আমার যা দরকার, আমার আছে

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: শনি, ২৬/০৬/২০১০ - ১২:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাসা জেসেনের ‘পারফেক্ট রিগা(র্)’ গ্রিগরি (গ্রিসা) পেরেলম্যানের চমৎকার জীবনীগ্রন্থ। অসাধারণ মেধাবী সাথে অসামাজিক গণিতবিদ হিসেবে পেরেলম্যান পরিচিত। তিনি বিখ্যাত ‘পোয়াকাঁরের অনুমান’ (Poincaré Conjecture)সমস্যার সমাধান বের করেন। এটা অমীমাংসিত সমস্যা হিসেবে থেকে যায় গত এক শতক। ক্লে ম্যাথেমেটিকস ইনস্টিটিউট সাতটা গাণিতিক সমস্যার যে কোনটি সমাধানের জন্য মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে। এই ঘোষণার মাত্র দুই বছর পর ‘পোয়াকাঁরের অনুমান’ সমাধান করে ফেলেন রাশিয়ান এই গণিতবিদ।

লেখক জেসেন নিজে রাশিয়ার বেড়ে উঠেছিলেন। পেরেলম্যানের বয়সী। গণিতে আগ্রহী। পেরেলম্যানের বন্ধু, শিক্ষক, কলিগদের কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে তথ্য পাওয়া তাই সহজ ছিল। মজার ব্যাপার পেরেলম্যান বা তাঁর মার কোনো সাক্ষাৎকার এই জীবনীগ্রন্থে নেই। এতে সমস্যা হয়নি। অন্যদের কথাবার্তা থেকে বিখ্যাত এই গণিতবদকে চিনে নিতে কষ্ট হয় না। এর সাথে রাশিয়ার গণিতজগতের পরিবেশ সম্পর্কে জানা যায়। সেখানে এক ধরণের আনুষ্ঠানিক গাণিতিক প্রতিষ্ঠান আছে। এর সঙ্গে আছে অনানুষ্ঠানিক গণিতচর্চা। প্রথমটা সরকার আর পার্টি চালিত। এসব প্রতিষ্ঠানে নানা ধরণের প্রকৌশল কিংবা সামরিক কাজে সরকারের বরাদ্দ করা অর্থ সহায়তায় চলে। দ্বিতীয় ধরণের চর্চায় কোন অর্থ সাহায্য পাওয়া যায় না। গণিতিবিদেরা গণিতের প্রতি ভালোবাসায় গণিতচর্চা করেন। পুরো স্বাধীন। কোন সরকারি হস্তক্ষেপ এখানে নেই।

পেরেলম্যান ইহুদী। জন্ম ১৯৬৬ সালে। গ্লাস্নোস্ট আর প্যারেস্ত্রেইকার মাঝামাঝি সময়কালে তাঁর বেড়ে ওঠা। দশ বছর বয়সে তাঁর মধ্যে গণিত প্রতিভার দেখা মিলে। তাঁর মা তখন লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের আন্ডারগ্রেডের ছাত্র সের্জেই রাশকিনের গণিত ক্লাবে তাঁকে ভর্তি করে দেন। রাশকিন কিছুটা ক্ষ্যাপাটে। গণিত তাঁর অবসেশন। গণিত শেখানোর জন্য একটা স্বতন্ত্র কার্যকর পদ্ধতি তিনি বের করেন। গত বিশ বছর ধরে রাশিয়ার যেসব ছাত্র আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে যায় তাদের বেশিরভাগ রাশকিনের তত্ত্বাবধানে থাকে।

রাশকিন তাঁর উনিশ বছর বয়সে পেরেলম্যানকে ছাত্র হিসেবে পান। বয়সন্ধিকালের পেরেলম্যান দেখতে ‘কদর্য হাঁসের ছানার মধ্যে একজন … বেঁটে-মোটা, বিসদৃশ’ ছিলেন। রাশকিন তাঁর মধ্যে গণিত সমস্যা সমাধানে স্বতন্ত্রতার পরিচয় পান। রাশকিনের আন্ততিকতায় পেরেলম্যান নিজের প্রতি আস্থা ফিরে পান। যেকোনো খেলার কোচ যেমন তাঁর খেলোয়ারকে অন্য কোনো দিকে মনোযোগ দেয়া পছন্দ করেন না, রাশকিন ও ঠিক তেমনি। পেরেলম্যানের ক্ষেত্রে এসব বিধিনিষেধ প্রয়োগ করার মানে ছিল না। মেয়েদের প্রতি তাঁর আগ্রহ নেই, যা আগ্রহ কেবল গণিতে।

