দুপুরে ভাত খাওয়ার পর থেকে মাথায় কেমন জানি একটা চিনচিন করে ব্যথা করে। গত দুইদিন ধরে একনাগারে বাসায় শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছি। একবার ভাবি, একটু বাইরে গিয়ে ঘুরে আসি। পরে আবার ভাবি, থাক। এরপর বেরোই। নিচে নামার সময় দেখি বাইরের কলাপসেবল গেটটা তালা দেয়া। নীচতলায় এক নতুন ভাড়াটে এসেছে। কলাপ্সেবল গেট খোলা-বন্ধের ব্যাপারে সে খুব সিরিয়াস। গেট খুলে তালা না লাগিয়ে বেরিয়ে যাই। পেছন থেকে গেট বন্ধ করার আওয়াজ আসে। আলিমুদ্দির মুদির দোকানের সামনে মিন্টু হাজারি সিগারেট টানে। ভদ্রলোক রাতের বেলা পাঁড় মাতাল হন প্রতিদিন। আমার দোতালা বাসার পাশেই এর দোতালা বাসা। আর সে বাসার উল্টোদিকে ইনার ভাই চিন্টু হাজারির বাসা। সন্ধ্যার পর থেকে মিন্টু হাজারি অশ্লীল গালাগালির পসরা সাজিয়ে বসে। গালাগালির উদ্দেশ্য বড়োভাই চিন্টু হাজারি। কিছুক্ষণ বাদে চিন্টু হাজারিও গালাগালির ফোয়ারা ছোটায়। আমার পাশের ফ্ল্যাটে আট বছরের রনি গালি ঠেকাতে চড়া থেকে একেবারে মহাচড়া আওয়াজে পড়া মুখস্থ করে। গালি ও পড়া মুখস্থের মিলিত আওয়াজে আমি নানা কিছু ভাবি। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এখন এই ঐকতান খুব একটা মন্দ লাগে না। চুদানির পোয়া, তর কনঅ কাজত মন নাই। তরে হিস্টাসিন দিতে কৈয়ে, আর তুই হিতারে সালবিউটাল দেঅর। ডিসপেনসারির আলম সাহেব নতুন আসা ছোকরাকে বকাবকি করে। ডিসপেনসারির পাশেই শিবমন্দির। ছোট্ট শিবমন্দিরের মধ্যে নিকষ কালো শিবলিঙ্গের কাছে বসে মেয়েরা উলু দেয়, ঘন্টা নাড়ে। হয়তোবা কিছুক্ষণ পরে শিবলিঙ্গের মাথায় নারিকেলের জল বা দুধ ঢালা হবে। প্যান্টের নিচে আমার ন্যাতানো লিঙ্গ শিবলিঙ্গকে হিংসা করে। সূর্যটা একটু যেন বেশি তাতানো রোদ দিতে থাকে। পিচিৎ করে একটা কিছু টার্গেট মিস করে। শুয়োরের বাচ্চা কাক ইলেক্ট্রিক তারের ওপর থেকে জিনিস ছেড়ে ঘাড় নিচু করে টার্গেট কই যায় দেখে। পাশ থেকে একটা ইট কুড়িয়ে কাকটাকে মারার চিন্তা করি। কাকটাও আসন্ন বিপদ আন্দাজ করে উড়া ধরে। ডিসপেনসারি, মুদির দোকান, মিষ্টির দোকান, উদ্দেশ্য বা অনুদ্দেশ্যে হাঁটা লোকজন, খালি বা ভরা রিকশা, একটা দুইটা সাইকেল রাস্তাটাকে নির্জন রাখে না রাত বারোটা একটা পর্যন্ত। আমি ভিড় ঠেলে মানুষ ঠেলে শূন্যতা ঠেলে সামনে এগোই। তারপর পৌঁছাই আসাদের ঠেকে। আসাদ বড়ো লিঙ্গপ্রিয় ভাষায় কথা বলে। চঁইয়া, তুঁই এতোদিন পর এতোক্ষণে আইঅরতেনা। বেয়াগ্গুনে এঁয়া খাইতো গিয়ে।