অনুবাদ কারখানা ||| ৬ |||

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: বিষ্যুদ, ১২/০৮/২০১০ - ১১:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অন অথরিটি ইন ফিকশন
-জন ম্যাক্সওয়েল কূতসি (J. M. Coetzee)


উপন্যাসে একটি চরিত্র প্রথম বাক্যটি বলে, এরপর দ্বিতীয় বাক্য, পরে অন্যান্য বাক্যসকল। তবে এর মধ্যে লেখকের কর্তৃত্ব থাকে না। এটা অর্জন করে নেয়ার ব্যাপার। আর সব ঔপন্যাসিকের একটা দায় থাকে কর্তৃত্ব গ্রহণ করার। তলস্তয় এই গোত্রে সবচেয়ে কামেল। ভালো করে বললে তলস্তয় গুরুস্থানীয়।

রোঁলা বার্থ আর মিশেল ফুকোর মাধ্যমে লেখক ও লেখনীর মৃত্যু ঘোষণার প্রায় পঁচিশ বছর পরে ঔপন্যাসিকের কর্তৃত্ব নেয়ার ব্যাপারটা এক ধরণের রেটারিক/আলঙ্কারিক ছল হিসেবে দেখা হয়। দিঁদেরো আর স্টার্ন থেকে ফুঁকো-বার্থ ধারণা নিয়েছিলেন। দিঁদেরোরা অনেকদিন আগে লেখকের লেখকবৃত্তিকে এক ধরনের ভণ্ডামি হিসেবে দেখিয়েছেন। ১৯২০ সালের রাশিয়ার ফর্মালিস্ট সমালোচকদের কাছ থেকে বার্থ অনেক কিছু শিখেছেন। তাঁদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল তলস্তয়। কারণ তিনি রেটারিশিয়ান। আক্রমণের শিকার হওয়ার পেছনে কারণ ছিল তাঁর গল্প বলার স্বাভাবিকতা সাথে আলঙ্কারিক প্রয়োগ।

আমি অল্প বয়সে দিঁদেরো আর স্টার্নের লেখা পড়ে মুগ্ধ হতাম। তবে তলস্তয়কে দূরে সরিয়ে রাখতে পারি নি, তাঁর লেখনীর কারিশমা আমাকে অভিভূত করতো। তবে কিছুটা দ্বিধা নিয়ে অস্বস্তি সহকারে তলস্তয়কে পড়তাম; আমার ধারণা সেই সময়কার ফর্মালিস্ট সমালোচকেরা চুপে রিয়ালিজমের স্রষ্টাদের লেখা গিলতেন (আমি সন্দেহ করি পড়ার মজা সম্পর্কে বার্থের এন্টি-থিয়োরিটিক্যাল তত্ত্বের মধ্যে জোলার বই থেকে তিনি যে গুপ্ত মজা পেতেন তার যোগসূত্র আছে)। এসব ধুলো এখন সাফ হয়েছে, তলস্তয়ের মতো লেখকদের অথরিটি নিয়ে আর রহস্য নাই।

তলস্তয়ের শেষ জীবনে তিনি মহান লেখক হিসেবে পরিচিতি পান। শুধু তাই নয় তাঁকে ঋষিসুলভ জ্ঞানীর তকমা দেয়া হয়। তাঁর সমসাময়িক ওয়াল্ট হুইটম্যানের কপালেও একই জিনিস জোটে। অথচ দেয়ার মতো জ্ঞান তাঁদের হাতে ছিল না কারণ সেটা তাঁদের চর্চার বিষয় নয়। তাঁরা দুইজনেই এক হিসেবে কবি। এই গুণ না থাকলে তাঁরা সাধারণ মানুষ হিসেবে থেকে যেতেন। তাঁদের অজস্র মুরিদ জ্ঞান লাভের আশায় তাঁদের দিকে চেয়ে খুব একটা আলোকিত হতে পারতেন না।

অসাধারণ লেখকেরা লেখার কর্তৃত্বের প্রভু। এর মূলে কী বস্তু? ফর্মালিস্টরা এটাকে নাকচ করতে চেয়েছেন। লেখক যদি অলঙ্কার মেরে লেখাকে জাতে তোলেন তাহলে প্লেটোর আদর্শ প্রজাতন্ত্র থেকে কবিদের নির্বাসনে পাঠানোর খায়েশ ন্যায্যতা পায়। কিন্তু ঐ জাতের লেখকের মধ্যের কাব্যিক সত্তা যদি অন্য কোনো উচ্চতায় গিয়ে ঠেকে? নিজেকে ছাড়িয়ে এঁদের কেউ যদি নবীদের মতো কথা ছাড়তে থাকে?

