রুবাইয়াত হোসেনের মিথ্যাচার

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: শুক্র, ২৮/০১/২০১১ - ১১:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনিন্দ্যের পোস্ট পড়ার আগে মেহেরজান নিয়ে আমি পুরো অন্ধকারে ছিলাম। এবাদুর রহমানের স্ক্রিপ্ট হাতে আসার পর সেখানে পাকিপ্রেমের প্রোপাগান্ডা দেখতে পাই। সিনেমার পরিচালিকা নানা সাক্ষাৎকারে তার বীরাঙ্গনাদের ওপর করা গবেষণার কথা উল্লেখ করেন। বলা হয়েছে- একজন বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুর গল্প নিয়ে ছবির কাহিনি। কিন্তু পাকিসঙ্গমকে পবিত্র ও মানবিক করে দেখানোই ছিল রুবাইয়াতের মূল উদ্দেশ্য। তার একাত্তর নিয়ে করা ফ্যান্টাসি সিনেমা দেখলে বোঝা যায় পাকিরা ঐ তথাকথিত গন্ডগোলের সময় মানবিকতা ছাড়া অন্য কিছু প্রদর্শন করেনি, কামুক মুক্তিযোদ্ধারা বসে বসে আঙুল চুষে, কিশোরীরা পাকিসঙ্গমের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ডিয়ার ডায়েরি ডিয়ার ডায়েরি খেলে।

এতসবে রুবাইয়াত হোসেন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হই। জানতে পারি তিনি ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়াতে মাস্টার্স অভিসন্দর্ভ করেছেন বীরাঙ্গনাদের ওপরে। বিষয়: ‘Birangonas’ Heroic Women or the Shamed Ones: The Ambiguous Figures of Bangladeshi National History; এই থিসিস বই আকারে বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে বের হবে অচিরেই। গুগল স্কলারে খোঁজ করে তার একটা পেপার পাই। ২০০৯ সালে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব জেনোসাইড, ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস’ এ রুবাইয়াত নিজের একটা পেপার পড়েন। শিরোনাম: “Trauma of the Women, Trauma of the Nation: A Feminist Discourse on Izzat"।

‘ইজ্জতের বিনিময়ে কথাটা ধর্ষণের মতো ব্যাপারকে ধামাচাপা দেয়’ টাইপের কথাবার্তা সাজিয়ে কাঁঠালপাতা লুকানোর চেষ্টারত এই লেখা পড়ে বুঝতে পারি রুবাইয়াত একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে সিনেমা বা লেখালেখি করছেন। মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীন বাংলাদেশ তার গাত্রদাহের কারণ। তার আগ্রহ একাত্তর সম্পর্কিত পরিসংখ্যানে। নকল সব পরিসংখ্যান ঢেলে একাত্তরে মৃত বা ধর্ষিতদের সংখ্যাকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করে বিশ্বে পরিবেশনের মহান দায়িত্ব নিয়ে গবেষণার নামে মিথ্যাচার করাই তার কাজ।

রুবাইয়াত হোসেনের পনের পৃষ্ঠার পেপারের রেফারেন্স ক্রসচেক করতে গিয়ে অবাক হই। পেপারের এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন:

The number of rape victims range from 40,000 to 250,000, (16) the number of abortions range from 23,000(17) to 50,000, (18) and the number of war babies range from 400 to 10,000. (19) (রুবাইয়াত, ২০০৯:৮)

এখানের 16 এবং 18 নম্বর সূত্রের বইয়ের নাম Against Our Will: Men, Women and Rape; লেখিকা বিখ্যাত ফেমিনিস্ট লেখক Susan Brownmiller; লাইব্রেরি থেকে বইটা এনে রুবাইয়াতের উল্লেখ করা ৭৮-৮৬ পৃষ্ঠা পড়লাম। সেখানে ৪০,০০০ থেকে ২৫০,০০০ এই সংখ্যা দুটো পেলাম না। বরং পেলাম:

During the nine-month terror, terminated by two-week armed intervention of India, a possible three million persons lost their lives, ten million fled across the border to India, and 200,000, 300,000 or possibly 400,000 women (three sets of statistics have been variously quoted) were raped. (মিলার, ১৯৯৩: ৮০)

সুসানের বইটিতে বাংলাদেশ নিয়ে উল্লেখ আছে ৪০ পৃষ্ঠায় আর ৭৮-৮৬ পৃষ্ঠায়। অন্য কোথাও বাংলাদেশের প্রসঙ্গ আসেনি। লেখাটাতে বাংলাদেশের মেয়েদের ওপর পাকিরা কি নির্যাতন করেছে সেটার বিশদ আছে। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের লোকজন বীরাঙ্গনাদের সাথে কি করেছে সেটার উল্লেখ কিছু জায়গায় আছে। এখন কথা হচ্ছে রুবাইয়াত এই মনগড়া ৪০,০০০ সংখ্যাটা পেলেন কোত্থেকে? সেটা সুসান ব্রাউনমিলারের নামে চামে চালালেনই বা কেন? রুবাইয়াতের রেফারেন্স টানা তথ্য মতে, যুদ্ধশিশুর সংখ্যা ৪০০ থেকে ১০ হাজার। অথচ ব্রাউনমিলারের বইতে আছে:

Accurate statistics on the number of raped women who found themselves with child were difficult to determine but 25,000 is the generally accepted figure. (মিলার, ১৯৯৩: ৮৪)

সুসান ব্রাউনমিলারের লেখাটা ভয়াবহ। পাকিদের বর্বরতার প্রামাণ্য দলিল। লেখাটা পড়তে গিয়ে বারবার শিউরে উঠেছি। একটা জায়গা দেখি খালি:

Khadiga was regularly abused by two men a day; others, she said, had to service seven to ten men daily. (Some accounts have mentioned as many as eighty assaults in a single night, a bodily abuse that is beyond my ability to fully comprehend, even as I write these words). (মিলার, ১৯৯৩: ৮৩)

২০০৯ সালের পেপারে যেসব মনগড়া পরিসংখ্যান দিয়েছেন সেগুলোকে বাংলা করে প্রথম আলোতে ‘মেহেরজান যা বলতে চেয়েছে’ শিরোনামে একটা লেখা নামান রুবাইয়াত হোসেন।

নীলিমা ইব্রাহিম তাঁর আমি বীরাঙ্গনা বলছির ভূমিকায় ৩০-৪০ জন মেয়ের উল্লেখ করেছেন, যাঁরা আত্মসমর্পণকারী বা বন্দী পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে ভারতে চলে গিয়েছিলেন (আমি বীরাঙ্গনা বলছি, নীলিমা ইব্রাহিম, জাগৃতি, ১৯৯৮)।…

তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্পের অধীনে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে সংগৃহীত ও প্রকাশিত হয় আট খণ্ডে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও দলিলপত্র। এটিই মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র আনুষ্ঠানিক তথ্যকোষ, যাতে এই নারীদের বিবৃতি আছে। মোট ২২৭ জনের মৌখিক জবানবন্দির মধ্যে ২৩ জন নারী। তাঁদের মাত্র ১১ জন যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। এসব দলিলে একাত্তরে মেয়েদের ওপর ধর্ষণের নৃশংসতার কিছুটা আভাস পাই, কিন্তু তাঁদের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না।…

সুসান ব্রাউনমিলারের অ্যাগেইনস্ট আওয়ার উইল: মেন, উইমেন অ্যান্ড রেপ, সিরাজুল ইসলাম ও মিয়া শাজাহান সম্পাদিত বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ ও অন্যান্য দলিলপত্রের ভিত্তিতে ধর্ষিত নারীর সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে আড়াই লাখ, গর্ভপাতের সংখ্যা ২৩ হাজার থেকে ৫০ হাজার এবং যুদ্ধশিশুর সংখ্যা ৪০০ থেকে ১০ হাজারের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যানে আসতে না পারায় বিষয়টি অমীমাংসিতই থেকে যায়।…

একাত্তরে ঠিক কতজন ধর্ষিত হয়েছে তার সংখ্যা কেন ঠিক নাই সেটা নিয়ে লেখা এক ধরনের নারীবাদী মশকরা টাইপ পেপার অন্যরা রেফারেন্স হিসেবে যোগ করতে শুরু করেছে। ব্লগে আর মিডিয়ায় পক্ষে বিপক্ষের ঝড়ে পড়ে অনেকেই নগদ অর্থ দিয়ে টিকেট কিনে মেহেরজান দেখে নেকি হাসিল করছেন। রুবাইয়াত গংদের পকেট ভরে ওঠে আমাদের গু খেয়ে পরখ করে দেখার অপার ক্ষুধায়। এসব দেখে রুবাইয়াতের মিশনের সফলতা নিয়ে নিঃসন্দেহ হই।

লিঙ্ক:
১। রুবাইয়াত হোসেনের পেপার
২। রুবাইয়াতের পেপারকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা জার্নাল ও বই:

৩। সুসান ব্রাউনমিলারের ৭৮-৮৬ পৃষ্ঠার বe
৪। রুবাইয়াত হোসেনের লেখা- মেহেরজান যা বলতে চেয়েছে

বহি
Against Our Will: Men, Women and Rape
Susan Brownmiller
Fawcett Columbine, USA
1993

ফিরে: আমার লাইব্রেরিতে সুসান ব্রাউনমিলারের ১৯৯৩ সালে রিপ্রিন্ট করা বইয়ের কপি ছিলো। রুবাইয়াত তার গ্রন্থপঞ্জিতে উল্লেখ করেছেন ১৯৭৫ সালে নিউইয়র্কের Simon and Schuster থেকে প্রকাশিত বইটির কথা। ধ্রুব বর্ণন আমার জন্য কষ্টস্বীকার করেছেন। লাইব্রেরিতে গিয়ে ১৯৭৫ সালে Simon and Schuster থেকে প্রকাশিত বইয়ের কপি ঘেঁটেছেন। তবে ৭৮-৮৬ পৃষ্ঠার মধ্যে ৪০,০০০ কিংবা ২৫০,০০০ সংখ্যা দুটি খুঁজে পাননি।

আবার ফিরে: লেখাটাকে মার্জিত ভাষায় লিখতে গিয়ে মুখ বারবার গালাগালিতে ভরে যাচ্ছিলো।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: সাফি, ধ্রুব বর্ণন।

বানানশুদ্ধি: বুনোহাঁস


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

সাবাশ শুভাশীষ'দা। ওয়েল ডান। চলুক

ট্যাগে 'মেহেরজান' যোগ করে দেন, একসঙ্গে থাকুক সব। আর শিরোনামটা আরও শক্ত করেন। এই মেয়ে যে তার থিসিসেই গোঁজামিল দিছে, সেইটার একটা টাচ দেন ওখানে। সে ভাবছে বাংলাদেশের পাবলিক, "ডিসকোর্স" টাইপের দুই চাইরটা আংরেজী শব্দ ঢুকায়া দিলে ঘাঁইটা দেখার সাহস করবো না! নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য রেফারেন্স বইয়ের তথ্য পর্যন্ত বিকৃত করে। কতো বড় পাকিপন্থী মডার্ন রামছাগী হইলে এইটা করতে পারে!

এইবার দেখা যাক তার এই রীতিমতো তথ্যচুরির স্বপক্ষে কোন কোন বুদ্ধিবেশ্যা কলম ধরতে এগিয়ে আসে!

বস, সংখ্যাগুলো আন্ডারলাইন করে দেন। পাঠকের চোখে এটা বেশি করে পড়া দরকার। রুবাইয়াতের পেপারে উল্লেখিত সংখ্যা আর তার ব্যবহৃত রেফারেন্সে উল্লেখিত সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য পাঠকের নজর কাড়ুক।

পল্লব এর ছবি

মন্তব্যে সহমত।

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সাফি এর ছবি

জার্নাল কমিটিকে ব্যপারটা জানানো গেলে ভাল হত। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে ছাগুদের পানি ঘোলা করা চলতে চলতে এখন বীরাঙ্গনাদের সংখ্যা নিয়ে লেগেছে এরা। দুদিন পরে দেখা যাবে মুক্তিযুদ্ধে আসলে কোন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়নি বরং নিরীহ শান্তিকামী পাকি হানাদারদের মারার কারণে আমাদের বিচার শুরু হবে

পল্লব এর ছবি

জার্নাল/কনফারেন্স কমিটিকে মেইল করে এটা জানানো উচিত। ডাটা ফলসিফিকেশন খুবই সিরিয়াস ব্যাপার। পেপার রিভোক করার ব্যবস্থা না করলে এই মহিলার "রিসার্চ" আরো লোক জেনে-না জেনে সাইট করতে থাকবে। এইটা একবার ধরায়ে দিলে অ্যাট লিস্ট পরে আর কেউ এর কাজ রেফারেন্স করতে পারবে না।

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

শুভাশীষ দা, অশেষ ধন্যবাদ এই নির্লজ্জ মিথ্যাচার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর জন্য। বড় ইউনিভার্সিটিতে ডিগ্রি নেওয়া এমন কত ছাগল-পাগল যে দেখলাম এই ক'বছরে!

