২০০৯ সালের ৩০ শে জুলাই জাফর পানাহিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে মুক্তি পেলেও তাঁর পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। এর পরে এই বছরের পহেলা মার্চ আবারো পানাহিকে তাঁর স্ত্রী, কন্যা ও অন্যান্য কয়েকজন সহ গ্রেপ্তার করা হয়৷ দুইদিনের মধ্যে বাকিরা মুক্তি পেলেও পানাহি জামিন পান মে মাসের পঁচিশ তারিখ। বেশ বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে। তাঁর মুক্তির জন্য সেইসময় বিশ্বের নামিদামি সকল চলচ্চিত্রপরিচালক প্রচারণা চালিয়েছিলেন। ২০১০-১১ সালে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে জুরির দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু দেশের বাইরে যাবার অনুমতি মেলে না। নভেম্বরের বারো তারিখে পানাহি আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। বলেন-
… ২০১০ সালের মার্চের এক তারিখে আমাকে আমার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। সেদিন আমার সহকর্মী রাসোলফের সাথে আমি সামাজিকভাবে সচেতনামূলক একটা সিনেমা বানানোর কাজ করছিলাম।
… আমার সাথে যা হয়েছে সেটা অপরাধ করার আগেই শাস্তি দেয়ার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যে সিনেমাটির জন্য আমার এইসব শাস্তিভোগ সেটির মাত্র তিরিশ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
… আমি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সিনেমা বানাই। রাজনীতিতে আমার আগ্রহ নেই। আমার প্রধান চিন্তার বিষয় সমাজের মধ্যকার বিভিন্ন ঘটনা। তাই আমার সিনেমায় রাজনৈতিক কোনো বিবৃতি পাবার সম্ভাবনা নেই।
… আমার ওপর এতো জুলুম চালানো সত্ত্বেও আমি বলতে চাই, আমি একজন ইরানি হিসেবে দেশে থাকতে চাই। আমি এখানেই কাজ করতে আগ্রহী। দেশকে আমি ভালোবাসি। আর এইজন্য আমাকে অনেক দুর্ভোগ ও পোহাতে হয়েছে। দেশকে ভালোবাসার জন্য আরো দুর্ভোগ সইতেও আমি রাজি।
জাফর পানাহির অন্যান্য সাক্ষাৎকারেও তাঁর কথার সত্যতা পাওয়া যায়। স্টিফেন টিও-র সাথে এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়- ইরানের রাজনীতির প্রতি তাঁর সিনেমায় কি ধরনের বক্তব্য থাকে? পানাহি জানান-
আমি রাজনৈতিক কোনো ব্যক্তি নই। আর রাজনৈতিক সিনেমা আমি খুব একটা পছন্দ করিনা। সামাজিক ইস্যু নিয়ে সিনেমা বানাতে চাই। রাজনৈতিক কি ভৌগোলিক দিক দিয়ে কিছু বিচার করি না। আমার মনে হয়- মানবিক দিকগুলো চিরন্তন। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যাপারগুলো সময়ের কোলে হারিয়ে যায়। একটা নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে এর বক্তব্য অর্থহীন হয়ে পড়ে।
পানাহির গ্রেফতারের খবর জানার পর বাংলায় কি কি প্রতিক্রিয়া এসেছে জানার জন্য গুগল করে বেশ কয়েকটি রিপোর্ট, ব্লগ পাই। বার্লিন থেকে দাউদ হায়দারের একটা লেখা দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেখানে অন্যান্য তথ্য মোটামুটি ঠিক থাকলেও এক জায়গায় তিনি লিখেছেন-
