এবারের শারদীয় দেশে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছাপানো উপন্যাসের নাম ‘বসুধা আর তাঁর মেয়ে’। এক টানে পড়ে ফেলার মতো উপন্যাস। পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তের কাছ থেকে মাত্র এগারো মাইল দূরের কবুতরহাটি গ্রাম। সেখানে থাকে বসুধা আর তার পরিবার। তাঁর স্বামী বীরেশ্বর, কন্যা জুলি আর পুত্র রণ। উপন্যাসটিতে জুলির কথা শিরোনাম দিয়ে তিন জায়গায় উত্তম পুরুষে জুলির কথা বলা হয়েছে।
শুরুতে জুলির কথা। নয় বছর সাত মাস বয়সের জুলির তলপেটে তীব্র ব্যথা। মার ঘরে ছুটে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিতে গিয়ে পাশের ছাদে চোখ পড়ে। সেখানে দুটো ছায়ামূর্তি। একজন মা, অন্যজন একজন পুরুষ। বাবা নয়, কারণ বাবা তখন দিল্লীতে। চুমো খেতে খেতে এরা ধপাস করে পড়ে গেল। জুলি আর দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের ঘরে ফিরে এলো। জুলির ঊরুর কাছে রক্ত। শৈশব পেরিয়ে তার কৈশোরে প্রবেশ।
ডিসেম্বর মাস। ১৯৭১। কবুতরহাটির পাশেই বাংলাদেশের সীমান্তে তুমুল যুদ্ধ চলছে। বসুধার স্বামী বীরেশ্বর সেই সময়ে মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্সের জয়েন্ট সেক্রেটারি। মিতভাষী। ইন্দিরা গাঁধীর বিশেষ প্রিয়পাত্র। কবুতরহাটির ত্রাণশিবির বেশ সুপরিচালিত। চালাচ্ছেন বীরেশ্বরের স্ত্রী বসুধা। সবার সুধাবউদি। এর মধ্যে পাকিস্তানি এক তরুণ খানসেনা ধরা পড়ে যৌথবাহিনীর হাতে। তরুণ সেই ছেলেকে দেখে বসুধার মায়া হয়। মুক্তিবাহিনীর ছেলেদের কাছ থেকে প্রায় জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে নিজের বাসায় নিয়ে আসেন। প্রাণে বাঁচান। মুক্তিবাহিনীর ছেলেদের সাথে বসুধার ভালো সম্পর্ক ছিল। বসুধা জোর করাতে তারা আর বাধা দিতে পারেনি।
জহির স্বপন মনিরুল –এই তিনজন মুক্তিবাহিনীর ছেলেদের সাথে বসুধার পরিচয় হয়। এদের সাথে কথাবার্তা, পাকিস্তানের তরুণ খানসেনাকে বাঁচানো, মাঝে মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়ের আপডেট বর্ণনা, ইন্দিরা গাঁধীর শরণার্থী পরিদর্শন এসব বর্ণনার সাথে সাথে উপন্যাস এগোতে থাকে। বর্ণনা করতে গিয়ে এক দুই জায়গায় পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান তালগোল পাকিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সেনাপতির ডাকে সাড়া দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অস্ত্রত্যাগ এবং আত্মসমর্পণে রাজি হল। (সুনীল ১৪১৭: ৪৩৪)
এখানে পূর্ব পাকিস্তানের সেনাবাহিনী না বলে পাকবাহিনী বললে ঠিক লেখা হতো।
স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবের অনুপস্থিতেতে তাজউদ্দিন, নজরুল ইসলামকে ভারত সরকার বীরেশ্বর সহ দশ জনের একটা প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশ পাঠায়। বীরেশ্বর স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসেন। সেই সময়ের কিছু বর্ণনা।
ঢাকায় সম্পূর্ণ অরাজকতা চলছে। শেখ মুজিব নেই, তাঁর নামের ম্যাজিকে যে কাজ হত, তা হচ্ছে না বলেই কেউ কাউকে মানছে না। মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় রাস্তায় উল্লাস করছে, যখন তখন তারা রাইফেল থেকে গুলি চালাচ্ছে আকাশের দিকে। (সুনীল ১৪১৭: ৪৩৪)
এটাও বোঝা যায় না যে, এখনও এ দেশে রয়েছে আত্মসমর্পণের পর ভারতীয়দের হাতে বন্দি নব্বই হাজার পাক সৈন্য এবং তাদের সেনাপতি। তারা নিরস্ত্র। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের কলকাতা পাঠানোর ব্যবস্থা করে হচ্ছে, না হলে মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যে-কোন সময় তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। ভারতীর সৈন্যদেরও বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে ফিরে যেতে বলা হচ্ছে দেশে। (সুনীল ১৪১৭: ৪৩৫)
একদিন খাবার টেবিলে বীরেশ্বর-রণ-জুলি-বসুধা কথাবার্তা বলে বাংলাদেশ নামকরণ নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা কী বাঙালি নাকি ইন্ডিয়ান?
রণ বলল, বাবা, আগে তো একটাই বাংলাদেশ ছিল। তারপর ভাগ হয়ে গেল। তারপর ওরা পুরো বাংলাদেশ নামটা নিয়ে নিল কেন?
বীরেশ্বর বললেন, ঠিক বলেছিস। আমিও সেই কথাটা ওদের বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম। আগে ওরা বলত জয় বাংলা। সেই স্লোগান দিয়েই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। অনেকেই এই দেশটার নামও বলত, জয় বাংলা। তারপর কী করে যেন বাংলাদেশ হয়ে গেল। আমি বললাম, তোমরা আমাদের কিছু জিজ্ঞেস করলে না, কিছু না। পশ্চিম বাংলার কথা ভুলে গেলে?
বসুধা বললেন, এখন বদলানো যায় না? বাংলাদেশ-এর বদলে জয় বাংলা, শুনতেও বেশ। তাহলে বাংলাদেশ নামটা থাকবে সবার জন্য।
বীরেশ্বর আফসোসের সুরে বললেন, আর কই বদলানো যাবে? যা ইউফোরিয়া চলছে, যেরকম মাতামাতি, এখন ওসব কথা উচ্চারণই করা যাবে না। তবে বদরুদ্দোজা একটা দারুণ কথা বলে আমাকে জব্দ করে দিয়েছে। ও বলল, দেশ যখন ভাগ হয়, সেই উনিশশো সাতচল্লিশ সালে আমরা তো বাঙালি ছিলাম না। আমরা ছিলাম পাকিস্তানি, বা পূর্ব পাকিস্তানি। আমাদের বাঙালি হতে সময় লেগেছে। সেই সময় আপনারা আপনাদের রাজ্যটার নাম পশ্চিম বাংলা রাখলেন কেন? তখন তো আর কাগজে-কলমে পূর্ব বাংলা বলে কিছু ছিল না। আপনারা যদি রাজ্যটার নাম পশ্চিম বাংলার বদলে বাংলাদেশ রাখতেন, কেউ আপত্তি করত না।
(সুনীল ১৪১৭: ৪৩৭)
পশ্চিম বাংলার পরিবর্তে বাংলাদেশ রাখা হলে আপত্তি হতো না এটা বলা মুশকিল। খোদ ভারত সরকার বেঁকে বসতো। কারণ দেশ শব্দটি নামের পেছনে জুড়তে হলে আগে একটা দেশ হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে হবে। নীরদ সি চৌধুরী সাপ্তাহিক দেশ-এ তথাকথিত বাংলাদেশ উল্লেখ করায় বাংলাদেশে দেশ প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখানে উল্লেখ করা কিছু কথা বিশেষত বাংলাদেশ নাম জবরদখল কিংবা বাংলাদেশের নাম ‘জয় বাংলা’ রাখার পরামর্শ সম্পর্কিত কথার টোন সাধু নয়। বাঁচোয়া এটা উপন্যাস।
এরপর জুলির বেড়ে ওঠা। বিয়ে করা। উপন্যাস উল্লেখ করার মতো অংশ শেষেরটুকু। জুলি মায়ের সেই চুম্বনদৃশ্য মাথা থেকে সরাতে পারেনি। মার কাছ থেকে তার দূরত্ব তৈরি হওয়া শুরু সেই থেকে। চুমো খাবার ঘটনার তো একটা সুরাহা প্রয়োজন। জুলির বয়ানে উপন্যাসের শেষ অধ্যায়ে সেটা জানা যায়। জানা যায় বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর একটা ছেলে স্বপনের সাথে বসুধার সেই ঘটনা ঘটে। কেন সেটা হর্ষ দত্তের উপন্যাস ‘ময়ূরাক্ষী তুমি দিলে’র সাথে খাপে খাপে মিলে। বসুধা নিজের মেয়ে জুলিকে অকপটে সেই ঘটনার কথা বলেন। নিজে থেকেই।
হাত ধরে ব্যাকুলভাবে বলল, ভাবী, কালই আমাদের খুব বড় একশনে যেতে হবে, খুব সম্ভব বেঁচে ফিরব না, আপনার সাথে আর দেখা হবে না। মরে যাব, দেশের জন্য প্রাণ দিতেই তো এসেছি, তাতে দুঃখ নেই, কিন্তু আমার এই একুশ বছর বয়েসে আমি কোনো মেয়ের সঙ্গে মিশতে পারি নি, চুমুটুমুও খাই নি, মনের কথাও জানি না। এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব, নারী শরীরের যে মাধুর্য তা কিছুই জানা হবে না? জানি, এরকম্ভাবে আসা খুব অন্যায় … আমি আপনার দার চাইছি, দার চাইছি, একটি বার … ওর গলায় ঐ যে-ব্যাকুলতা, সেটা একেবারে ভেতর থেকে উঠে আসা। (সুনীল ১৪১৭: ৪৬৯)
বসুধা সবিস্তারে বলেন স্বপনের সাথে কী হয়েছিল। চুমু আর শরীর জড়িয়ে ধরার বাইরে সেটা যায়নি। যৌবনকালে লেখা মাস্টারপিস ‘যুবক যুবতীরা’ উপন্যাসের লেখক সুনীল ছিয়াত্তর বছর বয়সে লেখা উপন্যাসে ক্লিশেত্ব কাটান না একেবারেই। বসুধাকে বাংলাদেশের যুবকের কাছে পুরো উন্মোচিত করেন না। পুরুষ সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ছলাকলা করে নারীর সঙ্গ পেতে চায়। নারী মধ্যে মধ্যে সেটাতে বশীভূত হয়ে ধরা দেয়। যেমন ধরা দিয়েছে হর্ষ দত্তের ময়ূরাক্ষী। কিছুটা পরাস্ত হয়েছে সুনীলের উপন্যাসের বসুধা।
ধরা দেয়াতে সমস্যা নাই। কিন্তু সমস্যা টোনে। আমি নিজে সাধারণ বুদ্ধিতে বুঝি- দুইজন পুর্ণমনস্ক নর নারী পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহিত অবিবাহিত যেকোনো অবস্থায় যেকোনো সময়ে মূল্যবোধ সংস্কার এইসব তথাকথিত মামুলি এণ্ডাপাণ্ডায় পাত্তা না দিয়ে মিলিত হতে পারে। এখানে পাপের কিছু নেই। পূণ্যের কিছু নেই। এর আনুষঙ্গিকে কিছু ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। এর বেশি কিছু নয়। সুনীল হর্ষ দত্তেরা উপন্যাসে সেইদিকে যান না। হর্ষ দত্তের উপন্যাসের নায়িকা যখন জানায় কোন পরিস্থিতিতে সেই ছেলের সাথে তার সঙ্গম করতে হয়েছে, তখন তার প্রেমিক সেটা মেনে নেয়। অর্থাৎ সঙ্গম অবৈধ বলে (জোরাজুরি ব্যাতিরেকে) ঘোষণা করা হলে সেটা সঠিক প্রমাণ করার দরকার পড়ে। আর বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সেটা জায়েজ হয়।
সুনীল পড়ুয়া লেখক। উপন্যাসের নায়িকারাও আধুনিক। পড়ুয়া। ওরহ্যান পামুকের স্নো দেখা যায় বসুধার টেবিলে। জুলি তার মাকে জিজ্ঞেস করে রাসেলের আত্মজীবনী পড়েছে কিনা। বসুধা জানায় ওটা পড়া হয় নি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রাসেলকে টেনে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত আরো পোক্ত করেন।