পেরেলম্যান রাশকিনের কাছে অল্প সময় ইংরেজিতে তালিম নিলেন। লেনিনগ্রাদে গণিতের জন্য বিশেষ স্কুল ২৩৯; এখানে ভর্তি হতে গেলে ইংরেজিতে দক্ষতা থাকতে হয়। বিংশ শতকের খ্যাতনামা রাশিয়ান গণিতবিদ আন্দ্রেই কলমোগ্রোভ এই ধরণের স্কুল প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে ছিলেন।

কলমোগ্রোভ সম্ভাব্যতা আর জটিল সংখ্যার গঠন নিয়ে সেমিনার নিতেন। তবে গণিতশিক্ষার দিকে তাঁর ঝোঁক ছিল। তাঁর প্রতিষ্ঠা করা স্কুলের কারিকুলামে প্রধান বিষয় ছিল গণিত। এর সাথে ক্ল্যাসিকাল সংগীত, খেলা, সাহিত্য, কবিতা। গ্রীক আর রেঁনেসা যুগের নীতির প্রতি সেখানে গুরুত্ব দেয়া হত যাতে মার্ক্সিস্ট ধারণা ছাত্রদের মাথায় না ঢোকে। পরে তাঁকে পশ্চিমা চর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তবে ২৩৯ নম্বর স্কুলে কলমোগ্রোভের সকল নীতি তখনো বহাল ছিল।

পেরেলম্যান ছিলেন ব্যাক-বেঞ্চার। সেখানে কলমোগ্রোভের পদ্ধতিতে সব চলতো। তিনি এসবে অংশ নিতেন, তবে পছন্দ করে করতেন না। স্কুল তাঁকে শেখায়- পৃথিবীটা গণিতের মতো। লজিক দিয়ে সব চলে। নিয়ম মেনে চলতে হয় কঠোরভাবে। স্কুল শেষ হয়ে আসার সময় পেরেলম্যানকে উচ্চশিক্ষার কথা ভাবতে হয়। লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর মাত্র দুজন ইহুদী ছাত্র ঢোকানো হয়। তবে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে সোভিয়েত টিমের সদস্য হতে পারলে সেখানে ভর্তি নিশ্চিত।

পেরেলম্যান উপায়ান্তর হয়ে আলেক্সেন্ডার আব্রামভের অধীনে ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নেন। প্রতিযোগিতায় পেরেলম্যান সব অংক করতে পারেন। ১৯৮২ সালের অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক পান। লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বাধা কেটে যায়।

লেনিনগ্রাদে কয়েকজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গণিতের অধ্যাপকের সংস্পর্শে আসেন। ভিক্টর জেলগেলার, আলেক্সেন্ডার দানিলোভিচ আলেক্সেন্দ্রভ। লেনিনিগ্রাদের স্টেক্লভ ইন্সটিটিউট অফ ম্যাথেমেটিকসের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো পেরেলম্যানকে নিয়োগের পেছনে তাঁর গ্র্যাজুয়েট এডভাইজার আলেক্সেন্দ্রভের অবদান আছে।

১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে আমেরিকার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পেরেলম্যান পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল রিমানিয়ান জ্যামিতি (Riemannian Geometry)। ১৯৯৪ সালে ‘সোল অনুমান’(Soul Conjecture)নামের একটা টপোলজিকাল থিয়োরেম ভালোভাবে প্রমাণ করার জন্য তাঁর খ্যাতি বাড়ে। প্রিন্সটন আর স্ট্যানফোর্ডে শিক্ষতার সুযোগ আসে। কিন্তু সিভি চাওয়ার কারণে দুই জায়গাতেই তিনি না করে দেন। পেরেলম্যানের মতে তিনি যেসব সমস্যা সমাধান করেছেন আর তাঁর দেয়া লেকচার থেকে তাঁর সম্পর্কে ধারণা জন্মানো উচিত। ১৯৯৫ সালে তিনি রাশিয়ায় স্টেক্লভ ইন্সটিটিউটে ফিরে আসেন।

