পশ্চিম আফ্রিকার রূপকথা-২

সুমাদ্রী এর ছবি
লিখেছেন সুমাদ্রী (তারিখ: শুক্র, ০৯/১২/২০১১ - ৮:৫৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তাওয়েলোরো
- বের্নার বাঁলাঁ দাদিয়ে।

সে ছিল চাঁদের মত সুন্দর, বাছাটি আমার !
তাওয়েলোরো রে! তাওয়েলোরো !
যাদুমনিরে, সে ছিল দিনের ঔজ্জ্বল্যের মত সুন্দর !
ওরে আমার তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো রে!

সে এক দীর্ঘ অতীতের কথা, যখন পশুপাখিরা কথা কইত, যখন মানুষ, পশুপাখি আর জড় বস্তু একে অপরের ভাষা বুঝতে পারত।

তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো !

ছিল প্রবল প্রতাপশালী এক রাজা, এমনই তার বিক্রম যে একটুকু বন্ধুত্ব লাভের আশায় স্থলপথে, নদীপথে এবং সমুদ্রপথে প্রতিদিন বোঝাই বোঝাই উপঢৌকন নিয়ে তার রাজদরবারে এসে হাজির হত অন্য সব রাজারা।

আর এমনই দোর্দণ্ড রাজার ছিলনা কোন উত্তরাধিকারি।

আর এজন্য প্রতিদিন রাজা চোখের জল ফেলেন। দুঃখে উতল হয়ে উঠেন প্রতিরাত। আর এভাবে একটু একটু করে তিনি বুড়িয়ে যেতে থাকেন। রাজসিংহাসনের অধিকার নিয়ে রাজন্যদের মাঝে একটা কলহ সৃষ্টি হওয়ার উপক্রম হল। আর এ কারণে প্রতিদিন রাজা আরও বেশী করে বিধ্বস্থ হয়ে পড়তে লাগলেন।

রাজার চেয়ে এ কারণে আরও বেশী দুঃখভারাক্রান্ত ছিলেন রাজ্যের রাণী। পেটে একটা সন্তান না ধরেই এ পৃথিবী থেকে চলে যাবেন এটা তিনি কোনমতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। রাজ্যের সমস্ত জ্যোতিষের সাথে এ ব্যাপারে কথা হল। মহাজ্ঞানী সব ওঝারা তাদের সমস্ত বিদ্যা ঢেলে দিল। মাসের পর মাস চলে যেতে থাকল, বছরের পর বছর, কিন্তু রাণীমার পেট ফুলে ওঠার সামাণ্যতম কোন লক্ষণও দেখা গেলনা। অবশেষে সন্তানহীন অবস্থায়ই মৃত্যুর প্রতীক্ষারত রাণীর গর্ভে একদিন দেখা দিল প্রাণের স্পন্দন। এ খবর রাজাকে আনন্দে ভাসাল, খুশীতে পাগলপারা করে দিল।

তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো!

রাজার জন্য এ ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ সংবাদ আর ঢেরা পিটিয়ে রাজ্যের সর্বত্র উৎসব উদ্‌যাপনের ঘোষণা দিয়ে দিলেন তিনি। কয়েক মাস ধরে চলল নৃত্য-গীত। দ্বাদশতম মাসের শেষে্র দিকে একদিন রাণী অসামান্যা রুপসী এক কন্যা সন্তান প্রসব করলেন। তার নাম রাখা হল তাওয়েলোরো, যার অর্থ নারীর কন্যা।

সে ছিল চাঁদের মত সুন্দর, বাছাটি আমার !
তাওয়েলোরো রে! তাওয়েলোরো !
যাদুমনিরে, সে ছিল দিনের ঔজ্জ্বল্যের মত সুন্দর !
ওরে আমার তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো রে!