তাসগুলো নিয়ে শাফল করে আসাদ। আর ফ্যাকফ্যাক করে হাসে। সন্ধ্যার দিকে আবার আসবো বলে আসাদের ঠেক থেকে বেরোই। একটা সাদা প্রজাপতি সামনে সামনে উড়তে থাকে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটু দাঁড়ালে প্রজাপতিটাও একই জায়গায় ডানা ঝাপ্টাতে থাকে। আমি তাও দাঁড়িয়ে থাকলে অধৈর্য হয়ে উড়ে চলে যায়। ইলেকট্রিক তারের ওপর অজস্র কাকের জমায়েত দেখি। এতো এতো কাক একসাথে কখনো খেয়াল করিনি। মাথার চিনচিনে ব্যথাটা কিছুটা ধরে আসে। চিন্টু হাজারিকে রাস্তা পেরিয়ে আমার দিকে আসতে দেখি। আমাকে পাশ কাটিয়ে তিনি চলে যান। এরপর বাসার দিকে হাঁটা ধরি। সাদা প্রজাপতি আবার কোথা থেকে এসে হাজির হয়। ঠিক চিনতে পারি না, এটা সে আগের প্রজাপতি কিনা। কিছুক্ষণ পরে আবার সে অদৃশ্য হয়। সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে চিন্টু হাজারির ছেলে দাঁড়াচ্ছে। পাড়ার প্রায় সব দেয়াল পোস্টার বা চিকার কারণে খালি হওয়ার ফুরসৎ পায় না। মাইকিং এর আওয়াজও শোনা যায়। চুদানির পোয়া, আসলে তর এজ্ঞেরে কাম কাজত মন নাই। এইবার তরে কৈয়েতে সালবিউটাল দিতো, আর তুই দেঅরতে হিস্টাসিন। আলম সাহেব নতুন ছোকরাকে আবারো বকছেন। শিবমন্দির, উলু, নারিকেলের পানি আর ন্যাতানো লিঙ্গের হিংসা আবারো ফিরে আসে। কলাপ্সেবল গেটে ঝাঁকি দেই। নতুন ভাড়াটের মেয়েটা ঘোড়ার মতো মুখ করে এসে তালাটা খুলে দেয়।
মন্তব্য
উড়ে যাক সাদা প্রজাপতি - ফিরে আসুক রঙ নিয়ে, জড়তা ছেড়ে।
ক্লান্ত হোক চারপাশ! আর সভ্যতা? সে নিয়ে কিছু বলার নেই, নিজেই যে ভীষণ রকম অসভ্য!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার লেখা বরাবরের মতোই জটিল
বাহ , দৈনন্দিন চিত্র বর্ণনা
বাড়ি কি চট্টগ্রামে নাকি ভায়া?
লেখা পড়ে ভালো লাগলো।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
হ্যাঁ, চট্টগ্রামে।
অশ্লীষ সংলাপ
অনেকদিন পর এই ফর্মে লিখলেন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
থ্যাঙ্কস্, বস্।
লেখা হেইল্যা হইয়্যে।
অঁনরে ধইন্যবাদ।
শহিদুল জহির ও কিন্তু প্রজাপতি দেখেছিল টি এন্ড টি কলোনিতে। কিন্তু সেই প্রজাপতিগুলো সাদা ছিল না।
কোন গল্পে বা উপন্যাসে?
আগারগাও কলোনিতে নয়নতারা ফুল কেন নেই।
পড়ি নাই।
আপনার কালো কাক আর ইলেকট্রিক তারের রূপকটি ভাল লেগেছে। গালাগাল পর্বের মধ্যেও মনে হয় বাস্তবতা দেখাতে চেয়েছেন, বিশেষ করে যখন নির্বাচনের কথা এনেছেন।
আর শিব লিঙ্গের সাথে ন্যাতানো লিঙ্গের হিংসার কথা আর কি বলব, দারুণ হাসি পেল!
আপনার কাছ থেকে আর দীর্ঘ পরিসরের গল্প চাই; আপনার দেখার চোখ বলে দিচ্ছে আপনার কাছে আরও অনেক ভাল ভাল গল্পের স্টক রয়েছে। ভাল থাকবেন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ভাল্লাগসে!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
facebook
চমৎকার
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
নতুন মন্তব্য করুন