স্নানের আগে
ইসমাইল কাদেরে
ফলে নিজেকে টাবের বাইরে আবারো আবিষ্কার করতে হয়। একটা আতংকের মতো। একটা পা পানিতে চুবিয়ে পেছনে ফেরা। খানিক দূরে তার স্ত্রী। কাপড়ের নিচে রাখা কুঠারের মৃদু ঝলকানি। কিছু বোঝার আগেই, ঠিকমতো ভয় পাওয়ার আগেই কাপড়ের জালে আটকে যাওয়া। রক্তপাতের শুরু। পানির রক্তিম হওয়া।
সে নিজেকে টাবের বাইরেই দেখতে পায়। হঠাৎ ঘটে যাওয়া এই ভুল বুঝাবুঝি মাথা ঠান্ডা করে বুঝে নিয়ে চায়। টাবের দিকে এগোনো। গরম পানির ধোঁয়া ধোঁয়া চারদিকে। সব কিছুর দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার অনুভূতি। আরামে চোখ বুজে আসতে চায়( সেই সামরিক তাঁবুগুলোতে বাথটাবের জন্য কতো হাপিত্যেশ ছিল। যুদ্ধাঙ্গন থেকে পালানোর ইচ্ছা জেগেছিল কতোবার)। একটা পা পানিতে দিয়ে পেছনে ফিরে স্ত্রীকে দেখা। সুখের হাতছানি। মুখে সেই হাসি। হাসির মুখোশ। কেন জানি সেই হাসির দিকে চোখ না গিয়ে হাতের ধাতব বস্তুর দিকে চোখ আটকে যাওয়া। সুখের নেশার ডুবে থেকে স্ত্রীর সারপ্রাইজ নিয়ে পরের মুহূর্তে নিজেকে আবিষ্কার করে কাপড়ের নেটে। হাত দুটো সেখানে বাঁধা পড়ে। কুঠার। ঝলকানি। রক্ত ফিনকি দিয়ে ছোটা। ‘খুন’ বলে চিৎকার। সব ঘটনা এতো পরপর ঘটে যায়। যেন সব বিচ্ছিন্ন নয় বরং একটামাত্র ঘটনা। বাথটাবের দিকে আসা, পেছনে বউ, হাতে কাপড় আর কি জানি একটা ধাতব জিনিস, তাঁবুতে কাটানোর সময় টাব নিয়ে আহাজারির চিন্তা, বউয়ের মুখোশ হাসি, এগিয়ে আসা, কাপড় জালে আটকে পড়া, কুঠারের ঝিলিক- সব সব বিদ্যুৎগতিতে ঘটে যাওয়া। এরপর বউয়ের দিকে তাকানোর আগে পানিতে পড়া ছায়া দেখে, তার হাতে ধরে রাখা কাপড়ের দিকে তাকিয়ে তাকে বলতে চেষ্টা করে, ‘প্রিয়তমা, নতুন এই বুদ্ধি কখন মাথায় আসলো তোমার?’
কাপড়টাকে রাজহাঁস বলে ভুল হয়। যেন বাদুড়ের মতো আনকোরা ডানা গজিয়েছে। উড়ে উড়ে কাছে আসলে জাল চেহারাটা স্পষ্ট হয়। কিন্তু ধরার মতো শক্তি হাতে থাকে না। নিজেকে বলে ‘সব শেষ’। সেই মুহূর্ত থেকে পানির রক্তিম বর্ণ ধরা পর্যন্ত মনে হয় অনেক সময় কেটে গেছে।
বাথটাবের বাইরেই সে নিজেকে দেখে, স্ত্রীর এগিয়ে আসা, এই একই ঘটনা আগে অনেক কয়বার ঘটেছে, অথচ এটা তার জীবনের শেষ বিশ সেকেন্ড। অনেকটা আত্রিয়াসের বাসায় আগামেননের নরক , ট্রয় যুদ্ধ শেষে ফেরত আসার সেই প্রথম দিন। দুপুর একটা পঁয়ত্রিশ। এগারশো নিরানব্বই সালের একত্রিশে মার্চ।
(ঈ. প.)