২০০৬ সনে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জাফর পানাহি শ্রেষ্ঠ পরিচালকের শিরোপায় ভূষিত হন, সিলভার বিয়ার পান তাঁর ‘অফসাইড' ছবির জন্যে৷ ছবিটি সামাজিক৷ সমাজস্তরে যে মারাত্মক ফাটল ধরেছে, মোল্লাতন্ত্রের রাজনীতি ঢুকেছে, দুই পরিবারের টানাপোড়েনে ছবির কাহিনী বিস্তারিত৷
পুরস্কারপ্রাপ্তির পরে, ডয়েচে ভেলের জন্যে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমার ছবিতে রাজনীতিই মুখ্য৷ ইরানের রাজনীতিই শুধু নয়, যেকোনো দেশের মৌলবাদীর বিরুদ্ধে আমার জিহাদ৷ দম-বন্ধ-করা সময়ে বাস করছি আমরা৷কতটা দম বন্ধ, দেখেছেন ছবিতে৷ চরিত্ররা মাঝে-মাঝেই ঘর থেকে বেরিয়ে খোলা মাঠে যায় নিঃশ্বাস নিতে৷ কিন্তু সেখানেও দম বন্ধ হয়ে আসে৷''
‘অফসাইড’ সিনেমাটি দুই পরিবারের টানাপোড়েনের কাহিনী নিয়ে নয়। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশগ্রহণের জন্য ইরান আর বাহরাইনের কোয়ালিফায়িং ম্যাচ দেখতে একটা মেয়ে ছেলে সেজে স্টেডিয়ামে যায়। কারণ স্টেডিয়ামে মেয়েদের প্রবেশাধিকার নেই। স্টেডিয়ামে মেয়েটি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে, তাকে আটকে রাখা হয় অন্যান্য ছেলে-সেজে-আসা মেয়েদের সাথে। সিনেমার কাহিনী এটা নিয়েই। সিনেমার বিষয়বস্তু না জেনেই সিনেমাটি কি নিয়ে বলতে গিয়ে সমাজস্তরের ফাটল, মোল্লাতন্ত্রের রাজনীতি, দুই পরিবারের টানাপোড়েন ব্যবহার করে ফেলেছেন দাউদ হায়দার। সে কারণে ডয়েচে ভেলের সাথে সাক্ষাৎকারে জাফর পানাহি আদৌ ‘আমার ছবিতে রাজনীতিই মুখ্য’ বলেছিলেন কি না সন্দেহ হয়। পানাহির অন্যান্য সাক্ষাৎকারে দেখেছি- তিনি সরাসরি তাঁর সিনেমা রাজনৈতিক বলতে একেবারেই আগ্রহী নন।
জাফর পানাহির ছবি কান, বার্লিন, ভেনিস, লন্ডন, টরেন্টোসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। তিনি ‘দা হোয়াইট বেলুন’ ছবির জন্য ১৯৯৫ সালে কান উৎসবে ‘দ্য ক্যামেরা ডি’অর’ পান। ২০০০ সালে তাঁর ছবি ‘দা সার্কেল' ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে পায় গোল্ডেন লায়ন।
পানাহি কেবল ইরানেই নিঃগৃহীত হয়েছেন তা নয়। নাইন ইলেভেনের ঘটনার আগে ট্রানজিট ভিসা না থাকার কারণে নিউ ইয়র্কের বিমানবন্দরে আটকা পড়েছিলেন পানাহি। তাঁকে হ্যান্ডকাফ দিয়ে, পায়ে চেইন পড়িয়ে বিমানবন্দরে আটকে রাখা হয়েছিল। পরে বিমানবন্দর থেকে হংকং-এর বিমানে ফেরত পাঠানো হয়। সেই খবর আমেরিকার পত্রিকায় খুব একটা আসেনি। একই বছর ‘দা সার্কেল’ সিনেমা আমেরিকায় মুক্তি পায়। আরো মজার ব্যাপার সেই বছর পানাহিকে আমেরিকার ন্যাশানাল বোর্ড অব মোশ্যান পিকচার “Freedom of Expression Award” দেয়। (সায়ীদ ২০০৯)
