সন্ত্রাস : তুমি কার, কে তোমার?

শুভপ্রসাদ এর ছবি
লিখেছেন শুভপ্রসাদ [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২৬/১০/২০০৯ - ৫:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটা প্রশ্ন আমায় প্রায়ই ধন্দে ফেলে। খবরের কাগজ পড়ে বা নেতাদের ভাষণ শুনে সে প্রশ্নের উত্তর মেলে না কিছুতেই। কিন্তু প্রশ্নটা ঘুরপাক খেতেই থাকে।

মাস কয়েক আগে কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে ভয়ঙ্কর একটি বিস্ফোরণ হল। আমরা সকলেই জানি, এমন কি ভালো করে যারা দুইয়ের সাথে তিন যোগ করতে জানি না বা যারা ভারতবর্ষ শব্দটি নির্ভুল বাংলায় লিখতে জানি না, তারাও জানি যে বিস্ফোরণটা ঘটিয়েছে আইএসআই বা পাকিস্তানের গুপ্তচর বিভাগ। কিন্তু যে কথাটা জানি না বা জানতে পারার মত কোনও সুযোগই আমাদের কাছে নেই, তা হল, সেই বিস্ফোরণের দিন কয়েকের মধ্যেই ওই কাবুলেই পাকিস্তানী দূতাবাসের সামনেও একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় ঘটনাটি আমাদের দেশের সংবাদ মাধ্যমে খুব একটা গুরুত্বের সাথে প্রচারিতও হয় নি। ইন্টারনেটে বাউণ্ডুলেপনার সুবাদে অন্যান্য দেশের সংবাদপত্র থেকে জানলাম, ওই দ্বিতীয় বিস্ফোরণটিও তীব্রতায় বা হানাহানির অঙ্কে খুব একটা কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

আমার মনে ধন্দ লাগে, এই দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি তবে কে ঘটালো? একই ভাবে, মুম্বাইয়ের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের একমাত্র জীবিত সন্ত্রাসীর স্বীকারোক্তি-সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে আমরা প্রতিদিনই পাকিস্তানের জড়িত থাকার অকাট্য প্রমাণও পাচ্ছি, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতায় সংসদ হামলা বা দেশের রাজধানী দিল্লীর বুকে ধারা বিস্ফোরণের ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের ভূমিকার কথাও জেনেছি আমরা অনেকবারই। কিন্তু আবারো ধন্দ, যদি এই ঘটনাগুলিরও মূল পরিকল্পনা পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-ই করে থাকে, তবে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভূট্টোর হত্যা কাদের চক্রান্ত? কিংবা, মুম্বাই হানার মতোই ইসলামাবাদের হ্যারিয়ট হোটেলে বিস্ফোরক ভর্তি ট্রাক নিয়ে হামলা চালিয়ে কয়েকশ দেশি বিদেশী নাগরিকের হত্যার সন্ত্রাসী হামলাটি কারা করেছিলেন? ওটাও কি আইএসআই-এর কাণ্ড, নাকি অন্য আরো কেউ রয়েছে পর্দার অন্তরালে?

এ দেশে বা ও দেশে যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ বা এক শ্রেণীর সংবাদ ভাষ্যকারার খুবই সক্রিয় হয়ে ওঠেন, টেলিভিশনের পর্দায় তাঁদের মুহুর্মুহু উপস্থিতি বা সংবাদপত্রের পাতায় এঁদের লিখিত কলামের মাধ্যমে এরা প্রমান করার চেষ্টা করেন ভারত বা পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসাবেই এই চক্রান্তগুলির সাথে যুক্ত। একই ভাষা, একই অভিযোগ, একই ঢং, শুধু পাত্রপাত্রী ভিন্ন। ওই ধরনের প্রচারের প্রবল ঢেউয়ে দু’টি দেশের মানুষের আবেগের বানে ভেসে যাওয়ার ধরনটাও তখন একই রকম ঠেকে।

আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে, তখনও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনও দেশের পত্রপত্রিকা আমাদের কাছে সহজলভ্য হয় নি, একটি ভারতীয় সংবাদপত্রের সাংবাদিক ভারতের কোনও একটি শহর থেকে পাকিস্তানী বিমানে চেপে করাচী বা লাহোর যাচ্ছিলেন। প্লেনে চড়ার আগে লাউঞ্জে ভারতীয় খবরের কাগজ পড়ে প্লেনের ভেতর গিয়ে বসে পাকিস্তানী সংবাদপত্রের পাতায় চোখ বোলাতেই চক্ষু চড়ক গাছ। লাউঞ্জে পড়া পত্রিকায় যেমন ছিল দেশের কোন প্রান্তে আইএসআই-এর যোগসাজশে ঘটা অন্তর্ঘাত মূলক ঘটনার সংবাদ প্রতিবেদন, তেমনি প্লেনের ভেতর পাওয়া সংবাদপত্রে দেখলেন পাকিস্তানের নানা জায়গায় কিভাবে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র’-এর চক্রান্তে অন্তর্ঘাতের ঘটনা ঘটছে তার নানা সংবাদ। তাঁর মনে হয়েছিল, সংবাদগুলি আসলে একই। শুধু স্থান ও পাত্রপাত্রীর পরিবর্তন হয়েছে। এই ঘটনাটি উল্লেখ করার অর্থ এটা নয় যে ভারতে কোথাও আইএসআই কোনও ধরনের অন্তর্ঘাতের ঘটনা ঘটায় না বা ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র’ও ভারতের মাটিতে বসে শুধু রামধুন গায়।

এটা সত্য কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাকামী বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংগঠনের সঙ্গে পাকিস্তানী গুপ্তচর সংস্থার সক্রিয় যোগাযোগ রয়েছে। একই ভাবে এটাও সত্য যে শ্রীলঙ্কার তামিল উগ্রপন্থী সংগঠন এলটিটিই ভারত সরকারেরই তৈরি। শ্রীলঙ্কার তামিল রাজনীতিতে যারা ভারত ও শ্রীলঙ্কার শাসকশ্রেণী থেকে সমদূরত্ব রেখে চলার চেষ্টা করত সেসব সশস্ত্র গেরিলা সংগঠনগুলিকে খতম করে শ্রীলঙ্কার তামিল রাজনীতিতে নির্ধারক ভূমিকা পালন করার জন্য ভারত সরকার এলটিটিই উগ্রপন্থীদের কয়েক দশক ধরে সামরিক ট্রেনিং ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করেছে। সেই ট্রেনিং ও অস্ত্রশস্ত্রের দৌলতে এলটিটিই শ্রীলঙ্কায় সাধারণ নিরীহ মানুষ হত্যা ও ধ্বংসের যে কাজকর্ম চালিয়েছে, তার তুলনা পৃথিবীতে পাওয়া ভার। আজকের পাকিস্তানপন্থী জঙ্গীরা যে ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে এ দেশের বুকে তার তীব্রতার কথা মাথায় রেখেও বলতে পারি, আঘাত হানার ক্ষমতা ও বিগত দিনে ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাওয়ার খতিয়ান পাশাপাশি রাখলে এখনও এগিয়ে থাকবেন শ্রীলঙ্কার এলটিটিই-ই। এই মুহূর্তে এলটিটিই-ই একমাত্র জঙ্গী সংগঠন যাদের নিয়মিত স্থলসেনা, নৌসেনা ও বায়ুসেনা রয়েছে। তাদের এই মারণক্ষমতা অর্জনের জন্য যদি একটি দেশ বা সরকার কৃতিত্ব দাবি করতে পারে, তবে তা ভারত-ই।

শিখ জঙ্গীদের হাতে ইন্দিরা গান্ধীর নির্মম হত্যার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী শ্রীলঙ্কার সরকারের সাথে তামিল জঙ্গীবাদ দমনে সহযোগিতার হাত না বাড়ালে রাজীব গান্ধীকে ঘাতকের হাতে মরতে হত না এবং এলটিটিই ও ভারত সরকারের মধুচন্দ্রিমারও অবসান হত না। তবে ভারত সরকারের সাথে এলটিটিই-র আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ শেষ হয়ে গেলেও এখনও তামিলনাড়–র তামিল জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলগুলির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এলটিটিই ভারতের মাটি থেকে তার নানা কাজকর্ম এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতে নির্বাচন এলে তামিলনাড়–র ডিএমকে, এমডিএমকে ইত্যাদি রাজনৈতিক দলগুলি মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়, কে কতটা শ্রীলঙ্কার তামিলদের জন্য সমব্যথী প্রমাণ করার। শ্রীলঙ্কার এলটিটিই ঘাঁটিতে গিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার কৃতিত্ব অর্জনকারী তামিল নেতা গোপালাস্বামীর কিন্তু পরবর্তীতে ভারতের সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কোনও অসুবিধাই হয় নি বা কংগ্রেসের পক্ষেও তাদের নেতার হত্যাকারী সংগঠনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা রাজনৈতিক দলের সাথে নির্বাচনী আঁতাত গড়তে কোনও অসুবিধা হয় নি। তামিল উগ্রতার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে শ্রীলঙ্কার সরকার যেমন সিংহলী জাতীয়তাবাদের হিংসাত্মক প্রতিভূ জনতা বিমুক্তি পেরুমনাকে বস্তুগত ও আদর্শগত সমর্থন জুগিয়েছে, আজকের সাধ্বী প্রজ্ঞা বা সেনা অফিসার শ্রীকান্ত পুরোহিতকে দেখলেও সেই কথাই মনে হয়।