স্রষ্টাকে ডাকলে তখন দেখা নাও দিতে পারেন। কিয়েরকেগর বলেছেন, অথরিটি বাদ দিয়ে কথা বলতে শেখ। উনার কথা এখানে টেনে আমি এক হিসেবে কিয়েরকেগরকে কর্তৃত্ব দিলাম। মূল কথা- এই বস্তু শেখা যায় না, শেখানো যায় না। এই প্যারাডক্স একেবারে সত্যিকার।

সূত্র
Diary of a Bad Year
J.M. Coetzee
Viking
2007

----

অনুবাদ কারখানা ||| ৫ |||


মন্তব্য

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি


কথা বলতে গেলেই তো অথরিটির প্রকাশ পায়। লিখলে হয় ভিন্ন ব্যাপার। লোগোসেন্ট্রিক আমি-আমি-আমি কথার ভিতরে প্রকাশ পায়। প্রকাশ পায় আইনী মনোবাঞ্ছা।


ফর্মালিজমের বাংলা কি হয়? হলে কী হয়?


অনুবাদ জারি থাকুক।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

১। লিখতে গেলে চরিত্রের মুখের অথরিটি আনানো কিছুটা মুশকিল।
ক্রিয়েটিভ ঢাউস লেখায়। এমনকি ছোট লেখায়। দুই জায়গাতেই। প্রবন্ধে সেটা সহজ।

২। ঐটার অনুবাদ জানিনা।

৩। আব্‌জাব্‌ অনুবাদ জারি রাখতেছি। হাসি

--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

বালক এর ছবি

চলুক

:::::: :::::::: ::::::::::::::: ::::::::::::::: ::::::::: ::::::::: :::::: ::::::: ::::::::::::
অভিলাষী মন চন্দ্রে না-পাক জোৎস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই

____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

দ্রোহী এর ছবি

'কামু' আর 'ফুকো' নাম দুইটা দেখলেই যাবতীয় আকথা-কুকথা মনে পড়ে যায়। খাইছে


কি মাঝি, ডরাইলা?

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

কামারুর কথা মাথায় আইলে! দেঁতো হাসি

--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ফর্মালিজম হতে পারে বাবুয়ানা। অথরিটি হতে পারে 'কর্তৃত্ব'।

লেখা ভাল্লাগছে। আচ্ছা

মহৎ লেখকেরা অথরিটির প্রভু

মহৎ কি গ্রেইটের অনুবাদ? এটা এরকম হলে ভালো শোনায় না?

চুপার লেখকেরা অথরিটির প্রভু

খাইছে

অসাধারণ লেখকেরা লেখার কর্তৃত্বের প্রভু

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ফর্মালিজমের বাংলা বাবুয়ানা ঠিকাছে। ফর্মালিস্টের বাংলা কী হবে?

অনুবাদ কারখানা শিরোনাম দিয়েছিলাম যেন কারখানায় তৈরি হওয়া অনুবাদের ভুলভাল লোকে যেন আমাকে দেখাতে পারে। কিস্তি ছয়তে এসে কিছুটা আগ্রহ দেখতে পেলাম।

পরিভাষা মাজন নামের একটা সিরিজ করার চিন্তা করছি। বাংলায় কিছু কিম্ভূত পরিভাষিক শব্দকে সাইজে আনা দরকার। কীভাবে শুরু করব ভাবাগোনা চলছে।

অসাধারণ লেখকেরা লেখার কর্তৃত্বের প্রভু।

করে দিলাম। হাসি


--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

কনফুসিয়াস এর ছবি

লেখাটা কি এতটুকুই? খানিকটা বক্তব্য এখনও বাকি রয়ে গেছে, পড়ে মনে হলো।
আপনার অনুবাদ খুব ভাল হচ্ছে।

-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

প্রবন্ধটা এখানেই শেষ। তবে বইটা খালি প্রবন্ধের বই না। সংগ্রহ করতে পারলে পড়ে মজা পাবেন। মজাটা এখানে আর না বলি।


--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।