রেফারেন্স দিয়ে মিথ্যাচারের এই চর্চা ভার্সিটি ও জার্নাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর করা উচিত। রুবাইয়াত মেরুদণ্ডহীন হতে পারেন, তার ইউনিভার্সিটি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

সচল জাহিদ এর ছবি

শুভাশীষ, থিসিসটা পাওয়া যাবে? যদি থিসিসেও এইরকম তথ্যসুত্র বিকৃত করে থাকে তাহলে ঐ ইউনিভার্সিটির কাছে বিষয়টি অবহিত করা যেতে পারে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

থিসিস তো দুদিন পর বই আকারেই বইমেলায় পাওয়া যাবে। থিসিসের টাইটেল পড়লেই বোঝা যায় ভেতরে কি বস্তু আছে। তথ্য সন্ত্রাস সেখানেও নিশ্চিত আছে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমিও তার থিসিস পাবার চেষ্টা করছি। রুবাইয়াতের প্রফেসর কিন্তু কম্প্যারিটিভ রিলিজিওনের প্রফেসর: http://faculty.washington.edu/novetzke/ অবশ্য আমি শিওর না এটা একই লোক কিনা। এ আবার ইউনিভার্সিটি অভ ওয়াশিংটনের প্রফেসর।

সাফি এর ছবি

প্রফেসরের সিভি - http://faculty.washington.edu/novetzke/Novetzke%20C%20V%20%202010.pdf

এখানে মাস্টার্স থিসিস সুপারভাইসড এর আন্ডারে রুবাইয়াৎ এর নাম আছে।

রায়হান আবীর এর ছবি

চলুক

রায়হান আবীর এর ছবি

জার্নাল কমিটিতে জানানো উচিত। খোঁজ নিলে তার পুরো থিসিসটাই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যাবে হয়তো!

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

তথ্যবিকৃতিকারীদের এতদিন তথ্যসন্ত্রাসী বলেই জানতাম। না রুবাইয়াত, তথ্যসন্ত্রাসী আপনার শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষেত্রে বেশ হালকা হয়ে যায়। ‌আপনার জন্য 'তথ্যবেশ্যাজীবী' তকমা-ই উপযুক্ত!

ফাহিম হাসান এর ছবি

সাবাশ শুভাশীষদা। দারুণ ব্যবচ্ছেদ।

অনুরোধ করব সংখ্যাগুলোকে বোল্ড করে দিতে।

অমিত এর ছবি

চলুক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

যতো ভুল তথ্য দিতে পারে সে-ই আজকাল বড় বুদ্ধিজীবী হয়...
মহিলা সেই পথেই যাইতেছে...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

 শুভাশীষ মনি এর ছবি

দরকারী লেখা, অসংখ্য ধন্যবাদ

স্পর্শ এর ছবি

শুভাশীষ দা, একটা কাজের কাজ করেছেন। উত্তম জাঝা!
এর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়তে হবে...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চলুক

পেপার পাবলিশের আগে রেফারেন্সগুলো ক্রসচেক করা হয় না? তাহলে সুপারভাইজার বা রিভিউ কমিটি থাকার দরকারটা কী। যাই হোক, এই উদ্দেশ্যমূলক তথ্যবিকৃতির বিষয়টা জার্নাল কমিটিতে রিপোর্ট করা উচিত।

বাউলিয়ানা এর ছবি

ভাল বলেছেন। রেফারেন্সে দেখলাম দেশের বিভিন্ন প্রকাশনীর বইও আছে।

কথা হচ্ছে, শাহীন আখতারের "তালাশ" এর ঐতিহাসিক (সাহিত্যক না কিন্তু) মূল্যমান যে কোনো ক্ষেত্রেই "একাত্তুরের দিনগুলি" বা "একাত্তুরের ডায়েরি" এর মত হবে না, এটা আমরা বুঝলেও বিদেশের একটা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ কতটুকু বুঝবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

এ ব্যাপারে জাতীয় উদ্যোগ নেয়া জরুরী যে, মুক্তিযুদ্ধ ভিক্তিক কোনো প্রকাশনার যেকোনো তথ্য সঠিক রিভিউ এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

ফাহিম হাসান এর ছবি

মেহেরজান ছবির পরিচালক রুবাইয়াতের লেখা “Trauma of the Women, Trauma of the Nation: A Feminist Discourse on Izzat” আর্টিকেলটি বিভ্রান্তিমূলক ও বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে লেখা। লেখায় কিন্তু মলম মাখানো কিছু কথা আছে, আছে দরদ উথলানো কাঁদুনী। কিন্তু আমি লেখাটি পড়ে হতবাক হলাম তার কৌশল দেখে - কীভাবে তিনি চতুর বাক্যবিন্যাসে পাঠকমনে ধোঁয়াশা তৈরি করেছেন। তার লেখার কিছু অংশ তুলে ধরছি -

১।

The national rhetoric is:our sovereignty or swadhinota has cost us three million lives and two hundred thousand women’s ‘izzat.
Page:1

প্রথম লাইনেই খটকা। লেখক কৌশলে শহীদের/বীরাঙ্গনার সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। national rhetoric মানে কী? এই সংখ্যার অস্তিত্ব কি ফিকশনাল? নাকি মৌখিক? আমি rhetoric শব্দের অন্য কোন অর্থ আছে কীনা দেখার জন্য ধুঁ দিলাম -

Online dictionary
1.rhetoric - using language effectively to please or persuade
2.rhetoric - high-flown style; excessive use of verbal ornamentation; "the grandiosity of his prose"; "an excessive ornateness of language
3.rhetoric - loud and confused and empty talk; "mere rhetoric"
4.rhetoric - study of the technique and rules for using language effectively (especially in public speaking)

Oxford Dictionary

the art of effective or persuasive speaking or writing, especially the exploitation of figures of speech and other compositional techniques.

language designed to have a persuasive or impressive effect, but which is often regarded as lacking in sincerity or meaningful content:all we have from the Opposition is empty rhetoric

এই cost us three million lives মোটেই rhetoric নয়। এটি লিপিবদ্ধ সত্য।

২।

If one looks at the national history of Bangladesh from a patriarchal-mainstream
point of view then, it seems that, the raped women of 1971 are not forgotten. These
women appear in national history text books, popular literature, and even in the museum!
Page:1

লাইনের শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন খুব খেয়াল কইরা! লেখকের অবাক হওয়ার কী আছে এখানে? তাঁদের আত্মত্যাগের কথা লিপিবদ্ধ থাকবে এই তো স্বাভাবিক। আপনি ভাবছেন এটা শুভবুদ্ধিজাত বিস্ময়? অথবা ব্যঙ্গ?

