• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

দিদিমার ঝুলি : প্রসঙ্গ দক্ষিণারঞ্জনের ‘ঠাকুরমার ঝুলি’

শুভপ্রসাদ এর ছবি
লিখেছেন শুভপ্রসাদ [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১২/১০/২০০৯ - ৪:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তখন আমি শিশু বয়সের। এএসটিসি-র তখনকার ফার্স্ট ক্লাস কালো গণ্ডার আঁকা অ্যাম্বেসেডারে বাবা মা দাদা দিদিদের সাথে সারাদিন ধরে পাহাড়ি পথ পাড়ি দেবার পর রাতের অন্ধকারে গলির মধ্যে আমাদের গাড়ি এসে থামল আমার রূপকথার দেশে। ইঞ্জিন বন্ধ হতেই শব্দপট দৃশ্যপট বদলে গেল পুরোটাই। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর জোনাকির আলোয় এসে পৌঁছলাম আমার দাদুর বাড়ি। আমার রূপকথা, ঠাকুরমার ঝুলির দেশে। আমরা থাকতাম শিলং-এ। প্রতি শীতে ছুটি পড়লেই চলে আসতাম শিলচর। শিলং পাহাড়ি শহর। ঘোড়ার গাড়ি, পাইনের গন্ধ, রাতে ঘুমোতে গেলে পাইনের গাছে হাওয়ার মর্মর, নেপালি লাকড়িওয়ালা, নেপালি কাঞ্চি, বাজারে গেলে খাসি কং, খাসি আলুওয়ালা। আমরা বলতাম খাসিয়া মামা। সিটি বাসের কন্ডাক্টার লাবান থেকে স্টেট লাইব্রেরির কাছাকাছি বাস পৌঁছুলে চেঁচাত. ‘আইজিপি আইজিপি’। স্টপেজ থেকে বাস ছাড়ার পর ‘ইয়য়’ বলে চলন্ত বাসে লাফ দিয়ে উঠত খাসি ছোকরা কন্ডাক্টর। নাশপাতি প্লাাম সৈয়ম বেতফল তুতফল পিয়ার্স পিচ ইত্যাদি ফল আর স্কোয়াশ সরল গাছের ছোট ছোট টুকরোর জ্বালানি কাঠের জীবন ছিল শিলং-এর। স্কুল শেষ হলেই পাহাড়ি ছড়ার ধারে পাহাড়ের ধাপ ধরে আমাদের ছুটোছুটির খেলা। বৃষ্টি এলে কাঞ্চির ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো সুর করে ছড়া কাটত ‘পানি আয়ো পানি আয়ো’। আমাদের ঘরের পাশে সরলকাঠের কুটিরে থাকত যে খাসি কাঠমিস্ত্রি ক্লেং, প্রতিবেশী মাসিমার ভাষায় ‘কেলেং’, সে বুনো রং দিয়ে আঁকত আশ্চর্য ছবি, সরল কাঠের ডালে বাটালির ভাস্কর্য-ছোঁয়ায় গড়ে তুলত অনুপম শিল্প। রাত্রিবেলা সে-ই শিল্পী ক্লেং আবার দেশি মদ ‘কাকিয়াত’ খেয়ে বউকে মারত। বউ রাগ করে চলে যেত বাপের বাড়ি। পরদিন আবার ভীষণ ভালোবাসায় অনুনয় বিনয় করে বউকে ফিরিয়ে আনত তাদের কাঠের কুটিরে। এত সরলতা এত দৃশ্যশব্দগন্ধের সেই মায়াময় পৃথিবীও আমার কাছে রূপকথার দেশ ছিল না। হয়ত সেখানেই থাকতাম বলে। আমার কাছে রূপকথার দেশ ছিল গোবরের গন্ধময় শাড়ি দিয়ে মোড়া হুডতোলা রিক্সায় গ্রামের মুসলমান রমণীর আব্র“র আর প্যাঁক প্যাঁক হর্নের শিলচর। দাদুর বাড়িতে পুকুরের জল ছিল ঘন সবুজ টলটলে। সকাল হলে আশেপাশের বাড়ি থেকে ছেলেমেয়েদের চীৎকার করে বাংলা ইংরেজি পড়া, নামতা মুখস্থ করা, সংস্কৃত শব্দরূপ মুখস্থ করার আওয়াজের সাথে শব্দপটে মিশে যেত গোয়ালঘর থেকে ভেসে আসা গরুর হাম্বা। প্রতিবেশি বাড়ির একটা লাল গরুর নামকরণ আমার দিদিমা করেছিল ‘লালিমা’। ওরা অবশ্য ওটাকে লালির মা অর্থেই নিয়েছিল। বেলা গড়ালে পেছনের কামারপাড়া থেকে হাঁড়ি তৈরির ধ্বনি যোগ হতো ধ্বনিপটে। দাদুর সাথে ভোরবেলা কনকপুর রাঙিরখাড়ির পথে প্রাতঃভ্রমন। তখন হলিক্রস স্কুলের লাগোয়াই ছিল ধানক্ষেত। দাদু বলত, বল, ‘প্রভাতে যঃ স্মরন্নিত্যং দুর্গাদুর্গাক্ষরদ্বয়ম, আপদঃ তস্য নস্যন্তি তমো সূর্যোদয় যথা’। আর সবকিছু ছাড়িয়ে দুপুরে রাতে খাওয়া দাওয়ার পর দিদিমার সাথে ঘুমোতে গিয়ে রূপকথার গল্প শোনা। ঠাকুরমার ঝুলির গল্প। দিদিমা পড়ত যাকে বলা হত, সাধারণ করে পড়া শাড়ি আর শেমিজ। দিদিমা দর্জিকে