বিজ্ঞানীদের চেহারা কেমন হয়?
কালাতো ভাই হিমু গোয়েন্দা ঝাকানাকায় এক আপনভোলা বিজ্ঞানী চরিত্র আমদানি করেছে। বিজ্ঞানী মতিলাল কারওয়ানবাজারিয়া। দুনিয়া কাঁপানো সব আবিষ্কার করে ফেলেন তিরিশ মিনিটে। কিন্তু বাহ্যজ্ঞান বিশেষ নাই। আর্কিমিডিসের মতো তাই প্রায়ই বিনা তহবনে পথেঘাটে বেরিয়ে পড়েন। আর বেচারার বেশিরভাগ আবিষ্কারই লুট করে নিয়ে যায়, ঠিক ধরেছেন, বদের হাড্ডি বদরু খাঁ।
কিন্তু মতিলালের চেহারা কেমন হওয়া উচিত? এরকম আত্মভোলা বিজ্ঞানীদের চেহারার জনপ্রিয় ফরম্যাট আমরা দেখতে পাই কাথবার্ট ক্যালকুলাস আর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর মাঝে। ক্যালকুলাস এই ফরম্যাটের ইয়োরোপীয় [আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে ফ্রাঙ্কো-বেলজিয়ান] রূপ, আর শঙ্কুর চেহারা উপমহাদেশীয়। যদিও শঙ্কু কমিকে আমাদের অতি পরিচিত প্রোফেসরকে পাওয়া যায় না, সেখানেও ছিরিছাঁদ পশ্চিমা ধাঁচের অনুকরণে।
শঙ্কুর চেহারাটি সত্যজিতের কলমে, ধারণা করি, বিবর্তিত হয়েছে সুকুমারের হেশোরাম হুঁশিয়ার থেকেই। হীরক রাজার দেশেও আমরা বৈজ্ঞানিককে দেখি কমবেশি শঙ্কুর বেশে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন কমিক আর অ্যানিমেশনে বিজ্ঞানীদের দেহভঙ্গি কমবেশি একই রকম। জ্ঞানের ভারে একটু নুয়ে পড়া, চিন্তাগুলোকে ঠিকমতো মাথা চুলকে বের করতে গিয়ে মাথায় টাক, রোজ শেভ করার ঝামেলা এড়াতে মুখে কিছু দাড়িগোঁফ। ব্যতিক্রম আছে অবশ্যই, কিন্তু সেগুলো যেন এই ছবিটিকেই নিয়মিত হিসেবে জোরদার করে।
খেয়ালী বিজ্ঞানীর কাছাকাছি আরেকটি ধরন হচ্ছে ওঝা বা জাদুকর। গুপী গাইন বাঘা বাইনে বরফি আর অ্যাসটেরিক্সের গেটাফিক্স এই ঘরানায় পড়ে। তারাও কমবেশি বর্ষীয়ান, এলোমেলো, একটু রাবীন্দ্রিক।
এই আত্মভোলা বিজ্ঞানীর চেহারার ধারণাকে সবচেয়ে জোরালোভাবে প্রভাবিত করেছেন যে ব্যক্তি, তার নাম আইনস্টাইন। সারা পৃথিবীতেই কমিকে বিজ্ঞান আর পাগলামিকে যোগ করলে সমীকরণের ওপাশে আলবার্ট ভাইয়াকে চোখে পড়ে।
কিন্তু বাঙালি বিজ্ঞানীদের চেহারা কেমন হবে? গোয়েন্দা ঝাকানাকা কমিকে তো আমরা চাইছি একেবারেই দেশী ফ্লেভারের সব চরিত্র রাখতে। বাঙালি বিজ্ঞানী বললেই প্রথমে মনে পড়ে জগদীশচন্দ্র বসুর কথা। কিন্তু বসু মশায় অত্যন্ত তেজস্বী পুরুষ ছিলেন, তার হাতে রাইফেল ধরিয়ে দিলে অ্যালান কোয়াটারমেইন বলে নমস্কার করা যাবে। সত্যেন বসুর চেহারা ভালোমতো স্টাডি করার সুযোগ মেলেনি এযাত্রা, তবে শুনেছি তিনিও বেশ আটপৌরে চেহারার মানুষ ছিলেন। কুদরাত ই খুদা কিংবা কাজী মোতাহার হোসেনের চেহারাও মতিলালের মতো পাগলার জন্যে মানানসই নয়। হালের বিজ্ঞানীরা প্রায় সবাই বেশ সচেতন মানুষ, আত্মভোলা ভাবটা তাদের মধ্যে একেবারেই নেই।
তাই কিছুটা পর্যবেক্ষণ আর কিছুটা কল্পনাশক্তির আশ্রয় নিতে হলো মতিলাল কারওয়ানবাজারিয়ার জন্যে। কৃশকায়, মুখে সফেদ দাড়িমোচ, চোখে উদাস দৃষ্টি। চেনা চেনা লাগে, তবু অচেনা।
গোয়েন্দা ঝাকানাকা কমিক সিরিজের দ্বিতীয় বইতে মতিলাল আসছে তার টুনি-সাবমেরিন নিয়ে। আপনাদের সাথে দেখা হবে নিশ্চয়ই!
