আমি যদি ভুল করেও কখনো বলি, আজ আমার ভাল লাগছে না, তবে সবাই আমার ভাল না লাগার একটাই কারণ ধরে নিয়ে আমাকে স্বান্ত্বনা দিতে থাকে। খুব শুভাকাঙ্খীর মতো আমাকে বোঝাতে থাকে, এসব কষ্টের গল্প সব মায়েরই কম বেশি থাকে আর সময়ের সাথে সাথে পুরনো ক্ষত সেরে যায়। আমাকে নিরুত্তর দেখে তারা নিজের দায়িত্বে গাফিলতি হচ্ছে ভেবে শেষ পর্যন্ত শেষ বুদ্ধি বাৎলে দেয়, সুরভি তুমি ব্যস্ত থাকো। কেন যেনো সব কিছুর পরও এই একটা উপদেশ আমার মেনে চলতে ইচ্ছে হয়।
আমি ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি। অফিসে, বাসায়। শফিক ভাইয়ের কাছ থেকে আগ্রহ দেখিয়ে কাজ চেয়ে নেই। লিগ্যাল এ্যাসাইনমেন্ট গুলোতে মনপ্রাণ ঢেলে দেই। ভিকটিমের নালিশ, এজাহার, দরখাস্ত নিখুঁত করার জন্য গাদিগাদি আইন বই ঘেঁটে চলি। বাসায় এসে ঘরের আসবাবের স্থান পরিবর্তন করি, ধুলো ময়লা ঝেড়ে সুদৃশ্য করি গৃহকোণ। মায়ের কাছ থেকে রান্নার দায়িত্ব নিয়ে নেই, আস্থার সাথে বেশি সময় কাটাই, ওর পছন্দ মতো ফাস্ট ফুড তৈরি করি, হাসানের পাঞ্জাবীতে নকশা তুলি। একসময় আমার সব ব্যস্ততা ফুরিয়ে রাত আসে। হল্লার বিস্তীর্ণ শহর ঢাকাও একসময় নিশ্চুপ হয়ে যায়। আর অদ্ভুতভাবে আমার মস্তিষ্কের সব স্নায়ুকোষের ব্যস্ততা শুরু হয় তখনই।
তারপর কুচকুচে রাত্রি তার বিশালতার অহংকার নিয়ে আমার সামনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। আর আমি পৃথিবীর জাদুকরী সব মায়া মমতা উপেক্ষা করে নকশীকাঁথার নিচে মাথা ঢুকিয়ে বেদনার নকশাগুলো যত্ন করে রিফু করি। ভাবি মরতে পারলে বেশ হয়। মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞতা দেখানো হচ্ছে জেনেও আমি আমার বর্তমান বেঁচে থাকাটা উপভোগ করতে পারি না। আসলে উপভোগ ব্যাপারটা আমি ভুলে গেছি। ঘর আর ঘরের মায়া থেকে নির্ভেজাল আনন্দ পেতে এখন আর ভাল লাগে না। দিন যাচ্ছে আর আমার চোখের নিচে কালি পড়ছে। অন্য সবার মতো অপর্ণাও বলে, সময়ের সাথে সাথে আমার এই অনুভূতির তীব্রতা আমার ভেতরেই চাপা পড়বে। সেই সাথে আস্থা আমার ক্ষত সারিয়ে তুলবে। কিন্তু আমার বেদনা আমিই জিইয়ে রাখি নাকি অন্যরা তা জাগিয়ে তোলে বুঝি না।
রাতে আমার ঘুমের ওষুধেও ঘুম হয় না। ডাক্তার বলেছে রাতে আধা ঘন্টা হেঁটে এসে বিছানায় যেতে তাহলে ঘুমের ওষুধ ছেড়ে দিতে পারবো। অফিস থেকে ফিরে সাংসারিক কাজকর্ম সেরে হাঁটার সময় বের করার চেষ্টা করি। বেশিক্ষণ হাঁটতে পারি না। সপ্তাহখানেক ধরে রাতে ডিনারের পর এপার্টমেন্টের সামনের রাস্তার এ মাথা ও মাথা হেঁটে আসার চেষ্টা করছি। দশ মিনিট হাঁটলেই কেমন হাঁপ ধরে যায়। শরীরটা খুব ভারি লাগে। মনে হয় পা জোড়া আর শরীরের ভার বহন করতে পারছে না। একসময় পথ খুঁজে না পেয়ে বিছানাতেই আত্মসমর্পণ করি।
