... আসলে প্রকাশকরা ছোটগল্প প্রকাশে আগ্রহী নয়, এই বাণিজ্যিক কারণ ছাড়া ছোটগল্প মরবে কি বাঁচবে এই প্রশ্নের অন্য কোন কারণ সন্ধানের জন্যে ইলিয়াসের লেখাটি কেউ যেন পাঠ না করেন। তাহলে রচনাটির প্রতি অবিচার হবে।...
এই সতর্কবাণী বেশ রূঢ়। ইলিয়াস বুর্জোয়া সমাজের তালাশ করতে গিয়ে প্রকাশক নিয়ে প্রবন্ধে দুই জায়গায় কথা পেড়েছেন। ইলিয়াসের প্রবন্ধে সূত্রগুলো ঠিক মাপে গাঁথা হয় না বলে ফরহাদ মজহার সেখানকার ত্রুটি নিজের বিচারে মোড় ফেরাতে পারেন।
উপন্যাসকে বুর্জোয়া আর ছোটগল্পকে এক বিচারে প্রলেতারিয়েতের আসন দিয়েছেন ইলিয়াস। অন্তত তাঁর প্রবন্ধে। ছোটগল্প করবে সমাজব্যবস্থায় ব্যক্তির রোগ ও ক্ষয়কে সনাক্ত, অন্যদিকে উপন্যাসের রোগ-ক্ষয় থাকবে এর সাথে যোগ হবে দাওয়াই। ব্যক্তির বিকাশ উপন্যাস ধরতে পারে, কিন্তু ছোটগল্প নয়।
সমাজব্যবস্থা পাল্টাচ্ছে। রাষ্ট্র আমাদের শোবার ঘরে পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে। একটা নির্দিষ্ট বিন্ধুতে আলো ফেলা আর যাচ্ছে না। পরিমণ্ডল স্ফীত হচ্ছে। ‘ছোট প্রাণ ছোট কথা’ দিয়ে সমাজব্যবস্থার এতো এতো গলদের দিকে না তাকিয়ে একটা একক সমস্যার দিকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না বলে ইলিয়াসের মত।
... একটি সমস্যাকে কেন্দ্রবিন্দু করে একরৈখিক আলোর মধ্যে তাকে যথাযথ ভাবে নির্দিষ্ট করার শর্তটি পালন করা সৃজনশীল লেখকের পক্ষে দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। একটি মানুষকে এখন একটি মাত্র অনুভূতি বা সমস্যা দিয়ে চিহ্নিত করা অসম্ভব।...
ফরহাদ মজহার ইলিয়াসের রাজনৈতিক দর্শনের পথের লোক বলে দাবী করেছেন। বাংলাদেশের বামপন্থার মধ্যে যে ইতরোচিত বস্তুবাদ বাসা বেঁধেছে তার কিছু ছাপ ইলিয়াসের লেখার মধ্যে তিনি টের পান বলে জানিয়েছেন। রাষ্ট্র তার বিশাল হাত সব জায়গায় ঢুকিয়ে বসে আছে বিষয়ক ইলিয়াসের বক্তব্য নতুন কোনো ধারণা নপ্য বলে উল্লেখ করেছেন। ইলিয়াস প্রবন্ধের কোথাও এটা তাঁর মৌলিক আবিষ্কার বলে উল্লেখ করেননি। অবশ্য প্রবন্ধে রেফারেন্স ইলিয়াস দেন নাই। এটা সত্যি। ফরহাদ তাঁর প্রবন্ধেও রেফারেন্স টানার প্রয়োজন মনে করেন নি। ফলে তাঁর ব্যাখ্যা সর্বতোভাবে নিজের কীনা প্রশ্ন থেকে যায়।
ফরহাদ মজহার লিখেছেন-
... কৈফিয়তটা লেখক হিসাবে একান্তই তাঁর নিজের। এই লিখাটি পড়লে মনে হয়, ইলিয়াস যেন বলছেন আমি এখন আর ছোটগল্প লিখব না। কারণ এই যুগে ছোটগল্প লেখা কঠিন। ছোটগল্পে মানুষের সমস্যাকে যথাযথ ভাবে নির্দিষ্ট করে তুলে ধরা কঠিন। অতএব এখন আমি লিখব উপন্যাস। বোধহয় ‘খোয়াবনামা’ লেখার আগে উপন্যাস লিখবার পক্ষে তাঁর নিজের জন্য একটা যুক্তির দরকার ছিল।...