তাওয়েলেরো ছিল সত্যি সত্যিই আকাশের তারার মত সুন্দর। দুনিয়ার চারদিকের সব ঐশ্বর্যশালী রাজপুত্তুরেরা তাওয়েলোরোর গুনগান করতে ছুটে আসত। রাণীমা তাকে প্রাণের অধিক ভালবাসতেন। রাজাও। সে বড় হয়ে উঠতে লাগল অন্য মেয়েদের সাহচর্যে, তার খেলার সখীদের সাথে। সবাই মিলে তারা নানারকম ফন্দি-ফিকির করত। একসাথেই তারা সবাই বড় হচ্ছিল। এরপর একে একে সখীদের বিয়ে হয়ে যেতে লাগল, তাওয়েলেরোও বিয়ে করতে চাইল খুব কিন্তু রাণীমা তাকে এতই ভালবাসত যে তাকে ছাড়া থাকার কথা কল্পনা করতেই তাঁর ভারী বেদনা হত।

তাওয়েলোর সখীদের বাচ্চা হল, বাচ্চাগুলোর সাথে দিনমান তারা খেলা করে বেড়াত। আর তাওয়েলোরো একাই রয়ে গেল, বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা তার অসংখ্য পাণিপার্থীদের কাউকেই রাজা বা রাণীর মনে ধরত না।

আর প্রতিদিন আরও, আরও বেশী করে তার মনের দুঃখ বেড়ে যেতে লাগল।

আর রাজা রাণী কোনমতেই মেয়েকে বিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। আর দিন গিয়ে মাস এসে পড়ল, মাস গিয়ে বছর।

শেষ পর্যন্ত একদিন সে তার মাকে বলেই ফেলল-
মা, আমি বিয়ে করতে চাই। যদি তোমরা এ ব্যাপারে বিরোধিতা করতেই থাকো, আমি যে আর বিয়েই করবনা শুধু তাই নয়, তোমরা কখনও আর আমার এ মুখ দেখতে পাবেনা।

-তুই কী করবি, মা আমার? তোকে দেখতে না পাওয়া মানে হল আমাদের, তোর বাবা আর আমাকে, হত্যা করা। পাগলামির কথা বলিস না...মা আমার, এখানের মত আর কোথাও এমন সুখী কি তুই হতে পারবি? তুই এটা ভাল করেই জানিস...নাহলে তুই কোথায় যাবি?
- আমি সাগরে ঝাঁপ দিতে যাব।
- সাগরে, মাগো! আতংকিত রাণী আর্তনাদ করে উঠল। আমাকে একি শোনাচ্ছিস তুই, মা আমার। সাগরে ঝাঁপ দিবি?
- তাহলে শীঘ্রই তোমরা আমার বিয়ে দিচ্ছতো?
- এভাবে নিজেকে কষ্ট দিসনা সোনা আমার। তোর বিয়ে তো হবেই।
- কবে তবে?
- মা আমার, একদিন অবশ্যই তুই সেটা জানবি।

আর সেদিন থেকে পরবর্তী ছয় বছর মা ও মেয়ের মাঝে সেই একই কথা-বার্তাই চলতে থাকল আর মেয়ের বিয়ে কখনই হয়ে উঠছিলনা।

এক রাতে, তাওয়েলোরো বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল...পালাল তার মা-বাবার কাছ থেকে যারা জিদ ধরে বসে ছিল তাকে বিয়ে না দেওয়ার জন্য যাতে করে তার খেলার সখীদের মত তারও কোল জুড়ে কোন সন্তান না থাকে।

সাগরের দিকে যাওয়া রাস্তাটিই ধরল তাওয়েলোরো। যতই সমুদ্র নিকটে আসতে থাকল, উন্মত্ত ঢেউগুলি শান্ত হয়ে পড়তে লাগল; সমুদ্র গুনগুন করতে লাগল আর জলের গভীরে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটতে থাকা মাছেরা তাওয়েলোরোকে এক নজর দেখার জন্য কিনারের দিকে ছুটে এল। আর তারাও গাইতে লাগল গান। জলের উদ্ভিদেরা, মাছেরা, কাঁকড়ারা সবাই মিলে গাইতে লাগল গান।

দেখা যাচ্ছিল, অনেক অনেক দূর থেকে উড়ে আসছে গাংচিলেরা। তারা হয়ত হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আসছে।অথচ, গান গাওয়ার উদ্যম তারা হারায়নি এতটুকুও।

সাগরের তারারা গাইছিল গান কারণ রাজকুমারী তাওয়েলোরো তাদের মতই এক রাজকন্যা।

আকাশের তারারা অসামান্য দ্যূতিতে আকাশ আলোকিত করছিল কারণ তাদেরই একজন মর্ত্যে নেমে এসেছে যে!