১৯৪৭-এর দেশভাগের সময় ঘটে যাওয়া দু’টি ছ্ট্টো সংবাদ কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও এখন খুব প্রাসঙ্গিক মনে হয়। দেশভাগের সময় লাহোর হাইকোর্টের জনৈক বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন, আজ তোমরা ধর্মের নামে দেশভাগ করছ। ভাগের কোনও শেষ নেই। একবার আরম্ভ করলে শেষ না দেখে ছাড়ে না। একদিন এমনও দিন আসবে যেদিন একই পরিবার স্বামী ও স্ত্রী’েত দু’টি দেশে বিভক্ত হতে চাইবে। এই মন্তব্যে হয়ত আবেগটাই আছে। কিন্তু সত্য কি নেই? আমাদের জাতীয়তাবাদী নেতাদের, কি কংগ্রেস কি মুসলিম লীগ ধারণা ছিল, ভারত ও পাকিস্তান এই দু’টি দেশের জন্ম হলে দু’টি দেশই বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে চিরতরে মুক্তি পাবে। তা কি হয়েছে? নাকি, লাহোর হাইকোর্টের সেই বিচারপতির ভবিষ্যৎবাণীর হাত ধরেই ছোট ছোট নানা সংকীর্ণ পরিচয়ের ভিত্তিতে দু’টি দেশই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিভেদ বিচ্ছিন্নতার ঘূর্ণীপাকে জড়িয়ে গেছে দিনের পর দিন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হওয়ার সময় যখন নানা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানেরও আনুষ্ঠানিক বিভাজন হচ্ছিল তখন সেনাবাহিনীর বিভাজন অনুষ্ঠানে দু’টি দেশের দু’টি সেনাবাহিনীতে বিভক্ত হওয়া সেনা অফিসাররা অশ্রুসজল কন্ঠে শপথ নিয়েছিলেন, আমরা পরাধীন দেশে একে অপরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি। দেশ স্বাধীন হচ্ছে বিভাজনের মধ্য দিয়ে, আমরা বিভক্ত হচ্ছি দু’টি সেনাবাহিনীতে। আমাদেরকে যেন কখনো পরস্পরের বিরুদ্ধে বন্দুক তুলে নিতে হয় না, আমরা সেই শপথ-ই নিচ্ছি। আমরা দু’টি দেশের মৈত্রী ও সুরক্ষার জন্যে হাতে হাত ধরে কাজ করে যাবো আজীবন। বলা বাহুল্য, বিভেদের পঙ্কিলে জন্ম নেওয়া দু’টি স্বাধীন দেশ তাঁর সেনা অফিসারদের বিভাজনকালের আবেগকে সম্মান জানাতে পারে নি। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই তথাকথিত সার্বভৌমত্বের দিনমজুরের মত তাঁদের একজনকে বন্দুক হাতে ঠেলে দেওয়া হয়েছে অন্য জনের বিরুদ্ধে।