রাসেল যখন ছোট, ওর এক দাদা ছিল, তার ছিল এক প্রাইভেট টিউটর। তারও বয়স বেশি না। ছোকরা মতন। সে খকর খকর করে কাশত। কিছুদিনের মধ্যেই জানা গেল, তার টিবি হয়েছে। ওরা বলত কনজামপ্শান। এ রোগের তখন কোনও চিকিৎসা ছিল না। মৃত্যু অবধারিত। ওর খুব এডভ্যানসড্ অবস্থা, বড়জোর একবছর আয়ু। ওই মাস্টারটিকে নিয়ে রাসেলের মা-বাবা খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। ওরা দুইজনেই আলোচনা করতে লাগলেন যে, ছেলেটি যদি এর মধ্যে বিয়ে করে, তা হলে সর্বনাশ হবে। ওর বউ আর ভবিষ্যৎ সন্তানদের মধ্যেও এই রোগটই ছড়াবে। বিয়ে না করেও যদি বিভিন্ন বান্ধবীর সাথে সহবাস করে, তা হলেও এই একই বিপদ। আবার, ওর যে ক’মাস আয়ু আছে, সেই সময়টায় কোনও মেয়ের সঙ্গ পাবে না? ওকে বারণ করলেই বা ও শুনবে কেন? সারা দেশে তখন এই রোগ নিয়ে আলোড়ন চলছে। একমাত্র উপায়, কোনও নারী যদি সেই সব জেনেশুনে এই কয়েক মাস ওর শয্যাসঙ্গিনী হয়। কোন সেই নারী? রাসেলের বাবা তাকালেন তাঁর স্ত্রীর দিকে, তিনি বললেন, আমি রাজী। আমরা তো অনেকটাই জীবন ভোগ করেছি, এখন চলে গেলেও ক্ষতি নেই। (সুনীল ১৪১৭: ৪৭০)
সুনীল এই ঘটনা বর্ণনায় বেশ গালগল্প করেছেন। যথেচ্ছ স্বাধীনতা নিয়েছেন। রাসেলের আত্নজীবনীতে একটা প্যারায় এই ঘটনার উল্লেখ আছে।
They obtained for my brother a tutor, D. A. Spalding, of considerable scientific ability – so at least I judge from a reference to his work in William James’s Psychology.1 He was a Darwinian, and was engaged in studying the instincts of chickens, which, to facilitate his studies, were allowed to work havoc in every room in the house, including the drawing-room. He himself was in an advanced stage of consumption and died not very long after my father. Apparently upon grounds of pure theory, my father and mother decided that although he ought to remain childless on account of his tuberculosis, it was unfair to expect him to be celibate. My mother therefore, allowed him to live with her, though I know of no evidence that she derived any pleasure from doing so. This arrangement subsisted for a very short time, as it began after my birth and I was only two years old when my mother died. My father, however, kept on the tutor after my mother’s death, and when my father died it was found that he had left the tutor and Cobden-Sanderson, both atheists, to be guardians of his two sons, whom he wished to protect from the evils of a religious upbringing. (Russell 1975: 7)
টিউটর ছোকরা মতোন-এই তথ্য সুনীল কোথা থেকে পেলেন? সেই গৃহশিক্ষক, রাসেলের মা আর বাবার জীবনকাল দেখি।
গৃহশিক্ষক D. A. Spalding (1841–1877 , মতান্তরে 1840–1877)
রাসেলের মা Katharine Louisa বা Kate বা Viscountess Amberley (1844–1874)
রাসেলের বাবা John Russell, Viscount Amberley ( 1842 – 1876)
গৃহশিক্ষককে সুনীল ছোকরা বানিয়েছেন, অথচ তিনি বয়সে রাসেলের পিতা-মাতার চেয়ে কিছুটা বড়। বেঁচেছেন ও বেশিদিন। ছত্রিশ কিংবা সাইত্রিশ বছর। রাসেলের আত্মজীবনীর সময়কাল অনুসারে এই সম্পর্ক শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালে। আর ঐ শিক্ষক মারা যাবার আগেই রাসেলের মা রোগে মারা যান। সম্পর্ক শুরুর পরে সেই গৃহশিক্ষক আরো পাঁচ বছর বাঁচেন। এক বছর নয়। রাসেলের মা মারা যান মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে। সুনীলের উপন্যাস পড়ে পাঠক মাত্রই বিভ্রান্ত হবেন রাসেলের বাবা-মায়ের বয়েস নিয়ে। বসুধার সাথে যুবক স্বপনের বয়স পার্থক্য মিলিয়ে একটা তুলনা হয়তো করবেন পাঠক। অথচ বইপত্র ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে সুনীলের কথা মিলছে না। ভালোমতোন গবেষণা করে এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে পারতেন সুনীল। সেই সময় তাঁর কই?
রাসেলের মায়ের সাথে ঐ গৃহশিক্ষকের সম্পর্ক কিছু বইতে নথিতে উল্লেখ আছে প্রণয় হিসেবে। যা তাঁর স্বামী মেনে নিয়েছিলেন। উইকিতে আছে-
... He became tutor to Viscount Amberley's children, including perhaps the very young Bertrand Russell, and also carried on an intermittent affair with Viscountess Amberley. After the viscount's death in 1876, Spalding returned to the continent and remained there until his death the following year.
স্টিফেন এন্ডারসনের ‘রিলিজিয়ন ইন দা রাসেল ফ্যামিলি’ প্রবন্ধে জানা যায়।
... The death of Mill the same year was a sorrow and the engagement of Douglas Spalding as tutor, who was a Darwinian and was allowed to have chickens running around in the house, was considered by their friends, and particularly by Amberley's parents, a serious misfortune. Spalding was already in an advanced stage of consumption and died not very long after Amberley. Russell. says in his Autobiography that "Apparently upon grounds of pure theory, my father and mother decided that although he ought to remain childless on account of his tuberculosis, it was unfair to expect him to be celibate. My mother therefore, allowed him to live with her, though I know of no evidence that she derived any pleasure from doing so" (I: 17). This was typical of the Amberleys' views on the relationship between theory and practice; if they believed something to be true, they said so and acted accordingly. ( Anderson- 1993-94: 117-149)
রাসেল পরিবারের সাথে D. A. Spalding এর সম্পর্ক নিয়ে অন্যান্য অনেক বইতে উল্লেখ আছে। তবে সীমিত আকারে।
উপন্যাসের শেষের দিকে আরেকটু দেখি। বীরেশ্বরের বীরত্ব তুলনা করা হয়েছে রাসেলের পিতার বীরত্বের সাথে। জুলির কথায় শুনি।
স্বামীর সম্মতি নিয়ে সেই অতি সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলা ছেলেটার শয্যায় নিয়মিত সঙ্গ দিতেন। আর এই ঘটনার কথা লিখছেন কে? ওঁদের ছেলে। কতটা মানসিক উচ্চ স্তরে পৌঁছাতে পারলে সা্মাজিক ন্যায়-নীতি, পাপ-পূণ্য এইসব হাবিজাবি তুচ্ছ হয়ে যায়। এইসব মানুষই সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ওঁরা যা করেছেন, তুমিও ঠিক তাই-ই করেছ। না করলেই ছোট হয়ে যেতে।
একটু থেমে আমি আবার বললাম, আমার ধারণা, বাবা যদি দিল্লির বদলে সেখানে উপস্থিত থাকতেন, বাবাকে জানালে তিনিও রাজি হতেন। অন্তত আমার বাবা রাজি হতেন, এই বিশ্বাসটা আমি রাখতে চাই।
হঠাৎ মা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। (সুনীল ১৪১৭- ৪৬৯)
একত্রিশ বছর বয়েসী সেই গৃহশিক্ষকের কাছে নিজের আটাশ বছর বয়েসী তরুণী স্ত্রীকে পাঠানোর উদারতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অথবা যদি গৃহশিক্ষকের সাথে রাসেলের মায়ের প্রণয় থেকে থাকে, তবে রাসেলের বাবা এটা জানার পর নিজের থিয়োরি খাটিয়ে এর মন্দ ভাব ঠাহর করতে পারলেন না। স্ত্রীর মৃত্যু হওয়া সত্ত্বেও তিনি গৃহশিক্ষককে স্বপদে বহাল রাখেন। এমনকি নিজের মৃত্যুর পরে অভিভাবক হিসেবে নিয়োগ দেন একজন আসন্ন মৃত্যুপথযাত্রীকে। আসলে এর মূল কারণ ছিল সেই কালের ধর্মীয় আবহ থেকে নিজের ছেলেদের দূরে রাখা। অর্থাৎ রাসেলের পিতার এসব কাজের পেছনে থিয়োরি অনেক বেশি কাজ করেছে। মানসিক স্তরের উচ্চতাকে বাদ দিয়ে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এইসব দিকে চিন্তা করেননি। বা গবেষণার প্রয়োজন মনে করেননি। উপরে উপরে পড়ে নিজের মতো করে একটা মানে করে নিয়েছেন। সেই কাল্পনিক অর্থকে সম্বল করে উপন্যাসের শেষ টেনেছেন। একটা ভুল সূত্রকে উপাত্ত করে হর্ষ দত্তের উপন্যাসের মূল থিমের কাছাকাছি লেখা এই উপন্যাস একই ভুল থিমকে আরো পোক্ত করার প্রয়াস নিয়েছেন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
সূত্র
১। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বসুধা আর তাঁর মেয়ে, শারদীয় দেশ (কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ১৪১৭)
২। Bertrand Russell, Autobiography ( Routledge, London and New York, 1975)
৩। Ray Monk , Bertrand Russell: the spirit of solitude, 1872-1921 (The Fire Press, New York, 1996,pp 14)
৪। Matt Ridley, The agile gene: how nature turns on nurture (Herper Collins Publishers,2003, pp 152)
৫। Stefen Anderson, Religion in the Russell Family (The Journal of Bertrand Russell Archive, McMaster University Library Press, Winter 1993-94)
মন্তব্য
শুভাশীষ, আগেই বলে নিচ্ছি - অতি দীর্ঘ এক মন্তব্য। ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটার সম্ভাবনাও, অতএব, অতি প্রবল।
কিছুদিন আগে এই উপন্যাসটা পড়া শুরু করি। অর্ধেক পড়া হওয়ার পর সময়াভাবে থামতে হয়, এবং শেষ করা হয় নি এখনও। যতদূর পড়েছি, কয়েকটা জায়গায় খট্কা লেগেছিলো। তার কিছু আপনি উল্লেখ করেছেন ইতোমধ্যে। আর একটা জায়গা ছিলো এরকম -
"ইন্দিরা গাঁধী বুঝে গিয়েছিলেন, এ যুদ্ধটা তাঁকে একাই লড়তে হবে। অবশ্য খুব বিপদে পড়লে পাশে থাকবে রাশিয়া। আর পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে যে মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠেছে, তাদেত সাহায্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ।" (পৃষ্ঠা, ৪৩২)
যুদ্ধটা ইন্দিরা গাঁধীর ছিলো! এবং পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে গড়া ওঠা মুক্তিবাহিনীর 'সাহায্যও' সেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো!!! বাংলাদেশের সাথে এতো সম্পৃক্ততার পর, অর্থাৎ বাংলাদেশের ইতিহাস জানবার সুযোগ এতো বেশি থাকার পরও সুনীলের কলম থেকে এই লেখা!
