• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

ইচ্ছেঘুড়ি (পর্ব-৪)

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি
লিখেছেন সুলতানা সাদিয়া [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২৫/১১/২০১৬ - ৫:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দুপুরের জলখাবার বাড়িতে সারার কারো সময় নেই এখন। অনির বাবা সকালে সাথে করে খাবার নিয়ে যায়। অনির বাবার অফিস কাছেই, এস.এস.রোড। মিনিট দশেকের রাস্তা। চাইলে বাড়িতে এসেই খেয়ে যাওয়া যায়। আগে শংকরসহ অনেক অফিসার খাবারের সময় দুপুরে বাড়িতে এসে চটজলদি খেয়ে অফিস ছুটতেন। কিন্তু নতুন ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কানে কেউ খবরটা দিতেই বিপত্তি ঘটেছে। লাঞ্চ আওয়ার পেরোতে না পেরোতেই তিনি চেয়ারের মাথা গুনতে আসেন। মোহনা অবশ্য সকালের নাস্তা তৈরি করার সময় অনির বাবার জন্য খানিকটা ভাত রাঁধেন আর আগের দিন আলাদা করে তুলে রাখা মাছ আর সবজি তরকারি গরম করে লাঞ্চ বক্সে তুলে দেন।

বেগুনভাজাগুলো থালায় সাজিয়ে খাবার টেবিলে রাখতে রাখতে দেয়াল ঘড়িতে চোখ রাখেন মোহনা। ৫-১৫ বাজে। অনির ছুটি পাঁচটায়। সকাল সোয়া এগারটায় অনির স্কুলের গেট বন্ধ হয়ে যায়। সাড়ে এগারটায় আ্যাসেম্বলি আর পোনে বারোটা থেকে ক্লাস শুরু। অনির স্কুল হাঁটাপথে পনের-বিশ মিনিট। নতুন স্কুলে ক্লাস সিক্সে ভর্তি করার পর মোহনা ছেলেকে বেশ কয়েকদিন নিয়ে গেছেন।

স্কুলের বিশাল গেটের মধ্যে অনিকে ঢুকিয়ে হাত ছেড়ে দিতেই মোহনার বুকটা হাহাকার করে উঠতো। যেন কোনো রথের মেলায় ছেলেকে হারিয়ে ফেললেন। কতদিন চোখ মুছতে মুছতে তিনি রিকশায় উঠেছেন। এত বড় ক্যাম্পাসের গন্ডিতে ছেলেকে ছাড়তে ছাড়তে অনির প্রথম স্কুলের কথা মনে পড়তো।
সে কথা মনে হলে এখনও আবেগে মোহনার চোখ ভরে জল আসে। আনন্দ আর উৎকণ্ঠা মেশানো দিনগুলো। ছোট্ট বাবাই স্কুলড্রেস পরে বয়সের তুলনায় ভারি গাম্ভীর্য মুখে এঁকে নিয়ে মায়ের হাত ধরে স্কুলে রওনা হতো। ছেলেকে স্কুলের গেটে ছেড়ে দিয়ে স্বস্তি পেতেন না। কর্তৃপক্ষের নিষেধ স্বত্ত্বেও স্কুল বারান্দায় হাতেগোনা কয়েকজন অভিভাবকের সাথে মোহনা দাঁড়িয়ে থাকতেন। স্কুল থেকে বলে দিয়েছিল, সাময়িক কয়েক দিন থাকা যাবে। কিন্তু বাচ্চাদের একা ছাড়তে হবে। অনিকে একা ছাড়তে মোহনার মন মানতো না। দারোয়ানের গাল-মন্দ শুনতে শুনতে তিনি অনির ক্লাসের অদূরে দাঁড়িয়ে থাকতেন।