সমগ্র প্রকৃতি এক প্রবল উত্তেজনায় কেঁপে কেঁপে উঠছিল, উদযাপন করছিল রাজকুমারীর গৃহত্যাগের ক্ষণটিকে।

রাণীমা যখন তার মেয়ের পালিয়ে যাওয়ার খবর পেলেন, তখন তাঁর পাগল হবার দশা। তিনি তাম্বুর বাজিয়ে দিলেন আর সবাই তাওয়েলোরোকে খুঁজতে শুরু করল। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজার ঘুম উবে গেল, রাণীর মুখে খাবার উঠেনা। তাওয়েলোরোর খোঁজ অব্যাহত থাকল কিন্তু কোথাও থেকে কোন খবর এলোনা।

বয়সের ভার উপেক্ষা করে রাণী নিজেই বেরিয়ে পড়লেন তাওয়েলোরোর খোঁজে। ঘরের বাইরে বেরুলেন তিনি, আর একবছর পর এসে পৌঁছুলেন সূর্যের কাছে।

- তুমি কি দেখেছ আমার মেয়েটিকে?
- নাম কী তার?
- তাওয়েলোরো!তাওয়েলোরো!
- নাহ, ওকে আমি দেখিনি।

সেখান থেকে আবার সরে পরলেন তিনি, বাতাসের কাছে এসে শুধালেন,

- তুমি কি দেখেছ আমার মেয়েটিকে?
- নাম কী তার?
- তাওয়েলোরো!তাওয়েলোরো!
- নাহ, তোমার মেয়েকে আমি দেখিনি।

রাণী অনেকগুলো বছর এভাবে ঘুরতে লাগলেন, বাতাস, বৃষ্টি আর বজ্রের দুয়ারে গিয়ে মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করলেন, এবং সবাই বলল তারা কেউই তাঁর মেয়েকে দেখেনি। ব্যাপারটা সবার মনে একটাই আশংকা জন্ম দিল, এবং ধীরে ধীরে সবাই হাল ছেড়ে দিয়ে নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিন্তু একজন মায়ের বুকে কখনও ধৈর্য্যের কোন কমতি থাকেনা। অন্য সব পুরুষের চেয়ে সে হৃদয় যে আলাদা ধাতুতে গড়া, আর তাই প্রতিদিন আরও পূর্ণোদ্যমে লাঠির উপর ঝুঁকে পড়ে রাণীমা মেয়ের খোঁজ চালিয়ে যেতে লাগলেন।

চাঁদের কাছে এলেন তিনি, শুধোলেন

- তুমি কি দেখেছ আমার মেয়েটিকে?
- নাম কী তার?
- তাওয়েলোরো!তাওয়েলোরো!

চাঁদ কী একটা বলতে গিয়েও যেন থমকে গেল। কিন্তু রাণী ঠিকই এ দ্বিধার অর্থ বুঝে ফেললেন। তাঁর হৃদয় লাফিয়ে উঠল আর তাঁকে বলল যে চাঁদ জানে কোথায় আছে তাঁর মেয়ে তাওয়েলোরো। সাথে সাথেই রাণী গেয়ে উঠলেন গান-

সে ছিল চাঁদের মত সুন্দর, বাছাটি আমার !
তাওয়েলোরো রে! তাওয়েলোরো !
যাদুমনিরে, সে ছিল দিনের ঔজ্জ্বল্যের মত সুন্দর !
ওরে আমার তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো রে!
আমার খুকী ছিল সূর্যের মত সুন্দর!
তাওয়েলেরো! আমার তাওয়েলোরো!