বলত খলিফা। এই আমার রূপকথার দেশ। এই দেশেই আমার পরিচয় ঠাকুরমার ঝুলির সাথে। শীত-বসন্ত, বুদ্ধু-ভুতুম, অরুণ-বরুণ-কিরণমালার সাথে। আমি ঠাকুরমার ঝুলি বই ছোটবেলায় চোখে দেখি নি। দিদিমার ঘরের কাঠের আলমারির নিচের তাকে থাকত আরেক রূপকথার জগৎ, শিশুভারতী পত্রিকার অসংখ্য পুরোনো সংখ্যা গাদাগাদি করে রাখা ছিল সেখানে। রাতে ঘুমোতে গেলে দিদিমার ঘরের জানালার ওপাশে জবা গাছের ডালের ফাঁক দিয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে আসত চাঁদের আলো। দিদিমার গলা জড়িয়ে সেই দৃশ্যপটে শুনতাম শীতবসন্তের গল্প। ঠাকুরমার ঝুলির আমার সবচেয়ে প্রিয় গল্প। গল্প বলায় ছিল এক অদ্ভুত সুর, গল্পের মাঝেমাঝেই আসত বিভিন্ন ছড়া। দিদিমা সেই ছড়াগুলি বলে যেত প্রতিবার নির্ভুল। প্রতিদিন একই ভাষায়, কন্ঠস্বরের একই ওঠানামায়, আমারও ছিল প্রতিদিন একই নেশার ঘোর। শিলং-এর সাথে শিলচরের শব্দ-দৃশ্য-গন্ধ, সবই ছিল আলাদা। প্রতিবছর শীতকাল এলেই ওই শব্দপট ওই দৃশ্যপট ওই গন্ধের নেশা পাগল করে দিত। কবে যাবো ওই রূপকথার দেশে, কবে পৌঁছবো দিদিমা’র কুলের আচার, ঠাকুরমার ঝুলির গল্প, পুকুরের সবুজ জল, লালিমার ডাক, ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ, আমগাছের ডালে ডালে ঝুলে বেড়ানোর দেশে। বস্তুতপক্ষে, আমার কাছে ঠাকুরমার ঝুলির স্মৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমার শৈশবের ওই সম্বৎসরের অবকাশের দিনগুলি। শিলং-এর পৃথিবীর সাথে শিলচরের যে তফাৎ ধরা পড়ত শৈশবের চেতনায়, সেখানেই জেগে আছে ঠাকুরমার ঝুলি। এখনও সুদূর অতীতের দিন থেকে যখনই কানে ভেসে আসে দিদিমার কন্ঠস্বর, ‘এক রাজার দুই রাণী, সুয়োরাণী আর দুয়োরাণী.....।’ তখনই বেজে ওঠে রাতাছড়া পেরিয়ে কাছাড়ের সমতলে কালাইন এসে পৌঁছতেই শোনা রিক্সার হর্ণ। ওই সময়েই কোনও একবার ছোটেলাল শেঠ ইনস্টিটিউট-এ দেখেছিলাম নৃত্যনাট্য ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’। এর গল্পও আমার দিদিমার গলায় অনেকবার শোনা। এখনও মনে আছে নৃত্যনাট্যের একটি গান, ‘রোজ রোজ ডালে লুকোচুরি খেলা/ ওরে অরুণ ওরে বরুণ ওরে কিরণমালা/ তিনভুবনে করিল আলা তিনটি’। ঠাকুরমার ঝুলি বইটি যখন আরেকটু বড় হয়ে প্রথম দেখি, তখন আমার অবাক হবার পালা। শুধু গল্প নয়, আমার দিদিমার বলার ভাষা ও বইয়ের ভাষা হুবহু এক। দিদিমা বলত নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় ও উচ্চারণে, কিন্তু গল্পের ডালামেলার ভাষা এক। যেমন বইয়ে ছিল, ‘দিন যায়, বছর যায়, সুয়োরাণীর তিন ছেলে হইল। ও মা! এক-এক ছেলে যে, বাঁশের পাতা পাট-কাটি, ফুঁ দিলে উড়ে, ছুঁইতে গেলে মরে। সুয়োরাণী কাঁদিয়া কাটিয়া রাজ্য ভাসাইল।’ কিংবা, ‘শীত বসন্ত দুই ভাই চলেন, চলেন, বন আর ফুরোয় না। শেষে, দুই ভাইয়ে এক গাছ তলায় বসিলেন। বসন্ত বলিলেন,- “দাদা, বড় তৃষ্ণা পাইয়াছে, জল কোথায় পাই?” শীত বলিলেন, -“ভাই, এত পথ আসিলাম, জল কোথাও দেখিলাম না! আচ্ছা, তুমি বস, আমি জল দেখিয়া আসি।” বসন্ত বসিয়া রহিল, শীত জল আনিতে গেলেন। যাইতে, যাইতে, অনেক দূরে গিয়া, শীত বনের মধ্যে এক সরোবর দেখিতে পাইলেন। জলের তৃষ্ণায় বসন্ত না-জানি কেমন করিতেছে,- কিন্তু কিসে করিয়া জল নিবেন? তখন, গায়ের যে চাদর, সেই চাদর খুলিয়া, শীত সরোবরে নামিলেন।’ এই ভাষা তো আমার দিদিমারই কথন যেন। রবীন্দ্রনাথের ভয় ছিল আবহমান বাংলার মায়েদের মুখের এই ভাষা না বদলে গিয়ে কেতাবী ভাষায় সংকলিত হয় বাংলার মৌখিক সাহিত্যের এই অনুপম নিদর্শন, ঠাকুরমার ঝুলি। দক্ষিণা রঞ্জন মিত্র মজুমদারের ঠাকুরমার ঝুলির ভূমিকায় এই আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। দক্ষিণা রঞ্জনের ঠাকুরমার ঝুলি আবহমান বাংলার মায়েদের মুখের ভাষাকে অপরিবর্তিত রেখেছে, এটা দেখে রবীন্দ্রনাথ ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতাতেও এটাই দেখতে পেয়েছিলাম। যে কথনভঙ্গীতে দিদিমা ছোটবেলায় ঘুম পারাতে গিয়ে ঠাকুরমার ঝুলির গল্প বলত, একটু বড় হয়ে দক্ষিণা রঞ্জনের বই হাতে পেয়ে এই সত্য উপলব্ধি করেছিলাম আমিও। অপ্রাসঙ্গিক হলেও আরেকটি কথা বলব, পরে ভাস্কর বসুর পরিচালনায়, নচিকেতা ঘোষের সঙ্গীত পরিচালনায়, কাজী সব্যসাচীর পাঠ ও অসংখ্য শিল্পীর সমন্বয়ে ঠাকুরমার ঝুলির যে রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল, তার মেজাজটিও ছিল আমাদের লোকায়ত ভাবনার সাথেই সঙ্গতিপূর্ণ। দিদিমার বলা, দক্ষিণা রঞ্জনের ভাষা ও ঠাকুরমার ঝুলির রেকর্ড, যেন একই সূতোয় গাঁথা ছিল। আরও একটি কারণে আমার কাছে এই তিনটি ব্যাপার এক সূতোয় গাঁথা হয়ে গেছে হয়ত, সেটি হল সেই রেকর্ড ও ঠাকুরমার ঝুলির বইয়ের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ওই দাদুর বাড়িতেই, অর্থাৎ আমার রূপকথার দেশেই। এ বছর ঠাকুরমার ঝুলি প্রকাশের একশ বছর। অনেকেরই ধারণা একশতম বছরে ঠাকুরমার ঝুলির আকর্ষণ হয়ত একেবারেই ফুরিয়ে গেছে। কথাটা একেবারেই অমূলক। হয়ত সাম্প্রতিকের পণ্যসংস্কৃতির আলোয় অন্ধ নব্য মধ্যবিত্ত ও ধনী পরিবারের সন্তানদের কৃত্রিমভাবে সাহেব বানানোর আকুলতায় বাবা মায়েরা ঠাকুরমার ঝুলি বা এ জাতীয় বইপত্র বা ভাষা থেকে সযতেœ দূরে সরিয়ে রাখছেন, কিন্তু একবার কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় ঢুঁ মারলেই প্রকৃত ছবি বেরিয়ে আসবে। এখনও দক্ষিণা রঞ্জনের ঠাকুরমার ঝুলির কী আকর্ষণ! প্রতিদিন এই বইয়ের অসংখ্য কপি বিক্রি হচ্ছে সেখানে। তবে সময় বদলের সাথে সাথে আমাদের লোকসংস্কৃতিতে যে স্বাভাবিকভাবে বদল আসছে, তার বাইরে অবশ্যই নেই লোকসাহিত্যও। আমি এই বদল বলতে অবশ্যই পণ্যসংস্কৃতির দূষণে ঘটে যাওয়া বিকৃতি বা পচনের কথা বলছি না। নতুন সময় লোকসঙ্গীতে স্বাভাবিক নিয়মে যেভাবে অনেক নতুন নতুন চিত্রকল্প জন্ম দিচ্ছে, জন্ম দিচ্ছে নতুন নতুন জাদু রহস্যেরও। একই ভাবে, গ্রাম শহরের শিশু সাহিত্যেও নিশ্চয়ই আসছে অনেক পরিবর্তনও। প্রযুক্তির নিত্য নতুন উদ্ভাবনে জন্ম নিচ্ছে যেভাবে নতুন শিল্পমাধ্যম, তেমনি এই নতুন শিল্পমাধ্যমগুলিও নিশ্চয়ই পথ দেখাবে নতুন শিশুতোষ সাহিত্য ও সংস্কৃতির। একটি অতিক্রান্তিকালীন সময়ের স্বাভাবিক দুর্লক্ষণ দেখে যারা সব সময় গেল গেল রব তোলেন এবং তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমস্ত অগ্রগতিকে অভিশাপ বলে ঠাওর করেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় আমি তাদের সমবেত সংকীর্তনে যোগ দিতে নারাজ। আমি জানি যদি মানুষের সামূহিক এগিয়ে যাওয়ার ঐতিহাসিক যাত্রা যদি অব্যাহত থাকে, (ক্ষুদ্র সময়ের আলোয় না দেখে, বৃহৎ সময়ের প্রেক্ষিতে যা আছে বলেই আমার প্রত্যয়), যদি সমষ্টি মানুষের সামগ্রিক রুচিবোধের মৃত্যু না ঘটে, তবে ঠাকুরমার ঝুলির মত কালোত্তীর্ণ সাহিত্যেরও মৃত্যু হবে না, তেমনি নতুন নতুন রূপকথা জন্মের সম্ভাবনাও মরে যাবে না। এই প্রত্যয়েই সম্ভবত দাঁড়ি টানা যায়।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