মন্তব্য
'ওরে নো' টাইপের চরম হইছে।
তয় বিজ্ঞানীদের একটু শুকনা থাকার নিয়ম বলে জানতাম।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
বিজ্ঞানী মতিলাল কারওয়ানবাজারিয়ার সাথে পরিচিত হয়ে খুশি হলাম। -রু
না সুজন্দা
হইল না
জইমল না ফডুখান
দাড়িতে ইট্টু ফাঁক ফাঁক আর ফাঁকের ভিতরে কালো সাদা- সাদা কালো কিংবা ফাঁক দিয়ে চমড়া দেখা না গেলে আপনার খাট্টুন জমে না আবারও প্রমাণিত হইল
০২
এই লোকটারে বড়োজোর মাঠাওয়ালা কওন যাইতে পারে
বিজ্ঞানী না
আপনার কার্টুন চরিত্রগুলোতো সবসময়ই ভালো লাগে। কিন্তু এবারে বেশী ভালো লাগল আপনার বিশ্লেষণ! চমৎকার অনুসন্ধিৎসু মনের চমৎকার বিশ্লেষণ পড়ে আমার মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম।
সুজনদার বর্ণনাও তো সেইরকম দেখি। এবার তারা ছোট্ট এই মুগ্ধ করা লেখাটার জন্যে।
ড্রেসআপ সহ আরেকটা দ্যান না দাদা।
বিজ্ঞানী প্রসঙ্গে, মাসুদ রানা'র পিশাচ দ্বীপ বইতে একটা চরিত্র ছিলো, প্রফেসর গোলাম জিলানি। আর ছিলো বিজ্ঞানী সফদর আলী। একে দেখে আমার ক্যানজানি ওদের কথাই মনে পড়লো
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
মতিলালের কেমঞ্জানি জাফর ইকবালের মতোন ঝাঁকড়া গোঁফ, তবে কাঁচাপাকার জায়গায় পুরা পাকা আরকি। সেই চেনা চেনা লাগে তবু অচেনা কিসিমেরই।
এসব ক্যারেক্টার দেখে আর তর সইছে না, আসছে বইমেলায় হাতে পাব ত কমিকখানা?
--চতুর্বর্গ
চুল-দাড়ি কাঁচা-পাকা হইলে মনে হয় বেশি ভাল লাগত।
---------------------
তৌফিক
মতিলাল কারওয়ানবাজারিয়া নাম থেকে পত্রিকার সম্পাদক টাইপ গন্ধ বের হয়।
বিজ্ঞানী হিসাবে কেমন জানি নামটা!