বিভেদের কালো অঞ্জন চোখে মেখে আজ এমন সময়ে আমরা এসে দাঁড়িয়েছি, যখন অভিন্ন শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়েও আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে পারছি না শত্রুর বিরুদ্ধে। যারা বেনজিরকে হত্যা করেছে, তারাই যে ভারতের বুকেও একের পর এক অন্তর্ঘাতের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। যারা ইসলামাবাদের হোটেলে হামলা চালিয়েছিল, তারাই যে মুম্বাইয়ের হোটেলেও আঘাত হেনেছে, তা জেনেও না জানার ভান করছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সর্বোপরি এ দেশের সরকার। এটা ঠিক, পাকিস্তানী গুপ্তচর বিভাগের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়েই গড়ে উঠেছিল এই জেহাদিরা, কিন্তু পাকিস্তানী রাজনীতির এক বিচিত্র ইতিহাসের পথ ধরে আইএসআই যে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যার সর্বাঙ্গে পাকিস্তান সরকারেরও নিয়ন্ত্রন নেই। এ কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার জানে, ব্রিটেন সরকার জানে। ভারত সরকার জেনেও না জানার ভান করছে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ঘোলাজলে ভোট শিকারের আশায়। আবার ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা বালুচিস্তানে যে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য করত আফগানিস্তানের কান্দাহারের কনস্যুলেট থেকে, তা যে এখন অনেকটাই শিথিল হয়ে গেছে তালিবানি রাজনীতির জালে পড়ে, তাও পাকিস্তান সরকার জানে। অবশ্য এ কথা সত্য, পাকিস্তান সরকার বা সেখানকার সংবাদ মাধ্যম অনেকটাই দায়িত্বশীল কথাবার্তা বা লেখালেখি করছে।

আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটা এমন অ™ভুত হয়ে গেছে বছরের পর বছর ধরে যে একটি দেশ দায়িত্বশীল কথাবার্তা বললে তাঁকে নিজের দেশের কট্টরপন্থীদের যেমন সমালোচনার শিকার হতে হয় তেমনি অন্য দেশের সরকার তাঁকে তখন বেকায়দায় পড়ে নরম হয়েছে বলে অভিহিত করে। পাকিস্তানের বর্তমান সরকার যে ইসলামি জঙ্গী রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেই ক্ষমতায় এসেছে বা ক্ষমতায় এসেও রাষ্ট্রের জঙ্গী অংশের সাথে যে তাঁকে প্রতিদিন লড়াই করতে হচ্ছে, তা ভারতের সংবাদ মাধ্যম বেশিরভাগ সময়ই এড়িয়ে যায়। মৌলবাদী কট্টরপন্থার আক্রমণের নিশানা যে শুধু ভারত নয়, পাকিস্তানের মন্ত্রী শেরি রহমান বা সেখানকার প্রাক্তন মন্ত্রী আনসার বার্ণি ও তাঁদের সমমনস্করাও, এটা ভুলে গেলে কি চলবে।

কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই মানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই নয়, এটা বোঝার সময় আজকেই হয়ত সবচেয়ে জরুরি। আইএসআই-এর দ্বারা জঙ্গীরা প্রশিক্ষিত হয়েছে এই অভিযোগে যদি পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হয়, তবে আফগানিস্থানের বামপন্থী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্যে মার্কিন সরকার সেখানকার ও পাকিস্তানের মৌলবাদীদের যে অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য করেছিল, তার জন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণার কথা বলার সাহস আছে কি অত্যুৎসাহী জাতীয়তাবাদীদের?

এখনই হয়ত উপযুক্ত সময় যখন সীমান্তের দুপারে থাকা মানুষকে পরস্পরের সাথে আরো বেশি মিলিত হতে দেওয়ার। মানুষের সাথে মানুষ হাত মেলালেই বোঝা যাবে কারা আমাদের অভিন্ন শত্রু। যে ধ্বংসের মুখোমুখি আমাদের উপমহাদেশ, আমাদের এই পৃথিবী, সেই ধ্বংসের সামনে নির্বাচনী রাজনীতি খুবই ছোট জিনিস। ক্ষমতার রাজনীতির কারবারীরা একে ছোট হতে দেবে না। কারণ ওটাই তাদের অক্সিজেন। উদ্যোগটা নিতে মানুষকেই। ইন্টারনেটে বিদ্বেষের বিষ না ছড়িয়ে এখন সময় ভালোবাসার বার্তা পাঠানোর। ইংল্যান্ডের সাথে ক্রিকেট সিরিজ খেলার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি করাচী ও মুম্বাইতে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ হওয়া। নাটক গান ক্রিকেট আত্মীয়তা, যেভাবেই পারা যাবে, সেভাবেই পৌছতে হবে দুপারের মানুষকে একে অপরের কাছে। আমাদের নেতারা তা করতে দেবেন না। আগে তারা চান সংসদীয় নির্বাচনের তরী পার হতে। তার জন্যে তাঁদের মধ্যে এখন দেশপ্রেমের তুমুল প্রতিযোগিতা। অথচ আগেকার বহুবারের মত এবারও নির্বাচন শেষ হলেই সব জঙ্গীপনার অবসান হবে, এবং দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও আবার ঠিকঠাক হবে। মাঝখানে শুধু কয়েকটা দিন সাধারণ মানুষকে উন্মাদ করার প্রতিযোগিতা। ওরা এটা বোঝেন না, নির্বাচন গেলে রাজনৈতিক দলগুলি শান্ত হয়ে গেলেও। যে উন্মাদনা তারা মানুষের মধ্যে তৈরি করেন ভোট বৈতরণী পার হওয়া জন্য, সেটা থেকে যায়। সেখান থেকেই জন্ম নেয় জৈশ-ই-মহম্মদ বা অভিনব ভারত।