শুভপ্রসাদ দা,
আপনার লেখা পড়ার শুরুতে শিলং চলে গেছিলাম, শিলচরও দারুণ লাগলো। আপনার লেখার গুণে আমার মানসভ্রমণ হয়ে গেলো। এককথায় অপূর্ব সে ভ্রমণ। "খলিফা" শব্দটিতে মনে পড়ে গেল আমার ছেলেবেলার কথা, আমিও খলিফা শব্দটি অনেকের মুখে শুনতাম আর ভাবতাম দর্জির নামই বুঝি খলিফা।
আলোকপাত করেছেন যে বিষয়ে, সে দক্ষিণা রঞ্জনের 'ঠাকুরমার ঝুলি'। আর দিন বদলের সুরে আমাদের লোকসংস্কৃতিতেও তার হাওয়া, সেই সাথে শিশু সাহিত্যে তার প্রভাব। আমিও প্রযুক্তির নব নব উদ্ভাবনী হাওয়ার পক্ষে থেকেই আপনার সাথে সহমত প্রকাশ করছি যাকে মনে করে -সে আমার পুত্র। প্রযুক্তি তাকে দিচ্ছে অনেক কিছু, সাথে যদি শিল্পমাধ্যমের মধ্য দিয়ে রূপকথাগুলোকে এদের সামনে নিয়ে আসতো, তাহলে পুরোনো কিছুই হারাত না, এরা বই পড়ে কম, যতটা পছন্দ নিয়ে OGGY OGGOOOooooooo"অগি" বা 'পোকেমন' কার্টুন দেখে তার থেকে অনেক বেশী আগ্রহে দেখে "কৃষ্ণ"। আমি এ ব্যাপারে খুব আশাবাদী যে সত্যিই যদি তেমন করে এদের সামনে ঠাকুরমার ঝুলি কে যদি উপস্থাপন করা যায়, এরা উপভোগ করবেই। সুন্দর এই লেখাটির জন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই।