না, তা নয়। কারণ এই লেখার শেষে দেখুন -

Even though bringing the war criminals to justice is one step towards coming in terms with the violence inflicted upon these women, the emotional solution lies in remembering. page 12

না, emotional solution শুধু স্মরণ নয় - লিপিবদ্ধ থাকতে হবে তাঁদের আত্মত্যাগের ইতিহাস। রাষ্ট্রের মাধ্যমে আইনি বিচার-ই একমাত্র এবং একমাত্র solution। আমরা নীরবে স্মরণ করে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলব না - আমরা বিচার করে উপযুক্ত শাস্তি দিব - এটাই solution

Even Ferdousi Priyobhashini, the only middle class woman to have disclosed
her memory of rape does not prefer the term Birangona, “I thought it was a low profile
word, I did not think of it as glorious”
page:3

এই লেখায় প্রিয়ভাষিনীর কথা প্রথম উল্লেখ হয় ৩ নং পৃষ্ঠা্য। তিনি প্রিয়ভাষিনীকে পরিচয় করিয়ে দেন the only middle class woman to have disclosed her memory of rape । বীরাঙ্গনাদের মাঝে আর্থ-সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস কতটুকু যৌক্তিক - যেখানে নীলিমা ইব্রাহিমের, জাহানারা ইমামের লেখাতেই পাওয়া যায় ধর্ষনের সার্বজনীন চিত্র? এটা আসলে স্রেফ কৌশল। বুঝতে পারবেন যখন নিচে পড়বেন -

It is not only the nationalist narrative that can be charged with the allegation of
objectifying women war victims, but the secular intervention under Jahanara Imam’s
initiative was equally problematic. Three women from the rural area of Kustia were
brought to Dhaka to give testimonies at the people’s court.

rural কথাটা খেয়াল করুন।

এবার দেখেন -

These women were not explained adequately the concept behind the people’s court, on the contrary, their pictures were taken and published in the newspaper without their permission.

এই বক্তব্যের কোন তথ্যসূত্র নেই। কিন্তু এর উপর ভিত্তি করে তিনি উপসংহার টানেন -

The overall debate is regarding whether or not after all these
years, it is necessary and practical to ‘dig out’ the forgotten narratives of rape.

তিনি লেখায় নানাভাবে প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ যুক্তি দিয়েছেন - middle class বীরাঙ্গনাদের মাঝে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বীরাঙ্গনাদের সামাজিক অবস্থান বিপন্ন হবে, বীরাঙ্গনাদের সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত আছে

As the disclosures of women’s testimonies disrupt their social lives, it has become
a moral debate among the historians whether or not disclosure is at all necessary. page 10

The ultimate impossibility of writing a history of the sexually violated women of
1971 is the confusing figures of women who were raped, impregnated, and killed.
page:7

কাজেই এ নিয়ে আর তর্ক করে লাভ নেই - বরং মোম জ্বেলে নীরবে স্মরণ করি - অথবা মহিলদের ঘরোয়া আড্ডায় এ প্রসঙ্গ সীমাবদ্ধ রাখি।

৩।

Women’s role in 1971 in the fictional genre is glorified primarily as mothers. page 9

গায়ে আগুন ধরে যায়। glorified মানে ??? মশকরা করে নাকি ??? আর এরকম উদ্ভট দাবীর কারণ কী? কোন রেফারেন্স নাই - খুব খেয়ল কইরা।

৪। পরিশেষে -

First, there is a real scarcity of cinematic expression of the
raped women of 1971, and even when these women appear as subjects in films, they are
yet again peripheral and made to leave the landscape by killing themselves or dying at the end

page 9

প্রথম অংশের সাথে একমত কিন্তু দ্বিতীয় অংশ দেখুন। বীরাঙ্গনার আত্মহত্যার ইতিহাস ওনার পছন্দ হচ্ছে না। যেন এটা সঠিক রিপেজেন্টেশান নয়

অতঃপর -

Especially, in contemporary Bangladesh where the history of Birangonas is systematically being erased, it is necessary to reaffirm these women in the national history. page 12

তাই তিনি নির্মাণ করেন পাকি সঙ্গমের ফোক ফ্যান্টাসি - মেহেরজান

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনার ব্যাখ্যা ভালো লাগলো। মেহেরজানের পরিচালিকা রুবাইয়াত হোসেনের পুরা পেপারটাই একটা আস্ত প্রভুখণ্ড। আমি এই ছোট পোস্ট দিলাম খালি তার একটা লাইনের মিথ্যাচার নিয়ে। বাকি লাইনগুলো নিয়েও ধরা হবে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

চলুক

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

বাউলিয়ানা এর ছবি

চলুক
এরকম আরও কত পেপার/বই সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে কে জানে। একদিন দেখা যাবে এরকম বিকৃত তথ্যে ভরা পেপার/বইএর লেখক/লেখিকারা জাতিসংঘ বা কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ বিষয়ক উপদেষ্টার পদ অলংকৃত করছেন!

নিবিড় এর ছবি

খুব ভাল একটা কাজ করেছেন শুভাশীষ দা। ভার্সিটি আর জার্নাল কর্তৃপক্ষ কে জানান দরকার এই জোচচুরির কথা

সুরঞ্জনা এর ছবি

ধন্যবাদ দাদা।
এটা সবার জানা দরকার।
চলুক

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

দ্রোহী এর ছবি

গড়িয়ে পড়ে শ্রদ্ধা দেখানোর ইমো।

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

শুভাশীষ'দা. লেখাটার জন্য সালাম নেন।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আম-পাবলিকের মধ্যে রিসার্চ-থিসিস ইত্যাদি গালভরা শব্দগুলো নিয়ে একটু বাড়তি সমীহ আছে। রিসার্চে অথেনটিক কাজ যেমন আছে, অনেক আজেবাজে ক্রাপও আছে, যা যথাযথ রিভিউ না করেই পাবলিশ করা হয়। আর থিসিসের ব্যাপারেও একই কথা খাটে। অধিকাংশ পিএইচডি থিসিসেই মৌলিক গবেষণা থাকে না, অনেকগুলোয় থাকে ভুলে ভরা জোড়াতালি এবং কিছু থাকে একেবারেই ফালতু। আর মাস্টার পর্যায়ে মানুষ গবেষণা কি জিনিস, সেটার এবিসি শেখা শুরু করে মাত্র। সুতরাং থিসিস করেছে মানেই এক্সপার্ট ভাবার কোনো কারণ নেই। আরেকটা সাধারণ প্র্যাকটিস হলো অনেক রিলেটেড ওয়ার্ক ভালোমতো না পড়েই সেগুলোর রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়।

রুবাইয়াৎ হোসেনের থিসিসে উল্লিখিত ভুল তথ্যগুলোর ক্ষেত্রে অবশ্য না জানা, না পড়ার চেয়ে ইচ্ছাকৃত ফরমায়েশী তথ্যবিকৃতির সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, এই তথ্যগুলো টপিকের ওপরে অনেক গুরুত্ব বহন করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা বা অত‌্যাচারিত নারীর সংখ্যা কম দেখিয়ে যুদ্ধের ভয়াবহতাকে কমানোর চেষ্টা শুধুমাত্র একটি পক্ষেরই আছে। রুবাইয়াতের এই বালছাল থিসিসও সেই পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করে।

