খুচরা খাচরা করে মোটামুটি লাখ দেড়েক টাকা খাটিয়ে সেটা বাড়িয়ে লাখ চারেক করি। এরপর নেশা ধরে গেলে একেবারে মোট ক্যাশ ঢোকাই আট লাখ টাকার মতো। এক বন্ধুকে ধরে, ব্যাঙ্ক থেকে নেয়া লোন। এক মাসের মধ্যে সেটা চল্লিশ লাখে পৌঁছে যায়। এক দফায় সব বেচে কিছুদিন ধৈর্য ধরি। লোন মিটিয়ে দিই। দশ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিটে রেখে বাকিটা আবার মার্কেটে ঢোকাই।
শেয়ার বাজার করতে করতে চাকরি খোঁজায় ভাটা পড়ে। প্রতিদিন সকালে বাসে ঝুলে মতিঝিল চলে যাই- ব্রোকার হাউসে বসে ফ্রি চা খাই, সিঙ্গারাতে কামড় দেই। একসাথে বেশি লাভ হলে খুশি হয়ে পড়ি। একা একা সেলিব্রেট করি ঘরোয়াতে খিচুড়ি খেয়ে। লোকসান হলে মন খারাপ হয়। ফেরার পথে ঘরোয়াতে ঢুকবো কি ঢুকবো না চিন্তা করতে করতে ঢুকে পড়ি। হাফ খুচুড়ির অর্ডার দিয়ে দিই। সাথে কোক।
মার্কেট হঠাৎ করে বেশ অনেকখানি পড়ে গেলে কিছু কিছু বিনিয়োগকারী বাইরে বেরিয়ে মিছিল করে। পরের দিন মার্কেট আবারো ধ্বসে পড়লে এবার গাড়ি ভাঙচুর হয়। নিজে ভীতু বলে গাড়ি ভাঙচুরের মতো সাহসী কাজে যেতে পারিনা। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এগুলোর ভয়ে মার্কেটে না গয়ে বাসায় বসে মার্কেট ফলো করি। এক্সেল শিটে রাখা শেয়ারগুলোর হিসেবে লাভের গুড়ে লালবাতি দেখি। মার্কেট ক্রমাগত পড়তে থাকে। গাড়ি ভাঙচুর ও বাড়তে থাকে। ডিএসই নানা ভুংভাং উত্তরাধুনিক কথাবার্তা বলে। জোর করে সূচক বাড়ানোর চেষ্টা চালানো হলে মার্কেট কিছুটা ঘোরে। একদিন। দুইদিন। তৃতীয় দিনে আমি বিশাল অংশের শেয়ার বেছে দেই। অ্যাভারেজে লাভ খুব একটা খারাপ আসে না। পরের দিন থেকে পেপারে আবারো চাকরির বিজ্ঞাপন খুঁজতে থাকি। পেপারের প্রথম পাতা মার্কেট পতনের ছবি আর রিপোর্টে সয়লাব। খুব একটা পড়ি টড়ি না। মার্কেট পড়তে পড়তে মাটিতে গড়াগড়ি খেলে লাখ তিনেক টাকার শেয়ার কিনে চুপচাপ ভুলে যাই। চাকরির জন্য জোর চেষ্টা চালাতে থাকি। সিভিতে মিডিয়া ধরে অভিজ্ঞতা বসিয়ে ফেলি। দুই চারটা ইন্টারভিউ-এর পরে এক ব্যাংকে চাকরি হয় এবং চাকরি করতে থাকি। বছর খানেক কেটে যায়।
পৃথিবীতে বিশুদ্ধ চাকরি আর বিশুদ্ধ ব্যবসা বলে কিছু নেই। আসলে পৃথিবীতে বিশুদ্ধতা হারিয়ে গেছে অনেকদিন। ব্যাঙ্কে নিজের কিউবিকলের মনিটরে স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইট দেখতে গিয়ে আমি মনে মনে এই দার্শনিকতা আওড়াই। তারপরেই পেশাব পায়।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কতা: অনিন্দ্য রহমানের শেয়ার গল্পের সাথে এই আব্জাব্ গল্পের কোনোপ্রকার সম্পর্ক নাই। খালি নামে মিল ছাড়া।
মন্তব্য
উপসংহারে কাত হয়ে গেলাম। দুর্দান্ত।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
নেশা একটা ফ্যাক্টর। কিন্তু আমাদের উৎপাদনের নেশায় পায় না। উপার্জনের নেশায় পায়। চিয়ার্স ...