চাঁদ রাণীর বিলাপমাখা গান শুনল কিন্তু কিছু একটা বলতে গিয়েও পারছিল না যেন। রাণী আরও মধুরভাবে গাইতে লাগল-

মেয়েটি আমার, ছিল সে বিদ্যুল্লতা
তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরোরে!
গোলাপের মোলায়েম সুগন্ধের মতই ছিল সে
তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো!
সে ছিল শিশিরের স্নিগ্ধতার অন্য নাম
তাওয়েলোরো! মেয়ে আমার!
ছিল সে তরঙ্গের ঊচ্ছ্বলতা,
তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো!
নরম তুলোর মতই সে ছিল পেলব
তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো!
চাঁদের দ্বিধার উত্তর আমার সে মেয়ে
তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো!
ওগো চাঁদ, তুমি কি দেখেছ সে মেয়েটি আমার?
তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো!

অবিরল অশ্রুধারা রাণীকে ভাসিয়ে দিল, এতগুলো বছর ধরে প্রতিদিন যে রাণী তাঁর লাঠির উপর আরও একটুখানি ঝুঁকে পড়ে সারা দুনিয়ায় তাঁর মেয়েটিকে খুঁজে চলেছেন।

চাঁদও এক মা। রাণীর উপর তার মায়া হল, তাঁকে ডেকে বলল সে,
- এসো!

আর রাণীমা চাঁদের পিছু পিছু যেতে লাগলেন, অমন সুন্দর চাঁদ আর কখনও দেখেননি তিনি। দুজনে তারা সমুদ্রের তীরে এসে পৌঁছালো আর রাণী আবার শুরু করল তাঁর গান-

সূর্য, তুমি কি দেখেছ আমার মেয়েটিকে?
তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো!
দিন, তুমি কি দেখেছ আমার মেয়েটিকে?
তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো!
রাত, তুমি কি দেখেছ আমার সোনামনিটিরে?
তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো!
চাঁদ, তুমি কি দেখেছ আমার মেয়েটিরে?
তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো!
সমুদ্র, তুমি কি দেখেছ আমার সোনামনিটিরে?
তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো!

যে সমুদ্র এতক্ষণ ঢেউয়ে ঢেউয়ে গর্জে উঠছিল, হঠাৎ সে চুপ হয়ে গেল। শোনা গেল দূর থেকে ভেসে আসা একটা মধুর একটা কন্ঠঃ
- কেন তুমি আমায় খুঁজে বেড়াচ্ছ মা?
-আয় মা আমার, আয় তোর মায়ের এই কোলে ফিরে আয়!
- না মা, ফিরে আমি আর আসতে পারবনা।
- কিন্তু কেন, যাদুমনি আমার, কেন?
- তোমাদের সাথে কোন দিক থেকেই আর আজ আমার কোন মিল নেই।
- এসব কী আবোল তাবোল বলছ তুমি, মা আমার? আমার সাথে তোমার কোথাও কোন মিল নেই? রাজার সাথে, তোমার পিতার সাথে কোথাও তোমার কোন মিল নেই?
- নেই, কোন মিল নেই মা... আজ আমি শুধু এক জলপরী।

সর্বাঙ্গে সাদা কাপড় পরিহিতা রাণী সেদিনের পর থেকে সমুদ্রের তীর ছেড়ে কোথাও আর গেলেন না। তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন তাঁর মেয়ের জন্য, তাওয়েলোরোর জন্য।

ঊজ্জ্বল পূর্ণিমার রাতে আজও আমরা সমুদ্রের তীরে তাঁকে দেখি। আপনি এক পা এগুলে তিনিও এক পা এগিয়ে যান, আপনি যখন থেমে যান, তিনিও থমকে দাঁড়ান আর গেয়ে ওঠেন-

সে ছিল চাঁদের মত সুন্দর, বাছাটি আমার !
তাওয়েলোরো রে! তাওয়েলোরো !
যাদুমনিরে, সে ছিল দিনের ঔজ্জ্বল্যের মত সুন্দর !
ওরে আমার তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো রে!