ইলিয়াস প্রবন্ধ লিখেছেন উপন্যাসকে প্রতিপক্ষ করে। সেখানে উপন্যাস লেখার অজুহাত বানানোর জন্য ইলিয়াস এই প্রবন্ধ ফেঁদেছেন এই অভিযোগ ধোপে টেকে না। ছোটগল্পকার হিসেবে ইলিয়াসের অনন্যতা ঔপন্যাসিক হিসেবে তাঁর ক্ষমতাকে প্রতিদ্বন্দ্বী করে না। বাংলা ছোটগল্পের আসন্ন মৃত্যুর একটা সম্ভাবনা প্রকাশনা শিল্পকে ঘিরে পর্যবেক্ষণের কারণ ইলিয়াসের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। আন্তর্জাতিক সাহিত্যে ছোটগল্প প্রকাশক সংকটে ভোগে। যদিও ছোটগল্পের জনপ্রিয়তা উনিশ শতকের শুরুর দিকে বেশ তুঙ্গে ছিল। চেকভের ছোটগল্পের শক্তিমত্তা এতো তীব্র ছিল যে চেকভকে ভিত্তি করে ছোটগল্পকে দুটো ভাগে বিভক্ত করা যায়। চেকভ-পূর্ববর্তী এবং চেকভ পরবর্তী। জেমস জয়েস, ক্যাথেরিন ম্যান্স্ফিল্ড কেউ চেকভের বলয় থেকে বেরোতে পারেননি। তুঙ্গে ছিল সেটা একটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। স্কট ফিটজারেল্ড তাঁর এক একটি ছোটগল্পের জন্য স্যাটারডে ইভিনিং পোস্ট থেকে ১৯২০ সালে চার হাজার মার্কিন ডলার করে পেতেন।
... রাষ্ট্র ক্রমেই স্ফীতকায় হচ্ছে। মানুষের ন্যূনতম কলাণের লক্ষ্যে পদক্ষেপ না নিলেও রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে চলেছে তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। সুস্পষ্ট কোন কৃষিনীতি সে নেবে না, কিন্তু সারের দাম বাড়িয়ে চাষীর মাথায় বাড়ি মারবে নির্দ্বিধায়; পাটের দামের ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে চাষীকে সে সর্বসান্ত করে ছাড়ে। বন্যার পর, দুর্ভিক্ষের সময় জমি থেকে উৎখাত হয়ে নিরন্ন গ্রামবাসী বিচ্যুৎ হয় নিজের পেশা থেকে, কিন্তু নতুন পেশা খুঁজে নিতে রাষ্ট্র তাকে সাহায্য করবে না। ব্যক্তিস্বাধীনতার ডংকা বাজিয়ে যে ব্যবস্থার উদ্ভব, সেখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বলেও কি কিছু অবশিষ্ট আছে? দম্পতির শোবার ঘরে উকি দিয়ে রাষ্ট্র হুকুম ছাড়ে, ছেলে হোক মেয়ে হোক দু’টি সন্তানের বেশি যেন পয়দা করো না, কিন্তু ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও খাদ্যের দায়িত্ব নিতে তার প্রবল অনীহা। গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচনের মচ্ছব চলে, সেখানে ব্যবস্থা এমনি মজবুত যে, কোটিপতি ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই যে, নির্বাচিত হয়। দফায় দফায় গণআন্দোলনে নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী প্রাণ দেয়, রাষ্ট্রের মালিক পাল্টায়, ফায়দা লোটে কোটিপতিরা।...
উপরের অংশটুকুতে বুর্জোয়া সমাজের মধ্যে ক্ষত নিয়ে বলা ইলিয়াসের কথাগুলো ক্লিশে। বহুবার বহু জায়গায় ব্যবহৃত। ইলিয়াসের প্রবন্ধের এই ক্লিশে বিবরণ সাথে ছোটগল্পের একরৈখিক আলো ফেলার জায়গা কমে যাচ্ছে নিয়ে ইলিয়াসের কথাগুলোকে ফরহাদ মজহার তুলোধুনো করেছেন। পাঠক একরৈখিক পাঠে মজে থাকে না বলে ফরহাদের অভিমত।
... আমরা যে গল্প গতকাল পাঠ করেছি, আজ পাঠ করলে তার অনুভূতি উপলব্ধি অর্থবোধ কি একইরকম হবে? যদি হয় তাহলে নিশ্চয়ই সেই পাঠ আসলে একটি রোবটের। হয়তো একই টেক্সট বারবার স্ক্যান করে কোন একটা টেক্সটরীডার সফটওয়্যার দিয়ে পাঠ করলে সেটা হতে পারে। ডিজিট্যাল স্ক্যানার টেক্সট ‘রীড’ করতে পারে। এই ডিজিটাল পাঠকে টেকনিক্যালি বলা হয় ‘স্ক্যানিং’। মানুষের পাঠ, ভাগ্য ভাল ইলিয়াস, স্ক্যানিং নয়। গল্প পাঠ তো… ।
