এশিয়া বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার লেখকেরা আত্মজীবনী বা স্মৃতিচারণ লেখার সময় সেক্সকে একপাশে সরিয়ে রাখেন। ব্যক্তিজীবনের নানা কিছুতে মানুষের উত্থান পতন থাকে। উত্থানের কথা ডালপালাসহ থাকলেও পতনের কথা চেপে যাওয়া হয়। এক কথায়, আত্মজীবনী লেখার সময় সৎ থাকা তাঁদের হয়ে ওঠে না। ফলে বেশিরভাগ স্মৃতিচারণ এবং আত্মজীবনী একপেশে আজগুবি গালগল্পে ঠাসা হয়। অন্যদিকে খুশবন্ত সিং তাঁর আত্মজীবনীতে কৈশোর থেকে শুরু করে তাঁর যৌন অভিজ্ঞতার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। তসলিমা নাসরিনও এই পথে চেষ্টা করেছেন। বিনোদিনীর আত্মচরিত পড়লে তাঁকে সৎ বলে মনে হয়। পাশ্চাত্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়া অন্যদের এই সমস্যা নেই। তাই আত্মজীবনী বা আত্মজৈবনিক উপন্যাসে সেক্স দেদারসে থাকে। তবে সততার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা সেখানেও কষ্টকর।
এলিসের উপন্যাসগুলো আলাদা আলাদা কোনো উপন্যাস নয়। আগের কোনো না কোনো উপন্যাসের সাথে একটা কিছু যোগাযোগ থেকে যায়। এক হিসেবে সিক্যুয়েল। ‘লেস দেন জিরো’র প্রায় যুবকেরা এই উপন্যাসে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠেছে। এই উপন্যাসের প্রট্যাগানিস্ট ক্লে এক ক্রিসমাসে লস এঞ্জেলস আসে। পুরানো স্কুল বন্ধুদের সাথে মিশে শুরু করে পার্টি জীবনযাপন। উপন্যাসের শুরুর প্রথম বাক্য নিয়ে বিস্তর খাটেন ঔপন্যাসিকেরা। কাফকা ‘মেটামরফোসিস’ শুরু করেছিলেন গ্রেগর সামসার পোকা হয়ে ওঠা নিয়ে। তলস্তয় আনা কারেনিনার প্রথম বাক্যেই উপন্যাসের পাঞ্চ লাইন বলে দিয়েছেন। ‘Happy families are all alike; every unhappy family is unhappy in its own way.’ নভোকভ ললিতা শুরু করেছিলেন ‘Lolita, light of my life, fire of my loins.’ বাক্য দিয়ে। কাম্যুর ‘দা স্ট্রেঞ্জার’ উপন্যাসের প্রথম বাক্যে তিনটি শব্দে মার মৃত্যুর খবর দেন। এলিস ও এই কাজ করেন। তাঁর লক্ষ্য থাকে একটা শক্তিশালী প্রথম বাক্য। ‘লেস দেন জিরো’ উপন্যাসে প্রথম বাক্য- ‘People are afraid to merge on freeways in Los Angeles.’ আর ‘ইম্পেরিয়াল বেডরুমস্’ শুরু করেন ‘They had made a movie about us. The movie was based on a book written by someone we knew.’ দিয়ে। তাঁর প্রথম উপন্যাস নিয়ে সিনেমা বানানো হয়েছে। নতুন উপন্যাসে শুরুতেই এই তথ্য যোগ করে দেন এলিস।
এলিসের প্রথম উপন্যাসে ধনী পরিবারের ছেলে ক্লে বাড়ি ফিরে বন্ধুবান্ধবদের সাথে মিলে পার্টিতে যায়, ড্রাগ নেয়। মেয়েবন্ধু ব্লেয়ারের সাথে সম্পর্কে জড়াবে কিনা ভাবে। কিন্তু নানা জনের সাথে তার ওয়ান লাইট স্ট্যান্ডের কারণে ব্লেয়ারের সাথে সম্পর্ক হয়ে ওঠে না। ক্লে পরে ছেলেবন্ধু হেরোইনখোর জুলিয়ানের সাথে তার সম্পর্ক জোড়া লাগানোর চেষ্টা করে। আরো নানা ঘটনায় লস এঞ্জেলসের ড্রাগ জীবনের প্রতি তার আগ্রহ কমে যায়। বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়। এদেরকে এই অবস্থায় রেখে এলিস তাঁর প্রথম উপন্যাস শেষ করেন। এলিস এই উপন্যাস প্রকাশ করেন যখন তাঁর বয়স মাত্র একুশ। উপন্যাসটি লেখা শেষ করেন আঠারো বছর বয়সেই। তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস খুব একটা পাঠকপ্রিয় হয়নি। তবে তৃতীয় উপন্যাস ‘আমেরিকান সাইকো’ দিয়ে এলিস ভালোমতোন ফিরে আসেন পাঠকের পছন্দের তালিকায়।
নতুন উপন্যাস ‘ইম্পেরিয়াল বেডরুমস্’ ক্লে-কে পায় যখন তার বয়স পঁয়তাল্লিশ। সেই লস এঞ্জেলসে ফিরে আসা। সেই পুরানো বন্ধুবান্ধব। ক্লের মতো দেখা যায় তার বন্ধবান্ধবেরাও চলচ্চিত্র শিল্পের নানা কাজে জড়িয়ে। এলিস তাঁর উপন্যাসে উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের উন্মত্ত জীবনযাপনের মুখোশ পাঠকের সামনে হাজির করেন। ড্রাগ, খুন খারাবি, গণধর্ষণ, ইচ্ছেমতোন সেক্স, যা ইচ্ছে তাই ফিল্মিং। এসব পরিবারের অদ্ভুতুড়ে বাবা-মাদের নিজেদের বাসায় দেখা যায় না বললেই চলে।