মধুবন্তী

শুভপ্রসাদ এর ছবি

এই অকিঞ্চিৎকর লেখা আপনার মনোযোগী পঠন আকর্ষণ করতে পারায় আমি আনন্দিত। আমি তো লেখক নই। মাঝে মাঝে আমার ভাবনাগুলোকে স্বতস্ফূর্তভাবে প্রকাশিত হতে দিই। কারো যদি ভালো লেগে যায়, মনে হয়, একটা সেতুবন্ধন হল। ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আইজিপি'তে জমা করার মতন লেখাটি পড়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে লালচা'টা এইমাত্র শেষ করলুম ভায়া।
সুন্দর লেখাটির জন্যে শুভর প্রতি শুভকামনা রইল।
এস হোসাইন

----------------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের মুখ।"

রেজওয়ান এর ছবি

বেশ ভাল লাগল লেখাটি।

কিন্তু একবার কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় ঢুঁ মারলেই প্রকৃত ছবি বেরিয়ে আসবে। এখনও দক্ষিণা রঞ্জনের ঠাকুরমার ঝুলির কী আকর্ষণ! প্রতিদিন এই বইয়ের অসংখ্য কপি বিক্রি হচ্ছে সেখানে।

এমনই যেন থাকে চিরন্তন।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

নৈষাদ এর ছবি

লেখাটা ভাল লাগল। (নস্টালজিক, বাংলা প্রতিশব্দ কী? অতীত-কাতরতা?)
ঠাকুরমার ঝুলি খুব একটা বিক্রী হয় না এখানে আর। তবে দুর্বল অ্যানিমেশনের ওয়ান-টাইম ডিভিডি ভালই বিক্রী হয়।