তারপর প্রতি দিনের পরিবর্তনহীন একই অনুভূতি। ভারহীন বুক অথচ অসম্ভব ভারি শরীরটা নিয়ে বিছানায় ছটফট করি। ঘুম নেই। পলায়নরত ঘুমকে আঁকড়ে ধরতে আমি ছটফট করি। হায়! ঘুমহীন রাত কাটানোর অভিশাপ যে আমাকে কে দিয়েছিল! তাকে পেলে দুই হাতে তার দুই পা চেপে ধরে বসে থাকতাম। অভিশাপের দায় থেকে মুক্তি পেতে সে আমাকে যা করতে বলতো করতাম। অন্তত ভোর রাতে তো চোখ ক্লান্ত হয়ে বুঁজে আসবে! আজকাল তাও হচ্ছে না। রাত বাড়ে। আর আমার চোখজোড়া পলকহীন হতে থাকে।
নিয়মানুবর্তী দেয়াল ঘড়ির টিকটিক আর বাথরুমের কল চুঁইয়ে পড়া পানির একঘেঁয়ে বিরক্তিকর শব্দ ধীরে ধীরে আমার মাথার বন্দি পোকাদের খোঁচাতে থাকে। একসময় সেসব হতচ্ছাড়া পোকারা দিকভ্রান্ত হয়ে ছুটে বেড়াতে বেড়াতে মাথা ছেড়ে আমার শরীর বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। তারপর ঘুমের অপেক্ষায় ক্লান্ত আমি পোকাদের দলে মিশে যাই। নিজের অস্বস্তি কাটাতে আমি হাসানের গায়ে হাত রাখি।
ডিম লাইটের আলোতে রাত্রিটা বড় রহস্যময় লাগছে। রহস্যময় রাত্রিতে নির্ঘুম আমি, যার কিনা সব রহস্যই শেষ হয়ে গেছে। ঘুম না আসার নিদারুণ অস্বস্তি নিয়ে প্রতি রাতের মতো এবার আমি সেই মুখটি মনে করার চেষ্টা করি। চোখ বন্ধ করতেই আমার নাছোড়বান্দা ইচ্ছেশক্তি সেই ছোট্ট মুখটিকে পুরো শরীরসমেত আমার চোখের সামনে ভাসিয়ে নিয়ে আসে। আমি ওর শরীরের গন্ধ পাই। কি অদ্ভুত! ওর আর আস্থা শরীরের গন্ধ একই! মুখটি অস্পষ্ট! অথচ শরীরের ভাঁজগুলো কি যে স্পষ্ট! যেনো সব শিরা-উপশিরা দেখা যায়!
তবে অস্পষ্ট মুখটির কাতরতা-মলিনতা আমি টের পাই। নিস্তেজ রাতের নিরবতা ভেদ করে সেই মুখ আমার কানের কাছে গুনগুনিয়ে অভিযোগ জানায়, আমাকে হাসপাতালের ওয়েস্ট বিনে ফেলে এসেছো? সেই সাথে চাপা স্বরে আমাকে ডাকতে চেষ্টা করে, মা, মা! কিন্তু সম্বোধন শুনতে পাওয়ার আগেই স্বার্থপরের মতন আমি চোখ মেলে তাকাই। পাশে শুয়ে থাকা আস্থাকে বুকের ভেতর টেনে নিতেই আমি যেন পালিয়ে বাঁচি! আমার হাতের বাঁধন থেকে ঘুমের ঘোরেই আস্থা নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
আমি আর পারছি না। বুঝে গেছি আজও আমার ঘুম আসবে না। বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে যেয়ে চোখে মুখে পানি দেই। বাথরুম থেকে বের হয়ে এসে আর বিছানায় যেতে ইচ্ছে করে না। ঘুম না আসলে বিছানায় শুয়ে আরও ক্লান্তি বেড়ে যায়। আমি স্টাডি রুমে যেয়ে অপর্ণার দেয়া বইগুলোর পাতা উল্টোই। একবার ওরিয়ানা ফালাচ্চির letter to a child never born এর অনুবাদ ‘হাত বাড়িয়ে দাও’ আরেকবার হাসান আজিজুল হকের ‘জীবন ঘষে আগুন।’ কিন্তু কোনো বই পড়াই এগোয় না। উল্টো ক্লান্তি আর হাহাকার মিলেমিশে বুকের ভেতর কি এক কষ্ট জমতে থাকে। রাত কাটাবার শেষ চেষ্টা হিসেবে এবার আমি অপর্ণাকে চিঠি লিখতে বসি। আজ ওকে একটা দীর্ঘ চিঠি লিখবো।
