স্বদেশের জন্ম হলো ক্লাব-ফুট। শব্দটা ডাক্তারের কাছ থেকে শোনা। অর্থটা বুঝেছি স্বদেশকে চোখে দেখে। ডাক্তার আনন্দ সাহা স্বদেশের শরীরের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ বাঁকা পা দুখানায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেছিলেন, পেটে আঘাত পেলে, কোনো ধরণের ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বংশগত কারণে মায়ের পেটে থাকতেই শিশুর এ ধরণের ক্ষতি হয়। ডাক্তারের কথা শুনে রানা আমার চোখে চোখ পড়বার ভয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল। আমার স্বদেশের বাবা রানা। যদিও স্বদেশের রনি নামটা রানার সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে কিন্তু আমি স্বদেশই ডাকি। ডাকবোও। আমি এমনই। স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নিতে পারি না দেখেই তো আমাকে সময়-অসময় পেটে লাথি খেতে হয়।
স্বদেশ যখন আমার পেটে পাঁচ মাস বারো দিন সেদিন রানা আমার পেটে লাথি মেরেছিল। কারণটা গুরুতর। নামকরণের সার্থকতা ব্যাখ্যা করতে যেয়ে আমি বলে ফেলেছিলাম, স্বদেশকে আমি আমার মতো করে মানুষ করবো। আমি পেরেছি। স্বদেশ ক্লাব-ফুট চাইল্ড নাম ঘুচিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।
রানার ধারণা ছিল স্বদেশ কখনো ভাল হবে না। কিন্তু সময় যখন দিন আর রাতে একাকার হয়ে দীর্ঘ হয়ে যায় সেই সময়কে কাজে লাগিয়ে আমি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে মাসের পর মাস থেকেছি। আমার বাবা পাশে থেকে আমার স্বদেশের জন্য লড়াই করেছেন। একদিন আমার স্বদেশ হাঁটলো, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আনন্দটা আমার সাথে ভাগ করে নিতে যখন গুটিগুটি পায়ে স্বদেশ এগিয়ে এলো সেদিন আমি প্রাণখুলে কাঁদলাম।
অনেকদিন পর রানা সেদিন আমাকে খুব ভালবাসলো। আমার ঘাড়ের কাছে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বললো, যাক ছেলেটা তাইলে আর লুলা হইবো না। আমি তো ভাবছিলাম একটা ফটোকপি মেশিনের দোকান কইরা দিমু লিঠুর দোকানের পাশে। চাচা ভাতিজা এক রিকশায় যাতায়াত করবো।
রানার সাথে থাকতে থাকতে আমিও ক্রমশ স্বেচ্ছাচারি হয়ে উঠছিলাম। তাই হয়তো সেদিন রানার গালে জোরে চড় মারতে পেরেছিলাম। প্রতিশোধস্বরূপ রানা আমাকে স্বাধীনতা দিল। স্বাধীনতা আমার মেয়ে। বাবার দেয়া নাম বনি। স্বদেশ আর স্বাধীনতা বাবার দেয়া নাম কখনো খাতায় লেখেনি। আমি এ বিষয়ে কখনো কিছু বলিনি। তবু ওরা সজ্ঞানে নাম দুটি এড়িয়ে চলে। কিন্তু বাড়িতে ঢুকেই রানা প্রয়োজনহীনভাবে ছেলেমেয়ের নাম ধরে ডেকে ডেকে নিজেকে অস্থির করে তোলে। রনি, বনি শব্দগুচ্ছ বাতাসে বাদুরের মতো দোল খেতে দেখে একসময় রানা ক্ষেপে গিয়ে ছেলেমেয়ের পড়ার ঘরে ঢুকে চিৎকার করতে থাকে, ওই ঠসার দল, কানে শুনোছ না?
-কি?