তাহলে যে জটিল মানুষটিকে এই বেয়াড়া সময়ে একহাজার একশোটি সুতো দিয়ে পুতুলের মতো আমরা বাঁধা দেখছি তার গোটাটাই লেখককে তুলে ধরতে হবে এই সংকল্প খুবই ডিফিকাল্ট একটা অঙ্গীকার। ওর পেছনে একটা বুর্জোয়া অহংকার কাজ করে। যেন বা, এটা লেখকেরই দায়িত্ব। কে এই দায়িত্ব দিয়েছে লেখককে? বুর্জোয়া সমাজের এই অহংকার এবং তুমুল ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবোধ লেখকের মধ্যেও অসুখ হয়ে বাসা বাঁধে। সবচেয়ে মুশকিল হল লেখা সম্পর্কে লেখকের নিজের ধারণা যে, লেখকের কাজ হচ্ছে, এই জটিল সমাজের জটিল মানুষটি ও তার সমস্যা ‘যথাযথ’ তুলে ধরা। কতোটুকু আমরা এই জটিল সমাজ আর জটিল মানুষটিকে জানি? এই সমাজের মধ্যে শুধু সাহিত্যের নায়ক-নায়িকারা নয়, তৈরি হচ্ছে খোদ লেখক — নিজে এবং পাঠকগণও। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে সমাজকে যথাযথ ভাবে জানা যায় সেই দাবি খুবই মুশকিলে। কীভাবে তারা, লেখক এবং পাঠক, নিজেরা এই সমাজ দ্বারা প্রভাবিত, নির্ণীত বা তৈরি হচ্ছে তারা নিজেরাও তো জানে না। জানার ক্ষেত্রেও বদল ঘটছে অনবরত। সত্যি কথা, তারা যা লিখছে আর পাঠ করছে তার মধ্য দিয়েই সমাজের একটা ভাষা তৈরি হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন ভাষা, পরিভাষা, প্রতীক, প্রতিমা ইত্যাদি। আবার ওর মধ্য দিয়ে কী প্রতিফলিত হবে আর কী হবে না সেটা নতুন ভাষা, ভাষার বৈশিষ্ট্য, ভাষা ব্যবহারের ধরণ প্রভৃতিও তৈরি করে দিচ্ছে। একটি কেন্দ্রীয় সমস্যাকে ‘একরৈখিক আলোর মধ্যে যথাযথ ভাবে নির্দিষ্ট প্রতিফলন জ্ঞান’ করে লেখা বা পড়ার তত্ত্বটা শুধু বুর্জোয়া অহঙ্কার বলেই, শুধু লেখকের ক্ষমতার উপর অতিরিক্ত আস্থা স্থাপন বলেই ভুল নয়, যে প্রক্রিয়ার মধ্যে সমাজে ও ইতিহাসে লেখক ও পাঠক তৈরি হচ্ছে, সেই প্রক্রিয়াকে ‘একরৈখিক আলোর মধ্যে যথাযথ ভাবে জানা’ সাহিত্যের কাজ নয়। ছোট গল্পের তো নয়ই। ...
ফরহাদ মজহার খুব সূক্ষ্ণ চালে পাঠকের কাছে তাঁর কথা বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন। যেই বুর্জোয়া সমাজের গলদ নিয়ে লেখক কথা বলে সোচ্চার হন, তাঁর নিজের আঙ্গিকে সমাজ বিশ্লেষণ দ্বারা সমাজকে প্রভাবিত করার কথাকে বুর্জোয়া অহংকার চিহ্নিত করে বাতিল করে দিতে চান ফরহাদ মজহার। তিনি আমাদের পাঠাভ্যাসের সাথে রোবট পাঠ কি স্ক্যানিং-এর তুলনা করে জানান- পাঠকের পাঠ করে মানে বোঝা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। ফলে ইলিয়াসের ধারণা অনুসারে, পাঠককে ধ্রুবক ধরা এক ধরণের ভুল। ফরহাদ মজহার অবশ্য এই ভুলটা ঠিকঠাক দেখিয়েছেন। তবে ইলিয়াসের নির্দেশ করা একরৈখিক আলো ফেলাটা ক্ষুদ্রাঙ্গিকে ছিল, ফরহাদ মজহার উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেটাকে শাখা বিস্তার করে পাঠককে শুনিয়েছেন।
সমাজের ক্ষত রোগকে যথাযথ তুলে ধরা, লেখকের দায়বদ্ধতা এগুলো বহুল ব্যবহারে নতুন শোনায় না। দায়বদ্ধতাকে ভুল ফ্যালাসিতে লেখকের বুর্জোয়া অহংকার বলে চালিয়ে দিলে সমালোচকের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন আসে। অন্যদিকে লেখকের দায়বদ্ধতা নাই বলে ফরহাদের সাগরেদদের দৃপ্ত উচ্চারণের ব্যবচ্ছেদ করা হয় না। সেটা বাজারে টেকসই করার নানা ফিকির চলে। সমাজকে গলদকে যথাযথভাবে তুলে ধরতে চান লেখক-এই বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় না। সেখানে রূপক নেই আছে ডিজায়ার।
ইলিয়াসের প্রবন্ধে রাষ্ট্রব্যবস্থার আসল চেহারা দেখা যায়-