ইউরোপিয়ান ম্যাথেমেটিক্যাল সোসাইটি তাঁকে একটা পদক দেয়ার ঘোষণা করে। পেরেলম্যান পুরস্কার গ্রহণে রাজি হননি। তাঁর ধারণা যে গবেষণার কারণে তাঁকে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে সেটা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। আর পুরস্কার ঘোষণা যাঁরা করেছে তাঁদের গাণিতিক জ্ঞান নিয়ে তাঁর সন্দেহ আছে।

পেরেলম্যানের এসব অসামাজিক কাণ্ড দেখে (সাথে তাঁর লম্বা চুল, ইয়া বড় বড় নখ আর রাসপুটিন-মার্কা চেহারা) বায়োগ্রাফার জেসেন ধারণা করেন ভদ্রলোক বোধকরি এসপারগার’স সিন্ড্রোমে ভুগছেন। এঁরা সবসময় সাধারণ জিনিসের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করেন। উল্লেখ্য, পেরেলম্যান সবসময় তাঁর মার সাথে থাকেন। জেসেন এই নিয়ে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সাথে কথাও বলেন। দেখা গেছে বেশিরভাগ গণিতবিদ একিউ (Autism-spectrum Quotient) পরীক্ষায় ভালো করেন। তবে নিশ্চিতভাবে পেরেলম্যান এই রোগে আক্রান্ত কীনা জানা যায় নি।

১৯৯৫ সালের পর পেরেলম্যানের আর কোনো কাজের খবর পাওয়া যায়নি। ২০০২-২০০৩ সালের তিনি ‘পোয়াকাঁরের অনুমান’ সমাধান দেন ইন্টারনেটে। তিনটি পেপারে। কোন জার্নালে জমা দেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। এই সমাধানকে বলা যায় ‘দা ম্যাথেমেটিক্যাল ব্রেকথ্রু অফ দা সেঞ্চুরি’। জেসান তাঁর বইয়ের শিরোনামে এই বাক্যবন্ধ ব্যবহার করেছেন।

‘পোয়াকাঁরের অনুমান’ কি বস্তু?

ত্রিমাত্রিক গোলকের ক্ষেত্রে এই থিয়োরেম ব্যবহার করা হয়। এই অনুমান টপোলজির গুরুত্বপূর্ণ একটা টপিক। জ্যামিতিক গঠনের কিছু বৈশিষ্ট্য যেগুলো চাপ প্রয়োগের সময়েও অপরিবর্তিত থাকে- টপোলজির আলোচনা সেগুলো নিয়েই। ১৯০৪ সালে হেনরি পোয়াকাঁর এই প্রশ্নটা তৈরি করেন-

Consider a compact 3D manifold V without boundary. Is it possible that the fundamental group of V could be trivial, even though V is not homeomorphic to the 3D sphere?

auto

এই চিত্রে দেখানো হচ্ছে ‘সাধারণ কানেক্টেডনেস’। একটা টপোলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য। গোলকের চারপাশের রাবার ব্যান্ড একটার বেশি বিন্দুতে এসে সংকুচিত হবে না।

রাবার ব্যান্ডটিকে ভালো মতো খেয়াল করলে দেখতে পাব, গোলকের গায়ের সাথে লেগে থেকে কোন জায়গায় না ভেঙ্গে বা মচকে একসময়ে একটা কোনো বিন্দুতে এসে সংকুচিত হয়ে গেছে। একটা ডোনাটের গায়ে রাবার ব্যান্ড লাগিয়ে এটা করা যাবে না। তার মানে গোলকের পৃষ্ঠদেশে ‘সাধারণ কানেক্টেডনেস’ বৈশিষ্ট্য বিরাজমান। এই বৈশিষ্ট্য ত্রিমাত্রিক গোলকের ক্ষেত্রে কিভাবে উপস্থাপন করা যায় সেটাই এই কনজেকচারের প্রতিপাদ্য ছিল।

