ম্যাগাজিনের অফিস ম্যাকগ্র হল বিল্ডিং-এর ৪৩ তলায়। সিগারেট শেষ করে হোয়াইট লবিতে ফিরেন। কার নম্বর তিরিশে ঢুকে ৪৩ নম্বর বাটন চিপেন। লিফট চলা ধরে। এক্সপ্রেস লিফট্টার এরপর গিয়ে থামবে ৩৯ তলায়।পুরো ব্লিডিং প্রায় জনশূন্য। কিছুক্ষণ পরে লিফটের ভেতরে বাতি বন্ধ হয়ে আবার চালু হতেই লিফট্ গেলো থেমে।
কন্ট্রোল প্যানেলে বীপ করে আওয়াজ হলো। ভদ্রলোক কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। কোনো নির্দেশনা আসে কি না দেখলেন। কিন্তু কিছুই হয় না। ইন্টারকম চাপার পরেও কোনো উত্তর আসে না। আবার ইন্টারকম চাপা, তারপর পায়চারি। ইমার্জেন্সি বাটন প্রেস করার পর একটা এলার্ম বেজে ওঠে। লিফটের ছাদে দিকে ওঠার চেষ্টা করেন। আরো কয়েকবার ইমার্জেন্সি বাটন দাবান। সময় যেতে থাকে। সাথে ঘড়ি বা মোবাইল না থাকায় ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না কতো সময় চলে যাচ্ছে। তিনি স্থির থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। হঠকারি কিছু না করার কথা ভাবলেন। লিফটে আটকা পড়া লোকদের জন্য একজন আদর্শ হবার হাস্যকর চিন্তা ও মাথায় আসে। পকেটে তখনো তিনটা সিগারেট, কিন্তু আগুন লেগে যেতে পারে ভয়ে সেগুলো ধরানোর চিন্তা বাদ দেন। ইমার্জেন্সি বেল এক নাগাড়ে বাজছে দেখে তাঁর ভয় হয় বিদ্যুৎ, ঘর্ষণ কি উত্তাপের জন্য না আবার আগুন লাগে। সম্প্রতি এই বিল্ডিং-এ একটা ছোট অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বিজনেস উইকের কর্মীদের সেই সময় ৪৩ তলা পায়ে হেঁটে নামতে হয়েছিল। আস্তে আস্তে তাঁর কানে আসে বেল বাজার কম্পন, কিছু হেল্যুসিনেশন। এবার মৃত্যুভয় ও মাথায় আসে।
হোয়াটের একচল্লিশ ঘন্টা
লিফট নিয়ে এখনো মানুষের মধ্যে নানা ধরণের আতংক আছে। নাইন ইলেভেনের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের হামলায় লিফটে আটকা পড়ে প্রায় দুশো লোকের মৃত্যু ঘটে। কেউ কেউ ফ্রি ফলে। কিছু লোক মারা যান আগুন, ধোঁয়ার কারণে। আটকা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ও আছে।
লিফট নিয়ে এতো কথা বলার কারণ মনোজ নালিত্য শ্যামালানের প্রোডাকশান থেকে বেরোনো ‘ডেভিল' সিনেমার ট্রেইলার। তিনি নিজে এই ছবি পরিচালনা করছেন না। তবে গল্প তাঁর। শ্যামালানের ‘দা লাস্ট এয়ারবেন্ডার’ সমালোচকদের তোপে পড়ে গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছে। এই ভারতীয় পরিচালক ‘দা সিক্সথ সেনস্' মানের চমক হলিয়ুডকে দিতে না পারলে তাঁর বাজার হারাবেন সেই সম্ভাবনা প্রবল।
‘ডেভিল' সিনেমার ট্রেইলার
হোয়াইটের কথায় ফিরি। প্রায় একচল্লিশ ঘন্টা লিফটে আটক থাকার পর হোয়াইট মুক্তি পান। হোয়াইট মামলা করেন পঁচিশ মিলিয়ন ডলারের। পরে একটা রফা হয়। ছয় অংকের একটা চেক পান। আরো জানা যায়, ভদ্রলোক ইদানীং বেকার।
ফিরেঃ দা নিয়্যুর্কার ম্যাগাজিনের ২১ এপ্রিল, ২০০৮ সংখ্যায় এই ঘটনা নিয়ে একটা সুদীর্ঘ আর্টিকেল ছাপানো হয়। এই লেখাটার প্রথম চার প্যারা আর্টিকেলটির শুরুর অংশের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ। প্রথম ভিডিওর লিঙ্কের জন্য ওয়াইল্ড-স্কোপকে ধন্যবাদ ।
মন্তব্য
ভালো লেগেছে। ডেভিল ছবিটা দেখতে হবে।
আমি লিফটে পাঁচ মিনিট আটকা পড়েছিলাম, ক্লস্ট্রোফোবিয়ার ব্যাপারটা তখন বুঝেছি। লিফট একটু এভয়েড করি এর পর থেকে, চার-পাঁচ তলা হলে হেঁটেই উঠে যাই।
ছয় অংকের চেক পেলে বেকার থাকতে আপত্তি নেই
ইদানীং হিমু আর ধূগোসহ আরো কিছু সচল লিফটে আটকা পড়েছিল বেশ কিছুক্ষণ, ৪১ ঘন্টায় ছয় অংক পেলে এক ঘন্টার জন্য নিদেনপক্ষে চার অংক পাওয়া উচিত। আমেরিকা হলে মেন্টাল ট্রমা দেখিয়ে মামলা করা যেত। জার্মানিতে এইগুলো চলে কীনা কে জানে?