সুপ্রিয় অপর্ণা,
রাতের দীর্ঘ সময়টুকু কাটানো আমার জন্য দিন দিন দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। আমি আর পারছি না। আমি বারবার কেবল তোমাকেই বলেছি, আমি পারছি না। মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসে পাওলো কোয়েলোর ‘ভেরোনিকা ডিসাইড্স টু ডাই’ এর ভেরোনিকা যেমন আত্মগত সংলাপে জীবনকে নতুনভাবে সাজাবার জন্য ছক করেছিল, আমি বারবার মরে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই একই ছক কষে জীবনে ফিরে এসেছি। আস্থার শরীরের প্রিয় গন্ধ আর হাসানের সাথে কাটানো প্রিয় সময়ের স্মৃতি আমার কষ্টকে আমার বিলাসিতা বানিয়েছে বারবার। তাই আমি মরতে পারিনি। হাসান আমাকে ফিরিয়েছে, তুমিও।
আচ্ছা আমার কষ্টের পরিধি তোমার কাছে কি অর্থহীন লাগে? কষ্ট! কষ্টের পরিধি সবসময় অবয়বহীন। তবু সীমাহীন কষ্ট মাঝে মাঝে প্রিয় শরীরে অবয়ব নিয়ে আসে। বেঁচে থাকার আনন্দ তখন ভারহীন। মানুষের সীমাবদ্ধতা তাকে অসহায় করে। চোখের জল আর বালিশের মাঝে সেন্টিমিটারের ব্যবধানের চেয়ে মৃত্যু তখন বেশি প্রিয় নয় কি? তবু কেন জন্মের পর বেঁচে থাকার লোভ আমাদের নিরন্তর? তুমি অন্ততঃ আমার কষ্টকে বিলাসিতা ভেবো না। বিশ্বাস কর সুখের অন্তরালে জমতে থাকা নিঃসঙ্গতার ভার বড় বেশি হয়ে যাচ্ছে। আজকাল সত্যিই আমার বাঁচতে ইচ্ছে করে না।
আসলে কি জানো অপর্ণা, মৃত্যুগন্ধ আমাদের গায়েই লেগে থাকে। জীবনের সৌরভ দিয়ে সেই গন্ধ আমরা ঢেকে রাখি। তবু মৃত্যুগন্ধের তীব্রতা সেই সৌরভ ছাপিয়ে ঠিকই একদিন আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। মৃত্যু! শব্দটির বানান কঠিন কিন্তু কত সহজ অবশ্যম্ভাবী শব্দ! এবার নিশ্চিত মৃত্যুর কাছাকাছি যেয়েও আমি ফিরে এলাম। কি আশ্বর্যরকম ভাবে একটা দেবশিশুর মৃত্যু দিন আমার জন্মদিন হয়ে গেল!
আমার শরীরে ভ্রমণরত যে শিশুটি গোলকধাঁধায় পথ হারিয়েছে, আমাকে বাঁচাতে যেয়ে যে শিশুটির কবর হয়নি, তার জন্য আমি দিন দিন বুকের গহীনে কবর খুঁড়েছি। আবার সেই কবরে মুঠো মুঠো মাটি ভরে আমিই তাকে লুকিয়ে ফেলেছি। আমার সেই সন্তান আমার বুকের উষ্ণতার জন্য নিশ্চয়ই খুব কেঁদেছে। শব্দহীন সেই কান্নাকে উপেক্ষা করে ডাক্তারের অভিজ্ঞ হাত তাকে আমার শরীর থেকে আলাদা করেছে। আমি ওটি রুমে ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে শুধু ভেবেছি, আমার ছেলেটা আমাকে বাঁচাতে যেয়ে নিজে মরে গেল! কি স্বার্থপর! কি লোভী মা আমি!