সমস্যা হলো এইসব বালছালকেই রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়, মুক্তিযোদ্ধা যাদুঘরে [পেপারের লিংকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ: http://www.liberationwarmuseum.org/genocide/papers/lwm_icgtj_2009_hossain.pdf] রুবাইয়াতের থিসিসের সাথে মেহেরজানের এক কপিও যাবে এবং ইতিহাস বিকৃতি এভাবেই ঘটতে থাকবে।

এসব আকামকে বাড়তে দিলেই তা শরীরে পঁচন ধরাবে। যারা মনে করছেন তাদের যথাযথ টীকা নেয়া আছে, তারা হয় ইচ্ছাকৃতভাবে ছাগুপ্রেমে দিওয়ানা হয়েছেন নাহয় বোকার স্বর্গে বাস করছেন।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

উনি কি International Crimes Strategy Forum (ICSF) এর সদস্য হয়ে বসে আছেন?

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

চলুক

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

Susan Brownmiller-এর লেখাটা পড়তে গিয়ে বারবার ভারী হয়ে যাচ্ছিল নি:শ্বাস। এগুতে পারছিলাম না। নির্যাতন আর অত্যাচারের অসম্ভব এক গাঁথা। শুভাশীষ ভাইকে তাড়াতাড়ি জানানোর জন্যে পড়ে শেষ করেছি। ও কয়টা পাতা অনেক দীর্ঘ মনে হচ্ছিল।

আমি বারবার ভাবি রুবাইয়্যাত হোসেনের ইন্টেলেকচুয়্যাল কন্ট্রিবিউশানের কথা। আমি ভাবি, ৪০ বছরের পুরনো বিষয় নিয়ে যখন মানুষকে গবেষণা করতে হয়, তাকে নিশ্চয়ই নতুন কিছু আইডিয়া বের করে দেখাতে হয় ডিফেন্সে পাশ করার জন্যে। নতুন ঠিক কি কি দেখা যেতে পারে ৭১-এর নারী নির্যাতনের ইতিহাসে, যা আমরা এখনো দেখে উঠি নি?

Susan Brownmiller-এর লেখাটা পড়ে আমার মনে হয়েছে, আমরা সেই ইতিহাসের কিছুই ঠিকমত জেনে উঠি নি। পৃথিবীর সব চাইতে চরম নির্যাতিত, অবহেলিত, অভাগা জাতি হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনারা। অামার কথা বিশ্বাস না হলে লেখায় শুভাশীষ ভাইয়ের ব-e-এর লিংক থেকে লেখাটি পড়ে নিন। প্লিজ পড়ুন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাঁথা ঠিক যতটা শুনেছি, বীরাঙ্গনাদের গল্প ঠিক ততটা এড়িয়েছি। হুমায়ূন আহমেদ তার জননী ও জ্যোছনার গল্পে নারী অত্যাচারের বিষয়ে কিছু লেখার ব্যাপারে নিজের অনুভূতিগত অপারগতা প্রকাশ করেন। হুমায়ূন আহমেদের সেই অপারগতা, আমাদের সবার এই ভুলে থাকারই প্রতিনিধি।

কি ছিল সেই ঘটনাগুলো? সম্ভ্রম হারানো, যে দৃষ্টিতে তাদের সমাজ ও স্বামীরা দেখেছে? ধর্ষণ, যে দৃষ্টিতে আমাদের আইন দেখে? নির্যাতন? যে শব্দটা একশভাগ সত্য হবার পড়েও সেই ঘটনাগুলোর নূ্যনতম প্রতিনিধি হতেও ব্যর্থ? অমানুষিক নির্যাতন! বই থেকে উদ্ধৃত করছি:

At first, Khadiga said, the soldiers tied a gag around her mouth to keep her from screaming. As the months wore on and the captives' spirit was broken, the soldiers devised a simple quid pro quo. They withheld the daily ration of food until the girls had submitted to the full quota.

এই ভয়াবহতা, এই বিভীষিকা, এগুলোর কিছুই আমরা জানি না। অথচ বারবার কেন সেখানে পরিসংখ্যানটা সমস্যা হয়ে দেখা দিল? দু লক্ষ খুব বেশি, অতিরঞ্জিত বলে মনে হয় তার কাছে, যেটা কিনা আসলে Susan Brownmiller-এর তিনটে ভিন্ন পরিসংখ্যানের মধ্যে সর্বনিম্ন? রুবাইয়্যাত হোসেন তো Susan Brownmiller পড়েছেন। সংখ্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা তো ওই লেখাতেই Susan Brownmiller দূর করে রেখেছেন:

But the mass rape of Bangladesh had not been unique. The number of rapes per capita during the nine-month occupation of Bangladesh had been no greater than the incidence of rape during one month of occupation in the city of Nanking in 1937, no greater than the per capita incidence of rape in Belgium and France as the German Army marched unchecked during the first three months of World War I, no greater than the violation of women in every village in Soviet Russia in World War II.

দু লক্ষ ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলা কোন সংখ্যা না, বরং হয়তো সঠিক সংখ্যার চেয়েও ছোট।

Susan Brownmiller-এর লেখাটা পড়তে গিয়ে বারবার মনে পড়েছে বইটার টাইটেল: "Against Our Will." ঠিক তাই তো। মতের বিরুদ্ধে শরীরকে ব্যবহার করতে দিতে হয়েছে প্রতিদিন, প্রতিরাত। মাসের পর মাস। সে অবস্থায় কোন অহিংস চেতনায় মন পাল্টে আসে নি ধর্ষকের সাথে বোঝাপড়া করে নিতে। প্রতিনিয়ত ঘৃণা করে গেছে।

Few cared to bear their babies. Those close to birth expressed little interest in the fate of the child.