রিচার্ড হ্যামিল্টন নামের বার্কলি’র একজন গণিতিবিদ পেরেলম্যানের ব্যাখ্যার ওপর গবেষণা করেন। রিচি ফ্লো(Ricci Flow) নামের একটা গাণিতিক টুল ব্যবহার করেন তিনি। পেরেলম্যানের হিসাবের আগে এটা নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না প্রতিটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বৈশিষ্ট্যকে সারানো যায়। জিসেন লিখেছেন –

He succeeded because he used the unfathomable power of his mind to grasp the entire scope of possibilities: he was ultimately able to claim that he knew all that could happen…as the object reshaped itself.

পেরেলম্যানের করা হিসাবের প্রায় প্রতিটা ধাপ সঠিক। ২০০৬ সালে তাঁকে গণিতের নোবেল বলে খ্যাত ‘ফিল্ডস মেডেল’ দেয়া হয়। তিনি এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। ক্লে ইন্সটিটিউটের দেয়া এক মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার একটু সময় নিয়ে পরে প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর মতে, আমার যা দরকার, আমার আছে। আরো বলেন-

চিড়িয়াখানার পশুর মত আমাকে দেখানো হোক আমি চাই না। আমি গণিতের কোনো বীর না। এমনকি আমি নিজেকে সফল দাবি করি না। তাই লোকে আমাকে দেখুক আমি চাই না।


(সংক্ষেপ করা)

[দা ন্যুয়র্ক রিভিউ অফ বুকসের ২৯ এপ্রিল, ২০১০ সংখ্যায় জন এলেন পাউলসের করা রিভিউ’র সংক্ষিপ্ত অনুবাদ]

সূত্র

Perfect Rigor: A Genius and the Mathematical Breakthrough of the Century
Masha Gessen
Houghton Mifflin Harcourt
November, 2009


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অর্থ জাগতিক সম্পদ। অন্যদিকে তাঁর আছে মহাজাগতিক জ্ঞান। তাই হয়তো জ্ঞান বিকিয়ে নিজেকে ছোট করায় তাঁর এত দ্বিধা। অসম্ভব ভালো লাগল। আমাদের দেশের ছাগুরা যদি তাঁর কাছ থেকে একটু শিক্ষা নিত! হয়তো পাল্টে যেত স্বদেশ।

অসম্ভব ভালো লাগল, শুভাশীষদা। এ ধরনের আরও লেখা চাই আপনার কাছ থেকে।

------------------------------
কুটুমবাড়ি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

কোয়েটজির ‘ডিসগ্রেস' পড়েছিলাম অনেক আগে। সিনেমাটা দেখলাম গতকাল।

নিজেদেরকে প্রফেসর লুরির মেয়ে লুসি বলে ভ্রম হয়।

উপন্যাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় কিছু কালো যুবক শ্বেতাঙ্গ প্রফেসর আর তাঁর মেয়েকে আক্রমণ করে। লুসি ধর্ষিত হয়। তাদের পোষা কুকুরগুলোকে গুলি করে মারা হয়। লুরির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এইসব হয়ে যাওয়ার পরেও লুসি কারো বিরুদ্ধে কোনো রকমের জেহাদে যেতে চায় না। বরং আপোষ করতে চায়।

‘How humiliating,’ he says finally.‘Such high hopes, and to end like this.’

‘Yes, I agree, it is humiliating. But perhaps that is a good point to start from again. Perhaps that is what I must learnt to accept. To start at ground level. With nothing. Not with nothimg but. With nothing. No cards, no weapons, no property, no rights, no dignity.’

‘Like a dog.’

‘Yes, like a dog.’