এবার আসি আপনার লেখার বক্তব্যের অন্য অংশে।
বার্ট্রান্ড রাসেলের মায়ের ঐ ঘটনার কথা জানতাম না। আপনার উদ্ধৃত ইংরেজী অংশটুকু ছাড়া এ সম্বন্ধে আর কিছু পড়িও নি। কিন্তু -
শুধু 'যুবক যুবতীরা'ই নয়, সুনীলের 'অমৃতের পুত্রকন্যা' পড়েও মুগ্ধ হয়েছিলাম ভীষণ। 'সেই সময়' তো আমার সবচাইতে প্রিয় লেখাগুলোর একটা, আজিও। নীললোহিতের হালকা চালের টানা লেখা পড়েও অনেক আনন্দময় পাঠসময় কেটেছে। কিন্তু, এখন নিজের মুগ্ধতাকেই বরং ছুটি দিয়েছি। আর কত! সুনীলেরও লেখক জীবনের অনেকখানি সময় পার হয়েছে, আমারও পাঠকজীবনের। এবার প্রত্যাশা কমিয়ে ফেলেছি।
"কিন্তু, এখন নিজের মুগ্ধতাকেই বরং ছুটি দিয়েছি। আর কত! সুনীলেরও লেখক জীবনের অনেকখানি সময় পার হয়েছে, আমারও পাঠকজীবনের। এবার প্রত্যাশা কমিয়ে ফেলেছি।"- বড় ভাল লিখেছেন স্নিগ্ধা।সুন্দর উপলবদ্ধি। আপনার এই কমেন্ট-টা পড়ে "ডিটো" দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না
ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে
ভারতীয় বাংলা টেলিভিশন জি বাংলার স্ট্যান্ড-আপ কমেডি শো "মীরাক্কেল"-এর দুইটি এপিসোডে অনুষ্ঠানটির হোস্ট মীর আফসার আলী বলেছিলো, "২০০৭ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারত প্রথম পর্বে বাদ পড়ার জন্য দায়ী ইন্দিরা গান্ধী। কেন? কারণ তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন"। একটু খোঁজ নিলে এমন আরো উদাহরণ আরও পাওয়া যাবে।
যেমন, এই সাইটটাতে বলা হচ্ছে, "Since India liberated Bangladesh from exploitation by Pakistan"। এই সাইটটার হয়তো কোনো গুরুত্ব নেই, কিন্তু এটা ভারতের কিছু মানুষের মনোভাব প্রকাশ করে।
এই ব্যাপারে ভারতের আম-জনতার মনোভাব জানা দরকার - আসলেই তারা কী ভাবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দিদিভাই,
ইন্দিরা গাঁধীর ব্যাপারটা এখানে উল্লেখ করলাম না। কারণ এইসব জিনিস নিয়ে ছফাগিরিতে নানা আলোচনা হয়েছে। লেখা এমনিতেই বড় হয়ে যাচ্ছিল।
জবাবদিহি হতেই পারে। তবে বিশেষ কিছু বায়াসড্ ও ক্লিশে কারণের দিকে সুনীল হর্ষ দত্তেরা জোর দিচ্ছেন। আপত্তি সেখানেই। পাপ-পূণ্যকে একপাশে সরিয়ে আবার সেটাকে আঁকড়ে ধরার ব্যাপারটা চরম ফালতু।
বাকি কথা- ঠিকাছে।
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
শুভাশীষ দাশ এট হিজ বেস্ট! উরেব্বাপরে!!
সুনীলের উপন্যাসের চরিত্রদের ভাষ্য থেকে জানলাম , আমরা শুধু জয় বাংলা স্লোগানই দিতাম না, দেশের নামও (!) জয় বাংলা (!) বলতাম । মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর আমরা বাংলাদেশ নামটা বেদখল করেছি ! পশ্চিমবঙ্গের নাম আগেই কেন বাংলাদেশ রাখার উদ্যোগ নেয়া হল না এমন প্রশ্নও এসেছে উপন্যাসটিতে । অথচ বাস্তবে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল -এই তথ্য সুনীলের অজানা নাকি জেনেও চেপে রাখা সেই সিদ্ধান্ত টানা থেকে বিরত থাকলাম । বিনীতভাবে, প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় আমার বই থেকে বাংলাদেশ নামকরণ সংক্রান্ত অধ্যায়টি (পরিমার্জিত) নিচে তুলে দিলামঃ
অপূর্ব (অস্থায়ী পূর্ববঙ্গ সরকারের) গোপন ইশতিহার : জাতীয় সঙ্গীত ও বাংলাদেশ নামকরণ প্রসঙ্গ:
স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের নিমিত্তে ১৯৬৫ সালে ঢাবি বাংলা বিভাগের ছাত্র আবদুল আজিজ বাগমারের নেতৃত্বে গড়ে উঠে ‘অস্থায়ী পূর্ববঙ্গ (অপূর্ব) সরকার নামে আরেকটি গোপন সংগঠন’ । (১৮) সংগঠক হিসেবে ছিলেন ঢা:বি: ছাত্র খন্দকার বজলুল হক, শান্তি নারায়ণ ঘোষ (উভয়ে বর্তমানে ঢাবি’র শিক্ষক) প্রাণেশ কুমার মণ্ডল, হাবিবুর রহমান ও অন্যান্য। উক্ত সংগঠনের সভাপতি ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল আর সাধারণ সম্পাদক আবদুল আজিজ বাগমার। উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত ছিলেন, ড. আহমদ শরীফ, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুহম্মদ আবদুল হাই, শওকত ওসমান প্রমুখ। (১৯) ‘স্বাধীনতার স্বপ্ন : উন্মেষ ও অর্জন’ গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, অপূর্ব সংসদ ১৯৬৫ সালের ১ অক্টোবর ‘ইতিহাসের ধারায় বাঙালি’ নামে একটি ইশতেহার প্রকাশ করে এবং এই ইশতেহারের রচয়িতা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ শরীফ। সমগ্র ইশতেহার জুড়ে বাংলাদেশের মাটি -জলবায়ু থেকে শুরু করে ভাষা ,সংস্কৃতি , ইতিহাস, জীবনবোধ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছিল এবং উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে রচিত এই ইশতেহারের শেষের পৃষ্ঠায় ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটির প্রথম চার লাইন উল্লেখ ছিল। (২০) ড. নেহাল করিম এর মতে, ভবিষ্যত বাংলাদেশের ‘জাতীয় সঙ্গীত’ হিসেবে অধ্যাপক ড. আহমদ শরীফ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ রচিত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটিকে নির্বাচন করেছিলেন ।(২১) আমাদের দেশের নাম "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ" । সরকারি দলিলে এই নাম হয়েছে একাত্তরে । বেসরকারিভাবে এই নামের চল আরো পুরনো । বঙ্গোপসাগরের উত্তরে যে ভ্খুন্ডটি হিমালয়ের কোল পর্যন্ত পৌছেছে ১৯৪৭ এর আগে সাধারণভাবে তাকেই বাংলাদেশ বলা হতো । সুকান্তের বিখ্যাত 'দুর্মর ' কবিতার প্রথম তিন চরণে পাই-
"হিমালয় থেকে সুন্দর , হঠাৎ বাংলাদেশ
কেঁপে কেঁপে ওঠে পদ্মার উচ্ছ্বাসে ,
সে কোলাহলের রুদ্ধস্বরের আমি পাই উদ্দেশ ।"
(সুকান্ত রচণা সম্ভার , পৃ ১৩০)
তবে, যে ভুখন্ড নিয়ে আমাদের আজকের বাংলাদেশ তার পরিচিতি ছিল পূর্ব বাংলা বা পূর্ববঙ্গ হিসেবে । কিন্তু "১৪ ই অক্টোবর ,১৯৫৫ পূর্ব বাংলার যে পূর্ব পাকিস্তান নামকরণ করা হয় তাকে অস্বীকার করে এদেশের সেই অতি পুরাতন নাম 'বাংলাদেশ'কে পদ্মা-মেঘনা যমুনা পারের ছেলেরা নতুন করে আবিস্কার করলো ।" (২২ ) অধ্যাপক আহমদ শরীফ তাঁর ‘ইতিহাসের ধারায় বাঙালি’ নামে ইশতেহারের শুরুই করেন এভাবে " আমাদের দেশের নাম বাঙলাদেশ, তাই ভাষার নাম বাঙলা এবং তাই আমরা বাঙালি। " (২৩)
এর চার বছর পর ১৯৬৯ সালে ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু দিবসে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন -"বাংলার এই দুই কৃতি সন্তান (অন্যজন শেরে বাংলা ) আজ অসহায়ের মতো আমাদের মুখের দিকে তাকাইয়া আছেন । এই দুই নেতার মাজারের প্বার্শ্বে দাড়াইয়া জনগনের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি -আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম হইবে বাংলাদেশ । " (২৪) এর পরে একাত্তরের উত্তাল মার্চের ৩ তারিখে স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের পক্ষে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ পঠিত ইশতেহারে 'বাংলাদেশ' নাম এবং কবিগুরুর 'আমার সোনার বাংলা' গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত করার প্রস্তাব করা হয় । (২৫ )