বের্নার বাঁলাঁ দাদিয়েঃ দাদিয়ে কোত দিভোয়ার সাহিত্যের অগ্রগামী লেখক। মূল ফরাসীতে লেখা তাওয়েলোরো গল্পটি তাঁর Legendes africaines নামক গল্পগ্রন্থ থেকে নেওয়া। এই কল্পকাহিনীটির উপর দাদিয়ের একটা কবিতাও আছে একই নামে।


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

তাওয়েলোরো! তাওয়েলোরো !

পাঠক এর ছবি

জাস্ট একখান অবসারভেশন, সত্য নাও হইতে পারে। আফ্রিকান রুপকথা যা পড়ছি , বেশির ভাগ গুলাতেই (আমার পড়গুলার মধে্য) জটিল রুপকের ব্যবহার। উদাহরন হিসাবে, আপনের এই লেখাতেই , সাগরের তারা, আকাশের তারা, মাছের গান গাওয়া, লম্বা লম্বা কবিতা, এইগুলা বাচ্চা পোলাপানের বুইঝা কি আরাম পাওনের কথা? আমাদের দেশের রুপকথা (অন্য অনেক দেশেও) বেশ সিম্প্ল। রাজা আছে রানী আছে, কিছু হারামী টাইপের লোকজন (সতীন, সৎ ভাই, রাক্খ্স ইত্যদি ) আছে , আর কাহিনীর লাস্ট এ একটা জব্বর বিয়া আছে রাজপুত্র আর রাজকন‌্যার মধে্য। আমি তাড়িখোর (আমোস টুটুওলা) নামে আরেকটা বই পড়ছিলাম সেখানেও এরকম জটিল রুপকের ব্যবহার। এখন, রুপকথা লেখা হয় বাচ্চা পোলাপানের জন্য । এরকম জ্টিল রুপকথা তারা বুঝতে পারে? আপনের কাছে আমার প্রশ্ন হইলো - আপনে এই রুপকথা গুলি কোথা থেইকা পান? বাচ্চাদের বই থেইকা? মানে আফ্রিকাতে এই ধরনের কবিতা ওয়ালা জটিল রুপকথা কি বাচ্চারা জানে? প্রশ্ন কোন কারনে অপ্রাসংগিক মনে হইলে ইগনোর করতে পারেন।
-মেফিস্টো

সুমাদ্রি এর ছবি

রূপকথা যে বাচ্চাদের শোনানোর জন্যই রচিত এ ধারণা আপনার এল কেন? আফ্রিকান রূপকথার ধরণটা তার নিজের মতই হবে, আমাদের সাথে যে মিল থাকতেই হবে এমন কোন কথা নেই। ধন্যবাদ।

guest এর ছবি

জবাবের জন্য ধন্যবাদ। যে কোন দেশের রুপকথা আলাদা আলাদা হইবোই সেটা তো বটেই। সন্দেহ নাই। বাচ্চাদের জন্য হইতে হবে এমন কোন কথাও অবশ্যই নাই।আসলে রপকথা গুলা পইড়া মনে আমার মনে হইছে যে এগুলা বেশ জটিল - মুখে মুখে ছড়ানোর জন্য। তাই জিজ্ঞেস করছিলাম আর কি যে এই রুপকথাগুলার নিশ মার্কেট কোনটা - ঠাকুরমার ঝুলি টাইপের রুপকথা হিসাবে, নাকি অন্য কিছু। আমার আগের কমেন্ট অফেন্সিভ মনে হইলে দুঃখিত।
-মেফিস্টো