নিজের শরীরের যেটুকু অংশের সাথে নির্যাতকের সম্পর্ক ছিল, তাকে ঘৃণা করে গেছে। তাদের অনুভূতি, কষ্ট বোঝবার সাধ্য কি আমাদের আছে? তাদের অনেকে নিজের গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে যাওয়া তো দূরের কথা, ঘরেই থাকতো পর্দা করে। সেই তাদের জীবনের সবটুকু শেষ হয়ে গেছে, তাদের স্বামী সমাজ বাবা মার কাছে ঠাঁইটুকু ধ্বংস হয়ে গেছে, against their will, নিতান্তই অনিচ্ছায়।

ইতিহাসের সেই ক্ষোভকে, ক্ষতকে কি অহিংস, স্বেচ্ছা মিলনের কল্পনা দিয়ে সারিয়ে তোলা সম্ভব? মেহেরজান দেখি নি। শুনেছি তিনি বীরাঙ্গনাদের নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার গবেষণার বিস্তারিত আমার কাছে নেই। মেহেরজানে নাকি তার কিছুটা ফল আছে। অদেখা অংশ আছে, অভাবিত গুরুত্বপূর্ণ কল্পনা আছে। কিন্তু মেহেরজান নিয়ে যে ঝড় বইছে, যেটা ছবিটার (বা সাধারণভাবে যেকোন ছবির) উদ্দেশ্য বা প্রতিপাদ্য ছিল বলেই মনে করছি, তাতে করে কোন অংশেই, কারো বয়ানেই তো বীরাঙ্গনাদের নিয়ে কোন প্রকার সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মেহেরজান কি তাহলে বীরাঙ্গনাদের অনুভূতিকে নতুন পুরাতন যেকোন রকমভাবে উপলব্ধিতেই ব্যর্থ হল না? তাই এই ফ্যান্টাসিগুলো কি বীরাঙ্গনাদের নামে না হলেই হত না?

ডাবল ক্রস চেক এর ছবি

আপনার লেখায় রুবাইয়াত হোসেনের লেখার লিংক খুঁজছিলাম। পেলাম না। গুগলে সার্চ করে এই লেখাটা পেলাম:
http://www.liberationwarmuseum.org/papers/lwm_icgtj_2009_hossain.pdf

টাইটেল একই, Trauma of the Women, Trauma of the Nation: A Feminist
Discourse on Izzat

আপনি যেই প্যারাগ্রাফ দিলেন, সেই প্যারাগ্রাফও পেলাম আট নম্বর পৃষ্ঠার একেবারে উপরে। কিন্তু বিবলিওগ্রাফিতে গিয়ে আর মেলাতে পারলাম না। বিবলিওগ্রাফীর লিস্টটা এরকম:
16. Chowdhury, Shyamoli Nasreen, Nirudishto Maayer Khoje, Dhaka: Agami
Prokashoni, 2004.
17. Dasgupta ed. Samsad Bengali-English Dictionary. Calcutta, 1989.
18. D’Costa, Bina, War Babies: The Question of National Honour (Unpublished).
19. Haq, Anisul, Maa, Dhaka: Shomoy, 2003.

আগ্রহী পাঠকরাও ক্রস চেক করে দেখতে পারেন। আপনার সমস্ত লেখাটাই এই বিবলিওগ্রাফীর 'মিথ্যাচার' নিয়েই, তাই ক্রসচেকটা একটু ভালো করে দেখবেন কি?

দ্রোহী এর ছবি

ভাই ডাবল ক্রস চেক:

আপনি ফুটনোট আর বিবলিওগ্রাফি গুলিয়ে ফেলেছেন। আপনার দেয়া পেপারটাই শুভাশীষ তার লেখায় শেষে প্রথম লিঙ্ক হিসাবে উল্লেখ করেছে। আপনি খুঁজে পেলেন না কেন বুঝতে পারলাম না। অ্যাঁ

আপনার দেয়া পেপারের লিংক ধরে ৮ নাম্বার পাতাটা খোলেন। তারপর ফুটনোটে গিয়ে ১৬ আর ১৮ নাম্বারে খেয়াল করে দেখেন কী লেখা। দেখতে পাচ্ছেন কি?

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ফুটনোট রিফারেন্স যে ক্রসচেক হয় সেটা রুবাইয়াত হোসেনের জানার কথা। আমার যেটা মনে হচ্ছে, তিনি সরাসরি মিথ্যাচার না করে, সেটা এড়ানোর জন্য চালবাজি করেছেন।

লক্ষ্য করুন, তিনি ঐ প্যারায় রেঞ্জ বোঝানোর জন্য ৬টি সংখ্যা ব্যবহার করেছেন ... এর মধ্যে ধর্ষিতের সংখ্যা ৪০ হাজার আর যুদ্ধশিশুর সংখ্যা ৪০০ -- এই দুটোতে পাকিজাত গন্ধ প্রকট। বাকী চারটি সংখ্যা কমবেশী সদুদ্দেশ্য নিয়ে লেখা লেখকদের প্রবন্ধে/কমপাইলেশনে পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার খেয়াল করুন, রুবাইয়াত ঐ পাকিজাত দুর্গন্ধযুক্ত সংখ্যাদুটোর রিফারেন্স হিসেবে কোনো ফুটনোট দেননি, গ্রহনযোগ্য চারটি সংখ্যার বেলায় শুধু দিয়েছেন।

তবে রুবাইয়াতের স্টান্সটা নিয়ে আমি কিছুটা চিন্তিত। আমার মনে হয়না তাঁর মিশন ছাগুদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত (যদিও শেষমেষ ফলাফলটা ছাগুদের সুবিধা করে দিচ্ছে), বিশেষ করে যখন জানা যায় যে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারেরই যোগাযোগমন্ত্রীর কন্যা।

রুবাইয়াতের পেপারটা আমি আগে পড়েছিলাম, আমার মনে হয়েছে বীরাঙ্গনাদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি আমাদের সমাজব্যবস্থা/রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রকদের উপর ভীষনভাবে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন, সেটা এতটাই তীব্র যে তাঁর মনস্তত্বটা "শত্রুর শত্রু বন্ধু" টাইপের একটা দিকে টার্ন করেছে। পেপারটা পড়লেও দেখা যাবে, এলোমেলোভাবে নানান দৃষ্টিকোণ থেকে বীরাঙ্গনা বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের সমালোচনা উঠে এসেছে। গবেষকের ক্ষেদটা খুব স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে পেপারে। এটা সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজনীতিতে আমাদের মুরুব্বীদের বেশী উৎসাহ আর একই সাথে এই ইতিহাসের যথাযথ ম্যানেজমেন্টে কম উৎসাহের (প্লাস পনেরো বছরের সামরিক শাসনে ও দশ বছরের ডানপন্থী শাসনে নিরন্তর ইতিহাসবিকৃতি) -- এগুলোর মোটের একটা ফল। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ভবিষ্যতেও যে এভাবে আরো তরুণ-তরুণীরা বিগড়ে যাবে -- রুবাইয়াতের মনস্তত্বটা আমাকে সেরকম ভয়ংকর একটা ইঙ্গিত দিচ্ছে।

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

লক্ষ্য করুন, তিনি ঐ প্যারায় রেঞ্জ বোঝানোর জন্য ৬টি সংখ্যা ব্যবহার করেছেন ... এর মধ্যে ধর্ষিতের সংখ্যা ৪০ হাজার আর যুদ্ধশিশুর সংখ্যা ৪০০ -- এই দুটোতে পাকিজাত গন্ধ প্রকট। বাকী চারটি সংখ্যা কমবেশী সদুদ্দেশ্য নিয়ে লেখা লেখকদের প্রবন্ধে/কমপাইলেশনে পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার খেয়াল করুন, রুবাইয়াত ঐ পাকিজাত দুর্গন্ধযুক্ত সংখ্যাদুটোর রিফারেন্স হিসেবে কোনো ফুটনোট দেননি, গ্রহনযোগ্য চারটি সংখ্যার বেলায় শুধু দিয়েছেন।