প্রসঙ্গত বাংলাদেশ নামকরণ বিষয়ক আরেকটি ঘটনা তুলে ধরা দরকার । আগেই বলা হয়েছে , তৎকালে এতদাঞ্চলের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান । ১৯৬৪ সালের ৭ মার্চ কলকাতার ‘স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় পশ্চিমবঙ্গের নাম "বাঙলাদেশ" রাখার জন্য সরকারি সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হলে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক আবদুল হক (২৬) তার প্রতিবাদ করেন। তিনি দেখান যে, পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাঙলাদেশ’ রাখাটা অনৈতিহাসিক। পূর্ব পাকিস্তানই বাঙলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ নয়। বাঙালি মুসলমানকে তিনি ‘বাঙালি’ হবার আহ্বান জানান। তিনি ব্যাখ্যা করে দেখান যে, দ্বিজাতিতত্ত্ব একটি সাময়িক রাজনৈতিক কৌশলমাত্র এবং তিনি মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভ্রান্তি নির্দেশ করেন। তিনি ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ এর পথকেই গণ্য করেন। তার মতে, সংহত জাতীয়তার চেতনাই রাষ্ট্রীয় জীবনে শক্তিশালী রক্ষাকবচ এবং পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত এমনি সংহত ঘনীভুত বাঙালি জাতীয়তাবাদ। (২৭)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
মানিক ভাই,
তথ্যগুলোর রেফারেন্স একটু বিশদ দিলে ভালো। যদি সময় হয় বাংলাদেশ নামকরণের বৃত্তান্ত সংক্রান্ত পৃষ্ঠাগুলো স্ক্যান বা ফটুক তুলে ফ্লিকারে দিয়ে এখানে আপ করে দিন।
-------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
যুক্তিসমৃদ্ধ লেখায় ৫ তারা।
ডিপ আইডেন্টিটি ক্রাইসিস থেকে মানুষ অনেক আজেবাজে কথাই বলে। সে বড় লেখক হোক আর ছোট লেখক কিংবা অলেখক।
আগেও বলসি, ৪ দশক ধরে একটা স্বাধীন দেশের মালিক হয়ে, আমাদের এইসব তুচ্ছ বাতুলতায় মনযোগ দেয়ার কিসু নাই। জয় বাংলা।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ডিপ আইডেন্টিটি ক্রাইসিস থেকে মানুষ অনেক আজেবাজে কথাই বলে। সে বড় লেখক হোক আর ছোট লেখক কিংবা অলেখক।
আগেও বলসি, ৪ দশক ধরে একটা স্বাধীন দেশের মালিক হয়ে, আমাদের এইসব তুচ্ছ বাতুলতায় মনযোগ দেয়ার কিসু নাই। জয় বাংলা।
আগাছা বাড়তে না দেয়াই উচিত। গত চল্লিশ বছরে দেশের ভেতরে আগাছা বাড়তে দিয়ে কী অবস্থা হয়েছে সেটা আপনি-আমি জানি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
একমত। তবে, বেড়ার বাইরে আগাছা কাটার এক্তিয়ার তো আমাদের এম্নিতেও নাই। কিন্তু এক্তিয়ারের মধ্যে আগাছা গজাইলে অবশ্যই ভালো করে কুচায়া কমপোস্ট সার বানায়া ফেলতে হবে।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বাঙ্গাল বলে আমাদের ঠিসারা কর্লে যেমন খারাপ শোনায় তেমনি আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগে এইসব কর্তেসে বললে সেটাও খারাপ শোনায়।
আর বৃহত্তর ভারতের আইডেন্টিটি পশ্চিমবঙ্গের লোকদের মন্দ লাগে বলে মনে হয় না। অন্তত আমার তাই মনে হয়।
--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
তাইলে আর এত কথা ক্যান ... গাঙ্গুলি ডাঙ্গুলি মাইরা সুখি থাউক ... আমি তার অ্যাকশন রিপ্লে দেখব ক্যান?
তারপরও ঘটনা থাকে।
ঘটনা হইল এই আইডেন্টিটি ক্রাইসিসটা 'বদলায়া' ঐ পারে যাওয়া কিংবা এই পারে আসা, অনেক মানুষের মনেই দেখসি। যদিও এইটা তাদের কুকর্মকে কোনোভাবেই জাস্টিফাই করে না।
কিন্তু আরেকটা কথা পরিস্কার বলা যায়, কথিত সর্বভারতীয় আইডেন্টিটির মোয়া না খাইলে, এই 'ভারতের দান বাংলাদেশের স্বাধীনতা' টাইপের স্টেটমেন্টসকলের উদ্ভব ঘটত না। সুতরাং আগের থাইকা মজুদ আইডি ক্রাইসিসটাকে ফার্দার পোক্ত কর্সে এই শক-হুন-দল পাঠান মোগল এক দেহে হল লীনের ডিসকোর্স।
সুতরাং দুইটা সম্পৃক্ত। বাঙালের আদার-করণ ও ভারতীয়-র সেল্ফ-করণ ...
এই পথ দিয়াই, ফরিদপুরের সুনীল বিএসএফে নাম লেখাইলো।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আপনার এই মন্তব্য আমি চরম লাইক কর্লাম। আমার কমেন্টের ট্যুইস্ট আপ্নে এক্কেরে ঠিকঠাক ব্যাটে বলে কর্সেন।
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
হেঁহেঁ কী কয় না কয়। আমার নিজের মন্তব্য পইড়া তো ডিফিটেড ক্লাউড পার্টির টনি ব্লেয়ারের বেয়াইয়ের কথা মনে পড়ল। তারে মিস্করি
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
তুখোড়!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
প্রথমেই বলে নেই উপন্যাসটি আমি পড়িনি, এই পোস্ট পড়ে সেটা পড়ার ইচ্ছেও দূরীভূত হলো।
১. স্নিগ্ধার মন্তব্যের প্রথম অংশ সত্য হলে এই ব্যাপারে কোনো না কোনো ফোরামে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া দরকার। উপন্যাস বলে তাতে তিনি ইতিহাসের যা খুশি তাই ব্যাখ্যা করতে পারেন না। আজকে কেউ যদি তার উপন্যাস/গল্পে লেখেন মোহনদাস গান্ধী প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিলেন বা এমনসব মনগড়া কথা তাহলে সুনীল সেটাকে কী চোখে দেখবেন? তার প্রতিক্রিয়াই বা কী হবে?
২. "আমি নিজে সাধারণ বুদ্ধিতে বুঝি- দুইজন পুর্ণমনস্ক নর নারী পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহিত অবিবাহিত যেকোনো অবস্থায় যেকোনো সময়ে মূল্যবোধ সংস্কার এইসব তথাকথিত মামুলি এণ্ডাপাণ্ডায় পাত্তা না দিয়ে মিলিত হতে পারে। এখানে পাপের কিছু নেই। পূণ্যের কিছু নেই। এর আনুষঙ্গিকে কিছু ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। এর বেশি কিছু নয়।"
মূল্যবোধ, সংস্কার এগুলো ঠিক মামুলী এণ্ডাপাণ্ডা নয়, সব ক্ষেত্রে উপেক্ষনীয়ও নয়। দুই জন প্রাপ্তমনস্ক মানুষের (নারী-পুরুষ বললাম না) শারীরিকভাবে মিলিত হওয়ার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মতিই শেষ কথা নয়, বিশেষতঃ যদি সেখানে নূন্যতম একজন বিবাহিত (উভয়ার্থে) হন। বিবাহ নামক সামাজিক প্রতিষ্ঠানটি এর ফাউন্ডার মেম্বারদের একনিষ্ঠতা দাবী করে। একনিষ্ঠতাবিহীন বিবাহ প্রতিষ্ঠান হিসাবে তার যোগ্যতা হারায়। সবার বিয়ে করার দরকার নেই, তবে কেউ বিয়ে করলে তার আইনটা মেনে চলাই উচিত। যারা গাছেরটা ও তলারটা দুটোই খেতে চান তাদের উচিত বিয়ের গ্যাঁড়াকল থেকে বের হয়ে আসা।
৩. আমার কাছে রাসেলের বাবা-মা-গৃহশিক্ষক এই ত্রয়ীর পারস্পরিক সম্পর্ক ও যৌনাচরণের ব্যাপারে রাসেলের ব্যাখ্যাকে ভণ্ডামী বা অহেতুক মহিমা আরোপের চেষ্টা বলে মনে হয়েছে। এমন ত্রিভুজ সম্পর্কের ঘটনা আর শান্তিপূর্ণ সহবস্থান যে কোন সময়ের দুনিয়ায় ভুরি ভুরি আছে। সেগুলো নিয়ে যক্ষ্মা, ধর্ম, উদারনৈতিকতা ইত্যাদি ব্যাখ্যা দেয়ার দরকার পড়েনা। আর এনিয়ে সুনীল যা করেছেন সেটা সিম্পলি ছ্যাবলামো। দুর্বল গল্পকে দার্শনিক ভিত্তি দেবার বাজারী কৌশল।
৪. অনেক দিন হয় সুনীলের বয়স হয়েছে। তবে দুনিয়াজোড়া বাঙালীদের মধ্যে তার ভালো বাজার আছে তো তাই প্রকাশকরা সুনীলকে আর তার শেষ বয়সের আবর্জনাকে নিয়মিতই পাবলিকের পাতে দিতে থাকবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
১। মনগড়া কথাবার্তা দিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখতে চাইলে সেটা নিয়ে ভালোমতো প্রতিবাদ আসা উচিত।
২। এটা নিয়ে অনেক কথা বলা যায়। আপাতত আমার সহজ বুদ্ধিতে স্থির।
৩। হ।
৪। আবর্জনার সাথে চামে কিছু বিকৃত তথ্য গুলে দেন। পাবলিক ও চামে হজম করে।
--------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
সুনীলকে ধিক্কার!!