স্বদেশের নির্লিপ্ত গলা যেন রানার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়,
-তোদের ডাকতেছি...হারামজাদা।
-আমার নাম স্বদেশ।
-তোর দ্যাশ আমি...দিয়া ভইরা দিমু।
-তোমার নোংরামি আর সহ্য হয় না। তুমি ঘর থেকে বের হয়ে যাও। এবার খুব খারাপ হচ্ছে বিষয়টা।
স্বাধীনতার কণ্ঠস্বর নির্ভীক, একরোখা। স্বদেশ, স্বাধীনতার চোখ থেকে চোখ নামিয়ে রানা পালিয়ে বাঁচে,
-হারামজাদা দুইটা মায়ের মতো অসভ্য হইছে।
আমার স্বদেশ, স্বাধীনতার অসভ্যতা কিন্তু বেশ লাগে। অসভ্যতা তো ওদের রক্তে।
(গল্পটি সত্যি। পুরো প্রকাশ করা গেলে কি যে ভাল হতো! কিন্তু সম্ভব না। বিরোধ চলমান। স্বদেশ-স্বাধীনতার চোখে পড়বে কিনা জানি না তবু এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আর মাকে সালাম।)
মন্তব্য
"ভালো লাগলো পড়ে" কথাটা বলতে গিয়েও আটকে গেলাম । ওরা আরো অসভ্য হয়ে উঠুক ।
মামুনুর রশীদ [ ভবঘুরে শুয়োপোকা ]
=============================
হাজার মানুষের ভিড়ে আমি মানুষেরেই খুজে ফিরি
ওরা আরো অসভ্য হয়ে উঠুক ।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
ঘটনা সত্য? তাইলে স্বদেশের মাকে স্যালুট। আর প্রকাশ করবার জন্য তোমাকে।
স্বদেশের মায়ের ডায়েরিটা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমার দেশই যেন। মাত্র একটা পৃষ্ঠার রূপক এটা। ধন্যবাদ দাদা।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
আমাদের চারপাশের স্বদেশ আর তার স্বাধীনতাটাও একটু অসভ্য হয়ে উঠুক...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
... ... বিরোধ চলমান। ... ... ... মাকে সালাম। গল্পকারকেও সালাম।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অশেষ কৃতজ্ঞতা
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
স্বদেশ স্বাধীনতা আরো মুখর হোক!
স্বদেশ স্বাধীনতা আরো মুখর হোক! তাই চাইছি।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
এমন অসভ্যতা খুব কামনা করি, ঘরে বাইরে- সবখানে শুভকামনা স্বদেশ, স্বাধীনতা আর ওদের মায়ের জন্য।
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
ভাল থেকো দেবদ্যুতি।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
খুব ভালো লাগলো ওদের অসভ্যতা, গল্পও। আরও অসভ্য হোক স্বদেশ, স্বাধীনতা।
ধন্যবাদ
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
দারুণ লাগলো।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
কৃতজ্ঞতা কবি।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
সোহেল ইমাম
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
অদ্ভুত গল্প। পড়তে পড়তে কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। ভাল লিখেছেন।
--মোখলেস হোসেন।
ধন্যবাদ
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
গল্পটা কেমন যেন; ভালো অর্থে অবশ্য। ভালো লাগলো।
গল্পটা সত্যি
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
খুব ভালো লাগলো।
বাচ্চাগুলোর বয়স কত?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ওরা বড় হয়ে গেছে। স্বদেশ-স্বাধীনতার মা পড়া শেষ করে সবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে চাকরিও করতেন। মেয়ের সাথে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। অনেক গল্প সেসব। আমার দেশের গল্পের সাথেও মিলে যায়। তবে নামদুটো ছদ্ম। পুরো লেখার পারমিশন পেলে লিখতাম। এতটুকু ভয়ে ভয়ে লিখেছি। স্বদেশের মা মারা গেছেন। সেই মৃত্যু নিয়েই বিরোধ। হত্যা না আত্মহত্যা। আমি একসময় পারমিশনের তোয়াক্কা করবো না। প্রাথমিক হৈচৈ কাটুক। পুরোটা লিখে ফেলবো। বিষয়গুলো সামনে আসা দরকার।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
নতুন মন্তব্য করুন