... রাষ্ট্রের মাহাত্ম্য প্রচারের জন্যে গ্রামে পর্যন্ত টেলিভিশন পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিসে চাষা ভুষারা বসে বসে টেলিভিশনের পর্দায় এ্যামেরিকানদের সাম্প্রতিক জীবনযাপন দেখে, সেখানকার মেয়েপুরুষ সব তীব্রগতিতে গাড়ি চালায়, রকেট ছোড়ে, তাদের একটি প্রধান চরিত্রের নাম কম্পিউটার, তার কীর্তিকলাপও দেখা যায়। বাড়ি ফিরে ঐ চাষী পায়খানা করে ডোবার ধারে, ঐ ডোবার পানি সে খায় অঞ্জলি ভরে। টেলিভিশনে মস্ত করিডোরওয়ালা হাসপাতাল দেখে হাঁস-মুরগি বেচে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স পর্যন্ত পৌঁছে শোনে যে ডাক্তার সাহেব কাল ঢাকা গেছে, ডাক্তার সাহেব থাকলে শোনে যে, এখানে ওষুধ নেই। তখন তার গতি পানি পড়া দেয়া ইমাম সাহেব। রবীন্দ্রনাথের সময় বাংলার গ্রাম এই-ই ছিলো, তার আগে বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্গদেশের কৃষকের যে বিবরণ লিখে গেছেন, তাতে এই একই পরিচয় পাই। পরে শরৎচন্দ্র কৃষকের ছবি আঁকেন, তাতেও তেমন হেরফের কৈ? তারাশংকর, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনকি সেদিনের সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ যে চাষীকে দেখেছিলেন সে এদেরই আত্মীয়। কিন্তু একটা বড় তফাৎ রয়েছে। যন্ত্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিলো রেলগাড়ি আর টেলিগ্রাফের তার দেখা পর্যন্ত, বড়োজোর রেলগাড়িতে চড়ার ভাগ্য কারো কারো হয়ে থাকবে। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটেছে আরো পরে। বাংলাদেশের নিভৃত গ্রামের বিত্তহীন চাষী বিবিসি শোনে টেলিভিশন দেখে, জমিতে শ্যালো মেশিনের প্রয়োগ সম্বন্ধেও সব জানে। কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহার তার জীবনে আর সম্ভব হয় না। টেলিভিশনের ছবি তার কাছ রূপকথার বেশি কিছু নয়। রূপকথা বরং অল্পক্ষণের জন্যে হলেও তার কল্পনাকে রঙিন করতে পারতো, একটা গল্প দেখার সুখ সে পেতো। গান আর গাঁথার মতো রূপকথা শোনাও তার সংস্কৃতি চর্চার অংশ। পংখীরাজ তো কল্পনারই ঘোড়া, এর ওপর সেও যেমন চড়তে পারে না, গ্রামের জোতদার মহাজনও তাকে নাগালের ভেতর পায় না। কিন্তু টেলিভিশনে দেখা জীবন তো কেউ কেউ ঠিকই ভোগ করে। ঢাকা শহরের কেউ কেউ এর ভাগ পায় বৈ কি। তাদের মধ্যে তার চেনাজানা মানুষও আছে। এই দুই দশকে শ্রেণীর মেরুকরণ এতো হয়েছে যে, গ্রামের জোতদারের কি সচ্ছল কৃষকের বেপরোয়া ছেলেটি ঢাকায় গিয়ে কি করে অনেক টাকার মালিক হয়ে বসেছে, সে নাকি এবেলা ওবেলা সিঙ্গাপুর হংকং করে। চাষীরা নিজেদের কাছে তাই আরো ছোটো হয়ে গেছে। তবে কি ঐ জীবন যাপন করতে তার আগ্রহ হয় না ? না, হয় না। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের স্পৃহাকে সংকল্পে রূপ দিতে পারে যে রাজনীতি তার অভাব আজ বড়ো প্রকট। রাজনীতি আজ ছিনতাই করে নিয়েছে কোটিপতির দল। এদের পিছে পিছে ঘোরাই এখন নিম্নবিত্ত মানুষের প্রধান রাজনৈতিক তৎপরতা। এখনকার প্রধান দাবি হলো রিলিফ চাই। এনজিওতে দেশ ছেয়ে গেলো, নিরন্ন মানুষের প্রতি তাদের উপদেশ: তোমরা নিজের পায়ে দাঁড়াও। কি করে?–না, মুরগি পোষ, ঝুড়ি বানাও কাঁথা সেলাই করো। ভাইসব, তোমাদের সম্পদ নেই, সম্বল নেই, মুরগি পুষে ডিম বেচে, ঝুড়ি বেচে তোমরা স্বাবলম্বী হও। কারণ সম্পদ ওরা হাইজ্যাক করে নিয়ে গেছে, তা তাদের দখলেই থাকবে, ওদিকে চোখ দিও না। রাষ্ট্রক্ষমতা লুটেরা কোটিপতিদের হাতে, তাদের হাতেই ওটা নিরাপদে থাকবে, ওইদিকে হাত দিতে চেষ্টা করো না। তাদের মানুষ হয়ে বাঁচবার আকাঙ্ক্ষা, অধিকার আদায়ের স্পৃহা এবং অন্যায় সমাজব্যবস্থা উৎখাত করার সংকল্প চিরকালের জন্যে বিনাশ করার আয়োজন চলছে। নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী তাই ছোটো থেকে আরো ছোটো হয়, এই মানুষটির সংস্কৃতির বিকাশ তো দূরের কথা, তার আগের অনেক অভ্যাস পর্যন্ত লুপ্ত হয়, কিন্তু নতুন সংস্কৃতির স্পন্দন সে কোথাও অনুভব করে না।...