----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

সিরাত এর ছবি

একে নিয়ে কয়েকদিন আগে এই এক মিলিয়ন ডলারের পুরষ্কার নিয়ে একটা লেখা পড়লাম। রাশিয়ানরা, এবং অন্যরাও, ব্যাপক হাউকাউ করলো নিউ ইয়র্ক টাইমস আর বিবিসিতে, যে শালা তর লাগবো না বুঝলাম, নিয়া আমাগো গরীবগো দে। এই লোক নিজের এপার্টমেন্ট থিকা বলে দুই বছর বাইরই হয় না। হাসি

যাহোক এই যে সেল্ফ-কনটেন্টমেন্ট, এটার প্রশংসা না করে পারি না। এদিকে আবার এপার্টমেন্টটা পরিষ্কার করাও তো দরকার। হাসি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

রাশিয়ার টিভি চ্যানেলগুলো এটা বেশ কাভার করেছিল।

ভদ্রলোকের অসামাজিক থাকার মিশনের পেছনের কারণটা জানার খুব ইচ্ছা।

----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

সিরাত এর ছবি

মা?

মানে, এখনো মায়ের সাথেই এপার্টমেন্টে নাকি থাকেন?

কি জানি।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

পদে পদে বিস্ময় !
__________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হ!

-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

স্বাধীন এর ছবি

পড়লাম আর জানলাম। আসলেই পদে পদে বিস্ময়! (কপিরাইট অনিন্দ্য)

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হ।

----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

হাসিব এর ছবি

-

সেখানে এক ধরণের আনুষ্ঠানিক গাণিতিক প্রতিষ্ঠান আছে। এর সঙ্গে আছে অনানুষ্ঠানিক গণিতচর্চা।

এই জিনিস জার্মানিতেও আছে । পোল্যান্ড, ফ্রান্সেও গণিতের ওপর সাধারণের এক ধরনের মোহ আছে । গণিতের জার্নাল ঘাটলে বেশিরভাগ রেফারেন্সই এদের দেখা যায় ।

- রিমেনিয়ান > রিমানিয়ান ।

- কলমোগ্রোভের এই মেথডিক্যাল পদ্ধতি গণিত নিয়ে লেখালেখিতে অনেক কাজে দেয় । বিশেষ করে মেজার থিওরী, প্রোবাবিলিটি থিওরির ধারকাছ দিয়ে যায় এরকম কিছু লিখতে হলে সেটা কলমোগোরভ প্রচলিত স্পেস ডিফাইন করে সেটা দিয়ে লেখা শুরু করা এখন স্ট্যান্ডার্ড হয়ে গেছে । এই বিষয়ে সবচেয়ে বহুত ব্যবহৃত সেটাপ সম্ভবত কলমোগোরভ ট্রিপল । কলমোগোরভের প্রভাব অনেকদিন টিকবে এটা নিশ্চিত বলা যায় ।

- বেকারলি ?

- হ্যামিল্টন রিচি কার্ভেচার দিয়ে পোয়াকেয়ার কনজেকচার ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছিলেন সত্তুরের দশক থেকে । ১৯৮২তে তার বিখ্যাত Three-manifolds with positive Ricci curvature পেপারটা বের হয় । হ্যামিল্টনের কাজে পরে কিছু সমস্যা বের হয় । সেগুলোর সমাধান করে পরে সমাধানটার একটা পূর্নাঙ্গ রূপ দেন পেরেলমান ।

- আরেকটা গাণিতিক তালিকা পাওয়া যায় হিলব্যর্ট স্পেসখ্যাত ডেভিড হিলব্যর্টের একটা বক্তৃতায় । তবে হিলবার্টের চিহ্নিত ২৩টা সমস্যার বেশীরভাগই এতোদিন প্রমানিত হয়ে গেছে । আগ্রহীরা গুগল করে দেখতে পারে ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

- ঠিক্কর্লাম।

- কলমোগ্রোভের পদ্ধতি নিয়ে একটা পোস্ট দিতে পারেন।

তানভীর এর ছবি

চলুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

তুলিরেখা এর ছবি

ঠিকই তো! তাঁর যা ঐশ্বর্য তার সঙ্গে টাকার তুলনা!
বহু বছর পরে যখন আমরা কেউ থাকবো না, আমাদের ছোটোখাটো সুখদুখ তক্কোবিতক্কো ঝগড়াঝাঁটি কান্নাকাটি হাসাহাসি সব মিলিয়ে যাবে জলের ঘূর্ণীর মত, তখনো কিন্তু জ্বলজ্বল করে থেকে যাবে গ্রিশা পেরেলমানের দেওয়া গাণিতিক সমাধান গুলো, আশ্চর্য প্রমাণগুলো, সেসব ভিত্তি করে প্রসারিত হতে থাকবে আমাদের জ্ঞানের জগৎ। এই অমরত্ব ফেলে টাকা নিয়ে কেনা গোলাম হবেন কোন দুঃখে?