আব্বাস কিয়ারোস্তামির ‘থ্রো দা অলিভ ট্রিস’ সিনেমার সহকারী ছিলেন জাফর পানাহি। সেই সময় পানাহির জন্য ‘দা হোয়াইট বেলুন’ সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখেন কিয়ারোস্তামি।(নিগার ২০০৮) ইতালির নিওরিয়ালিজম সিনেমার ইরানি ঘরানা তৈরিতে পানাহির অবদান অনেক। তাঁর একটি অন্যতম সিনেমা ‘ক্রিমসন গোল্ড’। হোসেন নামের একজন ইরানি লোক একটা জুয়েলারি দোকানে ডাকাতি করতে আসে। কিন্তু সেখানে আটকা পড়ে যায়। ভয় পেয়ে সে আত্মহত্যা করে। এই সিনেমার মধ্যে পানাহি গুলে দিয়েছেন ইরাক-ইরান যুদ্ধ পরবর্তী সামাজিক অবস্থা। (হামিদ ২০০৭)
‘দা সার্কেল’ সিনেমায় দেখানো হয় ইরানে নারীদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। ইরানে মেয়েরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয় তার কয়েকটা পরস্পরসম্পর্কিত গল্প নিয়েই ছবিটির বক্তব্য। ‘দা হোয়াইট বেলুন’ সিনেমায় আছে দুটি বাচ্চা ছেলেমেয়ের গোল্ডফিশ কিনতে গিয়ে টাকা হারানো এবং সেটা উদ্ধারের চেষ্টার গল্প। গরিবগুর্বো আম মানুষের আটপৌরে জীবনের গল্প বলতে গিয়ে রসেলিনি, ডি সিকাদের মতো ইতালির খ্যাতনামা চলচ্চিত্রনির্মাতারা যে জঁরা তৈরি করেছিলেন পানাহি সেটাকেই ইরানের চোখে দেখাতে চেয়েছেন। ইরানের আহমাদিনেজাদ সরকার পানাহির সাথে বিরোধী রাজনৈতিক দলের একদা সংশ্লিষ্টতা আবিষ্কার করে তাঁকে অমানবিক দণ্ড দিতে দেরি করেনি। মানবতাবাদি চিত্রনির্মাতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ইরান সরকারের এই অমানবিক কাজের নিন্দা করছে। পিটিশনে সাইন করছে। আমাদের দৌড় এতোটুকুই। ইরান সরকার এগুলোতে থোড়াই পাত্তা দিচ্ছে।
সূত্র
১। Zeydabadi-Nejad, Saeed, The Politics of Iranian Cinema: Film and society in the Islamic Republic, Routledge, December, 2009
২। Mottahedeh, Negar, Displaced Allegories: Post-Revolutionary Iranian Cinema, Duke University Press Books, October, 2008
৩। Dabashi, Hamid, Masters and Masterpieces of Iranian Cinema, Mage Publishers, May, 2007
ফিরে: পানাহির কারাদণ্ডের খবর প্রথম জানতে পারি সংসপ্তকের ফেসবুক ওয়ালের লিঙ্ক থেকে।
--
বানান কৃতজ্ঞতা: বুনোহাঁস
মন্তব্য
ইরানি রাজনীতিবিদেরা কি খায়? খাবারে আয়োডিনের বড্ড অভাব থাকার কথা। শালা সব গাধা গর্দভের দল।
আসল তথ্য হচ্ছে- ইরানে পচুর আয়োডিন।
দাউদ হায়দারের লেখা পড়ে মজা পেলাম। ওনাকেও দ্বীন মোহাম্মদ ওরফে সুমন রহমানের ভূতে ধরেছে দেখি। আশা করবো তিনি একটা ছোটো সংশোধনী প্রকাশ করবেন ডয়চে ভেলেতেই। আর উনি কোন সিনেমাটির কথা বলতে চেয়েছিলেন, সেটাও জানতে চাই।
অফসাইড সিনেমাটা দেখেছি, ভালো লেগেছে। সিনেমাটার শেষে একটা স্টেডিয়াম দুর্ঘটনার রেফারেন্স আছে, যেটা জানতাম না বলে ক্লাইম্যাক্সের রসাস্বাদন পুরো করতে পারিনি।
সিনেমা না দেখে সিনেমারিভিউ একটা অন্য ঘরানা হতে পারে কিন্তু। আমরা একটা পরীক্ষামূলক পোস্ট ছাড়তে পারি, যেখানে একটা একেবারেই না দেখা সিনেমার ওপর সবাই এসে কিছু জ্ঞানগর্ভ মন্তব্য করে যাবে। সব শেষে বাছাই কিছু অংশ নিয়ে পোস্টটা আপডেট করা হবে।
জাফর পানাহির জন্য সমবেদনা ছাড়া আর কিছু জানানোর নাই।
এইডা আবার কি জিনিষ ?!!! কে এই অসামান্য নমস্য প্রতিভা ?