স্নিগ্ধা এর ছবি

ঘোড়ার গাড়ি, পাইনের গন্ধ, রাতে ঘুমোতে গেলে পাইনের গাছে হাওয়ার মর্মর, নেপালি লাকড়িওয়ালা, নেপালি কাঞ্চি, বাজারে গেলে খাসি কং, খাসি আলুওয়ালা। ............................ পরদিন আবার ভীষণ ভালোবাসায় অনুনয় বিনয় করে বউকে ফিরিয়ে আনত তাদের কাঠের কুটিরে।

এই অংশটুকু সবচাইতে বেশি ভালো লাগলো! ছোটবেলার কী চমৎকার বর্ণনা!
আমার অতি প্রিয় একটি বই, লীলা মজুমদারের 'পাকদন্ডী'র কথা মনে পড়ে গেলো :)

তবে, প্যারা করে না দেয়ায় পড়তে বেশ অসুবিধে হচ্ছিলো।

শুভপ্রসাদ এর ছবি

আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। যে সহৃদয়তায় আপনি লেখাটি পড়েছেন এবং আপনার মন্তব্য প্রকাশ করেছেন, এতে আমি অত্যন্ত আপ্লুত। আবারো ধন্যবাদ।

দময়ন্তী এর ছবি

লেখা পড়তে ভাল লাগল৷ বক্তব্যের সাথে কিছুটা একমত, পুরোটা নয়৷ যাক সে কথা৷

আমার যেটা অবাক লাগে, সবসময় দুয়োরাণীরা খারাপ হয়, দুষ্টু হয়, আর রাজা নিতান্তই তাদের প্ররোচনাতেই খারাপ খারাপ কাজ করে ---- আর শেষে দুষ্টু রাণীকে হেঁটোয় কাঁটা, শিয়রে কাঁটা দিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়, রাজা কিন্তু আবার ভাল রাণীর সাথে লক্ষ্মীরাজা হয়ে রাজত্ব করতে থাকে --- কারো একটুও অদ্ভুত লাগে না?? এতই স্বাভাবিক?
কি জানি!
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমার যেটা অবাক লাগে, সবসময় দুয়োরাণীরা খারাপ হয়, দুষ্টু হয়, আর রাজা নিতান্তই তাদের প্ররোচনাতেই খারাপ খারাপ কাজ করে ---- আর শেষে দুষ্টু রাণীকে হেঁটোয় কাঁটা, শিয়রে কাঁটা দিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়, রাজা কিন্তু আবার ভাল রাণীর সাথে লক্ষ্মীরাজা হয়ে রাজত্ব করতে থাকে --- কারো একটুও অদ্ভুত লাগে না?? এতই স্বাভাবিক?

আহহা দময়ন্তী - এতো লিটারেলী নিলে কি চলে? ডিকনস্ট্রাক্ট করুন ভদ্রে, সাথে একটু সিম্বলিজম মিশিয়ে ;)

দুয়োরাণী = কু/অমঙ্গল/ শয়তান/ডেভিল/ এবং আরো ইত্যাদি

সুয়োরাণী = মিষ্টি, মায়াবতী বাঙ্গালী নারী + সু/কল্যাণ/ ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে বসা ভাগ্য বা পরিস্থিতির শিকার ইত্যাদি ইত্যাদি

রাজা = কখনো ভালু, কখনো খ্রাপ+ মাঝে মাঝে অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়ে বুদ্ধিনাশ হওয়া, অর্থাৎ আমাদের মতো আমজনতা আর কি ......

অর্থাৎ কিনা ঘুরে ফিরে সেই একই কাহিনী, এই আমরাই :(

দময়ন্তী এর ছবি

"মিষ্টি মায়াবতী বাঙালী নারী' ----- না: থাগ্গে৷

কথা হল, "মায়াবতী' বললেই আমার তালতাল সোনার গয়না আর গাদাগাদা স্ট্যাচুর কথা মনে হয় আজকাল৷ ক'মাস হল "মায়া' আর "মমতা'য় বেজায় অ্যালার্জী হয়েছে৷ :( :(

হ্যাঁ ঘুরেফিরে সেই "আমরাই' :(
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

স্নিগ্ধা এর ছবি

হা হা হা - আপনি যা জানেন না সেটা হলো প্রথমে আমি লিখেছিলাম "মিষ্টি মায়াবতী বাঙ্গালী নারী (আপনি এবং আমি যা নই আর কি :( )", পরে সেটা মুছে দেই ...

