আমাদের পাড়ায় একদিন সকালে সব বিড়াল মরতে শুরু করে। অনেকে বলে, শুরুটা হয়েছিল আকবর হোসেন সাহেবের বিড়ালের মৃত্যু দিয়ে। আকবর সাহেবের বয়স প্রায় পঁয়ষট্টি। স্ত্রী রেহানা মারা গেছেন মাস আটেক আগে। স্ত্রী মারা যাবার পরে একদিন তিনি বিকেলে বেরিয়ে কোথা থেকে কালো কুচকুচে একটা বেড়ালের বাচ্চা জোগাড় করে আনেন। ফর্সা সুন্দর নিজের বউয়ের নামটা দিয়ে দেন বিড়ালটিকে আর অত্যন্ত যত্ন-আত্তি শুরু করেন। বাসার বুয়া সাহেবের এই কাজকারবার দেখে আড়ালে ও প্রকাশ্যে হাসাহাসি করে। আকবর সাহেব বুয়ার মুখের হাসিকে পাত্তা না দিয়ে বরং ঝাড়ি দেন যেন নতুন রেহানার কোথাও কোনো কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য। বাইরের কেউ বাসায় বেড়াতে এলে ঘুমন্ত কিংবা আশেপাশে খুঁজতে গিয়ে আপাত-অদৃশ্য বিড়ালটাকে পরিচিত করিয়ে দেন নিজের মিসেস হিসেবে। আস্তে আস্তে পাড়ায় আকবর সাহেবের এই ঘটনা সবাই জেনে ফেলে। অবিজ্ঞানমনস্করা সন্দেহ করেন, আকবর সাহেবের স্ত্রী বিড়ালের শরীর নিয়ে তার বাসায় ফিরে এসেছে। বিজ্ঞানমনস্করা ধারণা করেন, স্ত্রীর মৃত্যুর পর আকবর সাহেবের মনোবিকলন ঘটেছে। অন্যান্য অনেকে ঘটনাকে বিশেষ আমলে আনে না। বাচ্চারা কেবল মাঝে মাঝে মাঠে খেলতে যাবার আগে আকবর সাহেবের দোতালা বারান্দার গ্রিলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর চলে যায় মাঠের দিকে। এই সময়ে আকবর সাহেবের পাশের বাড়ির দোতালায় নতুন একটা ভাড়াটিয়া বাসা নেয়। বারান্দায় হাজির হয় একটা খাঁচাসহ ময়না। ময়নার নাম সাহারা। ভাড়াটিয়া ভদ্রলোকের নাম ইদ্রিস। ব্যাচেলর। কাজ করে একটা বেসরকারি ফার্মে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের নিত্য নতুন সংলাপ শুনে সে ময়নাকে সাহারার বাণী শেখায়। ময়না একদিন বলতে শুরু করে- র্যাব কি গুলি খাবে? পাড়ার বাচ্চারা বিকালে আকবর সাহেবের গ্রিল দেখতে গিয়ে পাশের বাড়ির গ্রিলের ভেতর থাকা ময়না সাহারার গলা শুনে। পাখির সাথে গলা মিলিয়ে তারা একযোগে আওয়াজ করে- র্যাব কি গুলি খাবে? তারপর বলতে বলতে মাঠের দিকে চলে যায়। পরেরদিন ময়না নতুন কথা শিখে- লিমন ব্যাটা সন্ত্রাসী। বাচ্চারা আবারো বিকেলবেলা একযোগে আওয়াজ করতে করতে মাঠে যায়। এর পরদিন ময়না সাহারা শেখে- ফেলানি আমাদের না। বাচ্চারা উৎসাহের চোটে বিকেলে আওয়াজ অব্যাহত রেখে মাঠের দিকে যায়। পাড়ায় বিএনপি’রা এসব দেখে ফিচিক ফিচিক করে হাসে। আওয়ামী’রা খানিক চ্যাতে। বাকিরা বাচ্চাদের মিছিলে মজা নেয়। এরপর একদিন হরতাল আসলে ইদ্রিস প্রতিদিনের মতো অফিস করার জন্য সকালে বেরোয়। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হলেও বাসায় ফেরে না। হরতালের দিন বলে সেদিন কয়েকটা বাস পুড়ে। দুইজন হত হয়। সেদিনই মারা যায় আকবর সাহেবের বিড়াল রেহানা। আকবর সাহেব পাগলের মতো এদিক ওদিক ছুটে তাঁর মিসেসের মৃত্যুর খবর জানান। এরপর একযোগে অন্যান্য বিড়ালরাও মরে যেতে শুরু করে।
বাচ্চারা সেদিন বিকেলে ময়নার মুখে নতুন বাক্য শোনে। আমার মিসেস মারা গেছে।
মন্তব্য
গল্পটা হাসির কিনা জানি না, কিন্তু হাসলাম, বেশুমার হাসলাম।
অলমিতি বিস্তারেণ
আমিও। ময়নার নামের অংশটার পর থেকে মজা পেতে লাগলাম কেনো জানি।
আরে, দুঃখের গল্পে হাসেন।
দারুণ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হাসতে গিয়েও... কেন যেন থতমত খেয়ে গেলাম। ঠিক বুঝতে পারলাম না। বাচ্চারা যদি ময়নার মুখে নতুন বাক্যটা শুনত যে, "আমার মিসেস ইঁদুর খায়" - তাহলে নাহয় বুঝতাম। এমনকি, "ইঁদুর আমার মিসেসকে খেয়ে ফেলেছে" - বললেও একরকম বুঝতাম !
মজার লেখাটার জন্য তবু ধন্যবাদ।
****************************************
আগে কন বিলাই ধইচ্চেন ক্যামনে?
দেশের বিধাতাদের নিয়ে তামাশা কইরেন না মশাই। র্যাব গুলি খাওয়ায়ে দেবেনে।
আমরা কাছে মনে হল গল্পটার ভেতর বেশ খানিকটা দুঃখ লুকিয়ে আছে। কেন মনে হল জানি না।
আমরা কাছে মনে হল গল্পটার ভেতর বেশ খানিকটা দুঃখ লুকিয়ে আছে। কেন মনে হল জানি না।
আপনি ঠিকই বুঝছেন, মেম্বর।
চমৎকার লাগলো ভাইয়া। ফেলানি আমাদের না শুনে এমন একটা ক্রোধ হল যেটা প্রকাশযোগ্য না।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
উনি একজন হিড়িম্বা।
নতুন মন্তব্য করুন