তার উপরে চীনারা যা চোট্টামি করলো ওনার উপরে! বাকী পন্ডিতেরা গ্যালারিতে বসে মজা দেখলো! ছি ছি! এখন আবার মিঠাকথা কয়ে মেডেল দিতে গেছে।

১০ বছর পোস্ট ডক করেছেন আমেরিকায়, তারপরে নিজের দেশে ফিরে গেছেন, আমেরিকানরা বিস্ময়ে হতবাক! জমিদারবাবু অফার দিয়েছেন, চাষা ব্যাটা নিলো না!!!!!--- টাইপের মনোভাব! সোভিয়েত না ভাঙলে এরকম হতে পারতো! এরা স্বতসিদ্ধ ধরে নিয়েছে ওদিকের সব ভালোরা কোনোরকমে "স্বর্গটুকরায়" এসে পড়তে একেবারে হাকুবাকু করছে! দুনিয়া এরকম একমেরু হয়ে গেছে !!!!

যাই হোক, এসব নিয়ে বেশী না বলাই ভালো।

সবাই ভালো থাকবেন।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

এসব নিয়ে বেশি বেশি কথা বলা ভালো।

গ্রিশা যা করেছে আমরা করতে পারি না বলে গ্রিশাকে পাগল ভেবে শান্তি খুঁজি।

সিরাত এর ছবি

গ্রিশা যা করেছে আমরা করতে পারি না বলে গ্রিশাকে পাগল ভেবে শান্তি খুঁজি।

দারুণ মন্তব্য!

সিরাত এর ছবি

পেরেলম্যানকে নতুন একটা চ্যালেঞ্জ দিলাম - আমারে অংকে ভাল করানো। তাইলে বুঝুম সে আসলেই কিছু একটা! চোখ টিপি

দরকার হলে আমি ওর এ্যাপার্টমেন্টের ভিৎরে ঢুকুম। হাসি

কি বলেন শুভাশীষদা?

সিরাত এর ছবি

পুরা লেখাটা পড়ে শেষ করলাম। এর আগে পুরাটা পড়িনি। বেশ ভাল লাগলো। হাসি

প্রিন্সটন আর স্ট্যানফোর্ডে শিক্ষতার সুযোগ আসে। কিন্তু সিভি চাওয়ার কারণে দুই জায়গাতেই তিনি না করে দেন। পেরেলম্যানের মতে তিনি যেসব সমস্যা সমাধান করেছেন আর তাঁর দেয়া লেকচার থেকে তাঁর সম্পর্কে ধারণা জন্মানো উচিত। ১৯৯৫ সালে তিনি রাশিয়ায় স্টেক্লভ ইন্সটিটিউটে ফিরে আসেন।

<হাঁ>

লেনিনগ্রাদ বছরে মাত্র দুইটা ইহুদী ঢুকাতো? রাশিয়ানরা অনেক রেসিস্ট। মন খারাপ যাউকগা তাদেরই লস। ১৫ লাখ রাশিয়ান ইহুদী ইসরায়েলরে অনেক তুইলা দিসে।