আর 'ইনি'-টাই বা কিনি? একটু খোলসা করে বলেন না ! এইসব প্রাতঃস্মরনীয় নমস্যদের একটু চিনে রাখি !
লন
আর সাকাপ্রেম এইখানে।
দাউদ হায়দারের উদ্ধৃতিতে দ্বিতীয় প্যারাটার ফন্ট সম্ভবত প্রথম প্যারার মত হওয়া উচিত।
এরকম অসাধারণ সব ফিল্মমেকার ইরানে জন্মায় কেন? এক দুইটা বাংলাদেশে পেলে তো মাথায় তুলে রেখে দিতাম....
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
কিয়ারোস্তামির একটা সাক্ষাৎকার নিই চলেন। দেখি ফারুকির সিনেমা সে কোনটা কেমন ভালু পাইল।
মাঝখান থেকে কিছু চমৎকার সিনেমার নাম জেনে গেলাম। কিছু জোগাড়ে নামতে হবে। দর্শক হিসেবে আমারো মনে হয় মানবিক অনুভূতিই মূখ্য। বাদবাকি যা-সেগুলোর আবেদন থাকে না একেকসময়।
পানাহির জন্যে সমবেদনা।
_________________________________________
সেরিওজা
হ।
ইরানী চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে মাজিদ মাজিদির ছবিই বেশি দেখা হয়েছে, কিয়োরোস্তমি আর মাখমালবাফেরও দেখা হয়েছে খানদুয়েক। হোয়াইট বেলুন শক্তচাকতিতে আছে, সময় করে দেখে নেব খন।
আর বইয়ের ফ্ল্যাপ দেখে আর ম্যুভির নাম শুনেই রিভিউ লেখার অভ্যাসটা পোক্ত করতে হবে এবার, অনেক সময় বেঁচে যাবে
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
হোয়াইট বেলুন দেইখা ফেলেন। ক্রিমসন গোল্ড পার্লে সংগ্রহ কইরা নেন।
১. কিছু ইরানী মুভি দেখার সুযোগ হয়েছে তবে জাফর পানাহি দেখা হয়নি। কারণ, উনার মুভি ঢাকার দোকানগুলোতে দেখতে পাইনি।
২. ইরানী মুভিগুলো সুন্দর, তবে অসম্পূর্ণ - বয়েজ স্কুলে করা বার্ষিক নাটকগুলোর মতো। মুভিতে জীবনের সবগুলো পাশ, সমস্যা, জটিলতা, বক্তব্য তুলে ধরার উপায় ইরান সরকার রাখেনি।
৩. চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধিমুক্তি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, লেখক-শিল্পীর স্বাধীনতা না থাকলে রাষ্ট্র নিজেকে যতই নৈতিক বলে বলীয়ান ভাবুক সে রাষ্ট্র ধ্বসে পড়া সময়ের ব্যাপারমাত্র। ইতিহাসে এর অনেক উদাহরণ আছে।
৪. জাফর পানাহি তবু কিছুটা ভাগ্যবান। তাঁর কপালে কারাদণ্ড আর আন্তর্জাতিক সমর্থন জুটেছে। বেশিরভাগ জনের কথা জানা যায়না আর তাঁদের কপালে বুলেট ছাড়া অন্য কিছু জোটেনা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
২। ইরানী মুভিগুলো অসম্পূর্ণ বলে মনে হয় না দুইজন পরিচালকের কাজ দেখে। একজন কিয়ারোস্তামি, অন্যজন মাখমালবাফ। পানাহি এদের কাতারে যেতে না পারলেও আশেপাশেই আছেন। ইরান সরকার অনেক কিছুই সিনেমায় আনতে দেয় না। সেন্সরশিপ মারাত্মক কড়া। আমার মনে হয়- সেন্সরশিপ এতো চাপ দেয় বলেই ইরানের পরিচালকদের কাছ থেকে এতোসব মাস্টারপিস বের হয়।
৩। একমত।
৪। পানাহিকে হয়তো গুলি করেই মারতো। আন্তর্জাতিক চাপে সেটা করেনি। করবে না সেটারও নিশ্চয়তা নাই।