আমি ভাল নেই অপর্ণা। একদম ভাল নেই। বিভ্রমের গোপন সুগন্ধির মধ্যে ভেসে যাবার মোহও আমাকে ভাল রাখতে পারছে না। আমি জানি হাসানের মতো তোমারও মনে হচ্ছে নির্বোধের মতো আচরণ করছি। হাসান কিন্তু একজন বিবেচক স্বামীর মতোই আচরণ করছে। শারিরীক বিচ্ছিন্নতায় ওর জীবনে এখন পর্যন্ত কোনো আক্ষেপ দেখিনি তবু বুকের গহীনে লুকানো অভিমান আমাকে ক্রমশ ঘুমহীন স্বপ্নহীন করে তুলছে। তাই আজ নিজের বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। আমি বার বার সরে এসেছি। পারিনি। ঠিক এই মুহূর্তে যেই ঘোরের মধ্যে আছি আমার সম্বিত ফিরবার আগেই আমাকে কাজটা করে ফেলতে হবে। আর লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না। খুব ক্লান্ত লাগছে। ভালো থেকো।
ইতি সুরভি
বিছানায় ফিরে এসে ঘুমন্ত বাবা মেয়েকে দেখে আমার আবার জীবনের লোভ পেয়ে বসে। আমি ছটফট করি। গলার কাছে কান্না জমে আমার দম আটকে যাচ্ছে। এক পাশে আস্থা। এক পাশে হাসান। আমি দুজনের গায়ে দুই হাত রাখি। ধীরে ধীরে আমি সহজ হয়ে উঠি। থৈ থৈ জলের কূল ছেড়ে আমার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে। হাসান আমার শরীর ঘেঁষে শোয়। ওর স্পর্শ কেমন যেনো মায়াময় লাগে আমার কাছে। আমি হাসানকে দুই হাতে আঁকড়ে ধরি। নাহ্ সময় যেনো স্থির হয়ে আছে।
অস্থিরতা কাটাতে আমি মাথার কাছে রাখা মোবাইল হাতে নেই। রাত আড়াইটা বাজে। ফেসবুকে লগইনই আছি। আমার মতো অনেকেই জেগে আগে। দ্রুত স্ট্যাটাস পাল্টাচ্ছে। কবিতা বা গানের লিংক শেয়ার দিচ্ছে। রাত জাগাটা মানুষ এখন অভ্যাসে পরিণত করেছে। মুনও অনলাইনে আছে দেখছি। ফেসবুকে মুনের স্ট্যাটাস দেখে মজা লাগে। সে এই রাত দুটো বাজে স্ট্যাটাস দিয়েছে, ফিলিং ডাউন, কফি খাইতে মুনচায়। ওর এক বন্ধু কমেন্টস করেছে, কফি খাইতে রাইতে আইতে মুনচায়! আমি স্মাইলের ইমো দিয়ে মুনকে শুভ রাত্রি জানাই। এরপর দ্রুত অসংখ্য কমেন্টস পড়তে থাকে। এসব দেখতে দেখতে খানিক আগের অস্থিরতা কেটে যায়। জিমেইলে বেশ কিছু জাংক মেইল জমেছে। কি মনে হতে আমি সব ডিলিট করতে থাকি। হঠাৎ চমকে উঠি, ওয়ান আনরিড মেসেজ, এ্যাড্রেসবারে হাসানের মেইল এ্যাড্রেস। আঁধার গুমোট ঘরের নিস্তব্ধতা ভাঙবার মতো আমার বুক ভেঙে কান্না আসে।
সুরভি,
জানি তুমি চমকে গেছো আমার মেইল পেয়ে। নাকি নির্লিপ্ত আছো? আমার মতো? তুমি তো তাই ভাবো যে আমি নির্বিকার-নির্লিপ্ত সব কিছুতেই। সত্যি কথা কি জানো, এ আসলে নিজেকে লুকোবার ফাঁকিভরা কৌশল ভিন্ন কিছু নয়। আমার ভেতরটাও দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে সুরভি। নিজেকে উজার করে আমি দেখাতে পারিনি কখনো, তা তুমি জানো। আমি আজো পারি না। তোমার জলজ দুঃখগুলো আর নির্ঘুম রাতের সঙ্গী হতে পারছি না কেন জানো সুরভি? ভয়ে। আমি ভয় পেয়েছি যদি তুমি আরো ভেঙে পড়। তোমাকে বা আস্থাকে হারাবার ভয় এখন আমার মধ্যে আরও প্রবল। আমাদের তো আর কেউ নেই সুরভি আস্থা ছাড়া। আস্থার মতো কোনো নরম তুলতুলে হাত তো আর আমাদের গায়ে, হাতে, চোখে, মুখে আদরের পরশ বুলাবে না। দুরন্ত পায়ে ছুটে এসে বলবে না, বাবা তোমায় ভালবাসি। তুমি পৃথিবীর সেররা বাবা!