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
আগে কলকাতার বাবুরা পুর্ববঙ্গ থেকে কেউ কলকাতায় গেলে বাঙ্গাল বলে তাচ্ছিল্য করতো। অনেকের লেখায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়। পরে এই বাঙ্গালরা যখন নিজেদের জন্য একটা আলাদা দেশ প্রতিষ্ঠিত করলো, তখন তাদের গা জ্বলতে শুরু করে। সেই গা জ্বলুনি ভাব এখনো যাই নাই। এখন দেখা যাচ্ছে, পুর্ববঙ্গ থেকে যাওয়া কারো কারো মধ্যেও সেটা আছে। যাই হোক, ব্যাপার না। বাংলা ভাষায় কিছু করে কেটে খেতে চাইলে বাংলাদেশের বাংলার কাছে আসতেই হবে।
হ।
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
"ইন্দিরা গান্ধী বুঝে গিয়েছিলেন, এ যুদ্ধটা তাঁকে একাই লড়তে হবে। অবশ্য খুব বিপদে পড়লে পাশে থাকবে রাশিয়া। আর পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে যে মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠেছে, তাদের সাহায্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ।"
যা পুরো মাত্রায় অসত্য, এবং কুরুচিপূর্ণ একটা বক্তব্য, আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের অনেকেই এর আগে ভারত-পাকিস্থানের যুদ্ধ এবং বাংলাদেশকে ঐ যুদ্ধের বায়ো-প্রডাক্ট হিসেবে দেখানোর ঘৃণ্য চেষ্টা করেছেন।
সুনীল এর মতো একজন জানাশোনা লেখক এই কথা বলতে পারেন না, এমনকি তিনি 'বাংলাদেশ' নাম নিয়েও আপত্তি তুলেছেন। আমি তীব্র নিন্দা জানাই তাঁর প্রতি, এবং এ বক্তব্য'র জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করলে সুনীলকে সর্বোভাবে বয়কট করার আহবান জানাই সবার প্রতি।
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে বাংলাদেশের মিডিয়া কানেকশন ভালো। ফলে কিছুই হবে না।
সুনীল ঢাউস সব উপন্যাসে ও ইতিহাস আর ইতিহাস থাকে নি। ম্যালা গালগল্প ঢুকে গেছে।
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
তুখোড় বিশ্লেষণ শুভাশীষ।
(উপন্যাসের শুধু প্রথম প্যারাটা পড়া হয়েছিল - পুরোটা পড়তে হচ্ছে।)
উপন্যাসটি পড়া হয়নি। তাবে আপনার আলোচনা অসাধারন লাগল শুভাশীষদা।
যে কোন কিছুই হালাল করতে উপমহাদেশে সাদা চামড়ার ব্যাবহার লক্ষনীয়। হিন্দী সিনেমায় স্বদেশী আন্দোলনের গল্পও ব্রিটিশ আমলের গোরা অফিসারের নাতনির চোখে পানি না দেখিয়ে শেষ না করলে হয়না। এখন দেখছি উপন্যাসে দুজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ নিজেদের ইচ্ছায় মিলিত হবে কি হবেনা, সেটার খারিজ ফতোয়া খুঁজতে হবে ইংলন্ডে।
কথা ঠিক।
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
উপন্যাসটা পড়া না হলেও আপনার আলোচনাটা খুবই ভালো লাগলো। আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কিছু উন্নাসক বাঙালি-ভারতীয় মনে করে থাকেন যে 'বাংলা' একান্তই ওপারের সম্পত্তি, দয়া দাক্ষিণ্য করে এর কিছুটা আমাদেরকে ব্যবহার করতে দেয়া। তা না হলে নিরদচন্দ্র চৌধুরি কি করে বলেন 'তথাকথিত বাংলাদেশ'; সুনীলরাই বা কিভাবে এধরনের লেখা লেখেন?
ইন্দিরা গান্ধী যা বলেছেন তার পুরোটাই পলিটিক্যাল, তাতে বিন্দুমাত্রও কালচারাল সেনসিটিভিটি নেই যেহেতু তিনি কিছুকাল বাংলায় রবিঠাকুরের সান্নিদ্ধে কাটালেও বাঙালি নন। তবে এই ঔদ্ধত্ত তাদের জাতীয়, ব্যাক্ত হয় ইন্দিরার কন্ঠে।
অনিন্দ্য রহমান দামি কথা বলেছেন। তার সাথে যোগ করি, হতাশায়ও মানুষ অনেক কিছুই বলে। যারা এপার বাংলা ওপার বাংলা-এক হও জয় বাংলা'র স্বপ্নে মশগুল ছিলেন, স্বপ্নভঙ্গের হতাশা থেকে এর থেকে ভালো আর কি বলবেন তারা!
রাতঃস্মরণীয়
পশ্চিমবঙ্গীয় সাহিত্যিক কী ব্লগাররা আমাদের লেখা পড়ার টাইম পান না। আমাদের বই সেখানে ঢোকে কম। ঢুকলেও বাজার পায় না। আমাদের ভাষাকে সাইজে আনার একটা বাসনা তাঁদের মনে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে হানা দেয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা তেনাদের দান- এই কল্পাংক তাঁরা ধ্রুবক ভেবে এখনো শান্তিতে বাস করেন। আফসোস করি না আর এসবে।
আর বাংলাদেশে সুনীল শীর্ষেন্দু খ্যাতিমানেরা যজমান ঠাকুরের মর্যাদা পান। হুমায়ূন আহমেদের নুহাসপল্লীতে বিয়ারপানুৎসবে কিংবা চ্যানেল আইয়ের যুগপূর্তিৎসবে ভিয়াইপি হিসেবে আমাদের দেশে পা রেখে আমাদের ধন্য করেন। আমরাও ধন্য হই।
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
সুনীলের অবস্থা দেখি আমাদের হুমায়ূন আহমেদের মতোই। কী বলব একে? বুড়ো বয়সের ভীমরতি, না অন্য কিছু?
সুনীলের প্রতি তীব্র ধিক্কার!
কুটুমবাড়ি
দারুণ একটা লেখা...একটানে পড়ে গেলাম!!
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
উপন্যাস পড়ার মত সময় এবং ধৈর্য দু'টোর কোনটাই এখন আর নেই। বহুদিন হলো উপন্যাস পড়ি না। অথচ এক সময় কত না পড়তাম।
লেখাটি ভাল পেলাম। বিশ্লেষণ বেশ যুক্তিযুক্ত হয়েছে।
সুনীলের ‘বসুধা আর তাঁর মেয়ে’ পড়ে শেষ করতে পারিনি । বিরক্তির কারণে ধৈর্য রাখতে পারিনি। একটা উপন্যাসে ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর উল্লেখ করলে তা যতটা যত্ন, মনোযোগ, গুরুত্ব, সততা, নিরপেক্ষতা দাবী করে তা লেখক দিতে চাননি। আমার এমনটাই মনে হয়েছে। অবশ্য সুনীলের কাছ থেকে ভাল কিছুর আশা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি।
আত্মপ্রকাশ, যুবক যুবতীরা -এরপর সুনীলের আর কিছু মাস্টারপিস হয়ে ওঠে নাই।
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
মক্সুদী ঘরানার উপন্যাস। চামেচিকনে কিছু ভুল কথা ঢুকিয়ে দেয়া।
একটা গল্প লিখতে হবে, যে গল্পে একটা চরিত্র আরেকটা চরিত্রকে বলবে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নামটা ঠিক মানাচ্ছে না, নামটা সুনীল দামোদরোপাধ্যায় হওয়া উচিত ছিলো।
জানতাম দেশ পত্রিকার চিঠিপত্র বিভাগ বেশ ভালো চিঠি ছাপে।
সুনীলের এই অখাদ্য চামেচিকনে চাপাবাজিতে ঠাসা পুজোপন্যাসের সমালোচনা কী ছাপা হয়েছে ?
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
কবি লেখক সমাজে নেগেটিভ সমালোচনা নাই। পজিটিভ আছে। মানে পিঠ চুলকে দেয়া জায়েজ শুধু।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সুনীল আর সেই সুনীল নেই অনেকদিনই। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বেশ কিছুদিন ধরেই পূজাবার্ষিকীতে বেরোনো অখাদ্য কাকাবাবুগুলো। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে, এবার খ্যামা দিন। নিজেদের মধ্যে বলিও, কিন্তু ওনার কানে সেটা পৌঁছতে পারি না।
কানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা কী? এইডা আনন্দবাজারের দেশ-এ পাডাইলে কী ছাপবো? দেশ-এর ইমেইল ঠিকানা জানলে জানায়েন।
-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
ইমেল এ্যাড্রেস পেলাম না। আর দেশ এর কোনও আলাদা ওয়েবসাইট নেই, ওটা চলে আনন্দবাজারপত্রিকার কর্পোরেট ওয়েবসাইটে। তবে নিচের লিংকে ক্লিক করে ফিডব্যাক পাঠানো যায়। তবে ওরা আমলে নেবে কি না সেটাই ব্যাপার।
আনন্দবাজার কর্পোরেট
আনন্দবাজার পত্রিকা
রাতঃস্মরণীয়
এইটুকু পাওয়া গেল, ইমেইল পর্যন্ত আপগ্রেডেড হয়নি মনে হয় এখনো!