লন্ডন রিভিয়্যু অব বুকস্-এ সমালোচক রবার্ট লেনন ‘ইম্পেরিয়াল বেডরুমস্’ নিয়ে সমালোচনায় বলেছেন-
Imperial Bedrooms reads like a mashup of Bret Easton Ellises – the minimalist, the thrillerist, the fake-memoirist. It is narrated by Clay, the protagonist of Less than Zero – or wait, maybe it’s not the same Clay, because this Clay, in the new book’s opening pages, claims to resent the writer of the previous book for having written it:
I had wanted to write that first novel the author had written after I finished reading it – it was my life and he had hijacked it. But quickly I had to accept that I didn’t have the talent or drive. I didn’t have the patience. I just wanted to be able to do it. I made a few lame, slashing attempts and realised . . . that it was never going to happen.
অর্থাৎ ক্লে লেখক এলিসকে অভিযুক্ত করছেন তার জীবন নিয়ে লেখার জন্য। আবার মেনে নিচ্ছেন কারণ এলিসের মতো বলার ক্ষমতা না থাকার কারণে। উপন্যাসে এই ‘ক্লে ভায়া ব্রেট এলিস’ ব্যাপারটা নিখুঁত গদ্যে লিখে গেছেন ঔপন্যাসিক। ‘লেস দেন জিরো’র মতো এই উপন্যাসেও জিনিস একই। কর্পোটারাইজেশন আর ক্যাপিটালিজমের ক্লেদ।
উপন্যাসটি লাইব্রেরিতে পাওয়ার পর মাঝখানে খুলেই একটা বাক্যে চোখ পড়েছিল-
I think I see Julian here, leaving, and I get up from the table and go to the bar and then outside and it’s raining hard and I can hear Duran Duran from inside and a girl I don’t know passes by and says, ‘Hi,’ and I nod and then go to the restroom and lock the door and stare at myself in the mirror.
সেইসময় বাক্যটার স্ট্রাকচারে মুগ্ধ হই। বইটি সংগ্রহ করার পর পড়ে বুঝতে পারি আমাদের গুলশান বনানীর ছেলেমেয়েরা এলিসের চরিত্রগুলোর অনুকরণ করার তালে আছে দীর্ঘদিন।
বহি
Imperial Bedrooms
Bret Easton Ellis
Knopf
1 edition (June 15, 2010)
ছবির সূত্র: এলিসের ফেসবুক ফ্যানপেজ
মন্তব্য
সিনেমাটার খোঁজ দেন... দেখি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
IMDb এর লিঙ্ক। টরেন্ট পাইরেটবে-তে পাইবেন।
ধন্যবাদ বস
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
রিভিউ বেশ লেগেছে।
পড়তে চাইলেও উপায় নাই। এজাতীয় বই সহজে পড়া যাবে, এরকম লাইব্রেরীর অভাব...
_________________________________________
সেরিওজা
-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
সিনেমালোচনায় সিনেমার পূঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা দাবি রাখে।
পাঠকদাবির প্রতি আপনার একাগ্রতা আমাকে আশান্বিত করেছে।
kabir.aahmed@yahoo.com
প্রশ্নবোধক
সিনেমাটার খালি নাম নিলাম ভাই। আর কিছু না।
-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
বিনোদিনীর আত্মচরিত ইন্টারেস্টিং লাগসিল। এখন অনেকেই খুবই বানোয়াট বই লেখে।
বিরাট বিরাট ইনকন্গ্রুয়াস বাক্যে আমাদের ছেলেপেলেদের মাথা ভর্তি হয়ে আসে। তারা আর কোনো বাক্য শুরু করলে শেষ করতে পারে না। বেশিরভাগ সময় মাঝপথে ঘুরায়া ফেলে।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বানোয়াট ধার করা ভাষা
বানোয়াট স্মৃতিচারণ
বানোয়াট বই
-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
বেশ! ভালো লাগলো!
-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
নতুন মন্তব্য করুন