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
গার্মেন্টস শিল্প পোশাক উৎপাদন করে শ্রমশোষণ করার মাধ্যমে। ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসা গরীবের মধ্যে শ্রম উৎপাদন ঘটিয়ে নিজেকে ফাঁপিয়ে বাড়ায়, সমাজসেবার মুখোশ পড়ে দারিদ্রকে অমর করে রাখে। মুনাফাখোরদের সবকিছুতেই উপার্জনের নেশা। শ্রম করে বা না করে কিংবা শ্রম করিয়ে ঠকিয়ে।
খুব ভালো লাগলো। চলুক।
এইটা ভালো হইসে।
এটা মোটামুটি হ্যাপী এন্ডিং হয়েছে। বাস্তবে এটার সংখ্যা নগণ্য। বাস্তবে সব হারানোর দলই বড়। অবশ্য জিরো সাম গেমে হিরো জিরো হলে দোষ কার? জিরো হয়ে যাওয়া হিরো রাস্তা পার হয়ে মধুমিতার ম্যাটিনী শো'তে কাজী হায়াতের "দায়ী কে?" দেখতে ঢুকে পড়তে পারে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
একটা টুকুন গল্পের চরিত্রকে দায়ী কে? দেখতে পাঠাব।
ভাল লাগল।
আপনার কাছ থেকে গল্পের এই ভদ্রলোকের অবস্থার আরো বিশদ ব্যাখ্যা জানা দর্কার। আমি কিছুটা সত্য কিছুটা কল্পনা মিশিয়ে মার্কেটে কিভাবে কেউ কেউ টিকে যায় সেটার গল্প লিখেছি।
গল্পটার একটা শিক্ষনীয় দিক আছে আমার জন্য। অনেক বলার পরও আমি শেয়ার মার্কেটে ব্যবসা করতে ঢুকি নাই। গল্পটা পইড়া ভাবলাম, দাম যেহেতু তলানীতে- কিছু শেয়ার কিনা ফালায় রাখুম নাকি।
যদি লাভ হয়, তাহইলে ঢাকা আসার পর আপনার জন্য এক প্লেট ঘরোয়ার কাচ্চি বরাদ্দ।
অলমিতি বিস্তারেণ
কিছু কিনা ফালায় রাখা যায়। তবে দাম এখনো তলানীতে গেছে কিনা জানিনা।
হে হে, সবার কাছে ভালো লাগছে। তাই, কইতে আমার খানিকটা ডর লাগতেছে। তাও কই। আমার কাছে সরলরৈখিক মনে হলো। আপনার আগের পর্বের গল্পগুলোর মতো না এইটা!
হ, এইটা একমুখী। মানে ধান্ধাবাজ ক্যামনে টিকে গেছে সেটার গপ্পো। এই ধরনের লোক সংখ্যায় কম না। আবার সব পুঁজি হারিয়েছেন তারাও সংখ্যায় নগণ্য নন।
ভালো হইছে
শেয়ার ব্যাবসাটা শিখেই ফেলতে হবে এই যাত্রা!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হ, শিখেন। তবে কইরেন না।
হ, আসলে সব্বাই ধান্দাবাজ
লেখা চরম হইছে। চলুক।
-অতীত
নতুন মন্তব্য করুন