একটা ফ্যাক্স করে দিতে পারেন।
Contact Details of Desh
Address 6, Prafulla Sarkar Street,, Kolkata
City Kolkata
Pincode 700001
State West Bengal
Country India
Phone No 033 - 22374880/22378000
Fax No. 033 - 22253240/22253241
ধন্যবাদ। পাঠামু নে।
-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
ইমেল ওদের নিশ্চয়ই আছে, তবে আমাদের মত ম্যাঙ্গোপাবলিককে দিতে চায় না হয়ত। বেড়ানোর সেকশন 'হাওয়াবদল' এই শুধু ইমেল দেওয়া - অথবা । বাকি কিছু বলতে গেলে ফীডব্যাক ফর্মই ভরসা।
পড়া হয় নাই, দেশটা পইড়া আছে, আপনার আলোচনা পইড়া তো আর পড়তেও ইচ্ছা করতাছে না। তবে আলোচনা ব্যাপক হইছে।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
কালকে আপ্নেরে আর চাক্রিময় বণিক সাহেবরে হর্ষ দত্তের বইটা হাতের কাছে আছে কিনা জানার জন্য বেশ কিছুক্ষণ জ্বালাতন করসি।
-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
দুই বসায় পড়লাম। দারুণ বিশ্লেষণ। কয়েকটি বিষয়:
১। দীর্ঘ সমালোচনা বিধায় কয়েকটি সেকশন করে দেয়া যেত।
২। সমালোচনায় ভুলটি তুলে ধরা হয়েছে কিন্তু সঠিক বিষয়টি নিয়ে যথাযথ আলোচনা নেই। অর্থাৎ বিষয়গুলিতে "শুভাশীষের বক্তব্য" আরেকটু বেশী হলে জমত। যেমন বাংলাদেশের নাম 'জয় বাংলা' রাখার যে আলোচনা সেখানে শুভাশীষের বক্তব্য পাওয়া গেল:
এই ক্ষেত্রে আরো সরাসরি বক্তব্য আশা করছিলাম।
গবেষণা, খুঁটিনাটি সবমিলিয়ে চমৎকার চমৎকার একটা সমালোচনা। ডাবল থাম্বস আপ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
১। আলোচনা আরো দীর্ঘ ছিল। পরে এডিট করে সাইজ করলাম।
২। এই জায়গাটা আরো বিশদ আনা যেত। ভেবেওছিলাম। তবে রাসেলের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আর সেদিকে গেলাম না। বাংলাদেশ নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ একটা পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা আছে।
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
প্রায় পনের বছর পর এইবার কোন পূজা সংখ্যাই কিনলাম না। কারণ একটাই, গত অনেক বছর ধরেই অধিকাংশ বস্তাপঁচা সব লেখা চালান করা হচ্ছে। আপনার এই লেখাটা পড়ে শারদীয় দেশ কেনার আগ্রহটুকু আরো হারিয়ে ফেললাম।
সুনীল কী চিন্তা করে এই চমৎকার বাণীগুলি দিয়েছেন তা উনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে উনি আজকাল পূজা সংখ্যাগুলিতে প্রায়ই রদ্দি মাল দিয়েই খালাস হচ্ছেন। আমার এখনো মনে আছে, বছর কয়েক আগে পূজা সংখ্যায় ওঁর একটা উপন্যাস পড়েছিলাম, দুই নারী হাতে তরবারি। পড়া শেষ করা মাত্র মনে হয়েছিলো, নিশ্চিত ভাবেই এই উপন্যাস সুনীল লিখে নাই। এরকম উপন্যাস তো আমার পক্ষেই সকাল বিকাল দুইটা করে বের করা সম্ভব ! এরপরের বছর লিখলেন মনের মানুষ, লালনকে নিয়ে। সেটাও ঠিক জমলো না।
কোথায় থামতে হয় জানাটা জরুরী।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সুনীলের সাথে কাজী আনোয়ার হোসেনের তুলনায় যাচ্ছিনা। তবে অনেকদিন আগে কাজীদা একটা স্বাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছিলেন যে তিনি আর মাসুদ রানা লিখছেন না। ৪ জন প্রতিভাবান তরুন মাসুদ রানা লিখছেন তবে যাচ্ছে তার নামে।
সবজান্তা ভাই, আপনার মন্তব্যটা সেই স্বাক্ষাৎকারের কথাটা মনে করিয়ে দিলো।
রাতঃস্মরণীয়
লিঙ্ক
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
ধন্যবাদ শুভাশীষদা, তবে আমি একটা স্বাক্ষাতকার পড়েছিলাম অন্যকোথাও ৫-৬ বছর আগে। যেখানে কাজীদা আরও উল্লেখ করেছিলেন যে ব্যাক্তিজীবনে তিনি ওয়ালথার পিপিকে সাথে রাখেন অসহায়ের মতো মরতে চান না, তাই। তবে দুটো স্বাক্ষাতকারই দেখছি বহুলাংশে আইডেনটিক্যাল।
রাতঃস্মরণীয়
হয়তো খুব সরলীকৃত হয়ে যাবে, কিন্তু আমার পর্যবেক্ষণ বলছে, পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য আর বিনোদনের বলয়ে "বাংলাদেশ" একটা প্রসঙ্গ হিসেবে ক্রমশ বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। টিভি সিরিয়ালগুলোতে এক বা একাধিক বাঙাল চরিত্র ঢোকানো হয়, যে বা যারা একটা নির্মিত-বাঙালভাষায় কথা বলে। ভাঁড়ামোর অনুষ্ঠানে ইদানীং বাংলাদেশ থেকে লোকজন ধরে নিয়ে তাদের দিয়ে শেখানো-ভাঁড়ামো পারফর্ম করানো হচ্ছে। তেমনি উপন্যাসেও বাংলাদেশ ঢুকে পড়ছে নানাভাবে, সেটা চরিত্র বা পটভূমি, যে কোনো কিছুর হাত ধরেই হোক না কেন। এর একটা কারণ কি এমন হতে পারে, যে বাংলা ভাষায় লিখিত সাহিত্য বা নির্মিত প্রোগ্রামের অডিয়েন্সের একটা বড় অংশ বাংলাদেশী? বাংলা ভাষা সম্ভবত সারা পশ্চিমবঙ্গেই একটু কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এখন, এই সাহিত্য বা টিভি সিরিয়ালগুলোকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করলে, কিছুদিন পর হয়তো বাংলাদেশীরাই একমাত্র খরিদ্দার হয়ে দাঁড়াবে। এ কারণেই হয়তো কারণে অকারণে দুইদিন পর পর বাংলাদেশে চেহারা দেখিয়ে যেতে হচ্ছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে। লোকটাকে এখন কেন যেন সাহিত্যমুনমুনসেন মনে হয়।
সরলীকৃত হয় নাই। ঠিক আছে।
পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা আমাদের বই পায় না। আমাদের মধ্যে পেশাদারিত্বের অভাব। -এই কথাগুলো বাদ দিয়ে আসল ঘটনা জানা উচিত। কেন পশ্চিম বাংলার লেখক বা ব্লগারেরা আমাদের লেখকদের লেখা সংগ্রহ করে পড়তে আগ্রহী না? সুনীলের বস্তাপচা লেখা তারা হজম করবে। অথচ আমাদের লেখকদের লেখা পড়বে না, বরং নাক সিঁটকাবে। এইগুলো এতো এতো দেখেছি মেজাজ শরীফ ঠিক রাখা মুশকিল।
ঘটনা হচ্ছে- সুনীল শীর্ষেন্দুরা এখানে নিজের টাকা খরচ করে মুখ দেখান না। টাকা চ্যানেল আই দেয়। নয়তো হুমায়ূন আহমেদ। আর উনাদের প্রতি আমাদের আমজনতার অসীম শ্রদ্ধা। এদেশের মানুষ কলকাতার বইয়ের গায়ে লেখা মূল্যের দ্বিগুণ দামে বই কিনতে দেরি করেন না। কিন্তু দেশের লেখকদের বই বিশ পার্সেন্ট কমিশনে কিনতে কয়েকবার ভাবেন। আমাদের এই মানসিকতার ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
কলকাতার লেখকেরা ভালু, দেশ পত্রিকার চিঠিপত্র বিভাগ বিশ্বমানের- এই বাতাসে ভাসা মিথগুলো স্পষ্ট করে বুঝে নেয়া প্রয়োজন।
প্রয়োজনে সুনীল বলেন- ঢাকা বাংলা সাহিত্যচর্চার রাজধানী। আবার সুযোগ বুঝে উপন্যাসের কোন চরিত্রের মুখ দিয়ে উচ্চারণ করান- বাংলাদেশ-এর বদলে জয় বাংলা, শুনতেও বেশ। এগুলো ফালতু রাজনীতি।
অনেক আগে এইসব নিয়ে আমার একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসে তোমার কমেন্ট ছিল-
"পশ্চিমবঙ্গের বইয়ের বাজারে বাংলাদেশের বই" শিরোনামে একটা অ্যাকাডেমিক কাজ হওয়া দরকার।
আসলেই কারো এই কাজটা শুরু করা দর্কার। তুমি নিজেই শুরু করে দিতে পারো।
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
দারুণ লিখেছেন!!
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কোনোদিনও কোনো উপন্যাস গবেষণা করে লিখেছেন বলে আমার মনে পড়েনা। উনি প্রকৃতি আর প্রেমের ভাল বর্ণনা দেন, আর পাঠকেরাও তা পড়ে আনন্দ পায় - এই পর্যন্তই। বাকিটা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছ থেকে আশা রাখি না। আগে আমাদের হাতে লেখাগুলো ভেরিফাই করার জন্য ইন্টারনেট ছিল না, এখন আছে। তাই তথ্য বিষয়ে লেখকের সীমাবদ্ধতা বেশী করে চোখে পড়ে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দিগন্ত ভাই, সেই সময় উপন্যাসে উনি পড়াশুনা আর গবেষনার যে ফিরিস্তি দিয়েছিলেন; তাতে তো মনে হয়েছিলো গবেষনাতেই তিনি এক দশক পার করেছেন। তার লেখায় প্রকৃতি আর প্রেমের সাথে থাকে আদিরসের সুচতুর মিশেল। পড়তে ভালুই পাই, তবে আজকাল আর তেমন টাইম পাইনা।
রাতঃস্মরণীয়
সুনীলের পূর্ব-পশ্চিম উপন্যাসেও এমন একটি ব্যাপার আছে। বাংলাদেশের মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে জয়বাংলার লোক হিসেবে।
সবারই একটা নির্দষ্ট বয়সে এসে লেখালেখি ছেড়ে দেওয়া উচিত হয়তো।
.
___________________________________________
ভাগ্যিস, আমার মনের ব্যাপারগুলো কেউ দেখতে পায় না!
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
তুখোর! সময় নিয়ে পড়ে ফেললাম! দেশ কেনা হয়নি এবার, সে ইচ্ছেটাও নেই! আনন্দমেলার কাকাবাবু পড়েই নাভিশ্বাস উঠে গেছে! এইসব হেজিমোনির একখানা ফর্মাল প্রতিবাদ হওয়া দরকার! যে মানুষ জানেনা যে তাকে থামতে হবে তখন তাকে থামিয়ে দেয়াটা অন্যদের কর্তব্য!
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
বাংলাদেশের 'বাংলাদেশ' নামকরন নিয়ে আপত্তিটা সুনীলের উদ্ভাবন নয়। পশ্চিম বঙ্গে এই নিয়ে মনে হয় কোন কোন মহলে আপত্তি আরো আগে থেকেই ছিল এবং কেউ কেউ সেটা লিখেছেনও। আমি মনে হয় মৈত্রেয়ী দেবী বা নবনীতা দেব সেন - এর মধ্যে কোন একজনের নন-ফিকশন লেখায় সেটা দেখেওছি। ওই বাংলায় মনে হয় কারো কারো মধ্যে গাছেরটা খাবার আবার তলারটাও কুড়োবার একটা মনোভাব আছে। ওনারা নিজেরা অফিশিয়ালি 'বাংলাদেশ' নাম পরিগ্রহ করার মুরোদ রাখেন না, এমনকি ৬৩ বছরেও 'পশ্চিম' শব্দটা পর্যন্ত ছেটে ফেলতে পারেননি - অথচ 'বাংলাদেশ' নামটাও আর কাউকে ব্যবহার করতে দিবেন না। যেন এই নামটা তাদের জমিদারি সম্পত্তি। একটা সময় ছিল যখন বাঙালী জাতির একটা বৃহৎ (সম্ভবত বৃহত্তরই) অংশের 'বাঙালীত্ব'ই তাঁরা স্বীকার করতে চাইতেন না। এই সুনীলের সমপেশার পূর্বসুরীরাই। এখন উনারা 'বাংলাদেশ' নিয়ে পড়েছেন। কিন্তু পৃথিবীটা যে কারো জন্য থেমে থাকে না আর পৃথিবীর ঘুর্নন-কে ডিক্টেট করার ক্ষমতাও যে ওনাদের নাই সেই বাস্তবতাটুকু ভুলে যান। শুদ্ররাও আজ শাস্ত্রগ্রন্থ পড়তে পারে, মুসলমান বাঙালী হয়ে যায়, আর চাষাভুষা 'বাঙ্গাল'দের দেশ 'বাংলাদেশ' হয়ে যায়। ঘোরতর কলিকাল এখন !!