ক্লাসরুম থেকে জানালা দিয়ে একটু পর পর তাকিয়ে অনি মাকে দৃষ্টিসীমানার মধ্যে খুঁজে নিতো। মোহনা হাত নেড়ে ইশারা করেছেলেকে নিশ্চিন্ত করতেন, আমি আছি বাবাই! একদিন বাবাই বললো, মা আমি বড় হয়ে গেছি, আমি একাই স্কুলে যেতে পারবো। মোহনাতো হেসেই খুন। একরত্তি ছেলে কিনা বলে নিজেই স্কুলে যাবে! মাস খানেকের মধ্যে অবশ্য অনি স্কুলের নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে গেল। মোহনাকে আর বারান্দায় দাঁড়াতে হতো না। কিন্তু ছেলে অভ্যস্ত হলে কি হবে, তিনি হলেন না। মোহনা স্কুল গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতেন। অনির বাবা অবশ্য বলতো ছেলেকে ছেড়ে দাও, স্বাবলম্বী হতে দাও। তোড়াটা কেমন নিজে নিজে বড় হয়ে উঠছে দেখছো না? তোড়া আসলে বরাবরই অন্যরকম। তেজী, একরোখা।

মেয়েকে নিয়ে খানিক নিশ্চিন্ত বোধ করে মোহনা। নিজেকে নিরাপদে রাখার কৌশলগুলো খুব দ্রুতই যেন রপ্ত করেছে তোড়া। তবু যেন দুই সন্তানের জন্য বুকের ভেতর হিমশীতল ভয় কাজ করে তার। সেকেন্ডের জন্যেও নিশ্চিন্তে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তার। কখন ফিরবে ওরা? বাইরে গেলে ঠিক থাকবে তো? মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে কোথাও যেতে না দিয়ে বুকের ভেতরে দুটোকে নিয়ে বসে থাকেন। তাই কী আর হয়! আপনমনে হাসেন মোহনা। বাচ্চাদেরতো স্বাবলম্বী হতেই হবে।
অনিও ক্রমশ স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। মা স্কুলে দিতে গেলেই অনি এখন লজ্জা পায়। মাথা নিচু করে বলে, মা তুমি আর এসো না তো, বন্ধুরা হাসাহাসি করে। যেদিন যেদিন অনি এই কথা বলে মোহনার বুকের ভেতর তখন কেমন যে করে। সেই যে অনি যেদিন বুকের দুধ খাওয়া ছেড়ে দিলো সেদিনের মতো। যেন কোনো অরূপ রতন হাত ফসকে মাটিতে পড়ে গেল!

মোহনা সামনের বারান্দায় এসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকেন। ছেলের শরীরের অংশবিশেষও যদি দেখা যায়। অনির ফিরতে দেরি হলে তিনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। রাস্তার শোরগোলে তার মন অস্থির হয়ে ওঠে। উল্লাসমুখর স্কুলফেরত নানা বয়সী ছেলেমেয়েরা বাড়ি ফিরছে। অনিকে এখনো দেখা যাচ্ছে না। রাস্তার ঠিক উল্টোদিকে ল্যাম্পপোস্টের নিচে একটা আধন্যাংটা মেয়ে পাগল দাঁড়িয়ে আছে। লোকজন মেয়েটার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে। কেউ কেউ মুখ টিপে হাসছে। আহা! তুমি কাকে কী অবস্থায় যে রাখো! মোহনা ঠাকুরকে বার বার ডেকে চোখ ফিরিয়ে নেন।

