পেপার খুলতেই এতোগুলো বাচ্চার মৃত্যুর সংবাদ। মনটা কিছুক্ষণের জন্য বিষিয়ে যায়। প্রথম পাতায় একটু নিচে ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি হিসেবে জনৈক সোহাগের নাম দেখি। কেন জানি বুয়েটের শহীদুল্লা ভাইয়ের কথা মনে পড়ে। কার কাছে যেন শুনেছি, মানসিকভাবে অসুস্থ শহীদুল্লা ভাই টুঙ্গিপাড়ায় মাজার পাহারা দেন। এতো বাচ্চার মৃত্যু হরতালের খবরকে দ্বিতীয় পাতায় নিয়ে গেছে। কাল রাতে টিভিতে এক হুজুরের ফ্লাইং কিক দেখলাম। একেবারে অব্যর্থ নিশানা পুলিশের দিকে। এসব দেখেশুনে মনে হয়, মাদ্রাসাগুলোতে ইদানিং কারাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। শিল্প-বাণিজ্যের খবরাখবর খুব একটা আকর্ষণ করে না। শেয়ারমার্কেটের পাতা আসলে খুঁটিয়ে দরদাম দেখি। মাস খানেক আগে কেনা শেয়ারগুলো দাম একটু একটু করে বাড়ছে দেখে বিষন্নতাকে এলিয়ে দিয়ে খুশি হয়ে উঠি। আশেপাশ থেকে ক্যালকুলেটর খুঁজে নিয়ে লাভের হিসাবটাও করে ফেলি।
খেলার পাতাগুলো বিশ্বকাপ ছাড়া আকর্ষণ করে না। উলটে অন্য পাতায় যাই। উল্টাতে গিয়ে ভাবি- কোনো কিছুই পড়া বা আত্তীকরণ করা হয়ে ওঠে না দীর্ঘদিন, যা করি সেটা নিপাট স্কিম। তবে ফ্ল্যাপ ঘেঁটে এটা সেটা নানা বই নিয়ে কিছু কথাবার্তা সাজিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেই মাঝে সাঝে। এক দুইটা লাইক পড়লে উৎফুল্ল হই। পেপারের এক জায়গায় চোখ পড়ে আল-মাহমুদের জন্মদিনের কথা। কবি ভদ্রলোক দীর্ঘদিন ধরে জামাতপ্রেমী। তাঁর আবাস মগবাজারে জেনে কিঞ্চিৎ হাসি। খবর পড়ে জানতে পারি- পোট্রেট ফটোগ্রাফার নাসির আলী মামুনও গেছেন কবিকে শুভেচ্ছা জানাতে। শিল্পী সুলতানের ফটোগ্রাফার তার ক্যামেরায় কিংবদন্তী ধরতে অস্থির। তাঁর কাছে কি গোলাম আযম ও কিংবদন্তী?
বিনোদনের পাতায় নানা সরেস খবরে ঢুকে পড়ি। মৃত্যু ততক্ষণে শোকসমেত অদৃশ্য হয়। তবে চা খেতে গিয়ে তেতো লাগে বলে চিনি বাড়িয়ে দেই।
মন্তব্য
আমরা মৃত্যুর মিছিলে আটকে যাচ্ছি ক্রমশ................
হ
আল মাহমুদ প্রসঙ্গে হাসিব ভাইয়ের ব্লগ পোস্টের লিঙ্ক রেখে গেলাম।
এবার নাসির আলী মামুনের প্রসঙ্গে আসি। আপনার ক্ষোভটুকু ধরতে পারছি। ফটোগ্রাফার হিসেবে আমার উপলব্ধিটা শেয়ার করি।
নাসির আলী মামুনের সাথে আমার দু-একবার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। তার গোটাকয়েক ক্লাসে ছাত্র হিসেবেও ছিলাম। ওনার সাথে ওনার এবং অন্যান্য পোর্ট্রেট আর্টিস্টদের ছবি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমার মনে হয়েছে - ওনার রাজনৈতিক স্ট্যান্ডপয়েন্ট খুব ক্রিটিকালি তৈরী হয় নি, এবং তা সাধারণ দৈনন্দিন ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতে যতটা সাড়া দেয়, বৃহৎ পরিসরের কোন বিষয়ে ততটা দেয় না। এই রাজনৈতিক চেতনা কোন শিল্পীর স্বকীয় অনুভূতির বিকাশ নয় বরং আর দশটা বিচ্ছিন্ন সাধারণ মানুষের তাৎক্ষণিক অভিব্যক্তি। আর সাধারণ মানুষের মতই তিনি হয়ত হরতালের দিন একটু দেরী করে উঠবেন, জিনিসপত্রে দাম বেড়ে গেলে চিন্তিত, বিরক্ত হবেন, রাস্তার যানজটে দুই নেত্রীকে কষে গালি দিবেন কিন্তু বিশ্বব্যাংকের আগ্রাসী নীতি সংক্রান্ত কোন খবর বা সীমান্তের নিত্য সংঘাতের দুই কলামের খবর পাশ কাটিয়ে যাবেন (হয়ত)। তার মানে কিন্তু এই না যে উনি অচেতন। ব্যাপারটা হল একই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দুইজন মানুষের জন্য ভিন্ন রকমের হতেই পারে। ভারতীয় চিত্রতারকার নতুন ফ্যাশান স্টাইল শহীদুল আলমের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না, কিন্তু যেই ফটোগ্রাফার ফিল্মফেয়ারে কাজ করছে তার কাছে এই বিষয়টার গুরুত্ব অনেক।