সুরভি, তুমি আমার জীবনে কখনো একটা শরীর ছিলে না তো সুরভি। তুমি আমার সুর আর সুরভি। মনে আছে, তোমার বকুনির ভয়ে প্রথম যেদিন তোমাকে চিঠি লিখেছিলাম, এই বাক্যটা লেখাতে তুমি পরদিন উত্তর দিয়েছিলে, তুমি এত ন্যাকা জানা ছিল না তো! তবু তুমিই আমাকে সবচেয়ে ভাল জানো। সেই তোমার কাছে আমার কষ্টের সবটুকু নিয়ে নতুন করে ধরা দিতে চাইনি বলে আমি ব্যস্ত থেকেছি। তোমার ভাষায় নির্লিপ্ত।
এই কয় মাসে আমার ভেতরের কান্নার অংশীদার করতে পারিনি তোমাকে। বলতে পারিনি, আমাদের যে বাপটুটাকে আমরা হারিয়েছি তাকে আমি চোখ ভরে দেখেছিলাম, যে এখনও আমার চোখ জুড়েই আছে। ছোট্ট ছোট্ট হাত পা মুড়ে শুয়ে থাকা শালিকের মত আমার পাখির বাচ্চাটা চোখ মেলে তাকায়নি। গড়ন পুরো হয়নি ওর। তবু ঠিক যেন বোঝা যাচ্ছিল এ আমাদের সন্তান।
তোমাকে যখন ও.টি. থেকে আনা হলো তোমার রক্তহীন ফ্যাকাশে মুখটায় কি যে যন্ত্রণার ছাপ ছিল! আমি বর্ণনাতীত অস্বস্তি আর গ্লানি নিয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমি কাঁদতে পারিনি তখনো, দাঁতের ফাঁকে কান্নার অনুভূতি চেপে নিয়ে তখনো নির্লিপ্ত গলায় বলেছি, সুরভি বেঁচে আছে তো? এরপর ডাক্তার যখন আমার কাছে এসে বললো, আপনাদের ইস্যু দেখবেন? আমি থমকে গিয়েছিলাম। আমি তাকিয়ে দেখলাম একজন নার্সের হাতে ধরা পাত্রে ডিম্বাকৃতির মাংসপিন্ড যেটাকে ডাক্তারি ভাষায় সিস্ট বলছিল আর চাকা চাকা রক্ত। আর একজন নার্স আমার দিকে ভাবলেশহীন তাকিয়ে বলেছিল, এই দেখুন, ছেলে বেবি। আমি দেখলাম আমাদের বাপটুকে!
বাপটু আর তোমার মুখের দৃশ্যমান কষ্টের তীক্ষ্মতা আমার বুক এফাঁড় ওফোঁড় করে বেরিয়ে গেল। তোমাদের নিষ্প্রভ, শাদাটে মুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমি হাসপাতালের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি কাঁদিনি। কান্নার নৈঃশব্দ পদধ্বনি শুনেছো কখনো? আহ্ সুরভি, এর চেয়ে ভয়াবহ যেন আর কিচ্ছুটি নেই।
আমদের বাপটু আসতে চেয়েছিল, যার আগমন ঠিক প্রত্যাশিত ছিল না, তোমার আমার কাছে। আমরা ভেবেছিলাম আর একটা বছর। আস্থা আরেকটু বড় হোক। কিন্তু জানো যেদিন আমি তার অস্তিত্ব জানলাম সেদিন থেকেই যেনো অবচেতনে প্রতীক্ষা বাড়ছিল ওর জন্য। কিন্তু সম্ভাবনার উত্তাপ ছড়িয়ে সে চলে গেল। তোমাকে ফিরে পাওয়া আর বাপটুকে হারানোর পরস্পরবিরোধী প্রতিক্রিয়া নিয়ে আমি যখন ৩০৩ নাম্বার কেবিনে ছটফট করছি, তখন বেডে ফিরে তুমি কেমন বিপণ্ন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়েছিলে। হঠাৎ তোমার আর্তস্বর শুনতে পেলাম, বেবিটাকে দেখেছো? পুরো শরীর হয়ে গিয়েছিল ওর? হাত? পা? চোখ? মুখ? সব? আমি স্বভাববিরুদ্ধ তোমাকে ধমকে উঠেছিলাম, চুপ কর! তুমি কেঁদেছো, তোমার শরীরের শূন্যতা নিয়ে তুমি পাগলের মতো কেঁদেছো সেদিন।
আমি সেদিনও কাঁদিনি। নিজেকে বোঝাতে যেয়ে তোমাকে বোঝাতে পারিনি। কতদিন যে আমি তোমার জন্য কত মেইল লিখেছি, যেগুলো ড্রাফটেই আছে আর সেন্ড করা হয়নি। ভেবেছি আমার কষ্টের দুয়ার তোমার সামনে খুলে দিলে তুমি আর সামলাতে পারবে না। যেদিন তুমি এক গাদা ঘুমের ওষুধ মুঠিতে করে মরতে গেলে সেদিন কি যে পরাজিত লাগছিল আমার। বারবার মনে হচ্ছিল আমার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে, আমি আমার সুরভিকে বোঝাতে পারছি না যে আমাদের বাপটুটাকে হারাবার অনুভূতি আমারও এক ও অভিন্ন।