বীরাঙ্গনাদের সংখ্যা ২৫০,০০০ সংখ্যাটা উল্লেখ করার সময় রেফারেন্স ছিল সুসান ব্রাউনমিলারের বই। সেখানে ২৫০,০০০ সংখ্যাটা নেই। বরং ৪০০,০০০ পর্যন্ত বলা আছে। যুদ্ধশিশুর সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০,০০০ লিখেছেন রুবাইয়াত। অথচ ব্রাউনমিলারের বইতে আছ ২৫,০০০; খুঁজে খুঁজে যেখানে কম সংখ্যাটা আছে সেটা ব্যবহার করে ranges from ঘোষনা দেন ছাগু হেদায়েতকারি রুবাইয়াত।

পুরা পেপারে আরো অজস্র ম্যাৎকার আর লাদি ফালানোর চেষ্টা আছে। সেগুলো নিয়েও ভবিষ্যতে আলোচনা করবো। আর তার মাস্টার্স থিসিস সেই মহা প্রভুখণ্ডে কি আছে সেই চিন্তা করছি।

হিমু এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কি এই ছাগলীর পেপার না পড়েই ঝুলায় রাখসে? নাকি পড়েও বুঝে নাই?

মফিদুল হক, রুবাইয়াত হোসেনের এই পেপার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ওয়েবসাইট থেকে দ্রুততম সময়ে সরিয়ে নিন।

বইখাতা এর ছবি

চলুকচলুক এইটা একটা খুব ভাল কাজ হয়েছে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

এই লেখাটা যে যেখানে পারেন ছড়িয়ে দিন। রুবাইয়াতের উদ্দেশ্য সবার কাছে পরিষ্কার হোক। কী উদ্দেশ্য নিয়ে সে মেহেরজান বানিয়েছে সেটা সবার কাছে প্রতিভাত হোক। বুদ্ধিবেশ্যারা জানুক তারা কার পিছনে কলম ধরেছে!

বালক এর ছবি

একটা কাজের কাজ করেছেন বস চলুক

____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সাবাশি দেই

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

চলুক
এইভাবে অ্যাকাডেমিকালি ধরে উপড়ে ফেলা সবচেয়ে দারুণ।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

সুসান ব্রাউনমিলারের ভয়াব‌হ বিবরন পড়েও যে সামান্য দীর্ঘশ্বাস না ফেলে পাকি প্রোপাগাণ্ডাকে আরো বেগবান করার কাজে প্রবলভাবে নিয়োজিত হয়, সে এক অসাধারন ছাগু। ত্রিভূজেরা এর কাছে কিছুই না। রুবাইয়্যাত ম্যাডাম অসাধারন একজন ছাগু। আপনার জন্যে কচি কাঁঠালডালের বাড়ি বরাদ্দ রাখতে পারলে ভালো লাগতো!!!!

শুভাদা, আপনি জেমস ভন্ডকেও ছাড়ায়ে গ্যালেন। দেঁতো হাসি

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

একটা খুব ভালো কাজ হইছে, শুভাশীশ দা। আপনারে সেল্যুট। এই ছাগীর পুরা পেপারটা নিয়া এক্কেবারে টুইকা টুইকা ওর ম্যাৎকার গুলা ধইরা এমুন কইরা ওরে ফানা-ফানা বানান।

এই লিঙ্ক এক্ষুনি শেয়ারে দিতেছি ... ...

চলুক

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

এটা ভালো একটা কাজ হয়েছে।
ভদ্রমহিলার নিয়ত যে খারাপ, এটা তার একটা আঙ্কিক প্রমাণ।

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

স্বাধীন এর ছবি

দারুণ একটি কাজ হয়েছে শুভাশীষ। যারা ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন এমন কারোর এগিয়ে আসা উচিত এই পেপার এবং থিসিসের বিরুদ্ধে পেপার লিখা। আর থিসিসের তথ্য বিকৃতির ব্যাপারেও অভিযোগ করা যায়।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

তথ্যবহুল লেখাটির জন্য ধন্যবাদ । আসলেই আবেগাক্রান্ত না হয়ে যুক্তি দিয়েই প্রতিহত করতে হবে । যদিও আবেগাক্রান্ত (কথাটা হওয়া উচিত ক্রোধান্বিত) না হওয়ার উপায়টা কী তা জানি না এক্ষেত্রে ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অতিথি লেখক এর ছবি

তথ্য বহুল লেখা। ভালো লাগলো অনেক।

আলিম আল রাজি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চলুক বস চালিয়ে যান, উৎসাহ দিতে আমি আছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

--------------------------------------
সবুজ পাহাড়ের রাজা

আমার চারপাশ ডট কম

অতিথি লেখক এর ছবি

মেহেরজান চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খুব সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ উঠার কারণে। চলচ্চিত্রটির পরিচালক রুবাইয়াৎ হোসেন নাকি জানান, কেন বা কী কারণে প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী বন্ধ করা হলো, তা তিনি জানেন না।

সত্যান্বেষী

অতিথি লেখক এর ছবি

চোখে আঙ্গুল দিয়ে সত্য দেখানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ চলুক

মোহনা'

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

Against Our Will: Men, Women and Rape - বইটা আজই কিনে আনবো। কিছু রেফারেন্স হাতের কাছে থাকা উচিত।

লেখায় পাঁচ তারা।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

অন্য একটা ব্লগে এই তথ্য দিয়েছি। তবু এখানে তুলে রাখলাম। রুবাইয়াত হোসেন একজন আপাদমস্তক মিথ্যাবাদী। তাঁর বিশেষ যোগ্যতা রেফারেন্স সহকারে মিথ্যা কথা বলাতে। প্রথম আলোতে তিনি লিখেছেন:

তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্পের অধীনে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে সংগৃহীত ও প্রকাশিত হয় আট খণ্ডে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও দলিলপত্র। এটিই মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র আনুষ্ঠানিক তথ্যকোষ, যাতে এই নারীদের বিবৃতি আছে। মোট ২২৭ জনের মৌখিক জবানবন্দির মধ্যে ২৩ জন নারী। তাঁদের মাত্র ১১ জন যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। এসব দলিলে একাত্তরে মেয়েদের ওপর ধর্ষণের নৃশংসতার কিছুটা আভাস পাই, কিন্তু তাঁদের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। সেনাশিবিরে সংঘটিত যৌন দাসত্বের পুরো চিত্রটিও এতে অনুপস্থিত। ফলে ১৯৭১ সালের নিপীড়িত নারীদের নির্ভরযোগ্য ইতিহাস লিখতে গিয়ে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় তাঁদের সংখ্যার ব্যাপক তারতম্য।