অন্যকেউ এর ছবি

আমাদের দেশের রূপকথায় ভয়াবহ সব রাক্ষস-দৈত্য-ভিলেনের ছড়াছড়ি। ছোটবেলায়, আপনার কি মনে হয় না, এসব শোনার চেয়ে, পুরোপুরি না বুঝেও সাগর, আকাশের তারা আর জলপরী শুনতে বেশি ভালো লাগার কথা? আমাদের শিশুদের আমরা ছোটবেলা থেকেই খারাপ চরিত্রগুলোর সাথে খুব বেশি পরিচিত করিয়ে তুলি। এটা তাদের কাছে স্বাভাবিক একটা বিষয় হয়ে ওঠে। আমার মনে হয় ঠাকুরমার ঝুলির প্রতি স্বাভাবিক পক্ষপাতকে পাশে সরিয়ে রেখে, একবারের জন্য হলেও ক্রিটিকাল দৃষ্টিতে আমাদের রূপকথাগুলোর দিকে ফিরে তাকানো উচিত। সেই ক্রিটিকাল বিচারের আগে, কতখানি ভালো আর কতখানি মন্দ, সেটা নিয়ে ঢালাও মতামত দেয়াটা অনুচিত হবে। কিন্তু বিচারটা কি হওয়া উচিত নয়?

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

অন্যকেউ এর ছবি

এই গল্পটা আমার ভালো লেগেছে। বেশ ভালো লেগেছে। রূপকথার মধ্যে সবচেয়ে নির্মল আনন্দ পেতে চাই, সেই নির্মলতাটুকু পূর্ণভাবে এখানে পেয়েছি।

কিছু সমালোচনা করতে চাই। কিছু বাক্যবিন্যাস দীর্ঘায়িত হয়ে উঠেছে, যেটা কিনা পড়তে পড়তে নিশ্চিন্তে ছোটবেলায় ফিরে যেতে কিছুটা বাধা দেয়। সরলতর বাক্য আরও সহজে পাঠকের ভেতরে পৌঁছে যেতে পারতো। কিছু শব্দ, ঔজ্জ্বল্য- দ্বাদশতম- প্রসব- অব্যাহত ইত্যাদি, এগুলোর পরিবর্তে সহজতর শব্দ ব্যবহার করা হলে, পূর্বোক্ত কারণে সেটা সমর্থন করতাম।

তবে সব কথার সার কথা, আপনার এই লেখাটা ভালো লেগেছে। আমার মতে রূপকথার সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে থাকবে একটা অতি জরুরি জিনিস, তার নাম ইলাস্ট্রেশান। আমি যদি ছবি আঁকতে পারতাম, তাহলে এক্ষুণি এই গল্পটার জন্য কোঁকড়ানো দীর্ঘ চুলের একটা মিষ্টি পুতুলের মতো রাজকন্যা তাওয়েলোরো এঁকে দিতাম। কাউকে দিয়ে আঁকিয়ে নিতে পারেন? বা, আফ্রিকান রূপকথার কোনও ইলাস্ট্রেশান কি কোনওভাবে এখানে যুক্ত করা যায়? তাওয়েলোরোকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো পড়ার সময়ে। দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো ফেনিল সাগর, জলকন্যা আর চাঁদ।

এই সিরিজের সাথে থাকবো। পূর্ণোদ্যমে চলুক। চলুক

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

সুমাদ্রি এর ছবি

ধন্যবাদ ধৈর্য্য ধরে লেখাটা পড়েছেন বলে, একটু ভাল লেগেছে জেনে আরো ভাল লাগল। আসলে গল্পটা আফ্রিকান, লিখিত ঔপনিবেশিক ভাষা ফরাসীতে, সুতরাং বাংলায় আসতে আসতে দুটি সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে আসতে হয়েছে। একটা ব্যাপার বলতে চাই, রূপকথা মানেই যে তা বাচ্চাদের জন্য রচিত এমন কোনও কথা নেই। অনুবাদে আমি দক্ষ নই, চেষ্টা করছি আফ্রিকান গল্প বলার সাথে সচলায়তনের পাঠকদের একটু পরিচয় করিয়ে দিতে। আফ্রিকার সাহিত্য মূলতঃ কিন্তু মৌখিক, তাই এখানকার সাহিত্যের প্রতি বিভাগেই গান একটা আবশ্যিক উপাদান। তাওয়েলোরোর ছবি দিয়েই গল্পের বইটির মলাট, আপনার ইমেইল ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিন, আপনাকে স্ক্যান কপিটি পাঠিয়ে দেব। ভাল থাকুন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।