সুরভি আজ মনের গভীরে লুকানো অজস্র কথার বুদবুদ বেরিয়ে আসছে। তোমাকে জানাতে পেরে একটু একটু ভারহীন হয়ে যাচ্ছি। আমি বলবো না, তুমিও ভারহীন হও। শুধু তুমি মৃত্যুর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিও না। বুকের ভেতরে হা হা শূন্যতা নিয়ে আমি আছি। তোমার পাশে, নিঃশ্বাসের মতো। তোমার মতো আমিও কষ্ট পেয়েছি, শব্দহীন কেঁদেছি। আমার কান্নায় বালিশ ভিজেনি কিন্তু আমার চোখের স্যাঁতস্যাঁতে জলে আমার ভেতরটা নোনা ধরা দেয়াল হয়ে গেছে। তুমি সাথে না থাকলে যে কোনোদিন সে দেয়াল ভেঙে পড়বে।
হাসান
আস্থা আমার গলা জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। জেগে ওঠা শহরের কোলাহল কানে ভাসছে। আমি উঠতে নিলে আস্থা আরো শক্ত করে আমার গলা জড়িয়ে ধরে। এক পাশে বাবা, এক পাশে মেয়ে। আস্থার মুখটা জলপরীর মতো লাগছে। মিষ্টি একটা হাসি মেয়ের মুখ জুড়ে। আমার বুকের ভেতরটা কেমন করে। আস্থার গালে গাল লাগিয়ে আমি শুয়ে থাকি। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি! রাত জাগার ক্লান্তি হাওয়ায় ভাসে। আস্থা এবার আমাকে ছেড়ে দেয়। ডানপাশে শুয়ে থাকা হাসানের হাত খামচে ধরে আমি উঠে বসি। আমার নখ ওর চামড়ায় বসে যায়, হাসান অস্ফুট শব্দে কাতরে পাশ ফিরে শোয়, তবু ওর ঘুম ভাঙে না। হাসানের ঘুমন্ত মুখটায় মায়ার আবেশ। আস্থা উঠে বসেছে। মেয়েটার ঘুম ভাঙা চোখে মায়াবী দৃষ্টি। দু’চোখ প্রসারিত করে আস্থা ফিসফিস করে,
-রাতে তুমি ঘুমাওনি কেন মা?
- কে বললো?
-আমি জানি। আমি মাঝে মাঝে টের পাই তুমি কাঁদছো।
আমি চুপ করে থাকি।
-আমি আজ তোমার জন্য একটা চিঠি লিখেছি।
আমি অবসন্ন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাই। আস্থা বালিশের নিচ থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করে। এবার আমার হাসি পায়। আমি বিহবলতা কাটিয়ে বলি, কি রে তোরা বাবা মেয়েতে দেখি চিঠি লেখার ওস্তাদ! আস্থা লাজুক ভঙ্গিতে হেসে কাগজটা আমার হাতে দেয়। এক লাইনের চিঠি, ‘বাবার মতো তোমাকেও ভালবাসি। তুমি তা জানো দেখে আমি কখনো তোমাকে চিঠি লিখি না।’ চিঠির নিচে অদ্ভুত সুন্দর নৃত্যরত এক ময়ূর আঁকা। যেন ভরা বর্ষায় জলের কূলে নেচে বেড়াচ্ছে! চোখ ঝলসানো সাতরঙে নিপুন কারিগরের হাতে সেই ময়ূর এক সুচারু শিল্প। আমি প্রশ্ন করবার আগেই প্রাণের গভীর থেকে আস্থা বলে ওঠে,
-এটা তুমি মা।
আস্থার মায়াবী গলা শুনে অনুভূতির তন্দ্রায় বিভোর আমি জেগে উঠি। আমার জলহীন রক্তকণিকা যেন ভালোবাসার স্রোতে ভেসে যায়। ওর আঁকা ছবির রঙের সাথে মিতালী পাতানো নির্মল সকাল আমাদের জীবনের রঙে রাঙিয়ে তোলে। মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়বার ভয়ে আরো রঙের আশায় আমি মেয়ের সামনে আমার আঁচল পাতি। তারপর আশ্চর্য এক সুখময় সময়ে আমরা নিজেদের বিছিয়ে দেই। আমি ময়ূরের মতো পাখা মেলতে মেলতে আস্থাকে জড়িয়ে ধরি।
এরপর মা-মেয়েতে পাখা মেলে ভেসে বেড়াই।
(উৎসর্গ-যেসব দেবশিশু স্বর্গে বসে তাদের মায়ের জন্য অপেক্ষা করছে)
মন্তব্য
গল্প, পড়বার সময়ে মনে হচ্ছিলো, আপনার জীবনেরই গল্প! আপ্লুত হয়েছি।
কৃতজ্ঞতা।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
আহ শান্তি, এইবার সব পইড়া ফাটায়া ফালামু
(শেষপর্ব- এর মধ্যে আবার শর্ত প্রযোজ্য নাই তো?)