আল মাহমুদ ও শামসুর রাহমান দুইজনই নাসির আলী মামুনের পুরানো বন্ধু। এই বন্ধুতা আজকের না। আল মাহমুদের ছবিও নাসির আলী মামুন একবার তুলেন নাই, তাঁর তোলা বেশ কিছু ভালো পোর্ট্রেট আমি দেখেছি (সাদাকালো - রঙিন উভয়ই)। আল মাহমুদের রাজনৈতিক বিশ্বাস নাসির আলী মামুনকে স্পর্শ করে বলে মনে হয় না। যেই ফটোগ্রাফিক স্পিরিটে তিনি আল মাহমুদের ছবি তুলেন, সেই একই স্পিরিটে তিনি শামসুর রাহমানের ছবিও তুলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি তুলেন, অন্যান্য কবি-সাহিত্যিকদের ছবিও তুলেন। ছবির বিষয়ের সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক তাকে একান্ত মুহূর্তের কিছু ছবি তোলার সুযোগ দেয় - এর বেশি কিছু না।
আর নাসির আলী মামুন যে শুধু কিংবদন্তী/সেলিব্রেটি/স্বনাধন্য মানুষের ছবি তুলেন তাও না। সেগুলো পত্রিকাতে প্রকাশিত হয় বেশি। প্রথম আলোর "ছুটির দিনে" ম্যাগাজিনে তাঁর "ঘর নাই" সিরিজের ছবিগুলো দেখতে পারেন। তিনি বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি তুলে নিজেই বিখ্যাত (অনেকটা yousuf karsh এর মত), কিন্তু সাধারণ মানুষদের নিয়েও তাঁর বহু কাজ আছে। সে যাই হোক, আমি যেটা বলতে চাচ্ছি ফটোগ্রাফার হিসেবে তাঁর কাছে হয়ত আল মাহমুদের কবি সত্ত্বা ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে - উনি ছবি তুলেছেন। উনি খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনার ছবি তুলেছেন কারণ রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে, ছবির সাব্জেক্ট হিসেবে তাদের ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। জামাতের নেতা গোলাম আযমকে ইন্টারেস্টিং মনে হলে তার ছবিও তুলবেন। আমি কোন সমস্যা দেখি না।LIFE সহ প্রেসের অনেকেই হিটলার, মুসোলিনির ছবি তুলেছেন। ছবি তোলার সময়ে সাব্জেক্টের সাথে ইন্টার্যাক্টও করেছে নিশ্চয়। এতে করে তারা নাজি সমর্থক হয়ে যান নাই।
এখন কথা হল আল মাহমুদের জামাত তোষণ আপনাকে যেভাবে বিচলিত করে নাসির আলী মামুনকে সেভাবে করে না। আমার নিজেরও এই জায়গাতেই সমস্যা। একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে উনি নৈর্ব্যক্তিক হতে পারেন, মানুষ হিসেবে, বাংলাদেশী হিসেবে না। জন্মদিনের দাওয়াতে ফুলকুঁড়ি, শিবিরের উপস্থিতি দেখেও উনি যদি না দেখার ভান করেন, সময় এসেছে তাঁকে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর। ফুল দিয়ে আদিখ্যেতা করার মত কোন কবি আল মাহমুদ না। যদি নাসির আলী মামুনের ক্যামেরা শুধু কবি আল মাহমুদের ছবি তুলে। তা হবে অর্ধসত্য মাত্র। বাকিটুকু তাঁর ছবির মতই অন্ধকার থাকবে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আমি নিজেও নাসির আল মামুনের পোট্রেট ফটোগ্রাফির ভক্ত।
নাসির আল মামুনের সেই বোধোধয় হোক।
পুরো পোস্টে কিছু বলার নাই
আল মাহমুদ নিয়াও নাই... টায়ার্ড হয়ে গেছি...
নাসির আল মামুন নিয়াও একটা কথা বলে মুছে দিছি... ভালো লাগতেছে না কিছুই বলতে... পড়লাম এটাই জানায়ে গেলাম খালি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পড়ার জন্য থ্যাংকস।
উনি নির্বোধ না, সুবিধাবাদী।
হাসিব ভাইয়ের ব্লগ পোস্টটা দেখলাম, আল মাহমুদ একজন শক্তিমান কবি বাংলাদেশের, উনি এতটা জামাতপ্রেমী-মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্ত এটা আরেকবার খুব কষ্ট দিল!! উনার কিঞ্চিত লজ্জা আছে দেখলাম যে সরাসরি জামাতের পা-চাটেন এটা স্বীকার করেন নি- আবার অস্বীকারও করেন নি!! কী লজ্জার আর কষ্টের!! উনি এত নির্বোধ কেন!!!!
প্রসঙ্গক্রমে বাল মাহমুদকে নিয়ে হুমায়ুন আজাদ স্যার একটি সাক্ষাৎকারে যা বলেছিলেন:
ঠিক কথা।
সামনে আরও বিনোদন আসতেছে। এইবার জনাব গুয়েবাড়া জান সংক্রান্ত তার ব্যাখ্যার আরেক যুগান্তকারী ব্যাখ্যা নিয়ে 'বিচার' এ বসবে!
দেখেশুনে মনে হচ্ছে ২০১১ খ্রী. পতিত মালদের জন্য একটি উৎসব মুখর বছর!
love the life you live. live the life you love.
বিনোদনের কোনো অভাব নাই। এই দেখেন বিনোদন
নতুন মন্তব্য করুন