এই উন্মাদনায় আমরা ভুলে যাবোনা আনসার বার্নিকে, যার জন্যে পাকিস্তানের জেলের অন্ধ কুঠুরীতে থাকা ভারতীয় বন্দী আশার আলো দেখে, মুম্বাই হানার সঙ্গে সঙ্গে যিনি নিজের দেশের মৌলবাদীদের ভ্রƒকুটিকে উপেক্ষা করে মুম্বাইয়ের হাসপাতালে এসে আক্রান্তদের জন্যে রক্তদান করে যান। আমরা ভুলে যাবো না কুলদীপ নায়ার বা নির্মলা দেশপাণ্ডেকে, যারা বছরে পর বছর ভালোবাসার বার্তা নিয়ে ওয়াগা সীমান্তে স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালান।

বন্দুক, মিলিটারি, যুদ্ধ তো অনেক হল। এত এত যুদ্ধের বিজয়েও তো শান্তি এল না। আসুন, এবার অন্য যুদ্ধ লড়ি। আঁধারের বুকে ভালোবাসার অসংখ্য প্রদীপ জ্বেলে দিই। অনেক যুদ্ধ তো নিস্ফলা গেল। আরেকটা না হয় নিস্ফলাই যাবে। তবু এ যুদ্ধে মানুষ তো মরবে না। চোখের জলে তো ভেসে যাবে না অসংখ্য সংসার।


মন্তব্য

কারুবাসনা এর ছবি

শেষ করা গেল না।

তবে উনি মাওদরদী নন।:(


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

শুভপ্রসাদ এর ছবি

আপনি লেখাটি পড়ে শেষ করতে পারলেন না, এর জন্যে আমি-ই দায়ী। আমার অযোগ্য লিখন হয়ত সচলায়তন কর্তৃপক্ষ ছেপে আপনাকে পড়তে বাধ্য না করতে পারতেন। আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্যে আমি দুঃখিত।

অর্জুন মান্না [অতিথি] এর ছবি

এই মুহূর্তে এলটিটিই-ই একমাত্র জঙ্গী সংগঠন যাদের নিয়মিত স্থলসেনা, নৌসেনা ও বায়ুসেনা রয়েছে।

লেখাটা বোধহয় বেশ পুরোনো। সম্পাদনা করে প্রকাশ করা উচিত ছিল।

শুভপ্রসাদ এর ছবি

লেখাটি পুরোনো, তবে প্রাসঙ্গিকতা কি হারিয়ে ফেলেছে? এলটিটিই শেষ হয়ে গেছে এই ধারণা থেকেই কি আপনি বলছেন এটা সম্পাদনা করা দরকার। সত্যিই কি শেষ হয়ে গেছে?

অর্জুন মান্না [অতিথি] এর ছবি

লেখার মূলভাব প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি একটুও। কিন্তু তথ্যের পরিবর্তন হয়েছে। সেটা ঠিক করা উচিত ছিল। আ্পনি যদি বলেন 'এই মুহুর্তে', তবে সেটা বর্তমানকেই বুঝায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

টেরোরিস্ট আর ক্রিমিনালদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় জরুরী হয়ে পড়েছে।

মহসীন রেজা

জি.এম.তানিম এর ছবি

নির্বাচনের আগে পরে রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ মনে হয় উপমহাদেশের দেশগুলোতে একই রকম।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।