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
শর্ত একটাই-তাত্তারি পড়া চাই।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
হুমম... ভাবছি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
থাক বাপু শর্ত তুলে নিলুম।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
আপনার লেখায় এত মায়া আপু।
কৃতজ্ঞতা বন্দনা। প্রায় আড়াই বছর নতুন লেখা দিচ্ছেন না, আসুন না ফিরে। লিখুন না নতুন কিছু। অপেক্ষায় থাকবো।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
লিখতে মনে হয় ভুলেই গেছি আপু।
অনেকদিন পর এ পর্বটা লিখলেন। শেষটার জন্য অনেক ভালোলাগা। সুরভি, হাসান, আস্থা আর সুরভিদের বাপটুর জন্য এত্তগুলো ভালোবাসা ওদের হয়ে আপনিই নিন...
দেবদ্যুতি
অনেক আগেই শেষ করেছি কিন্তু পোস্ট দেইনি। আমার আবার একসাথে অনেক লেখা শুরু করা অভ্যাস, শেষ হতে চায় না কোনোটাই। এটা শেষ হলো। আপনাদের ভালবাসা পেয়ে ময়ূরের রঙ লাগে গায়ে। ভাল থাকুন দেবদ্যুতি।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
মুগ্ধ করা একটা সিরিজের বিহ্বল করা সমাপ্তি।
কৃতজ্ঞতা মেঘলা মানুষ।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
এ পর্বের জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম৷অবশেষে শেষ হয়েই গেল|কী বলব বুঝতে পারছি না|কিছু বলার নাই|
আমার লেখার কেউ অপেক্ষায় থাকে জানতেই সকালটা সুরভিতে ভরে ওঠে।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
---------
স্বয়ম
---------------
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
শেষ মানেই তো শুরুর আরেকটা ধাপ এগিয়ে যাওয়া' বলে ব্যাপক ইতংবতং মূলক বাক্য ফেঁদে বসাই যায়।
কিন্তু তুমি যদি স্যু করো এই মাইয়া অতি কথায় আমার কান পাকাইয়াছে! ডরে তাই বেশি বকলেম না।
যাক শেষ পর্যন্ত তাহলে হাসান সাহেব একখান পত্রবান পূর্বক তাহার নিরাবতা ভাঙলেন।
তবে তার সুরভিকে দেখে তাত্তাড়ি নতুন পাতা(পিসিতে) খোলা, কিছু একটা গোপন করছে'র ইঙ্গিতে
দুষ্টু কিছুর যে অপার সম্ভাবনা দেখেছিলাম তাহা মাঠে মারা গেলেও গতানুগতিক রাস্তায় এ গল্প হাঁটেনি বলে স্বস্তি পেলাম।
যদিও এভাবে চিঠির মাধ্যমে তাদের মধ্যেকার জটিলতা দূর হওয়ার বিষয়টা কতটুকু কার্যকরী জানা নাই।
পাঠক হিসেবে আমার এট্টু অভিযোগ, সুরভি যতটা বন্ধু অপর্ণাকে নিয়ে বলেছে ততটা হাসানকে নিয়ে বলেনি যেন।
মানে ব্যক্তি হাসানকে এ গল্পে সেভাবে আলাদা স্হান দেয়া হয়নি(কেনু কেনু ? জানো না বুঝি সতী নারীর পতি'ই বল ? বন্ধু পদ্মপাতার জল! ) গল্পটা বেশ লিখেছো তুমি
--------
একটা বিষয়ে পড়তে গিয়ে বাংলাদেশের চরাঞ্চলে 'মৌসুমি বিবাহ' নিয়ে অতি সামান্য একটু পড়ার সুযোগ হলো, বুঝলা?
