছেন।
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
চিত্ররুপময়...
---থাবা বাবা!
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
মৃণাল সেনের 'চালচিত্র' সিনেমাটির কথা মনে পড়ে গেল।
'চালচিত্র' কি দেখেছি? আসলে ভুলে গেছি।
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
আমার মনে পড়ল 'শুক্রবার সকালে আমাদের গলি'র কথা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লিঙ্কের জন্য ধন্যবাদ। লেখাটা অসাধারণ।
হা হা হা...
মজার ব্যাপার হলো, এই গল্পটা যখন শুভাশীষদা লিখছিলেন, সেই সময় তাঁর সাথে আমার কথা হচ্ছিলো টুকিটাকি। উনি গল্পটার প্লট আমাকে কিছুটা বলার পরই আমি তাঁকে বলেছিলাম ফকির লালনের এই কবিতাটার কথা। পড়েননি জেনে, লিঙ্কটাও দিয়েছিলাম।
সত্যি কবিতাটা দারুণ !
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সবজান্তাকে ধন্যবাদ। ফকির লালনের কবিতাটা আসলেই দুর্দান্ত।
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
পড়েছি আগেই।
এখন শুধু জানাই, আপনার এই নিরীক্ষার ব্যাপারটা আমার দারুণ লাগে। এক ধরনের ইমেজ আপনার লেখার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠে। সেটাই সবচেয়ে উপভোগ্য অংশ !
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
...
নতুন মন্তব্য করুন