১. ঢাকায় ইরানী মুভিগুলোর প্রাপ্যতার স্থিরতা নেই। ঢাকা থেকে কেনা ইরানী মুভির আমার নিজের যে কালেকশন ছিল সেটার হারানো/চুরি যাওয়া মুভিগুলো পরে আর পূরণ করতে পারিনি। যাকগে, আগামী সপ্তাহে সময় পেলে একবার চেষ্টা করবো।
২. আব্বাস কিয়ারোস্তমী আর মোহসেন মাখমালবাফ (এর পরিবারের আরো তিন মাখমালবাফ মুভি বানায়)-এর মুভি দেখেছি। তাঁদের মুভিতে দর্শক সন্তুষ্ট হতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু সরকারের চাপে তাঁদেরকে বহু ঘুর পথ ধরতে হয়। এই চাপের ফলে যে মাস্টারপিস বের হয় সেখানে ফাঁকি আছে। এটি নির্মাতার স্বতঃস্ফূর্ত কাজ নয়। প্যাঁচিয়ে উপস্থাপণ করা যাঁদের বৈশিষ্ট্য তাঁদের কাজের ব্যাপারে আমার আপত্তি নেই, কারণ সেটা স্বতঃস্ফূর্ত, চাপের মুখে করা নয়। নির্মাতা-শিল্পীর স্বাধীনতা যেখানে নেই সেখানে শিল্প তার পূর্ণরূপ নিয়ে বিকশিত নয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ইরানি ছবির বেশির ভাগ আমি কিনেছি বসুন্ধরা সিটির western craze থেকে। তাও প্রায় একবছর আগে। আপনি একটু খোঁজ করে দেখতে পারেন।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আমি বসুন্ধরা সিটি আর রাইফেলসের ওয়েস্টার্ন ক্রেজ আর রাইফেলসের মুভি প্লাস থেকেই মুভি কিনি। এই সব দোকানে গিয়ে "নন্-ইংলিশ" মুভি চাইলে ফরাসী-ইতালীয়-হিস্পানী-চীনা-জাপানী-রুশ-পর্তুগীজ ছবির ভীড়ে অল্প-স্বল্প ফারসী মুভি পাওয়া যায়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ঠিক ঠিক। ঘাঁটতে ঘাঁটতে মাঝে মাঝে কিছু ভাল ছবি পাওয়া যায়। একবার শর্টফিল্মের একটা কালেকশান পেলাম- স্বল্পপরিচিত/অপরিচিত তরুণ ফিল্মমেকারদের কাজ, বোধকরি কোন উৎসবে জমা দেওয়া ছবির সংকলন।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
অফসাইড ছবিটা নেটফ্লিক্সে আছে, দেখব।
তথ্যবহুল এই লেখাটার জন্য ধন্যবাদ। ইরানী চলচ্চিত্র বেশি দেখা হয় নি। তবে ভালো ছবি বানালে পুরস্কারে পরিবর্তে জেলদণ্ড জুটবে সেখানে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আব্বাস কিয়ারোস্তামির যা যা পান সব দেখে ফেলেন। তবে শিরিন প্রথমে দেইখেন না। টেন স্ট্রিমিং করে দেখা যায়। এটা ক্লাসিক। টেস্ট অব চেরি আর ক্লোজ আপ এক্কেবারে মাস্ট সী।
পানাহির ক্রিমসন গোল্ড, মাখমালবাফের দা সাইক্লিস্ট এই দুইটা ও অসাধারণ।
ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
হোয়াইট বেলুন ফেস্টিভল স্ক্রিনে, সার্কেল ডিভিডিতে, অফসাইড টিভিতে, জাফর পানাহির এই তিনটা দেখসি। অফসাইডটা সবচেয়ে ভালো লাগসিল। ক্রিমসন গোল্ডও ঢাকায় পাওয়া যায়।
... জাফর পানাহি বলসেন, "একটা নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে এর বক্তব্য অর্থহীন হয়ে পড়ে" -- নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে কোনো কিসুরই কোনো অর্থ নাই, এইটা আমি মনে করি। আমার ধারণা উনিও করেন। কিন্তু বলেন নাই।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
মৃণাল সেন- জন্ম ফরিদপুরে
ঋত্বিক ঘটক- জন্ম ঢাকা শহরে