এ ব্যাপারটা জানো না? নদী ভাঙনে জেলেরা অনেক সময় বিয়ে করে এবং অতি অল্প সময়ের জন্য মেয়েগুলো ওদের বউ হিসেবে পরিচিত হয়। তারপর লাকুম দ্বিনুকুম। এই বিষয়টা নিয়ে একটা গল্প লেখার চেষ্টা করবা নাকি আপু? থিংক করো কেমন? সামনে তোমার আরো সুন্দর সুন্দর লেখা পাবো এনশাল্লাহ। শুভেচ্ছা ভালুবাসা নেও।
প্রথমেই গল্পের থিম দেয়ার জন্য ভালোবাসা জানাই। মৌসুমি বিবাহ তো মনে হচ্ছে ‘মুতা মেরেজ’ টাইপ, যেখানেই যাও একখান বিয়া কইরা ফেল! পড়তে হবে। বিষয়টা সম্পর্কে জানি না আর বিশেষ একটা আঞ্চলিক ভাষাকে আশ্রয় করে লিখতে হবে, সেক্ষেত্রে সেরকম কারো সাথে কথা বলাও জরুরি। চেষ্টা করবো আয়নামতি। তবে আমার একটা লেখা শেষ করতে বছরও ঘুরে যায়। ফেলে রাখার বাজে অভ্যাস। তাছাড়া গত একমাস ধরে ব্যস্ততা বেড়েছে খুব। পড়তেও পারছি, লেখা হচ্ছে শুধু ডায়েরি। গল্পও এগোয়নি কোনোটা।
আর এই লেখার কথা বলি। এই লেখাটার জন্য আমাকে কোনো কসরৎ করতে হয়নি। আমি পিসির সামনে বসে একটানা লিখে গেছি। গল্পটা আর গল্পও থাকেনি। কথোপকথন আর হাসানের কথা কম এসেছে সেটা সচলের অতিথি পাঠক-লেখক অপর্ণা মিতু বলাতে আমি আরও দুটো পর্ব সংযোজন করেছিলাম যদিও সেটা সচলে দেইনি। কারণ এতে ধারাবাহিকতায় সমস্যা হতো।
এত মনোযোগ দিয়ে তুমি সবার লেখা পড়, তোমাকে পাঠক হিসেবে মাথায় করে রাখা উচিত। আমি পড়লেও সাহস করে সব মন্তব্য করতে পারি না, কে কি মনে করে! কিন্তু তোমাকে দেখে সাহস পাচ্ছি, আমার মন্তব্যের পরিধি বাড়ছে, মাঝে মাঝ তর্ক জুড়ছি। পাশে থেকো।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
হাসানের চিঠিটা পড়ে খুব খারাপ লাগছিলো। ওভারঅল, আবারো বলব সুরভী কথাবার্তা কম কম বলেছে, ভেবেছে বেশি। ওর ডায়ালগ ফিনিশিং টাচ যখন দিবা, পারলে বাড়াইও। অপর্ণার কথাবার্তার ইস্টাইল মজা লাগছে। আস্থার চিঠিও ভীষণ কিউট।
সবমিলিয়ে সুন্দর সমাপ্তি হলেও সুরভীর অভিমানের প্রকাশ কি হাসানের দিকে কিছুটা বেশি মনে হলো !
তাত্তারি মলাট বন্দী করো। শুভকামনা রইলো
অপর্ণা মিতু
হুম। দেখি। তোমাকে পাচ্ছি না অনলাইনে।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
যত পড়ছিলাম মনে হচ্ছিল চলতে থাকুক। সুরভি -হাসান ,অপর্ণাকে যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। সুরভি-হাসানের কষ্ট নিজের ভেতরও যেন অনুভব করছিলাম। ময়ূরের পাখায় জীবনের বাস্তবতাকে বসিয়ে দেয়া অপরূপ লেগেছে।অনেক শক্ত ও জড়তাযুক্ত পরিস্থিতিকে ,মুহূর্তকে জড়তাহীনভাবে তুলে ধরেছেন। এক কথায় মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তাই দাবি জানায় এমন আরো লিখা উপহার দেবেন।
এ্যনি মাসুদ
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। মন বিক্ষিপ্ত তাই একটা বিক্ষিপ্ত ছোট লেখা পোস্ট দিলাম। ভাল থাকুন। প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা থাকবে।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
নতুন মন্তব্য করুন