ফরহাদ মজহার ইলিয়াসের এই কথাগুলোকে নিয়ে আলোচনা করেছেন। কৌশলে এড়িয়ে গেছেন এনজিও প্রসঙ্গ। এনজিও মারফত স্বল্পকালীন দারিদ্রকে দীর্ঘমেয়াদী করার পাঁয়তারা আমলে নেন নি। ফলে ফরহাদ কোন নন্দনতত্ত্ব দিয়ে তাঁর এনজিওকে সামাল দিতেন সেটা আর দেখার সুযোগ হয় না।
ফরহাদ মজহারের মনে হয়েছে ইলিয়াস মার্কসবাদী লেনিনবাদীদের পুরানো কাসুন্দি ঘাঁটছেন। অথচ তাঁর প্রবন্ধে একই ঘাঁটাঘাঁটি। তবে অনুবাদ করা ভাষার পরিবর্তে ব্যবহার করেছেন নিপাট গদ্য। ফরহাদ মজহার সুযোগ পেলেই এই কথা বলেন- ‘টেকনোলজি মানেই ভাল, এটা হতে পারে না।’ এর বিপরীতে টেকনোলজি মানেই খারাপ এই অনুসিদ্ধান্ত দাঁড় করান তিনি। লাঙল সরিয়ে দেন, কৃষকের মেহনত বাড়াতে উদ্যোগী হন। এক ধরণের দাসত্ব সামাজিক ব্যবসা নাম নিয়ে কৃষককে দীর্ঘস্থায়ী দরিদ্র করে রাখে।
কথাসাহিত্যিক ইলিয়াসের প্রবন্ধে আবেগ আছে। বুর্জোয়া সমাজের প্রতি ক্ষোভ টানটান উত্তেজনায় ক্লিশে ভাষাতে উপস্থাপন আছে। তিনি সরল গতানুগতিক গদ্যে ছোটগল্পের সীমানা নিয়ে তাঁর ভাবনা জানিয়েছেন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের আশা ও শুনিয়েছেন। অন্যদিকে ফরহাদ মজহার তাঁর গদ্যে সমালোচনা করতে গিয়ে পাঠককে ইলিয়াসের অর্থকে অনর্থ করে শুনিয়েছেন। এমনকি ইলিয়াসের কোনো উপন্যাস আলোচনা ছাড়াই উপসংহার টেনেছেন, ইলিয়াস ভালো ঔপন্যাসিক নন। প্রবন্ধের ফাঁক খুঁজতে গিয়ে আচমকা এই ঘোষণা থেকেই ফরহাদ মজহারের মন্দ উদ্দেশ্য টের পাওয়া যায়।
[পরের পর্বে সমাপ্য]
সূত্র
১। ইলিয়াসের প্রবন্ধ - বাংলা ছোটগল্প কি মরে যাচ্ছে?
২। ফরহাদ মজহারের প্রবন্ধ -ইলিয়াসের গল্প, মেডিকেল তত্ত্ব ও টেকনোলজি সংক্রান্ত ভাষ্য
৩। At one stage the Saturday Evening Post was paying Fitzgerald $4,000 per story...