যদিও ধারণা ছিলো আপনি ফাজলামোটা বুঝবেন, তারপরো ভাবলাম কোনভাবে অফেন্ড করে ফেলি যদি ... :)

আহহা দময়ন্তী - এতো ফিগেরেটিভলী নিলে কি চলে?
'মায়া' এবং 'মমতা'র ওই স্টেরিওটিপিক্যাল এসোসিয়েশন কে কান ধরে মাথা থেকে বের করে দ্যান :D

'মায়াবান/মায়াবতী মানুষ' ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত বড়ই ভালু কিন্তু, না?

দময়ন্তী এর ছবি

আরে না স্নিগ্ধা, আপনার ফাজলামিটা বুঝেছি তো৷ কিন্তু ঐ ফ্রেজটা দেখলেই আমার দা, কাটারি খুঁজতে ইচ্ছা হয়৷ সে আমি আপনি নাই বা হলাম, কিছু লোক তো ঐ ঐ জুতোটা পায়ে গলাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলে, ঐজন্যই আর কি৷ :)

হ বড়ই ভালু, অত ভালু না হইলে আরও ভালু -- এই আর কি৷

না: আমি কিরম রেগেমত আছি আজকে৷ভালয় ভালয় লগ আউট করি৷ :(
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

এস, কে, নির্ভানা এর ছবি

শিলং এর ব্যাপারটা খুবই ভাল লাগেছে । লেখাটা সুখপাঠ্য হয়েছে ।

নির্ভানা

শুভপ্রসাদ এর ছবি

শিলং আমার জন্মস্থান। ছোটবেলায় শিলং ছেড়ে এসেছি। পরে গিয়েছি বহুবার, কিন্তু আমার শৈশবের শিলং আর খুঁজে পাই নি। সেই শিলং এখন আমার মধ্যরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর হুহু করা বুকে ফিরে ফিরে আসে। অলস দুপুরের উদাস বাতাসের হঠাৎ ছোঁয়ায় চোখের কোণের চকিত শ্রাবণে ভেসে ওঠে আমার শৈশবের রূপকথার শিলং। সময় এবং ভুগোলের হিসেবে এখন আমি সেই রূপকথা থেকে অনেক দূরে। তবু হঠাৎ কোনও চেনা গন্ধ, কোনও চেনা সুর, কোনও চেনা ধ্বনি, কোনও চেনা ছবি - আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই শৈশবের আনন্দনগরীতে। আমি নিশিদিন তার প্রতীক্ষায়ই থাকি ।

মৃত্তিকা এর ছবি

আহ্‌ ঠাকুরমার ঝুলি!.........বেশ বড় হবার পরও পড়েছি অনেক। কখনই চাইবো না এই ঝুলি হারিয়ে যাক বা তলিয়ে যাক নতুনত্বের স্রোতে। এরাই তো শিখিয়েছে প্রথম, কল্পণাজগৎ।
খুব সুন্দর লেখা! শৈশববেলায় ফিরে গিয়েছিলাম একটুক্ষণের জন্য। আর শিলং আমার ভীষণ প্রিয় একটি জায়গা। পরের লেখাগুলোয় প্যারা করে দিয়েন শুভপ্রসাদ'দা।

শুভপ্রসাদ এর ছবি

কিছুক্ষণের জন্যে হলেও আপনাদের আমার শৈশবের আনন্দনগরীতে নিয়ে যেতে পেরে থাকলেই আমি খুশি। আমন্ত্রণ রইল আমার blog এ।

Noyon এর ছবি

ভালো লেখা

মূলত পাঠক এর ছবি

ভালো লাগলো লেখা। আরো পড়ার আশায় রইলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।