তবে আমার মনে হয় আমাদের এসব নিয়ে মাথা ঘামাবার খুব একটা দরকার নেই। এটা ওখানকার কিছু কিছু লোকের সাইকোলজিকাল সমস্যা। ওরা চাইলে ডাক্তার দেখাতে পারেন, না-ও পারেন। তাদের ব্যাপার। আমাদের এসব পাত্তা দেয়ার কোন দরকার নেই।
আমার বরং এধরনের লোকদের জন্য কিছুটা করুনাই হয়। ঊনারা বাই চয়েস বৃহত্তর 'ভারতীয়' পরিচয়ে লীন হয়ে গেছেন। সেটাও তাদের ব্যাপার। গুড ফর দেম। কিন্তু সমস্যা হলো, কেউ কেউ মনে হয় একই সাথে একটা মিথিকাল-ম্যাজিকাল কাল্পনিক বায়বীয় বাঙালি 'স্বাতন্ত্র্যের' স্পেসও ধরে রাখতে চান এরই মধ্যে - তাদেরই কারো কারো কাছে এই বায়বীয় স্পেসটার কাঙ্ক্ষিত নাম হচ্ছে 'বাংলা দেশ'। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের কাছে না-না ভাবে হেরে গেলে, পিছিয়ে পড়লে, বা অবহেলিত/অবমানিত/অপদস্থ/বঞ্চিত/তুচ্ছিত বোধ করলে কাল্পনিক আত্নসান্ত্বনাদায়ক আত্নপ্রসাদের ঢেকুর তোলার একটা রিজার্ভ জায়গা বোধহয় দরকার হয় তাদের। আর এই 'বাংলা দেশ' নামটা মনে হয় সেই রকম একটা জায়গা।
তো আমার মনে হয়, কোন অভিমানী বাল বা আবালের কাল্পনিক 'গোসা ঘরের' অভাব নিয়ে গোসা করা দেখে আমাদের সত্যি সত্যি গোসা করার কিছু আছে। বিশেষ করে আমাদের যখন বাস্তবেই নিজস্ব পরিচয়ে নিজস্ব একটা ঘর আছে। আমরা বরং একটা মহানুভব দয়ার্দ্র হাসি উপহার দিতে পারি তাদের।
বাপ্রে। আপনি দেখি মহা চটে আছেন। দাদারা দাদাগিরি করতে চায় সুযোগ পেলেই। কী কর্বেন!! সুযোগ আমরা আকচার দেই। সেটা আমাদের সমস্যা।
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
আরে নাহ্ ! চটাচটির কিছুই নাই।
আমি আসলেই বরং ইষৎ সহানুভুতিই বোধ করি যখন বুঝি কথাটা একটা অথেনটিক অনুভূতি থেকে আসছে। ঐ যে মৈত্রেয়ী দেবী না নবনীতা দেব সেন কার যেন একটা বইয়ের কথা বললাম আমার প্রথম মন্তব্যে যেখানে এই প্রসঙ্গটা দেখেছি - ওখানে কিন্তু এর পালটা যুক্তিটাও লেখিকা নিজেই তুলে ধরেছিলেন এবং প্রসঙ্গটা সততার সাথেই এসেছিল। এটা আমার কাছে কোন বড় সমস্যা না।
সমস্যাটা হলো -- সুনীল/সমরেশ/শীর্ষেন্দু ইত্যাদিদের আমি নেহাৎই আনন্দবাজারি টাঊট-বাটপার ছাড়া আর কিছুই মনে করি না। সত্যি কথা বলতে কি, এদের সাহিত্যকর্ম বা উপন্যাস-টুপন্যাসও আমার মতে বটতলার চটি-সাহিত্য বা বড়জোর আমাদের হুমায়ুন আহমেদ বা ওখানকার নিমাই ভট্টাচার্যের (নাহ্, অন সেকেন্ড থট, নিমাইও এদের থেকে অনেক ভালো) বালিশ সংস্করনের চেয়ে বেশী কিছু না। আমার মতে, মহাশ্বেতা দেবীর দুই আউন্সের দুই পাতা একটা পিচ্চি 'হাজার চুরাশির মা'-ও সুনিলের সারাজীবনের কয়েক টন ওজনের তাবৎ সাহিত্যকর্মের বা পুরো উপন্যাস-সমগ্রের থেকে সহস্রগুন বেশী ওজনদার, বেশী মূল্যবান এবং উচ্চতর সাহিত্যিক অর্জন। এমনকি, আশাপুর্না দেবীর যেকোন একটা উল্লেখযোগ্য বইও এদের (সু/স/শী) যে কারো সমস্ত উপন্যাসের চেয়েও শ্রেয়তর। বিশ্বব্রম্মান্ডে যেকোন বিষয়েই একজন লেখকের জীবন সংশ্লিষ্ট যেকোন গভীর বা অথেনটিক অনুভূতি বা উপলব্ধির ঘনীভূত নির্যাসের সৎ শিল্পিত প্রকাশকে আমি সাহিত্যের মর্যাদা দিতে রাজি সেটা দুই/চার পাতা হলেও, কিন্তু সুনীলদের হাজার-হাজার পাতা অবিমিশ্র ছিনালি ফাত্রামিকে আমি আমার ঘরের ময়লা ফেলার টুকরি হিসেবে ব্যবহার করতেও রাজি নই। অনেকে হয়তো আমার এমন মন্তব্যে আহত বোধ করবেন, কিন্তু আমি নাচার।
সাহিত্যিক/বুদ্ধিবৃত্তিক তকমাধারী ফোট্টুয়েন্টি-টাউট-বাটপাররা ফোট্টুয়েন্টি-টাউট-বাটপার-ই - অন্য কিছু না। তাদের ফোট্টুয়েন্টিগিরি ছাপা কাগজের পাতায় বিধৃত হয় বলেই অন্য কিছু মনে করার কোন কারন, আমি অন্তত দেখি না।
বাই দ্য ওয়ে, সুনীলের সাথে হুমায়ুনের অনেক খাতির তাই না ? একদম যেন 'রতনে রতন চেনে' ! এখানে আসলে হুমায়ুনের সাথে কত ইয়ারদোস্তি তার - হুমায়ুনের আতিথ্য/আপ্যায়ন/চর্বচোষ্যলেহ্যপেয় গ্রহনে তার কতই না আনন্দ - এদেশের লেখকদের সম্পর্কে কত মিষ্টি মিষ্টি কথার ফুলঝুরি! ৫০ বছর পর ঢাকাই হবে বাংলা ভাষার একমাত্র রাজধানী, ইত্যাদি ! অথচ, এই সুনীলরাই গোপনে অবাংলাদেশী বাঙালীদের সমাবেশে বা অডিয়েন্সের কাছে ঐ একই মুখে আবার ঐ হুমায়ুনদেরই চুড়ান্ত ভাবে পচাতে বা ট্র্যাশ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না। এই রকম একটা অভিজ্ঞতার কথাই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী লেখক অজয় রায় অনেক দিন আগে লিখেছিলেন (খুব সম্ভবত প্রথম আলোয়, ঠিক শিওর না) - তাঁর প্রবাসী ভারতীয়দের একটা প্রাইভেট অনুষ্ঠান/সম্বর্ধনায় উপস্থিত থাকার সুবাদে।
মোদ্দা কথা হলো, এখানে আসলে পূর্ব-পশ্চিম উত্তর-দক্ষিন এপার-ওপার দাদা-গাধা কোন বিষয় না, বিষয় হলো -- বেনিয়া-ফড়িয়া-ফোট্টুয়েন্টি-টাউট-বাটপার-দুইমুখা সাপ-সাহিত্যিক বেশ্যা বা ছিনালরা বেনিয়া-ফড়িয়া-ফোট্টুয়েন্টি-টাউট-বাটপার-দুইমুখা সাপ-সাহিত্যিক বেশ্যা বা ছিনালই হয়, অন্য কিছু না। তা সে যেখানকারই হোক না কেন।
৫০ বছর না, এই মুহূর্তেই বাংলা ভাষার রাজধানীর নাম ঢাকা। আর ক্রমশ সেইটার বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজন। কারণ ভালো সাহিত্য সিলেটেও হয়, কুমিল্লাতেও হয়। সুতরাং ভাষা-সাহিত্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ও সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ সম্পন্ন হইলে, এই রাজধানীটাইপ বয়ানেরও আর প্রয়োজন হবে না। সাহিত্যের রাজধানী ধারণাটাই তো বিরক্তিকর পুঁজিবাদী।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
bhalo bisleshon, tabe kichu kamenTs oi Sunil babur lekhar matan-i mangarhaa
ফইরগিলাম
আগে তো একটাই বাংলাদেশ ছিল। তারপর ভাগ হয়ে গেল। তারপর ওরা পুরো বাংলাদেশ নামটা নিয়ে নিল কেন?
একই অভিযোগ কিন্তু ভারতের নামে আমরাও করতে পারি। আগে তো ভারত একটাই ছিল। ওরা কেন পুরো নাম নিয়ে নিল? চে গুয়েভারাও যে অভিযোগ করেছিলেন আমেরিকার নামে। আমেরিকান বলতে কেন শুধু এক দঙ্গল পুঁজিবাদী লোক বোঝাবে? কেন যুক্তরাষ্ট্র গায়ের জোরে শুধু তাদের নাগরিকদেরই আমেরিকান বলবে? মধ্য ও ল্যাটিন আমেরিকার অগণিত সংগ্রামী মানুষরাই তো প্রকৃত আমেরিকান স্পিরিটের ধারক।
ফইরগন হুনিয়ারে ভালা লাইগ্যে।
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
... সুনীল পাঠ ছাড়া আমার চলে যাচ্ছিল, কোনো অসুবিধা হয়নি। শুভাশীষ দাশের লেখা পড়ে মনে হলো (শুভাশীষ দাশ, মুক্তমনা ব্লগে সম্প্রতি সুনীলের উপন্যাস নিয়ে লিখেছেন) সুনীলকে আবার পড়া দরকার।...