মন্তব্য
ছোটগল্প নিয়ে ইলিয়াসের শঙ্কা পড়েছিলাম আগেই, কদিন আগেই পড়লাম মজহার সাহেবের প্রবন্ধটি।
ইলিয়াসের শঙ্কা, এককথায় বলা যায় অমূলক নয়। ইলিয়াস হরবখতই কাহিনির নামে কেচ্ছা ফাঁদার কোশেশকে বাঁকা নজরে দেখেছেন, অনেক লেখকই কালক্রমে মূলস্রোতের খপ্পরে পড়ে নির্মেদ ক্লিশে রচনায় গা ভাসিয়ে দিয়েছেন, তা নিয়েও অনেক সময় খেদ প্রকাশ করেছেন। এই খেদের কারণটি ইলিয়াসের লেখাটি পড়লে আরো পষ্ট হয়। গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেওয়ার প্রবণতাকে ইলিয়াস কখনোই সুনজরে দেখেননি, তাই ছোটগল্প নিয়ে তার হাহাকারের ব্যাপারে একটা অনুমিত সিদ্ধান্তে পৌছানো যায়। কিন্তু সেই সূত্র ধরেই একটা প্রশ্ন অবধারিতভাবে চলে আসে, ইলিয়াসের এই আশঙ্কা কি পুরোপুরি সঙ্গত?
এ সওয়ালের জবাবটা অবশ্য আপনিই দিয়েছেন -
ইলিয়াসের লেখাটি কদাচিত মোটাদাগের মনে হয়েছে। বুর্জোয়া সমাজের প্রতি তার গাত্রদাহের প্রকাশ এখানে অবিদিত নয়, কিন্তু সেই ঔরসজাত ক্ষোভের স্বতঃসিদ্ধ সিদ্ধান্ত হিসেবে ছোটগল্পের মৃত্যুর সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া কতটুকু সমীচীন তা নিয়ে আমি খানিকটা সন্দিহান। আরেকটি জায়গায় আমার খটকা- ইলিয়াস এই সংকট থেকে উত্তরণের কোন সুনির্দিষ্ট পথ বাতলাতে পারেননি বলেই আমার মনে হয়। লিটল ম্যাগাজিনের ওপর ভর করে তিনি আশায় বুক বাধতে চান, কিন্তু তার কোন সুনির্দিষ্ট নিশানা তার লেখায় খুঁজে পাওয়া যায়না।
ফরহাদ মজহারের লেখাটি নিয়ে বেশ কিছু কথা বলার আছে, আপাতত বলি লেখাটায় একটা প্রচ্ছন্ন ধোঁয়াশা সৃষ্টির চেষ্টা লক্ষণীয়। ইলিয়াসের লেখাটিকে ভিন্নখাতে চালিয়ে দিতে তার চেষ্টা নজর কাড়ে বৈকি। বাকি কথা পরে হবে খন।
ভালো কথা, কালি ও কলমের ঈদ সংখ্যায় হাসান আজিজুল হকের -ছোটগল্প আছে ,নেই লেখাটি পড়েছেন ?
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
মজহারের প্রতিটি রচনাই ধোঁয়াশা ছাড়া আর কিছুই না। একটা কথা বলতে বলতে হুট করে সম্পর্কহীন আরেকটা কথা বলে ফেলেন। মনে হয় তিনি গভীর কোনো জ্ঞানের উন্মেষ ঘটাচ্ছেন। আসলে খেয়াল করলেই দেখা যায়--এ সকলই তার অবিদ্যা এবং গরল পাঠ। পাঠকের মনে গরল ঢেলে দিচ্ছেন। পাঠে বিবমিষা হয়।
কিন্তু তার রচনা পড়ে একটা জিনিস মনে হয়েছে--এ লেখাগুলো আসলে তরুণ নাদান ছেলেমেয়েদের কুহক সৃষ্টির পয়তারা মাত্র। তারা দেখে এ নামগুলো আগে শোনে নাই-- ফুকো, দেরীদা, মার্কস, এঙ্গেলস, ট্রটস্কি, তালাল আসাদ--শ্রেণী বিচারের কথা আছে। এ সময়ের কর্তব্য বলে একটি বাক্য আছে--সাম্রাজ্যবাদ, উপনবেশবাদ, আধিপত্যবাদ, মার্কিন-ইহুদি-ভারতয়ি অক্ষশক্তি, লালন, ভাবের কথা। একবারে আতেঁল হওয়ার কায়দা কানুন।