পেরেলম্যানের কোন ছবি দেন নাই। আমি একটা দেই:

auto

অতিথি লেখক এর ছবি

পেরেলম্যান নিয়ে জানতে খুব ভাল লাগল। বিজ্ঞানীদের নিয়ে পড়তে ভাল লাগে। গণিতে এককালে খুব আগ্রহ ছিল। গোল্ডবাকের অনুমান আর ম্যাপ রঙ করার সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাইতাম! এখন আগ্রহটা কভার্ট হয়ে জেনেটিক্স আর বিবর্তনবাদের দিকে গেছে। তারপরেও গণিত হইল প্রথম প্রেম, তাহাকে ভোলা কি সম্ভব!
জেনারেল কন্ডাক্টনেস ব্যাপারটা আরেকটু ক্লিয়ার করলে ভাল হয়, অ্যান্টেনার উপর দিয়ে গেছে। প্রোবাবিলিটি,পারমুটেশন, কম্বিনেশন,স্ট্যাট কিছু কিছু বুঝি(পড়তে হয় যে!)। টপোলজির সমস্যাটা আরেকটু বুঝায়ে বলবেন প্লিজ?
পথিক রহমান

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

Donal O'Shea এর একটা বই পেলাম।

পড়ে বুঝতে পারলে একটা পোস্ট দিব।

-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

বইখাতা এর ছবি

পেরেলম্যানকে জানতে পেরে ভাল লাগল। গণিতে প্রবল আগ্রহ ছিল এককালে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

এখন কি ডরান? চোখ টিপি

-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

পেরেল্ম্যানের বইটা পড়সি।

... এবার জন ন্যাশেরে নিয়া একটা লেখা দ্যান...

_________________________________________

সেরিওজা

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ন্যাশ নিয়া আপাতত আগ্রহ নাই।

এখন আরডস সাহেবকে নিয়া কিছু বই নাড়াচাড়া করতেছি।

-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কিশোরবেলার অন্যতম প্রিয় বই ছিলো "অঙ্কের মজা" লেখক ইয়ে পেরেলম্যান। রাশিয়ান বই।

গণিত বিষয়ে আমি বিরাট নাদান, খবরও রাখি না কিছু। ইনিই কি তিনি?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

নাহ ইনি সেই লোক না! আমিও মিলায় ফেলছিলাম!!
তবে ইয়ে পেরেলম্যানের বই এই পেরেলম্যান পড়ছে!
---------------------
আমার ফ্লিকার

---------------------
আমার ফ্লিকার

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ইয়া পেরেলম্যান মারা গেছেন ১৯৪২ সালে।

উইকি মামা কয়-

He is not related to the Russian mathematician Grigori Perelman, who was born in 1966 to a different Yakov Perelman. However, Grigori Perelman told The New Yorker that his father gave him Physics for Entertainment, and it inspired his interest in mathematics.


---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

আমি ওইখান থিকা কপি করছি!!
---------------------
আমার ফ্লিকার

---------------------
আমার ফ্লিকার

সাবিহ ওমর এর ছবি

ঐকিক নিয়মের অঙ্ক ভালই মজা ছিল...ত্রিকোণমিতিও চলত...ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন-টেশন পারলে ভালই লাগে। কিন্তু অঙ্ক জিনিসটা বড়ই ঘোরালো, মানে যাকে বলে পুঁদিচ্চেরি ব্যাপার...

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হ। ঠিক্কইছেন। অংক বড়ই পুঁদিচ্চেরি ব্যাপার...

---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চমৎকার কাজ! শিল্পী, তাঁর শিল্প সব কিছু নিয়ে একটু একটু করে বলা একটা কমপ্লিট চিত্র। এই গণিতশিল্পীটা আমাদের প্রায় সমসাময়িক ভাবতেই রোমাঞ্চিত হই।

"গ্রীক আর রেঁনেসা যুগের নীতির প্রতি সেখানে গুরুত্ব দেয়া হত যাতে মার্ক্সিস্ট ধারণা ছাত্রদের মাথায় না ঢোকে"

এভাবে মাথায় মার্ক্সিস্ট ধারণা ঢোকার রাস্তা বন্ধ করা যায় নাকি?

"পরে তাঁকে পশ্চিমা চর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়"

এই 'অমুকের চর' 'তমুকের চর' খুঁজে খুঁজে আর হালাল করতে করতে একসময় দেশটাই হালাল হয়ে গেল। আসল শত্রুরা দেশের যতজন মানুষকে না খুন করতে পারল, নিজের দেশের লোকজন তার চেয়েও বেশি মানুষকে খুন করে গেল।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।