১. যারা ভাবতেন সুজন্দা শুধু হাইকু সাইজের পোস্ট ঝাড়েন তারা আজ উনার গদ্যের সাথে পরিচিত হয়ে গেলেন। অবশ্য এটা আমারও দেখা সুজন্দার সবচে' বড় পোস্ট।
২. মতিলাল কারওয়ানবাজারিয়ার চেহারা কেমন হবে তার জন্য যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ছবি ছাড়া সেটাই একটা পূর্ণাঙ্গ পোস্ট, এবং অবশ্যই গবেষণাধর্মী পোস্ট।
৩. বিজ্ঞানীর নাম পছন্দ হয়নি। আর চেহারাটাও ঠিক জুতসই লাগছেনা। এটা হয়তো মাথার ভেতর প্রোফেসর শঙ্কু, প্রোফেসর ক্যালকুলাস আর গেটাফিক্স থাকার দরুন, তবু ঠিক জুত লাগছেনা। একটা সেকেন্ড থট্ দেবেন বস্।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লেখা ও বিশ্লেষণ অসামান্য ভালো লাগলো, সুজন্দা। কী যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি ঝাকানাকা কমিক্সের জন্য! অসামান্য এক দিকপাল হবে এটা।
তবে এই চরিত্রের ছবিটায় মনে হলো "পাঞ্চ" কম। ঝাকানাকা সিরিজের আর সব চরিত্রের তুলনায় কিছুটা যেন মেটে। "আপনভোলা" কম, "নির্বিকার" বেশি মনে হচ্ছে। এক্সপ্রেশন একটু বাড়ানো যায় কোনো ভাবে?
ক্যান ক্যান, সচলে এতকগুলান বিজ্ঞানী আছে কী করতে তাইলে?
প্রবন্ধিকায়
না দাদা। বিজ্ঞানীর নাম, চেহারা ভালো লাগেনি। তবে আপনার আজকের লেখাটা ভালো লেগেছে। আরেকটু দেখুন না .... নাম আর চেহারা ............... লোচন বক্সীর মতো পরিচিত কাউকে পেলে মজা লাগবে।
সুপ্রিয় দেব শান্ত
এইটা কি কারোয়ানবাজারিয়ার সেকেন্ড ভার্সন নাকি? যদ্দুর মনে পড়ে ফেসবুক গ্রুপ বা সেইরকম কোথাও মতিলালাএর আরকটা ছবি দেখেছিলাম মনে হয়- লম্বাদাড়িগোফওয়ালা, প্যান্টবিহীন, শুধু পাঞ্জাবী পরা
ছবি আর চরিত্রবিশ্লেষণ, দুইটাই দুর্দান্ত হইছে!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
এর হাতে একটা হুকো থাকলে বেশ মানায়
কেমন অমায়িক ভালমানুষ ধরণ চেহারা, দেখলেই মনে হয় হাসিমুখে হুকো টা বাড়িয়ে ধরবে।
লেখা এবং আঁকা অসাধারণ ভালো। সাধুবাদ জানাই।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
চেহারা যুৎসই লাগছে না। আরেকটু অন্যরকম কিছু হইলে বেশি ভাল লাগতো মনে হয়।
দীর্ঘতম পোস্টের জন্যে আপনাকে অভিনন্দন।
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আমারও জুইতেবল লাগলো না। নামটাও আরেকটু জোশ হইলে ভালো লাগতো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
মতিলাল কারওয়ানবাজারিয়ার সাথে জীবিত বা মৃত কোনো স্থান/ব্যক্তিকে গুলিয়ে ফেলা শৈল্পিক মনে পরিচয় কেবল। এর জন্য খাট্টুনিশ কিংবা চরিত্র চিত্রায়নকারী অথবা কর্তৃপক্ষ— কেউই দায়ী থাকবেন না।
এইটা একটা ক্লারিফিকেশন। সুজন্দা হয়তো আরও সুন্দর করে দিতে পারবেন।
আর মতিলাল কারওয়ানবাজারিয়ার খোমা সম্পর্কে বলতে পারি, আগের ভার্সনটা বরং অনেক ভালো লেগেছিলো। সুজন্দা একটু ভেবে দেখবেন। তবে এই ভার্সনের ফুলস্কেপ আসলে কেমন হবে, বুঝা যাচ্ছে না এখনি।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
জামাল নজরুল ইসলাম হালের তীব্র আলী? জি.সি. দেব দার্শনিক কিন্তু তার চেহারাতেও ফিচার ছিল...
স্যরি, আগেরবার যতি চিহ্নের সমস্যা।
জামাল নজরুল ইসলাম বা হালের তীব্র আলী? কেমন হয়? জি.সি. দেব দার্শনিক কিন্তু তার চেহারাতেও ফিচার ছিল...
নতুন মন্তব্য করুন