কিন্তু একটা বিষয় কিন্তু ঠিক--সাধারণ পাঠক ফরহাদের রচনা কিন্তু বোঝে না। আমার বুঝদার লোকজন গীবত বিবেচনা করে এড়িয়ে যায়। এই যা বাচোঁয়।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
সমালোচনা সাহিত্যে ফুকো লাঁকা দেরিদা হাইডেগার ফাঁনো সায়ীদ এঁদের কথা আসবেই। সাহিত্যে যারা পড়াশোনা করছেন তাদের দার্শনিকদের তত্ত্ব নিয়ে অনেক কোর্স পড়তে হয়। দার্শনিকেরা মানুষের অচেতন ভাব নিয়েই অনেক কিছু ভেবে গেছেন। সাহিত্য মানুষের অচেতনের একটা অংশ। সাহিত্য আলোচনায় দর্শন বাদ দেয়া তাই অসম্ভব।
ফরহাদ মজহার বা অন্যান্যদের লেখায় ফুকো দেরিদা আসলেই সেটা জ্ঞান কপচানি হয়ে যাবে তা নয়।
সমস্যা অন্য জায়গায়। ফরহাদ মজহার বা তাঁর ভাবশিষ্য মিডিয়ার তরুণ লেখকেরা ফুকো লাঁকা দেরিদা হাইডেগার ফাঁনো সায়ীদকে কাজে অকাজে দেদার ব্যবহার করেছেন। করে চলছেন। উত্তরাধুনিকতার সাথে। বুঝে বা না বুঝে লেখার ওজন বাড়াতে। এই গোত্রের বেশির ভাগ লেখকদের পেছনে অশ্লীল কিছু লেজ দেখা গেছে। আর সেকারণেই ঐ যে ঐ লোক সাম্প্রদায়িকতা আর প্রতিক্রিয়াশিলতার লেজ লুকাতে ফুকো দেরিদা লাঁকা মারতে এসেছে বলে শুভবুদ্ধির লোকজন পালায়।
ফুকো লাঁকা দেরিদা হাইডেগার ফাঁনো সায়ীদদের নিয়ে সহজপাচ্য আলোচনা প্রয়োজন। বাংলায়।
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
আগ্রহোদ্দীপক বিষয়। শুরুতে ভাবছিলাম, মজহার ও ইলিয়াসের মধ্যে যোগসূত্রটা কোথায় থাকতে পারে!
আগ্রহ নিয়ে পড়ছি।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
ইলিয়াসের প্রবন্ধ কোন পড়ি নাই......তাই বুঝতে সমস্যা হচ্ছে......
ছোট গল্প কি আসলেই লোপ পাচ্ছে নাকি? সচলেই তো ভালো ভালো লেখা পাই মাঝে মাঝেই......বরং নতুন ভালো বাংলা উপন্যাস শেষ কবে পড়েছি মনে পরে না......
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
পড়ছি
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
শীরনামটা পছন্দ হলো না।
ফরহাদ একটা অতিপ্রাচীন ধর্মগ্রন্থের নতুন প্রচারক। যেখানে আশিভাগ মানুষ সেই ধর্মগ্রন্থের স্তুতিতে সন্তুষ্ট। কাজটা কঠিন কিছু নয়। প্রচলিত চিন্তার সাথে নিজের ভক্তিমত্তা যোগে ওয়াজ করেন মাওলানা ফরহাদ।
অন্যদিকে ইলিয়াসের প্রবন্ধে রাষ্ট্রব্যবস্থার আসল চেহারা দেখা যায়-(প্রবন্ধের বাকী অংশ কপি করলাম না) এই দৃষ্টির জন্যই ইলিয়াস, ইলিয়াস। আপনাদের বিবেচনায় তা ক্লিশে হলে ক্ষতি নেই।
ছোট গল্প সম্পর্কে ইলিয়াসের আশংকা এখন বাস্তব মনে হচ্ছে। বিশেষ করে ইউরুপে। হতে পারে বড় বই পড়া মানে বেশী জ্ঞানী লোক বা পাঠক, এই ধারণার বশবর্তী হয়ে হলেও ছোটগল্প বা কবিতার চেয়ে অন্ততঃ এখানে উপন্যাসই বেশী প্রকাশ এবং পাঠ হয়।
একটা ব্যাপারে সংকিত ছিলাম; ফরহাদীয় শানেনযুল নতুন পাঠককে কি ভাবে কতটুকু প্রভাবিত করবে?