আমার লেখার উৎস হিসেবে তিনি সচলায়তনের নাম উল্লেখ না করে মুক্তমনার নাম লিখেছেন। অথচ মুক্তমনাতে আমার কোনো একাউন্ট নেই। সুনীলের উপন্যাস বলতে কোন উপন্যাস সেটাও উল্লেখ করেননি। ধরে নিচ্ছি, ভুল করে এই কাজটি হয়েছে। তবে এই ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত এই ভুল ব্লগের প্রতি তাচ্ছিল্য হিসেবেই মনে করি। এর সুরাহা প্রয়োজন। ব্লগের কোনো লেখা পত্রিকা বা বইতে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করতে চাইলে সঠিক ই-লিঙ্কটা দেয়া জরুরী। এই অভ্যাস চালু না থাকলে চালু করা দরকার।
অন্যপ্রসঙ্গ: বাংলাদেশের বেশিরভাগ লেখক প্রবন্ধ লেখার সময় তথ্যসূত্র উল্লেখের প্রয়োজন মনে করেন না। এটা কু-অভ্যাস। উদাহরণ হিসেবে বিখ্যাত প্রবন্ধকার হাসান ফেরদৌসের কথা বলা যায়। তাঁর প্রচুর লেখা বইয়ের ফ্ল্যাপ বা ইন্টারনেট ঘেঁটে পাওয়া তথ্য এদিক সেদিক মিশিয়ে তৈরি করা। অথচ তিনি কোনো উৎস উল্লেখ করেন না। কোনোরকম কৃতজ্ঞতা স্বীকারের ধার দিয়ে যান না।
তুহিন সাহেব ব্লগ পড়েন যখন, এই পোস্টেই এ ব্যাপারে তার বক্তব্য আমরা আশা করতে পারি।
শুধু তাই না। লেখককে না জানিয়ে ব্লগ থেকে লেখা তুলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্রেডিট দিয়ে, কোনো কোনো ক্রেডিট না দিয়েই লেখা ছাপানো হচ্ছে পত্রিকায়। এই চর্চার বিরুদ্ধেও একটা শক্ত অবস্থান দরকার।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আমি ব্রগ নিয়মিত পড়ি। এটা কোনোভাবেই ইচ্ছেকৃত ভূল নয় শুভাশীষ দাশ ।
এই ভুলের একটা প্রায়শ্চিত্য করতে চেয়েছিলাম, পরে কাজের চাপে তা আবার ভুলে গেছি। সে জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করি ত্রুটি মার্জনা চাচ্ছি না।
ব্লগারদের তুচ্ছতাচ্ছিলো করার কোনো কারণ দেখছি না। যদি দেখতামই, তাহলে আপনার নাম আমি উল্লেখ করতাম না।
মুক্তমনা ব্লগটিতে আমার ঢু মারা কম হয়, বা একদমই যাই না বললেই চলে। তবে কেন যে মুক্তমনার নাম লিখতে গেলাম। আমি কিন্তু আপনার লেখা থেকে বিশেষ করে রাসেলের অংশটি হুবহু কোড করেছিলাম যথাযথ সোর্স দিয়ে। তবে জায়গা সংকলনের কারনে বাদ পড়ে গেছে।
আবারো বলছি ব্লগের উপর আমার কোনো হেয় ভাব নেই। বরং কথিত কপরেপারেট মিডিয়ার উপরই তা আছে। কারণ ব্লগ যা পারে তা কোনোদিনই করপোরেট মিডিয়া তা পারবে না।
উত্তর করার জন্য ধন্যবাদ।
ভুল হতেই পারে। সেটা ব্যাপার না।
ছফার কিস্তি-১২র পর থেকে অনেকদিন ধরে আপনি আউল-ফাউল লোকদের নিয়ে লিখতেসেন। এটার দরকার আছে, কিন্তু বেশি হলে পাঠক-লেখক দুইপক্ষেরই আগে হোক-পরে হোক জিহবা তেতো হয়ে যায় কিছুটা, এক পর্যায়ে। লেখকের কারনে না, বিষয়বস্তুর কারনে।
এইবার একটা ভালো বিষয় বা লেখক বা লেখা নিয়ে লেখেন তো প্লিজ - যা বা যে আপনাকে সদর্থক অর্থে তীব্র বা গভীর ভাবে নাড়া দিয়েছে। মাইন্ড কইরেন না প্লিজ, নেগেটিভ বিষয়বস্তু সম্পন্ন লেখাগুলিও এপ্রিশিয়েট করেছি - তবে একটু ভেরিয়েশন দর্কার আছে মনে হয়। আপনার লেখাগুলি ভালো লাগে তাই বললাম।
'ঐতিহাসিক উপন্যাস' জানরা প্রসঙ্গে আমার একটা ভালো লাগার কথা বলি এখানেঃ সুনীলের ইতিহাস-মার্কা ক্যারিকেচারগুলি (উপন্যাস) যদি আপনার দৃষ্টি আকর্ষন করে থাকে, তাহলে এর বিপরীতে মহাশ্বেতা দেবীর ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস 'আঁধারমানিক' পড়ে দেখতে পারেন। যদ্দুর মনে পড়ে, খুবই আনপ্রিটেনশাস, ভাব-ভণিতা ও বাগাড়াম্বর-বিহীন একটা বই এবং সম্ভবত স্বল্প-আলোচিত - কিন্তু তারপরও আমার মতে অসামান্য, কোন-কোন দিক থেকে প্রায় অতুলনীয় একটা কাজ এবং দারুন উপভোগ্য। বহুদিন পরেও মনে আছে ভালো লাগাটা। মহাশ্বেতার লেখার সাথে অন্যদের পার্থক্যও হয়তো উপভোগ করবেন - এমনকি ভিন্নার্থে তার নিজের অন্য লেখার সাথেও। মহাশ্বেতা যেমন সুনীলের এন্টনিম, এই বইটাও তেমনি সুনীলের (এবং আরো অনেকেরও) ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস-মার্কা ফাত্রামি বা বাগাড়াম্বরের একটা এন্টনিম। মহাশ্বেতা তার এই অপেক্ষাকৃত স্বল্পায়তন লো-কী বইয়ের পেছনে সুনীলের 'সেই সময়' বা 'প্রথম আলো"-র মত বিশাল বিবিলিওগ্রাফি (পঠিত না বানোয়াট আসলে?) দেননি বটে, কিন্তু এর যেকোন একটি মাত্র পৃষ্ঠা আমার মতে ১০ খানা আস্ত অখন্ড 'প্রথম আলো'র চেয়েও অনেক অনেক অনেক বেশি জ্ঞানগর্ভ (জ্ঞান না দিয়েই), সারগর্ভ, রসগর্ভ, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন, মূল্যবান, শৈল্পিক, এবং সবচেয়ে বড় কথা -- উপভোগ্য। এগুলি আমার ভালো লাগার কথা এবং আমার দৌড় এট্টুকুই। আপনি আপনার পছন্দ মত আপনার খুব ভালো লাগা কিছু নিয়ে বিশ্লেষনমূলক কিছু লিখুন না কেন - পড়তে খুব আগ্রহ বোধ করছি। ধণ্যবাদ।
আগেই জানিয়ে রাখি আঁধারমানিক পড়া হয় নাই। সংগ্রহ করার চেষ্টা করবো।
ছফাগিরির কিস্তি তের লেখা শুরু করেছি। অনেকদিন ধরে। বিষয় গ্যোতের ফাউস্ট বনাম ছফার ফাউস্ট অনুবাদ। গ্যোতের ফাউস্ট আর তার নানারকম আলাপ আলোচনা পড়তে শুরু করে এখনো শেষ করতে পারিনি। ফলে লেখাটা এগিয়েছে খুবই অল্প। এবার আশা করি অন্যান্য লেখা দূরে রেখে ছফাগিরিতে মন দেবো।
প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক আর আহমদ ছফার গায়ে প্রতিক্রিয়াশীল আর সাম্প্রদায়িক তকমা লাগালে কিছু লোকের সুবিধা হয়। এদের কেউ কেউ না জেনে না শুনে ছফাকে গালাবেন। কেউ রাইসু মজহারের নামের সাথে ছফাকে সুযোগমতো বসিয়ে দিবেন। তবে আলাপ আলোচনায় যাবেন না। ভাববাচ্যে ছফাকে মৌলবাদী বানাতে তাদের মূল আগ্রহ।
সরদার ফজলুল করিমের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ: অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের আলাপচারিতা এবং ছফার যদ্যপি আমার গুরুকে রেফারেন্স হিসেবে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ইতিহাস নিয়ে একটা সিরিজ লেখার ইচ্ছা আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালে। প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক সেখানে ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন ১৯৩১ সালে। তারপর সেখানকার শিক্ষক হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাঁর সম্পর্ক ১৯৯৯ সালে তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অটুট থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক কিছু পুরানো মাইক্রোফিল্ম সংগ্রহ করেছি। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত। এগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিবে।
এসব লেখার খাটুনি ব্যাপক দেখে এগোতে ভয় করে। দেখা যাক।
ভয় লাগলেও এগুলিই শেষ পর্যন্ত ওয়ার্থওয়াইল এফোর্ট।
"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ইতিহাস" বলতে কি ঠিক 'একাডেমিক' জ্ঞানচর্চার কথা বুঝাচ্ছেন, নাকি আরেকটু বৃহৎ অর্থে? যদি আরেকটু বৃহত্তর অর্থেই বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে '২০-এর দশকেরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-ভিত্তিক 'বুদ্ধির মুক্তি' আন্দোলনের উপর একটু আলো ফেলতে পারেন চাইলে। আমার কাছে এই আন্দোলন/স্কুলটা খুবই ইন্টারেস্টিং লাগে, কিন্তু বেশি কিছু জানি না। এটাই হয়তো পূর্ববঙ্গের, নিদেনপক্ষে পূর্ববঙ্গের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-ভিত্তিক প্রথম 'প্রগতিশীল' আন্দোলন। এর সাথে জড়িত ছিলেন ঢাবির ছাত্র এবং সে সময়ের তরুন-তুর্কি নাস্তিক/এগ্নস্টিক আবুল হাশিম, ছিলেন আরেক ছাত্র কবি বুদ্ধদেব বসু। বদরুদ্দিন উমরের পিতা আবুল হাশিম অবশ্য পরবর্তীকালে একজন জাতীয় স্তরের নেতৃস্থানীয় ধর্মগুরুতে বিবর্তিত হন - তবে সেটা অন্য প্রসঙ্গ। ঢাকাইয়া বুদ্ধদেব বসুর কথা তো বলাই বাহুল্য - উনাদের বাড়ি সেগুন বাগিচায় ছিল। আর কে কে ছিলেন জানি না, তবে মনে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যাওয়ের প্রথম যুগের এইসব ইতিহাস বেশ কৌতুহলোদ্দীপকই হবে।
ভালো লাগা বিষয়গুলাতে লিখতে থাকুন।
নতুন মন্তব্য করুন