অফিসফেরত মানুষ যাচ্ছে একে একে। রিকশা আর গাড়ির শব্দের ছন্দময়তায় মোহনা এবার বিপন্ন বোধ করেন। অনি দেরি করছে কেন? কোথায় গেল ছেলেটা? কোনো বিপদ হয়নি তো। মোহনা অনিকে বারবার মাথার দিব্যি দিয়ে বলেছেন, আমাকে না বলে কোথাও যাবি না। স্কুলফিরতি সোজা বাড়ি ফিরবি। অনি দিব্যির কথা শুনলে রেগে যায়। বলে, এসব দিব্যি দিও না মা, ভালো লাগে না। আমি তো সোজা বাড়িতেই আসি। তারপরে দুএকদিন বুঝি রাস্তাঘাটে দেরি হতে পারে না?
ডোরবেল বাজছে। দুবার বাজলো। অনির বাবা। অনি তিনবার বাজায়। আর তোড়া দরজা না খোলা অবধি বাজাতেই থাকে। ঘরে পা দিতে না দিতেই শংকর মোহনার মুখের দিকে তাকিয়ে ভেতরটা পড়ে ফেললেন,
-ছেলে না মেয়ে, কে ফেরেনি?
-তোড়াতো শ্যামার বাসায়। ফিরবে না। আজ রাতে থাকবে। অনি।
-তোড়া পরীক্ষার আগে মাসির বাড়ি থাকতে গেল যে? অবশ্য তোমার মেয়ে তো বেশ বুঝদার। পড়াশোনা শেষ নিশ্চয়ই।
-বললো পড়তে পড়তে হাঁপিয়ে গেছে। নীলার সাথে থাকবে। আর কোনো নিষেধ শোনে তোমার মেয়ে! কিন্তু অনি ফেরেনি এখনো।
-আহা ফিরবে। স্কুলফেরত কোথাও গেছে বোধ হয়। হয়তো বন্ধুদের সাথে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলছে বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছে।
-মোটেও না। আমার অনি তো সেরকম ছেলে না।
-কেন গো, স্কুলফিরতি খেলাধুলা করা কি খারাপ গো? আমি তো রোজ খেলতাম। রাত না নামলে বাড়ি ফিরতাম না।
-আমি কি তাই বলেছি? অনিতো না বলে কোথাও যায় না। আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে খাওয়া ওর অপছন্দ।
-বয়সের সাথে সাথে ছেলেপেলের পছন্দ অপছন্দ চেঞ্জ হয় না বুঝি?
-হয়ই তো।

মোহনার গলা ভেজা ও অস্পষ্ট।

(চলবে)

ইচ্ছেঘুড়ি (পর্ব-১)
ইচ্ছেঘুড়ি (পর্ব-২)
ইচ্ছেঘুড়ি (পর্ব-৩)


মন্তব্য

সোহেল ইমাম এর ছবি

ঈর্ষনীয় লেখনী, কেমন গড় গড় করে চলে, কোথাও বাধা পায়না আবার লেখার ভেতর থেকে ফুটে ওঠে সৌন্দর্যের দ্যুতি। আপনার এই ইচ্ছেঘুড়ির পর্বটা অনেক দিন পর লিখলেন। আগের পর্ব গুলোও খুব ভালো লেগেছে।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

অশেষ কৃতজ্ঞতা। মাঝে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আবার শুরু করেছি। দিবো পরের পর্ব এই পর্বটা প্রথম পাতা থেকে সরলে।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

আরাফ  এর ছবি

চমৎকার লেখনি, তরতর করে এগোন যায়। ভালো লাগছে (Y) , পরের পর্বের জন্যে কতদিন অপেক্ষা করবো?

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ। পরের পর্ব দেরি করবো না। এই পর্ব সরে গেলেই দিয়ে দিবো ইনশাআল্লাহ।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

দেবদ্যুতি এর ছবি

ভালো লেগেছে। পরের পর্ব দাও তাড়াতাড়ি।

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

হাহাহা। আসবে সামনেই।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

এক লহমা এর ছবি

(পপ্পন)
পর্ব ৪-এর সময়টা পর্ব-১-এর পর এঁর পর্ব-২-এর আগে, তাই ত? :)

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

না। প্রথম পর্বে রাগ করে পালালো, দ্বিতীয় পর্বে মায়ের অপেক্ষা। আর চতুর্থতে দেরি করে ফেরা, ইচ্ছেঘুড়িতে ওড়া। পড়ছেন নিয়মিত দেখে সাহস পাই।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।