একজন তথাকথিত প্রগতিশী তরুণীর সান্নিধ্যে সে সংকাটা দূর হয়েছে। তাদের দেখে সত্যিই প্রগতিশীল মনে হয়। ইউরুপিয়ান পোষাক। হ্যান্ডশ্যাক করে ছেলেদের সাথেও। আড্ডয় বিয়ার টিয়ার তেমন ব্যাপার না। কিন্তু একটু আলোচনায় গেলেই আসল চেহারাটা বের হয়। শুরু হয় গুরু ফরহাদ কত প্রগতিশীল। তার পর আসে ইসলাম কিন্তু একটা বৈজ্ঞানিক ধর্ম। নতুন পরিচয়ে বেশী কিছু বলে অভদ্রতা না করে চুপ করে থাকি। কথা ঘুরে। আসে মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। তখন শুনি শেখ মুজিব কিন্তু রাজাকারদের ক্ষমা করে গেছে। জানেন তো; তিন হাজার বলতে গিয়ে মুজিব ভুলে তিরিশ লাখ শহীদ কইয়া ফালাইছে। এরাই ফরহাদের মুরিদ। এই ধরণের কথাবার্তা শুনলে আমার বাথরুম পায়। আমি উঠে যাই।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
লেখাটা এই শিরোনামে ফেসবুকে নোট হিসেবে লিখেছিলাম। ট্যাগ ও করেছিলাম বেশ কয়েকজনকে। শিরোনাম নিয়ে কেউ আপত্তি না করাতে ভাবলাম চালানো যায়।
ক্লিশে শব্দচয়ন আমার। ক্লিশে কথার মাঝে জিনিস থাকলে ক্ষতি নাই।
আমি মনে করি, ছোটগল্প ভালোমতোই টিকে থাকবে। ইদানীং আম্রিকায় ফ্ল্যাশ ফিকশন বেশ জনপ্রিয়। আর ব্লগানো জিনিস পাব্লিক খাচ্ছে কারণ তার টুকুন সাইজ।
ফরহাদ মজহার তরুণ সম্প্রদায়ের একাংশকে প্রভাবিত করে চলছেন। মগজধোলাই। উনার চিন্তা আর ভাবালুতার ফাঁকগুলো বের করে করে দেখানো প্রয়োজন।
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
পড়ছি।
ছোটগল্প প্রসঙ্গে ইলিয়াসের ভাবনার সাথে সহমত নই।
ফমার মতো মকারের জন্য ইলিয়াসকে শেষপর্যন্ত বাতিল করাই মিশন।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আমার মনে হয়, গ্রন্থপাঠবিমুখ কিছু কবিনামযশোপ্রার্থী রামছাগল ফরহাদ মগবাজারের দরগায় গিয়ে চারানা আটানা দিয়ে তাবিজ কিনে কোমরে বাঁধে, এবং দরগা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ফুকো দেরিদা লাকা ফানো জপে জপে একটা গেরামভারি ভাব নেয়ার চেষ্টা করে। এদের কানে ধরে যদি প্রশ্ন করেন, কোনো আলোচনায় দেরিদা বা ফানো কীভাবে প্রাসঙ্গিক, এরা কোনো জবাব দিতে পারবে না। ফরহাদ মগবাজার নিজে একটা অর্ধশিক্ষিত মূর্খ, তার ল্যাংবোটবৃন্দ সেই মূর্খের মুরিদ। এরাই বাংলাদেশে চোপার জোরে কবি ও সাহিত্যসমালোচক হয়ে ওঠার জন্যে বাল ছিঁড়ে ছিঁড়ে প্রকাণ্ড আঁটি বাঁধার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
মগবাজার সাহেবের সমালোচনাটা আমি পড়েছি। ওটা সচলে দিলে মডারেশন পার হতো বলে মনে হয় না, বালছাল কথা আর ঈর্ষার দুর্গন্ধ ছাড়া ওটাতে উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। মগবাজার সাহেবের চামচা সাহিত্যকেরানি ও কবিচরিত্রে অভিনেতা ব্যর্থ রাইছু এই গুমুতকে তশতরীতে করে নিয়ে সাহিত্য সমালোচনা সিল মেরে তার আর্টস পাতায় টাঙিয়ে রেখেছে।
লেখা এবং মন্তব্য সকল আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। পরের পর্ব পড়বার আশা রাখি...
ছোটগল্প প্রসঙ্গে আমার নিজের মনে হচ্ছে ছোটগল্প ভালোমতই টিকে আছে- আরো বহুদিন থাকবেও। কিন্তু তাদের ধার ক্রমশঃ বিলুপ্তির দিকে...
_________________________________________
সেরিওজা
আন্নেরা গল্পলেখকরা ধার দিয়া লেখেন না ক্যান?
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
পরের পর্বের অপেক্ষায়
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনার এই পোষ্টটা পড়ার পর আমার ফরহাদের লেখাটা পড়াকালীন যে বিরক্তি ধরে ছিল তার কিছুটা চুলকানি কমেছে। ফরহাদের ঐ লেখাটার কোন রূপ মান-মন-মর্যাদা আমি পাই নাই। মাঝে মাঝে আকথা-কুকথা বলার মতো বুড়ো মস্তিষ্কে কত'কিই তেনার বলতে ইচ্ছা করে। যাই হোক, অনেক দিন থেকেই ধরে ধরে ব্যপ্ত পথ-ঘাট-জলা-জলঙ্গি পার হয়ে আমি ইলিয়াসের গল্প-উপন্যাস নিয়ে একটা লেখা কোনমতে দাঁড় করিয়েছি। ভাবছি তা হয়ত এই সচলেও দেব। আশারাখি থাকবেন...
আপনার দ্বিতীয় পর্বের জন্য কত্তদিন অপেক্ষা করবো?
অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আমার লিখতে একটু সময় লাগবে। আপনার লেখা পোস্ট করে দিন তাড়াতাড়ি।
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
ভাল লেগেছে । পরের লেখার জন্য অপেক্ষা করছি ।
নতুন মন্তব্য করুন