আলবেনিয়ান থেকে ইংরেজিতে অনুবাদঃ পিটার কন্সট্যান্টাইন।
লেখক পরিচিতি
ইসমাইল কাদেরে আলবেনিয়ান ঔপন্যাসিক। জন্ম ১৯৩৬; ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ পান ২০০৫ সালে; উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: দা জেনারেল অফ দা ডেড আর্মি, দা ক্যাসল, দা পিরামিড।
মন্তব্য
গল্পের বর্ণনায় এক ধরনের নতুনত্ব আছে। তবে সেজন্যই পড়তে কিছুটা খটকা লাগলো- কিছু লাইন খুব ধীরস্থিরে,দুই বার পড়ে তারপর এগুতে হলো।
কেন জানি না, বর্ণনাটা আমার কাছে বেশ সিনেমাটিক মনে হলো। মনে হলো অনেকগুলি দৃশ্যের পরপর চিত্রায়ণ, অক্ষরের মধ্য দিয়ে।
নতুন স্টাইল, মন্দ না !
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
এই ইস্টাইলের জন্যই অনুবাদ কর্লাম।
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
তবে গল্পের শেষে শর্ট ফিল্মটা দিয়ে দেওয়াতে আমার একটু আপত্তি আছে।
একটা লেখা পাঠকের মনে কতোটুকু আবেদন সৃষ্টি করতে পারে কিংবা কী চিন্তার উদ্রেক ঘটাতে পারে, সেটাকে আমি পুরাপুরি টেক্সটের ডোমেন বলেই মনে করি। ভিস্যুয়াল কিছু হয়তো মূলের স্বাদ দিবে মানুষকে, কিন্তু আপনার লেখা হয়তো ক্ষুণ্ণ হবে এতে।
থাকুক না- মূলই যে বুঝতে হবে এমন তো মাথার দিব্যি নেই ! আপনার মতো করে বুঝলেই বা কী ক্ষতি !
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
ভিডিও সরিয়ে দিলাম।
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
গল্পটা পড়তে ভালো লাগলেও বুঝতে একটু কষ্ট হয়েছে।
শর্টফিল্মটা দেখলেই তো বোঝা যায়।
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
কিছু বর্ননা কেবল শব্দের মাঝে সিমাবদ্ধ থাকে আর কিছু বর্ননা শব্দের সীমা ছাড়িয়ে প্রোজেকশান এর দিকে এগোয় । আরো কিছুটা স্বচ্ছ প্রকাশে প্রোজেকশান টা আরো ভালো ফুটতো ।
লেখা পড়তে ভালো লাগলো ।
ধন্যবাদ -
ফ্ল্যাশ ফিকশনে অস্বচ্ছতা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ। অনেক লেখক সেটা করেন।
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
কঠিন গল্প! একবার পড়ে বুঝিনি।
দেখি আরেকবার চেষ্টা করে।
ফিলিমটা দেখেন।
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
এই থিমটা দারুণ লাগলো...
প্লটটা বড় করা গেলে একটা জমজমাট থ্রিলার হতে পারতো... চেষ্টা করবেন না কি ??
_________________________________________
সেরিওজা
তুমি করতে পারো। থ্রিলার জাতীয় কিছু লেখায় আমি নাই।
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
মূল গল্পটা কেমন ছিল জানি না... অনুবাদ পড়ে সেটা বোঝার উপায় নেই... তবে অনুবাদের গল্পটাতে নতুনত্ব আছে!!!
---থাবা বাবা!
একই ঘটনা নানা দিক থেকে দেখলে কেমন লাগে? একই মানুষের পারস্পেকটিভে।
ইনারিতুর 'বেবেল' বা 'আমোরেস পেরোস' সিনেমায় এই ধরণের টেকনিক আছে। তবে একই মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে না।
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
শর্টফিল্ম দেখে ফকফকা। দারুণ লাগলো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ঠিকাছে।
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
এক বা দুই যাঁরা দেন জানিয়ে দিলে ভাল। এতে লেখকের উপকার হয়।
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
বাহ!
[মুভির শেষের মিউজিকটা দারুণ লাগলো! ]
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
আমারো
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
আসলেই, ভালো থ্রিলার হতে পারতো।
নতুন মন্তব্য করুন