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ছয় অঙ্কের চেক পেলে কে না বেকার থাকে
--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
লেখাটা এমুন হইলো ক্যান? চার প্যারার পর ট্র্যানজিশন এবরাপ্ট পুরা!
তবে ভয়রূপ মজা পাইসি।
আমি তো অনুবাদ করতে ধরে দেখি মহাকাব্য। ইউ-টার্ন ছাড়া কোনো গতি ছিল না।
--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
আমার ছেলে একা থাকলে কখনও বাসার লিফটে চড়েনা। যদিও জেনারেটর আছে তারপরও ত্রিশ সেকেন্ডের জন্যও আটকা থাকতে চায়না।
অনেক আগে খুব সম্ভবত ৭২ এর শেষের দিকে কিংবা ৭৩এ একবার লিফট দুর্ঘটনা দেখেছিলাম, ময়মনসিংহ মেডিকেলের একটা লিফট দুই ফ্লোরের মাঝে আটকে গেলে ভেতরের লোকজনদের তলা ফুঁটো করে বাঁশ বেয়ে নামানো হয়েছিলো। একজন বাঁশ পিছলে নিচে স্প্রিং এর উপর পড়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন।
...........................
Every Picture Tells a Story
আমি লিফটে চড়ার সময় কখনো আটকা পড়িনি।
ঐ মাইনকার চিপায় আটকাইলে খবর আছে।
--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
লেখাটা অত্যন্ত সময়পোযোগী:D কারণ ইএমি ভবনের লিফটে দুইদিন আগেই আটকা পড়সিলাম আট মিনিটের জন্যে। বারোজন ছিলাম আটকা, ভয়াবহ ঐ গরম আর অন্ধকারে জীবনে প্রথম টের পাইসিলাম আমার ক্লাস্ট্রোফোবিয়া আছে...
ছবিটা দেখতে হবে মনে হয়।
_________________________________________
সেরিওজা
আমিও জানি না আমার আছে কীনা।
--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
এমনিতে আমি বুয়েটের লাইব্রেরি বিল্ডিংয়ের লিফটা খুব একটা মাড়াইনা,ওটার রেকর্ড আবার বেশ খারাপ। তবে কদিন আগে ইএমই ভবনেই যেভাবে লিফটে জেরবার হতে গেল,তাতে লিফটে এখন উঠতে এখন দুবার চিন্তা করি।
আর,সুহানের সাথে ঐ লিফটে আমিও ছিলাম,আসলেই,সে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা!!
অদ্রোহ।
খাইছে।
-------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
বাংলাদেশে হাইরাইজ বিল্ডিংয়ে চাকুরি বা বাস করেন কিন্তু লিফটে আটকা পড়েন নি একবারও, এমন কেউ কি আছেন ? হাত তুলেন, আপনার কাছ থেকে টিপস নিতে চাই।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আমি ব্যক্তিগত জীবনে ভয়াবহ রকমের ক্লাস্ট্রোফোবিক। লিফট তো লিফট- মশারি পর্যন্ত টানাই না। সাত আটতলা পর্যন্ত আস্তে ধীরে হেঁটেই উঠি। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলি আমি হেলথ কনশাস!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
কয় কী!
-------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
আমার হাজারো রকমের ফোবিয়া আছে। আমার মনে হয় না এলিভেটরে একচল্লিশ ঘন্টা আঁটকে থাকার পর আমি সুস্থ মস্তিষ্কে বের হতে পারতাম।
পোস্টটা পড়ে কেমন যেন বাজে ধরনের অনুভূতি হচ্ছে।
কি মাঝি, ডরাইলা?
হোয়াইট সাহেব ও কতোটা সুস্থ আছেন জানা নেই।
-------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
একসময় একটা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং- এ থাকতাম যেটার লিফট ছিল ( এখনও আছে)মান্ধাত্তা আমলের। লিফট উটা-নামা করছে এই অবস্থায় কেউ লিফট কল করলে সেটা হ্যাং হয়ে যেত। দরজা খুলত কেবল ১,৫,৭ আর ৮ তলায়। একটা ঘন্টা ছিল। আটকা পড়লে সেটা বাজালে লিফটম্যান এসে কাছাকাছি তলার একটা দরজা চাবি দিয়ে খুলে দিলে লাফ ঝাপ দিয়ে নয়ত হাচড় পাচড় করে বের হতে হতো। মাসে ২-১ বার লিফটে আটকানো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল তখন! ২০ বছর পরেও এই লিফট এখনো এভাবেই চলছে, তবে মানুষের সুবিধার্থে এখন প্রতি তলায় দেয়াল কেটে দরজা বানানো হয়েছে যাতে বয়স্ক/ অসুস্থ মানুষের আটক লিফট থেকে বের হতে সুবিধ হয়। (আমার এক আত্মীয় এখনো সে বাসার ৮ তলায় থাকেন বলে আপডেট জানি।)
-শিশিরকণা-
এই লিফট নিয়ে তো গল্প লেখা যায়।
--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
আমার আগের এক অফিসে লিফট ভেঙে পড়সে একাধিকবার। আরেক অফিসে গিলোটিনের মতো দরজা বন্ধ হইত ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বাংলার কিংকং এর মতো বাংলার ডেভিল বানানো যায়। বেশ স্যুররিয়্যাল হবে।
-------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
নতুন মন্তব্য করুন