সপ্তাহে কোনদিন কি খাব সেটা ঠিক ছিল। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রধান আইটেম থাকত মুরগির মাংস। সোমবার ও বুধবারে মাছ। বৃহস্পতিবারে সবজি। বাবা ডিমের ঝোল পছন্দ করতো, সেটা থাকত মঙ্গলবারে। আমি ডিম একেবারেই পছন্দ করি না। বুবুন খুব পছন্দ করে। আমি পরে অবশ্য ডিম খেতে পছন্দ করতে শুরু করি। মা খুব ভালো ছিল রান্নায়। রবিবার ছাড়া ডাল থাকতো প্রতিদিন। আর সালাদ। রবিবারে আক্কাস বাবুর্চি এসে রান্না করতেন। কাচ্চি বিরিয়ানি, টিকিয়া কাবাব, চিকেন ফ্রাই। রবিবারে আমার চাচা-চাচী, ফুফা-ফুফিরাও আসতেন অনেক সময়। তবে নয়টার মধ্যে বাসা থেকে অতিথিদের বেরিয়ে যাবার নিয়ম। কারণ আমাদের বাসায় সাড়ে নয়টার মধ্যে বিছানায় শুতে যাওয়ার রুটিন।
বুবুন বাবার রুটিনে খুব একটা গাঁইগুঁই করতো না। আমি কিছুটা করি। বাবা খুব একটা বদমেজাজ দেখায়নি কখনোই। খালি একটু কড়া চোখে তাকানো। বাবার এই চাহনি আস্তে আস্তে আমাকে কিছু একটা করে। অনেকটা যেন হিপনোটাইজড্। আমি আস্তে আস্তে বাবার মতো হয়ে উঠি। হয়তোবা আরো কিছুটা বেশি ও বাতিকগ্রস্থ। বাবার আধ-ঘন্টা সময়সীমার কাজগুলো আমি আরো ছোটো ছোটো সময়কালে ভাগ করি। সকালবেলায় বাথরুমে ঢুকে প্রাতঃক্রিয়া, দাঁত মাজা, স্নান করাকে নির্দিষ্ট সময়ে বন্টন করি। স্নান করার কাজকে আরো বিভক্ত করি। মাথায় পানি দেয়া, শ্যাম্পু ঘষা, পানিতে শরীর ভিজিয়ে সাবান মাখা, তারপর শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়ানোর মতো কাজগুলির সময়কাল টাইমার ছেড়ে ঠিকঠাক করি। ঠিক কবে থেকে এটা শুরু হয় মনে নেই। খুব সম্ভব ক্লাস এইট কি নাইনে পড়ার সময়। সকালে নাস্তার টেবিলের সময়কে টাইমারের হাতে ছেড়ে দেই। মা কিছুটা রাগ দেখান। বাবা কিছু বলেন না। বাবা করে দেয়া পড়াশোনার সময়সীমা আমি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রভাবে বিভক্ত করে ফেলি।
বন্ধুরা আমার কাজকারবার দেখে আমাকে নাম দেয় টাইমার সুপন। এই নাম ফুটানোতে আমি খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখাই না। তবে নামটা স্কুল, কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে থেকে যায়। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজ করার ব্যাপারে আমি দিনকে দিন আরো পরিশীলিত হতে থাকি। দশম শ্রেণীতে বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে সামাজিক ছবির ব্যাপারে পাঠ নেই। বাসায় এনে সেটা দেখার জন্যও একটা রুটিন ঠিক করি। বাবা রাত সাড়ে আটটার দিকে আধ-ঘন্টা হাঁটতে বেরোন। মা সপ্তাহে একদিন বাবার সাথে হাঁটতে যান। সেটা বুধবার। বুবুন তখন টিভি দেখে। আমি ঠিক আটটা পঁয়ত্রিশে ছবি চালিয়ে দেই আমার সিডি-রমে। আটটা পঞ্চাশের মধ্যে সব শেষে আবার পড়ার টেবিলে। মা ও বুবুন মারা যাবার পরে আমার সুযোগ আরো বাড়ে। তবে রুটিন পাল্টাতে আগ্রহ পাই না।
আমি আরো বড় হই। বিশ্ববিদ্যালয় পেরোনোর সাথে সাথে একটা চাকুরি পাই। তবে বাবার মতো সরকারি নয়। বিয়ে করি গত বছর। একেবারে দিন ক্ষণ হিসাব করলে এক বছর তিন মাস সতেরো দিন। আমার সামাজিক ছবি নিয়মের পরিবর্তন ঘটলে ও বুধবার সাড়ে আটটায় আমি অস্থির হয়ে পড়ি। ঐ সময়ে রুষাকে ম্যানেজ করতে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। কিছুদিন পরে রুষা রাজি না হয়ে পারে না।
মন্তব্য
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হুর মিয়া! খালি ফাইজলামি করেন।
গল্পে সরাসরি যা বলা হয়েছে বুঝতে পেরেছি, কিন্তু কোন ম্যাসেজ ছিল কি? থাকলে ধরতে পারিনি
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
সো রুটিন।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আপনার গল্প কই?
অনেকদিন পর একটা পড়লাম ... গল্প-টল্প লাইফ থেকে 'উবে' গেছে ...
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
লোকে ট্রেনে করে বা মাইক্রোবাসে করে যেতে যেতে খেলার রিপোর্ট লিখে ফেলে আর তুমি অফিসে কাজ করতে করতে গল্প লিখতে পারো না! অজুহাত বাদ দাও।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
গল্প ভালো লেগেছে।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
পড়ে ভালো লাগলো।
- আয়নামতি
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
হ। মেয়েরা তেমন পরতিরোধ করতে পারে না।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
এগুলো গল্পকারের দোষ। মেয়েরা ঠিকই প্রতিরোধ কর্তে পারে।
জীবনে সাফল্য বা ব্যর্থতার কোন উপলক্ষ ঘটলে সেটা কিভাবে উদযাপন করবেন তা নিয়ে বিপদে পরে যাবার কথা
- রিসালাত বারী
আসলেই
খুব ব্যতিক্রম বাদ দিলে বেশির ভাগ মানুষের জীবনই খুব রুটিনবদ্ধ। এই রুটিনের সময়গুলোকে ছোট ছোট প্যাকেজে ভাগ করে নিতে পারলে কাজে আসলেই সুবিধা হয়। আরো ভালো হয় এক সাথে একাধিক কাজ করতে পারলে। তাতে দিনশেষে নিজের জন্য কিছুটা সময় পাওয়া যায় (বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিজের জন্য সময় ব্যাপারটা একটা 'ভ্রান্ত ধারমা'য় পরিণত হয়), নিজের জন্য সময়টাতে সৃজনশীল কিছু কাজ হয়। এতে আর কিছু না হোক, নিজে ভালো থাকা যায়। নিজের জন্য পাওয়া ঐ পনেরো মিনিট সময় দিয়ে দিনের বাকি পৌনে চব্বিশ ঘন্টা চলা যায়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
খাইছে।
বেশ লাগলো পড়তে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
নতুন মন্তব্য করুন