সত্যজিৎ রায়- বাপ দাদার বাড়ি ময়মনসিংহ
(সুত্রঃ উইকিপিডিয়া)
এরা হয়ত জাফর পানাহির মত অত বড় মাপের অসাধারণ ফিল্মমেকার নন তাই তাদের মাথায় তুলে রাখাতো দূরের কথা, তাদের জন্ম বা বাপের বাড়ি যে বাংলাদেশে তাও মনে রাখতে ভুলে যাই।
মৃণাল সেনের কাজ যথেষ্ঠ ভালো। বিশেষ করে ভুবনসোম।
সত্যজিৎ ঋত্বিককে তো মাথায় তুলে রাখি।
সংসপ্তক মাথায় তুলে রাখার ব্যাপারটা বিশেষ করে নিউওয়েব পরিচালকদের কথা প্রসঙ্গে হয়তো বলেছেন। জীবিত এবং যারা এখনো কাজ করছেন তাদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে।
মৃণাল সেনের গল্প বলার ঢং আলাদা ঘরানার। ছবির পুরো সময়টা ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকে যেটা সত্যি প্রশংসার দাবীদার। ইন্টারভিউ আমার খুব পছন্দের একটা ছবি।
আধুনিক ভাই ব্রাদাররা যদি একটু কষ্ট করে অকারণে ডলি, ট্রলি আর হ্যান্ডহেল্ড ক্লোজআপ থেকে বেরিয়ে এসে নিজের ভাষায় তাদের গল্পগুলো বলতেন তবে দর্শক বৈচিত্রের স্বাদ পেতো।
কী বলছি আর কিভাবে বলছি - দুটোর ভারসাম্য যখন থাকা দরকার তখন ফ্রেমজুড়ে থাকে "কাকে দিয়ে বলাচ্ছি"
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
বলতে ভুলে গেছিলাম। ইন্টারভিউ সিনেমাটাও আমার খুব পছন্দের।
সত্যজিৎ রায়কে মাথায় তুলে রাখেন না, এমন লোকের সংখ্যা বাংলাদেশে খুব বেশি বলে মনে করি না। তবে আপনি কিন্তু জহির রায়হানের কথা বলতে ভুলে গেছেন।
আহারে লোকটা
বিশ বছরের জন্যে সিনেমা বানানো নিষিদ্ধ করে দিলো...
মানুষের মাঝে কত আজব ধরণের প্রাণী যে ইভল্ভ করেছে। বিশ বছর ধরে একটা লোককে এই যন্ত্রণা দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে কারো দ্বিধা করলো না।
............................................................................................
স্বপ্ন আমার জোনাকি
দীপ্ত প্রাণের মণিকা,
স্তব্ধ আঁধার নিশীথে
উড়িছে আলোর কণিকা।।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
ঐটাই তো শাস্তি! মানুষের ক্রিয়েটিভিটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা। ওর চেয়ে বড় শাস্তি একজন লেখক/চিত্রপরিচালক/শিল্পীকে আর কী দেয়া যায়!!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
এগুলো যোগাড় করে দেখতে হয় তাহলে। কেউ কি পার্সেপোলিস দেখেছেন?
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
দেখছি।
অটোবায়োগ্রাফিক্যাল কমিকস্ বই দুইটার পিডিএফ সংগ্রহ করেছিলাম। পড়া হয়ে ওঠে নাই। এই ছুটিতে পড়ে ফেলবো।
পার্সেপোলিস ভালো লেগেছে। অরিজিনাল বই দেখেছি ঢাকায়, কিন্তু অনেক দাম।
যদিও ইরানিয়ান না আর সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড তবে এটা থেকেই আরেকটা অ্যানিমেশনের কথা মনে পড়লো - ওয়াল্টজ উইথ বাশির না দেখে থাকলে দেখতে পারেন। মনে হয় ভালো লাগবে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
নতুন মন্তব্য করুন