গণনায় ২২৭ ঠিক আছে (স্বাধীনতা দলিলপত্র কিছু সংখ্যার এদিক সেদিক আছে, সেগুলো ঠিকভাবে গুণলে ২২৭ ই আসে)। তবে ২৩ আর ১১ সংখ্যা সঠিক নয়। ২৯ জন নারী তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। পাশবিক অত্যাচারের কথা স্বীকার করেছেন ১২ জন। বাকি সতের জনের মধ্যে একজন তাঁর নিজের মেয়ের ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন, অন্য আরেকজন তাঁর দুইজন মেয়ের ধর্ষণের কথা বলেছেন। ২৯ জনের প্রায় সবাই তাদের আশেপাশে ঘটা অজস্র পাশবিক ধর্ষণের ও অমানুষিক নির্যাতন ও হত্যার কথা ফিরে ফিরেই বলেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী পুরুষদের সবাই তাদের চোখে দেখা অজস্র ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের কথা বলেছেন।

ঊনত্রিশ পর্যন্ত ঠিকঠাক গণনা করতে শিখেন নাই যিনি তাকে নিয়ে এতোসব আলোচনা করতেও অস্বস্তি হয়। রুবাইয়াত, নিচের স্ক্রিনশট ধরে ১ ২ ৩ করে গুণতে শিখুন।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

রুবাইয়াত হোসেন লিখেছেন:
তাঁদের মাত্র ১১ জন যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। এসব দলিলে একাত্তরে মেয়েদের ওপর ধর্ষণের নৃশংসতার কিছুটা আভাস পাই, কিন্তু তাঁদের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না।

উপরে আন্ডার লাইন করা শব্দটার মানে কী? একটু খেয়াল করলেই শব্দটা চিনতে পারবেন। জ্বী, 'ঈভ টিজিং'এর বাংলা হিসেবে এটা ব্যবহৃত হয়। এই শব্দটা শুনে কি মনে হয় যে পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা আমাদের মা-বোনদের উদ্দেশ্য করে হিন্দি গানে টান দিয়েছিলো‌? কিংবা পেছনে একটা দুইটা সিটি মেরেই ক্ষান্ত দিয়েছিলো?

বস্তুত "যৌন নিপীড়ন" শব্দটা দিয়ে পাকিস্তানীদের পাশবিকতার এক কণাও প্রকাশ পায় না। এবং এই শব্দটা ব্যবহার করা মানে বীরাঙ্গনাদের ছোট করা। যেটা রুবাইয়াত হোসেন ইতোমধ্যেই নির্লজ্জভাবে করে আসছে একের পর এক, এমনকি তার গবেষণাপত্রেও।

বীরাঙ্গনাদের ছোট করে, তাঁদের অবদানকে খাটো করে- তাঁদের ব্যাপারে বড় বড় পুস্তকী বুলি আউড়ানো অন্তত রুবাইয়াত হোসেনের পাকিবান্ধবমুখে মানায় না। তার মেহেরজান'ও বীরাঙ্গনা কিংবা মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান করেই বানানো নয়, বরং ইচ্ছাপূর্বক আমাদের দুর্বলতমস্থানে সজোরে আঘাত করার একটা পাটকেলমাত্র।

অনুপম রায় এর ছবি

দাদা, আপনার লেখাটার একটা ইংলিশ ভারসন দিবেন প্লিজ। ঐ ভার্সিটির রিসার্চ বিভাগ আর ওর সুপারভাইজার এর কাছে পাঠাব । প্লিজ দাদা দেখেন চেষ্টা করে ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

রুবাইয়াত হোসেন এক সাক্ষাৎকার বলেছেন-

শিক্ষাজীবনে আমার থিসিসের বিষয় ছিল 'একাত্তরের বীরাঙ্গনাদের ইতিহাস কিভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।' এ গবেষণার কাজটি করতে গিয়ে 'নারী-৭১' বই থেকে জানতে পারি, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের মেজর পদবির এক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে বাঙালি মেয়ের পরিচয়ের কথা। এখানেই যুদ্ধের মানবিক দিকটি খুঁজে পাই। চলচ্চিত্রের গল্প আবিষ্কার করি। একই সঙ্গে রাজিয়া মজিদের 'যুদ্ধ ও ভালোবাসা' বইটি পড়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য গল্পটিকে শানিত করি। তবে সব মিলিয়ে 'মেহেরজান' চলচ্চিত্রের গল্প আমার কল্পনাপ্রসূত বলতে পারেন।

অথচ এবাদুর রহমানের 'গুলমোহর রিপাবলিক'-এ রুবাইয়াতের কল্পনাপ্রসূত গল্পের ন্যারেটিভ দেখি-

গুলমোহর রিপাবলিক
এবাদুর রহমান প্রণীত
যেহেতু বর্ষা
ফেব্রুয়ারি ২০০৯

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মেহেরজান বিনোদন সংবাদ

American International Film Festival 2011 এর জুন মাসের নমিনেশন কিংবা পুরস্কারের লিস্টিতে রুবাইয়াত হোসেন:

Best Narrative Feature:
Meherjaan (119 min, Bangladesh) (Bengali with English Sub-Titles)
Best Director: Rubaiyat Hossain

Best Drama Feature:
Meherjaan (119 min, Bangladesh) (Bengali with English Sub-Titles)
Best Director: Rubaiyat Hossain

Best First Time Movie Script Writer: (First or second Script)
Rubaiyat Hossain for Meherjaan (119 min, Bangladesh) (Bengali with English Sub-Titles)

Best Female Director:
Rubaiyat Hossain for Meherjaan (119 min, Bangladesh) (Bengali with English Sub-Titles)

Best Movie Shot on 35 mm Film:
Meherjaan (119 min, Bangladesh) (Bengali with English Sub-Titles)
Best Director: Rubaiyat Hossain

Best Bollywood Movie:
Meherjaan (119 min, Bangladesh) (Bengali with English Sub-Titles)
Directed by: Rubaiyat Hossain

মজার ব্যাপার- মেহেরজান বেস্ট বলিউড সিনেমা ক্যাটাগরিতেও নমিনেশন পেয়েছে।

এই পুরস্কার বা নমিনেশনের কোনো আগামাথা নাই। জুন ২০১১ তে একটা এন্ট্রি দেখলাম-

Best Foreign Language Film:
Hum Aapke Hain Koun...! (206 min, India) (Hindi)
Best Director: Sooraj R. Barjatya

এই সিনেমা ১৯৯৪ সালের। চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।